মদিনায় আবু আমের নামক একব্যক্তি খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বী ছিলেন। এই ব্যক্তির পুত্র হলেন বিখ্যাত সাহাবী হানযালা, যার মৃতদেহ ফেরেস্তারা গোসল দিয়েছিলেন। অথচ তার পিতা প্রচলিত খ্রীষ্টবাদের উপর অবিচল ছিলেন।
মুহম্মদ যখন হিযরত করে মদিনায় আগমন করেন, তখন আমের তার সমীপে উপস্থিত হয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন। মুহম্মদ তার অভিযোগের যথার্থ জবাব দিয়েছিলেন। কিন্তু আ‘মের তাতে সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের দু‘জনের মধ্যে যে মিথ্যুক সে যেন অভিশপ্ত ও আত্মীয়-স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মৃত্যুবরণ করে।’
আর প্রত্যাবর্তণের সময় বলেছিলেন, ‘এখন থেকে আমি আপনার প্রতিপক্ষকে সর্বদা সাহায্য করে যাব।’
আমের শুরু থেকেই ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। অতঃপর একসময় তিনি রোম সম্রাটকে মদিনায় অভিযান চালিয়ে মুসলমানদেরকে উৎখাত করতে প্ররোচিত করলেন। তারপর তিনি মদিনায় পরিচিত মুনাফেকদের কাছে এই পত্র দিলেন-‘আমি রোম সম্রাট কর্তৃক মদিনা অভিযানের চেষ্টায় আছি। কিন্তু যথাসময়ে সম্রাটের সাহায্য হয় এমন কোন সম্মিলিত শক্তি তোমাদের থাকা চাই।
--সুতরাং তোমরা মদিনায় মসজিদের নাম দিয়ে একটি গৃহ নির্মাণ কর। অতঃপর সেই গৃহে নিজেদের সংগঠিত কর এবং যতটুকু সম্ভব যুদ্ধের সাজসরঞ্জাম সেখানে সংগ্রহ করে রাখ এবং পরস্পর আলোচনা ও পরামর্শ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইতিকর্তব্য ঠিক কর।’
যখন হুনায়েনের যুদ্ধ হল, তখন আমের মুসলমানদের বিপক্ষে যুদ্ধে অংশ নিলেন। পরবর্তীতে হাওয়াজিনের মত শক্তিশালী গোত্রও যখন মুসলমানদের কাছে পরাজিত হল তখন তিনি নিরাশ হয়ে সিরিয়ায় চলে গেলেন। অতঃপর সেখানেই তিনি আত্মীয়-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
এদিকে আমেরের ঐ পত্রের ভিত্তিতে বারজন মুনাফেক মদিনার কোবা পল্লীতে যেখানে মুহম্মদ হিজরত করে এসে অবস্থান নিয়েছিলেন ও একটি মসজিদ তৈরী করেছিলেন- সেখানে আরেকটি মসজিদের ভিত্তি রাখল। এটিকে কোরআন মসজিদে যেরার (Masjid-e-Zarar) নামে অভিহিত করেছে। এরপর তারা মুসলমানদের প্রতারিত করতে সিদ্ধান্ত নিল যে, স্বয়ং মুহম্মদ এখানে এক ওয়াক্ত নামাজ পড়াবেন, যাতে মুসলমানদের মনে কোনরকম সন্দেহ না আসে।
কোবা মসজিদ। |
মুহম্মদ এসময় তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাই তিনি বললেন, ‘এখন সফরের প্রস্তুতিতে আছি। ফিরে এসে নামাজ আদায় করব।’
তাবুক থেকে ফেরার পথে মুহম্মদ যখন মদিনার নিকটবর্তী একস্থানে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তখন এই আয়াত নাযিল হল-আর কিছু কিছু তোমার আশেপাশের মুনাফেক এবং কিছু লোক মদিনাবাসী কঠোর মুনাফেকীতে অনড়। তুমি তাদের জান না; আমি তাদের জানি। আমি তাদেরকে শাস্তি দেব দু‘বার, তারপর তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হবে কঠিন শাস্তির দিকে।(৯:১০১)
এই খালি জায়গাই 'মসজিদে জেরার' পাশে মসজিদে জুম্মা। |
উপরের আয়াতগুলো দ্বারা আল্লাহ মুনাফেকদের মসজিদ নির্মাণের গোপন ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দিলেন। তখন মুহম্মদ কতিপয় সাহাবীকে হুকুম দিলেন-‘এখুনি কথিত মসজিদটি ধ্বংস কর এবং তাতে আগুন লাগিয়ে দাও।’
আদেশ মত তারা গিয়ে মসজিদটি মাটির সাথে মিশিয়ে দিলেন।
রমজান মাস। মুহম্মদ সেনাবাহিনী নিয়ে মদিনায় ফিরে এলেন। মদিনায় পৌঁছে তিনি দেখলেন মসজিদের জায়গাটি ফাঁকা পড়ে আছে। তিনি আসেম বিন আ‘দীকে সেখানে গৃহ নির্মাণের অনুমতি দিলেন। কিন্তু তিনি বিনীতভাবে বললেন, ‘হে রসূলুল্লাহ! অভিশপ্ত স্থানে গৃহ নির্মাণ আমার পছন্দ নয়।’
সেই থেকে অদ্যাবধি জায়গাটি খালি পড়ে আছে।
সমাপ্ত।
ছবি: Internet.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন