২৬ মার্চ, ২০১২

Dhat-ar-Riqa: যাতুর রেকা অভিযান ও বেদুইন দূরসূর।


বনি গাতাফানদের শাখা গোত্র বনি মোহারেব ও বনি সালাবা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সৈন্য সমাবেশ করছে- মুহম্মদ বিশ্বস্তসূত্রে এই সংবাদ অবগত হয়ে ৭০০ সৈন্য নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে বের হলেন। এই অভিযানে বাহন স্বল্পতা ছিল। প্রতি ছয়জনের জন্যে একটি করে উট। একজনের পর একজন তাতে আরোহণ করে পথ অতিক্রম করেছিল। অতিরিক্ত হেঁটে চলার কারণে অনেকেরই পায়ের নখ পড়ে যাবার উপক্রম হয়, ফলে তারা ন্যাকড়া দিয়ে জখমস্থানে পট্টি বাঁধতে বাধ্য হয়েছিল। এ কারণে এই অভিযান যাতুর রেকা (Dhat-ar-Riqa) নামে অভিহিত।

৬০০ সনে আরবের গোত্রসমূহের অবস্থান।
মধ্যাহ্নের সময় উভয় দল মুখোমুখি হল। যোহরের নামাজের সময় হয়ে গেছে। কিন্তু মুসলিম যোদ্ধারা আশংকা করছিলেন তারা নামাজে দন্ডায়মান হলে পাহাড় থেকে নেমে এসে গাতাফানরা তাদেরকে আক্রমণ করতে পারে। এ ধরণের পরিস্থিতিতে নামাজ সংক্ষিপ্ত করতে এই আয়াত নাযিল হয়েছিল-And when you journey in the earth, there is no blame on you if you shorten the prayer, if you fear that those who disbelieve will cause you distress, surely the unbelievers are your open enemy.-(৪:১০১)

মুজাহিদরা যোহরের নামাজে দন্ডায়মান হল। বিপক্ষরা লক্ষ্য করল মুসলমানরা নামাজে দন্ডায়মান হলে তাতে গভীরভাবে নিমগ্ন থাকে। সুতরাং তারা নামাজের মধ্যে তাদেরকে আক্রমণ করার পরিকল্পণা করল এবং পরবর্তী ওয়াক্ত নামাজের জন্যে অপেক্ষা করে বসে রইল। ঐ সময় সালাতুল খওফের বিধান সম্বলিত এই আয়াত নাযিল হল- আর যখন তুমি তাদের সঙ্গে থাক, অতঃপর তাদের নামাজ কায়েম করার ইচ্ছে কর, তখন তাদের একদল তোমার সাথে দাঁড়াবে এবং অপরদল স্বীয় অস্ত্র গ্রহণ করবে। যখন তারা সিজদা করে অবসর হবে, তখন তারা তোমার পিছনে চলে যাবে এবং যে দল নামাজ পড়েনি তারা আসবে। অতঃপর তারা তোমার সাথে নামাজ পড়বে এবং ঐসব লোক (১ম দল) সতর্কতা ও অস্ত্র গ্রহণ করবে। অবিশ্বাসীগণ বাসনা ও আকাঙ্খা করছে যে, তোমরা স্বীয় অস্ত্র ও মাল-সামান হতে যখন অসতর্ক হবে তখন তারা অকষ্মাৎ তোমাদের প্রতি ঝাপিয়ে পড়বে।-(৩:১০২) এই আয়াত নাযিলের পর মুহম্মদ সর্বপ্রথম সেখানে আছরের নামাজ এই পদ্ধতিতে আদায় করেন।

এদিকে মুসলমানদের সতর্ক হওয়া দেখে শত্রুরা পিছিয়ে গেল। সুতরাং কোন যুদ্ধ সংঘটিত হল না।

ফেরার পথে মুসলিম বাহিনী মদিনার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সুরায়েকা নামক স্থানে যাত্রা বিরতি করল। এখানে একটু দূরে দূরে ছায়াদার বৃক্ষ ছিল। মুজাহিদরা বিভিন্ন বৃক্ষতলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিশ্রাম নিতে লাগল। মুহম্মদও বিশ্রাম নিতে তরবারীখানা এক বৃক্ষশাখায় ঝুলিয়ে রেখে তার ছায়ায় আশ্রয় নিলেন। একসময় তার কিছুটা তন্দ্রার ভাব এল।

হঠাৎ একটি কর্কশ শব্দ শুনে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল, তিনি দেখলেন যে, একজন দুশমন যোদ্ধা মুক্ত তরবারী হাতে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সে চিৎকার করে বলল, ‘ওহে মুহম্মদ, আমার হাত থেকে এখন তোমাকে কে রক্ষা করবে?’
মুহম্মদ উত্তর দিলেন, ‘আল্লাহ।’ 
দুরন্ত বেদুইন সহসা স্তম্ভিত হল ও তার হাত থেকে তরবারীখানা খসে পড়ল। 

মুহম্মদ তৎক্ষণাৎ তরবারীখানা নিজ হাতে তুলে নিয়ে তা ঘোরাতে ঘোরাতে উচ্চঃস্বরে বললেন, ‘ওহে যুবক, তোমাকে কে এখন রক্ষা করবে?’
সে উত্তর দিল, ‘হায়! কেউ নেই।’ 
‘তবে আমার কাছ থেকে শিক্ষা নাও কিভাবে দয়ালু হতে হয়।’-মুহম্মদ তরবারী খানা তাকে ফেরত দিলেন। বেদুইনের বিস্মিত হল।

এরপর এই আয়াত নাযিল হয়েছিল-O ye who believe! Call in remembrance the favour of Allah unto you when certain men formed the design to stretch out their hands against you, but (Allah) held back their hands from you: so fear Allah. And on Allah let believers put (all) their trust.-(৫:১১)

যাইহোক, পৌত্তলিক বেদুইন ঐ ব্যক্তির নাম ছিল দূরসূর। পরবর্তীকালে সে মুহম্মদের অন্যতম শিষ্যে পরিণত হয়েছিল। 

সমাপ্ত।
ছবি: Wikipedia.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Moses: কোরাণিক ক্যানভাসে নবী মূসা।

Abu Hena Mostafa Kamal  01 May, 2017 মি সরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ফেরাউন। হঠাৎ করে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। কিন্তু তিনি কোন উত্তরাধিকারী ন...