১ মার্চ, ২০১২

David: শনিবারে সীমালংঘনকারী সমুদ্র উপকূলের বসতি।

সীক্লগে দাউদ (David) বেশ কয়েক বৎসর ছিলেন। তালুতের হাত থেকে পালিয়ে বেড়ানোর এক পর্যায়ে দাউদ গাদের রাজা আখীশের কাছে আশ্রয় প্রার্থণা করলে সে থাকবার জন্যে জায়গাটা তাকে দিয়েছিল। এই সীক্লগের সমুদ্রকূলে ইস্রায়েলীদের এক জনবসতি ছিল। সেখানে সত্তুর হাজারের মত ইহুদি বাস করত। ইস্রায়েলীদের কাছে শনিবার ছিল বিশ্রামবার এবং পবিত্র দিন। এদিন তাদের কোন পার্থিব কাজ করা নিষিদ্ধ ছিল।  Halakha অনুসারে, Shabbat is observed from a few minutes before sunset on Friday evening until the appearance of three stars in the sky on Saturday night. 

Sabbath “দশ আজ্ঞা“র ৪র্থ নম্বর, যাতে বলা হয়েছে- “বিশ্রামবারকে পবিত্র বলে মান্য কোরও।” Violating the Sabbath was a serious offense, and the person who worked on the Sabbath was to be ‘cut off from among his people’ -(Exodus 31:14 ).
During their wandering in the wilderness the Israelites brought to trial a man found gathering wood on the Sabbath. He was stoned to death according to the commandment of the Lord for profaning the Sabbath -(Numbers 15:32-36)

যা হোক, যা বলছিলাম- খোদা দাউদের উপর জবুর কিতাব (ভাষা-ইউনানী) নাযিল করেছিলেন, যাতে ১৫০টি সূরা ছিল। যার প্রত্যেকটি দোয়া, হামদ বা খোদার গুণকীর্তনে পরিপূর্ণ ছিল (তবে এগুলিতে হালাল-হারাম বা ফরজ কর্তব্যাদির বর্ণনা নেই।)।

সীক্লগে থাকার সময় দাউদ তার উপাসনার জন্যে সমুদ্র উপকূলে একটা উপাসনালয় তৈরী করে নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি এই যবুর কিতাব পাঠ করতেন। তার কন্ঠ ছিল সুমধুর, পশু-পক্ষী, কীট-পতঙ্গ, গাছপালা ও পাহাড়সমূহ তার কিতাব পাঠ শুনে মোহিত হয়ে যেত। তারাও দাউদের সাথে সাথে খোদার পবিত্র মহীমাকীর্তণ করত।

খোদা স্বীয় সৃষ্টিসমূহের মধ্যে প্রত্যেক সৃষ্টির প্রয়োজন অনুপাতে তার জীবনের লক্ষ্য অনুযায়ী বুদ্ধি ও উপলব্ধি ক্ষমতা দান করেছেন। যেসব জিনিসকে আমরা বুদ্ধি বিবর্জিত ও অনুভূতিহীন বলে মনেকরি, প্রকৃতপক্ষে সেগুলোও জ্ঞান-বুদ্ধি ও চেতনা-অনুভূতি বিবর্জিত নয়। এসব বিষয় সেগুলোর মাঝে সেই অনুপাতেই দেয়া হয়েছে যেটুকু তাদের অস্তিত্বের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যে প্রয়োজন। সবচেয়ে কমবুদ্ধি ও চেতনা-উপলব্ধি রয়েছে মাটি, পাথর প্রভৃতি জড় পদার্থের মাঝে- যাদের না আছে প্রবৃদ্ধি, না স্থান থেকে কোথাও যাওয়া কিম্বা চলাচলের প্রয়োজন। এগুলোর চাইতে সামান্য বেশী রয়েছে উদ্ভিদের মধ্যে, যার অস্তিত্বের লক্ষ্যের মাঝে প্রবৃদ্ধি এবং ফলদান প্রভৃতি অন্তর্ভূক্ত। এরপর পশুপক্ষী, যাদের জীবনের উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রবর্তণ ও চলাফেরা করে খাবার আহরণ, ক্ষতিকর বিষয় থেকে আত্মরক্ষা ও বংশবৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয়- অর্থাৎ প্রত্যেক বস্তু (জড় বা জীব) নিজ নিজ অস্তিত্ব অনুযায়ী বুদ্ধি ও অনুভূতির অধিকারী। কোরআনে অসংখ্য উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি আমাদের গোচরীভূত করেছে- যেমন: হযরত মূসার নির্দেশে জমিন কারূণকে গ্রাস করেছিল, হযরত হেযকীলের নির্দেশে হাঁড়সমূহ মাংস ও চামড়া পরিধান করেছিল ইত্যাদি: আবার, এক পাহাড়ী ছাগল ইউনূচকে প্রতিদিন দুধ পান করিয়ে যেত যখন তিনি অসুস্থ্য ছিলেন, এক দাঁড় কাক ইলিয়াসের জন্যে খাবার বয়ে নিয়ে আসত, ইত্যাদি।

যবুর পাঠরত দাউদ।
দাউদের পাঠশুনে নিকটবর্তী জলাশয়ের মাছ ঝাকে ঝাকে পানির উপর ভেসে উঠত। কিন্তু বিশ্রামবার অর্থাৎ শনিবার ছাড়া এসব মাছ আসত না। মাছ দেখে একদল ইহুদির লোভ বেড়ে গেল।শরীয়তমতে শনিবার বিশ্রামবার বলে এদিন যাবতীয় জাগতিক কাজকর্ম নিষিদ্ধ ছিল। সুতরাং মাছ ধরাও নিষিদ্ধের অধীন হওয়ায় তারা বুদ্ধি করে এক ফন্দি বের করল। তারা শনিবারে মাছ জাল দিয়ে আটকে রেখে পরদিন শিকার করত। এতে একদল বিরোধিতা করে বলল, ‘তোমরা খোদার সাথে বুদ্ধি খাটাচ্ছ। শিকারের আয়োজন করা ও শিকার করা একই কথা, তোমরা এ কাজ থেকে বিরত থাক নইলে তোমাদের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।’

২য় দল বলল, ‘তারা যা করে করুক, তাতে আমাদের কি আসে যায়। তাদেরকে বাঁধা দিয়ে তাদের সাথে শত্রুতা বাড়াবার কি প্রয়োজন?’
অন্যেরা বলল, ‘খোদা যাদেরকে ধবংস করবেন বা কঠোর শাস্তি দেবেন, কেন তোমরা তাদেরকে অনর্থক উপদেশ দিচ্ছ?’
১ম দল, ২য় ও ৩য় দলকে বলল, ‘তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি কর্তব্য পালনের জন্যে, আর হয়তঃ তারা তাঁকে ভয় পেলেও পেতে পারে।’

এভাবে ইস্রায়েলীরা তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ল। এরপর লোকেরা যখন নিষিদ্ধ কাজে বাড়াবাড়ি করতে লাগল তখন খোদার কঠোর নির্দেশ এসে গেল- ‘তোমরা ঘৃণিত বানর হও।’ আর খোদা ঘোষণা করে দিলেন যে, তিনি কেয়ামত পর্যন্ত এমন লোকদেরকে তাদের চেয়ে শক্তিশালী করতে থাকবেনই যারা তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিতে থাকবে। আর নিশ্চয়ই তিনি শাস্তিদানে তৎপর। আর তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালুও বটে।’

যারা খোদার আদেশ মেনে নিজেদেরকে খারাপ কাজ থেকে দূরে রেখেছিল তারা ব্যতিত সকলে কূৎসিত বানরে রুপান্তরিত হয়ে যায় এবং তিন দিন জীবিত থাকার পর সকলে একই সাথে মৃত্যুবরণ করে। 

এ সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে- আমি পর্বত ও পক্ষীসমূহকে দাউদের অনুগত করে দিয়েছিলাম, তারা আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত। এ সমস্ত আমিই করেছিলাম।-(২১:৭৯)

And you had already known about those who transgressed among you concerning the sabbath, and We said to them, "Be apes, despised." And We made it a deterrent punishment for those who were present and those who succeeded [them] and a lesson for those who fear Allah.-(2:65-66) এমন্ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা রয়েছে সূরা বাকারায়, কিন্তু সূরা আল আরাফে এ ঘটনার পুরো বর্ণনা দেয়া হয়েছে-

সমুদ্র তীরবর্তী অধিবাসী তারা শনিবারে সীমালংঘন করত। শনিবার পালনের দিন তাদের কাছে পানির উপর মাছ ভেসে আসত, কিন্তু যেদিন তারা শনিবার পালন করত না সেদিন ওরা তাদের কাছে আসত না। যারা সত্য ত্যাগ করেছিল তাদেরকে আমি এভাবে পরীক্ষা করেছিলাম। আর যখন তাদের একদল বলেছিল, ‘খোদা যাদেরকে ধবংস করবেন বা কঠোর শাস্তি দেবেন, কেন তোমরা তাদেরকে অনর্থক উপদেশ দিচ্ছ?’ 

তারা বলেছিল, ‘তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি কর্তব্য পালনের জন্যে, আর হয়তঃ তারা তাঁকে ভয় পেলেও পেতে পারে।’ 

তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা যখন তা ভুলে গেল, তখন যারা খারাপ কাজ থেকে নিজেদেরকে দূরে রেখেছিল তাদেরকে আমি উদ্ধার করেছিলাম। আর যারা সীমালংঘন করে সত্য ত্যাগ করেছিল তাদেরকে আমি কঠোর শাস্তি দিয়েছিলাম। তারা যখন নিষিদ্ধ কাজে বাড়াবাড়ি করতে লাগল তখন আমি তাদেরকে বললাম, ‘ঘৃণিত বানর হও।’ 

আর প্রতিপালক ঘোষণা করে দিলেন যে, তিনি কেয়ামত পর্যন্ত এমন লোককে তাদের চেয়ে শক্তিশালী করতে থাকবেনই যারা তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিতে থাকবে। আর নিশ্চয়ই প্রতিপালক শাস্তিদানে তৎপর। আর তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালুও।’-(৭:১৬৩-১৬৭)

সমাপ্ত।
ছবি: platytera.blogspot, brighmorningstar.blog.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Moses: কোরাণিক ক্যানভাসে নবী মূসা।

Abu Hena Mostafa Kamal  01 May, 2017 মি সরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ফেরাউন। হঠাৎ করে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। কিন্তু তিনি কোন উত্তরাধিকারী ন...