মদিনার ইহুদিরা (Jews) ছিল বিত্তশালী ও স্বাচ্ছন্দ্যশীল। তাদের কাছে যখন ইসলামের দাওয়াত পৌঁছিল, তখন তাদের অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নিল। ফলে আল্লাহ শাস্তি হিসেবে তাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য হ্রাস করে দেন। এতে তারা দরিদ্র হয়ে পড়ে। তখন মূর্খদের মুখ থেকে এ জাতীয় কথাবার্তা বের হল যে, আল্লাহর ধন-ভান্ডার ফুরিয়ে গেছে অথবা আল্লাহ কৃপণ হয়ে গেছেন।
এর উত্তরে এই আয়াত নাযিল হল- আর ইহুদিরা বলে, আল্লাহর হাত বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের হাত বন্ধ হোক। এ কথা বলার জন্যে তাদের প্রতি অভিসম্পাৎ। বরং তাঁর উভয় হাত উন্মুক্ত। তিনি যেরূপ ইচ্ছে ব্যয় করেন। তোমার প্রতি পালনকর্তার পক্ষ থেকে যে বাণী অবতীর্ণ হয়েছে, তার কারণে তাদের অনেকের কুফর ও অবাধ্যতা পরিবর্ধিত হবে।(৫:৬৪)
ইহুদিরা বিরোধিতা করতে মুসলমানদেরকে বলল, ‘আমরা তোমাদের চাইতে শ্রেষ্ঠ ও সম্ভ্রান্ত। কারণ আমাদের নবী ও আমাদের গ্রন্থ, তোমাদের নবী ও তোমাদের গ্রন্থের পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে।’
মুসলমানরা বলল, ‘আমরাই তোমাদের চাইতে শ্রেষ্ঠ। কেননা, আমাদের নবী সর্বশেষ নবী এবং আমাদের গ্রন্থ সর্বশেষ গ্রন্থ। এ গ্রন্থ পূর্ববর্তী সকল গ্রন্থকে রহিত করে দিয়েছে।’
এই কথোপকথনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াত নাযিল হল- তোমাদের আশার উপরও ভিত্তি নয় এবং আহলে কিতাবীদের আশার উপরও না। যে কেউ মন্দ কাজ করবে, সে তার শাস্তি পাবে এবং সে আল্লাহ ছাড়া নিজের কোন সমর্থক বা সাহায্যকারী পাবে না।(৪:১২৩)
মুহম্মদ জনসমক্ষে ঘোষণা করলেন, ‘আমরা যাবতীয় মূলনীতিতে ও এবং অধিকাংশ শাখাগত বিধিবিধানে ইব্রাহিমী ধর্মের অনুসারী।’
একথা শুনে ইহুদিরা আপত্তি উত্থাপন করে বলল, ‘আপনারা উটের মাংস খান, তার দুধ পান করেন। অথচ এগুলো ইব্রাহিমের প্রতি হারাম ছিল।’
মুহম্মদ বললেন, ‘এগুলো তার প্রতি হারাম ছিল না।’
তারা বলল, ‘আমরা সেইসব বস্তুই হারাম মনে করি যা নূহ ও ইব্রাহিমের আমল থেকেই হারাম হিসেবে আমাদের কাছে পৌঁছেছে।’
এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াত নাযিল হল-তাওরাত নাযিল হওয়ার পূর্বে ইয়াকুব যেগুলো নিজেদের জন্যে হারাম করে নিয়েছিল, সেগুলো ব্যতিত সমস্ত আহার্য বস্তুই বনি ইস্রায়েলীদের জন্যে হালাল ছিল। তুমি বলে দাও, ‘তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে তাওরাত নিয়ে এস এবং তা পাঠ কর।’(৩:৯৩)
বল, ‘আল্লাহ সত্য বলেছেন, এখন সবাই ইব্রাহিমের ধর্মের অনুগত হয়ে যাও, যিনি ছিলেন একনিষ্ঠভাবে সত্য ধর্মের অনুসারী। তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না।’(৩:৯৫)
কয়েকজন ইহুদি ঈমাম ‘তোমাদেরকে অতি সামান্য পরিমান জ্ঞানই প্রদান করা হয়েছে।’ কোরআনের এই আয়াত প্রসঙ্গে আপত্তির সূরে বলল, ‘এই আয়াত দ্বারা কি শুধু আপনাদের অবস্থাই বর্ণনা করা হয়েছে, না এতে আমাদেরকেও অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে?’
মুহম্মদ বললেন, ‘সকলকেই।’
এতে তারা আপত্তির সূরে বলল, ‘আমাদেরকে তো আল্লাহ কর্তৃক তাওরাত প্রদান করা হয়েছে যা সকল বস্তুর (রহস্য) বর্ণনাকারী।’
তিনি বললেন, ‘এও আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় অতি নগণ্য। আর তাওরাতে যেসব জ্ঞান রয়েছে সে সম্পর্কেও তোমরা পুরোপুরি অবহিত নও। আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় যাবতীয় আসমানী গ্রন্থ এবং সমস্ত নবীগণের সমষ্টিগত জ্ঞানও অতিশয় কিঞ্চিৎকর ও নগণ্য।’
এই বক্তব্যের সমর্থনেই এই আয়াত নাযিল হল-পৃথিবীতে যত বৃক্ষ আছে, সবই যদি কলম হয় এবং সমুদ্রের সাথেও সাত সমুদ্র যুক্ত হয়ে কালি হয়, তবুও তাঁর বাক্যাবলি লিখে শেষ করা যাবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।(৩১:২৭)
ইহুদি এক ঈমাম বললেন, ‘আল্লাহ কোন মানুষের প্রতি কোন কিছু অবতীর্ণ করেননি।’
মুহম্মদ এ শুনে বললেন, ‘ঐ গ্রন্থ কে নাযিল করেছেন, যা মূসা নিয়ে এসেছিল?’
ইহুদি ঐ ঈমাম চুপ করে রইলেন। মুহম্মদ বললেন, ‘আল্লাহ নাযিল করেছেন।’
ইহুদি ঈমামের উপরোক্ত উক্তি ছিল ক্রোধ ও বিরক্তির বহিঃপ্রকাশ, যা স্বয়ং তাদের পালিত ধর্মেরও পরিপন্থি ছিল। পরবর্তিতে ইহুদিরা ক্ষেপে গিয়ে তাকে অবশ্য ধর্মীয় পদ থেকে অপসারিত করেছিল।
এ সংক্রান্ত আয়াত-তারা আল্লাহকে যথার্থ মূল্যায়ণ করতে পারেনি, যখন তারা বলল, আল্লাহ কোন মানুষের প্রতি কোন কিছু অবতীর্ণ করেননি।’
তুমি জিজ্ঞেস কর, ঐ গ্রন্থ কে নাযিল করেছে, যা মূসা নিয়ে এসেছিল? যা জ্যোতি বিশেষ এবং মানবমন্ডলীর জন্যে হেদায়েত স্বরূপ, যা তোমরা বিক্ষিপ্ত পত্রে রেখে লোকদের জন্যে প্রকাশ করছ এবং বহুলাংশকে গোপন করছ। তোমাদেরকে এমন অনেক বিষয় শিক্ষা দেয়া হয়েছে, যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা জানত না।’
তুমি বলে দাওঃ আল্লাহ নাযিল করেছেন।’
অতঃপর তাদেরকে তাদের ক্রীড়ামূলকবৃত্তিতে ব্যাপৃত থাকতে দাও।(৬:৯১)
পূর্ববর্তী নবীদের আমলে সদকার বস্তু কোন মাঠে বা পাহাড়ের উপর রেখে দেয়া হত। আর তা কবুল হলে আগুন এসে তা পুড়িয়ে ফেলত। কিন্তু মুহম্মদের নব্যুয়তে এসে এটা গরীব দুঃখীদের মধ্যে বিলিয়ে দেবার নির্দেশ হয়। এ কারণেই ইহুদিদের কিছু ব্যক্তি মুহম্মদকে অস্বীকার করে বলল, ‘আপনি যদি নবীই হতেন, তবে এমন মু‘জেযাপ্রাপ্ত হতেন, যাতে আকাশ থেকে আগুন এসে সদকার বস্তু গ্রাস করে ফেলত।’
অধিকন্তু তারা ধৃষ্টতা প্রদর্শণ করে আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করে আরও বলল, ‘আল্লাহ আমাদের কাছ থেকে এমন প্রতিজ্ঞা নিয়েছেন যে, আমরা যেন এমন লোকের প্রতি ঈমান না আনি, যার সদকা এভাবে কবুল না হবে।’
এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াতসমূহ নাযিল হয়- সে সমস্ত লোক যারা বলে যে, আল্লাহ আমদিগকে এমন কোন রসূলের উপর বিশ্বাস না করতে বলে রেখেছেন, যতক্ষণ না তারা আমাদের কাছে এমন কোরবানী নিয়ে আসবেন, যাকে আগুন গ্রাস করে নেবে।’
তুমি তাদের বলে দাও, ‘তোমাদের মাঝে আমার পূর্বে বহু রসূল নিদর্শনসমূহ এবং তোমরা যা আব্দার করেছ তা নিয়ে এসেছিল, তখন তোমরা কেন তাদের হত্যা করলে যদি তোমরা সত্য হয়ে থাক।’(৩:১৮৩)
আল্লাহ তাদের কাছ থেকে প্রতিজ্ঞা নিয়েছেন-ইহুদিদের এই দাবী যেহেতু আদৌ প্রমান ভিত্তিক ছিল না, কাজেই কোরআন তার কোন উত্তর না দিয়ে তাদের নিজেদের বক্তব্যের দ্বারাই তাদেরকে ধরাশায়ী করেছে এভাবে- তোমরা যদি তোমাদের দাবীতে সত্যবাদী হয়ে থাক, তবে যে সব নবী-রসূল তোমাদের কথামত এ মু‘জেযাও দেখিয়েছিল, তখন তোমরা তাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করনি কেন? কেন তাদেরকে হত্যা করেছ?
আল্লাহ জানতেন যে, ইহুদিরা শুধুমাত্র বিদ্বেষ ও হঠকারীতাবশতঃই এসব কথা বলছে, মু‘জেযা প্রকাশিত হলেও এরা ঈমান গ্রহণ করত না। তাই মুহম্মদকে সান্তনা দেয়া হয়েছে এভাবে- তাছাড়া এরা যদি তোমাকে মিথ্যে প্রতিপন্ন করে, তবে তোমার পূর্বেও এরা এমন বহু নবীকে মিথ্যে প্রতিপন্ন করেছে যারা নিদর্শণসমূহ নিয়ে এসেছিল এবং এনেছিল সহীফা ও প্রদীপ্ত গ্রন্থ।(৩:১৮৪)
ইহুদিরা বলল, ‘আমরা আল্লাহর সন্তান ও তাঁর প্রিয়জন।’
এ কথা শুনে মুহম্মদ বললেন, ‘তবে তিনি তোমাদেরকে পাপের বিনিময়ে কেন শাস্তি দেবেন? বরং তোমরাও অন্যান্য সৃষ্ট মানবের অন্তর্ভূক্ত সাধারণ মানুষ।’
এ সংক্রান্ত কোরআনের আয়াত- ইহুদি ও খ্রীষ্টানরা বলে, আমরা আল্লাহর সন্তান ও তাঁর প্রিয়জন। তুমি বল, তবে তিনি তোমাদেরকে পাপের বিনিময়ে কেন শাস্তি দান করবেন? বরং তোমরাও অন্যান্য সৃষ্ট মানবের অন্তর্ভূক্ত সাধারণ মানুষ। তিনি যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছে শাস্তি প্রদান করেন।(৫:১৮)
আর ইহুদিদের অধিকাংশ বলল, ‘আমরা শুধু তাওরাতের প্রতিই ঈমান আনব, অন্যান্য গ্রন্থের প্রতি নয়।’
তাদের বক্তব্যের সারমর্ম হল- মূসার প্রচারিত ধর্ম রহিত হয়ে যায়নি। কাজেই মুহম্মদের নব্যুয়ত অস্বীকার করলেও তারা অবিশ্বাসী নয়। সুতরাং যদি কোন পাপের কারণে তারা দোযখে চলেও যায়, তবে অল্পদিনের মধ্যেই তারা মুক্তি পাবে।
কিন্তু তারা ঈসা ও মুহম্মদের নব্যুয়ত অস্বীকার করার কারণে অবিশ্বাসী। আর অবিশ্বাসী কিছুদিন পরেই দোযখ থেকে মুক্তি পাবে এমন কথা কোন আসমানী কিতাবে নেই।
ইহুদিদের এই উক্তি এবং তাদের এই যুক্তিহীন দাবীর জবাবে কোরআন বলছে- যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা পাঠিয়েছেন তা মেনে নাও, তখন তারা বলে, ‘আমরা মানি যা আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। সেটি ছাড়া সবগুলোকে তারা অস্বীকার করে। অথচ এ গ্রন্থটি সত্য এবং সত্যায়ন করে ঐ গ্রন্থের যা তাদের কাছে রয়েছে।
বলে দাও তবে তোমরা ইতিপূর্বে পয়গম্বরদের হত্যা করতে কেন যদি তোমরা বিশ্বাসী ছিলে? সুস্পষ্ট মু‘জেযাসহ মূসা তোমাদের কাছে এসেছে। এরপর তার অনুপস্থিতে তোমরা গো-বৎস বানিয়েছ। বাস্তবিকই তোমরা অত্যাচারী।(২:৯১-৯২)
তারা বলে, ‘আগুন আমাদিগকে কখনও স্পর্শ করবে না; কিন্তু গনাগনতি কয়েকদিন।’
বলে দাও, ‘তোমরা কি আল্লাহর কাছ থেকে কোন অঙ্গীকার পেয়েছ যে, আল্লাহ কখনও তার খেলাফ করবেন না- না তোমরা যা জান না তা আল্লাহর সাথে জুড়ে দিচ্ছ। হ্যাঁ, যে ব্যক্তি পাপ অর্জণ করেছে এবং সে পাপ তাকে পরিবেষ্ঠিত করে নিয়েছে, তারাই দোযখবাসী। তারা সেখানেই চিরকাল থাকবে। পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তারাই জান্নাতের অধিবাসী। তারা সেখানেই চিরকাল থাকবে।’(২:৮০-৮২)
১ম আয়াতে যা আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে-এই উক্তি থেকে প্রতিহিংসা বোঝা যায়। আয়াতের পরিস্কার অর্থ হচ্ছে যে, যেহেতু অন্যান্য গ্রন্থ আমাদের প্রতি নাযিল করা হয়নি, কাজেই আমরা সেগুলোর প্রতি ঈমান আনব না।
আল্লাহ তাদের এই উক্তি খন্ডনে বলেছেন- অন্যান্য গ্রন্থের সত্যতা ও বাস্তবতা যখন অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমানিত; তখন তা অহেতুক অস্বীকার করার কোন কারণ নেই।
-অন্যান্য গ্রন্থসমূহ হচ্ছে তাওরাত, ইঞ্জিল প্রভৃতি। কোরআন এদের প্রত্যেকটির সত্যায়ন করে। সুতরাং কোরআনকে অস্বীকার করলে এগুলিকেও অস্বীকার করা হয়।
-সকল আসমানী কিতাবে নবীদের হত্যা করা নিষিদ্ধ। তাদের সম্প্রদায় কয়েকজন নবীকে হত্যা করেছে অথচ তারা বিশেষভাবে তাওরাতের শিক্ষা প্রচার করত।- এভাবে তারা কি তাওরাতের সাথেই কুফর করেনি?
আব্দুল্লাহ বিন সরিয়া নামক জনৈক ইহুদি মুহম্মদকে জিজ্ঞেস করল, ‘কোন ফেরেস্তা আপনার কাছে ওহী নিয়ে আগমন করে?’
তিনি বললেন, ‘জিব্রাইল।’
ইহুদি তৎক্ষণাৎ বলল, ‘এই কারণেই আমরা আপনার উপর ঈমান আনতে পারছিনে। জিব্রাইল আমাদের শত্রু, সে মানুষের উপর আযাব নিয়ে হাজির হয়। সে আমাদের কয়েকটি সম্প্রদায় ধ্বংস করেছে। নেবু চাঁদ নেজ্জার যখন জেরুজালেম ধ্বংস করল, তখন সে কিছুই করেনি। সে কি বনি ইস্রায়েল বংশে ওহী নিয়ে আসতে পারত না?
ফেরেস্তা মিকাইল শান্তি, সমৃদ্ধি ও রিজিক নাযিল করে। তাই জিব্রাইলের পরিবর্তে মিকাইল ওহী নিয়ে এলে আমরা আপনার প্রতি ঈমান আনব।’
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াতসমূহ নাযিল হল- তুমি বলে দাও, যে কেউ জিব্রাইলের শত্রু হয়- যেহেতু সে আল্লাহর আদেশে এই কালাম তোমার অন্তরে নাযিল করেছে, যা সত্যায়নকারী তাদের সম্মুখস্ত কালামের এবং মুমিনদের জন্যে পথ প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা। যে ব্যক্তি আল্লাহ, তদীয় ফেরেস্তাকূল তাঁর রসূল এবং জিব্রাইল ও মিকাইলের শত্রু, নিঃসন্দেহে তারা আল্লাহর শত্রু।(২:৯৭-৯৮)
সুতরাং মুহম্মদ ঐ ইহুদি ব্যক্তিকে বললেন, ‘যদি জিব্রাইল এই কারণে কারও শত্রু হয়- যেহেতু সে আল্লাহর আদেশে এই কালাম আমার অন্তরে নাযিল করেছে, যা সত্যায়নকারী তাওরাতের এবং মুমিনদের জন্যে পথ প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা, তবে সেই ব্যক্তি যে আল্লাহ, তদীয় ফেরেস্তাকূল, তাঁর রসূল এবং জিব্রাইল ও মিকাইলের শত্রু, নিঃসন্দেহে সে আল্লাহরও শত্রু।’
আর যখন কেবলার পরিবর্তন হল, তখন ইহুদিরা নানারকম মন্তব্য করতে লাগল। কেউ কেউ বলতে লাগল, ‘এই দেখ, মুহম্মদ তার কেবলা পরিবর্তন করল। এতদিনে কি তাহলে ভুল কেবলায় ছিল?’
কেউ কেউ বলল, ‘কিসে মুসলমানদের ফিরিয়ে দিল তাদের ঐ কেবলা থেকে, যার উপর তারা ছিল?’
আবার অনেকে বলল, ‘তাহলে যারা জেরুজালেমের বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে কেবলা করে এবাদত করেছে এবং ইতিমধ্যে মারা গিয়েছে তাদের কি হবে?
তাদের এই সমস্ত কথাবার্তার জবাবে আল্লাহ জানালেন যে, পূর্ব পশ্চিম তো আল্লাহরই। তাছাড়া তিনি মুহম্মদ যে কেবলার উপর ছিলেন তাকে এইজন্যে কেবলা করেছিলেন যাতে এটা প্রতীয়মান হয় যে, কে রসূলের অনুগামী থাকে এবং কে পিঠটান দেয়। তিনি এমন নন যে কারও ঈমান নষ্ট করে দেবেন। তিনি তো মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, করুণাময়।
কোরআনের আয়াতটি এই -‘এখন নির্বোধেরা বলবে, কিসে মুসলমানদের ফিরিয়ে দিল তাদের ঐ কেবলা থেকে, যার উপর তারা ছিল? তুমি বল, ‘পূর্ব পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছে সরলপথে চালান।’
তুমি যে কেবলার উপর ছিলে, আমি তাকে এজন্যেই কেবলা করেছিলাম, যাতে একথা প্রতীয়মান হয় যে, কে রসূলের অনুগামী থাকে আর কে পিঠটান দেয়। নিশ্চয় এটা কঠোর বিষয়, কিন্তু তাদের জন্যে নয়, যাদেরকে আল্লাহ পথপ্রদর্শণ করেছেন। আল্লাহ এমন নন যে তোমাদের ঈমান নষ্ট করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, করুণাময়। (২:১৪২,১৪৪)
হুইয়া বিন আখতাব নামক এক ইহুদি সূরা বাকারার প্রারম্ভের খন্ড বর্ণমালা আলিফ, লাম, মীম -এই অক্ষরগুলোর পাঠ শুনে বলল, ‘আবজাদের হিসেব অনুযায়ী এই অক্ষরগুলোতে মুহম্মদী ধর্মের স্থায়িত্বকালের বর্ণনা দেয়া হয়েছে।’
সে মুহম্মদের কাছে আগমনপূর্বক বলল, ‘আপনার পূর্বে বহু নবী পাঠান হয়েছে, কিন্তু আপনাকে ব্যতিত আল্লাহ আর কাউকেও রাজ্যের আয়ূ ও উম্মতের দানাপানির সময় সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেননি।’ সে বলল, ‘আলিফ-এক, লাম-ত্রিশ, মিম-চল্লিশ -মোট একাত্তুর বৎসর এই ধর্মের স্থায়িত্বকাল। সুতরাং এমন সংকীর্ণ ধর্মে কোন জ্ঞানী সম্পৃক্ত হতে পারে না।’
এসময় এই আয়াত নাযিল হয়-তিনি (আল্লাহ) তোমার প্রতি এমন কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যে কিতাবের কিছু আয়াত সুস্পষ্ট অর্থবোধক, যেগুলো কিতাবের মূলনীতি আর অপর কিছু আয়াত সুষ্পষ্ট অর্থবোধক নয় (যার জ্ঞান আল্লাহই ভাল জানেন) এবং খন্ড বর্ণমালাগুলো সেই আয়াতসমূহের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে তন্মধ্যকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতিত কেউ জানে না।(৩:৭)
আর যখন কেবলার পরিবর্তন হল, তখন ইহুদিরা নানারকম মন্তব্য করতে লাগল। কেউ কেউ বলতে লাগল, ‘এই দেখ, মুহম্মদ তার কেবলা পরিবর্তন করল। এতদিনে কি তাহলে ভুল কেবলায় ছিল?’
কেউ কেউ বলল, ‘কিসে মুসলমানদের ফিরিয়ে দিল তাদের ঐ কেবলা থেকে, যার উপর তারা ছিল?’
আবার অনেকে বলল, ‘তাহলে যারা জেরুজালেমের বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে কেবলা করে এবাদত করেছে এবং ইতিমধ্যে মারা গিয়েছে তাদের কি হবে?
তাদের এই সমস্ত কথাবার্তার জবাবে আল্লাহ জানালেন যে, পূর্ব পশ্চিম তো আল্লাহরই। তাছাড়া তিনি মুহম্মদ যে কেবলার উপর ছিলেন তাকে এইজন্যে কেবলা করেছিলেন যাতে এটা প্রতীয়মান হয় যে, কে রসূলের অনুগামী থাকে এবং কে পিঠটান দেয়। তিনি এমন নন যে কারও ঈমান নষ্ট করে দেবেন। তিনি তো মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, করুণাময়।
কোরআনের আয়াতটি এই -‘এখন নির্বোধেরা বলবে, কিসে মুসলমানদের ফিরিয়ে দিল তাদের ঐ কেবলা থেকে, যার উপর তারা ছিল? তুমি বল, ‘পূর্ব পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছে সরলপথে চালান।’
তুমি যে কেবলার উপর ছিলে, আমি তাকে এজন্যেই কেবলা করেছিলাম, যাতে একথা প্রতীয়মান হয় যে, কে রসূলের অনুগামী থাকে আর কে পিঠটান দেয়। নিশ্চয় এটা কঠোর বিষয়, কিন্তু তাদের জন্যে নয়, যাদেরকে আল্লাহ পথপ্রদর্শণ করেছেন। আল্লাহ এমন নন যে তোমাদের ঈমান নষ্ট করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, করুণাময়। (২:১৪২,১৪৪)
হুইয়া বিন আখতাব নামক এক ইহুদি সূরা বাকারার প্রারম্ভের খন্ড বর্ণমালা আলিফ, লাম, মীম -এই অক্ষরগুলোর পাঠ শুনে বলল, ‘আবজাদের হিসেব অনুযায়ী এই অক্ষরগুলোতে মুহম্মদী ধর্মের স্থায়িত্বকালের বর্ণনা দেয়া হয়েছে।’
সে মুহম্মদের কাছে আগমনপূর্বক বলল, ‘আপনার পূর্বে বহু নবী পাঠান হয়েছে, কিন্তু আপনাকে ব্যতিত আল্লাহ আর কাউকেও রাজ্যের আয়ূ ও উম্মতের দানাপানির সময় সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেননি।’ সে বলল, ‘আলিফ-এক, লাম-ত্রিশ, মিম-চল্লিশ -মোট একাত্তুর বৎসর এই ধর্মের স্থায়িত্বকাল। সুতরাং এমন সংকীর্ণ ধর্মে কোন জ্ঞানী সম্পৃক্ত হতে পারে না।’
এসময় এই আয়াত নাযিল হয়-তিনি (আল্লাহ) তোমার প্রতি এমন কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যে কিতাবের কিছু আয়াত সুস্পষ্ট অর্থবোধক, যেগুলো কিতাবের মূলনীতি আর অপর কিছু আয়াত সুষ্পষ্ট অর্থবোধক নয় (যার জ্ঞান আল্লাহই ভাল জানেন) এবং খন্ড বর্ণমালাগুলো সেই আয়াতসমূহের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে তন্মধ্যকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতিত কেউ জানে না।(৩:৭)
সমাপ্ত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন