ইউফ্রেটিস নদীর তীরে, যেখানে নদীটি টাইগ্রিসের খুব কাছাকাছি এসে গেছে, সেখানে ব্যাবিলন নগর গড়ে ওঠে। যে জায়গায় নগরটি অবস্থিত, স্থান হিসেবে তার অনেক সুযোগ সুবিধা ছিল। নদীপথে বণিকেরা নৌকায় এবং ভেলায় করে নগরবাসীদের প্রয়োজনীয় মালপত্র নিয়ে শহরে আসত। নগরের উপর দিয়েই চলে গিয়েছিল মেসোপটেমিয়ার সর্বপ্রধান স্থলপথ, তার উপর দিয়ে দলে দলে কাফেলা চলে যেত গাধার উপরে ভারে ভারে পণ্যদ্রব্য চাপিয়ে।
ব্যাবিলন হাম্বুরাবির সময়ে। |
এইভাবে ক্ষমতা ও কূট-বুদ্ধির প্রয়োগের ফলে সমগ্র মেসোপটেমিয়া তার পদানত হয় এবং তাতে তার শাসনাধীনে এক শক্তিশালী সাম্রাজ্যের ভিত্তি গড়ে ওঠে।
ব্যবিলনের শূণ্য উদ্যান। |
হাম্বুরাবির শাসনামলে ব্যাবিলনীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা মিসরের মতই দাস মালিকদের স্বার্থ সংরক্ষণে গড়ে উঠেছিল। আর তার সময়ই মানব ইতিহাসের সর্বপ্রথম কোন আইন লিখিত আকারে প্রণীত হল। মানুষের দৈর্ঘ্যের চেয়ে বেশী দৈর্ঘ্যের একটি কাল পাথরের স্তম্ভে হাম্বুরাবির এই অনুশাসন খোঁদিত হয়েছিল এবং অনুশাসনের উপরিভাগে অঙ্কিত ছিল সম্রাটের মূর্ত্তি। সম্রাট হাম্বুরাবির ঐ লিখিত অনুশাসন (Code of Hummurabi) ছিল-
স্তম্ভে হাম্বুরাবির অনুশাসন। |
- যদি কোন ব্যক্তি মন্দির বা সম্রাটের সম্পত্তি চুরি করে, তবে তার প্রাণদন্ড হবে; চুরির মাল যার নিকট পাওয়া যাবে, তারও শাস্তি প্রাণদন্ড।
- যদি কোন ব্যক্তি কারও দাস বা দাসী হরণ করে, তবে তার প্রাণদন্ড হবে।
- যদি পলাতক দাসকে কেহ আশ্রয় দেয়, তবে তার প্রাণদন্ড হবে।
- যদি কেহ কোন দাসের দেহ হতে উল্কি মুছে ফেলে, তবে তার অঙ্গুলি কর্তন করা হবে।
- যদি কেহ অন্য কোন ব্যক্তির দাসের মৃত্যুর কারণ হয়, তবে সে ঐ মৃত দাসের বিনিময়ে নিজের একজন দাস দিতে বাধ্য থাকবে।
- যদি কেহ অন্য কোন ব্যক্তির ষাঁড়ের মৃত্যুর কারণ হয়, তবে সে ষাঁড়ের বদলে ষাঁড় দিতে বাধ্য থাকবে।
- যদি কেহ ঋণজালে আবদ্ধ থাকে, তবে তার স্ত্রী, পুত্র বা কন্যা ৩ বৎসর দাস জীবন-যাপন করতে বাধ্য থাকবে।
- যদি কেহ নিজের সমতুল্য কোন ব্যক্তির গন্ডদেশে আঘাত করে, তবে তার জন্যে তাকে জরিমানা দিতে হবে।
- যদি কেহ নিজ অপেক্ষা উচ্চ শ্রেণীর ব্যক্তির গন্ডদেশে আঘাত করে, তবে তাকে গোচর্ম নির্মিত চাবুক দ্বারা ৬০টি বেত্রাঘাত করা হবে।
ব্যবিলনের শূণ্য উদ্যান। |
যাইহোক, হাম্বুরাবির পরবর্তীতে পারস্য সম্রাট নেবু চাঁদ নেজ্জার ব্যাবিলন নগরীকে তার রাজ্যের রাজধানী করেন এবং অপূর্ব শোভামন্ডিত করে গড়ে তোলেন। তার সময়ে এই নগরের চারিদিকে প্রাচীর বেষ্টিত করা হয়েছিল, যার প্রত্যেকটির দৈর্ঘ্য ছিল পনের মাইল। উত্তর ও দক্ষিণ অভিমুখী ছিল চব্বিশটি রাস্তা এবং একই সংখ্যক ছিল পূর্ব এবং পশ্চিম অভিমুখী।
এভাবে প্রতিটি রাস্তা, এক একটি ফটকে গিয়ে মিশেছিল এবং এভাবে নগরটি ছয়টিরও বেশী স্কোয়ার ব্লকসমূহ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। প্রতিটি স্কোয়ারের কেন্দ্রস্থলে একটি করে বাগান ছিল। নগরীতে রাজপ্রাসাদ এবং মন্দির সমূহের মত অনেক বিশাল জাঁকজমকপূর্ণ দালান কোঠা ছিল।
ব্যবিলনের শূণ্য উদ্যান। |
সম্রাট নেবু চাঁদ নেজ্জার তার স্ত্রীর পাবর্ত্যময় মাতৃভূমির জন্যে, তার গৃহকাতরতা দূর করার উদ্দেশ্যে বিশাল অংকের অর্থব্যয়ে, সুবিখ্যাত ঝুলন্ত উদ্যান নির্মাণ করেন। বাস্তবে এগুলি ছিল নগর দেয়াল সমান উচ্চতা বিশিষ্ট একটির উপর একটি স্থাপিত বিশাল বিশাল চত্বরের সমষ্টি। এগুলিতে সুন্দর সুন্দর ঝোপ এবং ফুলের গাছ লাগান হয়েছিল। মোটকথা এই মহানগরীটি ছিল প্রাচীন কালের অন্যতম সবচেয়ে সুন্দর এবং বিখ্যাত নগরী।
সমাপ্ত।
ছবি: Wikipedia, Internet.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন