আ’দ জাতির ধ্বংসের পর কালক্রমে তাদের স্থলাভিষিক্ত হয় সামুদ জাতি। বনি আ’দদের মত বনি সামুদগণও কুশাইট বা হেমিটিক বংশের অন্তর্ভূক্ত। হেমিটিক বংশোদ্ভূত হামের দুটি শাখা- আ‘দ ও সামুদ। এ কারণে সামুদকে ২য় আ‘দও বলা হয়ে থাকে।
সামুদদের আবাস-১। |
সামুদ জাতির কাছে আল্লাহ হযরত সালেহকে প্রেরণ করেছিলেন।কিন্তু অন্যান্য রসূলের ন্যায় তার আবেদনও তার জাতি প্রত্যাখ্যান করেছিল।
সালেহ সামুদ সম্প্রদায়ের নিকট এই আবেদন নিয়ে গেলেন- ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর। তিনি ছাড়া তোমাদের জন্যে অন্য কোন উপাস্য নেই। তিনিই তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছেন ও পৃথিবীতে বসবাস করতে দিয়েছেন। সুতরাং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তাঁরই দিকে ফিরে এস। ডাকলে তিনি সাড়া দেন।’
তারা বলল, ‘হে সালেহ! আমাদের পূর্বপুরুষগণ যাদের উপাসনা করত, তুমি কি আমাদেরকে নিষেধ করছ তাদের উপাসনা করতে? তুমি যার দিকে আমাদেরকে ডাকছ তাঁর সম্বন্ধে আমাদের সংশয় রয়েছে।’
সালেহ বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি যদি আমার প্রতিপালকের কাছ থেকে প্রমাণ পেয়ে থাকি? তোমরা কেন মঙ্গলের পরিবর্তে অমঙ্গল ডেকে আনছ?’
সালেহ বললেন, ‘তোমাদের শুভাশুভ আল্লাহর এখতিয়ারে। তোমরা তো এমন সম্প্রদায় যাদেরকে পরীক্ষা করা হচ্ছে।’
তারা বলল, ‘আমরা কি আমাদেরই মত একজনের আনুগত্য স্বীকার করব? তবে তো আমরা বিভ্রান্ত ও উম্মাদ হিসেবে গণ্য হব। আমাদের মধ্যে কি ওরই উপর প্রত্যাদেশ হয়েছে?’
সালেহ বললেন, ‘আ’দ জাতির পর তিনি তাদের জায়গায় তোমাদেরকে বসিয়েছেন। তাই আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর ও পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটিও না।’
তার সম্প্রদায়ের অহংকারী প্রধানগণ হতমান বিশ্বাসীদেরকে বলল, ‘তোমরা কি জান যে, তাকে আল্লাহ পাঠিয়েছেন?’
এতদশ্রবণে তারা মনে মনে বলল- ‘তোমরা এখন এ আলোচনায় ব্যস্ত রয়েছ যে, তিনি রসূল কি-না! প্রকৃতপক্ষে এটা আলোচনার বিষয়ই নয়, বরং জাজ্বল্যমান সত্য ও নিশ্চিত। একই সাথে এটাও নিশ্চিত যে, তিনি যা বলেন তা আল্লাহ প্রেরিত বাণী। জিজ্ঞাস্য বিষয় কিছু থাকলে তা এই যে, কে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং কে করে না? সুতরাং তারা বলল, ‘তাঁর কাছে যে বাণী পাঠান হয়েছে আমরা তাতে বিশ্বাস করি।’
অহংকারীরা বলল, ‘তোমরা যা বিশ্বাস কর, আমরা তা বিশ্বাস করিনে।’
সামুদদের আবাস-৩। |
লোকেরা সমবেত হয়ে সালেহকে বলল, ‘তুমি যদি সত্যিই আল্লাহর রসূল হও তবে এই কাতেবা পাহাড়ের উপরের ঐ বড় পাথর খন্ড থেকে বাচ্চা সম্ভবা একটি উটনী বের করে আন। যা বের হওয়ার পরপরই বাচ্চা প্রসব করবে।’
সালেহ বললেন, ‘এরূপ মু‘জেযা প্রকাশ পেলে আর তারপরও তোমরা ঈমান না আনলে তোমাদের উপর চরম আযাব নাযিল হবে।’
তারা বলল, ‘হে সালেহ! এমন কিছু হলে আমরা অবশ্যই তোমার প্রতি ঈমান আনব।’
সালেহ ও তার উটনী। |
কিছুলোক এ দেখে সাথে সাথেই ঈমান আনল। কিন্তু সম্প্রদায়ের প্রধানদের কেউই ঈমান আনল না; তারা বলল, “এ তো স্পষ্ট যাদু।” আর তাদের এ কথায় অবশিষ্ট লোকেরাও ভয়ে ঈমান আনতে সাহস করল না। সালেহ দুঃখিত হলেন। অবিশ্বাসীদের বিশ্বাসী করতে তিনি আর কি-ইবা করতে পারেন। তাই ফিরে আসার সময় সকলকে সতর্ক করে বললেন, ‘এটি আল্লাহর উটনী। আর এর পানাহারে তোমাদের নিজেদের কোন কিছুই ব্যয় করতে হবে না। সুতরাং একে আল্লাহর জমিনে চলতে ফিরতে ও খেতে দাও; কোন কষ্ট দিও না, দিলে তোমরা আল্লাহর রোষানলে পড়বে।’
উটনী যেদিকেই চরতে যেত সেদিকের অন্যান্য পশু মাঠ ছেড়ে পালাত। সে ছিল দ্রুতগতির, ফলে সে সমগ্র এলাকা চরে ফিরত। তাছাড়া সে দিনে ২/৪ মাঠের ঘাস ও ২/৪ কূপের পানি খেয়ে শেষ করত। পানের পানির অভাব দেখা দিল ও পানির অভাবে মানুষের অন্যান্য পশুরা মরতে শুরু করল।
যা হোক, উটনীকে সামুদগণ আপদ মনে করল, কেননা তার কারণে তাদের পশুসম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল। সুতরাং তারা সমবেতভাবে সালেহর কাছে অভিযোগ পেশ করল। সালেহ আল্লাহর কাছে ফয়সালা চাইলেন। আল্লাহ জানান, ‘ওদেরকে জানিয়ে দাও যে, ওদের জন্যে পানি পান করার পালা ঠিক করা হয়েছে এবং প্রত্যেকে ওরা পালাক্রমে পানি পান করার জন্যে উপস্থিত হবে।’
তখন সালেহ লোকদের বললেন, ‘আল্লাহ বলেছেন পালাক্রমে একদিন মানুষের অন্যান্য পশুরা পানি পান করবে, পরদিন উটনী পানি পান করবে। আর ফেরেস্তাগণ এই বন্টন ব্যবস্থা দেখাশুনো করবে।’
পাথরে উটনীর পদচিহ্ন, ওমানের জাদুঘরে। |
যে সুবৃহৎ প্রতারণার মাধ্যমে শয়তান মানুষের বুদ্ধি-জ্ঞান ও চেতনাকে বিলুপ্ত করে দেয় তা হচ্ছে নারীর প্রলোভন। সুতরাং সম্প্রদায়ের দু‘জন পরমাসুন্দরী নারী এই বাজী রাখল যে-‘যে ব্যক্তি এই উষ্ট্রীকে হত্যা করতে পারবে কেবলমাত্র সেই আমাদের মধ্যে থেকে যাকে ইচ্ছে তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে।’
সম্প্রদায়ের দু‘ব্যক্তি (জনৈক কুদার ইবনে সালেক ও তার সঙ্গী) এই প্রলোভনে পড়ে ষড়যন্ত্র করল এবং সময়ের অপেক্ষায় রইল। অতঃপর একদিন উটনীকে পানি পানরত অবস্থায় সুযোগমত পেয়ে এক বৃহৎ প্রস্তর খন্ডের আড়ালে তারা লুকিয়ে থেকে অতর্কিত হামলায় উটনীর পায়ের গোছা কেটে দিল। অতঃপর যখন উটনী পড়ে গেল, তখন তারা সেটিকে হত্যা করল। বাচ্চাটি মায়ের মৃত্যুর এই দৃশ্য দেখে দৌঁড়ে গিয়ে পাহাড়ে উঠল এবং তিনটি আওয়াজ দিয়ে এক প্রস্তর খন্ডের আড়ালে লুকিয়ে গেল।
এই পাপাচারের সংবাদ পেয়ে সালেহ মর্মাহত হলেন। আল্লাহ তাকে তার সম্প্রদায়কে ধ্বংসের পরিকল্পণার কথা জানালেন। আর আল্লাহ তো কোন জনপদ ধ্বংস করেন না, তার কেন্দ্রস্থলে তাঁর আয়াত আবৃত্তি করার জন্যে রসূল প্রেরণ না করে। আর তিনি কোন জনপদকে কখনও ধ্বংস করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার অধিবাসীগণ সীমালংঘন করে।
তখন সালেহ তার সম্প্রদায়কে বললেন, ‘তোমরা তোমাদের গৃহে তিন দিন জীবন উপভোগ করে নাও। এ এমন একটি প্রতিশ্রুতি যা মিথ্যে হবার নয়।’
অবজ্ঞাভরে তারা বলল, ‘কিভাবে আমরা তা বুঝব? শাস্তির লক্ষণই বা কি?
সালেহ বললেন, ‘আগামীকাল তোমাদের মুখমন্ডল হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। পরদিন লাল বর্ণ আর শেষদিনে কাল বর্ণের হবে।’
সামুদ জাতির প্রতি সালেহর উদাত্ত আহবান কোরআন এভাবে তুলে ধরেছে- সামুদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল-‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর। তিনি ছাড়া তোমাদের জন্যে অন্য কোন উপাস্য নেই। তিনিই তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার মধ্যেই তিনি তোমাদেরকে বসবাস করিয়েছেন। সুতরাং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তাঁরই দিকে ফিরে এস। আমার প্রতিপালক তো কাছেই (আছেন), ডাকলে তিনি সাড়া দেন।’
তারা বলল, ‘হে সালেহ! এ পর্যন্ত তোমার উপর আমরা বড় আশা করেছিলাম। আমাদের পূর্বপুরুষগণ যাদের উপাসনা করত, তুমি কি আমাদেরকে নিষেধ করছ তাদের উপাসনা করতে? তুমি যার দিকে আমাদেরকে ডাকছ তাঁর সম্বন্ধে আমাদের সংশয় রয়েছে।’
সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমাকে বল, আমি যদি আমার প্রতিপালকের কাছ থেকে প্রমাণ পেয়ে থাকি? ও তিনি যদি নিজে আমাকে অনুগ্রহ করে থাকেন, তারপর আমি যদি তাঁর অবাধ্য হই; তবে আল্লাহর শাস্তি থেকে কে আমাকে রক্ষা করবে? তাই তোমরা তো কেবল আমার ক্ষতিই বাড়াচ্ছ।-(১১:৬১-৬৩)
সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কেন মঙ্গলের পরিবর্তে অমঙ্গল এগিয়ে আনছ? কেন তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছ না, যেন তোমরা অনুগ্রহ পেতে পার?’
ওরা বলল, ‘তোমাকে ও তোমার সঙ্গে যারা আছে তাদেরকে আমরা অমঙ্গলের কারণ মনে করি।’
সালেহ বলল, ‘তোমাদের শুভাশুভ আল্লাহর এখতিয়ারে। তোমরা তো এমন সম্প্রদায় যাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে।’
তারা বলেছিল, ‘আমরা কি আমাদেরই একজনের আনুগত্য স্বীকার করব? তবে তো আমরা বিভ্রান্ত ও উম্মাদ হিসেবে গণ্য হব। আমাদের মধ্যে কি ওরই ওপর প্রত্যাদেশ হয়েছে? না, সে তো এক মিথ্যেবাদী দেমাগী।’-(২৭:৪৬-৪৭)
সালেহ বলল, ‘স্মরণ কর, আ’দ জাতির পর তিনি তাদের জায়গায় তোমাদেরকে বসিয়েছেন। তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, তোমরা সমতল ভুমিতে দালান কোঠা ও পাহাড় কেটে বসতবাড়ী তৈরী কর। তাই আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর ও পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটিও না।’
তার সম্প্রদায়ের অহংকারী প্রধানগণ হতমান বিশ্বাসীদেরকে বলল, ‘তোমরা কি জান যে, সালেহকে আল্লাহ পাঠিয়েছেন?’
তারা বলল, ‘তাঁর কাছে যে বাণী পাঠান হয়েছে আমরা তাতে বিশ্বাস করি।’
অহংকারীরা বলল, ‘তোমরা যা বিশ্বাস কর, আমরা তা বিশ্বাস করিনে।’-(৭:৭৪-৭৬)
(আল্লাহ বলেন), ‘ভবিষ্যতে ওরা জানবে কে মিথ্যেবাদী দেমাগী। আমি ওদের পরীক্ষার জন্যে এক মাদি উট পাঠিয়েছি। সুতরাং (সালেহ) তুমি ওদের ব্যাবহার লক্ষ্য কর ও ধৈর্য্য ধর, আর ওদেরকে জানিয়ে দাও যে, ওদের জন্যে পানি পান করার পালা ঠিক করা হয়েছে এবং প্রত্যেকে ওরা পালাক্রমে পানি পান করার জন্যে উপস্থিত হবে।’-(২৭:২৮)
সালেহ বলেছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর এ মাদী উট তোমাদের জন্যে এক নিদর্শণ। একে আল্লাহর জমিতে চরে খেতে দাও। একে কোন কষ্ট দিয়োনা, দিলে তোমাদের ওপর শাস্তি নেমে আসবে।’
কিন্তু ওরা সেটাকে হত্যা করল।-(১১:৬৪-৬৫)
যখন তাদের সর্বাধিক হতভাগ্য ব্যক্তি তৎপর হয়ে উঠেছিল।-(৯১:১২) এবং উষ্ট্রীর পা কর্তণ করেছিল।-(৯১:১৪) সে (সালেহ) বলল, ‘তোমরা তোমাদের গৃহে তিন দিন জীবন উপভোগ করে নাও। এ একটি প্রতিশ্রুতি যা মিথ্যে হবার নয়।’-(১১:৬৫)
সামুদদের দেবী। |
তাই তারা নয় জনে মিলে পরামর্শ শেষে বলল, ‘চল, আমরা আল্লাহর নামে শপথ গ্রহণ করি যে, আমরা রাত্রিতে তাকে ও তার পরিবার পরিজনকে হত্যা করব। তারপর তার দাবিদারকে জোর দিয়ে বলব, তার পরিবার পরিজনকে হত্যা করতে আমরা কাউকে দেখিনি। আমরা তো সত্যিকথা বলছি।’
অত:পর সিদ্ধান্ত অনুসারে তারা রাতের অন্ধকারে সালেহকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গৃহ অভিমুখে রওনা হল।
ওদের ষড়যন্ত্রের বিষয় তো আল্লাহ জানতেন। তিনি সালেহকে তার অনুসারীসহ আগেই নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বললেন। তারা আদেশ মত সোর পর্বতের দিকে যাত্রা করলেন। চলে যাবার সময় সালেহ তার সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে আক্ষেপ করে মনে মনে বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি তো আমার প্রতিপালকের বাণী তোমাদের কাছে পৌঁছেছিলাম ও তোমাদেরকে উপদেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু যারা উপদেশ দেয় তাদেরকে তো তোমরা ভালবাস না।’
পরদিন সকালবেলা। লোকেরা আবিস্কার করল তাদের মুখমন্ডল হলুদ বর্ণের হয়ে পড়েছে। সালেহর কথা অনুযায়ী ১ম লক্ষণ সত্য হওয়ার পর তারা কিন্তু ঈমানের প্রতি মনোনিবেশ করল না, বরং তারা সালেহর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ল এবং সমগ্র জাতি তাকে হত্যার জন্যে খুঁজে ফিরতে লাগল।
২য় দিনে লোকদের মুখমন্ডল লাল এবং ৩য় দিনে কাল বর্ণের ধারণ করল। তখন সবাই নিরাশ হয়ে গেল এবং অপেক্ষা করতে লাগল ঐশী গজবের। এ সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা না থাকায় তারা বুঝতে পারছিল না কোনদিক থেকে কিভাবে এবং কি ধরণের আযাব তাদের উপর এসে পড়বে।
হাদ্রা মউত। |
সামুদ জাতি! ওরা কত নিশ্চিন্ত হয়ে পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করত। কিন্তু ওদেরকে রক্ষা করতে ঐ পাথুরে মজবুত বাসস্থান কোন কাজে এল না।
সামুদ জাতির ধ্বংস সম্পর্কে কোরআনে বলা হযেছে-আর সেই শহরে ছিল এমন নয় ব্যক্তি, যারা দেশে শুধু অশান্তি সৃষ্টি করত, কোন ভাল কাজ করত না, ওরা বলল, ‘চল, আমরা আল্লাহর নামে শপথ গ্রহণ করি যে, আমরা রাত্রিতে তাকে ও তার পরিবার পরিজনকে হত্যা করব। তারপর তার দাবিদারকে জোর দিয়ে বলব, তার পরিবার পরিজনকে হত্যা করতে আমরা (কাউকে) দেখিনি। আমরা তো সত্যিকথা বলছি।’
‘ওরা ষড়যন্ত্র করেছিল ও আমিও পরিকল্পনা করেছিলাম কিন্তু ওরা বুঝতে পারেনি।-(২৭:৪৮-৫০) তোমার প্রতিপালক তো কোন জনপদ ধ্বংস করেন না, তার কেন্দ্রস্থলে তাঁর আয়াত আবৃত্তি করার জন্যে রসূল প্রেরণ না করে। আর আমি কোন জনপদকে কখনও ধ্বংস করিনে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার অধিবাসীগণ সীমালংঘন করে।’-(২৮:৫৯)
সালেহর সমাধি কমপ্লেক্স। |
(আল্লাহ বলেন) দেখ সামুদ সম্প্রদায় তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করেছে। দেখ, সামুদ সম্প্রদায় (কেমনভাবে) ধ্বংস হল।-(১১:৪৮) ওরা নিশ্চিন্ত হয়ে পাহাড় কেটে ঘর বানাত। -(১৫:৮২) সুতরাং ওরা যা করেছিল তা ওদের কোন কাজে আসেনি।-(১৫:৮৪)
হযরত ইদ্রিসের তিরোধানের পর মানুষ শয়তানের প্ররোচনায় মূর্ত্তিপূজায় লিপ্ত হয় এবং পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ে। এরপর আল্লাহ এসব পথভ্রষ্টদেরকে সুপথে আনতে একাদিক্রমে রসূল প্রেরণ করেছেন, কিন্তু যখনই কোন সম্প্রদায়ের কাছে কোন রসূল আগমন করেছেন, তখনই তারা তাদেরকে অস্বীকার করেছে এবং মিথ্যেবাদী আখ্যায়িত করেছে। এই কারণে আল্লাহ তাদেরকে একের পর এক ধ্বংস করেছেন এবং তারা এইসব কাহিনীর বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে।
সালেহর সমাধি। |
সামুদগণের উপর ঐশী গজব নিপতিত হওয়ায় তারা বহুলাংশে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। অবশিষ্টরা ইলামাইটিক উপসাগরের উত্তরে সোর পর্বতের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। সালেহ সেখানেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এ কারণেই ঐ স্থানের নাম ‘হাদ্রা মউত’ অর্থাৎ মৃত্যু হাজির। সামুদগণ সেখানে ইসহাক ও ইয়াকুবের সময়ে বাস করত। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে মূর্ত্তিপূজার প্রচলন শুরু হলে তাদেরকে সত্য পথে ফিরিয়ে আনতে আল্লাহ একজন পয়গম্বর প্রেরণ করেছিলেন, কিন্তু তারা তাকে হত্যা করেছিল। পরিশেষে তারা সিরিয়া ও আরবে অভিযান চালনাকারী চেদরলাওমার (খুজার আল-আহমার) কর্তৃক অভিযানের সময় অধিকাংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। বাকীরাও শীঘ্রই তিরোহিত হয়েছিল, নিঃসন্দেহে প্রতিবেশী বংশসমূহের মধ্যে মিশে গিয়েছিল।
সমাপ্ত।
ছবি: Wikipedia, usna.edu, islamickorner.
উৎস:
- Quran,
- Bible,
- Sahih al-Bukhari, Hadiths: 2116 & 3379.
- Syed Ameer Ali, The Spirit of Islam,
- Hoyland, Robert G. (2001). Arabia and the Arabs: From the Bronze Age to the Coming of Islam . Routledge. p. 69.
- M. Th. Houtsma et al., eds., E.J. Brill's first encyclopaedia of Islam, 1913-1936
- Phillip Hitti, A History of the Arabs, London: Macmillan, 1970, p. 37.
- Muqaddimah Ch. 2.21;5.20
- Brian Doe, Southern Arabia, Thames and Hudson, 1971, pp. 21-22.
- Smithsonian National Museum of Natural History - Thamudic inscriptions exhibit.
- Bibliotheca Historica, Volume II, Book III, Page 219
- Retsö, Jan (2003). The Arabs in Antiquity: Their History from the Assyrians to the Umayyads.
- Ibn Kathir, Al-Bidaya wa'l-Nihaya ("The Beginning and the End"). p. 159 (Volume 1).
- Encyclopedia Britannica, Under the Category of: History of Arabia, the Section of: Dedān and Al-Ḥijr, Thamūd.
- Prof. Jawwad Ali, The Detailed History of Arabs before Islam, Volume: 15, Page: 301
- The Historical Record of Ibn Khaldon, Volume: 2, Page: 641
- Abu Al-Faraj Al-Asfahani, Kitab Al-Aghani, Volume: 4, Page: 74.