মক্কার কুরাইশদের অনমনীয় মনোভাব লক্ষ্য করে, আর মুসলমান ও তাদের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বন্ধ করার জন্যে মুহম্মদ মক্কাবাসীরা যে শর্ত আরোপ করতে চায় তাতেই সম্মত হতে রাজী হলেন। অনেক অসুবিধার পর একটি সন্ধিচুক্তি চূড়ান্ত করা হল। উভয়পক্ষের স্বাক্ষরিত এই চুক্তি হুদাইবিয়ার সন্ধি (Treaty of Hudaybiyyah) নামে খ্যাত। এতে উভয়পক্ষ সম্মত হল যে-
১)-এ বৎসর মুসলমানদেরকে হজ্জ্বব্রত পালন না করেই ফিরে যেতে হবে।
২)-তাদেরকে পরবর্তী বৎসর কা’বাগৃহ দর্শণের অনুমতি দেয়া হবে
৩)-প্রয়োজনীয় অস্ত্র তীর্থযাত্রীরা সঙ্গে নিয়ে ‘কোশবদ্ধ অবস্থায়’ তিন দিনের জন্যে মক্কায় থাকতে পারবে।
৪)-দশ বৎসরের জন্যে শত্রুতা বন্ধ থাকবে এবং কেউ যুদ্ধকারীদের সাহায্য করবে না। যে গোত্র যার সাথে রয়েছে তার বেলায় এই নীতি প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ এদের কারও প্রতি আক্রমণ বা আক্রমণে সাহায্যদান হবে চুক্তিভঙ্গের নামান্তর।
৫)-যদি কুরাইশদের কোন ব্যক্তি অভিভাবক বা প্রধানদের সম্মতি ব্যতিরেকে মুহম্মদের দলভূক্ত হয়, তবে তাকে কুরাইশদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।
৬)-মুসলমানদের মধ্যে থেকে যদি কেউ মক্কাবাসীদের কাছে ফিরে যায়, তবে তাকে ফেরৎ দেয়া হবে না।
৭)-কোন গোত্র যদি কুরাইশ কিংবা মুসলমানদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে চায় তবে বাঁধামুক্ত অবস্থায় স্বাধীনভাবে তা করতে পারবে।
সন্ধি শেষে মুহম্মদ যখন হুদাইবিয়াতেই অবস্থানরত ছিলেন, তখন কয়েকটি ঘটনা সংঘটিত হল। আবু জন্দল (Abu Jandal) নামক এক মুসলমানকে কুরাইশরা বন্দী করে রেখেছিল। সে কোন রকমে পালিয়ে মুহম্মদের কাছে উপস্থিত হল।
১)-এ বৎসর মুসলমানদেরকে হজ্জ্বব্রত পালন না করেই ফিরে যেতে হবে।
২)-তাদেরকে পরবর্তী বৎসর কা’বাগৃহ দর্শণের অনুমতি দেয়া হবে
৩)-প্রয়োজনীয় অস্ত্র তীর্থযাত্রীরা সঙ্গে নিয়ে ‘কোশবদ্ধ অবস্থায়’ তিন দিনের জন্যে মক্কায় থাকতে পারবে।
৪)-দশ বৎসরের জন্যে শত্রুতা বন্ধ থাকবে এবং কেউ যুদ্ধকারীদের সাহায্য করবে না। যে গোত্র যার সাথে রয়েছে তার বেলায় এই নীতি প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ এদের কারও প্রতি আক্রমণ বা আক্রমণে সাহায্যদান হবে চুক্তিভঙ্গের নামান্তর।
৫)-যদি কুরাইশদের কোন ব্যক্তি অভিভাবক বা প্রধানদের সম্মতি ব্যতিরেকে মুহম্মদের দলভূক্ত হয়, তবে তাকে কুরাইশদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।
৬)-মুসলমানদের মধ্যে থেকে যদি কেউ মক্কাবাসীদের কাছে ফিরে যায়, তবে তাকে ফেরৎ দেয়া হবে না।
৭)-কোন গোত্র যদি কুরাইশ কিংবা মুসলমানদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে চায় তবে বাঁধামুক্ত অবস্থায় স্বাধীনভাবে তা করতে পারবে।
সন্ধি শেষে মুহম্মদ যখন হুদাইবিয়াতেই অবস্থানরত ছিলেন, তখন কয়েকটি ঘটনা সংঘটিত হল। আবু জন্দল (Abu Jandal) নামক এক মুসলমানকে কুরাইশরা বন্দী করে রেখেছিল। সে কোন রকমে পালিয়ে মুহম্মদের কাছে উপস্থিত হল।
সন্ধির ৫ম শর্তের বদৌলতে, যার দ্বারা মুসলমানেরা যারা অভিভাবক বা প্রধানের বিনা অনুমতিতে ইসলাম গ্রহণ করেছিল, তাদেরকে কুরাইশদের কাছে ফিরিয়ে দিতে মুহম্মদ বাধ্য ছিলেন। এই শর্তানুসারে কুরাইশরা তার কাছে জন্দলকে ফিরিয়ে দেবার দাবী করল। এতে সাহাবীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিল। তাদের বক্তব্য হল-‘চুক্তির শর্তানুযায়ী তাকে ফেরৎ পাঠান উচিৎ। কিন্তু একজন নির্যাতিত ভাইকে পুনঃরায় জালেমদের হাতে তুলে দেব এটা কিরূপে সম্ভব?’
কিন্তু মুহম্মদ সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন। তিনি শরীয়তের নীতিমালার হেফাযত ও তৎপ্রতি দৃঢ়তা একব্যক্তির কারণে বিসর্জন দিতে পারেন না। তাই কিছু কিছু মুসলমানদের আপত্তির মৃদু গুঞ্জন সত্ত্বেও তিনি তৎক্ষণাৎ কুরাইশদের দাবী মেনে নিলেন এবং জন্দলকে ফেরৎ পাঠালেন।
সাথে সাথেই দ্বিতীয় আরেকটি ঘটনা ঘটল। মুসলমান সাঈদা বিনতে হারেস পৌত্তলিক সায়ফী ইবনে আনসারের পত্নী ছিল। এই মহিলাও পালিয়ে এসে মুহম্মদের কাছে উপস্থিত হল। সাথে সাথে তার স্বামীও এসে হাযির। সে মুহম্মদের কাছে দাবী জানাল, ‘আমার স্ত্রীকে আমার কাছে প্রত্যার্পণ করা হোক। কেননা এই শর্ত আপনি মেনে নিয়েছেন এবং সন্ধিপত্রের কালি এখনও শুকায়নি।’
এসময় এই আয়াত নাযিল হল- মুমিনেরা, যখন তোমাদের কাছে ঈমানদার নারীরা হিযরত করে আগমন করে, তখন তাদেরকে পরীক্ষা কর। আল্লাহ তাদের ঈমান সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন। যদি তোমরা জান যে, তারা ঈমানদার, তবে আর তাদেরকে অবিশ্বাসীদের কাছে ফেরৎ পাঠিও না। এরা অবিশ্বাসীদের জন্যে হালাল নয় এবং অবিশ্বাসীরা এদের জন্যে হালাল নয়। অবিশ্বাসীরা যা ব্যয় করেছে, তা তাদের দিয়ে দাও। তোমরা এ নারীদের প্রাপ্য মোহরানা দিয়ে বিবাহ করলে তোমাদের কোন অপরাধ হবে না। তোমরা অবিশ্বাসী নারীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখ না। তোমরা যা ব্যয় করেছ তা চেয়ে নাও এবং তারাও চেয়ে নেবে যা তারা ব্যয় করেছে। এটা আল্লাহর বিধান; তিনি তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।(৬০:১০)
সুতরাং মুহম্মদ সাঈদার স্বামীর কাছে সন্ধিচুক্তির উল্লেখিত শর্তের সঠিক ব্যাখ্যা শেষে সাঈদাকে ফিরিয়ে দেবার দাবী প্রত্যাখ্যান করে বললেন, ‘এই শর্ত পুরুষদের জন্যে, নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।’
মুহম্মদ হুদাইবিয়া থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে ফিরে চললেন। সাহাবীদের অনেকে ওমরাহ পালন না করতে পেরে মনোক্ষুন্ন হয়েছিলেন। মুহম্মদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবার কোন সন তারিখ যদিও উল্লেখ ছিল না, তবুও এই সম্পর্কে কারও মনে যাতে খটকা না লাগে এজন্যে এই আয়াত নাযিল হল-আল্লাহ তাঁর রসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আল্লাহ চাহেন তো তোমরা মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে মস্তক মুন্ডিত অবস্থায় এবং কেশ কর্তিত অবস্থায়। তোমরা কাউকে ভয় করবে না। অতঃপর তিনি জানেন যা তোমরা জান না। এছাড়াও তিনি দিয়েছেন তোমদেরকে একটি আসন্ন বিজয়।(৪৮:২৭)
হুদাইবিয়া সন্ধি শেষে মুহম্মদ সবেমাত্র মদিনায় উপনীত হয়েছেন, এসময় ওতবা (Otba) নামক এক নও মুসলিম সুযোগমত কুরাইশদের বন্দীশালা থেকে পালিয়ে মদিনায় উপনীত হল। এদিকে তার মদিনা গমনের সংবাদ জানতে পেরে কুরাইশরা দু‘জন দূতকে সেখানে পাঠিয়ে দিল। তারা এসে মুহম্মদের কাছে সন্ধির শর্তানুসারে ওতবাকে তাদের হস্তে অর্পণের দাবী পেশ করল। এতে মুহম্মদ ওতবাকে বললেন, ‘ইসলামে প্রতিজ্ঞাভঙ্গ ও বিশ্বাসঘাতকতার কোন স্থান নেই। সুতরাং তোমাকে মদিনায় ফেরৎ যেতে হবে।’
ওতবাকে ধৈর্য্য ধারণের উপদেশ দিয়ে দূতদের সাথে মক্কায় প্রেরণ করা হল। এ সময় ওতবা কৌশলে তাদের একজনের তরবারী হস্তগত করে তাকে হত্যা করে ফেলল। অন্য ব্যক্তি দৌঁড়ে পালিয়ে একসময় মদিনায় এসে হাজির হল।
সকল ঘটনা শুনে মুহম্মদ দুঃখ ও অসন্তোষ প্রকাশ করলেন।
এদিকে হত্যাকান্ডের পর ওতবা ভাবল- মদিনায় ফিরে গেলে তাকে পুনঃরায় মক্কায় ফেরত পাঠান হবে। আর তার পরিনতি কি হবে তা তো সহজেই অনুমেয়। সুতরাং সে সমুদ্র উপকূলে গমন করে সেখানকার এক সুরক্ষিত উপত্যাকা ঈসে আশ্রয় নিল।
ওতবার এই অবস্থানের সংবাদ মক্কায় জানাজানি হল। এতে অনেক নব্য মুসলমান পালিয়ে এসে তার সাথে মিলিত হতে লাগল। এভাবে এদল যখন ভারী হয়ে উঠল, তখন তারা কুরাইশদের বাণিজ্য পথে হানা দিতে শুরু করল। এই গুপ্ত আক্রমণের দরুণ কুরাইশদের ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গে উঠার উপক্রম হল।
কুরাইশদের জীবিকা অর্জণের একমাত্র মাধ্যম বাণিজ্য। সুতরাং তারা এই গুপ্ত আক্রমণ বন্ধের লক্ষ্যে বাধ্য হয়ে মদিনায় দূত পাঠিয়ে সন্ধির ৫ম শর্তটি প্রত্যাহার করে নিল। এই প্রত্যাহারের সাথে সাথে মক্কার নির্যাতিত মুসলমানরা পালিয়ে মদিনায় হিযরত করতে লাগল।
এসব হিযরতকারীদের মধ্যে আবু জন্দলও ছিল।
সমাপ্ত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন