৮ মার্চ, ২০১২

Abraham: স্ব-স্ত্রীক বন্দী হয়ে রাজদরবারে।

ইব্রাহিম (Abraham) হারোণ থেকে যাত্রার প্রস্তুতি নিলেন। নাহোর তাকে হারোণে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু তিনি ভাইয়ের অনুরোধে নয়, আল্লাহর উপরই ভরষা করলেন এবং পরিবারসহ অনির্দিষ্ট গন্ত্যব্যের পথে যাত্রা শুরু করলেন। এই যাত্রায়ও ভাইপো লুত তার সঙ্গী হলেন।

ভাইপো লুতসহ ইব্রাহিমের হারোণ থেকে যাত্রা।
প্রথম পর্যায়ে ইব্রাহিম দক্ষিণ দিকে এগিয়ে গিয়ে কনানে প্রবেশ করে যাত্রা বিরতি করলেন মোরিয়ার সমতলভূমি শিখিমে। এস্থানে এবল ও গরীষীম পর্বত রয়েছে। তারপর আরও কয়েক মাইল দক্ষিণে গিয়ে বৈথেলে পৌঁছিলেন। এসময় কনানে দূর্ভিক্ষ দেখা দিলে এখান থেকে তারা দক্ষিণ কনান হয়ে মিসরের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে গেলেন। 

আফ্রিকার উত্তর পূর্ব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত অত্যন্ত বিরল ফলে এখানে হাজার হাজার মাইল জুড়ে রালি, কাঁকরময় মরুভুমি। আর এই মরুভূমির উপর দিয়ে দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে প্রবাহিত হচ্ছে নীলনদ। আফ্রিকার মধ্য অঞ্চলে অবস্থিত বহু হ্রদের পানি বয়ে চলে এই নীলনদ দিয়ে। নদী প্রবাহকে আবার বহুস্থানে ব্যহত করেছে জলপ্রপাত। এইসব বাঁধা অতিক্রম করে নীলনদ প্রায় ৭০০ কিমি পথ অতিক্রম করে প্রবাহিত হয়ে গিয়ে পড়েছে উপত্যকার বুকে। ঢালু নিম্নভূমির উপর দিয়ে গিয়ে অবশেষে এই নদ মিলিত হয়েছে ভূ-মধ্য সাগরে। এখানে নীলনদ থেকে বহু শাখানদী বেরিয়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে ব-দ্বীপ। জলপ্রপাতের অঞ্চল থেকে ভূ-মধ্য সাগর পর্যন্ত এলাকার উপত্যকা ও ব-দ্বীপ অঞ্চলেই অবস্থিত ছিল এই প্রাচীন মিসর।

ইব্রাহিম ও সারা।
এসময় মিসরে দোর্দন্ড প্রতাপে রাজত্ব করছিলেন ফেরাউন নমরুদ (Nimrod's kingdom also included the cities of Babel, Erech, Accad and Calneh, all in Shinar. -Genesis 10:10). He was not the first king of kings, but became labeled as king of kings by gathering all kings of 42 cities in Egypt to be an assembly house called Pharaoh in the year after Noah's death। 

মিসরে প্রবেশের প্রধান প্রধান সড়কে তিনি প্রহরী নিয়োজিত রেখেছিলেন, যাতে পার্শ্ববর্তী রাজ্যসমূহ হতে কোন ব্যবসায়ী পণ্য নিয়ে মিসরে ঢুকতে চাইলে তার কাছে থেকে আমদানী শুল্ক কিম্বা পণ্য নিয়ে বেরিয়ে যেতে চাইলে রপ্তানি শুল্ক আদায় করা যায়। ইব্রাহিম তা জানতেন। তাছাড়া সুন্দরী নারীর প্রতি তার লালসাও তার অজানা ছিল না। বিবি সারা অত্যন্ত সুন্দরী ছিলেন। সুতরাং ইব্রাহিম তার স্ত্রীকে একটি কাঠের সিন্দুকে করে পথ চলছিলেন।

মিসরে প্রবেশের সাথে সাথেই প্রহরীরা তাদের পথরোধ করল। তারা তার আগমনের উদ্দেশ্য জানার পর জিজ্ঞেস করল, ‘সিন্দুকে কি আছে?’
ইব্রাহিম বললেন, ‘সামান্য কিছু মালামাল রয়েছে।’
তারা বলল, ‘তবে ওটা খুলে মাল দেখাও। মাল দেখে আমরা শুল্ক ধার্য্য করব।’
ইব্রাহিম সিন্দুক খুলতে আপত্তি করলেন, বললেন, ‘এটা খোলার আর কি দরকার, আমি মাল অপেক্ষা শুল্ক কিছু বেশীই দিচ্ছি।’

তার কথায় প্রহরীদের মনে সন্দেহ হল। তারা তার আপত্তি উপেক্ষা করে জোরপূর্বক সিন্দুকের ডালা খুলে ফেলল। অতঃপর তারা তাদের অনুসন্ধানী দৃষ্টি সিন্দুকের মধ্যে নিক্ষেপ করার আগেই সেখানে দাঁড়িয়ে গেলেন বিবি সারা।

ইব্রাহিম এর ভ্রমণ পথ।
‘এ-কি! এ তো এক নারী, জ্বিন নাকি অপ্সরী!’- প্রহরীরা বিদ্যুৎ স্পৃষ্টের মত ছিঁটকে সরে এল। তারা বিষ্মিত, হতভম্ভ। আর তাদের বিষ্মিত দৃষ্টির সম্মুখে ঐ সময় বিবি সারা হাসিমুখে বেরিয়ে এসে দাঁড়িয়ে গেলেন ইব্রাহিমের পাশে।

প্রহরীরা মালামালের নির্ধারিত শুল্ক আদায় করল। মানুষের জন্যে কোন শুল্ক নির্ধারিত ছিল না। আর ইব্রাহিম এর বিরুদ্ধে ঐ নারী সিন্দুকে জোর পূর্বক বন্দী করা হয়েছে বলে অভিযোগও করেনি। কিন্তু কাউকে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় পণ্যসম সিন্দুকে রাখা বৈধ কি অবৈধ এবিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত দিতে পারল না। তাছাড়া সুন্দরী নারীর প্রতি ফেরাউনের লিপ্সা তাদেরও অজানা ছিল না। ভাগ্য ভাল হলে উপঢৌকন বা পদোন্নতি মিলতে পারে- এই আশায় তারা তাদেরকে বন্দী করল এবং রাজদরবারে ফেরাউনের কাছে পাঠিয়ে দিল।

মিসর রাজদরবার। ইব্রাহিম ও সারাকে দরবারে হাযির করা হল। লুতের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না থাকায় তাকে পূর্বেই বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছিল।

প্রাচীন মিসর ও নীল অববাহিকা।
কর্মচারীরা ইব্রাহিমকে দেখিয়ে ফেরাউনকে জানাল- ‘হে ফেরাউন! এই ব্যক্তি এই স্ত্রীলোকটিকে সিন্দুকে আবদ্ধ করে মিসরে প্রবেশ করছিল।’
ফেরাউন ক্ষণকাল সারাকে অবলোকন শেষে ইব্রাহিমকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই স্ত্রীলোকটি কে?’

সারাকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিলে জীবন সংশয় ঘটতে পারে ভেবে ইব্রাহিম চিন্তিত হয়ে পড়লেন। অতঃপর ভাবলেন-এক মুসলিম রমণী তো অপর মুসলমানের ভগ্নি। সুতরাং তিনি জবাবে বললেন, ‘আমার ভগ্নি।’

ফেরাউন বললেন, ‘আমি এরূপই ধারণা করেছিলাম।’

সারার সৌন্দর্য মুগ্ধ দৃষ্টিতে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছেন তিনি। হঠাৎ কঠোরস্বরে বললেন, ‘কেন তুমি তাকে আবদ্ধ করে রেখেছিলে?’

ইব্রাহিম বললেন, ‘কারও লালসাপূর্ণ দৃষ্টি থেকে তাকে রক্ষার জন্যে।’
ফেরাউন তখন নরমস্বরে বললেন, ‘ভাল, বেশ ভাল! কারও কূ-দৃষ্টি পড়ার আগেই সে আমার হেফাজতে এসেছে।’

ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ শ্রবণ শেষে রায় ঘোষিত হল। এই রায় ছিল এইরকম- ‘এই ব্যক্তি উদ্ধ্যত, আদব-আচরণে জ্ঞানহীন-প্রচলিত রীতিনীতি সম্পর্কে অজ্ঞ ও বেখবর, মূর্খ ও নির্বোধ। সুতরাং তার দ্বারা আমাদের সুশৃঙ্খল এই সমাজ জীবনে বিশৃঙ্খলার সমূহ সম্ভবণা। সুতরাং তাকে কারাগারে আটক রাখা হোক।’
ইব্রাহিমকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হল।

ফেরাউন বললেন, ‘এই স্ত্রীলোকটি এখন মিসরে আত্মীয়-পরিজনহীন, অরক্ষিত। সুতরাং তাকে স্ব-সম্মানে রাজকীয় হেরেমে রাখার ব্যবস্থা করা হোক।’

সুতরাং সারাকে ফেরাউনের উপপত্নী হিসেবে রাজকীয় হেরেমে রাখা হল।

নমরুদের এক প্রাসাদ।
ফেরাউনের প্রাসাদ এক মহামারীতে আক্রান্ত হল। এই মহামারীর কারণ অনুসন্ধানে গণকদের ডাকা হল। তারা বলল, ‘হে ফেরাউন! আপনার রাজ্যে এমন একজনের আগমন ঘটেছে যার কারণেই এই মহামারীর আবির্ভাব।’

ফেরাউন চিন্তিত হয়ে পড়লেন। অতঃপর রাত্রিতে তিনি স্বপ্নে দেখলেন একজন স্বর্গদূত তাকে বলছে, ‘যে নারীকে তুমি স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছ সে অপর এক ব্যক্তির স্ত্রী। সুতরাং তাকে তুমি তার স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দাও, অন্যথায় তুমি ও তোমার পরিবার এই মহামারীতে ধ্বংস হয়ে যাবে।’

পরদিনই ফেরাউন ইব্রাহিম সম্পর্কে পূর্ণ খবরাখবর সংগ্রহ করতে কর্মচারীদের নির্দেশ দিলেন। তারা লুতকে বন্দী করে নিয়ে এল। লুত স্বীকার করলেন যে, সারা তার আত্মীয় এবং ইব্রাহিমের স্ত্রী।

পুনঃরায় ইব্রাহিমকে দরবারে হাযির করা হল। প্রচলিত নিয়মমত ইব্রাহিম এবারও ফেরাউনকে সিজদা করলেন না। এতে ফেরাউন রাগান্বিত হয়ে কঠোর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলেন। এসময় কর্মচারীরা নীচুস্বরে ইব্রাহিমকে বলল, ‘ফেরাউনকে সিজদা করুন।’
ইব্রাহিম বললেন, ‘আমি সিজদা করি একমাত্র আল্লাহকে, যিনি আমার প্রতিপালক।’

এই উত্তরে ফেরাউন বেশ আশ্চর্যবোধ করলেন। কৌতুহলী হয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে ইব্রাহিম, কে তোমার প্রতিপালক?’

তিনি বললেন, ‘আমার প্রতিপালক তিনি, যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান।’
ফেরাউন বললেন, ‘আমিও তো জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই।’ তিনি দু‘জন বন্দীকে দরবারে হাযির করতে নির্দেশ দিলেন।

আদেশ মত দু‘জন বন্দীকে দরবারে আনা হল। ফেরাউন একজনের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করে বললেন, ‘সে মুক্ত।’ আর অপরজনকে দেখিয়ে বললেন, ‘তাকে এখুনি শিরচ্ছেদ করা হোক।’

ইব্রাহিম, সারা ও হাজেরা।
তৎক্ষণাৎ জল্লাদ দরবারেই তাকে শিরচ্ছেদ করে ফেলল। কর্তিত মস্তকটি ইব্রাহিমের পদতলে গড়িয়ে এল। ফেরাউন সেদিকে একনজর তাকিয়ে বললেন, ‘এভাবে আমিও জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই। হে ইব্রাহিম! আমি ইচ্ছে করলে এক্ষুণি তোমার মৃত্যু ঘটাতে পারি আবার ক্ষমা করে জীবন ফিরিয়েও দিতে সক্ষম।’

ইব্রাহিম এসময় বলতে চাইলেন যে তার প্রতিপালক মৃতকেও জীবিত করেন। তাহলে ফেরাউন হয়ত: বলে বসবেন-এই মৃতকে তবে জীবিত করে দেখাও। আর যদি তার প্রতিপালক তা করেও দেখান-তবুও সে ঈমান আনবে না, বরং জাদু বলে তা উড়িয়ে দেবে। তাই এসময় তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সূর্য্যকে পূর্বদিক থেকে ওঠান। দেখি, আপনি তাকে পশ্চিম দিক থেকে ওঠান।’
ফেরাউন হতভম্ব হলেন এবং কোন উত্তর দিলেন না। অবশ্য তার কাছে এই প্রশ্নের কোন উত্তরও ছিল না।

এ সংক্রান্ত কোরআনের আয়াতসমূহ-সে (ফেরাউন) ইব্রাহিমের সাথে তার প্রতিপালক সম্পর্কে তর্ক করেছিল, যখন ইব্রাহিম বলল, ‘আমার প্রতিপালক তিনি, যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান।’

সে বলল, ‘আমিও জীবন দান করি এবং মৃত্যু ঘটিয়ে থাকি।’
ইব্রাহিম বলল, ‘নিশ্চয় তিনি সূর্য্যকে উদিত করেন পূর্ব দিক থেকে, এবার তুমি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর।’
তখন সে অবিশ্বাসী হতভম্ব হয়ে গেল।(২:২৫৮).

ফেরাউন মহামারীর আতঙ্কে ভীত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি আগেই জানতে পেরেছিলেন যে সারা পুণ্যবতী এবং ইব্রাহিমের স্ত্রী। সুতরাং তিনি উপঢৌকন ও দাসীসহ সারাকে ইব্রাহিমের নিকট ফিরিয়ে দিয়ে তাদেরকে তৎক্ষণাৎ দেশত্যাগ করতে আদেশ দিলেন। হযরত ইসমাইলের মাতা, বিবি হাজেরা বা হ্যাগার ছিলেন এই দাসীদেরই একজন।

এ কাহিনী অবশ্য অন্যত্র একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। যেমন- সারাকে ফেরাউনের উপপত্নী হিসেবে রাজকীয় হেরেমে রাখা হল। But God interfered to protect her in this dilemma. A mysterious sickness fell upon the house of Pharaoh, and impeded the proposed marriage. The king, according to Josephus ("Antiq." i. 8. i), inquired of the priests for what cause this plague was sent, and was informed them that it was inflicted because he was intending to take a married woman for his wife. 

Alarmed at this report, Pharaoh called for Sarai, and obtained from her the truth of her relation- ship to Abram. অত:পর ইব্রাহিমের সাথে সারার সম্পর্ক জনার পর ফেরাউন ইব্রাহিমকে দরবারে হাজির করতে নির্দেশ দেন।

অার যখন ইব্রাহিম দরবারে উপস্থিত হন, তখন ফেরাউন তাকে ভর্ৎসনা করেন। অবশ্য his rebuke is calm and dignified: "Why didst thou not tell me that she was thy wife? Why saidst thou, She is my sister? So that I took her to be my wife: now therefore behold thy wife, take her, and go thy way."

সমাপ্ত।
ছবি: Wikipedia, fbcbelmont.blogspot,  davelivingston,  babylonrisingblog.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Moses: কোরাণিক ক্যানভাসে নবী মূসা।

Abu Hena Mostafa Kamal  01 May, 2017 মি সরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ফেরাউন। হঠাৎ করে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। কিন্তু তিনি কোন উত্তরাধিকারী ন...