২৭ মার্চ, ২০১২

Greece: দেব-দেবী ও পূরাণ কাহিনী।


ইউরোপের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত বলকান উপদ্বীপ। এই উপদ্বীপের দক্ষিণে ঈজিয়ান সাগর বিধৌত ছোট দেশ -গ্রীস। গ্রীস পাহাড়ী দেশ; আর এই পাহাড়গুলো অত্যন্ত খাঁড়া এবং শৈল। প্রস্তরময় পর্বতের ঢালু অঞ্চলে ঝোপঝাড় এবং বিরল তৃণাদি জন্মায়। কিন্তু সমতল ভূমির জমি উর্বর। গ্রীসে তামা, লোহা, রূপা ও মর্মর পাথরের খনি আছে। 

প্রাচীন গ্রীস।
গ্রীসের পূর্ব উপকূলে খাঁড়া উঁচু পাহাড়। সংকীর্ণ উপদ্বীপ সমুদ্রের মধ্যে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত, আর উপসাগর স্থলদেশের গভীরে অনুপ্রবেশ করেছে। ঈজিয়ান সাগরে ছড়িয়ে আছে ছোট ছোট অনেক দ্বীপ। দ্বীপগুলো খুব কাছাকাছি-একটা থেকে আরেকটা দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে গ্রীসের নদনদীগুলো শুকিয়ে যায়। এই কারণে আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুবান্ধবদের বিদায়কালে তাদের রীতি ছিল একথা বলা: ‘কামনা করি, যাত্রা শুভ হোক, টাটকা জল পাও।’

ভূ-প্রকৃতিই গ্রীস (Greece) কে তিন ভাগে বিভক্ত করেছে; উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ গ্রীস। উপসাগর মধ্য গ্রীসকে দক্ষিণ গ্রীস থেকে প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে; অতি সংকীর্ণ ভূ-ভাগ দ্বারা এই দুই অংশ যুক্ত। আর উত্তর ও মধ্য গ্রীসের মধ্যে প্রাচীর স্বরূপ দাঁড়িয়ে আছে পর্বতমালা। কেবলমাত্র উপকূল অঞ্চলে, পাহাড় ও সাগরের মাঝখানে অবস্থিত সংকীর্ণ গিরিপথ ছিল এই দুই অঞ্চলের মধ্যে যাতায়াতের একমাত্র পথ।

জিউস।
 পোসেইদোন।
খ্রীষ্টপূর্ব দু‘হাজার বৎসর পূর্বেও গ্রীসে নগরী বিদ্যমান ছিল। দক্ষিণ গ্রীসের মিকেনাই শহরটি সেই সময়কার। নগর দূর্গ আক্রোপলিস (অর্থ সুরক্ষিত স্থান) ছিল শহরের সর্বাপেক্ষা উঁচু এলাকায় খাঁড়া পাহাড়ের উপরে। চতুর্দিকে বেষ্টিত বিরাট বিরাট পাথর দ্বারা নির্মিত প্রাচীর তাকে শত্রুর কবল থেকে রক্ষা করত। দূর্গের অভ্যন্তর ভাগে ছিল রাজপ্রাসাদ এবং রাজ কবরস্থান বা সমাধি মন্দির। সমাধি মন্দিরে অস্ত্রশস্ত্র ও স্বর্ণনির্মিত জিনিষ পত্রাদি রাখা হত। আর রাজপরিবারের মৃত সদস্যদেরকে সোনার মুখোশ পরিয়ে কবর দেয়ার রীতি প্রচলিত ছিল।

সূর্যদেব।
অন্যান্য প্রাচীন জাতির ন্যায় গ্রীসের অধিবাসীরাও প্রাকৃতিক রহস্য বুঝতে না পেরে প্রকৃতিকে ভয় পেত। তারা বিশ্বাস করত যে, দেবদেবীগণ প্রকৃতির মধ্যে বাস করে এবং প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। দেবদেবীদের তারা মনুষ্যরূপেই কল্পণা করত, তবে তারা ছিল সর্বৈব শক্তির অধিকারী এবং চিরঞ্জীব।

গ্রীকরা মনে করত যে, মেঘতাড়ন জিউসের ইচ্ছায় পৃথিবীতে বৃষ্টিপাত ঘটে, অনাবৃষ্টি দেখা দেয়। যে মানুষ ও অন্যান্য দেবতারা তাকে রাগিয়ে দেয়, শক্তিশালী দেব জিউস স্বর্ণময় বিদ্যুৎবাণে তাদের আঘাত করে।

 স্যতিরোস।
রুদ্রদেব জিউসের মতই গ্রীকরা ভয় পেত পৃথিবী ঝাকানো সমুদ্রদেব পোসেইদোনকে। বিশাল ত্রিশূল দিয়ে মর্তভূমি প্রচন্ডবেগে আলোড়িত করে সে, সমুদ্রে ঘূর্ণিবাত্যা সৃষ্টি করে, জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। আর দিন আসে তখনই, যখন তুষার শুভ্র অশ্ববাহী স্বর্ণরথে চড়ে সূর্যদেব আকাশে এসে প্রবেশ করে।

অরণ্যের দেবতাদের বলা হত স্যতিরোস এবং তাদের কল্পণা করা হত পশমাবৃত ছাগলের পা সম্বলিত মনুষ্যরূপে। গ্রীক মানসে ঝর্ণার দেবী কল্পিত হয়েছে তরুণীরূপে, নাম নিম্ফি।

গ্রীকরা আরও মনে করত অর্থনীতির প্রতিটি শাখায় যথা, কৃষিকাজ, পশুপালন, শিকার, তন্তুবায় বৃত্তি ও অন্যান্য যাবতীয় হস্তশিল্প রক্ষাকারী দেবদেবী রয়েছে। শুরা উৎপাদনের দেবতার নাম ছিল দিওনিসিউস, আঙ্গুরের চাষ ও মদ্য প্রস্তুত করার বিদ্যা মানুষকে সে শিখিয়েছে। এ কারণে বসন্তকালে আঙ্গুর ক্ষেতে কাজ আরম্ভ করার পূর্বে এবং ডিসেম্বরে পক্ক আঙ্গুর থেকে টাটকা মদ তৈরীর পর এই দেবতার সম্মানে উৎসবের আয়োজন করা হত।

দিওনিসিউস।
যখন গ্রীকরা ধাতব জিনিষপত্রাদি তৈরী করা শিখল, তখন হেফেন্তুস সম্বন্ধীয় পুরাণের উদ্ভব ঘটে। হেফেন্তুসের কর্মশালা ভূ-গর্ভে। আগ্নেয়গিরি হচ্ছে তার পাতালস্থ কর্মশালার নিস্ক্রমণ পথ। হেফেন্তুসকে কল্পনা করা হয় সাধারণ কামারের মত, যার পোশাক-আশাক সব সময় ঝুলকালিতে মাখা।

ব্যবসা বাণিজ্য বিকাশের সাথে সাথে উদ্ভূত হল রক্ষক দেব হের্মিস। হের্মিস জিউসের বিভিন্ন আদেশ পালন করত। এই জন্যে তাকে প্রায়শ: এক শহর থেকে আরেক শহরে উড়ে যেতে হত। তাই পাখাধারী পাদুকা পায়ে তাকে কল্পণা করা হয়েছে।

অন্যদিকে কলাশাস্ত্রের দেবতা হল অ্যাপোলো। নৃত্য, সংগীত, কাব্য, ইতিহাস ইত্যাদি বিদ্যার ধারিক দেবীদল তাকে সর্বদা অনুগমন করে।

গ্রীকরা আরও ধারণা করত প্রধান দেবদেবী তথা-জিউস, অ্যাপোলো ও অন্যান্যরা গ্রীসের সবচেয়ে উঁচু অলিম্পীয় পর্বতে বাস করে এবং তাদের জীবনযাত্রা সম্ভ্রান্ত বংশীয় লোকজনের অনুরূপ। আর অলিম্পীয় পর্বতে বাস করার কারণে তাদেরকে তারা অলিম্পীয় দেবকূল বলত।

হের্মিস। 
মোটকথা, গ্রীকরা বিশ্বাস করত দেবতারা মানুষের জীবনকে সবদিক থেকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তারাই কাউকে করেছে সম্ভ্রান্তবংশীয় ও ধনী, আবার কাউকে নি:স্ব, গরীব বা অন্যের ক্রীতদাস করে। দেব নির্ধারিত এই নির্দিষ্ট নিয়মের বিরুদ্ধে যে রুখে দাঁড়ায়, তাকে দেবতাদের কোপানলে পড়ে অশেষ সাজা ভোগ করতে হয়।

হেফেন্তুস।
খ্রী:পূ: ২য় সহস্রাব্দের শেষভাগে যুদ্ধবাজ দোরীয় উপজাতির আক্রমণের ফলে গ্রীসের সংস্কৃতি কয়েক শতাব্দীর জন্যে থেমে যায়। তবে দোরীয়দের অধীনতা মেনে নেয়া গ্রীকদের মধ্যে প্রাচীন গ্রীক মহাবীরদের শৌর্য্যগাঁথা পুরাণ প্রচলিত ছিল। এই সকল পুরাণ ছিল মহাবীর হারকিউলিসের বীরত্বগাঁথা নিয়ে, বীর জেসোন ও তার বন্ধুদের স্বর্ণপশমী মেষচর্মের জন্যে অভিযান নিয়ে, ট্রয় নগরীর অবরোধের দশম বৎসরের কাহিনী নিয়ে এবং ট্রয় অবরোধকারী গ্রীক সেনাপতিদের একজন ওডিসিউস ও তার যোদ্ধাদের যুদ্ধ শেষে স্বদেশে প্রত্যাবর্তণের কাহিনী ইত্যাদি নিয়ে রচিত। দোরীয়গণ মহাবীর হারকিউলিসকে তাদের পূর্বপুরুষ গণ্য করত এবং তার জন্যে গর্ববোধ করত।

অ্যাপোলো।
হারকিউলিসের বীরত্বগাঁথা নিয়ে রচিত পূরাণের সারসংক্ষেপ- বিরাটাকার এক সিংহ মানুষ, পশু সকলের উপরই আক্রমণ করত। এই সিংহের চামড়া এত পুরু ও শক্ত ছিল যে ব্রেঞ্জের তৈরী তীরও তার গায়ে না লেগে ছিঁটকে যেত।

হারকিউলিস তখন ওক গাছ কেটে বিশাল এক লগুড় তৈরী করল। এই লগুড় এত ভারী ছিল যে, বিশজন লোকেও তা ওঠাতে পারত না। আর এই লগুড় নিয়ে হারকিউলিস দু:সাহসিকভাবে সিংহের গুহায় প্রবেশ করল। সিংহ তার উপর ঝাপিয়ে পড়লে সে লগুড় দিয়ে তাকে আঘাত করে, তারপর দু‘হাতে গলা টিপে ধরে সেটিকে হত্যা করে। পরবর্তীতে হারকিউলিস ঐ সিংহের চামড়া দিয়ে নিজের জন্যে বর্ম ও শিরস্ত্রাণ তৈরী করে নিয়েছিল।

হারকিউলিস হাইদ্রার সঙ্গে যুদ্ধেরত।
অন্য এক কাহিনীতে আছে- কর্দমাক্ত জলাশয়ে হাইদ্রা নামে এক সাপ বাস করত। তার ছিল নয় মাথা, আর তার শরীর ছিল চকচকে আঁশে ঢাকা। ঐ সাপ জলাশয় থেকে বেরিয়ে পশুর পাল গিলে ফেলত। তখন হারকিউলিস সাপ হাইদ্রার সঙ্গে যুদ্ধে নামল, কিন্তু সে লক্ষ্য করল তলোয়ার দিয়ে সাপের একটি মাথা কেটে ফেললেই সেস্থানে দু‘টি মাথা গজিয়ে যাচ্ছে। এই ব্যাপার লক্ষ্য করে হারকিউলিস তার তরুণ সঙ্গীকে সাপের কাটা মাথা সঙ্গে সঙ্গে পুড়িয়ে ফেলার আদেশ দিল। এর ফলে নুতন মাথা আর গজাতে পারল না এবং সর্পরূপী দৈত্যকে সে ধ্বংস করল।

এ্যাটলাস মহাকাশ ধরে রেখেছে।
অন্যত্র আছে-সম্রাট আভগিয়াসের পাঁচ হাজার ষাঁড় ছিল। পশুশালা কখনও কেউ পরিস্কার করত না, ফলে গো-শালায় বিপুল পরিমাণে গোবর জমা হয়। সম্রাটকে হারকিউলিস কথা দিলেন যে, একদিনে সে সম্রাটের গো-শালা পরিস্কার করে দেবে। দুপুরে সম্রাট যখন তার অতিথিদের নিয়ে ভোজেরত ছিলেন সেইসময় হারকিউলিস নিকটবর্তী দু‘টি নদীতে বাঁধ দিয়ে দিল। বাঁধের ফলে নদীর পানি ফুলে উঠল এবং আশেপাশের অঞ্চল প্লাবিত হয়ে গেল। ঐ প্লাবনের জলস্রোতে সম্রাটের পশুশালার সমস্ত নোংরা ময়লা ধূয়ে সাফ হয়ে গেল।

আবার এক কাহিনীতে আছে- গ্রীকেরা মনে করত বহুদূর পশ্চিমে, যেখানে আকাশ মাটিতে গিয়ে মিশেছে এবং শক্তিশালী মহাবীর এ্যাটলাস বা আতলান্তোস (এই মহাবীরের নামানুসারে আটলান্টিক মহাসাগরের নামকরণ করা হয়েছে) পৃথিবীর উপর অর্ধবৃত্তকার ছাদ স্বরূপ বিশাল মহাকাশ নিজের কাঁধের উপর ধরে রেখেছে, সেখানে সমুদ্রোপকূলের এক উদ্যানে স্বর্ণ আপেল ফলে। হারকিউলিস ঐ স্বর্ণ আপেলের খোঁজে বেরিয়ে পড়ল।দীর্ঘপথ অতিক্রম করে সে অবশেষে সেখানে পৌঁছেছিল।

জেসোন ও মিদিয়া।
হারকিউলিস স্বর্ণ আপেল পাড়তে সক্ষম হল না। তখন তাকে সাহায্য করতে রাজী হল এ্যাটলাস। আর এ্যাটলাস হারকিউলিসকে দেবার জন্যে যতক্ষণ ফল পাড়ছিল, ততক্ষণ হারকিউলিসকে নিজ কাঁধে আকাশ ধরে রাখতে হয়েছিল। আকাশের ভারে হারকিউলিসের পা মাটিতে ডেবে যায়, হাঁড় মড়মড় করে ওঠে এবং তার শরীর দিয়ে ঘাম ঝরতে থাকে। -হারকিউলিসের এই ধরণের বহু কীর্ত্তির বিবরণ পুরাণে বর্ণনা করা হয়েছে।
বীর জেসোন ও তার বন্ধুদের স্বর্ণপশমী মেষচর্মের জন্যে অভিযান নিয়ে রচিত গ্রীক পুরাণের কাহিনী ছিল এমন-ককেশাস পার্বত্য অঞ্চলে কৃষ্ণসাগরীয় উপকূলের কোন একস্থানে অরণ্যের মধ্যে একটা স্বর্ণ পশমী মেষচর্ম ঝুলতো। মেষচর্মটির মালিক ছিলেন ঐ স্থানের এক রাজা। ঐ রাজা এক ড্রাগণকে ঐ মেষচর্মের পাহারায় নিয়োজিত করেন। এই ড্রাগন সদা জাগ্রত থেকে তা পাহারা দিত।

  স্বর্ণ মেষচর্মের পাহারায় ড্রাগন।
গ্রীকের কিছু সাহসী বীরপুরুষ একত্রিত হয়ে স্বর্ণপশমী ঐ মেষচর্মটি পাবার উদ্দেশ্যে বিপদজনক দূরদেশে পাড়ি জমায়। এই অভিযানে নেতৃত্ব দেয় দুঃসাহসী যুবক জেসোন। আর সুদক্ষ কারিগর আর্গ তাদের ঐ অভিযানের জন্যে একটা দাঁড়টানা পাল তোলা কাঠের জাহাজ তৈরী করে দেয়। তার নামানুসারে জাহাজের নামকরণ হয় আর্গো।

বহুদিন ধরে অজানা রহস্যেভরা সমুদ্রে পাড়ি দিতে থাকে অভিযাত্রীরা। সাগরাবৃত বিভিন্ন শৈল অঞ্চলের মধ্য দিয়ে তাদের যেতে হয়; কোন কোন স্থানে শৈল্য বিভক্ত গিরিখাদ অতি সংকীর্ণ, কোথাও বা তা আবার পরস্পর সংলগ্ন ছিল। এসব কারণে জাহাজ কোথাও ভয়ঙ্কর শব্দে সজোরে শিলার উপর ধাক্কা খেত, কোথাও সংকীর্ণ গিরিখাত কোনরকমে পার হত তারা, আবার কোথাও ডুবো পাহাড় জাহাজের হালের নিম্নতম কাঠকে ছুঁয়ে যেত। আর সকল ক্ষেত্রে অল্পের জন্যে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পেত তারা।

দু‘টো ষাঁড়ের সঙ্গে লড়াইরত জেসোন
বহু রোমাঞ্চকর ঘটনার পর অভিযাত্রীরা অবশেষে ককেশাশ অঞ্চলে গিয়ে পৌঁছায়। রাজা জেসোনকে বললেন, ‘মেষচর্ম পেতে হলে, হে যুবক, তোমাকে তোমার যোগ্যতা প্রমান করতে হবে। তুমি যদি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পার, তবেই ঐ মেষচর্ম লাভ করতে পারবে।’
জেসোন বলল, ‘কি সেই পরীক্ষা।’
রাজা বললেন, ‘আমার পোষা দু‘টো ষাঁড়ের সঙ্গে তোমাকে লড়তে হবে এবং শক্তির লড়াইয়ে সেগুলোকে পরাজিত করতে হবে।’

রাজার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল জেসোন কৃতকার্য হতে পারবে না। কেননা তার ঐ ষাঁড় দু‘টো ছিল ভয়ঙ্কর হিংস্র, যাদের নিঃশ্বাসে আগুন বের হত।

জেসোন ষাঁড় দু‘টির সঙ্গে লড়তে রাজী হল। ভিনদেশী যুবক জেসোনের দুঃসাহস দেখে রাজকন্যা মিদিয়া অনুপ্রাণিত হল এবং তাকে সাহায্য করতে চাইল। সুতরাং সে তাকে গোপনে তার শরীরে মাখার জন্যে এক জাদুকরী মলম দিল। ঐ মলম মাখার পর জেসোন অসাধারণ শক্তি অর্জন করল; তার পদযুগল তাম্র নির্মিত স্তম্ভের ন্যায় সূদৃঢ় হল এবং হস্তদ্বয় সাঁড়াশীর ন্যায় সুকঠিন হয়ে গেল।

পরদিন জেসোন লড়াইয়ের ময়দানে উপস্থিত হলে রাজার নির্দেশে ষাঁড় দু‘টোকে এনে ছেড়ে দেয়া হল। আর সেগুলো মাথা নীচু করে শিং উঁচিয়ে জেসোনকে আক্রমণ করল, কিন্তু স্বস্থান থেকে তাকে একবিন্দুও নড়াতে পারল না। তখন রাজার নির্দেশে ষাঁড় দু‘টোকে ধরে ভৃত্যরা লাঙ্গলে জুড়ে দিল এবং জেসোনকে বেষ্টন করে ঐ ময়দান চাষ শেষে সেখানে তারা ড্রাগনের দাঁত বপন করল।

বপনকরা দাঁত থেকে প্রথমে অন্তহীনভাবে মাটি ফুঁড়ে বর্শা এবং শিরস্ত্রাণের অগ্রভাগ বেরিয়ে আসতে লাগল, তারপর বেরিয়ে এল তামার বর্ম পরিহিত এক বিরাট সেনাবাহিনী। আর সমগ্র বাহিনী ভয়াল বিক্রমে জেসোনকে আক্রমণ করে বসল। তখন জেসোন একটা পাথর ছুঁড়ে সারিবদ্ধ সৈন্যদলের মাঝে ফেলে দিলে তারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া মারামারি শুরু করে দিল। এই অবসরে জেসোন তার তরবারীর সাহায্যে একে একে সমস্ত সৈন্য হত্যা করল।

জেসোন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও রাজা তাকে অঙ্গীকার মত স্বর্ণপশমী মেষচর্ম দিতে অস্বীকার করল। তখন রাজকন্যা মিদিয়া সাহায্য করতে এগিয়ে এল। সে যাদু দ্বারা প্রহরারত ড্রাগনকে ঘুম পাড়িয়ে দিলে জেসোন ঐ মেষচর্ম চুরি করে নিয়ে দ্রুত তার জাহাজে আরোহণ করে স্বদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। সম্রাট এই চুরির বিষয় জানতে পেরে তৎক্ষণাৎ তার সমস্ত সৈন্যবাহিনী জেসোনের পিছনে লেলিয়ে দেয়। জেসোন ও তার সঙ্গীরা তাদের হাত থেকে বহু কষ্টে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে গ্রীসে ফিরে আসে।

ইলিয়াদ
পুরাণ কাহিনী অবলম্বণে ইলিয়াদ ও ওডিসি মহাকাব্য দু‘টি রচনা করেন হোমার। এই গ্রীক কবি ছিলেন জন্মান্ধ। খ্রী:পূ: ৬ষ্ঠ শতকে মহাকাব্যদ্বয় লিখিতরূপে লিপিবদ্ধ করা হয়। কাব্যদ্বয় বিশ্বসাহিত্যের এক অমর সৃষ্টি; গভীর ভাবব্যঞ্জক, গম্ভীর, সমৃদ্ধ ও সুমধুর কাব্য ভাষায় রচিত।

ট্রয় বা ইলিওন শহরের নামানুসারে ‘ইলিয়াদ’এবং ট্রয় অবরোধকারী গ্রীক সেনাপতিদের একজন ওডিসিউসের নামানুসারে ‘ওডিসি’ মহাকাব্যের নামকরণ করা হয়েছে। ইলিয়াদ ট্রয় অবরোধের দশম বৎসরের কাহিনী অবলম্বণে এবং‘ওডিসি’সেনাপতি ওডিসিউস ও তার অধীনস্ত যোদ্ধাদের যুদ্ধ শেষে স্বদেশ প্রত্যাবর্তণের কাহিনী অবলম্বণে রচিত হয়েছে।

ইলিয়াদ: এশিয়া মাইনরের সমুদ্রোপকূলীয় উঁচু এক টিলার উপরে ট্রয় নগরী অবস্থিত ছিল। খ্রী:পূ: ১২০০ সালের কোন একসময়ে গ্রীকরা এই ট্রয়ে অভিযান করে। এই অভিযানে গ্রীকের বিভিন্ন উপজাতি স্ব-স্ব রাজ্যাধিপতির অধীনে অংশগ্রহণ করে। এইসব দলপতিদের অধীনস্ত সেনাদলে সাধারণ যোদ্ধারা ছিল পদাতিক; যাদের পরিধানে ছিল ক্যম্বিসের তৈরী বর্ম আর হাতিয়ার ছিল শুধু পাথর ও বর্শা। দলপতিদের ছিল অশ্ববাহিত যুদ্ধরথ। তাদের পরিধেয় ছিল তাম্র নির্মিত বর্ম আর অস্ত্র হিসেবে তাদের ছিল বর্শা ও ব্রোঞ্জের তৈরী তরবারী।

ট্রয় নগরী।
গ্রীকেরা সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে ট্রয়ের উপকন্ঠে পৌঁছে। সেখানে সমুদ্রতীরের উপর তারা তাদের কাষ্ঠ নির্মিত জাহাজ টেনে নিয়ে গিয়ে শিবির স্থাপন করে। অন্যদিকে ট্রয়ের অধিবাসীরা দূর্গ মধ্যে প্রবেশ করে দ্বার রূদ্ধ করে বসে থাকে। উঁচু টিলার উপরে অবস্থিত নগরীর চতুর্দিকস্থ প্রস্তর প্রাচীরের বেষ্টনী ট্রয়কে দূর্ভেদ্য করে তুলেছিল। ফলে গ্রীকেরা উপায়ন্তর না দেখে দশ বৎসর ধরে নগরীটি অবরোধ করে রাখল।

সুদীর্ঘকাল ধরে ট্রয় নগরীর ব্যর্থ অবরোধের ফলে গ্রীক যোদ্ধাদের মনোবল ভেঙ্গে যায়। তখন সেনাবাহিনীকে উদীপ্ত করতে নেতৃবর্গ এক সভা আহবান করল। গ্রীক শিবিরের ময়দানে চঞ্চল সেনাদল মহা হৈ চৈ করে সমবেত হল। সভায় এক পর্যায়ে থের্সিতেস নামক জনৈক সাধারণ যোদ্ধা নির্ভয়ে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এই বলে অভিযোগ করল যে, লুটের মাল তারাই সব আত্মসাৎ করেছে। সৈন্যবাহিনীকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তণের আহবান জানায় সে। এসময় সেনাপতিদের একজন-ওডিসিউস-তখন থের্সিতেসকে নির্মমভাবে প্রহার করে তাকে নিরস্ত হতে বাধ্য করেন। এই ঘটনার ফলে ট্রয় অবরোধ চালিয়ে যেতে যোদ্ধাদের সম্মত করাতে সেনাপতিদের খুবই বেগ পেতে হয়েছিল।

আখিলেস।
গ্রীক বাহিনীতে শ্রেষ্ঠ ও সর্বাপেক্ষা দ্রুতগতির যোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হত আখিলেসকে; সে গ্রীসের একটি উপজাতির নেতা ছিল। অন্যদিকে হেক্টর গণ্য হত ট্রয় বাহিনীর সবচেয়ে শক্তিশালী ও সাহসী বীর রূপে। এই দু‘জন বীরের মধ্যে যুদ্ধের বর্ণনাই মূলত: ইলিয়াদে লিপিবদ্ধ হয়েছে।

কথিত আছে বিভিন্ন দেব-দেবীও এই যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করেছিল। তাদের একাংশ গ্রীকদের পক্ষ নিয়েছিল, আরেক অংশ যোগ দিয়েছিল ট্রয়বাসীদের পক্ষে। যুদ্ধের দেবী এথেনা গ্রীকদের পক্ষ নেয়। আর দেব কর্মকার হেফেন্তুস আখিলেসের বর্ম নির্মাণ করে দিয়েছিল।
গ্রীক ও ট্রয়বাসীদের মধ্যে পুন:রায় যুদ্ধ শুরু হল। এই যুদ্ধ শুরু হল মূলত: হেক্টর ও আখিলেসের মধ্যে দ্বন্দ্ব যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে। গ্রীক পক্ষ সহায়তাকারী দেবী এথেনা হেক্টরের ভ্রাতার রূপ ধারণ করে ধূর্ততার সাথে হেক্টরকে আখিলেসের সাথে যুদ্ধে প্ররাচিত করে এবং সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়।

ট্রোজান হর্স নগরীতে টেনে নেয়া হচ্ছে।
দ্বন্দ্ব যুদ্ধের সময় আখিলেস হেক্টরকে লক্ষ্য করে প্রথম বর্শা ছুঁড়ে মারে, কিন্তু হেক্টর চট করে মাথা নীচু করে ফেলায় বর্শা মাথার উপর দিয়ে উড়ে চলে যায়। এরপর হেক্টর বর্শা ছুঁড়লে আখিলেসের ঢাল ছিদ্র হয়ে তা বেরিয়ে গেলেও হেফেন্তুষ নির্মিত বর্মকে তা বিদ্ধ করতে পারল না। এথেনা তখন আখিলেসকে বর্শা এগিয়ে দিল। এসময় হেক্টর তার ভ্রাতার উদ্দেশ্যে ডাকাডাকি করল, কিন্তু কেউ এসে নতুন কোন বর্শা আর তার হাতে তুলে দিল না। তখন সে তরবারী হাতে আখিলেসের দিকে অগ্রসর হল।

এই যুদ্ধে আখিলেস বর্শা বিদ্ধ করে হেক্টরকে হত্যা করে। তারপর ট্রয়ের ঐ নিহত বীরকে রথে রেঁধে নিয়ে সে গ্রীক শিবির পানে ছুটে যায়। 

ট্রয় যুদ্ধে অবশ্য আখিলেসেরও মৃত্যু হয়। পায়ের গোড়ালীতে বিষাক্ত তীর বিদ্ধ হবার ফলে সে মারা যায়। গ্রীক পুরাণ অনুসারে- আখিলেসের মাতা জনৈকা দেবী জন্মের পরপরই তার শিশু সন্তানকে ভূ-গর্ভস্থ এক নদীতে স্নান করায়। এরফলে একমাত্র পায়ের গোড়ালী- যা ধরে দেবীমাতা স্নান করিয়েছিল, ব্যতিত আখিলেসের সমস্ত শরীর অভেদ্য হয়ে ওঠে। এই কাহিনী থেকেই এই বাগ্বিধির উদ্ভব: Heels of Achilles, অর্থাৎ সর্বাপেক্ষা দুর্বল স্থান।

ট্রয় নগরীতে ট্রোজান হর্স
ট্রয় জয়ের জন্যে গ্রীকদের বহু ছলনা ও কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়। কুটবুদ্ধি সম্পন্ন ওডিসিউসের পরামর্শক্রমে গ্রীকরা এক বিরাট কাঠের ঘোড়া তথা 'ট্রোজান হর্স' নির্মাণ করে। এই ঘোড়ার পেটের ভিতরে কিছু সৈন্য আত্মগোপন করে থাকে, আর বাদবাকী সৈন্য আশ্রয় নেয় নিকটস্থ একটি দ্বীপে। দৃষ্টিনন্দন, অদ্ভূত ও অতিকায় কাঠের ঘোড়াটিকে ট্রয়বাসীগণ টেনে দূর্গ মধ্যে নিয়ে যায়। রাত্রিকালে ঘোড়ার পেট থেকে যথারীতি গ্রীক সৈন্য বেরিয়ে এসে দূর্গদ্বার খুলে দেয় এবং নিদ্রিত ট্রয়বাসীদের হত্যা করতে শুরু করল। ইতিমধ্যে পার্শ্ববর্তী দ্বীপে লুকিয়ে থাকা সৈন্যরা এসে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। গ্রীকরা ট্রয়ের সকল পুরুষকে হত্যা করে নারী ও শিশুদের বন্দী করে নেয়। সমস্ত শহর লুন্ঠন করার পর তারা আগুন দিয়ে নগরীটি পুড়িয়ে দেয়। লুন্ঠিত প্রচুর ধনসম্পদ নিয়ে অবশেষে গ্রীকরা স্বদেশের পথে যাত্রা করে। 

সাইক্লোপ্স।
ওডিসি: ইথাকা দ্বীপটি গ্রীসের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত। সেনাপতি ওডিসিউসের জন্মস্থান এটি। ইথাকার যোদ্ধারা বারটি জাহাজে চড়ে সেনাপতি ওডিসিউসের নেতৃত্বে স্বদেশ অভিমুখে যাত্রা করল। তখনও জলন্ত ট্রয়ের ধূম্রশিখা সম্পূর্ণ নির্বাপিত হয়নি। বায়ূর দেবতা হিমেল উত্তর বায়ূর প্রচন্ড ঝটিকা সৃষ্টি করার ফলে গ্রীকগণ পথ হারিয়ে ফেলে। আর অজানা পথে দু‘বার দৈত্যদের দ্বীপে আটকা পড়ে। 

পথ হারিয়ে ফেলার পর গ্রীকগণ এক দ্বীপে গিয়ে নোঙ্গর ফেলল। ঐ দ্বীপে বাস করত ভয়ঙ্কর একদল দৈত্য। তারা গ্রীকদের দেখতে পেয়ে সমবেত ভাবে তাদেরকে আক্রমণ করল। গ্রীকরা দ্রুত জাহাজে উঠে জাহাজ ছেড়ে দিল। তখন দৈত্যগণ বড় বড় পাথর এনে তা ছুঁড়ে মারতে লাগল গ্রীক নৌবহরকে লক্ষ্য করে। তাদের ছোঁড়া পাথরের আঘাতে বারটি জাহাজের এগারটিই ধ্বংস হয়ে যায়। শুধুমাত্র ওডিসিউসের জাহাজটি দূর সমুদ্রে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

যে সব জাহাজ নিক্ষিপ্ত পাথরের আঘাতে ধ্বংস হয়েছিল, তার আরোহীদের কিছু ডুবে মারা গেল। আর অন্যেরা যারা সাঁতরে কূলের দিকে এল, তাদেরকে দৈত্যরা ধরে ফেলল। অত:পর তারা ধৃত গ্রীকদের কিছুকে খেয়ে ফেলল এবং বাকীদের হত্যা করল।

ওডিসিউস ও তার সঙ্গীরা মিলে তীক্ষ্ণমুখ এক দন্ড দিয়ে
ওডিসিউস ও তার সঙ্গীরা আবারও একটা দ্বীপে গিয়ে উপস্থিত হল। এই দ্বীপেও থাকত সাইক্লোপস নামের একদল দৈত্য, তাদের কপালের মাঝখানে একটা মাত্র চোখ। তাদের পেশা ছিল পশু পালন। ওডিসিউস ও তার সঙ্গীরা এক সাইক্লোপ্সের গুহায় প্রবেশ করে। গুহার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পনিরের চাঁই ও ভাড় ভর্ত্তি দই ছিল। তারা সেগুলি ভরপুর খেয়ে সেখানেই আরামে ঘুমিয়ে পড়ে।  

এদিকে সন্ধ্যার সময় ঐ গুহার মালিক সাইক্লোপ্স তার পশুপাল তাড়িয়ে নিয়ে এসে গুহায় প্রবেশ করল। সব পশু গুহার মধ্যে প্রবেশ করলে সে গুহামুখ বিরাট এক পাথরের চাঁই দিয়ে বন্ধ করে দিল। ওডিসিউস ও তার সঙ্গীদের কারও পক্ষে ঐ পাথর সরাবার সাধ্য ছিল না।

এদিকে পশুর হাঁক ডাকে ওডিসিউস ও তার সঙ্গীদের ঘুম ভাঙ্গল। তারা পশুপাল দেখল, তারপর যখন ভয়ঙ্কর দৈত্যকে দেখল এবং দেখল গুহামুখ বন্ধ অতিকায় এক পাথর দিয়ে, তখন তাদের আত্মারাম খাঁচা ছাড়া। অন্যদিকে দৈত্য তাদেরকে দেখতে পেয়ে তখনই দু‘জনকে ধরে জ্যান্ত খেয়ে ফেলল।পরদিন দৈত্য আরও চারজনকে খায়। তখন ওডিসিউস তাকে কৌশলে মদ পান করাল। মদ খেয়ে দৈত্য যখন ঘুমিয়ে পড়ল তখন ওডিসিউস ও তার সঙ্গীরা মিলে তীক্ষ্ণমুখ এক দন্ড দিয়ে দৈত্যের চোখে আঘাত করে। 

ওডিসিউসের জাহাজ সিরেনদের কবলে।
প্রত্যূষে ঐ সাইক্লোপস তার ছাগল ও ভেড়ার পালকে চরতে দেবার জন্যে গুহার মুখ থেকে পাথরের চাঁইটা সরিয়ে ফেলল এবং নিত্যদিনের মত গুহার মুখে বসে রইল যাতে কোন মানুষ বেরিয়ে যেতে না পারে। তখন ওডিসিউসের পরামর্শক্রমে তিনটা ভেড়াকে একত্রে বেঁধে তাদের পেটের সঙ্গে একজন করে লোক বাঁধা হল। এইভাবে গ্রীকরা দৈত্যকে বুঝতে না দিয়ে গুহা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হল। অত:পর দ্রুত তারা তাদের জাহাজে চড়ে বসে এবং ঐ ভয়ঙ্কর দ্বীপ থেকে বিদায় নেয়। 

অবশেষে ওডিসিউসদের জাহাজ সিরেনদের এক দ্বীপের কাছে চলে এল। এই সিরেনরা ছিল অর্ধপক্ষী ও অর্ধনারী, দেহ ছিল তাদের পাখীর আর মাথা ছিল নারীর। জনমানব শুন্য দ্বীপে তারা বসবাস করত। জাহাজের নাবিকদের তারা গান শুনিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ করে পরে হত্যা করত। সুতরাং এই দ্বীপের পাশ দিয়ে যাবার সময় ওডিসিউস তার নাবিকদের নির্দেশ দিল, তারা যেন নিজেদের কান মোম দিয়ে বন্ধ করে ফেলে এবং তাকে জাহাজের মাস্তুলের সাথে বেঁধে রাখে। 
ওডিসিউসই একমাত্র ব্যক্তি যে সিরেনদের গান স্বকর্নে শুনতে পেয়েও মৃত্যুর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছিল।

ওডিসিউসের ট্রয় থেকে ইথাকায় ভ্রমণ পথের রুট ম্যাপ।
কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। ওডিসিউসের সঙ্গীরা বজ্র ও বিদ্যূতের দেবতা জিউসকে রুষ্ট করায় সে বজ্রবাণে জাহাজটা ধ্বংস করে দিল। ওডিসিউস জাহাজের ভাঙ্গা মাস্তুল ধরে অতিকষ্টে সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে একসময় তীরে পৌঁছায়।

দশ বৎসর ধরে বিভিন্নস্থান ভ্রমণের পর অবশেষে ওডিসিউস তার জন্মভূমি ইথাকায় গিয়ে পৌঁছায়। প্রথমেই যার সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটে সে শুকর চারণরত এক দাস। এই দাস জন্মেছিল এক স্বাধীন পরিবারে, কিন্তু তার বাল্যকালে ফিনিসীয়রা তাকে চুরি করে ইথাকায় নিয়ে বিক্রি করে দেয়।

এদিকে ওডিসিউসের অনুপস্থিতিতে তার প্রাসাদ ও সম্পত্তি অন্যান্য সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ ভোগদখল করছিল, তাই ভিক্ষুক বেশে সে নিজের প্রাসাদে প্রবেশ করে। তারপর অবাঞ্ছিত ব্যক্তিদের সকলকে হত্যা করে সে ইথাকায় আবার নিজের শাসন কায়েম করে।

সমাপ্ত।

উৎস: হিস্ট্রি অব দা এন্সিয়েন্ট ওয়ার্ল্ড -ফিওদর করোভকিন। হিস্ট্রি অব গ্রীস -গ্রোট। এন্সিয়েন্ট মনার্কী -শিলথন।
ছবি: Wikipedia, geekechoes.blogspot, bo.infn.it, creativeuncut, macedoniansincanada, myths101.tumblr, genzoman.deviantart, bestmyth, kusadasi.tv, irasov, npr, dukeart, ancientgreece,  tellmeomuse.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Moses: কোরাণিক ক্যানভাসে নবী মূসা।

Abu Hena Mostafa Kamal  01 May, 2017 মি সরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ফেরাউন। হঠাৎ করে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। কিন্তু তিনি কোন উত্তরাধিকারী ন...