৪ মার্চ, ২০১২

Muhammad: পত্নীদের জীবিকা ও খরচাদির পরিমান বৃদ্ধির আবেদন।


পরপর কয়েকটি যুদ্ধে জয়লাভের পর যুদ্ধলব্ধ গনিমতের মালবন্টনের ফলে মুসলমানদের মধ্যে খানিকটা স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে এসেছিল। সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে প্রাচুর্য ও সম্পদ বৃদ্ধি দেখে এসময় মুহম্মদের স্ত্রীদের মাঝেও খানিকটা প্রাচুর্যের মাঝে জীবন-যাপনের অভিলাষ উদয় হল। তারা ভাবলেন রসুলুল্লাহর ভাগের গনিমতের মাল নিশ্চয় আছে। তাই তারা সমবেতভাবে মুহম্মদের কাছে নিবেদন করলেন, ‘হে রসূলুল্লাহ! পারস্য ও রোমের সম্রাজ্ঞীরা নানারকম অলংকার ও বহুমূল্যবান পোষাক-পরিচ্ছদ ব্যাবহার করে থাকে। আর তাদের সেবা-যত্নের জন্যে অনেক দাস-দাসীও রয়েছে। এদিকে আমাদের দারিদ্র-পীড়িত, জীর্ণ-শীর্ণ অবস্থা তো আপনি নিজেই জানেন। তাই মেহেরবানী পূর্বক আমাদের জীবিকা ও অন্যান্য খরচাদির পরিমান খানিকটা বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করুন।’

মুহম্মদ (Muhammad) তার পুণ্যবতী স্ত্রীদের কাছ থেকে দুনিয়ার ভোগবিলাসী সুযোগ-সুবিধা প্রদান সংক্রান্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষভাবে মর্মাহত হলেন এই কারণে যে, তারা তার এতদিনের সংসর্গ ও কোরআনের জ্ঞান প্রশিক্ষণ লাভের পরও নবীগৃহের প্রকৃত মর্যাদা অনুধাবণ করতে সক্ষম হননি। অবশ্য স্ত্রীরা কিন্তু ধারণা করতে পারেননি যে, এতে তিনি দুঃখিত হবেন। 

এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াত নাযিল হল- হে নবী! তোমার পত্নীদেরকে বল, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার বিলাসিতা কামনা কর, তবে এস আমি তোমাদের ভোগের ব্যবস্থা করে দেই এবং উত্তম পন্থায় তোমাদেরকে বিদায় দেই। পক্ষান্তরে যদি তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূল ও পরকাল কামনা কর, তবে তোমাদের সৎকর্মপরায়ণদের জন্যে আল্লাহ মহাপুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন।(৩৩:২৮-২৯) 

এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর মুহম্মদ সর্বপ্রথম বিবি আয়েশাকে ডেকে বললেন, ‘আমি তোমাকে একটা কথা বলব- উত্তরটা কিন্তু তাড়াহুড়ো করে দেবে না বরং তোমার পিতা-মাতার সাথে পরামর্শের পর দেবে।’
তিনি বিবি আয়েশাকে আয়াতগুলো পাঠ করে শোনালেন। 

বিবি আয়েশা-তাকে তার পিতা-মাতার সাথে পরামর্শ না করে মতামত প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে বলা থেকে- তার প্রতি মুহম্মদের এক অপার অনুগ্রহ দেখতে পেলেন, তিনি আরও ভাবলেন- মুহম্মদ নিশ্চিত জানতেন তার পিতামাতা কখনও তাকে তার থেকে বিচ্ছিন্নতা অবলম্বণের পরামর্শ দেবেন না। সুতরাং আয়াতগুলো শোনার পর তিনি আরজ করলেন, ‘এখন এই ব্যাপারে আমার পিতামাতার পরামর্শ গ্রহণের জন্যে আমি যেতে পারি কি? আমি তো আল্লাহ ও তাঁর রসূল ও পরকালকে বরণ করে নিচ্ছি।’

বিবি আয়েশার পর অন্যান্য পত্নীদেরকেও কোরআনের এই নির্দেশ শোনান হল। তারা সকলেই আয়েশার মত একই মত ব্যক্ত করলেন অর্থাৎ কেউই তার সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক মোকাবেলায় ইহলৌকিক প্রাচুর্য ও স্বাচ্ছন্দ্যকে গ্রহণ করতে সম্মত হলেন না।

নবীপত্নীদের এহেন সিদ্ধান্তে তাদেরকে পুরস্কার স্বরূপ আল্লাহ মুহম্মদকে কিছু উপদেশ দিয়ে তার স্ত্রী গ্রহণের সীমা নির্ধারণ করে দেন। 

এ সংক্রান্ত আয়াতসমূহ-হে নবী! তোমার জন্যে তোমার স্ত্রীদেরকে হালাল করেছি, যাদেরকে তুমি মোহরানা প্রদান কর। আর দাসীদেরকে হালাল করেছি, যাদেরকে আল্লাহ তোমার করায়াত্ত করে দেন এবং বিবাহের জন্যে বৈধ করেছি তোমার চাচাত ভগ্নি, ফুফাত ভগ্নি, মামাত ভগ্নি, ও খালাত ভগ্নিকে যারা তোমার সাথে হিজরত করেছে। 

কোন মুমিন নারী যদি নিজেকে নবীর কাছে সমর্পণ করে, নবী তাকে বিবাহ করতে চাইলে সেও হালাল। এটা বিশেষ করে তোমারই জন্যে- অন্য মুমিনদের জন্যে নয়। তোমার অসুবিধা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে। মুমিনদের স্ত্রী ও দাসীদের ব্যাপারে যা নির্ধারিত করেছি আমার জানা আছে। আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। 

তুমি ইচ্ছে করলে তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে দূরে রাখতে পার এবং যাকে ইচ্ছে কাছে রাখতে পার। তুমি যাকে দূরে রেখেছ, তাকে কামনা করলে তাতে তোমার কোন দোষ নেই। এতে অধিক সম্ভবণা আছে যে, তাদের চক্ষু শীতল থাকবে; তারা দুঃখ পাবে না এবং তুমি যা দাও, তাতে তারা সকলেই সন্তুষ্ট থাকবে। তোমাদের অন্তরে যা আছে, আল্লাহ জানেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল। 

এরপর তোমার জন্যে কোন নারী হালাল নয় এবং তাদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও হালাল নয় যদিও তাদের রূপলাবণ্য তোমাকে মুগ্ধ করে, তবে দাসীর ব্যাপার ভিন্ন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ের উপর সজাগ দৃষ্টি রাখেন।(৩৩:৫০-৫২)

অতঃপর নবী পত্নীদের নিজেদের সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে সচেতন করে দিয়ে তাদেরকে তাদের চলাফেরা ও আচার আচরণের উপদেশ সম্বলিত এই আয়াতসমূহ নাযিল হল- হে নবী পত্নীরা! তোমাদের মধ্যে কেউ প্রকাশ্য অশ্লীল কার্য করলে তাকে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হবে। এটা আল্লাহর জন্যে সহজ। তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও তার রসূলের অনুগত হবে এবং সৎকর্ম করবে আমি তাকে দু‘বার পুরস্কার দেব এবং তার জন্যে আমি সম্মানজনক রিজিক প্রস্তুত রেখেছি। 

--হে নবী পত্নীরা! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গীতে কথা বোলও না, ফলে সেই ব্যক্তি কু-বাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শণ করবে না। নামাজ কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে। 

--হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ! আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে। আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানগর্ভ কথা, যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয় তোমরা সেগুলো স্মরণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী, সর্ববিষয়ে খবর রাখেন।(৩৩:৩০-৩৪)

সমাপ্ত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Moses: কোরাণিক ক্যানভাসে নবী মূসা।

Abu Hena Mostafa Kamal  01 May, 2017 মি সরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ফেরাউন। হঠাৎ করে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। কিন্তু তিনি কোন উত্তরাধিকারী ন...