৬ মার্চ, ২০১২

Jinn: জ্বীনদের ইসলামের দীক্ষা।


অন্যান্য আসমানী কিতাব, কিতাব আকারে একবারে সংশ্লিষ্ট রসূলকে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোরআনের ক্ষেত্রে তা হয়নি। ২৬শে রমজান দিবাগত রাত্রিতে (শবে কদরের রাত) সমগ্র কোরআন লওহে মাহফুজ থেকে তুলে নিয়ে পৃথিবীর উর্দ্ধাকাশে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এভাবে পূর্ণ কোরআন মুহম্মদের নব্যুয়তের পূর্বেই অদৃশ্যলোক থেকে দৃশ্যলোকে আগমন করে। (এর কারণ এই যে, জিব্রাইল বা অন্যান্য ফেরেস্তা যারা দুনিয়ার কাজে নিয়োজিত, তাদের অদৃশ্যলোকে যারার ক্ষমতা নেই।) অতঃপর জিব্রাইল সাড়ে তেইশ বৎসর ধরে প্রয়োজন অনুসারে একটু একটু করে মুহম্মদের কাছে তা পৌঁছে দেন। এ সংক্রান্ত কোরআনের আয়াতসমূহ-নিশ্চয় আমি এই কোরআন অবতীর্ণ করেছি লায়লাতুল কদরে। লায়লাতুল কদর সম্পর্কে তুমি কি জান? লায়লাতুল কদর হল হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এই রাতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেস্তারা স্বীয় পালনকর্তার নির্দেশে অবতীর্ণ হয়। শান্তিই শান্তি, যা ফজরোদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (৯৭:১-৫)

জ্বীন?
মুহম্মদের নব্যুয়ত লাভের পূর্বে জ্বীন (Jinn) জাতি উর্দ্ধাকাশে ফেরেস্তাদের আলোচনা শুনে সেগুলি তাদের মত করে অতীন্দ্রবাদীদের কাছে পৌঁছিয়ে দিত। তার নব্যুয়ত লাভের পর ওহীর হেফাজতের জন্যে জ্বীন জাতিকে আকাশের সংবাদ সংগ্রহ থেকে নিবৃত্ত রাখা হয়।

কোন জ্বীন সংবাদ শ্রবণের মানসে উর্দ্ধাকাশে গেলে, তাকে উল্কাপিন্ড নিক্ষেপ করে বিতাড়িত করা হতে লাগল। জ্বীনদের কেউ কেউ এই নূতন পরিস্থিতির কারণ উৎঘাটনে সচেষ্ট হল এবং তাদের বিভিন্ন দল পৃথিবীর বিভিন্ন ভূ-খন্ডে ছড়িয়ে পড়ল। তাদের একদল হিজাজেও পৌঁছিল। এদিন তায়েফ থেকে ফেরার পথে মুহম্মদ জায়েদসহ নাখালায় অবস্থান করছিলেন। তিনি যখন ফজরের নামাযের কোরআন পাঠ করছিলেন, তখনই জ্বীনদের এই দলটি সেখানে পৌঁছেছিল। দলে সাত থেকে নয়জন জ্বীন ছিল। তারা মুহম্মদের কোরআন পাঠ একাগ্রচিত্তে শ্রবণ করল। অতঃপর ফিরে গিয়ে তারা তাদের রিপোর্ট পেশ করল। তাদের রিপোর্ট ছিল এমন-

‘হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এমন এক কিতাব শুনেছি, যা মূসার পর অবতীর্ণ হয়েছে। এ কিতাব পূর্ববর্তী সব কিতাবের সত্যায়ন করে, সত্যধর্ম ও সরলপথের দিকে পরিচালিত করে। হে আমাদের সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর দিকে আহবানকারীর কথা মান্য কর এবং তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তিনি তোমাদের গোনাহ মার্জনা করবেন।

আমরা বিষ্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি; যা সৎপথ প্রদর্শণ করে। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনও আমাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক স্থাপন করব না এবং আরও বিশ্বাস করি যে, আমাদের পালনকর্তার মহান মর্যাদা সবার উর্দ্ধে। তিনি কোন পত্নী গ্রহন করেননি এবং তাঁর কোন সন্তান নেই। আমাদের মধ্যে নির্বোধেরা আল্লাহ সম্পর্কে বাড়াবাড়ির কথাবার্তা বলত। অথচ আমরা মনে করতাম, মানুষ ও জ্বীন কখনও আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যে কথা বলতে পারে না।

আমরা আকাশ পর্যবেক্ষণ করেছি, অতঃপর দেখতে পেয়েছি যে, কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিন্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ। আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে সংবাদ শ্রবণার্থে বসতাম। এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে সে জ্বলন্ত উল্কাপিন্ডকে ওঁৎ পেতে থাকতে দেখে। আমরা জানি না পৃথিবীবাসীদের অমঙ্গল সাধন করা অভীষ্ট, না তাদের পালনকর্তা তাদের মঙ্গল সাধন করার ইচ্ছে রাখেন। আমাদের কেউ কেউ সৎকর্মপরায়ণ এবং কেউ কেউ এরূপ নয়। আমরা ছিলাম বিভিন্ন পথে বিভক্ত। আমরা বুঝতে পেরেছি যে, আমরা পৃথিবীতে আল্লাহকে পরাস্ত করতে পারব না এবং পলায়ন করেও তাঁকে অপারগ করতে পারব না।

আমরা যখন সুপথের নির্দেশ শুনলাম, তখন তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলাম। অতএব, যে তার পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস করে, সে লোকসান ও জোর-জবরের আশঙ্কা করে না। আমাদের কিছু সংখ্যক আজ্ঞাবহ এবং কিছু সংখ্যক অন্যায়কারী। যারা আজ্ঞাবহ হয় তারা সৎপথ বেঁছে নিয়েছে। আর যারা অন্যায়কারী, তারা তো জাহান্নামের ইন্ধন। আর এই প্রত্যাদেশ করা হয়েছে যে, তারা যদি সৎপথে কায়েম থাকত, তবে আমি তাদেরকে প্রচুর পানি বর্ষণে সিক্ত করতাম, যাতে এই ব্যাপারে তাদেরকে পরীক্ষা করি। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তিনি তাকে উদীয়মান আযাবে পরিচালিত করবেন এবং এই ওহীও করা হয়েছে যে, মসজিদসমূহ আল্লাহকে স্মরণ করার জন্যে। অতএব তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে ডেক না।’

এই সংবাদের ভিত্তিতে পরবর্তীতে আরও প্রায় নয়শত জ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিল। মুহম্মদ এ সংবাদ অবগত হন সূরা জ্বীন নাযিল হওয়ার পর। 

এ সংক্রান্ত কোরআনের আয়াতসমূহ- নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী আকাশকে তারকারাজীর দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং তাকে সংরক্ষিত করেছি প্রত্যেক অবাধ্য শয়তান থেকে। ওরা উর্দ্ধ জগতের কোন কিছু শ্রবণ করতে পারে না এবং চারদিক থেকে তাদের প্রতি উল্কা নিক্ষেপ করা হয়, ওদেরকে বিতাড়নের উদ্দেশ্যে। ওদের জন্যে রয়েছে বিরামহীন শাস্তি। তবে কেউ ছোঁ মেরে কিছু শুনে ফেললে জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড তার পশ্চাৎধাবন করে।(৩৬:৬-১০)

যখন আমি একদল জ্বীনকে তোমার প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম, তারা কোরআন পাঠ শুনছিল। তারা যখন কোরআন পাঠের জায়গায় উপস্থিত হল, তখন পরস্পর বলল, ‘চুপ থাক।’
অতঃপর যখন পাঠ সমাপ্ত হল, তখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে সতর্ককারীরূপে ফিরে গেল। তারা বলল, ‘হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এমন এক কিতাব শুনেছি, যা মূসার পর অবতীর্ণ হয়েছে। এ কিতাব পূর্ববর্তী সব কিতাবের সত্যায়ন করে, সত্যধর্ম ও সরলপথের দিকে পরিচালিত করে। হে আমাদের সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর দিকে আহবানকারীর কথা মান্য কর এবং তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তিনি তোমাদের গোনাহ মার্জনা করবেন।’(৪৭:২৯-৩১)
 
আমরা বিষ্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি; যা সৎপথ প্রদর্শণ করে। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনও আমাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক স্থাপন করব না এবং আরও বিশ্বাস করি যে, আমাদের পালনকর্তার মহান মর্যাদা সবার উর্দ্ধে। তিনি কোন পত্নী গ্রহন করেননি এবং তাঁর কোন সন্তান নেই। আমাদের মধ্যে নির্বোধেরা আল্লাহ সম্পর্কে বাড়াবাড়ির কথাবার্তা বলত। অথচ আমরা মনে করতাম, মানুষ ও জ্বীন কখনও আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যে কথা বলতে পারে না।’
অনেক মানুষ অনেক জ্বীনের আশ্রয় নিত, ফলে তারা জ্বীনদের আত্মরম্ভিতা বাড়িয়ে দিত। তারা ধারণা করত, যেমন তোমরা মানবেরা ধারণা কর যে, মৃত্যুর পর আল্লাহ কখনও কাউকে পুনরুত্থিত করবেন না।

--‘আমরা আকাশ পর্যবেক্ষণ করেছি, অতঃপর দেখতে পেয়েছি যে, কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিন্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে সংবাদ শ্রবণার্থে বসতাম। এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে সে জ্বলন্ত উল্কাপিন্ডকে ওঁৎ পেতে থাকতে দেখে। আমরা জানি না পৃথিবীবাসীদের অমঙ্গল সাধন করা অভীষ্ট, না তাদের পালনকর্তা তাদের মঙ্গল সাধন করার ইচ্ছে রাখেন। আমাদের কেউ কেউ সৎকর্মপরায়ণ এবং কেউ কেউ এরূপ নয়। আমরা ছিলাম বিভিন্ন পথে বিভক্ত। আমরা বুঝতে পেরেছি যে, আমরা পৃথিবীতে আল্লাহকে পরাস্ত করতে পারব না এবং পলায়ন করেও তাঁকে অপারগ করতে পারব না। 

আমরা যখন সুপথের নির্দেশ শুনলাম, তখন তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলাম। অতএব, যে তার পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস করে, সে লোকসান ও জোর-জবরের আশঙ্কা করে না। আমাদের কিছু সংখ্যক আজ্ঞাবহ এবং কিছু সংখ্যক অন্যায়কারী। যারা আজ্ঞাবহ হয় তারা সৎপথ বেঁছে নিয়েছে। আর যারা অন্যায়কারী, তারা তো জাহান্নামের ইন্ধন। আর এই প্রত্যাদেশ করা হয়েছে যে, তারা যদি সৎপথে কায়েম থাকত, তবে আমি তাদেরকে প্রচুর পানি বর্ষণে সিক্ত করতাম, যাতে এ ব্যাপারে তাদেরকে পরীক্ষা করি। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তিনি তাকে উদীয়মান আযাবে পরিচালিত করবেন এবং এই ওহীও করা হয়েছে যে, মসজিদসমূহ আল্লাহকে স্মরণ করার জন্যে। অতএব তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে ডেক না।’
আর যখন আল্লাহর বান্দা তাঁকে ডাকার জন্যে দন্ডায়মান হল, তখন অনেক জ্বীন তার কাছে ভীড় জমাল।(৭২:১-২০)

সহল ইবনে আব্দুল্লাহ একস্থানে একব্যক্তিকে নামাজ আদায় করতে দেখতে পেলেন। তার গায়ে ছিল একটা পশমের জোব্বা। জোব্বার চাকচিক্যে সহল অভিতূত হলেন। যখন ঐ ব্যক্তির নামাজ শেষ হল, তখন সহল তাকে সালাম জানালেন। ঐ ব্যক্তি তাকে তার দিকে অবাক হয়ে তাকাতে দেখে বলল, ‘তুমি কি এই জোব্বার চাকচিক্য দেখে অবাক হচ্ছ? জোব্বাটি সাত‘শ বৎসর ধরে আমি ব্যাবহার করছি। এই জোব্বা পরিধান করে আমি ঈসার সাথে সাক্ষাৎ করেছি। অতঃপর এই জোব্বা গায়েই আমি মুহম্মদের দর্শণ লাভ করেছি। যে সব জ্বিন সম্পর্কে সূরা জ্বীন অবতীর্ণ হয়েছে- আমি তাদেরই একজন।’- Sifat al-Safwah by Ibn al-Jawzi.

সমাপ্ত।
ছবি: Jinnstudy.blogspot.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Moses: কোরাণিক ক্যানভাসে নবী মূসা।

Abu Hena Mostafa Kamal  01 May, 2017 মি সরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ফেরাউন। হঠাৎ করে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। কিন্তু তিনি কোন উত্তরাধিকারী ন...