১৬ই রবিউল আউয়াল, ৬২২ খ্রীষ্টাব্দের ২রা জুলাই, শুক্রবার সকালে মুহম্মদ মদিনা নগরে প্রবেশ করলেন। অতঃপর কিছুদূর অগ্রসর হয়ে তিনি বনি ছালেম গোত্রের মহল্লায় উপনীত হলেন।
দুপুর হয়ে এল। সুতরাং মুহম্মদ সেখানে ভক্তবৃন্দের সাথে প্রথম জুম‘আর নামাজ (Salat-ul Jummah) আদায় করলেন। অতঃপর এই নামাজ শেষে তিনি এই অভিভাষণ বা খোৎবা দান করলেন-
জুম্মা মসজিদ। |
--আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক আল্লাহ ব্যতিত অন্যকোন উপাস্য নেই এবং এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহম্মদ তাঁর দাস ও প্রেরিত রসূল। যখন দীর্ঘকাল পর্যন্ত জগৎ রসূলের উপদেশ হতে বঞ্চিত হয়েছিল-যখন জ্ঞান জগৎ হতে লুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল, যখন মানবজাতি ভ্রষ্টতা ও অনাচারে জর্জরিত হচ্ছিল, তাদের মৃত্যু ও কঠোর কর্মফল ভোগের সময় যখন নিকটবর্তী হয়ে আসছিল সেইসময় আল্লাহ সেই রসূলকে সত্যের জ্যোতি ও জ্ঞানের আলোক দিয়ে জগদ্বাসীর কাছে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুগত হয়ে চললেই মানব জীবনের চরম সফলতা লাভ হবে। পক্ষান্তরে তাঁদের অবাধ্য হলে ভ্রষ্ট, পতিত ও পথহারা হয়ে পড়তে হবে।
জুম্মা মসজিদ। |
--আল্লাহ সম্বন্ধে তোমার যে কর্তব্য আছে, তার সাথে তোমার যে সম্বন্ধ আছে, তুমি তা বিস্মৃত হইও না। সেই সম্বন্ধে যেখানে যে ত্রুটি ঘটে থাকে, তুমি প্রকাশ্যে ও গোপনে তার সংশোধন কর, সে সম্বন্ধকে দৃঢ় ও নিখুঁত করে নাও। এই হচ্ছে তোমার জীবিত কালের পরম জ্ঞান এবং পরজীবনের চরম সম্বল।
--স্মরণ রেখ, এর অন্যথা করলে, তোমরা কর্মফলের সম্মুখীন হতে ভীত হলেও, তাঁর হস্ত হতে পরিত্রাণ পাবার উপায় নেই। আল্লাহ প্রেমময় ও দয়াময়, তাই এই কর্মফলের অপরিহার্য় পরিণামের কথা পূর্ব হতেই তোমাদের জানিয়ে সতর্ক করে দিচ্ছেন। কিন্তু যে ব্যক্তি নিজের কথাকে সত্যি পরিণত করবে, কার্যতঃ নিজের প্রতিজ্ঞা পালন করবে, তার সম্বন্ধে আল্লাহ বলছেন-‘আমার কথার রদবদল নেই এবং আমি মানবের প্রতি অত্যাচারীও নই।’অতএব তোমরা নিজেদের মূখ্য ও গৌণ, প্রকাশ্য ও গুপ্ত সকল বিষয়েই তাকওয়া সাধনা কর, তাকওয়াই পরম ধন, তাকওয়াতেই মানবতার চরম সাফল্য।
--সঙ্গত ও সংযতভাবে পৃথিবীর সকল সুখ উপভোগ কর-কিন্তু ভোগের মোহে অনাচারে প্রবৃত্ত হইও না। আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর কিতাব দিয়েছেন, তাঁর পথ দেখিয়েছেন। এখন কে প্রকৃতপক্ষে সত্যের সেবক, আর কে কেবল মুখের দাবী সর্বস্ব মিথ্যেবাদী, তা জানা যাবে। অতএব আল্লাহ যেমন তোমাদের মঙ্গল করেছেন, তোমরাও সেভাবে জগতের মঙ্গল সাধনে প্রবৃত্ত হও, আল্লাহর শত্রু-পাপাচারীদের শত্রু বলে জ্ঞান কর, ‘এবং আল্লাহর নামে যথাযথভাবে জেহাদে প্রবৃত্ত হও। (এই কাজের জন্যে) তিনি তোমাদেরকে নির্বাচিত করে নিয়েছেন এবং তিনি তোমাদের নাম রেখেছেন-মুসলিম’ কারণ (নিজের কর্মফলে-প্রকৃতির অপরিহার্য বিধানে) যার ধ্বংসপ্রাপ্তি অবশ্যম্ভাবী-সে সত্য, ন্যায় ও যুক্তিমতে ধ্বংস প্রাপ্ত হোক! আর যে জীবন লাভ করবে, সে সত্য, ন্যায় ও যুক্তির সহায়তায় জীবন লাভ করুক! নিশ্চয় জানিও, আল্লাহ ব্যতিত আর কারও কোন শক্তি নেই।
--অতএব সদাসর্বদা আল্লাহকে স্মরণ কর; আর পরজীবনের জন্যে সম্বল সঞ্চয় করে নাও। আল্লাহর সাথে তোমাদের সম্বন্ধ কি, এ যদি তুমি বুঝতে পার, বুঝে তাঁকে দৃঢ় ও নিখুঁত করে নিতে পার-তাঁর প্রেম স্বরূপ সম্পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে আত্মনির্ভর করতে পার, তাহলে তোমার প্রতি মানুষের যে ব্যাবহার, তার ভার তিনিই গ্রহণ করবেন। কারণ মানুষের উপর আল্লাহরই আজ্ঞা প্রচলিত হয়, আল্লাহর উপর মানুষের হুকুম চলে না, মানব তাঁর প্রভু নয়, কিন্তু তিনিই তাদের সকলের প্রভু। আল্লাহ মহান- সেই মহিমান্বিত আল্লাহ ব্যতিত আর কারও হস্তে কোন শক্তি নেই।’
হিযরতের পূর্বেই জুম‘আর নামাজ ফরজ হয়েছিল। কিন্তু কুরাইশদের অত্যাচারে মক্কায় এই নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা সম্ভব না হওয়ায় তা স্থগিত রাখা হয়েছিল।
এই খোৎবা নামাজের পরে দেয়া হয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে নামাজের পূর্বে দেয়ার প্রচলন শুরু হয় নিম্নের ঘটনার কারণে। বর্তমানে তাই সুন্নত।
এক জুম্মার দিনে মুহম্মদ নামাযান্তে খোতবা পাঠ করছিলেন এমনসময় একটি বাণিজ্যিক কাফেলা মদিনার বাজারে উপস্থিত হয়। এই বাণিজ্যিক কাফেলাটি ছিল দেহইয়া ইবনে খলফ কলবীর। তিনি সিরিয়া থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য-সম্ভার নিয়ে এসেছিলেন। তখন ঢোল পিটিয়ে এ খবর সর্বসাধারণের জন্যে তা ঘোষণা করা হল। মদিনাতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি দুষ্প্রাপ্য এবং দুর্মূল্য ছিল। তাই নারী-পুরুষ সকলে দৌঁড়ে তার কাফেলার কাছে হাযির হতে লাগল। ঢোলের শব্দে অনেক মুসল্লিও খোৎবা ছেড়ে বাজারে চলে গেলেন-এই ভেবে হয়তঃ দেরীতে গেলে প্রয়োজনীয় দ্রব্য-সামগ্রী পাওয়া যাবে না। মুহম্মদ এবং হাতে গোনা কয়েকজন কেবল মসজিদে রয়ে গেলেন।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুহম্মদ বললেন, ‘যদি তোমরা সবাই চলে যেতে, তবে মদিনার উপত্যাকা আযাবের অগ্নিতে পূর্ণ হয়ে যেত।’
এরই পরিপ্রেক্ষিতে সাহাবীদের লজ্জা ও হুশিয়ার করার জন্যে আলোচ্য আয়াত অবতীর্ণ হয়- মুমিনরা, জুম্মার দিনে যখন নামাজের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচা কেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বোঝ। অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তলাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। তারা যখন কোন ব্যবসায়ের সুযোগ অথবা ক্রীড়াকৌতুক দেখে তখন তোমাকে দাঁড়ান অবস্থায় রেখে তারা সেদিকে ছুটে যায়। বল, আল্লাহর কাছে যা আছে, তা ক্রীড়াকৌতুক ও ব্যবসা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। আল্লাহ সর্বোত্তম রিজিকদাতা।(৬২:৯-১১)
সমাপ্ত।
ছবি: islamiclandmarks, forum.urduworld.
এই খোৎবা নামাজের পরে দেয়া হয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে নামাজের পূর্বে দেয়ার প্রচলন শুরু হয় নিম্নের ঘটনার কারণে। বর্তমানে তাই সুন্নত।
এক জুম্মার দিনে মুহম্মদ নামাযান্তে খোতবা পাঠ করছিলেন এমনসময় একটি বাণিজ্যিক কাফেলা মদিনার বাজারে উপস্থিত হয়। এই বাণিজ্যিক কাফেলাটি ছিল দেহইয়া ইবনে খলফ কলবীর। তিনি সিরিয়া থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য-সম্ভার নিয়ে এসেছিলেন। তখন ঢোল পিটিয়ে এ খবর সর্বসাধারণের জন্যে তা ঘোষণা করা হল। মদিনাতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি দুষ্প্রাপ্য এবং দুর্মূল্য ছিল। তাই নারী-পুরুষ সকলে দৌঁড়ে তার কাফেলার কাছে হাযির হতে লাগল। ঢোলের শব্দে অনেক মুসল্লিও খোৎবা ছেড়ে বাজারে চলে গেলেন-এই ভেবে হয়তঃ দেরীতে গেলে প্রয়োজনীয় দ্রব্য-সামগ্রী পাওয়া যাবে না। মুহম্মদ এবং হাতে গোনা কয়েকজন কেবল মসজিদে রয়ে গেলেন।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুহম্মদ বললেন, ‘যদি তোমরা সবাই চলে যেতে, তবে মদিনার উপত্যাকা আযাবের অগ্নিতে পূর্ণ হয়ে যেত।’
এরই পরিপ্রেক্ষিতে সাহাবীদের লজ্জা ও হুশিয়ার করার জন্যে আলোচ্য আয়াত অবতীর্ণ হয়- মুমিনরা, জুম্মার দিনে যখন নামাজের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচা কেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বোঝ। অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তলাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। তারা যখন কোন ব্যবসায়ের সুযোগ অথবা ক্রীড়াকৌতুক দেখে তখন তোমাকে দাঁড়ান অবস্থায় রেখে তারা সেদিকে ছুটে যায়। বল, আল্লাহর কাছে যা আছে, তা ক্রীড়াকৌতুক ও ব্যবসা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। আল্লাহ সর্বোত্তম রিজিকদাতা।(৬২:৯-১১)
সমাপ্ত।
ছবি: islamiclandmarks, forum.urduworld.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন