১৭ মার্চ, ২০১২

Dead Sea: সমকামীদের পার্থিব শাস্তির এক প্রকৃষ্ট নিদর্শণ।

মৃত সাগর (Dead Sea)- এর আরবী নাম ‘আল-বহর আল-মওউত'। এর অবশ্য আরো নাম রয়েছে, যেমন- লুত সাগর, লবন সাগর ইত্যাদি। লুত সাগর নামকরণ মূলত: নবী ইব্রাহিমের ভাতিজা ও হারুণ পুত্র নবী লুতের নামকরণে। যা হোক, এটাই পৃথিবীর একমাত্র সাগর যা প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট নয়। এর সৃষ্টি নবী ইব্রাহিমের সময়ে খোদায়ী গজবে, ফেরেস্তা জিব্রাইল ও আজ্রাইলের পদাঘাতে। 

লুত সাগরে সহজেই পানির উপর ভেসে থাকা যায়, কারণ অতিরিক্ত খনিজ লবণের উপন্থিতি এর পানির ঘনত্ব অস্বাভাবিক করেছে, অন্যান্য সাগরের চেয়ে ৮.৬ গুণ বেশী- ১.২ কেজি/ লিটার। আর এই মাত্রতিরোক্ত লবণাক্ততার কারণে এর পানিতে যেমন কোন জীবন্ত প্রানী বেঁচে থাকতে পারে না, তেমনি এর আশেপাশে পশুরাও জীবনধারণ করতে সক্ষম নয় এ পানি সম্পূর্ণ পানের অনুপোযুক্ত হওয়ায়। আর এ কারণেই এর নাম মৃত সাগর। এটা নিদর্শণ মানুষের জন্যে-পৃথিবীর বুকে সর্বাধিক ঘৃণিত পাপী- সডোমীদের কবরস্থান হিসেবে

এই মৃত সাগরের পূর্বে জর্দান এবং পশ্চিমে ইস্রায়েল ও প্যালেস্টাইন। আর এর পৃষ্ঠ ও তীর সমুদ্র সমতলের চেয়ে ৪২৩ মিটার গভীরে এবং এটাই হচ্ছে পৃথিবী পৃষ্টের সর্বাপেক্ষা নীচু এলাকা। এই সাগরের গভীরতা ৩৭৭ মিটার এবং এটি খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ। ফেরাউনের আমলে এই সাগরের লবণ দিয়ে মিশরীয়রা মমীর মলম তৈরী করত। আর আহরিত পটাশ সার হিসেবে এবং লবন ও অন্যান্য খনিজ প্রসাধনী ও হারবাল তৈরীর কাজে সেই আদি আমল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। 

মৃত এই সাগরটি ৬৭ কিমি লম্বা এবং এর সবচেয়ে প্রশস্ত স্থানটি ১৮ কিমি। It lies in the Jordan Rift Valley, and its main tributary is the Jordan River. এই সাগরটি সৃষ্টির আগেরদিন পর্যন্ত সেখানে ৫টি বড় বড় শহর ছিল এবং সেগুলোর অধিবাসীরা নিরাপদে সেখানে বসবাস করছিল। ঐ শহরগুলি হল সদোম, ঘমোরা, অদমা, সবোয়িম ও সয়োর আর সয়োর থেকেই কখনও কখনও একে সয়োর সাগরও বলা হয়ে থাকে। 

মৃত সাগরের তীরগুলো সমতল নয়। পুরো সমুদ্র তীর জুড়ে ভূমির উঁচু-নীচু ঢেউ খেলানো বা এ্যাবড়ো-থেবড়ো অবস্থা লক্ষ্য করা যায়। এমন নাটকীয় ভূমিতলের উত্থান-পতন কিন্তু ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট নয়, the angels forced the cities to down that makes the surrounding place of the cities to rise. The clifs Lisan Peninsula and Mount Sadom on the southwest side of the lake is the results of heavy falls of salphor and other salts as rain on them during its creation. নাস্তিকদের কেউ হয়ত: এই সাগর উৎপত্তির ভূ-তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা খুঁজছেন, খুঁজতে থাকুন আমাদেরকে মিথ্যে প্রমাণ করার। কিন্তু আমরা দু:খিত যে, প্রমাণ ছাড়া আমরা তথা কথিত নন সেন্সিক হাইপো থিসিসে বিশ্বাসী নই। এ সাগরের উৎপত্তি ইব্রাহিমের পূর্বে- কোন বিজ্ঞানী কি তা প্রমাণ করতে পেরেছেন? তথাপি কিছু স্টুপিড উইকিপিডিয়ার পাতা ভরেছেন কিছু স্টুপিডিয় হাইপোথিসিস দিয়ে।যাহোক, যা বলছিলাম, এ সাগর পৃথিবীর একমাত্র সাগর, যার সৃষ্টি অপ্রাকৃতিকভাবে- সরাসরি খোদায়ী হস্তক্ষেপে। 

মৃতসাগর।
অদ্ভূত এই সাগরটির উৎপত্তির ইতিহাস জানতে এবার আমরা মূল কাহিনীতে ফিরি-

জর্দান নদীর উপত্যকাটি ছিল খুবই উর্বর। এখানে প্রচুর শস্য উৎপন্ন হত। সুতরাং লোকেরা সেখানে বসবাস শুরু করে এবং এভাবেই ধীরে ধীরে সেখানে বড় ছোট পাঁচটি নগর গড়ে ওঠে যাদের মধ্যে সদোম ও ঘমোরা ছিল অন্যতম। 

সম্পদ নগরবাসীর জীবন নিরাপত্তাহীন করে দিল। প্রায়শ: পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো থেকে দস্যূরা এসে হানা দিয়ে লুটপাট করে নিয়ে যেত সব। এইসব অবিবেচক (কারণ তারা আম, ছালা দু’টোই লুটে নিত) লুটপাটকারী দস্যূরা কেবল লুটপাট করেই ক্ষান্ত ছিল না, তারা অনেক সময় পুরুষদেরকে হত্যা করে নারী ও শিশুদেরকে দাস-দাসী হিসেবে সাথে করে নিয়ে যেত। সুতরাং সেখানকার অধিবাসীগণ নিজেদের পরিবার ও সম্পদ রক্ষায় সবসময় চরম আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করত। 

ইবলিস বা শয়তান যাই বলা হোক না কেন, সে দেখল দোযখের ফসল ঘরে তোলার সুন্দর একটা ক্ষেত তৈরী। এমতাবস্থায় সে অধিবাসীদেরকে ছোট্ট একটা উপদেশ দিল। সে বলেছিল, “তোমরা যদি সডোমিতে (sodomy- anal sex) লিপ্ত হও তবে তোমাদের পরিবার ও সম্পদ সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে।”

চরম ঘৃণ্য এই অপকর্মের কথা শোনামাত্র উপস্থিত লোকদের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল এবং মুখমন্ডলে কঠোরতার ছাপ ফুঁটে উঠল। এ দেখে ইবলিস নরমসূরে তাড়াতাড়ি বলল- “অবশ্য তোমরা যদি সত্যিই তোমাদের সম্পদ ও পরিবার রক্ষা করতে চাও।”

প্রথমদিকে খুব অল্প সংখ্যক লোক ঐ কাজে লিপ্ত হয়েছিল- নিতান্ত কৌতুহল বশত:, কথাটা একটু পরীক্ষা করে দেখতে এবং ধীরে ধীরে সকলেই ঐ জঘণ্য কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ল। কেননা, তারা এ কাজে দু’টো উপকার লক্ষ্য করেছিল- প্রথমত: এ কাজ তাদেরকে দিচ্ছিল চরম বিকৃত যৌণসুখ দ্বিতীয়ত: ঐ কাজ তাদের পরিবার ও সম্পদ নিরাপদে রাখছিল। একসময় নারীদের সাথে সহবাস করা তারা প্রায় পরিত্যাগই করল। সেখানকার দশজন লোকও ঐ কূ-কর্মের বাইরে ছিল না।এভাবে সদোম ও তার পার্শ্ববর্তী শহরগুলো পাপে পূর্ণ হল। অত:পর একসময় এর সমকামী অধিবাসীগণ সমবেতভাবে ফেরেস্তাদের সাথেও ঐ অপকর্ম করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত হল।

খোদা তো পরম দয়াময়। তিনি কখনও কোন জনপদ ধ্বংস করেন না, যতক্ষণ না তার কেন্দ্রস্থলে তাঁর রসূল প্রেরণ না করেন এবং তিনি কোন জনপদকে ততক্ষণ ধ্বংস করেন না, যতক্ষণ না সেখানকার অধিবাসীগণ সীমালঙ্ঘন করে। -২৮:৫৯. 
যা হোক, সতর্ককারী হিসেবে তিনি লুতকে নব্যুয়ত দান করে ঐ অপকর্মকারীদের উপত্যাকায় গমণের নির্দেশ দেন। লুত ঐসময় পিতৃব্য ইব্রাহিমের সাথে বৈথেলে বসবাস করছিলেন। যা হোক, খোদার নির্দেশ মত তিনি সেখানে গমন করেন এবং স্বপরিবারে বসবাস করতে থাকেন। 

মকপেলা গুহার দক্ষিণ দিকের দৃশ্য।
সদোম ও আশেপাশের অন্যান্য শহরের অধিবাসীরা মনের সুখে জঘণ্য অপকর্ম করে যাচ্ছিল। আর এ কাজে তাদের উৎসাহে কোন ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছিল না। এদিকে লুত তাদেরকে এর পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করতে লাগলেন। তিনি এ কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেললেন যে- “তোমরা কি দোযখের ভয় করবে না? সেখানে তো তোমাদেরকে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করা হবে। শোন সডোমীরা, আমার উপদেশ ফ্রি, তোমরা কূ-কর্ম থেকে ফের। সময় কিন্তু খুব বেশী নেই।” 

কিন্তু ফ্রি উপদেশ কেউ নেয় না- তারাও নিল না। আর নেবেই বা কেন? তাদের তো কেবলই মনে হচ্ছিল লুতের কোন বিচার বিবেচনা নেই। থাকলে এমনভাবে জোঁকের মত তাদের পিছু লেগে থাকত না। -“আরে বাবা, আমরা স্বাধীন ভাবে কাজ-কাম করে দু’টো ডাল-ভাত খেয়ে একটু-আধটু ফূর্তি-টুর্তি করে যাচ্ছি, এতে তোমার সমস্যাটা কোথায়! কেন তুমি গায়ে পড়ে বারবার ঝগড়া করতে আসছো! কেন আমাদের বাড়া ভাতের দিকে ছাই ছুঁড়ে দিচ্ছো!”

এলাকাবাসীর দৃঢ় ধারণা হল লুত তাদের সামনে থাকা ফখরুদ্দিনের বিরিয়ানির প্লেট কেড়ে নিতে চাচ্ছে। সুতরাং তারা তাকে উপেক্ষা করল এবং সযত্নে এড়িয়ে চলে মন্দ ঐ জীবনাচার চালিয়ে যেতে লাগল। এদিকে লুত জানতেও পারলেন না ইতিমধ্যে তার নিজের স্ত্রীও সেখানকার ঐ মন্দ জীবনাচার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কূ-কাজে জড়িয়ে পড়েছে। 

এদিকে লুত বৈথেল ত্যাগ করার পর ইব্রাহিম দক্ষিণ কনানে গমন করেন এবং হিব্রোণে ইস্কোল ও আনেরের ভ্রাতা ইমোরীয় মম্রির এলোন বনে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। এখানেই রয়েছে সেই 'মকপেলা গুহা' যেখানে পরবর্তীতে তার, সারার, ইসহাক, ইয়াকুবের এবং তার পরিবারের অন্যান্যদের সমাহিত করা হয়েছিল।

এভাবে ইব্রাহিম ও লুতকে খোদা সেই দেশে পৌঁছে দিলেন যেখানে তিনি বিশ্বের জন্যে কল্যাণ রেখেছেন। এটা এই কারণে যে, তিনি তার পিতা ও সম্প্রদায় এবং তাদের উপাস্যদের পরিত্যাগ করেছিলেন। তদুপরি তাকে তার পরিবার হারানোর ক্ষতি পূরণার্থে পিতার পরিবারের থেকে উত্তম একটি স্বাতন্ত্র্য (একটা বিশেষ গুণ তথা পরলোকের স্বরণ) পরিবার দান করেছিলেন। আরও দান করেছিলেন সৎকর্মপরায়ণ পুত্র ইসহাক ও ইসহাক পরবর্তী ইয়াকুবের সুসংবাদ। যারা প্রত্যেকে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করেছিলেন, অর্জণ করেছিলেন সমুচ্চ সুখ্যাতি। আর তারা ছিলেন আল্লাহর কাছে মনোনীত ও সৎলোকদের অন্তর্ভূক্ত।

সারাকে সমাধিস্থ করা হচ্ছে।
এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ: আমি তাকে ও লূতকে উদ্ধার করে সেই দেশে পৌঁছে দিলাম, যেখানে আমি বিশ্বের জন্যে কল্যাণ রেখেছি। -(২:৭১)

অতঃপর যখন সে তাদেরকে এবং তারা আল্লাহ ব্যতিত যাদের এবাদত করত, তাদের সবাইকে পরিত্যাগ করল, তখন আমি তাকে দান করলাম ইসহাক ও ইয়াকুব এবং প্রত্যেককে নবী করলাম। আমি তাদেরকে দান করলাম আমার অনুগ্রহ এবং তাদেরকে দিলাম সমুচ্চ সুখ্যাতি। -(১৯:৪৯) আমি তাদেরকে এক বিশেষ গুণ দ্বারা তথা পরকালের স্বরণ দ্বারা স্বাতন্ত্র্য দান করেছিলাম। আর তারা আমার কাছে মনোনীত ও সৎলোকদের অন্তর্ভূক্ত। -(৩৮:৪৬-৪৭)

সদোম ও ঘমোরাবাসী লুতের আহবানে সাড়া দিল না। সুতরাং খোদা শহরগুলি ধ্বংসের সিদ্ধান্ত নিলেন। আর এ তো তাদের প্রাপ্যই ছিল।

দু'জন ফেরেস্তা ইব্রাহিমের বাটিতে এল।
ইব্রাহিমের বয়স এখন ৯৬ বৎসর। এসময় কোন একদিন তার গৃহে দু'জন অতিথি এল। ইব্রাহিম দেখলেন আগত অতিথি দু‘জন অপরিচিত। তথাপি তিনি তাদেরকে দেখে খুশী হলেন। বললেন, ‘সালাম।’
তারাও বলল, ‘সালাম।’

ইব্রাহিম কোন প্রশ্ন না করে সমাদরের সাথে তাদেরকে ভিতরে নিয়ে গিয়ে বসালেন। একটি মোটাসোটা বাছুর জবেহ করা হল এবং তার স্ত্রী সারা তাদের জন্যে খাবার প্রস্তুত করতে শুরু করলেন। অত:পর যখন খাবার প্রস্তুত হল, তিনি তা নিয়ে এসে অতিথিদেরকে পরিবেশন করলেন।

আগন্তুক অতিথিদের হাতে কিছু তীর ছিল। ইব্রাহিম দেখলেন যে, অতিথিরা খাবারের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে না কেবল তাদের হস্তস্থিত তীরের ফলা দিয়ে মাংসের টুকরা স্পর্শ করছে, তখন তিনি বললেন, ‘আপনারা খাচ্ছেন না কেন?’

এতেও তারা খাবারের দিকে হাত না বাড়ালে তিনি তাদেরকে সন্দেহ করলেন এবং তার মনে ভীতির সঞ্চার হল। কেননা তার জানা ছিল অসৎ উদ্দেশ্যে কেউ কারও বাড়ীতে মেহমান হলে সেখানে পানাহার করে না। তাই এসময় তিনি তার সংশয় প্রকাশ করেই ফেললেন, বললেন, ‘আপনাদেরকে আমার ভয় হচ্ছে।’

তারা বলল, ‘ভয় কোরও না, আমরা আল্লাহ প্রেরিত ফেরেস্তা। আর আমরা তোমার জন্যে এক সুখবর নিয়ে এসেছি। আমরা তোমার এক জ্ঞানী পুত্রের সুখবর দিচ্ছি।’ 
ইব্রাহিম বললেন, ‘আমি বার্ধক্যগ্রস্থ হওয়া সত্ত্বেও কি তোমরা আমাকে এ সুখবর দিচ্ছ?’
তারা বলল, ‘আমরা সত্যখবর দিচ্ছি, তুমি হতাশ হইও না।’ 
তিনি বললেন, ‘পথভ্রষ্ট ছাড়া আর কে প্রতিপালকের অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়?’

এসময় বিবি সারা দরজার পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন। এই বৃদ্ধ বয়সে ফেরেস্তাদের মুখে তাদের সন্তান হবার এই অবাস্তব সংবাদ শ্রবণে তিনি শব্দ করে হেসে ফেললেন। তারপর মুখ বাড়িয়ে ফেরেস্তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘কি আশ্চর্য! আমি সন্তানের জননী হব, যখন আমি বৃদ্ধা ও এই আমার স্বামী বৃদ্ধ! এ তো এক অদ্ভূত ব্যাপার!’ সারা তার দূর্ভাগ্যকে দায়ী করল, হাত দিয়ে কপালে আঘাত করে বলল, 'হায়! পোড়া কপাল, আমি তো বন্ধ্যা।'

তারা তাকে বলল, ‘আল্লাহর কাজে অবাক হচ্ছ? হে নবীর পরিবার! তোমাদের উপর রয়েছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ। তিনি প্রশংসার্হ ও সম্মানার্হ। তোমার প্রতিপালক এরকমই বলেছেন। তিনি তত্ত্বজ্ঞানী, সর্বজ্ঞ।’

আল্লাহ ইব্রাহিমকে পুত্র ইসহাকের ও ইসহাক পরবর্তী ইয়াকুবের সুসংবাদ দিয়েছিলেন যাদের দু‘জনকেই নব্যুয়ত দান করা হয়েছিল।

এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ-‘আমার প্রেরিত ফেরেস্তাগণ সংবাদ নিয়ে ইব্রাহিমের কাছে এল। 
তারা বলল, ‘সালাম’।
সেও বলল, ‘সালাম’। -(১১:৬৯-৮৩)
(তার মনে হল) এরা তো অপরিচিত লোক। তারপর ইব্রাহিম তাদেরকে কিছু না বলে তার স্ত্রীর কাছে গেল ও এক মোটাসোটা গরুর বাছুর ভেজে নিয়ে এল। সেটাকে সে ওদের সামনে রাখল, তারপর ওদের বলল, ‘তোমরা খাচ্ছ না কেন?’ 
সে যখন দেখল তারা (ফেরেস্তা) তার দিকে হাত বাড়াচ্ছে না তখন তাদেরকে সন্দেহ করল ও তাদের সম্বন্ধে তার মনে ভয় হল। -(৫১:২৫-২৭)

সে বলল, ‘তোমাদেরকে আমার ভয় হচ্ছে।’
ওরা বলল, ‘ভয় কোরও না, আমরা তোমাকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুখবর দিচ্ছি।’ 
সে বলল, ‘আমি বার্ধক্যগ্রস্থ হওয়া সত্ত্বেও কি তোমরা আমাকে এ সুখবর দিচ্ছ? তোমরা কি ব্যাপারে সুখবর দিচ্ছ?’
ওরা বলল, ‘আমরা সত্যখবর দিচ্ছি, তুমি হতাশ হইও না।’ 
সে বলল, ‘পথভ্রষ্ট ছাড়া আর কে প্রতিপালকের অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়?’ -(১৫:৫১-৫৬)

তখন তার স্ত্রী দাঁড়িয়েছিল, সে হাসল। তারপর আমি তাকে ইসহাকের ও ইসহাকের পরবর্তী ইয়াকুবের সুসংবাদ দিলাম। সে বলল, ‘কি আশ্চর্য! আমি সন্তানের জননী হব, যখন আমি বৃদ্ধা ও এ আমার স্বামী বৃদ্ধ! এ তো এক অদ্ভূত ব্যাপার!’ 
তারা বলল, ‘আল্লাহর কাজে অবাক হচ্ছ? হে নবীর পরিবার! তোমাদের ওপর রয়েছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ। তিনি প্রশংসার্হ ও সম্মানার্হ। -(১১:৭৩-৭৫) তোমার প্রতিপালক এ রকমই বলেছেন। তিনি তত্ত্বজ্ঞানী, সর্বজ্ঞ।’ -(৫১:৩০) 

ইব্রাহিম ফেরেস্তাদের কাছ থেকে পুত্রসন্তান লাভ করার সুসংবাদ পাবার পর তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘হে ফেরেস্তাগণ! তোমাদের আর বিশেষ কি কোন কাজ আছে?’
তখন তারা বলেছিল, ‘আমাদের একপাপী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পাঠান হয়েছে। আমরা সদোম, ঘমোরা ও তার আশেপাশের জনপদসমূহ ধ্বংস করব। নিশ্চয় তার অধিবাসীগণ জালেম।’

ইব্রাহিম ছিলেন ধৈর্য্যশীল, কোমল হৃদয়, আল্লাহ-অভিমুখী। এ কারণে তিনি লুতের সম্প্রদায় সম্পর্কে ফেরেস্তাদের সঙ্গে তর্ক করতে লাগলেন। তার আন্তরিক ইচ্ছে ছিল- শহরগুলি যেন রক্ষা পায়। তাই তিনি বললেন, ‘সেখানে কি কোন মুমিন নেই? সেখানে তো লূত রয়েছে। তোমরা কি পাপীদের সাথে মুমিনদেরও মুছে ফেলবে?’
তারা বলল, ‘সেখানে কারা আছে তা আমরা ভালকরেই জানি।’

ফেরেস্তাদের সঙ্গে ইব্রাহিমকে এরকম তর্ক করতে দেখে এসময় আল্লাহ বললেন, ‘হে ইব্রাহিম! এ থেকে বিরত হও। তোমার প্রতিপালকের বিধান এসে পড়েছে। নিশ্চয় ওদের উপর এক অনিবার্য শাস্তি আসবে। কেননা, সেখানে একটি গৃহ ব্যতিত কোন মুসলমান আমি পাইনি।’

আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে কারও কোন হাত নেই। সুতরাং লুত ও তার পরিবারবর্গের পরিণতির কথা ভেবে ইব্রাহিম ম্রিয়মান হয়ে পড়লেন। এসময় ফেরেস্তাগণ তার মনোকষ্ট বুঝতে পেরে তাকে আশ্বস্ত করল-‘ওদের সকলকে আমরা ধ্বংস করব লূতের পরিবারবর্গ ছাড়া, কিন্তু তার স্ত্রীকে নয়। আমরা জেনেছি যে যারা পিছনে থেকে যাবে সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত।’ 

এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ- ‘তারপর যখন ইব্রাহিমের ভয় দূর হল ও তার কাছে সুসংবাদ (পুত্রসন্তান হবার) এল তখন. -(১১:৮০) সে বলল, ‘হে ফেরেস্তাগণ! তোমাদের আর বিশেষ কি কাজ আছে?’

ওরা বলল, ‘আমাদের এক পাপী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পাঠান হয়েছে। লুতের পরিবারবর্গ ছাড়া, ওদের সকলকে আমরা ধ্বংস করব, কিন্ত লুতের স্ত্রীকে নয়। আমরা জেনেছি যে, যারা পিছনে থেকে যাবে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত।’ সে (ইব্রাহিম) লুতের সম্প্রদায় সম্পর্কে (আমার পাঠান ফেরেস্তাদের সঙ্গে) তর্ক করতে লাগল। ইব্রাহিম তো ছিল ধৈর্য্যশীল, কোমল হৃদয়, আল্লাহ-অভিমুখী। (আমি বললাম), ‘হে ইব্রাহিম! এ থেকে বিরত হও। তোমার প্রতিপালকের বিধান এসে পড়েছে। নিশ্চয় ওদের উপর এক অনিবার্য শাস্তি আসবে। -(১১:৭৭-৭৯) সেখানে একটি গৃহ ব্যতিত কোন মুসলমান আমি পাইনি।’ -(৫১:৩৬)

সেদিনই সন্ধ্যা বেলায় ফেরেস্তা দু’জন সদোম শহরে উপস্থিত হল। লুত এসময় শহরের ফটকের কাছে চকে বসেছিলেন। অপরিচিত দু‘জন লোককে দেখে তিনি তাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন এবং যখন জানতে পারলেন তারা এ শহরে নতুন, তখন তাদেরকে বিনীত অনুরোধ করে বাড়ীতে নিয়ে এলেন, কেননা তিনি তার সম্প্রদায়ের কূ-কীর্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে অবগত ছিলেন।

এদিকে লুতের স্ত্রী ওয়ালেহা রাতেই এলাকার দুষ্টু লোকদেরকে জানিয়ে দিল, ‘আজ সন্ধ্যায় দু’জন অল্পবয়েসী যুবক আমাদের গৃহে আশ্রয় নিয়েছে।’
এ সংবাদে সেইরাতেই এলাকাবাসী (যুবক ও বৃদ্ধরা) আনন্দ-উল্লাস করতে করতে ছুটে এল। তারা লুতের গৃহ ঘেরাও করল। এরপর তারা উচ্চঃস্বরে লুতের উদ্দেশ্যে বলল, ‘আজ রাতে যে দু’জন যুবক তোমার গৃহে এসেছে তারা কোথায়? তাদের বের করে আমাদের কাছে নিয়ে এস।’ 

লোকদের চিৎকার চেঁচামেচিতে লুত উদ্বিগ্ন হয়ে আপন মনে বলতে লাগলেন, ‘আজ বড় কঠিন দিন!’ 
তিনি বাইরে বেরিয়ে এসে উপস্থিত লোকদেরকে নিবৃত্ত করতে বললেন, ‘তোমরা কি সাবধান হবে না? আমি তো তোমাদের একজন বিশ্বস্ত রসূল। সুতরাং তোমরা আমার আনুগত্য কর। আমি এরজন্যে তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাইনে, আমার পুরস্কার তো বিশ্বজগতের প্রতিপালকের কাছে আছে।

--হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা এমন নিলজ্জ কর্ম করছ যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ করেনি। তোমরা তো যৌনতৃপ্তির জন্যে নারী ছেড়ে পুরুষের দ্বারস্থ হচ্ছ, তোমরা তো সীমালংঘনকারী! আমি তো তোমাদের একাজকে ঘৃণা করি। হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ও আমার পরিবার-পরিজনকে ওরা যা করে তা থেকে হেফাজত কর।’

এসময় লোকদের মধ্যে থেকে কেউ একজন সঙ্গীদের উদ্দেশ্যে বলল, ‘এদেরকে (লুত ও তার পরিবারকে) শহর থেকে বের করে দাও। এরা এমন লোক যারা নিজেদেরকে বড় পবিত্র রাখতে চায়।’
অন্য একজন বলল, ‘এ লোকটা (লুত) আমাদের এখানে এসেছে বিদেশী হিসেবে, আর তারপর থেকে আমাদের উপর কেবল মোড়লী করে বেড়াচ্ছে। এখন আমরা ওর আর ওর পরিবারের সঙ্গে আরও খারাপ ব্যাবহার করব।’

লুতের দু‘কন্যা মদের নেশায় মাতাল অবস্থায় ছিল। এসময় তারা ঢুলু ঢুলু চোখে গৃহদ্বারের একপার্শ্বে দাঁড়িয়ে উঁকি দিয়ে দেখছিল। লুত তাদেরকে সম্মুখে নিয়ে এলেন। তারপর লোকদেরকে বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! এরা আমার কন্যা আর এরা কখনও কোন পুরুষের সঙ্গে থাকেনি। তোমাদের জন্যে এরা পবিত্র। একান্তই যদি তোমরা কিছু করতে চাও তবে আমার এই কন্যারা রয়েছে। আমার জীবনের শপথ! ওরা মাতলামী করে জ্ঞান হারিয়েছে।’

তারা বলল, ‘তুমি নিশ্চয় জান, তোমার কন্যাদেরকে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। আমরা কি চাই তা তুমি ভাল করেই জান।’ 
লুত বললেন, ‘আমার অতিথিদের সাথে অন্যায় ব্যাবহার করে আমাকে ছোট কোরও না।  আল্লাহকে ভয় কর। তোমাদের মধ্যে কি কোন ভালমানুষ নেই?’

তারা বলল, ‘আমরা কি সারা দুনিয়ার লোককে আশ্রয় দিতে তোমাকে নিষেধ করিনি?’ 
অসহায় লুত দুর্বল কন্ঠে বললেন, ‘তোমাদের উপর যদি আমার শক্তি থাকত বা যদি আমি কোন শক্তিশালী দলের আশ্রয় নিতে পারতাম!’
তারা বলল, ‘হে লুত, পারলে আমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি আন, যদি তুমি সত্যিকথা (অর্থাৎ তিনি যে নিজেকে আল্লাহর রসূল বলে প্রচার করেন তা যদি সত্য হয়ে থাকে) বলে থাক।’ 

লোকেরা লুতের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। লুত দ্বার আগলে দাঁড়িয়ে গেলেন। উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আমার অতিথিদের উপর তোমরা কিছু কোরও না, কারণ তারা আমার গৃহে আশ্রয় নিয়েছেন।’
লোকেরা তাদের কূ-কর্ম চরিতার্থ করার জন্যে ছিল উন্মুখ। সুতরাং তারা দলবদ্ধ হয়ে এগিয়ে এল ও লুতকে বলল, ‘যা, যা, পথ থেকে সরে দাঁড়া!’

তারা এগিয়ে এসে ঘরের দরজাটা ভেঙ্গে ফেলার উদ্দেশ্যে লুতকে ভীষণভাবে ঠেলতে লাগল। লুত বড় অসহায় বোধ করলেন। তখন ফেরেস্তা দু’জন ভিতর থেকে দ্বারদেশে দাঁড়ান লোকদের দিকে আলোর ঝলক দিলেন, অতঃপর হাত বাড়িয়ে লুতকে গৃহমধ্যে টেনে নিয়ে দ্বার বন্ধ করে দিলেন। আলোর ঝলকে লোকেরা হঠাৎ দৃষ্টি বিভ্রমে পড়ল। ফলে তারা দরজা খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হতে লাগল। 

গৃহমধ্যে লুত অস্থির হয়ে পড়লেন। এসময় ফেরেস্তা দু‘জন তাকে আশ্বস্ত করে বলল, ‘হে লুত! আমরা তোমার প্রতিপালক প্রেরিত ফেরেস্তা। ওরা কখনই তোমার কাছে পৌঁছুতে পারবে না। যে শাস্তিকে ওরা সন্দেহ করত আমরা তাই নিয়ে এসেছি। আমরা সত্য সংবাদ নিয়ে এসেছি আর আমরা তো সত্যবাদী। আমরা এই জনপদবাসীর উপর আকাশ থেকে শাস্তি নামাব, কারণ এরা সত্যত্যাগী। ’

লুত তাদের কথায় বিষন্ন হয়ে পড়লেন-তার মন সংকীর্ণ হয়ে গেল। ফেরেস্তাগণ তা বুঝতে পেরে বলল, ‘হে লুত! ভয় পেয়ো না, দুঃখ কোরও না, আমরা তোমাকে ও তোমার পরিবারবর্গকে রক্ষা করব, তোমার স্ত্রী ব্যতিত। সে তো তাদেরই একজন যারা পিছনে পড়ে থাকবে। সুতরাং তুমি রাত্রের কোন একসময় তোমার পরিবারবর্গসহ বেরিয়ে পড় ও তোমাদের মধ্যে কেউ পিছন ফিরে চেয়ো না; কিন্তু তোমার স্ত্রী যাবে না, ওদের যা ঘটবে তারও তাই ঘটবে। সকাল বেলা ওদের জন্যে সময় নির্ধারণ করা হল। সকাল হতে কতই বা দেরী!’
মৃত সাগর, স্যাটলাইট ভিউ।
এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ- আর যখন আমার প্রেরিত ফেরেস্তাগণ লুতের কাছে এল, তখন তাদেরকে আসতে দেখে সে মনখারাপ করল ও বড় অসহায় বোধ করল।-(১৫:৫৭-৬০) তখন লুত বলল, ‘তোমরা তো অপরিচিত লোক।’-(১৫:৬২-৬৪) আর বলল, ‘এ বড় কঠিন দিন!’ 

তারা বলল, ‘না, ওরা (যে শাস্তিকে) সন্দেহ করত আমরা তোমার কাছে তাই নিয়ে এসেছি, আমরা তোমার কাছে সত্য সংবাদ নিয়ে এসেছি আর আমরা তো সত্যবাদী।’

তার সম্প্রদায় তার কাছে পাগলের মত ছুটে এল, আর এরআগে থেকেই তারা কূকর্মে লিপ্ত ছিল। -(১৫:৬২-৬৪) লুত ওদেরকে বলল, ‘তোমরা কি সাবধান হবে না? আমি তো তোমাদের একজন বিশ্বস্ত রসূল। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও আমার আনুগত্য কর। আমি এরজন্যে তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাইনে, আমার পুরস্কার তো বিশ্বজগতের প্রতিপালকের কাছে আছে।’ -(২৬:১৬১-১৬৪)

সে (আরও) বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! এরা আমার কন্যা, তোমাদের জন্যে এরা পবিত্র। সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর ও আমার অতিথিদের সাথে অন্যায় ব্যাবহার করে আমাকে ছোট কোরও না। তোমাদের মধ্যে কি কোন ভালমানুষ নেই?’ 
তারা বলল, ‘তুমি নিশ্চয় জান, তোমার কন্যাদেরকে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। আমরা কি চাই তা তুমি ভালভাবেই জান।’ 

সে বলল, ‘তোমাদের ওপর যদি আমার শক্তি থাকত বা যদি আমি কোন শক্তিশালী দলের আশ্রয় নিতে পারতাম!’ 
ওরা বলল, ‘আমরা কি সারা দুনিয়ার লোককে আশ্রয় দিতে তোমাকে নিষেধ করিনি?’ 
লুত বলল, ‘একান্তই যদি তোমরা কিছু করতে চাও তবে আমার এই কন্যারা রয়েছে। আমার জীবনের শপথ! ওরা মাতলামী করে জ্ঞান হারিয়েছে।’ -(১৫:৭০-৭২) 

আর লুত যখন তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমরা এমন নিলজ্জ কর্ম করছ যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ করেনি। তোমরা তো যৌনতৃপ্তির জন্যে নারী ছেড়ে পুরুষের কাছে যাচ্ছ, তোমরা তো সীমালংঘনকারী! -(৭:৮০-৮১) আমি তো তোমাদের এ কাজকে ঘৃণা করি। হে আমার প্রতিপালক! আমার ও আমার পরিবার-পরিজনকে ওরা যা করে তা থেকে রক্ষা কর।’ -(২৬:১৬৮-১৬৯)

উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু বলল, ‘এদেরকে (লুত ও তার সঙ্গীদের) শহর থেকে বের করে দাও। এরা এমন লোক যারা নিজেদেরকে বড় পবিত্র রাখতে চায়।’ -(৭:৮২) (লুতকে লক্ষ্য করে) ‘আমাদের ওপর আল্লাহর শাস্তি আন, যদি তুমি সত্যিকথা বলে থাক।’ 

তারা (ফেরেস্তাগণ) বলল, ‘হে লুত! আমরা তোমার প্রতিপালক প্রেরিত ফেরেস্তা। ওরা কখনই তোমার কাছে পৌঁছিতে পারবে না। -(২৮:২৮) ভয় পেয় না, দুঃখ কোরও না, আমরা তোমাকে ও তোমার পরিবারবর্গকে রক্ষা করব, তোমার স্ত্রীকে ছাড়া। সে তো তাদেরই একজন যারা পিছনে পড়ে থাকবে। -(২৯:৩৩) আমরা এ জনপদবাসীর উপর আকাশ থেকে শাস্তি নামাব, কারণ এরা সত্যত্যাগী। -(২৯:৩৮) সুতরাং তুমি রাত্রের কোন একসময় তোমার পরিবারবর্গসহ বেরিয়ে পড় ও তোমাদের মধ্যে কেউ পিছন ফিরে চেয়ো না; কিন্তু তোমার স্ত্রী যাবে না, ওদের যা ঘটবে তারও তাই ঘটবে। সকালবেলা ওদের জন্যে সময় ঠিক করা হল। সকাল হতে কতই বা দেরী!’ -(২৯:৩৪)

আল্লাহ লুতকে প্রত্যাদেশের মাধ্যমে জানিয়েছিলেন যে, সকাল হতে না হতেই সকলকে বিনাশ করা হবে। এদিকে সকাল হয়ে এল, কিন্তু স্ত্রীর গড়িমসিতে লুত তখনও গৃহত্যাগ করতে পারেননি। তখন ফেরেস্তাগণ লুতকে তাগাদা দিয়ে বলল, ‘শীঘ্র কর। তোমরা তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাও। তা না হলে যে শাস্তি এই শহরের উপর নেমে আসছে, তোমরাও তার মধ্যে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।’

সূর্যোদয়ের আর বেশী দেরী নেই। লুত তার দু‘কন্যা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। কিন্তু তার স্ত্রী তখনও যাই-যাচ্ছি করে গড়িমসি করতে থাকায় সে পিছনে পড়ে গেল।

মৃত সাগর।
সূর্যোদয়ের সাথে সাথে এক গুরু গুরু আওয়াজ তাদেরকে ঘিরে ফেলল। লুতের স্ত্রী পিছনে কি হচ্ছে কৌতুহলবশতঃ তা দেখতে চাইল। আর সে তো বিশ্বাসী ছিল না, তাই সতর্কবাণী উপেক্ষা করে পশ্চাতে দৃষ্টি ফেরাল, তৎক্ষণাৎ তার উপর এক পশলা সালফার বর্ষিত হল। আর সে সেখানেই একটা লবনের স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এরপর আল্লাহ অন্যদের নিপাত করলেন। তাঁর আদেশে ফেরেস্তাগণ শহরগুলোকে উল্টিয়ে দিলেন। তারপর তাদের উপর একটানা আকাশ থেকে সালফার বৃষ্টির আকারে নেমে এল। 

এ সংক্রান্ত কোরআনের আয়াতসমূহ- ‘আমি লুতকে প্রত্যাদেশ দিয়ে জানিয়েছিলাম যে, সকাল হতে না হতেই ওদের সমূলে বিনাশ করা হবে।-(১৫:৬৬)

অতঃপর আমি তাকে (লূতকে) ও তার পরিবারকে রক্ষা করলাম এক বৃদ্ধা ব্যতিত, সে ছিল ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত। এরপর অন্যদেরকে নিপাত করলাম। -(২৬:১৭০-১৭২)

সূর্যোদয়ের সাথে সাথে এক গুরু গুরু আওয়াজ তাদেরকে ঘিরে ফেলল। তারপর যখন আমার আদেশ এল তখন আমি শহরগুলোকে উল্টিয়ে দিলাম ও তাদের ওপর একটানা কঙ্কর বর্ষণ করলাম; -(১৫:৭৩) আমি তাদের ওপর শাস্তি হিসেবে বৃষ্টি নামিয়ে ছিলাম; যাদেরকে ভয় দেখান হয়েছিল তাদের জন্যে এ বৃষ্টি কি মারাত্মকই না ছিল। -(২৭:৫৮)  

মৃত সাগর।
ওয়াগেলা ও ওয়ালেহা দু‘জনই দু‘জন নবী যথাক্রমে নূহ ও লূতের পত্নী ছিল। তারা দু‘জনই ঐ নবীদের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিল। ফলে নূহ বা লূত কেউই তাদের কাউকে ঐশী রোষানল থেকে রক্ষা করতে পারেননি।

এ সংক্রান্ত কোরআনের আয়াত: আল্লাহ অবিশ্বাসীদের জন্যে নূহপত্নী ও লূতপত্নীর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। তারা ছিল আমার দুই ধর্মপরায়ণ বান্দার গৃহে। অতঃপর তারা তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল। ফলে নূহ বা লূত তাদের আল্লাহর কবল থেকে রক্ষা করতে পারল না। -(৬৬:১০)

ধ্বংসপ্রাপ্ত এ জনপদসমূহ আজও আরব থেকে সিরিয়াগামী রাস্তার পার্শ্বে জর্দানের এলাকায় সমুদ্রের উপরিভাগ থেকে যথেষ্ট নীচের দিকে একটি বিরাট মরুভূমির আকারে বিদ্যমান রয়েছে। আর এর একটি বিরাট পরিধিতে বিশেষ এক প্রকার পানি হ্রদের আকার ধারণ করে আছে। অদ্ভূত এই সাগর সম্পর্কে কোরআনে উল্লেখ রয়েছে- যারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিকে ভয় করে, আমি তাদের জন্যে সেখানে একটি নিদর্শণ রেখেছি। -(৫১:৩৭) তোমরা [আরবরা] তাদের ধ্বংসস্তুপের উপর দিয়ে গমন কর সকালে এবং সন্ধ্যায়। -(৩৭:১৩৭-১৩৮)

লূতের কন্যাদের দু’জনের দু’পুত্র সন্তান জন্মদান করেছিল। জৈষ্ঠ্য কন্যাটির পুত্র হল মোয়াব, যে মোয়াবীয়দের আদি পিতা ও কনিষ্ঠটির পুত্র হল বিন-আম্মি, যে আম্মানীয়দের আদি পিতা। আর এই মোয়াবীয় ও আম্মানীয়রা এই মরুসাগরের পশ্চিমে ও জর্দানের পূর্বপারে বসতি স্থাপন করেছিল।

সমাপ্ত।
সংশোধিত নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Moses: কোরাণিক ক্যানভাসে নবী মূসা।

Abu Hena Mostafa Kamal  01 May, 2017 মি সরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ফেরাউন। হঠাৎ করে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। কিন্তু তিনি কোন উত্তরাধিকারী ন...