১৩ মার্চ, ২০১২

Flood of Noah: মেসোপটেমিয় পূরাণ ও কোরাণিক কাহিনী।



মহাপ্লাবন (Flood of Noah) সম্পর্কে মেসোপটেমিয় পূরাণঃ দেবতারা পৃথিবীকে প্লাবিত করে মনুষ্যজাতিকে ধ্বংস করার করার মনস্থ করলেন। কিন্তু পানির দেবতা এই সিদ্ধান্ত নলখাগড়া বনের কাছে ফাঁস করে দেন। এই নলখাগড়াগুলো থেকেই কিছু নিয়ে এক ব্যক্তি তার কূঁড়েঘর তৈরী করেছিল। নলখাগড়াগুলো এখন আবার তা বলে দিল ঐ লোকটিকে। তখন লোকটি এক বিরাট নৌকা তৈরী করে নিজের পরিবার পরিজনকে সেটাতে নিয়ে গিয়ে তুলল, সঙ্গে নিল দক্ষ কারিগরদের এবং বিভিন্ন জাতীয় পশু ও পাখি। নির্দিষ্ট দিনে কাল মেঘে সমস্ত আকাশ ঢেকে গেল, শুরু হল প্রবলতম বর্ষণ, সারা পৃথিবী পানিতে ডুবে গেল। পৃথিবীর সমস্ত লোক মৃত্যুমুখে পতিত হল, কেবল যারা ঐ নৌকার মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিল তারাই বেঁচে রইল।

মহাপ্লাবন সম্পর্কে কোরাণিক কাহিনী: সময়ের সাথে সাথে শীষ এবং আদমের অন্যান্য পুত্রদের বংশধরদের দ্বারা পরিবার ও গোত্রে হয়ে ব্যাকটেরিয়ায় বা উম্মুল বিলাদের সমতলভূমিতে ক্রমশঃ বিস্তার লাভ করতে থাকে। একসময় এরা সম্ভবত: তাদের পূর্ব পুরুষদের উপাস্য এক আল্লাহর স্বরূপ সম্পর্কে সম্যক ধারণা না করতে পেরে তাঁর ভয়ে ভীত হয়ে মাধ্যম হিসেবে পয়গম্বরদের মাঝে আশ্রয় নেয়। আর পয়গম্বরদের মৃত্যুর পর শয়তানের প্ররোচনায় তাদের মূর্ত্তি তৈরী করে তার অর্চণা করতে শুরু করে ও ক্রমে একক উপাস্য আল্লাহ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ হয়ে পড়ে। একসময় তারা নিষ্ঠুর বর্বরস্তর থেকে বর্বরতার স্তরে উন্নীত হয় এবং ভীতি ও বিভীষিকাময়তার মধ্যে প্রাকৃতিক বস্তুর পূজায় লিপ্ত হয়। ব্যকটেরিয়ায় শেকড় গেড়ে থাকা এই জনগোষ্ঠীই আর্য এবং এদের পালিত ধর্মমতই বৈদিক ধর্ম। 

পরবর্তিতে আল্লাহ এসব পথভ্রষ্টদেরকে সুপথে আনতে একজন রসূল প্রেরণ করলেন। আর্যদের এক বংশে তিনি জন্মগ্রহণ করলেন। এই রসূল ছিলেন নূহ। আল্লাহ তাকে নব্যুযত দান করেছিলেন এই সতর্কবাণী দিয়ে-‘হে নূহ! তুমি তোমার সম্প্রদায়কে, তাদের উপর শাস্তি আসার আগেই সতর্ক কর।’
কিন্তু লোকদের প্রায় সকলেই তাকে অগ্রাহ্য করল এবং তার অনুসরণে বিরত রইল। এমনকি নূহের স্ত্রী ওয়াগেলাও তার আহবানে সাড়া দেয়নি। তার কনিষ্ঠ পুত্র গোমর ছিল চরম পাপাচারে লিপ্ত। 

তার সম্প্রদায়ের লোকেরা তার কথায় কর্ণপাত না করলেও তিনি তাদেরকে বিরতিহীনভাবে আহবান জানিয়ে যেতে লাগলেন। যে কোন পর্ব পার্বণে যখন অধিক লোক সমবেত হত, তখন তিনি তার সম্প্রদায়কে ডেকে তাদের উদ্দেশ্যে বলতেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর উপাসনা কর, তিনি ব্যতিত তোমাদের জন্যে অন্য কোন উপাস্য নেই। আমি তোমাদের জন্যে এক মহাদিনের শাস্তির আশঙ্কা করছি।’

তার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ বলেছিল, ‘আমরা তো তোমাকে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে দেখছি।’আর তারা লোকদেরকে বলল, ‘এ তো তোমাদের মতই একজন মানুষ; তোমাদের উপর নেতৃত্ব করতে চাচ্ছে। আল্লাহ ইচ্ছে করলে ফেরেস্তা পাঠাতে পারতেন। আমাদের পূর্বপুরুষদের কালে এমন ঘটেছে আমরা তো তা শুনিনি। এ তো এক পাগল, সুতরাং এর ব্যাপারে কিছুকাল অপেক্ষা কর।’

তারপর ঐ প্রধানগণ নূহকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘আমরা তোমাকে তো আমাদের মতই মানুষ দেখছি। আমরা তো দেখছি, যারা আমাদের মধ্যে ছোটলোক তারাই না বুঝে তোমাকে অনুসরণ করছে। আর আমরা তো আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব দেখছি নে; বরং আমরা তোমাদের মিথ্যেবাদী মনেকরি।’

নূহ বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমাকে বল, আমি যদি আমার প্রতিপালকের পাঠান স্পষ্ট নিদর্শণে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকি ও তিনি যদি আমাকে নিজে অনুগ্রহ করে থাকেন, অথচ এ বিষয়ে তোমরা জেনেও জানতে না চাও। তবে আমি কি এ ব্যাপারে তোমাদের বাধ্য করতে পারি যখন তোমরা এ পছন্দ করছ না? আর আমি বিশ্বাসীদের তাড়িয়ে দিতে পারিনে, নিশ্চয় তাদের প্রতিপালকের সাথে তাদের দেখা হবে। কিন্তু আমি তো দেখছি তোমরা এক অন্ধ সম্প্রদায়। হে আমার সম্প্রদায়! আমি যদি তাদেরকে তাড়িয়ে দেই তবে আল্লাহর শাস্তি থেকে কে আমাকে রক্ষা করবে? তবুও কি তোমরা বুঝবে না? আমি তোমাদেরকে বলিনে যে আমার কাছে আল্লাহর ধন-ভান্ডার আছে এবং আমি অদৃশ্যের বিষয়ও অবগত নই, আমি এও বলিনে যে, আমি ফেরেস্তা এবং তোমাদের চোখে যারা নীচ, তাদের সম্বন্ধে আমি বলিনে যে, আল্লাহ তাদের কখনই মঙ্গল করবেন না; তাদের অন্তরে যা আছে তা আল্লাহ ভালকরেই জানেন। তোমাদের কথা শুনলে আমি তো সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভূক্ত হব।

হে আমার সম্প্রদায়! আমি তো তোমাদের জন্যে এ বিষয়ে স্পষ্ট সতর্ককারী যে, তোমরা আল্লাহর উপাসনা করবে, তাকে ভয় করবে ও আমার আনুগত্য করবে। তিনি তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন ও এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত তোমাদেরকে অবকাশ দেবেন। আল্লাহর নির্ধারিত কাল উপস্থিত হলে তিনি আর দেরী করেন না; যদি তোমরা এ জানতে!’

তারা বলল, ‘হে নূহ! তুমি আমাদের সাথে তর্ক করেছ; তুমি আমাদের সাথে বড় বেশী তর্ক করেছ; সুতরাং তুমি সত্যবাদী হলে আমাদেরকে যার ভয় দেখাচ্ছ তা নিয়ে এস।’ 
নূহ বললেন, ‘ইচ্ছে করলে আল্লাহই তা তোমাদের কাছে উপস্থিত করবেন, আর তোমরা তা ব্যর্থ করতে পারবে না। আমি তোমাদের উপদেশ দিতে চাইলেও আমার উপদেশ তোমাদের কাজে আসবে না, যদি আল্লাহ তোমাদের বিভ্রান্ত করতে চান। তিনিই তোমাদের প্রতিপালক, আর তাঁরই কাছে আমরা ফিরে যাব।’

নূহ আরও বলেছিলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমার মধ্যে কোন ভ্রান্তি নেই, আমি তো বিশ্বজগতের প্রতিপালকের প্রেরিত রসূল। আমার প্রতিপালকের বাণী আমি তোমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি ও তোমাদেরকে সদুপোদেশ দিচ্ছি, আর তোমরা যা জান না, আমি তা আল্লাহর কাছ থেকে জানি। তোমরা কি অবাক হচ্ছ যে, তোমাদেরই মত একজনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে তোমাদের কাছে উপদেশ এসেছে, যেন সে তোমাদের সতর্ক করতে পারে এবং যেন তোমরা সাবধান হও ও তাঁর অনুগ্রহ লাভ কর?
আমি তোমাদের কাছে এরজন্যে কোন প্রতিদান চাইনে। আমার পুরস্কার তো বিশ্বজগতের প্রতিপালকের কাছেই আছে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর ও আমার আনুগত্য কর।’

ওরা বলল, ‘আমরা কি তোমাকে বিশ্বাস করব, যখন দেখছি ছোটলোকেরাই তোমার অনুসরণ করছে?’ 
নূহ বললেন, ‘ওরা কি করত তা আমি জানিনে। ওদের হিসেব নেয়া তো আমার প্রতিপালকের কাজ, যদি তোমরা বুঝতে! বিশ্বাসীদেরকে তো আমি তাড়িয়ে দিতে পারিনে। আমি তো কেবল একজন স্পষ্ট সতর্ককারী।’
ওরা বলল, ‘হে নূহ! তুমি যদি না থাম তবে তোমাকে আমরা পাথর মেরে খতম করব।’

আর তারা লোকদেরকে বলল, ‘তোমরা তোমাদের দেব-দেবীকে পরিত্যাগ কোরও না; পরিত্যাগ কোরও না ওয়াদ, সূয়া, ইয়াগুস, ইয়াউক ও নাসরকে।’
নূহ তখন তার সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমার অবস্থান ও আল্লাহর নিদর্শণ দ্বারা আমার উপদেশ তোমাদের কাছে যদি দুঃসহ হয়, তবে আমি তো আল্লাহর উপর নির্ভর করি। তোমরা যাদেরকে শরিক করছ তার সাথে তোমাদের কর্তব্য ঠিক করে নাও, পরে যেন কর্তব্যের ব্যাপারে তোমাদের কোন সন্দেহ না থাকে। আমার সম্বন্ধে তোমাদের কর্তব্য ঠিক করে ফেল আর আমাকে অবসর দিও না। তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে কিছু আসে যায় না, কারণ আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাইনি। আমার পারিশ্রমিক আছে আল্লাহর কাছে। আমাকে তো একজন আত্মসমর্পনকারী হতে আদেশ করা হয়েছে।’

নূহ আরও বলেছিলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সাহায্য কর, কারণ ওরা আমাকে মিথ্যেবাদী বলছে। সুতরাং আমার ও ওদের মধ্যে পরিস্কার ফয়সালা করে দাও, আর আমাকে ও আমার সাথে যেসব বিশ্বাসী আছে তাদেরকে রক্ষা কর।’ 

নূহের সম্প্রদায়ের প্রতি তার আহ্বান সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ-‘নূহকে আমি তার সম্প্রদায়ের কাছে  এই নির্দেশ দিয়ে পাঠিয়েছিলাম-‘তুমি তোমার সম্প্রদায়কে, তাদের ওপর শাস্তি আসার আগে সতর্ক কর।’(৭১:১) 
আর সে বলেছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর উপাসনা কর, তিনি ছাড়া তোমাদের জন্যে অন্য কোন উপাস্য নেই। আমি তোমাদের জন্যে মহাদিনের শাস্তির আশঙ্কা করছি।’ 

তার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ বলেছিল, ‘আমরা তো তোমাকে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে দেখছি।’(৭:৫৯-৬৪) 
তার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ যারা অবিশ্বাস করেছিল তারা লোকদেরকে বলল, ‘এ তো তোমাদের মতই একজন মানুষ; তোমাদের উপর নেতৃত্ব করতে চাচ্ছে। আল্লাহ ইচ্ছে করলে ফেরেস্তা পাঠাতে পারতেন। আমাদের পূর্বপুরুষদের কালে এমন ঘটেছে আমরা তো তা শুনিনি। এ তো এক পাগল, সুতরাং এর ব্যাপারে কিছুকাল অপেক্ষা কর।’(২৩:২৪-২৫)

তার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ (নূহকে উদ্দেশ্য করে) বলল, ‘আমরা তোমাকে তো আমাদের মতই মানুষ দেখছি। আমরা তো দেখছি, যারা আমাদের মধ্যে ছোটলোক তারাই না বুঝে তোমাকে অনুসরণ করছে। আর আমরা তো আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব দেখছি নে; বরং আমরা তোমাদের মিথ্যেবাদী মনেকরি।’

সে (নূহ) বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমাকে বল, আমি যদি আমার প্রতিপালকের পাঠান স্পষ্ট নিদর্শণে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকি ও তিনি যদি আমাকে নিজে অনুগ্রহ করে থাকেন, অথচ এ বিষয়ে তোমরা জেনেও জানতে না চাও। তবে আমি কি এ ব্যাপারে তোমাদের বাধ্য করতে পারি যখন তোমরা এ পছন্দ করছ না? আর আমি বিশ্বাসীদের তাড়িয়ে দিতে পারিনে, নিশ্চয় তাদের প্রতিপালকের সাথে তাদের দেখা হবে। কিন্তু আমি তো দেখছি তোমরা এক অন্ধ সম্প্রদায়। হে আমার সম্প্রদায়! আমি যদি তাদেরকে তাড়িয়ে দেই তবে আল্লাহর শাস্তি থেকে কে আমাকে রক্ষা করবে? তবুও কি তোমরা বুঝবে না? আমি তোমাদেরকে বলিনে যে আমার কাছে আল্লাহর ধন-ভান্ডার আছে এবং আমি অদৃশ্যের বিষয়ও অবগত নই, আমি এও বলিনে যে, আমি ফেরেস্তা এবং তোমাদের চোখে যারা নীচ, তাদের সম্বন্ধে আমি বলিনে যে, আল্লাহ তাদের কখনই মঙ্গল করবেন না; তাদের অন্তরে যা আছে তা আল্লাহ ভালকরেই জানেন। (তোমাদের কথা শুনলে) আমি তো সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভূক্ত হব।’ 

তারা বলল, ‘হে নূহ! তুমি আমাদের সাথে তর্ক করেছ; তুমি আমাদের সাথে বড় বেশী তর্ক করেছ; সুতরাং তুমি সত্যবাদী হলে আমাদেরকে যার ভয় দেখাচ্ছ তা নিয়ে এস।’ 
সে বলল, ‘ইচ্ছে করলে আল্লাহই তা তোমাদের কাছে উপস্থিত করবেন, আর তোমরা তা ব্যর্থ করতে পারবে না। আমি তোমাদের উপদেশ দিতে চাইলেও আমার উপদেশ তোমাদের কাজে আসবে না, যদি আল্লাহ তোমাদের বিভ্রান্ত করতে চান। তিনিই তোমাদের প্রতিপালক, আর তাঁরই কাছে আমরা ফিরে যাব।’(১১:২৭-৩৪)

সে (নূহ আরও) বলেছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমার মধ্যে কোন ভ্রান্তি নেই, আমি তো বিশ্বজগতের প্রতিপালকের প্রেরিত রসূল। আমার প্রতিপালকের বাণী আমি তোমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি ও তোমাদেরকে সদুপোদেশ দিচ্ছি, আর তোমরা যা জান না, আমি তা আল্লাহর কাছ থেকে জানি। তোমরা কি অবাক হচ্ছ যে, তোমাদেরই মত একজনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে তোমাদের কাছে উপদেশ এসেছে, যেন সে তোমাদের সতর্ক করতে পারে এবং যেন তোমরা সাবধান হও ও তাঁর অনুগ্রহ লাভ কর?(৭:৬১-৬৩) আমি তোমাদের কাছে এরজন্যে কোন প্রতিদান চাইনে। আমার পুরস্কার তো বিশ্বজগতের প্রতিপালকের কাছেই আছে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর ও আমার আনুগত্য কর।’ 

ওরা বলল, ‘আমরা কি তোমাকে বিশ্বাস করব, যখন দেখছি ছোটলোকেরাই তোমার অনুসরণ করছে?’ 
নূহ বলল, ‘ওরা কি করত তা আমি জানিনে। ওদের হিসেব নেয়া তো আমার প্রতিপালকের কাজ, যদি তোমরা বুঝতে! বিশ্বাসীদেরকে তো আমি তাড়িয়ে দিতে পারিনে। আমি তো কেবল একজন স্পষ্ট সতর্ককারী।’
ওরা বলল, ‘হে নূহ! তুমি যদি না থাম তবে তোমাকে আমরা পাথর মেরে খতম করব।’(২৬:১০৯-১১৬)

সে (তখন) তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমার অবস্থান ও আল্লাহর নিদর্শণ দ্বারা আমার উপদেশ তোমাদের কাছে যদি দুঃসহ হয়, তবে আমি তো আল্লাহর উপর নির্ভর করি। তোমরা যাদেরকে শরিক করছ তার সাথে তোমাদের কর্তব্য ঠিক করে নাও, পরে যেন কর্তব্যের ব্যাপারে তোমাদের কোন সন্দেহ না থাকে। আমার সম্বন্ধে তোমাদের কর্তব্য ঠিক করে ফেল আর আমাকে অবসর দিও না। তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে কিছু আসে যায় না, কারণ আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাইনি। আমার পারিশ্রমিক আছে আল্লাহর কাছে। আমাকে তো একজন আত্মসমর্পনকারী হতে আদেশ করা হয়েছে।’(১০:৭১-৭২) 

সে বলেছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি তো তোমাদের জন্যে এ বিষয়ে স্পষ্ট সতর্ককারী যে, তোমরা আল্লাহর উপাসনা করবে, তাকে ভয় করবে ও আমার আনুগত্য করবে। তিনি তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন ও এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত তোমাদেরকে অবকাশ দেবেন। আল্লাহর নির্ধারিত কাল উপস্থিত হলে তিনি আর দেরী করেন না; যদি তোমরা এ জানতে!’ (৭১:২-৪) নূহ (আরও) বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সাহায্য কর, কারণ ওরা আমাকে মিথ্যেবাদী বলছে।(২৩:২৬) সুতরাং আমার ও ওদের মধ্যে পরিস্কার ফয়সালা করে দাও, আর আমাকে ও আমার সাথে যেসব বিশ্বাসী আছে তাদেরকে রক্ষা কর।’(২৫:১১৮) 

নূহ বরাবরের মত ব্যর্থ হয়ে ফিরে চললেন। তিনি তার দীর্ঘ জীবনের প্রতিটি দিন তার সম্প্রদায়কে আহবান জানিয়েছেন আল্লাহর পথে ফিরে আসার জন্যে। এক প্রজন্মের কাছে ব্যর্থ হয়ে তিনি আশা পোষণ করতেন পরবর্তী প্রজন্ম নিশ্চয়ই তার আহবানে সাড়া দেবে। কিন্তু তারাও পূর্ববর্তীদের ন্যায় আচরণ করেছে। তার আবেগময় ভাষার বিপরীতে তারা তাকে পাথর ছুঁড়েছে, তাকে রক্তাপ্লুত করেছে। এভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম পার হয়েছে, কিন্তু কোন ফল লাভ হয়নি। তিনি তার দীর্ঘ জীবনে মাত্র ৩৯ জনকে আল্লাহর পথে আনতে সমর্থ হয়েছিলেন। এ কারণে মনে তীব্র কষ্ট নিয়ে বাধ্য হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আমার সম্প্রদায়কে দিনরাত আহবান করেছি, কিন্তু আমার আহবান তাদের পলায়নী মনোবৃত্তিই বৃদ্ধি করেছে। তুমি যেন ওদের ক্ষমা কর তারজন্যে আমি যতবার ওদের আহবান করেছি ততবারই তারা কানে আঙ্গুল দিয়েছে; কাপড়ে মুখ ঢেকেছে; অবিশ্বাসে জিদ করেছে এবং দেমাগ দেখিয়েছে। তারপর আমি তাদের প্রকাশ্যে আহবান করেছি। তারপরও সাধারণ ভাবে প্রচার ও ব্যক্তিগত ভাবে তাদের উপদেশ দিয়েছি। তারপর আমি তাদের বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা চাও। তিনি তো মহাক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্যে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতিতে সমৃদ্ধ করবেন, তোমাদের জন্যে রাখবেন বাগান আর বইয়ে দেবেন নদী-নালা। তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করতে চাচছ না! তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন পর্যায়ক্রমে। তোমরা কি লক্ষ্য করনি আল্লাহ কিভাবে সাত স্তরে সাঁজান আকাশ সৃষ্টি করেছেন, আর সেখানে চাঁদকে আলো হিসেবে ও সূর্য্যকে প্রদীপ হিসেবে স্থাপন করেছেন? তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি তোমাদেরকে সেখানে ফিরিয়ে নেবেন ও পরে আবার ওঠাবেন। আর আল্লাহ তোমাদের জন্যে জমিনকে বিছিয়ে দিয়েছেন, যেন তোমরা প্রশস্ত পথে চলাফেরা করতে পার।

--হে আমার প্রতিপালক! আমার সম্প্রদায় তো আমাকে অমান্য করছে আর অনুসরণ করছে এমন লোকদের যাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি শুধু তাদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করছে। সুতরাং তাদের বিভ্রান্তিই শুধু বৃদ্ধি করে দাও। আর আমাকে সাহায্য কর। আমার ও ওদের মধ্যে পরিস্কার ফয়সালা করে দাও, আর আমাকে ও আমার সাথে যেসব বিশ্বাসী আছে তাদেরকে রক্ষা কর।

--হে আমার প্রতিপালক! পৃথিবীতে কোন অবিশ্বাসী গৃহবাসীকে তুমি অব্যহতি দিও না। তুমি ওদের অব্যহতি দিলে ওরা তোমার দাসদের বিভ্রান্ত করবে, আর জন্ম দিতে থাকবে কেবল দুস্কৃতিকারী ও অবিশ্বাসীদের। তাই সীমালংঘনকারীদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস কর।’

এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ- সে বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আমার সম্প্রদায়কে দিনরাত আহবান করেছি, কিন্তু আমার আহবান তাদের পলায়নী মনোবৃত্তিই বৃদ্ধি করেছে। তুমি যেন ওদের ক্ষমা কর তারজন্যে আমি যতবার ওদের আহবান করেছি ততবারই তারা কানে আঙ্গুল দিয়েছে; কাপড়ে মুখ ঢেকেছে; অবিশ্বাসে জিদ করেছে এবং দেমাগ দেখিয়েছে। তারপর আমি তাদের প্রকাশ্যে আহবান করেছি তারপরও সাধারণভাবে প্রচার ও ব্যক্তিগতভাবে তাদের উপদেশ দিয়েছি। তারপর আমি তাদের বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা চাও। তিনি তো মহাক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্যে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতিতে সমৃদ্ধ করবেন, তোমাদের জন্যে রাখবেন বাগান আর বইয়ে দেবেন নদী-নালা। তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করতে চাচছ না! তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন পর্যায়ক্রমে। তোমরা কি লক্ষ্য করনি আল্লাহ কিভাবে সাত স্তরে সাঁজান আকাশ সৃষ্টি করেছেন, আর সেখানে চাঁদকে আলো হিসেবে ও সূর্য্যকে প্রদীপ হিসেবে স্থাপন করেছেন? তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি তোমাদেরকে সেখানে ফিরিয়ে নেবেন ও পরে আবার ওঠাবেন। আর আল্লাহ তোমাদের জন্যে জমিনকে বিছিয়ে দিয়েছেন, যেন তোমরা প্রশস্ত পথে চলাফেরা করতে পার।’

নূহ বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার সম্প্রদায় তো আমাকে অমান্য করছে আর অনুসরণ করছে এমন লোকদের যাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি শুধু তাদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করছে। ওরা ভয়ানক ষড়যন্ত্র করেছে। ওরা বলছে, ‘তোমরা তোমাদের দেব-দেবীকে পরিত্যাগ কোরও না; পরিত্যাগ কোরও না ওয়াদ, সূয়া, ইয়াগুস, ইয়াউক ও নাসরকে।’ আর ওরা অনেককে বিভ্রান্ত করছে; কাজেই তুমি সীমালংঘনকারীদের বিভ্রান্তিই বৃদ্ধি করে দাও।’ (৭১:৫-২৪)

নূহ আরও বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! পৃথিবীতে কোন অবিশ্বাসী গৃহবাসীকে তুমি অব্যহতি দিও না। তুমি ওদের অব্যহতি দিলে ওরা তোমার দাসদের বিভ্রান্ত করবে, আর জন্ম দিতে থাকবে কেবল দুস্কৃতিকারী ও অবিশ্বাসীদের। হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে আমার পিতামাতাকে, যারা বিশ্বাসী হয়ে আমার ঘরে আশ্রয় নিয়েছে তাদেরকে এবং বিশ্বাসী পুরুষ ও নারীদের ক্ষমা কর। আর সীমালংঘনকারীদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস কর।’(৭১:২৬-২৮)

মানুষের মন পরিবর্তনের জন্যে নূহের সকল প্রচেষ্টাই ছিল ব্যর্থ। তাই আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি নূহকে জানালেন প্লাবন দ্বারা তার জাতিকে ধ্বংসের পরিকল্পণার কথা। এসময় নূহের বয়স ছিল ছয়’শ বৎসর।

নূহ নৌকা বানাতে লাগলেন।
আল্লাহ প্রত্যাদেশের মাধ্যমে জানালেন-‘যারা বিশ্বাস করেছে তারা ছাড়া তোমার সম্প্রদায়ের অন্য কেউ কখনও বিশ্বাস করবে না। সুতরাং তারা যা করে তার জন্যে তুমি দুঃখ কোরও না। তুমি আমার তত্ত্বাবধানে ও আমার প্রত্যাদেশ অনুসারে নৌকা বানাও, আর যারা সীমালংঘন করেছে তাদের সম্পর্কে তুমি আমাকে কিছু বোলও না। তারা তো ডুববেই।’

নূহ নৌকা বানাতে লাগলেন। আর যখনই তার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ তার কাছ দিয়ে যেত তারা তাকে বিব্রত করতে জিজ্ঞেস করত, ‘হে নূহ! কি তৈরী করছ?’
তিনি বলতেন, ‘অনতিবিলম্বে এক মহাপ্লাবন হবে। তাই নৌকা তৈরী করছি।’
তারা তাকে ঠাট্টা করত, বলত, ‘এখানে তো পান করার মত পানিও দুর্লভ। আর তুমি ডাঙ্গা দিয়ে জাহাজ চালাবার ফিকিরে আছ?’
তিনি জবাবে বলতেন, ‘তোমরা যদি আমাকে ঠাট্টা কর তবে আমরাও তোমাদেরকে ঠাট্টা করব যেমন তোমরা ঠাট্টা করছ। আর তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে কার উপর অপমানকর শাস্তি আসবে, আর স্থায়ী শাস্তি কার আবশ্যম্ভাবী।’ 

এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ- নূহের উপর প্রত্যাদেশ হয়েছিল, ‘যারা বিশ্বাস করেছে তারা ছাড়া তোমার সম্প্রদায়ের অন্য কেউ কখনও বিশ্বাস করবে না। সুতরাং তারা যা করে তার জন্যে তুমি দুঃখ কোরও না। তুমি আমার তত্ত্বাবধানে ও আমার প্রত্যাদেশ অনুসারে নৌকা বানাও, আর যারা সীমালংঘন করেছে তাদের সম্পর্কে তুমি আমাকে কিছু বোলও না। তারা তো ডুববেই।’

সে নৌকা বানাতে লাগল, আর যখনই তার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ তার কাছ দিয়ে যেত, তারা তাকে ঠাট্টা করত। সে বলত, ‘তোমরা যদি আমাকে ঠাট্টা কর তবে আমরাও তোমাদেরকে ঠাট্টা করব যেমন তোমরা ঠাট্টা করছ। আর তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে কার উপর অপমানকর শাস্তি আসবে, আর স্থায়ী শাস্তি কার আবশ্যম্ভাবী।’(১১:৩৬-৩৯) 

নূহের নৌকা।
একসময় প্রত্যাদেশ অনুসারে নৌকা তৈরী হল। শাল কাঠের তৈরী এই নৌকা ছিল সাড়ে চার‘শ ফুট দৈর্ঘ্য, পঁচাত্তুর ফুট প্রস্থ ও পঁয়তাল্লিশ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট। তিনতলা এই নৌকার একপাশে একটি মাত্র প্রবেশদ্বার ছিল।

নৌকা নির্মাণের পর নূহ আল্লাহর কাছে জানতে চাইলেন, ‘হে আল্লাহ, কখন আমাদের এই নৌকায় উঠতে হবে।’
তিনি জানালেন, ‘যখন দেখবে তোমার উনুনের তলদেশ দিয়ে পানি উঠতে শুরু করেছে। আর যখন তুমি ও তোমার সঙ্গীরা নৌকায় উঠবে তখন বোলও, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাদেরকে সীমালংঘনকারী সম্প্রদায় থেকে উদ্ধার করেছেন।’ তুমি আরও বোলও, ‘হে আমার প্রতিপালক আমাকে এমনভাবে নামিয়ে দাও যা হবে কল্যাণকর, এ ব্যাপারে তুমিই শ্রেষ্ঠ।’

এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ-‘যখন তুমি ও তোমার সঙ্গীরা নৌকায় উঠবে তখন বোলও, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাদেরকে সীমালংঘনকারী সম্প্রদায় থেকে উদ্ধার করেছেন। তুমি আরও বোলও, ‘হে আমার প্রতিপালক আমাকে এমনভাবে নামিয়ে দাও যা হবে কল্যাণকর, এ ব্যাপারে তুমিই শ্রেষ্ঠ।’ (২৩:২৮-২৯)

এক সকালে নূহ জানতে পারলেন তাদের উনুনের তলদেশ দিয়ে পানি উঠছে। তিনি তখন দ্রুত নৌকায় আরোহণের প্রস্তুতি নিলেন। এসময় আল্লাহ তাকে জানালেন, ‘নৌকায় প্রত্যেক জিনিসের এক জোড়া তুলে নাও; তোমার পরিবারবর্গকে এই একজন বাদে- যার বিরুদ্ধে আল্লাহর নির্দেশ জারি হয়ে গেছে এবং যারা বিশ্বাসী।’ 
আল্লাহর নির্দেশমত সবকিছু নিয়ে নূহ নৌকায় আরোহণ করলেন। তবে অল্পসংখ্যক লোকজনই ঈমান এনেছিল। তাই নৌকার আরোহী হয়েছিল খুবই কম। আরোহীদের মধ্যে ছিলেন নূহ, তার তিন পুত্র (শ্যাম, হাম ও যেফৎ) ও তাদের স্ত্রীরা, অন্যান্য আল্লাহ বিশ্বাসীরা এবং বিভিন্ন প্রকার জীব-জন্তুর জোড়া। পাপাচারে লিপ্ত নূহের স্ত্রী ও কনিষ্ঠ পুত্র গোমর এই নৌকায় ছিল না। নূহ যখন তার স্ত্রীকে নৌকায় উঠতে বলেছিলেন তখন সে অস্বীকার করেছিল। তিনি জানতেন তার পরিবারের একজন নৌকায় উঠবে না। সুতরাং তিনি স্ত্রীকে বাদ দিয়ে কনিষ্ঠ পুত্রের খোঁজ করলেন, জানতে পারলেন গোমর তার সঙ্গীদের উদ্দেশ্যে পূর্বেই গৃহ থেকে বেরিয়ে পড়েছে।  

অবশেষে আল্লাহর আদেশ এলে প্লাবন শুরু হল। আসমানের দ্বারসমূহ উন্মোচিত হল, ফলে অতিবর্ষণের সাথে সাথে মাটি ফেটেও ভূগর্ভ থেকে তীব্র প্রস্রবণের সৃষ্টি হল-ফলে দ্রুতই প্লাবন সংগঠিত হল। আর পানির এই তীব্র স্রোত সবকিছু ভাসিয়ে নিল। এসময় নূহ নৌকার মধ্যে বসে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানালেন-‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাদেরকে সীমালংঘনকারী সম্প্রদায় থেকে উদ্ধার করেছেন। হে আমার প্রতিপালক, আমাকে এমনভাবে নামিয়ে দিও যা হবে কল্যাণকর, এ ব্যাপারে তুমিই শ্রেষ্ঠ।’

নূহের প্লাবন।
এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ-‘নৌকায় প্রত্যেক জিনিসের এক জোড়া তুলে নাও; তোমার পরিবারবর্গকে এ একজন বাদে-যার বিরুদ্ধে আল্লাহর নির্দেশ জারি হয়ে গেছে-এবং যারা বিশ্বাসী। তবে অল্প সংখ্যক লোকজনই তার সাথে ঈমান এনেছিল।’(১১:৪০)

‘অবশেষে আমার আদেশ এলে পৃথিবী প্লাবিত হল।(১১:৩৬-৪০) ‘আমি উন্মোচিত করে দিলাম আসমানের দ্বারসমূহ অতি বর্ষণের সাথে এবং মাটিতে তীব্র প্রস্রবণ সৃষ্টি করলাম-যেন পানি একত্রিত হয়ে হুকুম অনুযায়ী তা সমাধা করে -যা নির্ধারিত।’(৫৪:১১-১২)

পর্বত প্রমান ঢেউ নূহের নৌকা ভাসিয়ে নিয়ে চলল। একসময় নূহ দেখতে পেলেন তার কনিষ্ঠ পুত্র গোমর ভেসে যাচ্ছে। তিনি চীৎকার করে তাকে ডেকে বললেন, ‘হে আমার পুত্র! আমাদের সঙ্গে এই নৌকায় ওঠো আর অবিশ্বাসীদের সঙ্গে থেকো না। আল্লাহর নামে এর গতি ও স্থিতি। আমার প্রতিপালক তো ক্ষমা করেন, দয়া করেন।’ 
সে বলল, ‘আমি এমন এক পর্বতে আশ্রয় নেবো যা আমাকে প্লাবন থেকে রক্ষা করবে।’ 
নূহ বললেন, ‘আজ আল্লাহর বিধান থেকে রক্ষা করার কেউ নেই, রক্ষা পাবে সেই, যাকে আল্লাহ দয়া করবেন।’ 

দূর থেকে যখন পিতা-পুত্রের কথোপকথন চলছিল, সেইসময় এক উত্তাল তরঙ্গ এসে উভয়ের মাঝে অন্তরাল সৃষ্টি করল এবং গোমরকে নিমজ্জিত করল। নূহ জানতেন তার এই পুত্র অবিশ্বাসী। তথাপি স্নেহের কারণে এই দৃশ্য দেখে তিনি স্থির থাকতে পরলেন না। তিনি আল্লাহর উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার পরিবারকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে। আমার পুত্র আমার পরিবারের একজন আর তোমার প্রতিশ্রুতিও তো সত্য; আর তুমি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক।’ 

তার আর্জি ব্যর্থ হল। আল্লাহ তাঁর হুকুম রদ করলেন না। তিনি নূহকে বললেন, ‘হে নূহ! সে তোমার পরিবারের কেউ না। সে অসৎকর্মপরায়ণ। সুতরাং যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে আমাকে অনুরোধ কোরও না। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি যেন অজ্ঞদের দলে শামিল না হও।’ 
নূহ বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই, সেই বিষয়ে যেন তোমাকে অনুরোধ না করি। এজন্যে আমি তোমার স্মরণ নিচ্ছি। তুমি যদি আমাকে ক্ষমা না কর ও দয়া না কর তবে তো আমি ক্ষতিগ্রস্থদের শামিল হব।’

পুত্রের প্রতি নূহের আহবান এবং তার জন্যে আল্লাহর কাছে আর্জি সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ- সে (নূহ) বলল, ‘এতে ওঠ, আল্লাহর নামে এর গতি ও স্থিতি। আমার প্রতিপালক তো ক্ষমা করেন, দয়া করেন।’ 
পাহাড় প্রমান ঢেউয়ের মাঝে এ (নৌকা) তাদেরকে নিয়ে বয়ে চলল। নূহ তার পুত্র, যে আলাদা ছিল তাকে ডেকে বলল, ‘হে আমার পুত্র! আমাদের সঙ্গে ওঠ আর অবিশ্বাসীদের সঙ্গে থেক না।’ 
সে (পুত্র) বলল, ‘আমি এমন এক পাহাড়ে আশ্রয় নেব যা আমাকে প্লাবন থেকে রক্ষা করবে।’ 
সে (নূহ) বলল, ‘আজ আল্লাহর বিধান থেকে রক্ষা করার কেউ নেই, (রক্ষা পাবে) সে যাকে আল্লাহ দয়া করবেন।’ 

জুদি পর্বতের চূঁড়ায় নূহের নৌকার ধ্বংসাবশেষ।
এরপর ঢেউ ওদেরকে আলাদা করে দিল আর যারা ডুবে গেল সে তাদের অন্তর্ভূক্ত হল। (২৩:৪১-৪৩) নূহ তার প্রতিপালককে সম্বোধন করে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার পুত্র আমার পরিবারের একজন আর তোমার প্রতিশ্রুতি তো সত্যি; আর তুমি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক।’ 

তিনি বললেন, ‘হে নূহ! সে তোমার পরিবারের কেউ না। সে অসৎকর্মপরায়ণ। সুতরাং যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে আমাকে অনুরোধ কোরও না। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি যেন অজ্ঞদের শামিল না হও।’ 

সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই, সেই বিষয়ে যেন তোমাকে অনুরোধ না করি। এজন্যে আমি তোমার স্মরণ নিচ্ছি। তুমি যদি আমাকে ক্ষমা না কর ও দয়া না কর তবে তো আমি ক্ষতিগ্রস্থদের শামিল হব।’(১১:৪৫-৪৭)

নূহ একটি কবুতর ছেড়ে দিয়ে
পানির অবস্থা জেনে নিলেন।
যখন নূহ এবং অন্যান্যরা নৌকার মধ্যে নিরাপদে ছিলেন, তখন প্রবল বর্ষণে পানি উপরে আকাশ এবং পাতালের ঝর্ণা থেকে বেগে প্রবাহিত হয়েছিল। তার জাতিকে ধ্বংসের উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে নির্ধারিত এই প্লাবন চল্লিশ দিন, চল্লিশ রাত পর্যন্ত স্থায়ী ছিল, যে পর্যন্ত না চারিদিক পরিপূর্ণ হয়েছিল। পানি পর্বত স্পর্শ করার আগেই নৌকার ভিতরের প্রাণী বাদে বন্যা এলাকার সকল প্রাণী মারা গিয়েছিল।

এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াত-‘আমি ধ্বংস করেছিলাম তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে। যখন নূহের জাতি নবীদের অস্বীকার করল, আমি তাদেরকে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম- তাদেরকে বানিয়ে দিয়েছিলাম নিদর্শণ মানবজাতির জন্যে।’(২৫:৩৭)    

ধ্বংসের কাজ শেষ হবার পর বলা হল, ‘ধ্বংসই সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়ের পরিনাম।’
এরপর তিনি আকাশ ও পৃথিবীকে নির্দেশ দিলেন, ‘হে পৃথিবী! তুমি তোমার পানি শুষে নাও! আর হে আকাশ! থাম!’

আল্লাহর উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতা জানালেন।
আল্লাহর এই নির্দেশে বর্ষণ থেমে গেল। আর পৃথিবী পানি শুষে নেবার কাজ শুরু করল। এসময় নৌকা ভাসতে ভাসতে এসে জুদি পর্বতের চূঁড়ায় আটকে ছিল। এই জুদি পর্বত বর্তমান ইরাকের মসূল শহরের উত্তরে ইবনে ওমর দ্বীপের অদূরে আর্মেনিয়া সীমান্তে অবস্থিত। বস্তুতঃ এটি পর্বতমালার অংশ বিশেষের নাম। এর অপর অংশের নাম অরারট। 

আকাশ ও পৃথিবীর প্রতি আল্লাহর এই নির্দেশ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ-এরপর বলা হল, ‘হে পৃথিবী! তুমি তোমার পানি শুষে নাও! আর হে আকাশ! থাম!’ 
এরপর বন্যা প্রশমিত হল ও কাজ শেষ হল। নৌকা জুদি পাহাড়ের উপর থামল; আর বলা হল,‘ধ্বংসই সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়ের পরিনাম।’(৪১:৪৪) 

অনেকদিন পর্যন্ত নূহের নৌকা পর্বতে আটকে পরিপূর্ণ বন্যার পানির উপর ভাসমান ছিল। শেষপর্যন্ত একাদশ মাসের একাদশ দিবসে বন্যার পানি নেমে গেল। তখন নূহ একটি দাঁড় কাক ও একটি কবুতর ছেড়ে দিয়ে পানির অবস্থা জেনে নিলেন।


নূহের সমাধি, আর্মেনিয়া।
এরও কিছুদিন পর বৎসরের প্রথম দিবসে পানি একেবারে শুকিয়ে গেলে আল্লাহ নূহকে জানালেন, ‘হে নূহ! তুমি নাম আমার দেয়া শান্তি নিয়ে তোমার ওপর, আর যেসব সম্প্রদায় তোমার সঙ্গে আছে, তাদের উপর কল্যাণ নিয়ে। অপর সম্প্রদায়কেও জীবন উপভোগ করতে দেব; পরে আমার তরফ থেকে নিদারুণ শাস্তি তাদেরকে স্পর্শ করবে।’ 

এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াত--বলা হল, ‘হে নূহ! তুমি নাম আমার দেয়া শান্তি নিয়ে তোমার ওপর, আর যে সব সম্প্রদায় তোমার সঙ্গে আছে, তাদের উপর কল্যাণ নিয়ে। অপর সম্প্রদায়কেও জীবন উপভোগ করতে দেব; পরে আমার তরফ থেকে নিদারুণ শাস্তি তাদেরকে স্পর্শ করবে।’(৪১:৪৮) 

পানি সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে গিয়েছিল। সুতরাং নূহ ভূমিতে নেমে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতা জানালেন। তারপর সঙ্গের সর্বপ্রকার শুচি পশু ও পাখিসহ নতুন আবাস গড়ে তুললেন। 

নূহ সর্বমোট ৯৫০বৎসর (সে (নূহ) তাদের মধ্যে পঞ্চাশ কম এক হাজার বৎসর অবস্থান করেছিল। (২৯:১৪)) আয়ূ লাভ করেছিলেন।  

সমাপ্ত।
ছবি: Wikipedia, religionandwalle, myspace, vippasstothespritworld.blogspot, gardenofpraise, atheism.aboutbbc.co.uk

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Moses: কোরাণিক ক্যানভাসে নবী মূসা।

Abu Hena Mostafa Kamal  01 May, 2017 মি সরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ফেরাউন। হঠাৎ করে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। কিন্তু তিনি কোন উত্তরাধিকারী ন...