আওস ইবনে সামেত নামক জনৈক মুসলমান একবার তার স্ত্রী খাওলা (Khawlah)কে রাগবশতঃ বলে ফেললেন, ‘তুমি আমার পক্ষে আমার মাতার পৃষ্ঠদেশের ন্যায়।’
আরবে এই বাক্যটি স্ত্রীকে চিরতরে হারাম করার জন্যে বলা হত, যা ছিল চুড়ান্ত তালাক অপেক্ষাও কঠোরতর।
এই ঘটনার পর খাওলা এর শরীয়ত সম্মত বিধান জানতে মুহম্মদের কাছে এলেন। তখন পর্যন্ত এ বিষয় সম্পর্কে কোন ওহী নাযিল হয়নি। তাই সব শুনে রসূলুল্লাহ পূর্ব থেকে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তাকে বললেন, ‘আমার মনে হচ্ছে তুমি তোমার স্বামীর জন্যে হারাম হয়ে গেছ।’
একথা শুনে খাওলা বললেন, ‘আমার স্বামী তো তালাক উচ্চারণ করেনি। এমতাবস্থায় তালাক কিরূপে হয়ে গেল?’
পূর্বকালে আরব ও অনারব জাতিসমূহের মধ্যে দুর্বল শ্রেণী, এতিম বালক বালিকা ও অবলা নারী চিরকালই জুলুম ও নির্যাতনের শিকার ছিল। তাদের কোন অধিকারই স্বীকার করা হত না, আর স্বীকার করা হলেও পুরুষদের কাছ থেকে তা আদায় করে নেবার সাধ্য কারও ছিল না। আরবদের নিয়ম ছিল, যারা অশ্বারোহণ করে এবং শত্রুদের মোকাবেলা করে বা তাদের অর্থ সম্পদ লুট করার যোগ্যতা রাখে, তারাই শুধূমাত্র উত্তরাধিকারের যোগ্য হতে পারে। সুতরাং নারী ও বালক-বালিকা যেহেতু দুর্বল শ্রেণী, সেহেতু তারা ঐ নিয়মের আওতায় পড়ত না।
এ কারণে স্বামী মারা গেলে বা তালাকপ্রাপ্ত হলে স্ত্রী ও নাবালক-নাবালিকা সন্তানদের অবস্থা হত চরম শোচনীয়। তাই খাওলা বিলাপ শুরু করে দিলেন এবং বলতে লাগলেন, ‘আমি আমার যৌবন তার কাছে নিঃশেষ করেছি। এখন বার্ধক্যে সে আমার সাথে এই ব্যাবহার করল। আমি এখন কোথায় যাব? আমার ও আমার বাচ্চাদের ভরণ-পোষণ কিরূপে হবে?’
এ কারণে স্বামী মারা গেলে বা তালাকপ্রাপ্ত হলে স্ত্রী ও নাবালক-নাবালিকা সন্তানদের অবস্থা হত চরম শোচনীয়। তাই খাওলা বিলাপ শুরু করে দিলেন এবং বলতে লাগলেন, ‘আমি আমার যৌবন তার কাছে নিঃশেষ করেছি। এখন বার্ধক্যে সে আমার সাথে এই ব্যাবহার করল। আমি এখন কোথায় যাব? আমার ও আমার বাচ্চাদের ভরণ-পোষণ কিরূপে হবে?’
মুহম্মদ বললেন, ‘খাওলা, এ বিষয় সম্পর্কে আমার প্রতি কোন বিধান এখনও অবতীর্ণ হয়নি।’
খাওলা তখন কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলেন, ‘হে আল্লাহ, ন্যায় বিচারক! আমি তোমার দরবারে এই অভিযোগ দায়ের করলাম।’
আল্লাহ তার ফরিয়াদ শুনে তার সমস্যার সমাধান করে দিলেন এই আয়াত নাযিল করে- যে নারী তার স্বামীর বিষয়ে তোমার সাথে বাদানুবাদ করেছে এবং অভিযোগ পেশ করেছে আল্লাহর দরবারে, আল্লাহ তার কথা শুনেছেন। আল্লাহ তোমাদের উভয়ের কথাবার্তা শুনেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন, সবকিছু দেখেন। তোমাদের মধ্যে যারা তাদের স্ত্রীদেরকে মাতা বলে ফেলে, তাদের স্ত্রীরা তাদের মাতা নয়। তাদের মাতা কেবল তারাই, যারা তাদেরকে জন্মদান করেছে। তারা তো অসমীচীন ও ভিত্তিহীন কথাই বলে। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।
যারা তাদের স্ত্রীদেরকে মাতা বলে ফেলে, অতঃপর নিজেদের উক্তি প্রত্যাহার করে, তাদের কাফফারা এই- একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটি দাসকে মুক্তি দেবে। এটা তোমাদের জন্যে উপদেশ হবে। আল্লাহ খবর রাখেন তোমরা যা কর।
যার এই সামর্থ্য নেই সে একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একাদিক্রমে দুই মাস রোজা রাখবে। যে এতেও অক্ষম, সে ষাট জন মিসকিনকে আহার করাবে। এটা এজন্যে, যাতে তোমরা আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি। আর অবিশ্বাসীদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।(৫৮:১-৪)
যারা তাদের স্ত্রীদেরকে মাতা বলে ফেলে, অতঃপর নিজেদের উক্তি প্রত্যাহার করে, তাদের কাফফারা এই- একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটি দাসকে মুক্তি দেবে। এটা তোমাদের জন্যে উপদেশ হবে। আল্লাহ খবর রাখেন তোমরা যা কর।
যার এই সামর্থ্য নেই সে একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একাদিক্রমে দুই মাস রোজা রাখবে। যে এতেও অক্ষম, সে ষাট জন মিসকিনকে আহার করাবে। এটা এজন্যে, যাতে তোমরা আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি। আর অবিশ্বাসীদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।(৫৮:১-৪)
খাওলার খাতিরে কোরআনের আয়াত নাযিল হওয়ার পর সাহাবীদের সকলে তাকে অত্যন্ত সম্মান প্রদর্শণ করতেন। ওমরের খেলাফতের সময় একদিন তিনি যখন একদল লোকের সাথে গমনরত ছিলেন, তখন পথিমধ্যে এই মহিলার সাথে দেখা হলে তিনি দাঁড়িয়ে তার কথাবার্তা শুনলেন। এতে যারা তাকে চিনতেন না, তাদের কেউ কেউ বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন, ‘সামান্য এক বৃদ্ধার খাতিরে আপনি এতবড় দলকে পথে আটকিয়ে রাখলেন?’
ওমর বললেন, ‘তোমরা কি জান ইনি কে? ইনি সেই মহিলা যার কথা আল্লাহ সপ্ত আকাশের উপর থেকে শুনেছেন। অতএব আমি কি করে তার কথা এড়িয়ে যেতে পারি? আল্লাহর কসম! যদি তিনি স্বেচ্ছায় প্রস্থান না করতেন, তবে আমি রাত্রি পর্যন্ত তার সাথে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকতাম।’
সমাপ্ত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন