১৪ মার্চ, ২০১২

Bani Israel: তাঁহ প্রান্তরে নজর বন্দীত্বের কারণ।


দ্বিতীয় মাসের বিশ দিনের দিন সাক্ষ্য তাম্বুর উপর থেকে মেঘ সরে গেল। তখন ইস্রায়েলীরা (Bani Israel) সিনাই মরুএলাকা থেকে যাত্রা শুরু করল। খোদার আদেশ অনুসারে এই প্রথমবারের মত তারা যাত্রাপথে পা বাড়াল। সেই মেঘ পারণ মরু এলাকায় এসে স্থির হয়ে না দাঁড়ান পর্যন্ত তারা চলতেই থাকল।

মিসর থেকে প্যালেস্টাইনের পথে বনি ইস্রায়েলী (রুট ম্যাপ)।
আবাস-তাম্বুর উপর থেকে যখন মেঘ সরে যেত তখন ইস্রায়েলীরা যাত্রা শুরু করত। আর যেখানে সেই মেঘ স্থির হয়ে দাঁড়াত সেখানেই তারা তাম্বু ফেলত। মেঘ সরে গেলেই তারা যাত্রা শুরু করত- তা দিনেই হোক বা রাতে। আর যতদিন মেঘ আবাস তাম্বুর উপরে থাকত তা সে দু‘দিন হোক বা এক মাস কিম্বা তার বেশী সময়, ইস্রায়েলীরা তাম্বু ফেলে সেখানেই অবস্থান করত, যাত্রা করত না। 

যখনই ইস্রায়েলীরা সাক্ষ্য-সিন্দুকটি নিয়ে রওনা হত তখন মূসা বলতেন, ‘হে খোদা! তোমার শত্রুরা সব ছড়িয়ে পড়ুক আর যারা তোমাকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে তারা তোমার সামনে থেকে পালিয়ে যাক।’ আর যখনই মেঘ থেমে যেত তিনি বলতেন, ‘হে খোদা, আমাদের মাঝে তুমি ফিরে এসো।’

ইস্রায়েলীদের যাত্রা ছিল উত্তরমুখী এবং কনানের দক্ষিণ সীমায় কা’দেশ বর্ণিয়তে শেষ হল। এখানে পৌঁছানোর পর মূসাকে নির্দেশ দেয়া হল পবিত্র ভূমি কনান দেশে (সিরিয়ায়) প্রবেশ করতে এবং আগাম জানিয়ে দেয়া হল আল্লাহ এই পবিত্র ভূমির আধিপত্য তাদের ভাগ্যে লিখে দিয়েছেন- যা বাস্তবায়িত হবে। 

সুতরাং মূসা শিবির স্থাপনের পর প্রত্যেক বংশ থেকে একজন করে, নেতৃস্থানীয় বারজনকে কনান দেশে পাঠালেন, যেন তারা গিয়ে ঐ দেশের প্রয়োজনীয় খবরাখবর নিয়ে আসে। দেশের ভূমি, এর উর্বরাশক্তি এবং উৎপন্ন ফসল, দেশের শহরগুলি ও লোকদের প্রকৃতি ইত্যাদি জানাই ছিল প্রকৃত উদ্দেশ্য। যাত্রার পূর্বে মূসা তাদেরকে বলে দিয়েছিলেন, ‘তোমরা সেখানে যা কিছু দেখতে পাবে, তা প্রথমে আমাকে জানাবে। আমার অনুমতি ব্যতিত কারও কাছে কোনকিছু বর্ণনা করবে না।’

প্রতিনিধি দলটি রওনা হল এবং দেশের একদম উত্তর সীমা পর্যন্ত গিয়ে অন্যপথ দিয়ে ফিরে এল। এই যাত্রায় চল্লিশ দিন সময় লেগেছিল যা এই ছোট দেশটি দেখার জন্যে যথেষ্টই ছিল। যাত্রা পথে, এক পর্যায়ে শহরের বাহিরে পথিমধ্যে অমালিকা সম্প্রদায়ের আউজ বিন উনূক নামক এক ব্যক্তির সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয়েছিল। আউজ তাদের সাথে কথাবার্তা বলার পর বুঝতে পারল যে, তারা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে এসেছে। তখন সে রাগান্বিত হয়ে তাদের বারজনকে একাই বন্দী করে রাজদরবারে হাজির করল এবং রাজাকে তাদের অভিসন্ধি সম্পর্কে অবহিত করল। সুতরাং তাদেরকে আটক রাখা হল এবং দরবারে তাদের সম্পর্কে পরামর্শ চলল। উপদেষ্টাদের কেউ কেউ বলল, ‘তাদেরকে হত্যা করা হোক।’ 
আবার কেউ কেউ বলল, ‘তাদেরকে মুক্তি দেয়া হোক।’ 

অবশেষে সিদ্ধান্ত হল তাদেরকে মুক্তি দেয়া হবে, যেন তারা ফিরে গিয়ে তাদের সম্প্রদায়ের কাছে অমালিকাদের দৈহিক আকৃতি ও শক্তির কথা বর্ণনা করতে পারে। আর যেন তাদের যুদ্ধের সাধ একেবারেই মিটে যায়। 
তারা মুক্ত হল।

এই দল মুক্ত হয়ে যখন ফিরে আসছিল তখন আল্লাহ তাদেরকে ঐ শহরে প্রবেশের সময় কর্মজনিত ও বাক্যজনিত আদবের সাথে প্রবেশ করতে বলে দিয়েছিলেন, বলেছিলেন, ‘তোমরা এই জনপদে প্রবেশ কর এবং যেখানে ইচ্ছে যাও ও যা ইচ্ছে খাও, ‘মাথা নীচু করে প্রবেশ কর’ (কর্মজনিত আদব) আর বল, ‘ক্ষমা চাই’ (বাক্যজনিত আদব) আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করব; আর যারা সৎকর্ম করে তাদের জন্যে আমার দান বাড়িয়ে দেব।’ 
এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াত-‘যখন আমি বললাম, ‘তোমরা এ জনপদে প্রবেশ কর এবং যেখানে ইচ্ছে যাও ও যা ইচ্ছে খাও, মাথা নীচু করে প্রবেশ কর আর বল, ‘ক্ষমা চাই’ আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করব; আর যারা সৎকর্ম করে তাদের জন্যে আমার দান বাড়িয়ে দেব।’(২:৫৮)

থোকাসহ আঙ্গুর ফলের একটা ডাল কেটে নিয়ে এসেছিল।
মুক্তিলাভ করে ফিরে আসার সময় দেশটির উর্বরাশক্তি সম্বন্ধে ব্যাখ্যা দেয়ার জন্যে, প্রতিনিধি দলটি স্কোল থেকে কতকগুলি থোকাসহ আঙ্গুর ফলের একটা ডাল কেটে নিয়ে এসেছিল। যা দু‘জনে একটা লাঠিতে ঝুলিয়ে এনেছিল। এছাড়া তারা কিছু ডালিম ও ডুমুর এনেছিল। 

প্রতিনিধি দলটি ফিরে এসে মূসার কাছে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করল। তারা বলল, ‘দেশটা সত্যিই দুধ-মধুতে ভরা, কোন কিছুরই অভাব নেই সেখানে। এই হল সেখানকার ফল (থোকা শুদ্ধ আঙ্গুর লতা, ডালিম, ডুমুর প্রভৃতি ফল তারা মূসার সম্মুখে রাখল।)’ 
তারা বলে চলল-‘কিন্তু যারা সেখানে বাস করে তাদের গায়ে শক্তি বেশী এবং তাদের শহরগুলোও বেশ বড় বড় আর প্রাচীর বেষ্টিত। অনাকের বংশের লোকদেরও আমরা সেখানে দেখেছি। 
--অমালেকীয়েরা বাস করছে নেগেভে; হিত্তীয়, যিবূষীয় ও ইমোরীয়েরা পাহাড়ী এলাকায়, আর কনানীয়দের বাস সমুদ্রের কাছে এবং জর্দান নদীর কিনারা ধরে।’
১২ প্রতিনিধি ও তাদের আনীত ফল।
কিন্তু শক্তিশালী লোকদের কথা শুনলেও মূসার মধ্যে এর কোন প্রভাব পড়ল না। কেননা পূর্বেই আল্লাহ ওহীর মাধ্যমে তাকে বিজয় ও সাফল্যের বাণী শুনিয়ে রেখেছিলেন। সুতরাং তিনি নিশ্চিত ছিলেন অমালিকাদের শক্তি ও প্রকান্ড অবয়ব কোনই কাজে আসবে না। তিনি মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে সকলকে আদেশ দিলেন। 

বনি-ইস্রায়েলীরা প্রতিদ্বন্দ্বী সম্প্রদায়ের এত বড় শক্তি ও দৈহিক প্রকান্ডতার কথা জানতে পারলে যুদ্ধ করতে রাজি হবে না, কেননা শত শত বৎসর গোলামী করে তারা হীনমন্যতায় ভুগছিল এবং তাদের আত্মবিশ্বাসের এতটুকুও অবশিষ্ট ছিল না। এই আশঙ্কার কথা মূসার মনে উদয় হল। সুতরাং তিনি প্রতিনিধি দলের বারজনকেই এইবলে সতর্ক করে দিলেন যেন তারা কোন অবস্থায়ই বনি-ইস্রায়েলীদের কাছে অমালিকা সম্প্রদায়ের দৈহিক শক্তি ও প্রকান্ডতার কথা বর্ণনা না করে- যেন সম্পূর্ণ গোপন রাখে। 

কিন্তু, শেষপর্যন্ত কাজ হল মূসার নির্দেশের পরিপন্থী। যদিও তারা প্রকাশ্যভাবে কাউকে কিছু বলেনি। কিন্তু প্রত্যেকে স্বীয় বন্ধুর কাছে গোপনে অমালিকাদের শক্তিমত্তার কথা বর্ণনা করল, দু‘জন ছাড়া। এরা ছিল, ইউশায়া ইবনে নূন (মূসার ভগ্নি মরিয়মের স্বামী) ও কালেব বিন ইউকেনা। আস্তে আস্তে এ সম্পর্কে সকল ইস্রায়েলীই অবগত হয়ে পড়ল এবং অমালিকাদের দৈহিক শক্তি ও আকৃতি সম্পর্কে রীতিমত আলোচনা শুরু হল। লোকেরা তাদের সম্পর্কে অতিরঞ্জিত তথ্য ছড়িয়ে দিল। কেউ কেউ বলতে লাগল, ‘তারা এক একজন এক‘শ হাত লম্বা ও ষাট হাত চওড়া।’
কেউ কেউ বলল, ‘তাদের কেউ সমুদ্রে নামলে পানি তার হাঁটু সমান হয়।’

সাধারণ ইস্রায়েলীরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ল। তারা যুদ্ধ সম্পর্কে কোন চিন্তাই মাথায় আনতে চাইল না। তারা পরস্পর বলতে লাগল, ‘লোহিত সাগর পার হয়ে এসে এখন এদের হাতে যুদ্ধে মরার কি অর্থ হতে পারে?’ 
তবে প্রতিনিধিদের বারজনই একমত ছিল যে, দেশটি ভাল এবং তারা একান্তভাবেই তা পেতে চায়। তাই যখন দেশটি দখল করার কথা উঠল- তারা দু’দলে বিভক্ত হয়ে গেল। 

ইউশায়া ইবনে নূন ও কালেব বিন ইউকেনা।
প্রতিনিধি দলের দশজন সীমালংঘন করল। তাদেরকে যা বলা হয়েছিল তার বদলে তারা অন্যকথা বলল। তারা বলল, ‘শহরগুলি প্রাচীর বেষ্ঠিত এবং এর লোকগুলি ভীমাকায় যোদ্ধা, সেইজন্যে দেশটি দখল করা সম্ভব নয়।’
দলের দু’জন, কালেব ও ইউশায়া বলল, ‘দেশটি দখল করা সম্ভব। আমরা বিশ্বাসী হয়ে আল্লাহর উপরই নির্ভর করব। প্রবেশ দ্বারে তাদের মোকাবেলা করব। অতঃপর তওবা, তওবা বলতে বলতে প্রবেশ করব। জয় আমাদের হবেই হবে। কেননা আল্লাহ বলেদিয়েছেন- ‘তোমরা এই জনপদে প্রবেশ কর এবং যেখানে ইচ্ছে যাও ও যা ইচ্ছে খাও, ‘মাথা নীচু করে প্রবেশ কর’ আর বল, ‘ক্ষমা চাই’ আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করব; আর যারা সৎকর্ম করে তাদের জন্যে আমার দান বাড়িয়ে দেব।’ 

ইস্রায়েলীরা যখন শুনল শহরে প্রবেশের সময় তাদেরকে ‘হিত্তাতুন’- ক্ষমা চাই বলতে বলা হয়েছে, তখন তারা ব্যঙ্গ করে বলতে লাগল ‘হিন্তাতুন’-গম গম। খোদায়ী বিধানের এই শব্দগত ও অর্থগত বিকৃতি সাধনের কারণে তাদের উপর আল্লাহ অসন্তুষ্ট হলেন। তাছাড়া প্রতিনিধিদলের দশজন সীমালঙ্ঘণকারী ছিল। এই কারণে তিনি আকাশ থেকে শাস্তি পাঠিয়েছিলেন।  
অবিশ্বস্ত বেশকিছু ইস্রায়েলীর সঙ্গে এই দশজন বজ্রপাতে মারা পড়েছিল। 

এ সংক্রান্ত কোরআনের আয়াত- কিন্তু তারা (দশ প্রতিনিধি) সীমালংঘন করেছিল তারা তাদেরকে যা বলা হয়েছিল তার বদলে অন্যকথা বলল। সেজন্যে সীমালংঘনকারীদের উপর আমি আকাশ থেকে শাস্তি পাঠালাম, কারণ তারা ছিল সত্যত্যাগী।’(২: ৫৯)

কালেব ও ইউশায়ার প্রচুর চেষ্টা সত্ত্বেও অধিকাংশ ইস্রায়েলী দেশটি দখলে রাজী হল না। তখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা স্মরণ কর আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি তোমাদের মধ্যে থেকে নবী করেছিলেন, তোমাদেরকে রাজ্যের অধিপতি করেছিলেন ও বিশ্বে যা কাউকে দেননি তা তোমাদেরকে দিয়েছিলেন। হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ তোমাদের জন্যে যে পবিত্রভূমি নির্দিষ্ট করেছেন সেখানে প্রবেশ কর, আর পিছু হটিও না, পিছু হোটলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়বে।’ 
তারা বলল, ‘হে মূসা! সেখানে এক দুর্দান্ত সম্প্রদায় রয়েছে, আর তারা সেখান থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত আমরা কখনও সেখানে প্রবেশ করব না। তারা সেখান থেকে বের হয়ে গেলেই আমরা প্রবেশ করব।’ 

এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ-‘মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা স্মরণকর আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি তোমাদের মধ্যে থেকে নবী করেছিলেন, তোমাদেরকে রাজ্যের অধিপতি করেছিলেন ও বিশ্বে যা কাউকে দেননি তা তোমাদেরকে দিয়েছিলেন। হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ তোমাদের জন্যে যে পবিত্র ভূমি নির্দিষ্ট করেছেন সেখানে প্রবেশ কর আর পিছু হোটও না, হোটলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়বে।’ 
তারা বলল, ‘হে মূসা! সেখানে এক দুর্দান্ত সম্প্রদায় রয়েছে, আর তারা সেখান থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত আমরা সেখানে প্রবেশ করব না। তারা সেখান থেকে বের হয়ে গেলে আমরা প্রবেশ করব।’(৫:২০-২৩)

কালেব ও ইউশায়া বনি-ইস্রায়েলীদের দুর্বল মনোভাব দেখে তাদেরকে উৎসাহিত করতে বললেন, ‘সমগ্র বিশ্ব আল্লাহর হাতের মুঠোয় রয়েছে। তাঁর অনুমতি ব্যতিত কেউ কারও ক্ষতি করতে বা উপকার করতে পারে না। সুতরাং অমালিকাদের প্রকান্ড দেহ ও শক্তি কোনই কাজে আসবে না, যেহেতু আল্লাহর সাহায্যের ওয়াদা আমাদের সাথে রয়েছে।’ 

কিন্তু বনি ইস্রায়েলীরা যখন তাদের নবী মূসার কথাই বিশ্বাস করছে না, তখন তাদের কথা কি করে বিশ্বাস করবে? তারা মূসাকে স্পষ্ট জানাল, ‘হে মূসা, যতদিন তারা সেখানে থাকবে ততদিন আমরা সেখানে প্রবেশ করব না। সুতরাং তুমি ও তোমার প্রতিপালক যাও ও গিয়ে যুদ্ধ কর।’ 

এরকম পরিস্থিতিতে মূসা আর কি করবেন? তিনি আল্লাহর উদ্দেশ্যে বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি ও আমার ভ্রাতা ব্যতিত অন্যকারও উপর আমার কর্তৃত্ব নেই; সুতরাং তুমি আমাদের ও সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের মধ্যে ফয়সালা করে দাও।’ 
আল্লাহ বললেন, ‘তবে এ চল্লিশ বৎসর তাদের জন্যে নিষিদ্ধ রইল। তারা পৃথিবীতে উদ্ভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াবে। সুতরাং তুমি সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের জন্যে দুঃখ কোরও না।    
-- এখন তোমরা পিছন ফিরে আকাবা উপসাগরের পথ ধরে মরুএলাকার দিকে রওনা হয়ে যাও।’ 
নির্দেশমত ইস্রায়েলীরা এগিয়ে গেল এবং সিনাই উপত্যকার তাঁহ প্রান্তরে পৌঁছিল। 

এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ-‘যারা ভয় করেছিল তাদের মধ্যে দু’জন, যাদের উপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছিলেন, বলল, ‘তোমরা প্রবেশ দ্বারে তাদের মোকাবেলা কর। প্রবেশ করতে পারলেই তোমাদের জয় হবে। আর তোমরা বিশ্বাসী হয়ে আল্লাহর উপরই নির্ভর কর।’ 
তারা বলল, ‘হে মূসা, যতদিন তারা সেখানে থাকবে ততদিন আমরা সেখানে প্রবেশ করব না। সুতরাং তুমি ও তোমার প্রতিপালক যাও ও গিয়ে যুদ্ধ কর।’ 
সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার ও আমার ভাই ছাড়া অন্যকারও উপর আমার কর্তৃত্ব নেই; সুতরাং তুমি আমাদের ও সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের মধ্যে ফয়সালা করে দাও।’ 
আল্লাহ বললেন, ‘তবে এ চল্লিশ বৎসর তাদের জন্যে নিষিদ্ধ রইল। তারা পৃথিবীতে উদ্ভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াবে। সুতরাং তুমি সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের জন্যে দুঃখ কোরও না।’(৫:২০-২৬)

আল্লাহ ইস্রায়েলীদেরকে সিনাই উপত্যকার ঐ প্রান্তরেই আঁটকিয়ে দিলেন। শুধু তাই নয়, তাদের উপর অর্পণ করা হল লাঞ্ছনা ও পরমুখাপেক্ষিতা। এমন হল এজন্যে যে, তারা আল্লাহর বিধিবিধান মানত না এবং তারা ছিল নাফরমান, সীমালঙ্ঘনকারী। এখন এখান থেকে তারা অমালিকাদের দেশেও যেতে পারবে না আবার ইচ্ছে করলে মিসরেও ফিরতে পারবে না। 
ইস্রায়েলীরা ঐশী রোষানলে পতিত হয়ে ঘুরতে থাকল। 

এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ- আর তাদের উপর আরোপ করা হল লাঞ্ছনা ও পরমুখাপেক্ষিতা। তারা আল্লাহর রোষানলে পতিত হয়ে ঘুরতে থাকল। এমন হল এ জন্যে যে, তারা আল্লাহর বিধি-বিধান মানত না এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তার কারণ, তারা ছিল নাফরমান, সীমালঙ্ঘনকারী।(২:৬১)

এ সম্পর্কে যবুরে আছে-
‘তখন তোমাদের পিতৃপুরুষেরা আমার পরীক্ষা করল, 
আমার বিচার করল, আমার কর্মও দেখল।
চল্লিশ বৎসর পর্য্যন্ত আমি সেই জাতির প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলাম,
আমি বলেছিলাম, এরা ভ্রান্তচিত্ত; এরা আমার পথ জ্ঞাত হল না।
অতএব আমি আপন ক্রোধে শপথ করলাম, 
             এরা আমার বিশ্রাম স্থানে প্রবেশ করবে না।’(৯৫:৯-১১)

তাঁহ অর্থ পথভ্রষ্ট হয়ে ঘোরা। কনান দেশটি দেখতে যে চল্লিশ দিন লেগেছিল, সেই চল্লিশ দিনের প্রতিদিনের জন্যে এক বৎসর করে মোট চল্লিশ বৎসর ইস্রায়েলীরা এই প্রান্তরে নজর বন্দী ছিল। তারা চাইত এখান থেকে বেরিয়ে মিসরে ফিরে যেতে। সারাদিন ঘুরে ঘুরে সন্ধ্যায় তারা নিজেদেরকে ঐস্থানেই পেত যেখান থেকে সকালে রওনা হয়েছিল। এই প্রান্তটির দৈর্ঘ্য ছিল ত্রিশ ফারসেক অর্থাৎ নব্বুই মাইল আর প্রস্থ ছিল নয় ফারসেক বা সাতাশ মাইল।

সমাপ্ত।
ছবি: bible.ca, gardenofpraise, jameswilkins.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Moses: কোরাণিক ক্যানভাসে নবী মূসা।

Abu Hena Mostafa Kamal  01 May, 2017 মি সরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ফেরাউন। হঠাৎ করে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। কিন্তু তিনি কোন উত্তরাধিকারী ন...