বিবাহের পর থেকে কোন কোন সময়ে পরিবারসহ, বেশীরভাগ সময়ে একাকী হেরা পর্বতের গুহায় গিয়ে প্রার্থনা করা এবং ধ্যানমগ্ন হওয়া মুহম্মদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। মিনার প্রায় কাছাকাছি এবং কাবা থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই হেরাপর্বত (এটি জাবালে নূর বা জ্যোতির পাহাড় নামেও খ্যাত) একটি বিশাল অনুর্বর পাহাড়, একটি বিদীর্ণ ও গুণ্যগর্ভ গিরিখাদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন এবং মরুভূমির সূর্য্য কিরণে এক ছায়াহীন, পুষ্পহীন, নদী বিহীন গিরি হিসেবে দন্ডায়মান।
হেরা গুহা। |
জাবালে নূর বা হেরা পর্বত। |
একদিন (৯ই রবিউল আওয়াল, সোমবার, ৬১০ খ্রীষ্টাব্দ) রাত্রির নিথর নিস্তব্ধ মূহুর্তে, আসমান থেকে সূরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত তুলে নিয়ে জিব্রাইল হাযির হল হেরা গুহায়। অতঃপর মুহম্মদকে বলল, ‘তুমি সেই মানুষ। আল্লাহর রসূল। তোমার প্রভুর নামে পাঠ কর।’
এই বাণী অতি প্রত্যুষের প্রশান্ত মূহুর্তে ভোরের বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দের মত মুহম্মদের কর্ণকূহরে প্রবেশ করল। সেই মূহুর্তে আত্মনিমগ্ন মুহম্মদ সম্মুখে তাকিয়ে স্বর্গীয় ফেরেস্তাকে দেখলেন। তার সমুদ্র কল্লোলের মত মহাশক্তিশালী কন্ঠস্বর পুনঃরায় ধ্বনিত হল। কিন্তু তিনি সেই বাণী উচ্চারণ করতে ব্যর্থ হলেন। এক বিভীষিকাপূর্ণ ভার তার উপর চেপে বসল এবং তার হৃদয় থেকে একটি উত্তর বেরিয়ে এল-‘আমি পড়তে পারিনে।’
তখন ফেরেস্তা তাকে আলিঙ্গন করল এবং ছেড়ে দিয়ে আবার বলল-‘পড়।’
আগের মতই তিনি সে বাণী উচ্চারণ করতে ব্যর্থ হলেন। তখন ফেরেস্তা আগের মতই তাকে আলিঙ্গন করল। এভাবে একসময় তৃতীয়বারের মত কন্ঠস্বরটি
বিঘোষিত হল ‘পড়।’
বিঘোষিত হল ‘পড়।’
বলা হল-
‘পড়, তোমার সেই প্রভুর নামে-
যিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন-
যিনি এক বিন্দু রক্ত হতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন,
পড়-তোমার সেই মহিমাময় প্রভু -
যিনি (সাধারণতঃ) কলমের দ্বারা জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন-
যিনি মানুষকে অনুগ্রহ করে অজ্ঞাতপূর্ব জ্ঞান দান করেছেন।’(৯৬:১-৫)
কন্ঠস্বরটি থেমে গেল। মুহম্মদ সম্মোহিত অবস্থা থেকে জেগে উঠলেন এবং তার মনে হল তার কাছে যে কথাগুলি উচ্চারিত হয়েছে তা তার হৃদয়পটে লিখিত হয়ে গেছে। তার সমস্ত দেহে কম্পন শুরু হল; তিনি দেখলেন আকাশ পথে জিব্রাইল তখনও দাঁড়িয়ে আছে। তার ভয় হতে লাগল। তাড়াতাড়ি বাড়ীতে ফিরে এলেন।
সমাপ্ত।
ছবি: Wikipedia.
ছবি: Wikipedia.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন