১৮ মার্চ, ২০১২

Zamzam Well: জমজম কূপ ও মক্কা নগরীর পত্তন ইতিহাস।


বিবি সারার কোন সন্তানাদি ছিল না। একটি সন্তানের জন্যে তার আকুতিও কম ছিল না। খোদা ইব্রাহিমের মাধ্যমে একটি জাতি গড়ে তুলবেন জানিয়েছিলেন। এ কারণে সারা ইব্রাহিমকে প্রলুব্ধ করেন তার দাসী হাজেরাকে বিবাহ করতে। অত:পর সারার অনুরোধে হাজেরাকে বিবাহের পর ইব্রাহিম আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করলেন, ‘হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক সৎপুত্র দান কর।’(৩৭:১০১) সুতরাং আল্লাহ তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলেন।(৩৭:১০২)

হাজেরা গর্ভবতী হল। যখন সে বুঝতে পারল যে সে গর্ভবতী, তখন আনন্দে এমন আত্মহারা হয়ে পড়ল যে মনিবপত্নী সারা তার কাছে অবজ্ঞার পাত্রে পরিণত হলেন। এতে ক্ষুব্ধ সারা ইব্রাহিমের নিকট অভিযোগ করলেন। 
ইব্রাহিম বললেন, 'সে তোমার দাসী। সুতরাং তোমার যা ভাল মনে হয় তার প্রতি তুমি তা-ই কর।’

ইব্রাহিমের ৮৬ বৎসর বয়সের সময় হাজেরা একটি পুত্র সন্তান প্রসব করল। তার নাম রাখা হল ইসমাইল। ইতিমধ্যে সারা ও হাজেরার মধ্যে অসন্তোষ আরও বৃদ্ধি পেল। ক্ষুব্ধ সারা আর সহ্য করতে রাজী ছিলেন না। সুতরাং তিনি ইব্রাহিমকে বললেন, ‘সন্তানসহ তাকে মরুভূমিতে নির্বাসন দাও।’

 নির্বাসনের প্রস্তুতি।
ইব্রাহিম মহা সমস্যায় পড়লেন। দাসীর প্রতি যে কোন সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার সারার রয়েছে। সর্বোপরি তিনি নিজেই ইতিপূর্বে এই অধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে সারাকে সমর্থণ করেছিলেন। কিন্তু এখন হাজেরাকে নির্বাসন দিতে তিনি গড়িমসি করতে লাগলেন। এইসময় ফেরেস্তা জিব্রাইল তাকে সারার কথা মতই কাজ করতে বলল। সে বলল, 'তাদেরকে নির্বাসন দাও। আল্লাহ তোমার এই সন্তানের মধ্যে দিয়েই একটা জাতি গড়ে তুলবেন।’

ইব্রাহিম তার সন্তান ও স্ত্রীকে নির্বাসনের প্রস্তুতি নিলেন। তারপর এক সকালে কিছু খাদ্য ও পানীয়সহ তাদেরকে নিয়ে রওনা হলেন। চারিদিকে ধূ-ধূ মরুভূমি। একস্থানে কিছু গাছপালা দেখতে পেয়ে ইব্রাহিম স্ত্রী ও সন্তানকে সেখানে নির্বাসনের বাসনা করলেন। কিন্তু জিব্রাইল বলল, ‘তাদেরকে নির্বাসনের স্থান এটা নয়।’

মরুতে হাজেরা ও শিশু ইসমাইল।
সুতরাং তারা চলতে লাগলেন। চলতে চলতে যখন শুস্ক পাহাড় ও উত্তপ্ত বালুকাময় প্রান্তর এসে পড়ল তখন জিব্রাইল তাদেরকে সেখানেই থামিয়ে দিল।
সুতরাং ইব্রাহিম হাজেরাকে বললেন, ‘আল্লাহর নির্দেশমত আমি চলে যাচ্ছি।’
হাজেরা বলল- ‘এই মরুভূমিতে আমাদেরকে কার কাছে রেখে যাচ্ছেন?’
ইব্রাহিম বললেন - ‘আল্লাহর তত্ত্বাবধানে।’
সে বলল- ‘তবে, আমাদের জন্যে চিন্তা করবেন না। আল্লাহ নিশ্চয়ই আমাদের ধ্বংস হতে দেবেন না।’
এদিকে হাজেরা দুগ্ধপোষ্য শিশুকে নিয়ে জনমানবহীন প্রান্তরে দিনাতিপাত করতে লাগল। তাদের খাদ্য ও পানীয় (কিছু খেজুর ও এক মশক পানি) দ্রুত শেষ হয়ে গেল। পিপাসায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে। সন্তানকে উন্মুক্ত প্রান্তরে দৃষ্টির সম্মুখে শায়িত রেখে পানির খোঁজে হাজেরা এদিকে ওদিকে ছোটাছুটি করল। আশে পাশে পানি নেই বুঝতে পেরে সে কোন পথিক বা নিকটস্থ জনপদের সন্ধানে সাফা ও মারওয়া পর্বতদ্বয়ের একটিতে উঠল। তারপর অতি আগ্রহ নিয়ে সে দূরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। 

পানির জন্যে আকুতি হাজেরার।
চারিদিকে ধূ-ধূ বালু, কোথাও কোন জনপদের চিহ্ন নেই। কোন পথিকও দৃষ্টিগোচর হল না। কিন্তু সে হতাশ হল না। সে ভাবল নিশ্চয় অপর পাহাড় থেকে দৃষ্টি দিলে কোন কোন পথিকের দেখা মিলবে। একে পিপাসায় ছাতি ফেঁটে যাচ্ছে তার উপর মরুর তীব্র লু হাওয়া- অতি কষ্টে সে অপর পাহাড়ে উঠল। তারপর চূঁড়া থেকে আশেপাশে এবং দূরে মনোযোগের সাথে দৃষ্টি ফেলল। কিন্তু আগের মতই চারিদিকে ধূধূ বালিই তার নজরে এল, কোন পথিকের দেখা মিলল না। কিন্তু সে দমে গেল না, সে ভাবল ১ম পাহাড়ে এবার উঠলে নিশ্চয়ই কারও দেখা মিলবে। এভাবে সাফা ও মারওয়া পর্বতদ্বয়ে সে সাতবার ওঠানামা করল, যতক্ষণ না সন্ধ্যা হয়ে এল এবং দূরের আর কিছু দৃষ্টিগোচরে এল না। 

এখানে একথা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, হাজেরার সাফা ও মারওয়া পর্বতদ্বয়ে সাতবার ওঠা-নামার কারণেই হজ্বের সময় এই পর্বতদ্বয়ের মাঝে সাতবার দৌঁড়ান একটা বিধিতে পরিণত হয়েছে।-নিঃসন্দেহে ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শণগুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কা‘বা গৃহে হজ্জ্ব বা ওমরাহ পালন করে, তাদের পক্ষে এ দু‘টিতে প্রদক্ষিণ করাতে দোষ নেই। বরং কেউ যদি স্বেচ্ছায় কিছু নেকীর কাজ করে, তবে আল্লাহ তা অবশ্যই অবগত হবেন এবং তার সে আমলের সঠিক মূল্য দেবেন।(২:১৫৮)

প্রাচীন জমজম কূপ।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছিল। মাতা হাজেরা ভাবল এখন তার সন্তানের কাছে ফিরে যাওয়া দরকার। তার বুকে যতটুকু দুধ আছে তা দিয়ে যতক্ষণ সম্ভব সে তার সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করবে। এই অসহায় অবস্থায় হাজেরা দু‘হাত আকাশের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে আল্লাহর কাছে আর্জি জানালেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তো মৃত্যূর দ্বার প্রান্তে পৌঁছে গেছি। তুমি কি দেখছ না!  আমাদেরকে সাহায্য কর একান্তই যদি কোন সাহায্য করতে চাও।’

আল্লাহ তার এই প্রার্থনায় সাড়া দিলেন। তাঁর নির্দেশে জিব্রাইল এসে শায়িত ইসমাইলের পদদেশে তার গোঁড়ালী দিয়ে আঘাত করল। 

অবশেষে পরিশ্রান্ত, অসহায় মা তার সন্তানের কাছে ফিরে এল। কিন্তু তার জন্যে এক মহাবিষ্ময় অপেক্ষা করছিল। সে দেখতে পেল শিশু ইসমাইলের পদদেশে একটি ফোয়ারার সৃষ্টি হয়েছে এবং পানির ক্ষীণধারা বয়ে চলেছে। আল্লাহর রহমতের নিদর্শণ, এটাই বর্তমানের জমজম কূপ। 

 জমজম কূপ, বর্তমানে।
হাজেরা বুঝতে পারল আল্লাহ তাকে একটি পূণ্যবান সন্তান দান করেছেন। সে তাঁকে অশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করার পর পানি পান করল। তারপর এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নুড়ি কুড়িয়ে এনে ফোয়ারার চতুর্দিকে স্থাপন করে ঐ পানি আবদ্ধ করল। একসময় ঐ আবদ্ধ পানি উপচে পড়তে লাগল। এ দেখে হাজেরা আরও বালু ও নুড়িকনা দ্বারা ঐ পানি আবদ্ধ করার চেষ্টা করতে ও বলতে লাগল, ‘জম, জম।’ অর্থাৎ থাম, থাম, তাতে আল্লাহর ইচ্ছায় ঐ পানির প্রবাহ থেমে পড়ল। এই হচ্ছে জমজম কূপের (Zamzam Well) কাহিনী। 

হাজেরার সঙ্গে যে খাবার ছিল তা পূর্বেই ফুরিয়ে গিয়েছিল। সুতরাং পানি পান করেই মাতা-পুত্রের প্রাণ রক্ষা হতে লাগল। এ সময় একদিন একদল ইয়েমেনীয় জুরহুম গোত্রের বণিক ব্যবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়া গমনের প্রাক্কালে পিপাসার্ত পশু সহকারে পানির খোঁজে ঘুরতে ঘুরতে মক্কার মরু অঞ্চলে এসে পৌঁছিল। অতঃপর তারা একস্থানে কিছু পাখি উড়তে দেখে সেদিক লক্ষ্য করে যাত্রা শুরু করল। কেননা তারা জানত মরুর বুকে কেবল পানির উৎসের উপরই পাখি উড়ে। 

বণিকদল সাফা পর্বতের পাদদেশে এসে পৌঁছিল এবং পানির ক্ষুদ্র এক উৎস দেখতে পেল। কিন্তু তারা বিষ্মিত হল দু‘টি কারণে- প্রথমত: পানির উৎস ক্ষূদ্র এবং তাকে ঘিরে কোন মরুদ্যান গড়ে উঠেনি এবং দ্বিতীয়ত: এক মহিলা শিশুপুত্রসহ ঐ ফোয়ারার পাশে উপবিষ্ট। তাদের বিষ্ময়ের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেল যখন তারা নিশ্চিত হল ঐ মহিলার সাথে কোন পুরুষ সঙ্গী নেই। 

বিষ্ময় এবং কৌতুহল নিয়ে বণিকদল ফোয়ারার নিকটবর্তী হল। তারপর এই জন-মানবহীন প্রান্তরে তার আগমণের ইতিবৃত্ত জানতে তারা তার পরিচয় জিজ্ঞেস করল। 
হাজেরা তার পরিচয় জানাল। 

মক্কা নগরী, সংস্কৃত মডেল।
বণিকদল সবকিছু জানার পর বুঝতে পারল এই মহিলা খোদার অনুগ্রহ প্রাপ্ত পরিবারেরই একজন সদস্য। সুতরাং তারা তার কাছে অতি আগ্রহ নিয়ে আশেপাশে বসতি স্থাপণের অনুমতি প্রার্থণা করল। ইতিমধ্যে হাজেরাও বুঝতে পেরেছিল এই মরুপ্রান্তরে এই বণিকদলকে আল্লাহই রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। সুতরাং সে অনুমতি দিল, কিন্তু ফোয়ারার স্বত্ত্ব প্রদানে সম্মত হল না। বণিকেরা তার সাথে একমত হল এবং পানির বিনিময়ে বাৎসরিক মোটা অঙ্কের অর্থ প্রদানেও সম্মত হল। 

যুরহুম গোত্রের ঐ বণিকেরা শীঘ্রই আশেপাশেই বসতিস্থাপন করল। এই বণিকদের দ্বারা এবং পরবর্তিতে আগত আরও কিছু ক্ষুদ্র যাযাবর গোষ্ঠি দ্বারা অতি দ্রুতই সেখানে এক ক্ষুদ্র জনপদ গড়ে উঠল। 

মহান খোদার কাজসমূহ কতই না মহৎ! তাই তো যবুরে আছে-

‘তিনি প্রান্তরকে জলাশয়ে,
মরুভূমিতে জলের ঝর্ণা তৈরী করেন,
আর সেখানে তিনি ক্ষুৎ পিপাসিতকে বাস করান,
যেন তারা বসতি নগর তৈরী করে, এবং 
ক্ষেতে বীজ বপন ও দ্রাক্ষালতা রোপন করে, এবং 
উৎপন্ন ফল সঞ্চয় করে।
তিনি তাদেরকে আশীর্বাদ করেন,
তাই তারা অতিশয় বৃদ্ধি পায়, এবং 
তিনি তাদের পশুগণকে হ্রাস পেতে দেন না। (১০৭:৩৫-৩৮)

ইসমাইল জুরহুম গোত্র প্রধান মেগাহাস বিন আমরের কন্যা সাঈদাকে বিবাহ করেন। Zamzam - the renown well, was formed from the source which God made appear in favor of Ismail and Hagar, his mother, whom Abraham drove from his house, and obliged to retire to Arabia. When afterwards the patriarch came to visit his son Ismail, and built the square temple, called Kabah, he bestowed upon him the possession of it and the surrounding area since called Mecca. This place became an object of contest between Ismail's posterity and the Arabian tribe of Jorhamides. The latter, after having possessed themselves of it, were attacked by the former, but before yielding it, they threw the sacred black stone, with the two gazelles of massive gold which an Arabian king had presented to the temple, into the well, and then completely filled it up. So it remained until the time of an ancestor of Muhammad, called Abdul Muttalib,- he was admonished by an heavenly voice to clear the well, the situation of which was at the same time indicated to him. This was near the idols Assat and Neilah, which were first to be removed, in spite of their adorers, the Koraishites. The latter, having ceded the well, claimed to share the treasure which Abdal mothleb had found in it. The new contest was. to be decided by Ebn Said, a famous prophet, who lived on the confines of Syria. Upon the way to him, through a desert, when both parties were dying of thirst, a fountainw hichs prungu p beneathth e foot of Abdal mothleb's camel brought about a reconciliation between them; the well

was cleared; the treasure found was consecratedto the temple, which in after times gained so much celebrity.-(Herbelot after Khondemir.}

সমাপ্ত।


ছবি: bibleartists.wordpress,mariannedorman.homesteadkahimyang.info, kids.christiansunite, maccacentre.wordpress, peacedeen.wordpress.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Moses: কোরাণিক ক্যানভাসে নবী মূসা।

Abu Hena Mostafa Kamal  01 May, 2017 মি সরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ফেরাউন। হঠাৎ করে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। কিন্তু তিনি কোন উত্তরাধিকারী ন...