১৩ জুন, ২০১২

Torah: তাওরাত কিতাবের সংক্ষিপ্তসার।

"আমি তোমাদের প্রত্যেককে একটি আইন ও পথ দিয়েছি। যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে তোমাদের সবাইকে এক উম্মত করে দিতেন, কিন্তু এরূপ করেননি- যাতে তোমাদের যে ধর্ম দিয়েছেন, তাতে তোমাদের পরীক্ষা নেন। অতএব দৌঁড়ে কল্যাণকর বিষয়াদি অর্জন কর। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তণ করতে হবে। অতঃপর তিনি অবহিত করবেন সে বিষয়, যাতে তোমরা মতবিরোধ করতে।"-(৫:৪৮)

"..‘ঐ গ্রন্থ কে নাযিল করেছেন, যা মূসা নিয়ে এসেছিল? যা জ্যোতি বিশেষ এবং মানবমন্ডলীর জন্যে হেদায়েতস্বরূপ, যা তোমরা বিক্ষিপ্ত পত্রে রেখে লোকদের জন্যে প্রকাশ করছ এবং বহুলাংশকে গোপন করছ। তোমাদেরকে এমন অনেক বিষয় শিক্ষা দেয়া হয়েছে যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা জানত না।’
বলে দাও, ‘আল্লাহ নাযিল করেছেন।..’" -(৬:৯১)

"আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছি। এতে হেদায়েত ও আলো রয়েছে। আল্লাহর আজ্ঞাবহ পয়গম্বর, দরবেশ ও আলেমরা এর মাধ্যমে ইহুদিদের ফয়সালা দিতেন। কেননা তাদেরকে এই খোদায়ী গ্রন্থের দেখা শোনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং তারা এর রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত ছিল।.. আমি এই গ্রন্থে তাদের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং যখমসমূহের বিনিময় সমান যখম। অতঃপর যে ক্ষমা করে, সে পাপ থেকে পবিত্র হয়ে যায়। যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদানুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই অত্যাচারী।" -(৫:৪৪-৪৫)

তাওরাত খোদায়ী গ্রন্থ। সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থ কোরআনে এ গ্রন্থ সম্পর্কে অনেক বর্ণনা আছে এবং আমরা উপরের আয়াতসমূহ থেকে জানছি যে এই গ্রন্থ এখন আর অবিকৃত নেই। তদুপরি ঐ গ্রন্থে কি নির্দেশ ছিল তা আমাদের কৌতুহল। যদিও কোরআন থেকে আমরা জানি মূল আইনসমূহের কোন পরিবর্তন নেই- কোন কিতাবেই । "..তুমি আল্লাহর বিধানে পরিবর্তণ পাবে না এবং আল্লাহর রীতিনীতিতে কোনরকম বিচ্যুতিও পাবে না।" -(৩৫:৪৩) যাইহোক, এখন আমরা দেখি তাওরাতে কি ছিল।

খোদা মূসাকে যে ব্যবস্থা (Torah) দিয়েছিলেন তা ছিল পূর্ণ এক কিতাব। Actually,Torah consists of five books (Pentateuch). In the first, the beginning of the creation and history from Adam to Joseph are recorded. Tn the second the enslaving  of the Israelite's by the Egyptians, the coming of Moses, the destruction of Pharaoh, the establish of the Arc of the covenant, the event in the wilderness, the Imamship of Aaron, the promulgation of the Decalogue, and the hearing by the people of the words of Allah the Most High., are related. The third book contains a summary of the  commandments. The fourth  the number of the people, the distribution of the land to them, the circumstances of the envoys sent by Moses to Syria, the history of the Mannah-Salwah, and of the cloud for guiding, shedding and lighting them..The fifth contains the numbers of the commandments of the Torah to elucidate the summary account, it also records the decease of Aaron and of Moses, and the succession of Joshua.

তবে যে তৌরাত বর্তমান রয়েছে তা মূল অাসমানী কিতাব নয়, নেবু চাঁদ নেজ্জার জেরুজালেম আক্রমণের পর ইহুদিদেরকে নাঙ্গা করে শিকলে বেঁধে নিয়ে গিয়ে তার রাজ্যের নানান স্থানে বসিয়ে দেন। ফলে ইহুদিরা কিতাবহীন হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে নবী ওজায়ের (Ezra) নির্বাসনের সময় তার পিতা কর্তৃক মাটিতে প্রোথিত করে রেখে যাওয়া পাঠের অনুপোযুক্ত হয়ে পড়া তৌরাত থেকে যতটুকু সম্ভব উদ্ধার ও বাকীটা তার মেমরী থেকে নিয়ে কিতাবটিকে আবারো লিখিত আকার দেন। তার সংকলিত ঐ গ্রন্থে ৬১৩টি শরিয়া আইন বা ব্যবস্থা ছিল। বিস্তারিত ঐ ব্যবস্থার সংক্ষিপ্তসার আমরা বোঝার সুবিধার্থে তিনভাগে বিভক্ত করেছি, যথা- নীতিগত ব্যবস্থা তথা দশ আজ্ঞা, সামাজিক বিচার ব্যবস্থা এবং ধর্মীয় আচার-বিধি ও উৎসবাদি-

ক). নীতিগত ব্যবস্থা তথা দশ আজ্ঞা:
-খোদা ব্যতিত অপর কাউকে উপাস্য স্থির কোরও না। (আমি ব্যতিত অন্য কোন উপাস্য নেই।)
-প্রতিমার পূজা কোরও না। (এক্ষেত্রে পিতার অপরাধের প্রতিফল সন্তানদের উপর বর্তিবে, যারা আমাকে দ্বেষ করে, তাদের উপর তৃতীয় ও চতুর্থ পুরুষ পর্যন্ত তা বর্ত্তিবে; কিন্তু যারা আমাকে প্রেম করে ও আমার আজ্ঞাসমূহ পালন করে, তাদের সহস্র পুরুষ পর্যন্ত আমার আশীর্বাদে ধন্য হবে।)

-অনর্থক (অসৎ উদ্দেশ্যে) খোদার নাম নিও না। 
-বিশ্রামবারকে পবিত্ররূপে মান্য কোরও। (তোমরা সপ্তাহের ছয়দিন কাজ করবে এবং সপ্তমদিন বিশ্রামবার হিসেবে পালন করবে। এতে তোমাদের হালের ও ভারবাহী পশু, তোমাদের গৃহে জন্ম নেয়া দাস-দাসী আর অন্যান্য জাতির লোকেরাও পরিশ্রম থেকে রেহাই পাবে।)
-পিতা-মাতাকে সমাদর কোরও।
-নরহত্যা কোরও না।
-ব্যভিচার কোরও না।
-চুরি কোরও না।
-প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে মিথ্যে সাক্ষ্য দিও না।
-প্রতিবেশীর কোন বস্তুতে (প্রতিবেশীর স্ত্রী, তার দাস-দাসী, তার পশু কিম্বা অন্য যে কোন বস্তু) লোভ কোরও না। 

খ) সামাজিক বিচার ব্যবস্থা: 
০১. খোদার একত্ব ও পবিত্রতা: খোদা এক এবং অদ্বিতীয়। তোমার সমস্ত অন্তর, সমস্ত প্রাণ, সমস্ত মন এবং সমস্ত শক্তি দিয়ে, তাকে মহব্বত করবে। উপাসনায় কাউকে তাঁর অংশীদার সাব্যস্ত করবে না। স্বর্ণ বা রৌপ্য দ্বারা নিজেদের জন্যে কোন দেবদেবতাও তৈরী করে নেবে না।
খোদাকে অপমান কোরও না। তাঁকে যা দেবার তা দিতে দেরী কোরও না। তাঁর পবিত্র নামের পবিত্রতা নষ্ট কোরও না। তাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করবে।
খোদার নামে মিথ্যে কসম খেও না। এতে খোদার পবিত্র নামকে অপবিত্র করা হয়।
০২. সামাজিক আইন-কানুন বা বিধি-বিধান: ক্রয়কৃত কোন দাস ছয় বৎসর তার মালিকের অধীনে কাজ করবে, কিন্তু সপ্তম বৎসরে তাকে কোন বিনিময় ছাড়াই মুক্তি দিতে হবে। যদি সে একা এসে থাকে তবে একাই চলে যাবে, কিন্তু যদি সে তার স্ত্রীকেও সঙ্গে এনে থাকে তবে তাকেও তার সঙ্গে যেতে দিতে হবে। কিন্তু ঐ দাসের বিবাহ যদি তার মনিবই দিয়ে থাকে আর তার সন্তানাদি হয়ে থাকে, তবে সেই স্ত্রী ও সন্তানেরা মনিবেরই থেকে যাবে। কিন্তু যদি ঐ দাস স্পষ্ট করে জানায় যে, সে তার মনিব, তার স্ত্রী ও সন্তানদেরকে ভালবাসে এবং তাদের ছেড়ে চলে যাবার ইচ্ছে তার নেই, তবে তার মনিব তাকে স্বাক্ষ্য তাম্বুর সম্মুখে উপস্থিত করবে। তারপর তাম্বুর দ্বারদেশে তুরপুন দিয়ে তার কান ফুঁটো করে দেবে। এতে সে সারাজীবন ঐ মালিকের দাস হয়ে থাকবে।

যদি কেউ তার কন্যাকে দাসী হিসেবে বিক্রি করে, তবে তার মনিব তাকে দাসের মত মুক্ত করে দিতে পারবে না। কিন্তু যে মনিব তাকে নিজের জন্যে পছন্দ করে নিয়েছে অতঃপর সে যদি তার উপর খুশী হতে না পারে, তবে তাকে মুক্ত করে দেবে। কিন্তু তার সাথে প্রবঞ্চনা করতে বা অন্য কারও কাছে তাকে বিক্রি করতে পারবে না। আর যদি মনিব তার পুত্রের জন্যে তাকে পছন্দ করে নিয়ে থাকে তবে নিজকন্যার মত সব অধিকার তাকে দিতে হবে। আর যদি মনিব সেই দাসীকে বিবাহ করার পরেও অন্য কাউকে বিবাহ করে তবুও সে তার খোরাক পোষাক দিতে বাধ্য থাকবে এবং তার দৈহিক চাহিদাও তাকে পূরণ করতে হবে। কারণ স্ত্রী হিসেবে এটা তার প্রাপ্য। সে যদি এই কর্তব্য না করে তবে কোন অর্থের বিনিময় ছাড়াই তাকে মুক্তি দিতে হবে।’
কারও আঘাতের ফলে যদি কারও মৃত্যু হয়, তবে আঘাতকারীর প্রাণদন্ড হবে। কিন্তু খুনের উদ্দেশ্য যদি তার না থেকে থাকে- যদি এটা হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা হয়, তবে তাকে হত্যা করা যাবে না। যদি কেউ সুপরিকল্পিতভাবে কাউকে হত্যা করে বেদীর কাছে গিয়েও আশ্রয় নেয়, তবে সেখান থেকেও তাকে ধরে এনে হত্যা করতে হবে। 
পিতা বা মাতার প্রহারকারীকে হত্যা করতে হবে। পিতামাতার শাপদাতাও মৃত্যূদন্ডে দন্ডিত হবে।

যদি কারও আঘাতের ফলে কারও অঙ্গহানী হয়, তবে সেই আঘাতকারীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং তাকে সুস্থ্য করার সব ব্যবস্থা এবং যাবতীয় ব্যয় ভারও বহন করতে হবে। আর দাস বা দাসীর ক্ষেত্রে সে মুক্ত হয়ে যাবে। আর যদি কারও আঘাতের দ্বারা তার দাস বা দাসীর মৃত্যু হয়, তবে আঘাতকারীকে হত্যা করতে হবে। কিন্তু যদি সে দু-একদিন বেঁচে থাকে অতঃপর তার মৃত্যু হয়, তবে আঘাতকারী কোন শাস্তি পাবে না, কারণ সে তার নিজেরই সম্পত্তি।
যদি কারও আঘাতের দ্বারা কোন গর্ভবতী স্ত্রীলোকের গর্ভ নষ্ট হয়ে যায়, তবে সেই স্ত্রীলোকের স্বামীর দাবী অথবা বিচারকের রায় অনুসারে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কিন্তু এছাড়া যদি অন্য কোন ক্ষতি হয় তবে আঘাতকারীকে শাস্তি পেতে হবে। যেমন- প্রাণের বদলে প্রাণ, দাঁতের বদলে দাঁত, হাতের বদলে হাত, পায়ের বদলে পা, জখমের বদলে সমান জখম ইত্যাদি। 

যদি কেউ তার জমির কোন গর্তের মুখ খুলে রাখে, কিম্বা কোন গর্ত খুঁড়ে ঠিকমত তার মুখ ঢাকা দিয়ে না রাখে আর সেই গর্তে পড়ে যদি কোন পশুর মৃত্যু হয়, তবে তাকেই তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তবে মৃত পশুটা তার হয়ে যাবে। 
যদি কোন গরুর শিং এর আঘাতে কারও মৃত্যু হয় তবে পাথর নিক্ষেপে সেই গরুকে অবশ্যই হত্যা করতে হবে। সেই গরুর মাংস কেউ খাবে না এবং গরুর মালিকও কোন শাস্তি পাবে না। তবে গরুটার যদি গুঁতানোর অভ্যাস থাকে আর তার মালিককে সাবধান করে দেবার পরেও সে যদি তাকে আঁটকে না রাখে আর সেই গরুটার দ্বারা কারও মৃত্যু হয়, তবে পাথর নিক্ষেপে গরু এবং তার মালিককেও হত্যা করতে হবে। কিন্তু নিহতের ওয়ারিশরা যদি মালিকের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবী করে, তবে তা পরিশোধ করে সে তার জীবন রক্ষা করতে পারবে। 

কোন গরু যদি কোন দাস বা দাসীকে হত্যা করে ফেলে তবে তার মনিবকে গরুর মালিক ক্ষতিপূরণ বাবদ তিন‘শ ষাট গ্রাম রূপা দেবে, আর সেই গরুটাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করবে। আবার যদি কারও গরু অন্য কারও গরুকে হত্যা করে, তবে ঐ গরুর বিক্রয় লব্ধ অর্থ এবং মৃত গরুটাকে তারা দু‘জনে ভাগ করে নেবে। কিন্তু যদি একথা জানা যায় যে, গরুটা হিংস্র স্বভাবের মালিক তা পূর্ব থেকেই জ্ঞাত কিন্তু সে তাকে বেঁধে রাখেনি তবে সেই মালিককে গরুর বদলে গরু দিতে হবে এবং মৃত গরুটা তার হয়ে যাবে।

যদি কারও পালিত পশু অন্যকারও ক্ষেতের ফসল নষ্ট করে, তবে তাকে নিজের ক্ষেতের সর্বোৎকৃষ্ট ফসল দিয়ে তার ক্ষতিপূরণ করতে হবে।
কারও কাছ থেকে ধার স্বরূপ আনা কোন পশু যদি মালিকের অনুপস্থিতিতে আহত হয় বা মৃত্যুবরণ করে, তবে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কিন্তু মালিকের সম্মুখেই যদি তা হয় তবে তাকে কোন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। কিন্তু পশুটা যদি অর্থের বিনিময়ে ভাড়া করে আনা হয়ে থাকে তবে সেই পরিমান অর্থই তার ক্ষতিপূরণ হবে।

যদি কারও জ্বালান আগুন দ্বারা অন্য কারও ফসল বা অন্য কোন সম্পদের ক্ষতি সাধিত হয়, তবে আগুনটা যে জ্বালিয়েছিল তাকেই তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
যদি কেউ গরু বা ভেড়া চুরি করে এনে জবেহ করে, কিম্বা বিক্রি করে দেয়, তবে একটা গরুর পরিবর্তে পাঁচটা এবং একটা ভেড়ার পরিবর্তে চারটা ভেড়া ফিরিয়ে দিতে হবে। 
চোরকে চুরি করা জিনিষের জন্যে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, কিন্তু যদি সে সম্বলহীন হয় তবে তাকেই বিক্রি করে সেই অর্থ আদায় করে দিতে হবে। চুরি করা পশু যদি চোরের কাছে পাওয়া যায় তবে চোরকে সেগুলোর দ্বিগুণ ফিরিয়ে দিতে হবে। আবার যদি কোন চোর রাতে চুরি করার সময় ধরা পড়ে আহত হয়ে মারা যায়, তবে আঘাতকারী হত্যার দায়ে দায়ী হবে না। কিন্তু যদি সূর্য্য উঠবার পরে তা হয় তবে সে সেই খুনের জন্যে দায়ী হবে। 

যদি কেউ কাউকে চুরি করে নিয়ে এসে বিক্রি করে দেয় কিংবা যদি তাকে তার সঙ্গে পাওয়া যায়, তবে তাকে হত্যা করতে হবে। 
যদি কেউ কারও কাছে অর্থ সম্পদ রাখতে দেয় আর তার গৃহ থেকে তা চুরি হয়ে যায় এবং চোর ধরা পড়ে, তবে চোর তার দ্বিগুণ ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু যদি চোর ধরা না পড়ে তবে গৃহকর্তা নিজেই সেইসব নিয়েছে কিনা তা স্থির করার জন্যে তাকে বেদীর সম্মুখে উপস্থিত হতে হবে। 

অন্যের দখলে আছে এমন কোন পশু বা পরিধেয় বস্ত্র কিম্বা অন্য কোন হারান জিনিষ দেখে যদি কেউ নিজের বলে দাবী করে, তবে তা মীমাংসার জন্যে দু‘পক্ষকেই বেদীর সম্মুখে উপস্থিত হতে হবে। সেখানে খোদা যাকে দোষী বলে স্থির করবেন সে অন্যজনকে তার দ্বিগুণ ফিরিয়ে দেবে। 

যদি কেউ তার কোন পশু কারও কাছে পালনার্থে রাখতে দেয়, আর তা মরে যায় বা আঘাত পায়, কিম্বা ছিনতাই হয় অথচ কেউ এসব হতে দেখেনি, তবে তাকে বেদীর সম্মুখে উপস্থিত হতে হবে ব্যাপারটার মীমাংসার জন্যে। আর ঐ ব্যক্তি খোদাকে সাক্ষী করে বলবে-‘আমি প্রতিবেশীর দ্রব্যে হস্তার্পণ করিনি।’ আর সেই পশুর মালিককে তা মেনে নিতে হবে এবং কোন ক্ষতিপূরণ সে দাবি করতে পারবে না। কিন্তু সেই ব্যক্তির কাছ থেকে যদি সেটা চুরি হয়ে যায় তবে তাকেই ক্ষতিপূরণ দিতেই হবে। আর যদি কোন হিংস্র জন্তু সেই পশুটাকে ছিঁড়ে ফেলে তবে তা প্রমান করার জন্যে তাকে পড়ে থাকা অংশগুলো নিয়ে এসে দেখাতে হবে। এ অবস্থায় তাকে আর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। 
কোন কুমারীকে যদি কেউ ভুলিয়ে এনে তার সঙ্গে ব্যভিচার করে, তবে সেই ব্যক্তিকে তার বিয়ের পণ দিতে হবে এবং মেয়েটা তার স্ত্রী হবে। কিন্তু যদি মেয়েটির পিতা কিছুতেই তার কাছে কন্যাদানে সম্মত না হয় তাহলেও ঐ ব্যক্তিকে ঐ মেয়েটির বিয়ের পণ দিতে হবে। 
কোন ব্যক্তি যদি ব্যভিচারে লিপ্ত অবস্থায় ধরা পড়ে, তবে তাদের উভয়কেই দেহের অর্ধাংশ মাটিতে প্রোথিত করে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করতে হবে।
ইস্রায়েলী হোক বা তাদের মধ্যে বসবাসকারী কোন বিদেশী হোক, তাদের কেউ যদি তার সন্তানকে বা বংশের কাউকে মোলক দেবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে, তবে তার প্রাণদন্ড হবে, লোকেরা তাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করবে। আর যদি তারা তা না করে সেইসময় চক্ষু মুদিত রাখে, তবে তাদের সকলে অপরাধী সাব্যস্ত হবে এবং আমি তাদের সকলকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন করব।

মায়াবিনী কিম্বা গণকের বিদ্যা ব্যবহার কোরও না। মায়াবিনী মৃত্যুদন্ডের সাজা পাবে। জ্যোতিষ বা গণকের কাছে ভাগ্য অন্বেষণে যাবে না। আর পুরুষ কিম্বা স্ত্রীলোকের মধ্যে যে কেউ ভূতাড়িয়া বা গুণী হয়, তার প্রাণদন্ড হবে। লোকে তাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করবে এবং তার রক্ত তারই উপর বর্তিবে।
কোন পশুর সঙ্গে যৌন সঙ্গমকারীকে এবং ঐ পশুটিকে অবশ্যই হত্যা করতে হবে। 
কোন ঈমাম কন্যা যদি বেশ্যা হয়, তবে তাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করবে।
সন্তানদের পাপের জন্যে পিতাকে কিম্বা পিতার পাপের জন্যে সন্তানকে হত্যা করা যাবে না। প্রত্যেকে তার নিজের পাপের ভার বহন করবে। 
০৩. সম্পত্তি আইন: ভূমি চিরকালের নিমিত্ত বিক্রীত হবে না, কেননা ভূমি আমারই; তোমরা তো আমার সাথে বিদেশী ও প্রবাসী। আর তোমরা নিজেদের অধিকৃত দেশের সর্বত্র ভুমি মুক্ত করতে দেবে।

কেউ যদি দরিদ্র হয়ে আপন অধিকারের কিঞ্চিত বিক্রয় করে, তবে তার মুক্তিকর্তা নিকটস্থ জ্ঞাতি এসে নিজ ভ্রাতার বিক্রীত ভূমি মুক্ত করে নেবে। যার মুক্তিকর্তা নেই, সে যদি ধনবান হয়ে নিজে তা মুক্ত করতে সমর্থ হয়, তবে সে তার বিক্রয়ের বৎসর গণনা করে তদনুসারে অতিরিক্ত মূল্য ক্রেতাকে ফিরিয়ে দেবে; এরূপে সে নিজ অধিকারে ফিরে যাবে। কিন্তু যদি সে তা ফিরিয়ে নিতে অসমর্থ হয়, তবে সেই বিক্রীত অধিকার যোবেল বৎসর পর্যন্ত ক্রেতার হস্তে থাকবে; অত:পর যোবেল বৎসরে তা মুক্ত হবে এবং সে আপন অধিকারে ফিরে যাবে।

প্রাচীর বেষ্টিত কোন শহরের কোন বাড়ী যদি কেউ বিক্রি করে, তবে বিক্রি করার পর এক বৎসর পর্যন্ত তা ছাড়িয়ে নেবার অধিকার তার থাকবে। বাড়ীটা যদি এক বৎসরের মধ্যে ছাড়িয়ে নেয়া না হয় তবে যে তা কিনেছে, স্থায়ীভাবে সেটা তার ও তার বংশধরদের হয়ে যাবে। ফিরে পাওয়ার বৎসর তথা যোবেল বৎসরেও সেটা ফিরিয়ে দিতে হবে না। কিন্তু প্রাচীর বেষ্টিত নয় এমন গ্রামের বাড়ীগুলো খোলা জমি জায়গার মতই ধরে নিতে হবে। সেগুলো ছাড়িয়ে নেয়া যাবে এবং যোবেল বৎসরে সেগুলো ফেরতও দিতে হবে। তবে সম্পত্তি হিসেবে পাওয়া লেবীয়দের সব গ্রাম ও শহর এবং সেগুলোর মধ্যেকার বাড়ীগুলো তাদের সবসময়ই ছাড়িয়ে নেবার অধিকার থাকবে। যদি লেবীয়দের বিক্রি করা সম্পত্তি, কোন লেবীয় ছাড়িয়ে নেয়, তবে  সেই বিক্রীত গৃহ এবং তার অধিকারস্থ নগর যোবেল বৎসরে মুক্ত হবে, কারণ ইস্রায়েলীদের মধ্যে লেবীয়দের গ্রাম ও শহরের বাড়ী-ঘর তাদেরই সম্পত্তি। কিন্তু তাদের গ্রাম ও শহরের পশু চরাবার মাঠ বিক্রিত হবে না; কেননা তা তাদের চিরকালের সম্পত্তি।

আর যদি তোমার ভ্রাতা দরিদ্র ও শুন্যহস্ত হয়, তবে তাকে সাহায্য করবে; সে বিদেশী ও প্রবাসীর ন্যায় তোমার সাথে জীবন ধারণ করবে। আর তোমার ভ্রাতা যদি দরিদ্র হয়ে তোমার নিকট নিজেকে বিক্রয় করে, তবে তুমি তার উপর কঠিন কর্তৃত্ব কোরও না। সে বেতনজীবি ভৃত্যের ন্যায় কিম্বা প্রবাসীর ন্যায় তোমার সঙ্গে থাকবে এবং দাস্যকর্ম করবে। অত:পর সে যোবেল বৎসরে মুক্ত হবে।

আর যদি কোন ইস্রায়েলী নিজেকে তোমাদের মধ্যে বসবাসকারী কোন ধনবান বিদেশী কিম্বা প্রবাসীর কাছে নিজেকে বিক্রয় করে, তবে বৎসর বৈতনিক ভৃত্যের ন্যয় সে তার সাথে থাকবে। আর তার থাকবার সময় বেতনজীবির দিনের ন্যায় হবে। তবে সে নিজে অথবা তার জ্ঞাতিদের কেউ তাকে ছাড়িয়ে নিতে পারবে এবং সেক্ষেত্রে ছাড়িয়ে নেবার দিন থেকে যোবেল বৎসর পর্যন্ত সময় গণনা করে ক্রয়কারীকে তার মোচনের মূল্য ফিরিয়ে দেবে। 

০৪. বৈধ-অবৈধ তথা হারাম হালাল: ভূমির উপর বাসকরা জীব-জন্তুর যেগুলি জাবর কাটে এবং যেগুলোর খুর পুরোপুরি দু‘ভাগে চেরা কেবল সেগুলোর মাংস তোমাদের জন্যে হালাল। কিন্তু উষ্ট্র, শাফন, খরগোষ প্রভৃতি তোমাদের খাওয়া চলবে না, কেননা তারা জবর কাটলেও তাদের খুর পুরোপুরি দ্বিখন্ডিত নয়। তেমনি শূকর হারাম, কেননা তার খুর দ্বি-খন্ড বিশিষ্ট হলেও সে জাবর কাটে না।

পানিতে যেসব প্রাণী বাস করে তাদের মধ্যে যাদের ডানা এবং গায়ে আঁশ আছে সেগুলো তোমাদের জন্যে হালাল।
ঈগল, শকুন, চিল, বাজপাখি, কাক, উটপাখি, পেঁচা, গাংচিল, হাঁড়গিলা, সিন্দুবাজ, হুপ্পু আর বাঁদুড় তোমরা খেতে পারবে না।
ভূচর প্রাণীদের মধ্যে বেজি, ইঁদুর, গিরগিটি, তক্ষক, গোসাপ, টিকটিকি, রক্তচোষা, কাঁকলাস তোমাদের পক্ষে অশুচি।
ভূচর প্রত্যেক কীট এবং চতুষ্পদ উড্ডীয়মান পতঙ্গ তোমাদের পক্ষে ঘৃণার্হ।

অধিক পানি আছে এমন জলাধার বা ঝর্ণার পানি মৃত প্রাণীর দরুণ অশুচি হবে না। 
এমন কোন পশুর মাংস তোমরা খাবে না যা কোন হিংস্র জানোয়ারে ছিঁড়ে ফেলে রেখেছে।
মৃত পশুর মাংস হারাম। 
রক্ত খাওয়া হারাম। কারণ, সমস্ত প্রাণীর প্রাণ রয়েছে তার জীবন্ত দেহের রক্তে। রক্তসুদ্ধ কোন মাংস খাওয়া যাবে না।
মেদ বা চর্বি তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ। কেননা যে কোন পশু হতে খোদার উদ্দেশ্যে অগ্নিকৃত উপহার উৎসর্গ করা যায়, সেই পশুর মেদ ভোজনকারী আপন লোকদের মধ্য হতে উচ্ছিন্ন হবে।
কোন পশুর মা এবং বাচ্চা একই দিনে জবেহ করবে না। আর কোন পশুর বাচ্চার মাংস তার মায়ের দুধে রান্না করবে না।
নিকট সম্বন্ধ আছে এমন কোন আত্মীয়ের সাথে বিবাহ অবৈধ। যেমন-সৎমা, আপন ভগ্নি বা সৎবোন, নিজের কন্যা, পুত্র বা কন্যা পক্ষের নাতনি, পুত্রবধূ, ফুফু, খালা, চাচী, মামী। একই সঙ্গে কোন স্ত্রীলোক ও তার কন্যাকে বিবাহ করা হারাম। স্ত্রী বর্তমানে তার ভগ্নিকে বিবাহ করা অবৈধ। এই ধরণের অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনকারীদের উভয়ে প্রাণদন্ডে দন্ডিত হবে। আর যদি কেউ স্ত্রীকে ও তার মাতাকে রাখে তবে তাদেরকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করতে হবে। 

০৫. সামাজিক আচার-আচরণ ও বিধি-বিধান: পুং মৈথুন চলবে না। এটা ঘৃণার্হ কর্ম। এই কর্ম সাধনকারী উভয়ই প্রাণদন্ডে দন্ডিত হবে।
মিথ্যে গুজব রটাবে না। 
অন্যায়ের পক্ষ নিয়ে দুষ্ট লোককে সাহায্য করবে না। দশজনে অন্যায় করছে বলে তুমিও তা করতে যেয়ো না। 
কোন মোকদ্দমায় সাক্ষ্য দিতে দিয়ে গিয়ে অধিকাংশের সাথে যোগ দিয়ে ন্যায়বিচারে বাঁধা দিয়ো না। কেউ গরীব বলেই বিচারের সময় তার পক্ষ নেবে না।
সাজান মামলা থেকে দূরে থাকবে।
কোন নির্দোষীকে মৃত্যুর শাস্তি দিয়ো না। এই অন্যায়কারী শেষ বিচারে আমার করুণা লাভে সমর্থ হবে না। 
ঘুষ খেয়ো না, কারণ ঘুষ মানুষকে অন্ধ করে দেয়-সৎলোকের কথায়ও প্যাঁচ লাগিয়ে দেয়।
কারও নিকট থেকে অন্যায় সুবিধা নেবে না, কিম্বা জুলুম করে তার জিনিস নেবে না। মুজুরের দিনের মুজুরী দিনে পরিশোধ করতে হবে- তা সকাল পর্যন্ত আটকে রাখবে না।

বধিরকে অভিশাপ দেবে না। অন্ধের পথে উঁচোট খাবার মত কিছু রাখবে না।
কারও নিন্দা করবে না। কোন মানুষের প্রাণের ক্ষতি হতে পারে এমনকিছু করবে না।
বিভিন্ন জাতের পশুর মধ্যে মিলন ঘটানো যাবে না। 
কাউকে ঠকাবে না। মাপে কিম্বা ওজনে কম করবে না।
নিজের কন্যাকে বেশ্যা বানানো যাবে না। এতে সে অপবিত্র হয়ে পড়বে এবং দেশ ব্যভিচারী হয়ে যাবে ও সকল কূ-কার্য্যে পূর্ণ হবে।

তোমার শত্রুর কোন পশুকে যদি অন্য কোথাও চলে যেতে দেখ তবে সেটা অবশ্যই তার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। তোমাকে ঘৃণা করে এমন কোন ব্যক্তির গাধাকে যদি বোঝার ভারে পড়ে যেতে দেখ তবে সেই ব্যক্তিকে সেই অবস্থায় রেখে চলে চলে যাবে না, তাকে অবশ্যই সাহায্য করতে হবে।
বলদ আর গাধা একসঙ্গে জুড়ে চাষ করবে না। 
শস্য মাড়াই করার সময়ে বলদের মুখে জালতি বেঁধ না। 
মৃতলোকের জন্যে শোক প্রকাশ করতে গিয়ে দেহের কোন স্থান ক্ষত করবে না। 
দেহে উল্কি আঁকবে না।

অন্যের প্রতি ঘৃণা পোষণ করবে না। অন্যের দোষ অবশ্যই দেখিয়ে দেবে যাতে শেষ বিচারে  নিজে দোষী সাব্যস্ত না হও। তোমাদের মধ্যে বাস করা অন্য জাতির লোকদের সঙ্গে দূর্ব্যাবহার করবে না। কারও বিরুদ্ধে মনের মধ্যে হিংসার ভাব পুষে রাখবে না। প্রত্যেক মানুষকে নিজেরমত করে ভালবাসবে।
কোন বিদেশীর সঙ্গে দূর্ব্যাবহার বা তার উপর কোন অত্যাচার কোরও না, কারণ মিসরে তোমরাও একদিন বিদেশী ছিলে। 
প্রাচীনকে উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান করবে এবং বয়স্ককে সমাদর করবে। 
প্রতিবেশীকে মহব্বত করবে এবং শত্রুকে ঘৃণা।

কোন বিধবা বা অনাথকে কষ্ট দিও না। যদি তা কর এবং সে আমার কাছে কাঁদে তবে নিশ্চয়ই আমি তার কান্নায় কান দেব। 
ঈমামেরা মাথা কামাবে না। তারা বেশ্যা, বিধবা বা স্বামী পরিত্যাক্তা কোন স্ত্রীলোককে বিবাহ করবে না।
মাথার দু‘পাশের চুল কাটা বা দাঁড়ির আগা ছাঁটবে না।
কোন স্ত্রীলোক যেন পুরুষের, কিম্বা কোন পুরুষ যেন স্ত্রীলোকের সাঁজ-পোশাক পরিধান না করে। 
সদ্য বিবাহিত কাউকে যুদ্ধে পাঠান যাবে না, কিম্বা তার উপর অন্য কোন কাজের বোঝা চাপিয়ে দেয়া যাবে না। স্ত্রীর সন্তুষ্টির জন্যে এক বৎসর পর্যন্ত এসব কাজ থেকে তাকে রেহাই দিতে হবে। 
এক পরিবার হয়ে বাস করার সময়ে যদি কোন এক ভাই পুত্রসন্তান না রেখে মারা যায়, তবে তার বিধবা স্ত্রী পরিবারের বাইরের কাউকে বিবাহ করতে পারবে না।

কাউকে কিছু ঋণ দিয়ে বন্ধক হিসেবে কোন জিনিষ নেবার জন্যে তার গৃহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করবে না। আর ঋণের বন্ধক হিসেবে কারও যাঁতা কিম্বা তার উপরের পাথরটা নেবে না।
কাউকে ধার দিয়ে মহাজনের মত করে তার কাছ থেকে সুদ নিও না। 
কারও গায়ের চাদর বন্ধক রাখলে সূর্য্য ডুবে যাবার আগেই তা ফিরিয়ে দিতে হবে, কারণ ওটাই তার গায়ে দেবার জন্যে একমাত্র কাপড়। আর যদি তা ফিরিয়ে দেয়া না হয়, যদি সে এজন্যে আমার কাছে কাঁদে, তবে আমি তার কান্নায় কান দেব।
ঈমামের কোন বংশধর দেহে খুঁত নিয়ে খাবার উৎসর্গ করতে বেদীর কাছে যেতে পারবে না বা খোদার উদ্দেশ্যে পোড়ান উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে পারবে না।
ঈমামের পরিবারের লোক ছাড়া আর কেউ উৎসর্গ করা পবিত্র জিনিস খেতে পারবে না। তবে ঈমামের ক্রয়কৃত বা গৃহে জন্ম গ্রহণ করেছে এমন দাস তা খেতে পারবে। তবে তার কন্যা যদি ঈমাম ছাড়া অন্য কাউকে বিবাহ করে, তবে সে তা খেতে পারবে না। তবে তার বিধবা বা স্বামী পরিত্যাক্তা কন্যারা তা খেতে পারবে। অন্য কেউ ভুল করে তা খেয়ে ফেললে ঈমামকে তার মূল্য দিয়ে দেবে। এই মূল্য হবে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে এক পঞ্চমাংশ বেশী।

প্রথম জন্মেছে এমন প্রতিটি পুরুষ সন্তান তা মানুষের হোক বা পশুর-প্রভুর বলে ধরা হবে। সাতদিন পর্যন্ত বাচ্চারা তার মায়ের কাছে থাকবে, তারপর আট দিনের দিন সেগুলো খোদাকে দিতে হবে। 
প্রথমজাত পশুকে কেউই খোদার উদ্দেশ্যে উৎসর্গের জন্যে দান করতে পারবে না, কেননা তা খোদারই। কিন্তু যদি এই পশু অশুচি হয়, তবে তার নিরুপিত মূল্যের এক পঞ্চমাংশ বেশী দিয়ে তাকে মুক্ত করা যাবে। আর মুক্ত না হলে, তা ঐ নিরুপিত মূল্যে বিক্রয় করা যাবে।
ত্বকচ্ছেদের নিয়ম পালন করতে হবে জন্মের অষ্টম দিবসে।

কেউ যদি বিশেষ মানত করে অর্থাৎ নিজেকে বা সন্তানকে খোদার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে, তবে সে নিরুপিত মূল্যের বিনিময়ে নিজেকে বা সন্তানকে মুক্ত করতে পারবে। এই নিরুপিত মূল্য হবে বিশ থেকে ষাট বৎসর বয়স পর্যন্ত পুরুষের ক্ষেত্রে ধর্মীয় শেকেলের পঞ্চাশ শেকেল, আর স্ত্রীর ক্ষেত্রে ত্রিশ শেকেল; আর পাঁচ বৎসর হতে বিশ বৎসর পর্যন্ত পুরুষের ক্ষেত্রে বিশ শেকেল ও স্ত্রীলোকের জন্যে দশ শেকেল; আর এক মাস থেকে পাঁচ বৎসর পর্যন্ত পুরুষের জন্যে পাঁচ শেকেল ও স্ত্রীর জন্যে তিন শেকেল রৌপ্য। কিন্তু কেউ যদি নিরুপিত মূল্য দিতে অক্ষম হয়, তবে সে ঈমামের নিকট আনীত হবে এবং ঈমাম তখন মানতকারী ব্যক্তির সংস্থান অনুসারে মূল্য নিরুপণ করবে।

কেউ যদি খোদার উদ্দেশ্যে নিজের গৃহ উৎসর্গ করে, তবে ঈমাম তার মূল্য নির্ধারণ করবে এবং ঐ ব্যক্তি যদি তার গৃহ মুক্ত করতে চায় তবে নিরুপিত মূল্যের চেয়ে এক পঞ্চমাংশ অধিক দিয়ে তা মুক্ত করতে পারবে। আর যদি কেউ তার অধিকৃত ক্ষেতের কোন অংশ খোদার উদ্দেশ্যে দান করে, তবে বপনীয় বীজানুসারে তার মূল্য নিরুপিত হবে; প্রতি এক ওমর যবের বীজের জন্যে পঞ্চাশ শেকেল করে রৌপ্য। আর যদি সে তা ছাড়িয়ে নিতে চায়, তবে নিরুপিত মূল্যের এক পঞ্চমাংশ বেশী দিয়েই তা মুক্ত করতে পারবে। কিন্তু যদি সে মুক্ত না করে ঐ ক্ষেত অন্য কারও কাছে বিক্রয় করে, তবে আর কখনও তা মুক্ত হবে না। যোবেল বৎসরে সেই ক্ষেত বর্জিত ভূমির ন্যায় খোদার উদ্দেশ্যে পবিত্র হবে, আর তাতে ঈমামেরই অধিকার হবে। 

মানত পূরণের জন্যে খোদার উদ্দেশ্যে উৎসর্গিত পশু হতে হবে নিখুঁত ও নির্দোষ। কেউ উৎসর্গের জন্যে দান করা বস্তুর পরিবর্তন বা অন্যথা করবে না, মন্দের পরিবর্তে ভাল কিম্বা ভালর পরিবর্তে মন্দ দেবে না; যদি কোন উৎসর্গের দান পরিবর্তন করতেই হয়, তবে তা এবং তার বিনিময় উভয়ই পবিত্র হতে হবে। আর যদি খোদার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা যায় না এমন পশু কেউ দান করে, তবে সে ঐ পশুকে ঈমামের সম্মুখে উপস্থিত করবে। ঐ পশু ভাল কিম্বা মন্দ হোক, ঈমাম তার মূল্য নির্ধারণ করবে। কিন্তু যদি মালিক কোন প্রকারে তা মুক্ত করতে চায়, তবে সে নিরুপিত মূল্যের এক পঞ্চমাংশ বেশী দেবে।

মানত পূরণ করতে দেরী কোরও না। বেশ্যার উপার্জিত অর্থ মানত পূরণের জন্যে খোদারগৃহে আনা চলবে না। কারণ এরকম পুরুষ ও স্ত্রীলোক উভয়ই ঘৃণ্য।
ফসল কাটবার সময় তোমরা ক্ষেতের কিনারার ফসল কাটবে না এবং ক্ষেতে যা পড়ে থাকবে তা-ও কুড়িয়ে নেবে না। গরীব ও ভিন্ন জাতির লোকদের জন্যে তা রেখে দেবে। 
কারও আঙ্গুর বা অন্য কোন ফলের বাগানে গিয়ে তোমরা খুশী মত খেতে পারবে, কিন্তু তা নিয়ে যাওয়ার জন্যে কোন কিছুতে তুলে রাখা চলবে না।
রোপিত কোন বৃক্ষে ফল ধরলে পরপর তিন বৎসর তা তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ। আর চতুর্থ বৎসরের ফল খোদার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করবে। এতে তোমাদের জন্যে প্রচুর ফল উৎপন্ন হবে।

উৎপন্ন শস্যের এক দশমাংশ খোদার- তা জমির ফসলই হোক কিম্বা গাছের ফলই হোক। তা খোদার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখতে হবে। কেউ যদি এই অংশ ছাড়িয়ে নিতে চায় তবে তার প্রকৃত মূল্যের সঙ্গে তাকে আরও এক পঞ্চমাংশ বেশী দিতে হবে। পশুপালেরও এক দশমাংশ, অর্থাৎ রাখালের লাঠির নীচ দিয়ে চলে যাওয়া প্রতিটি দশম পশু হবে খোদার। এই পশুগুলো ভাল কি মন্দ তা দেখা চলবে না। কিন্তু যদি কেউ তার পরিবর্তন করে তবে, তা ও তার বিনিময় উভয়ই পবিত্র হতে হবে; কিন্তু তা মুক্ত করা যাবে না।

প্রত্যেক তৃতীয় বৎসরে সব ফসলের এক দশমাংশ আদায় শেষ হলে সেগুলো তোমরা লেবীয়, মুসাফির, অনাথ এবং বিধবাদের দেবে। তারপর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে বলবে, ‘আমি আমার আয় থেকে তোমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা অংশটা তোমার আদেশ অনুসারে লোকদের দিয়েছি। তোমার আদেশ আমি অমান্য করিনি কিম্বা সেগুলোর একটাও আমি ভুলে যাইনি, তার কোনকিছু আমি খাইনি, কিম্বা অশূচি অবস্থায় তা গৃহ থেকে বের করিনি, কিম্বা তা থেকে কোন অংশ মৃতলোকদের উদ্দেশ্যে দান করিনি।’

পরপর ছয় বৎসর তোমরা ক্ষেতে চাষ করবে এবং ফসল কাটবে, সপ্তম বৎসরে জমি চাষও করবে না বুনবেও না; এই বৎসর ভূমির বিশ্রামার্থক বিশ্রামকাল। ঐ সময় জমিতে এমনি যা জন্মাবে তোমাদের মধ্যেকার গরীব লোকেরা এবং বুনোপশুরা তা থেকে খাবার পাবে। বিশ্রাম বৎসরে তোমাদের খাদ্যের চিন্তা করতে হবে না। কেননা ষষ্ঠ বৎসরে আমার আশীর্বাদে তিন গুন শস্য উৎপন্ন হবে। যা তোমরা সংগ্রহ করে রাখবে সপ্তম বৎসর তথা অষ্টম বৎসরের ফসল উৎপন্নের পূর্ব পর্যন্ত ভক্ষণের নিমিত্ত।

আর তোমরা সপ্তম বিশ্রাম বৎসরের পরবর্তী বৎসর তথা ৫০তম বৎসরকে পবিত্র করবে, কেননা তা তোমাদের জন্যে যোবেল (তূরীধ্বনির মহোৎসব) বৎসর। তোমরা সমস্ত দেশ তথা সকল নিবাসীর কাছে মুক্তি ঘোষণা করবে এবং তোমরা প্রত্যেকে আপন অধিকারে, আপন গোষ্ঠীর কাছে ফিরে যাবে। এই বৎসর তোমরা ক্ষেতে বীজ বুনবে না, স্বত: উৎপন্ন শস্য ছেদনও করবে না, কোন ফলও সংগ্রহ করবে না; কেননা তা যোবেল। তবে তোমরা ক্ষেতে উৎপন্ন শস্যাদি ভক্ষণ করতে পারবে।

বিবাহের পর যদি কেউ স্ত্রীর মধ্যে কোন ঙ্খলন লক্ষ্য করে তবে তার হাতে তালাকনামা  দিয়ে বিদায় করে দেবে। অত:পর স্ত্রীলোকটি যদি অপর কাউকে বিবাহ করে এবং তার দ্বিতীয় স্বামীও যদি পরে তাকে তালাক দেয়, কিম্বা সেই স্বামী যদি মারা যায়, তবে তার প্রথম স্বামী তাকে আর বিবাহ করতে পারবে না, কারণ সে অশুচি হয়ে গেছে।

যদি কোন স্ত্রীলোক গর্ভবতী হয় এবং সে সন্তান প্রসব করে, তবে সে মাসিকের সময়ের মতই সাত দিন অশুচি থাকবে। পরে অষ্টম দিবসে সে নিজেকে শুচি করবে। এতদুদ্দেশ্যে সে এক জোড়া ঘুঘু কিম্বা এক জোড়া কপোত শাবক নিয়ে সমাগম তাম্বুর দ্বারে ঈমামের নিকটে আসবে; ঈমাম তার একটা পাপার্থক বলি ও অন্যটা হোমবলিরূপে উৎসর্গ করবে। তারপর সে ঐ স্ত্রীলোকের অশৌচ প্রযুক্ত খোদার সম্মুখে তার জন্যে প্রায়শ্চিত্ত করবে। অশৌচ হতে শুচি করণে সকলের জন্যে এই ব্যবস্থা।

মাসিকের অশুচি অবস্থার সময় কোন স্ত্রীলোকের সাথে দৈহিক মিলন করবে না। যদি কোন পুরুষ এ রকম স্ত্রীলোকের সঙ্গে মিলিত হয় এবং মাসিকের রক্ত তার গায়ে লাগে তবে সে সাতদিন পর্যন্ত অশুচি থাকবে। আর যে তাকে স্পর্শ করবে সে সন্ধ্যে পর্যন্ত অশুচি থাকবে।
খাবার বাঁধা নেই এমন কোন মৃত পশুর দেহ কেউ স্পর্শ করলে সে সন্ধ্যে পর্যন্ত অশুচি থাকবে।

চর্মরোগ দেখা দিলে তোমাদের সতর্ক হতে হবে এবং ঈমামেরা যে নির্দেশ দেবে তা যত্নের সঙ্গে পালন করতে হবে। কারও চর্মরোগ দেখা দিলে সে ছিন্নবস্ত্র পরিধান করবে ও তার মস্তক মুক্তকেশ থাকবে। আর সে নিজ ওষ্ঠ বস্ত্র দ্বারা আবৃত করে নিজেকে অশুচি বলে প্রচার করবে যতদিন তার গায়ে ঘা থাকবে এবং শিবিরের বাইরে সে একাকী বাস করবে।
খোদা পবিত্র বলে তোমাদেরও পবিত্র হতে হবে। 

যদি কারও স্ত্রী কূপথে যায় এবং স্বামীর প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে অন্য পুরুষের সঙ্গে ব্যভিচার করে অসতী হয়, আর তা যদি স্বামীর অজানা থাকে এবং তা গোপন থেকে যায়- কারণ তার বিরুদ্ধে কোন স্বাক্ষী নেই এবং সেই কাজে সে ধরাও পড়েনি- কিন্তু তবুও যদি কোন কারণে স্ত্রীর উপর সন্দেহ সৃষ্টি হয় তবে সে তাকে ঈমামের কাছে নিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে তার স্ত্রীর হয়ে উৎসর্গ করার জন্যে তাকে এক ওমর যবের ময়দাও সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। সে এর উপর কোন তেল বা লোবান দেবে না। 
ঈমাম সেই স্ত্রীলোককে বেদীর সম্মুখে দাঁড় করাবে। তারপর সে একটি মাটির পাত্রে কিছু পবিত্র পানি নেবে এবং আবাস তাম্বুর মেঝে থেকে কিছু ধূলো নিয়ে সেই পানির মধ্যে দেবে। তারপর ঈমাম তার চুল খুলে দিয়ে সন্দেহের দরুণ আনা উৎসর্গের জিনিষ তার হাতে দেবে। ঈমাম তার নিজের কাছে রাখবে আভিশাপের তিতা পানি। তারপর সে স্ত্রীলোকটিকে বলবে-‘বিবাহের পর যদি তুমি ব্যভিচার করে না থাক, যদি তুমি কূ-পথে গিয়ে অসতী না হয়ে থাক তবে অভিশাপ আনা এই পানি যেন তোমার কোন ক্ষতি না করে। কিন্তু যদি তুমি কূ-পথে গিয়ে, ব্যভিচার করে অসতী হয়ে থাক’ -এ পর্যন্ত বলার পর ঈমাম স্ত্রীলোকটির উপর একটা অভিশাপ ডেকে আনবে। উত্তরে স্ত্রীলোকটি বলবে, ‘তাই হোক।’

মহাঈমাম হারুণের পোষাক
ঈমাম তখন ঐ অভিশাপ চামড়ার উপর লিখে, লেখাটা সেই তিতা পানিতে ফেলবে। তারপর সে স্ত্রীলোকটির হাত থেকে উৎসর্গের জিনিস নিয়ে তা বেদীর সামনে দুলিয়ে তা থেকে এক মুঠো বেদীর উপর পুড়িয়ে দেবে। তারপর সে সেই তিতা পানি তাকে খেতে দেবে। স্ত্রীলোকটি অসতী হলে এই পানি তার সন্তানধারণ ক্ষমতা নষ্ট করবে বা তার উপর ডেকে আনা অভিশাপ কার্যকরী করবে।
গ). ধর্মীয় আচার-বিধি ও উৎসবাদি: 
আমার নির্দেশনা মতই আবাস তাম্বু ও সব আসবাবপত্র তৈরী করাবে।
মাটি বা পাথর দিয়ে বেদী তৈরী করবে, আর তার উপর তোমাদের উৎসর্গের পশু কোরবাণী করবে। পাথর দিয়ে আমার উদ্দেশ্যে কোন বেদী তৈরী করতে গিয়ে সেই পাথরগুলো কাটবে না। কারণ, তার উপর যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে গিয়ে তোমরা তা অপবিত্র করে ফেলবে। বেদী এমনভাবে তৈরী করবে যাতে তার উপর সিঁড়ি দিয়ে উঠতে না হয়, কারণ সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গেলে তোমাদের উলঙ্গতা প্রকাশ পাবে।

হারুণ ও তার পুত্ররা ঈমাম হিসেবে আমার সেবা করবে। সম্মান ও সাঁজের উদ্দেশ্যে তাদের জন্যে পবিত্র পোশাক তৈরী করাবে। হারুণের পোশাকের মধ্যে থাকবে বুক ঢাকন, এফোদ, বাইরের জামা, ভিতরের জামা, পাগড়ী ও কোমর বাঁধনি। আর বুক ঢাকনের ভাঁজের মধ্যে রাখবে উরীম ও তুম্মীম।
মহাঈমাম হারুণের পোষাক
হারুণের পুত্রদের জন্যে জামা, কোমর বাঁধনি ও মাথার টুপি এবং কোমর থেকে উরু পর্যন্ত ঢাকার জন্যে মসীনার কাপড়ের জাঙ্গিয়া তৈরী করাবে। পরে তাদেরকে অভিষেক করে ঈমাম পদে বহাল করবে। আমার উদ্দেশ্যে তাদেরকে আলাদা করার জন্যে তুমি একটা ষাঁড় ও দু‘টো ভেড়া নেবে। পরে ষাঁড়টাকে তুমি মিলন তাম্বুর সম্মুখে আনবে, আর হারুণ ও তার পুত্ররা ওটার মাথায় তাদের হাত রাখবে এবং তুমি ষাঁড়টাকে জবেহ করবে। পরে কিছুটা রক্ত নিয়ে তুমি বেদীর শিংগুলোতে লাগিয়ে দেবে, আর বাকী রক্ত বেদীর পাদদেশে ঢেলে দেবে। তারপর নির্ধারিত অংশ বেদীর উপর, আর বাকী অংশ ছাউনি থেকে দূরে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলবে। এই হল পাপ উৎসর্গ।

একই ভাবে ভেড়া দু‘টোর একটা নিয়ে জবেহ করবে এবং তার রক্ত নিয়ে বেদীর চার পাশের গায়ে ছিঁটিয়ে দেবে। পরে ভেড়াটা কেটে টুকরো টুকরো করে তার পা এবং পেটের ভিতরকার অংশগুলো ধূয়ে নিয়ে মাথা ও অন্যান্য টুকরোগুলোর সঙ্গে বেদীর উপর রাখবে পোড়ান উৎসর্গ হিসেবে।

পরে অন্য ভেড়াটাও একইভাবে জবেহ করবে এবং তার রক্ত নিয়ে হারুণ ও তার পুত্রদের ডান কানের লতিতে, ডান হাত ও ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে লাগিয়ে দেবে। আর কিছু রক্ত নিয়ে বেদীর চারপাশে ছিঁটিয়ে দেবে। তারপর কিছু অভিষেক তেল ও বেদী থেকে কিছু রক্ত নিয়ে হারুণ ও তার পুত্রদের শরীরে এবং পোশাকে ছিটিয়ে দেবে এতে পোশাকসহ তাদেরকে আমার উদ্দেশ্যে পৃথক করে নেয়া হবে।

তারপর ঐ ভেড়ার চর্বি, লেজ, মেটের উর্দ্ধাংশ, বৃক্ক ও ডান দিকের উরু, দর্শণ রুটির টেবিলে রাখা খামিহীন রুটির টুকরী থেকে একটা রুটি, একটা তেলে ময়ান দেয়া পিঠা নিয়ে সেগুলি হারুণ ও তার পুত্রদের হাতে দেবে আর তারা তা দোলাবে। এটা হল দোলন উৎসর্গ। তারপর সেগুলি বেদীর উপরস্থিত পোড়ান উৎসর্গের সাথে পুড়িয়ে ফেলবে।

পাঁচ কেজি গন্ধরস, আড়াই কেজি সুগন্ধি দারুচিনি, আড়াই কেজি বচ, আর পাঁচ কেজি দারুচিনি ফুলের কুঁড়ি, সাড়ে তিন লিটার জলপাইয়ের তেল প্রভৃতি সুগন্ধি মসলা একসঙ্গে মিশিয়ে পবিত্র অভিষেক তেল তৈরী করবে। আর নির্ভেজাল গুগগুলু, মেথী, কুন্দুরু ও খাঁটি লোবান সমান পরিমানে মিশিয়ে সুগন্ধি ধূপ তৈরী করবে। এতে পরিমান মত লবনও দেবে।
দীপবৃক্ষের প্রদীপগুলো নিয়মিত সন্ধ্যা হতে সকাল পর্যন্ত জ্বালিয়ে রাখার জন্যে ছেঁচা জলপাইয়ের খাঁটি তেল ব্যাবহার করবে।’

দর্শণ রুটির টেবিল।
প্রতিটি দুই ওমর সুক্ষ্ম সূজি দ্বারা প্রস্তুত বারখানি রুটি দর্শণ রুটির টেবিলে দুই পংক্তিতে সাজিয়ে রাখবে। প্রত্যেক পংক্তির উপরে বিশুদ্ধ কুন্দুরু দেবে; তা সেই রুটির স্মরণার্থক অংশ বলে খোদার উদ্দেশ্যে অগ্নিকৃত উপহার হবে। ঈমাম নিয়ত: প্রতি বিশ্রামবারে খোদার সম্মুখে দর্শণ রুটির টেবিলে তা সাজিয়ে রাখবে। এই রুটি হারুণ ও তার সন্তানগণের হবে। আর তারা কোন পবিত্রস্থানে তা ভোজন করবে। 

রূপা দিয়ে দু‘টো তুরী তৈরী করবে। ইস্রায়েলীদেরকে সমবেত করার জন্যে এবং বিভিন্ন দলের যাত্রা শুরু করবার জন্যে তা বাজাবে। যখন দু‘টো তুরীই বাজান হবে তখন ইস্রায়েলীরা সকলে মিলন-তাম্বুর দ্বারদেশে এসে সমবেত হবে। যখন একটা তুরী বাজান হবে তখন ইস্রায়েলের বিভিন্ন বংশের নেতারা তোমার সামনে এসে একত্রিত হবে। এই তুরী বাজাবে হারুণের পুত্রেরা, অর্থাৎ ঈমামেরা। 

লোকগণনার সময় প্রত্যেককেই তার জীবন-মূল্য দিতে হবে। এই জীবন-মূল্য হবে দশ গ্রাম ওজনের ধর্মীয় শেখেলের আধা শেখেল রূপা যা ধনী, গরীব সকলের জন্যে সমান। কেউ এর বেশী বা কম দিতে পারবে না। এসব জীবন-মূল্যের রূপা মিলন-তাম্বুর কাজে ব্যাবহার করবে।

মিলন-তাম্বুকে বেষ্টন করে ইস্রায়েলীরা ছাউনি ফেলবে। 
লেবী-গোষ্ঠিকে গণনা করা যাবে না, কিম্বা লোকগণনার সময় অন্যান্য ইস্রায়েলীদের মধ্যে তাদের ধরাও চলবে না। লেবীরা কেবলমাত্র তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে। তাদের দায়িত্ব হবে আবাস তাম্বু এবং তার সমস্ত সাঁজ-সরঞ্জাম বয়ে নেয়া এবং তার রক্ষণাবেক্ষণ করা। 
মিলন-তাম্বুকে বেষ্টন করে কিছু দূরে ইস্রায়েলীরা তাদের ছাউনি ফেলবে। 
বৎসরে তিনবার তোমরা সমস্ত পুরুষ জাতি খোদার সাক্ষাতে উপস্থিত হবে।
আমার ধর্মধামের সমাদর করবে।
তোমরা বৎসরে আমার উদ্দেশ্যে এইসব উৎসব পালন করবে। 
ঈদুল ফেসাখ: নিস্তার পর্বের এই উৎসব হবে আমার আদেশ অনুযায়ী, নিরুপিত সময়ে, বৎসরের প্রথম মাস অর্থাৎ আবীর মাসের চতুর্দশ দিবসের সন্ধ্যাবেলায়। 
ঈদুল মাত‘ছ: ঈদুল ফেসাখের পরবর্তী সাতদিন হবে খামিহীন রুটির উৎসব। প্রথম দিবস এবং ৭ম দিবসে পবিত্র সভা অনুষ্ঠিত হবে এবং ঐ দিন তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কোন কাজ করবে না।   
নবান্ন বা শস্যচ্ছেদনের উৎসব: ক্ষেতে বোনা আশুপক্ক শস্যের অগ্রিমাংশ তোমরা খোদার গৃহে আনবে। আর ঈমাম তা বিশ্রামবারের পরদিন দোলন উৎসর্গ করবে, যেন তা তোমাদের জন্যে গ্রাহ্য হয়।

আর যেদিন তোমরা শস্যের আঁটি দোলন উৎসর্গ করবে, সেদিন খোদার উদ্দেশ্যে হোমার্থে এক বর্ষীয় এক নির্দোষ মেষশাবক উৎসর্গ করবে। তার ভক্ষ্য নৈবদ্য হবে দুই ওমর (এক ঐফার দুই দশমাংশ) লোবান বা তৈল মিশ্রিত সূক্ষ্ম সূজি, যা খোদার উদ্দেশ্যে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত উপহার হবে এবং তার পেয় নৈবদ্য হবে এক হিন দ্রাক্ষারসের এক চতুর্থাংশ। আর যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা খোদার উদ্দেশ্যে এই উপহার না আনবে, সেইদিন পর্যন্ত তোমরা তোমরা ঐ শস্যের কোনকিছু ভক্ষণ করবে না। 

ঈদুল খেমীশশীম: নবান্ন উৎসবের পর ৫০তম দিবসে তোমরা খোদার উদ্দেশ্যে নুতন ভক্ষ্যের উপহার নিবেদন করবে। এদিন তোমরা আপন আপন নিবাস হতে প্রতিটি এক ওমরের দু‘খানা রুটি আনবে। এই রুটি তৈরী হবে সুক্ষ্ম সূজি দিয়ে এবং খামী দ্বারা। তা খোদার উদ্দেশ্যে আশু পক্কাংশ হবে। আর তোমরা সেই রুটির সাথে হোমার্থে এক বর্ষীয় নির্দোষ সাত মেষ শাবক, এক যুব বৃষ ও দুই মেষ উৎসর্গ করবে এবং তৎসম্বন্ধীয় ভক্ষ্য ও পেয় নৈবদ্যের সাথে খোদার উদ্দেশ্যে সৌরাভার্থক অগ্নিকৃত উপহার হবে।

পরে তোমরা পাপার্থক উৎসর্গের জন্যে এক ছাগ বৎস ও মঙ্গলার্থক উৎসর্গের জন্যে এক বর্ষীয় দুই মেষশাবক উৎসর্গ করবে। আর ঈমাম ঐ আশু পক্কাংশের রুটি ও দুই মেষশাবকের সাথে খোদার সম্মুখে দোলনীয় নৈবদ্যরূপে তা দোলাবে; তা ঈমামের জন্যে খোদার উদ্দেশ্যে পবিত্র হবে। আর সেদিন তোমরা তোমাদের পবিত্র সভার ঘোষণা করবে এবং সেদিন তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কাজ করবে না।
সপ্তম মাসের প্রথম দিনে তোমাদের বিশ্রাম পর্ব এবং তূরীধ্বনিসহ স্মরনার্থক পবিত্র সভা হবে। ঐ দিন তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কাজ করবে না, কিন্তু খোদার উদ্দেশ্যে অগ্নিকৃত উপহার উৎসর্গ করবে।
ঈদুল ইয়োম কিপ্পুর: সপ্তম মাসের দশম দিন হবে তোমাদের প্রায়শ্চিত্ত দিন। ইস্রায়েল সন্তানগণ তাদের সমস্ত পাপ প্রযুক্ত বৎসরের এই দিন প্রায়শ্চিত্ত করে শুচি হবে। এদিন তোমরা রোজা রাখবে। আর যে রোজা রাখবে না সে আপন সামাজ হতে উচ্ছিন্ন হবে। এদিন তোমাদের পবিত্র সভা হবে এবং দিনটি হবে বিশ্রামবার অর্থাৎ তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কাজ করবে না। নবম দিবস সন্ধ্যা হতে পরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়টাই এই বিশ্রামবার বলে গণ্য হবে।

ঈদুল সুক্ক: সপ্তম মাসের পঞ্চদশ দিবসাবধি তোমরা কুটিরবাস পর্ব পালন করবে, যেন তামাদের অনাগত সন্তানেরা জানতে পারে যে আমি তোমাদেরকে মিসর থেকে বের করে এনে কুটিরে বাস করিয়েছিলাম। এই পর্বের প্রথম ও অষ্টম দিবসে পবিত্র সভা হবে এবং দিন দু‘টি বিশ্রামবার হবে। আর প্রতিদিনই তোমরা খোদার উদ্দেশ্যে অগ্নিকৃত উপহার উৎসর্গ করবে। 
আবার ঐ মাসের পঞ্চদশ দিবসে ভূমির ফল সংগ্রহ করলে তোমরা পরবর্তী সাতদিন ফল সঞ্চয়ের উৎসব পালন কোরও। এই পর্বেরও প্রথম ও অষ্টম দিবস বিশ্রামবার হিসেবে গণ্য হবে।

এই সকল তোমাদের জন্যে খোদার নির্দিষ্ট করা পর্ব। খোদার বিশ্রাম দিন হতে, খোদার উদ্দেশ্যে তোমাদের দান হতে, তোমাদের সমস্ত মানত হতে ও তোমাদের স্ব-ইচ্ছায় দত্ত সমস্ত নৈবদ্য হতে এই সকল ভিন্ন।

এভাবে আল্লাহ মূসাকে ব্যবস্থা দিলেন। যা ছিল মানুষের জন্যে জ্ঞানবর্তিকা, হেদায়েত ও রহমতস্বরূপ। 

সমাপ্ত।
ছবি: biblesearchers, mudpreacher, cogtoronto.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Moses: কোরাণিক ক্যানভাসে নবী মূসা।

Abu Hena Mostafa Kamal  01 May, 2017 মি সরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ফেরাউন। হঠাৎ করে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। কিন্তু তিনি কোন উত্তরাধিকারী ন...