মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা পাওয়া নূহের (Noah) বংশধররা ও অন্যান্য একেশ্বরবাদীরা ব্যাকটেরিয়ার (বলখের) সমতল মালভূমিতেই প্রথম বসবাস শুরু করেছিল। সময়ের সাথে সাথে তাদের বংশবৃদ্ধি হতে থাকল এবং ক্রমশঃ পরিবার ও গোত্রে বিভক্ত হল। অতঃপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বসতি স্থাপনের লক্ষ্যে তারা দলে দলে বিভক্ত হয়ে বেরিয়ে পড়ল।
ব্যাকটেরিয়া (বলখ)। |
অস্টোরৎ দেবতা। |
অর্থাৎ এসময় উচ্চ জড় সভ্যতা স্থুল ইন্দ্রিয়পরায়ণতার সঙ্গে সস্পৃক্ত ছিল এবং নিষ্ঠুরতা ধর্মে অনুমোদিত ছিল। আর কালক্রমে তারা হেমিটিকদের সঙ্গে মিশে গিয়ে আক্কাডিয়ান বা কুশাই জাতির সৃষ্টি করেছিল। এই কুশাই জাতিই বাবিলের প্রতিষ্ঠাতা। এরা অত:পর এমন একটি ধর্মের জন্ম দিয়েছিল, যা উচ্চতর পর্যায়ে সর্বখোদাবাদের সমগোত্রীয়।
মলচ দেবতা। |
বেলটিস দেবতা। |
অত:পর যে প্রাণশক্তি বর্বর জাতিসমূহের মধ্যে সক্রিয় তার দ্বারা তারা অনুপ্রাণিত হয়ে অথবা লোক সংখ্যার চাপে এবং তাদের প্রাচীন আবাস ভূমিতে পশুচারণ ক্ষেত্রের অভাবের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে- একের পর এক পশ্চিম দিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগল। প্রাথমিক দলসমূহের মধ্যে ছিল পেলাজিসীয় ও কেল্ট। তাদের অনুসরণ করেছিল অন্যান্য গোত্রের লোকেরা।
ধর্মগুরু স্পিতাম জরথুস্ত্র। |
ধর্মগুরু স্পিতাম জরথুস্ত্র। |
ধর্মগুরু স্পিতাম জরথুস্ত্র পূর্বপুরুষদের অর্জিত আদর্শের সঙ্গে নৈর্ব্যক্তিক ও প্রাকৃতিক শক্তিসমূহের আরোপিত বৈশিষ্ট্য, আলোক ও অন্ধকার নীতি দু’টি অন্তর্ভূক্ত করলেন। ফলে, ঐশী সত্ত্বার প্রতীক হল জীবন ও আলোকের উজ্জল অগ্রদূত সূর্য্য; যার শক্তি ব্যহত হলেও একসময় অনিষ্ট ও অন্ধকারের নীতিকে জয় করে। তার এসব আদর্শ পূর্বের পূজিত প্রাকৃতিক বস্তুর সঙ্গে পরস্পর মিশে যাচ্ছিল, কখনও সুস্পষ্ট ব্যক্তিসত্ত্বা হিসেবে, আবার কখনও সকল বস্তুতে বর্তমান প্রাণ সত্ত্বার সমগ্র হিসেবে।
নূহের বংশধরদের ছড়িয়ে পড়া। |
স্পিতাম জরথুস্ত্র প্রবর্তিত পার্শী ধর্মের মূল গ্রন্থ জিন্দাবেস্তা ও দশাতির। এই গ্রন্থগুলো মূলত: তার বিজনে ধ্যানের ফলে অর্জিত জ্ঞান (দ্বৈতবাদ) ও পিতৃপুরুষদের ধর্মমত সমূহের সমষ্টি এবং সুপ্রাচীন কিছু ভাববাণী। এই কারণে এইসব গ্রন্থসমূহেও শেষনবী মুহম্মদের আগমনবার্তা সম্বন্ধে কিছু ভবিষ্যৎবাণী সংযুক্ত হয়েছে। যেমন-
জিন্দাবেস্তা: ‘আমি ঘোষণা করছি, হে স্পিতাম জরথুস্ত্র, পবিত্র আহমদ (ন্যায়বানদিগের আশীর্বাদ) নিশ্চয়ই আসবে, যার কাছ থেকে তোমরা সৎচিন্তা, সৎবাক্য, সৎকার্য এবং বিশুদ্ধ ধর্ম লাভ করবে।’
আ'দদের বাসস্থান। |
যাইহোক, আবার প্রসঙ্গে ফিরি- বিতাড়িত প্রাচ্য বৈদিকধর্মী আর্যগণ ভারতে বলপূর্বক প্রবেশ করল এবং সেখানকার আদি কৃষ্ণবর্ণ জাতিসমূহকে হত্যা, বিতাড়িত এবং দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করল এবং সেখানে তারা কয়েক শতাব্দী ধরে পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে ছড়িয়ে পড়ল।
নূহের বংশধরদের ছড়িয়ে পড়া। |
এদিকে পশ্চিমের আর্যগণ একটি জাতিতে সংহত হয়ে ও নতুন আধ্যাত্মিক বিকাশ সহকারে অনতি বিলম্বে তাদের জন্মভূমির সীমা অতিক্রম করে আধুনিক পারস্য ও আফগানিস্তানের ভূ-খন্ডে ছড়িয়ে পড়ল।
তারা সেখানকার হেমিটিক ও কুশাইট (হামের পুত্র কূশের বংশধর) বংশসমূহের অধিকাংশকে পর্যুদস্ত করল এবং ক্রমশঃ কাস্পিয়ান সাগরের উপকূলে উপনীত হল, সেখানে তারা একগুয়ে ও কষ্ট সহিষ্ণু তুরাণীয়দের, মিডিয়ায় ও সুসিয়ানায় সু-প্রতিষ্ঠিত দেখতে পেল। তারা তুরাণীয়দের পরাভূত ও নিয়ন্ত্রণাধীনে আনতে পারলেও একসময় তাদের নিজেদের অধিকাংশই কুশাইট কিংবা অ্যাসিরীয় বংশের একজন অভিযানকারীর ইস্পাত কঠিন শাসনের অধীন হয়ে পড়ল এবং কিছু বিতাড়িত হয়ে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ল।
তারা সেখানকার হেমিটিক ও কুশাইট (হামের পুত্র কূশের বংশধর) বংশসমূহের অধিকাংশকে পর্যুদস্ত করল এবং ক্রমশঃ কাস্পিয়ান সাগরের উপকূলে উপনীত হল, সেখানে তারা একগুয়ে ও কষ্ট সহিষ্ণু তুরাণীয়দের, মিডিয়ায় ও সুসিয়ানায় সু-প্রতিষ্ঠিত দেখতে পেল। তারা তুরাণীয়দের পরাভূত ও নিয়ন্ত্রণাধীনে আনতে পারলেও একসময় তাদের নিজেদের অধিকাংশই কুশাইট কিংবা অ্যাসিরীয় বংশের একজন অভিযানকারীর ইস্পাত কঠিন শাসনের অধীন হয়ে পড়ল এবং কিছু বিতাড়িত হয়ে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ল।
সেমিটিক উপনিবেশিকরা যখন মেসোপটেমিয়ার উপরিভাগে বসবাস শুরু করেছিল, তখন হেমিটিকদের কিছু ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে পশ্চিম দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। এই ছোট ছোট দলের একটি একসময় আরব উপদ্বীপে পৌঁছে গেল এবং ঔপনিবেশিক হিসেবে তারা মধ্য আরবে প্রধানভাবে বসতিস্থাপন করল। এরাই আ‘দ সম্প্রদায় বা জাতি।
একসময় এই আ‘দ জাতি সমৃদ্ধির শিখরে আরোহণ করল।
সমাপ্ত।
ছবি: Wikipedia, forums.totalwar, jesus-is-savior, woek, mahmag, toolong, israel-a-history-of.
ছবি: Wikipedia, forums.totalwar, jesus-is-savior, woek, mahmag, toolong, israel-a-history-of.
উৎস: The Spirit of Islam -Syed Ameer Ali.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন