প্রথম মানব আদম তার সঙ্গিনী হাওয়াতে উপগত হলে সে গর্ভধারণ করে। যতদিন তার গর্ভ হালকা ছিল, ততদিন সে তা নিয়ে চলাফেরা করে, কিন্তু যখন তা বোঝা স্বরূপ হয়ে গেল, তখন তারা উভয়ে তাদের প্রভু খোদার কাছে প্রার্থণা করে, বলে, “হে আমাদের প্রতিপালক! যদি তুমি আমাদেরকে একটি সুস্থ্য সন্তান দান কর, তবে আমরা নিশ্চয়ই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভূক্ত হব।”
তাদের সেই প্রার্থণার বিষয়ে কোরআনে বলা হয়েছে -তিনিই সেইজন যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন আত্মা থেকে, আর তা থেকে তিনি তৈরী করেছেন তার সঙ্গিনী যেন তার মাঝে সে শান্তি খুঁজে পায়। আর যখন সে [পুরুষ] তাতে [ঐ নারীতে] উপগত হয় তখন সে [নারী] হালকা এক বোঝা ধারণ করে, আর তা নিয়ে চলাফেরা করে; তারপর যখন তা ভারী হয়ে ওঠে, তখন তারা তাদের প্রভু আল্লাহকে ডাকে- [বলে] যদি তুমি আমাদেরকে একটি সুস্থ্য সন্তান দাও, তবে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভূক্ত হব। -(৭:১৮৯)
এক নির্দিষ্ট সময় পর হাওয়া এক জোড়া সন্তান প্রসব করে। দু‘দুটি সন্তান লাভ করে তারা আনন্দে কৃতজ্ঞচিত্তে খোদার কাছে শুকরিয়া আদায় করল। কিন্তু কিভাবে একজোড়া মানব-মানবী থেকে খোদা তাদের সন্তানদেরকে বের করে নিয়ে এলেন?
খোদা আদমকে মাটির সারাংশ থেকে এবং হাওয়াকে আদমের বাম পাঁজড়ের হাঁড় থেকে সৃষ্টি করেছিলেন। আর এখন আদমের দেহ থেকে নিস্ক্রান্ত শুক্রাণু, হাওয়ার ডিম্বানুর সাথে মিলিত হয়ে জরায়ূতে সংরক্ষিত হলে তা জমাট রক্তপিন্ডে পরিণত হল। অতঃপর ঐ জমাট রক্তপিন্ড মাংসে পরিণত হল। এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি হল। অতঃপর ঐ অস্থি মাংস দ্বারা আবৃত্ত হলে আল্লাহ তাকে সুষম করলেন, তাতে রূহ সঞ্চার করলেন এবং দিলেন চক্ষু, কর্ণ ও অন্তঃকরণ। কি নিপুণতম স্রষ্টা আল্লাহ!
আর সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি নৈপুণ্যতার বিষয়ে সংক্ষেপে এমনটাই জানিয়েছে কোরআন,- আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত্ত করেছি, অবশেষে তাকে এক নতুনরূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়! -(২৩:১২-১৪)
হাবিলও কাবিল ছিল আদম-হাওয়ার প্রথম জোড়া সন্তান। পরবর্তিতে হাওয়া এক জোড়া কন্যাসন্তান প্রসব করে। এরপরে তাদের একটি পুত্র সন্তান হয়। তার নাম রাখা হয় শীষ। অত:পর তাদের অন্যান্য সন্তানেরা জন্মলাভ করে।
হাবিল ও কাবিল-দু‘জনের মধ্যে কাবিল ছিল অহংকারী ও দুষ্ট। অন্যদিকে হাবিল ছিল দয়ালু ও ভক্তিমান। কাবিল কৃষিকাজ করত আর হাবিল চরাত মেষ। স্বভাবতঃই আদম ও হাওয়ার কাছে হাবিল প্রিয় ছিল।
হাবিল ও কাবিল যখন বিবাহের উপযুক্ত হল- তখন আদম জৈষ্ঠ্যপুত্র হাবিলের সঙ্গে জৈষ্ঠ্যা কন্যার এবং কনিষ্ঠ পুত্র কাবিলের সঙ্গে কনিষ্ঠ কন্যার বিবাহের ঘোষণা দেন। আদমের কন্যাদ্বয়ের মধ্যে জৈষ্ঠ্যটি ছিল কনিষ্ঠটির তুলনায় সুন্দরী ও আকর্ষণীয়া। আর তাই কাবিল তার পিতার ঐ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে রাজী হল না। আর এ নিয়েই দু‘ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হল। তখন পিতা আদম ফয়সালা দিলেন, “মানুষের মধ্যে সেই উত্তম যে খোদার অধিক অনুগত, আর উত্তম ব্যক্তির অগ্রাধিকার এ দুনিয়ায় এবং পরকালে। সুতরাং তোমরা উভয়ে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জণে ত্যাগ স্বীকার কর। তোমরা কোরবানী দাও- যার কোরবাণী খোদা গ্রহণ করবেন, সেই প্রথমে তার স্ত্রী বেঁছে নেবার সুযোগ পাবে।”
কিছু কিছু ইসলামিক উৎস হাবিল কাবিলের দ্বন্দ্বের সূত্রপাতের এমন তথ্য দিলেও ইহুদি স্যাক্রেড গ্রন্থ হাগাধা পেসাখের বক্তব্য অবশ্য কিছুটা ভিন্ন যেমন-
To ensure the propagation of the human race, a girl, destined to be his wife, was born together with each of the sons of Adam. Abel's twin sister was of exquisite beauty, and Cain desired her. Therefore he was constantly brooding over ways and means of ridding himself of his brother. -[Haggadah of Pesach]
যাইহোক, আদম কোরবানীর নিয়ম তাদেরকে বুঝিয়ে দিলেন এবং বললেন, “তোমরা তোমাদের কোরবানীর দান উঁচুস্থানে বেদীর উপর নিয়ে রাখ। যার দান গৃহীত হবে, উপর থেকে আগুন এসে তার দান পুড়িয়ে দেবে।”
[কোরবানীর এই নিয়মই পরবর্তীতে প্রচলিত ছিল। তবে ইব্রাহিমের কোরবানী ব্যতিক্রম হতে পারে- পুত্র ইসমাইলের স্থলে কোরবানীকৃত পশুটি তিনি কি করেছিলেন তা জানা যায়নি।
মূসার সময়ে অপবিত্র নয় এমন কোন পাথরখন্ডকে কোরবানীর বেদী হিসেবে ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। অত:পর তার উপর কোরবানী করে তা আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হত। আর ঐ কোরবানীর দান সকলের জন্যে হারাম ছিল ঈমাম ব্যতিত। তবে ইলিয়াস আদমের পদ্ধতিতেই কোরবানী করেছিলেন খোদার অনুমোদন জনসমক্ষে প্রমাণের জন্যে। অন্যদিকে শেষ নবী মুহম্মদের শরীয়তে কোরবানী যে কোন পবিত্র স্থানে করার নিয়ম প্রবর্তিত হয় এবং ঐ দানের বস্তু সকল বিশ্বাসীর জন্যে হালাল করে দেয়া হয়।]
খোদার উপর হাবিলের ভক্তি ও আস্থা ছিল প্রবল। সে ভাবল- “খোদাকে যা দেব তা হবে সর্বোৎকৃষ্ট।” সুতরাং সে তার পশুপাল থেকে তার সর্বাধিক অনুগত একটি পশু সে নিজ হাতে কোরবাণী করে তা যত্নসহকারে বেদীর উপর নিয়ে রাখল। অন্যদিকে, কাবিল ভাবল- “খোদার তো কোন কিছুরই অভাব নেই, সুতরাং ভাল শস্য নষ্ট করে লাভ কি!” সুতরাং সে তার শস্য থেকে খাবারের অনুপোযুক্ত কিছু শস্য বেদীর উপর নিয়ে রাখল।
আর যখন আদম ও হাবিল-কাবিল কোরবানী কবুলের অপেক্ষায় ছিল, তখন হঠাৎ করে আকাশ থেকে আগুন এসে হাবিলের কোরবাণী পুড়িয়ে দিল। আদম বললেন, “খোদার নিকট হাবিলের কোরবাণী গৃহীত হয়েছে।”
হাবিলের কোরবাণী গৃহীত হওয়ায় কাবিল মনে মনে হিংসা অনুভব করল। সে ভেবে নিল তার উপর অবিচার করা হয়েছে, আর এটাই তার ও হাবিলের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত ঘটাল, সে হাবিলকে বলল, “অমি বিশ্বাস করি”, সে বলে চলল, “কল্যাণ ও মঙ্গলের মধ্য দিয়ে এ দুনিয়ার সৃষ্টি, কিন্তু আমি এখন দেখতে পাচ্ছি এখানে ভাল কাজের কোন মূল্য নেই। খোদা তার ক্ষমতা বলে খেয়ালখুশী মত দুনিয়াটা চালাচ্ছেন, নইলে কেন তিনি তোমার দান গ্রহন করার পাশাপাশি আমার দানও গ্রহন করলেন না?”
হাবিল তার এ কথার বিরোধিতা করে, কেননা সে বিশ্বাস করত খোদা ব্যক্তিকে নয় বরং সৎকর্মকে মূল্যায়ণ করেন এবং তার পুরস্কার দেন। খোদা তার কোরবানী গ্রহণ করেছেন তা কেবল তার কর্মগুণে যা খোদার দৃষ্টিতে সৎকর্ম হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সুতরাং সে বলল, “দেখ, খোদা কেবল সংযমীদের কোরবানীই কবুল করেন।”
কাবিল বলল, “তা আমার মধ্যে সংযমের অভাবটা কোথায় দেখলে শুনি? আমি কি তোমার মত যত্ন সহকারে কোরবানী দেইনি? আসলে ঐসব কিছু না, খোদা তোমার প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেছেন, যেমনটা আমাদের পিতারও পক্ষপাতিত্ব রয়েছে তোমার প্রতি। না কি, তোমার প্রতি পিতার যে অধিক মাত্রার সহানুভূতি রয়েছে তা তুমি বিশ্বাস কর না? আর তাই আমি বলছি, যা ঘটেছে, তার পুরোটাই একটা অবিচারের খেলা। সুতরাং”, সে বলে চলল, “আমি এসবের কিছুই মেনে নিচ্ছিনে। আর কিভাবেই বা আমি এসব মানতে পারি? এতো কেবল আমার নয়, বরং আমার সন্তানদের প্রতিও তা চরম অবিচারের কারণ হয়েছে। কেননা, আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি, আজ তুমি যেমন আমাকে হেয় করার চেষ্টা করছ অসংযমী হিসেবে, ভবিষ্যতে তোমার সন্তানেরাও তেমনি আমার সন্তানদেরকে হেয় করার চেষ্টা করবে এ কথা বলে, “খোদা তোমাদের পিতার কোরবানী কবুল করেননি।” আর আমি কখনও আমার সন্তানদেরকে কারও কাছে হেয় প্রতিপন্ন হতে দিতে পারি না। সুতরাং তোমাকে মরতে হবে, আমি তোমাকে খুন করবই করব।”
হাবিল বলল, “আমাকে খুন করার জন্যে তুমি হাত তুললেও তোমাকে খুন করার জন্যে আমি হাত তুলব না, কেননা, আমি খোদাকে ভয় করি, যিনি বিশ্ব জগতের প্রতিপালক। নিশ্চয় জালিমরা তাদের কর্মফল ভোগ করবে। সুতরাং আমাকে খুন করলে, তুমি আমার ও তোমার পাপের ভার বইবে ও বাস করবে আগুনে। আর সেটাই জালিমদের শাস্তি।”
কোরআনে হাবিল-কাবিলের কোরবানী সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘আদমের দু’পুত্র, যখন তারা কোরবাণী করেছিল, তখন দু’জনের একজনের কোরবাণী কবুল হল অন্যজনেরটা হল না। তাদের একজন বলল, “আমি তোমাকে খুন করবই।”
অপরজন বলল, “আল্লাহ সংযমীদের কোরবাণী কবুল করেন। আমাকে খুন করার জন্যে তুমি হাত তুললেও তোমাকে খুন করার জন্যে আমি হাত তুলব না; আমি তো বিশ্বজগতের প্রতিপালকের ভয় করি। আমি চাই তুমি আমার ও তোমার পাপের ভার বইবে ও বাস করবে আগুনে। আর এটাই জালিমদের কর্মফল।” -[৫:২৭-২৯]
পিতা আদমের সিদ্ধান্ত খোদার অনুমোদনের পর হাবিলের বিবাহ হয়ে গেল। কাবিল কিছুই করতে পারল না। এমনকি সে হাবিলকে খুন করতে চাইলেও কিভবে তা করবে, তারও কোন কূল-কিনারা সে ভেবে পেল না। সুতরাং তার মনে কেবল জিঘাংসা বাড়তেই থাকল।
তারপর এক প্রভাতে ঘটে গেল সেই অঘটন। ঐদিন সকালে কাবিল তার ক্ষেতের ফসল তদারকিতে গিয়ে দেখতে পেল, রাতে হাবিলের পশুপাল তার ক্ষেতের ফসলের ক্ষতিসাধন করেছে। তখন সে ঐ ক্ষেতের ধারে বসেই হাবিলকে শায়েস্তা করার কথা নতুন করে ভাবতে লাগল। আর ঠিক তখুনি সে দেখতে পেল হাবিল তার মেষপাল চরাতে নিয়ে যাচ্ছে। তার ক্রোধ বেড়ে গেল মুহূর্তে তাতে সে চিৎকার করে বলল, “কোন অধিকারে তুমি তোমার পশুপাল নিয়ে আয়েশ করে আমার জমির উপর দিয়ে চরে বেড়াচ্ছ?”
হাবিল ঠিক প্রস্তুত ছিল না এমন প্রশ্নের সম্মুখীণ হবার, সে কাবিলকে খুঁটিয়ে লক্ষ্য করল, তারপর বলল, “তোমার পরণের ঐ পোষাকগুলো তো আমার পশুপালের চামড়া আর পশম দিয়েই তৈরী, নয় কি? তাহলে তুমিই বা কোন অধিকারে সেগুলো গায়ে চড়িয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছ? তবে হ্যাঁ, তুমি যদি ওগুলো খুলে ফেল, আর এতদিন আমার পশুদের যত মাংস সাবাড় করেছ তার মূল্যও আমায় পরিশোধ করে দাও, তাহলে না হয় আমি আমার পশুপাল নিয়ে মাটি ছেড়ে আকাশে গিয়ে বাস করার কথা চিন্তা-ভাবনা করে দেখব- যেমনটা তুমি চাও।”
শীতের সময় ভেড়ার পশমের কোট কেমন উপকারী তা কাবিলের জানা ছিল। সে আরও ভাবল, দুধ ও মাংস খাওয়া বাদ দিলেও চর্ম ছাড়া তো তাকে উলঙ্গ হয়ে থাকতে হবে! সুতরাং সে হাবিলের কথার কোন জবাব দিতে পারল না। কিন্তু হঠাৎ তার মনে হল- তাকে হত্যা করলে সব পশু তো তারই হবে। দুধ, মাংস, চর্ম ও পশম- সব তার। তার মন তাকে খুন করতে উত্তেজিত করতে লাগল।
এদিকে কাবিলকে নিরুত্তর দেখে হাবিল তাকে বলল, “কি, আমাকে খুন করার কথা ভাবছ নাকি? শোন, সেরকম কিছু করলে শাস্তি থেকে কিন্তু রেহাই পাবে না।”
কাবিল বলল, “কেন পাব না? তোমাকে যদি অামি খুন করেই ফেলি, তখন কে আমাকে শাস্তি দেবে শুনি?”
হাবিল বলল, “জালিমের কূ-কর্মের ভার তার উপরেই বর্তায়। আর শয়তান তো চায় তুমি আমাকে খুন কর। তোমার হাত আমার রক্তে রঞ্জিত হোক। খোদা,” সে বলে চলল, “যিনি আমাদেরকে এ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, তিনি আমাদের সকল কর্মকান্ডের খোঁজ রাখেন। সুতরাং তুমি আমাকে খুন করলে, তিনিই তার বিচার করবেন। আর তিনি তো ন্যায়বিচারক। তিনি তোমাকে তোমার কূ-কর্মের শাস্তি দিয়ে আমার খুনের প্রতিশোধ নেবেন।”
হাবিলের এসব কথা কাবিলের ক্রোধ আরও বাড়িয়ে দিল। তখন সে উন্মত্তের মত তার ভাইয়ের উপর ঝাপিয়ে পড়ল। কিন্তু হাবিল, কাবিলের চেয়ে শক্তিশালী ছিল। সে সহজেই তাকে তার কঠিন হস্তের বেষ্টনীতে চেপে রাখল। তখন কাবিল নিজেকে বিপদজনক অবস্থায় দেখল, মুহূর্তে সে নিজেকে বদলে নিল, দয়া ভিক্ষে চাইল হাবিলের কাছে। তখন হাবিল তার বেষ্টনী ঢিলা করে দিলে কাবিল নিজেকে মুক্ত করে নিয়ে কোন রকমে হাঁফ ছাড়ল।
তারপর হাবিল যখন চলে যেতে উদ্যত হল, তখনই আবার উত্তেজিত সেদিকে তাকিয়ে কাবিলের মন আবারো তার ভাইকে খুন করতে উত্তেজিত করে দিল। আর সে একটা পাথরের টুকরো কুড়িয়ে নিয়ে, তা দিয়ে হাবিলকে পিছন থেকে আঘাত করল। হাবিল মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। তখন কাবিল আর একটা পাথরের টুকরো কুড়িয়ে নিয়ে ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে তার সারা দেহে আঘাত করতে থাকল যতক্ষণ না তা রক্তাক্ত হল। হাবিল মারা গেল। আর তাতে দুনিয়ার প্রথম খুনটি সংঘটিত হল।
তারপর যখন কাবিলের মন শান্ত হল, তখন সে তার ভাইয়ের নীরব নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়ল। এই মৃতদেহ নিয়ে এখন সে কি করবে, তা ভেবে অস্থির হয়ে পড়ল। ইতিমধ্যে তার মন থেকে জিঘাংসা লুপ্ত হয়েছিল, ফলে এখন এক ধরণের ভীতি তার মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। তার পিতামাতা কি কোনভাবে তার এই অপকর্মের কথা জানতে পারবেন? সে নিশ্চিত নয়, সুতরাং লাশ গোপন করার জন্যে সে উঠেপড়ে লাগল। কিন্তু কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে সে তার ভাইয়ের লাশ কাঁধে তুলে নিল এবং এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে ফিরতে লাগল। কিন্তু কোন পথ সে পেল না। একসময় লাশের শিরাগুলি সঙ্কূচিত হল এবং তা শক্ত হয়ে গেল, আর লাশের ভার পিঠে বহন করতে করতে সেও পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ল। তখন সে এক স্থানে বিশ্রামের জন্যে থামল এবং লাশটি নামিয়ে রেখে নিজের অবস্থা ও অবস্থানের কথা ভাবতে লাগল।
তখন আল্লাহ তার এই বিশ্বাসী বান্দার মৃতদেহের প্রতি যথাযত সম্মান প্রদর্শণ করতে চাইলেন। সুতরাং তিনি পাঠালেন এক কাক। সে লাশ কিভাবে গোপন করা যায় তা কাবিলকে দেখানোর উদ্দেশ্যে অপর একটি কাকের সাথে মারামারি করে তাকে হত্যা করে ফেলল। তারপর সে তার পায়ের নখর ও ঠোঁটের সাহায্যে মাটি খুঁড়ে এক গর্ত তৈরী করল। অত:পর মৃত কাকটিকে ঠোঁট দিয়ে গড়িয়ে ঐ গর্তে ফেলে পায়ের নখরের সাহায্যে সেটিকে মাটি চাপা দিয়ে দিল।
কাক। |
আর তার মন তাকে তার ভাইকে খুন করতে উত্তেজিত করল ও সে তাকে হত্যা করল, তাই সে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হল। তারপর আল্লাহ পাঠালেন এক কাক, যে তার ভাইয়ের লাশ কিভাবে গোপন করা যায় তা দেখাবার উদ্দেশ্যে মাটি খুঁড়তে লাগল। সে বলল, “হায়! আমি কি এই কাকের মতও হতে পারলাম না, যাতে আমার ভাইয়ের লাশ গোপন করতে পারি?”
তারপর সে অনুতপ্ত হল। -(৫:২৭-৩১)
সন্ধ্যায় কাবিল বাড়ীতে ফিরলে তার পিতামাতা হাবিল কোথায় তা তার কাছে জানতে চাইলেন। কাবিল বলল, “আমি কি সারা দিন তাকে পাহারা দিয়ে বেড়িয়েছি নাকি যে, সে কোথায় তা তোমরা আমার কাছে জানতে চাইছ?”
কাবিল পিতামাতাকে এমন উত্তর দিলেও ভয় তার মনকে আবারও আচ্ছন্ন করে ফেলল। হাগাধা পেসাক জানায়- তখন সে খোদাকে উদ্দেশ্যে করে বলল,- “ও বিশ্ব জগতের প্রতিপালক প্রভু! তোমার সামনে মানুষের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে এমন কেউ কি আছে? আমার পিতামাতা তো একমাত্র জীবিত মানব, আর তারা তো এ কাজ, যা আমি করেছি, তার কিছুই জানেন না। আর তুমি তো স্বর্গে বাস কর, তুমিই বা দুনিয়াতে কি ঘটছে সে সম্পর্কে কিভাবে জানবে?”
উত্তরে খোদা তাকে বললেন, “ওহে বোকা! বিশ্বজগৎ আমিই পরিচালনা করছি। আমি তা সৃষ্টি করেছি এবং তার ভারও বইছি।”
পরদিন সকালে আদম-হাওয়া হাবিলের খোঁজে বের হল। আর হাবিলের পোষা কুকুর তাদেরকে নিয়ে গেল সেখানে, যেখানে তাকে মাটির নীচে লুকিয়েছে কাবিল। তখন আদম মাটি খুঁড়ে বের করে আনল হাবিলের লাশ। রক্ত ক্ষরণে লাশ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল। আদম তার সন্তানের এমন অবস্থা দেখে ক্ষোভের সাথে বলে উঠল, “তার উপর লানত যে আমার সন্তানের রক্ত শুষে নিয়েছে।”
তখন মাটি তার সব রক্ত যা সে শুষে নিয়েছিল, ফেরৎ দিয়ে দিল। এতে হাবিলের পুরো শরীর রক্তে ভিজে গেল। আর এ বিষয়ে হাগাধা পেসাখ আমাদেরকে জানাচ্ছে এমন-
“Nature was modified also by the burial of the corpse of Abel. For a long time it lay there exposed, above ground, because Adam and Eve knew not what to do with it. They sat beside it and wept, while the faithful dog of Abel kept guard that birds and beasts did it no harm. On a sudden, the mourning parents observed how a raven scratched the earth away in one spot, and then hid a dead bird of his own kind in the ground. Adam, following the example of the raven, buried the body of Abel.” Haggadah of Pesach,
এদিকে হাবিলের লাশের উৎঘাটন হওয়ায় কাবিলের কূ-কর্ম উন্মুক্ত হয়ে পড়ল, ফলে সে তার পিতার ক্রোধ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে দূরে পালিয়ে যেতে যেতে খোদাকে অভিযুক্ত করে বলল, “তুমি তো বিশ্বজগতের ভার বইছ, আর আমার সামান্য পাপের ভার বইতে পরলে না? তবে কি আমার পাপের ভার তোমার বহন ক্ষমতারও উর্দ্ধে? এর আগে তুমি আমার মন থেকে আমার পিতাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলে, আর আজ তুমি তার দৃষ্টি থেকে আমাকেও দূরে সরিয়ে দিলে। এর পরে তো এমন কথাই প্রচলিত হবে- “তোমার কাজই হচ্ছে দূরে ঠেলে দেয়া।”
সমাপ্ত।
সংশোধিত নয়।
# একজন প্রশ্ন করল, “ভাই আদমকে এককভাবে সৃষ্টি করা হল কেন? বা হাওয়াকে আদমের মত মাটি থেকে সৃষ্টি না করে কেন তাকে তার বাম পাঁজড় থেকে সৃষ্টি করা হল?”
# আরেকজন বলল, ভাই ,“তারপর যখন তা ভারী হয়ে ওঠে, তখন তারা তাদের প্রভু আল্লাহকে ডাকে- [বলে] যদি তুমি আমাদেরকে একটি সুস্থ্য সন্তান দাও, তবে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভূক্ত হব।” -(৭:১৮৯) - এটি আদম-হাওয়ার দোয়া বলে দিব্যি চালিয়ে দিলেন? যুক্তিটা কি শুনি।”
# আরেকজন বলল, “ভাই , হাগাধা পেসাখের কতটুকু গ্রহনযোগ্য?”
# আরেকজনের প্রশ্ন, “ভাই কাবিল পালিয়ে কৈ গেল? আর তার বংশ বিস্তারওবা ক্যামনে হল? সে কি দোযখী?
# আরেকজনের প্রশ্ন, “ভাই, আদম-হাওয়ার কাহিনী নিয়ে অনেকে ইনসেস্ট এর প্রশ্ন তোলে,, এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?
# আরেকজনের প্রশ্ন, “ভাই, কাবিল কি অপরাধী হয়েই জন্মেছিল? তা নইলে হাবিল হল না , আর সে অপরাধী হল - কিভাবে?
উৎস:
হাগাধা পেসাখ,
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন