Wisdom praises herself,
and tells of her glory in the midst of her people.
In the assembly of the Most High she opens her mouth,
and in the presence of his hosts she tells of her glory:
“I came forth from the mouth of the Most High,
and covered the earth like a mist.
I dwelt in the highest heavens,
and my throne was in a pillar of cloud.
Alone I compassed the vault of heaven
and traversed the depths of the abyss.
Over waves of the sea, over all the earth,
and over every people and nation I have held sway.
Among all these I sought a resting place;
in whose territory should I abide?
. “Then the Creator of all things gave me a command,
and my Creator chose the place for my tent.
Before the ages, in the beginning, he created me,
and for all the ages I shall not cease to be.
. In the holy tent I ministered before him,
and so I was established in Zion.
. Thus in the beloved city he gave me a resting place,
and in Jerusalem was my domain. -[Sirach 24:1-11]
জেরুজালেম পৃথিবীর প্রাচীন শহরগুলোর অন্যতম। ৩,০০০বিসিই-তেও এই নগরীটির অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়। ধারণা করা হয়, নর্থওয়েস্ট সেমিটিকদের দ্বারা এটি তৈরী হয়েছিল। পরবর্তীতে ফেরাউন রামেসিস ২য় এখানে বেশ কিছু অবকাঠামো তৈরী করেন। কারণ ঐ সময় এটি মিসরীয় সামন্ত নগর রাষ্ট্রের রাজধানী হওয়ায় সৈন্যদের একটি ব্যারাকও এখানে ছিল।
এ নগরটির আয়তন ০.৯ বর্গ কিলোমিটার। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে দু’হাজার সাত’শ ফুট এবং মরুসাগর থেকে চার হাজার ফুট উর্দ্ধে চারটি পাহাড়ের উপরে নগরীটি তৎকালে অনেকটা ঘোড়ার খুরের মত দেখতে ছিল, যার উত্তর দিকটা খোলা এবং পূর্ব, পশ্চিম এবং দক্ষিণ দিক সংকীর্ণ খাদ দ্বারা ঘেরা। পূর্বদিকে গভীর কিদ্রোণ স্রোত। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে হিন্নোম উপত্যকা শুরু হয়ে পশ্চিম দিক দিয়ে দক্ষিণামুখী হয়ে পূর্বদিকে নগরীর দক্ষিণ পূর্বে কিদ্রোণের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। প্রত্যেক পাশে পর্বতসমূহ নগরীর উপরে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে যার মধ্যে জৈতুন পর্বতও রয়েছে।
জেরুজালেম সাধারণভাবে আল-কুদস নামে পরিচিত। যার অর্থ “পবিত্র” বা “পবিত্র আশ্রয়স্থল” এটি খোদার পবিত্র নগরী হিসেবে পরিগণিত। বুক অব জুবিলীতে খোদা বলেন-”আর সিয়োন ও জেরুজালেম পবিত্র বলে গণ্য হবে।’-জুবিলী, ১:২৭
জেরুজালেম নগরীতে রয়েছে খোদার গৃহখ্যাত অাল আকসা মসজিদ। নবী দাউদ পুত্র শলোমন এটিকে নির্মাণ করেছিলেন। আর শেষ নবী মুহম্মদ তার নবুয়্যতের প্রথমদিকে খোদার এ গৃহকে নামাজের কেবলা করেছিলেন। [কিন্তু পরবর্তীতে তিনি ‘উম্মুল বিলাদ’ বা বাক্কায় প্রথম মানব আদম কর্তৃক নির্মিত ও পরবর্তীতে নবী ইব্রাহিম কর্তৃক পুন:প্রতিষ্ঠিত ‘মসজিদুল হারাম’ অর্থাৎ কা’বাকে কেবলার ঐশ্বরিক নির্দেশ পান] তাছাড়া মেরাজ রজনীতে তাকে মক্কা থেকে প্রথমে এ মসজিদে নিয়ে আসে জিব্রাইল, আর তিনি খোদার এ গৃহে নামাজ আদায় শেষে মেরাজে যাত্রা করেছিলেন। কোরআন জানায়- “পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা, যিনি তার বান্দাকে রাতের বেলায় নিয়ে যান মসজিদে হারাম [কা’বা] থেকে মসজিদে আকসায় [শলোমনের পুন:নির্মিত]।” -[১৭:১] আর যে স্থানটিতে নবী মুহম্মদ তার বাহন বোরাকটিকে বেঁধে রেখে মেরাজ যাত্রা করেছিলেন, সেখানে পরবর্তীতে একটি স্থাপনা নির্মাণ করা হয় যা ডোম অফ দা রক [পাথর আচ্ছাদিত গম্বুজ], হিসেবে পরিচিত। খোদার গৃহ ছাড়াও এ শহরে আরও যেসব ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হল- টেম্পল মাউন্ট, চার্চ অফ দা হলি সেপালচার, গার্ডেন টম্ব, ইত্যাদি।
জেরুজালেম শুধু মুসলিমদের নিকট নয় ইহুদি ও খৃষ্টানদের কাছেও এটির ধর্মীয় গুরুত্ব অনেক, কেননা, তারাও কিতাবধারী এবং ইসলামের নবী মূসা, দাউদ, শলোমন বা ঈসার সাথে আপাত:দৃষ্টিতে তাদের সম্পর্কের দাবীও আরও গভীর এবং জোরালো।
নবী দাউদের উপর দেশের ভার এসে পড়লে তিনি তার রাজ্যের জন্য একটি উপযুক্ত রাজধানীর খোঁজ করতে থাকেন। অবশেষে পশ্চিম পার্বত্যাঞ্চলের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত যিবুষীয় দূর্গস্থলকে তিনি মনোনীত করেন, যা তখন পর্যন্ত ঐ যিবুষীয়দের দখলেই ছিল। এটি সেসময় সিয়োন নামে পরিচিত ছিল।
এদিকে যিবুষীয়রা যখন দাউদের অভিপ্রায় জানতে পারল, তখন তারা ঔদ্ধত্য সহকারে বলেছিল, ‘হে দাউদ! তুমি এখানে কখনও প্রবেশ করতে পারবে না। আমাদের কানা, খোঁড়ারাই তোমাকে তাড়িয়ে দিতে পারবে।’
তাদের ঐ ঔদ্ধত্যপূর্ণ উক্তির জন্যে ঐ নগরীকে জয় করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিন্তু সিয়োনকে রাজধানী হিসেবে পছন্দ করলেও দাউদ তাদেরকে উচ্ছেদ করতে পারছিলেন না ঐ একই কারণে, যে কারণে ইউশায়া ইবনে নুনও তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযান করেননি।
দাউদের সময়কালে, ১,০০০বিসিই’র দিকে “সিয়োন” বা “জেরুজালেম” নগরীটির পূর্বনাম ছিল শালেম বা শালিম।অনেকের মতে নূহ পুত্র শ্যাম এ নগরীটির গোড়াপত্তন করেন এবং তার নামানুসারে এটি শালেম বা শালিম নামে পরিচিতি লাভ করে। আর তার ডাক নাম ছিল মালকিজাদেক [মালকিজাদেক, মালেক ও সাদেক শব্দদ্বয়ের সম্বন্বয়ে গঠিত যার অর্থ -“ন্যায়পরায়ণ শাসক”] যাকে কোরআন অনুসারে জুলকারনাইন বলে সনাক্ত করা যায়। নূহ তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন- “খোদা যেফৎকে আরও খ্যাতি দিন আর তিনি শ্যামের ঘরে বাস করুন। ”-[জেনেসিস ৯:২৭].
ভ্রাতুষ্পুত্র লুতকে উদ্ধার করে ফেরার পথে নবী ইব্রাহিম মালকিজাদেক তথা জুকারনাইনের সাথে দেখা করেন এবং তাদের মধ্যে একটা চুক্তি সম্পন্ন হয়। পূণ্যবান ব্যক্তিকে উপহার দানের প্রথা প্রচলিত ছিল। তাই ঐ চুক্তির পর ইব্রাহিম তাকে তার সম্পদের এক দশমাংশ তাকে দেবার প্রতিশ্রুতি দেন। এসময় মালকিজাদেকের বয়স ছিল ৪৭৫ বৎসর এবং ইব্রাহিমের ৭৫ বৎসর।
ইস্রায়েলীদের মিসর থেকে প্রতিজ্ঞাত দেশ কনানে প্রত্যবর্তণ কালে খোদার নির্দেশ ছিল- সেখানকার অধিবাসী সকল কনানীয়দেরকে সমূলে বিনষ্ট করতে, কারণ, তারা পবিত্র ঐ ভূমিকে নানান অনাচারে অপবিত্র করে ফেলেছিল। কিন্তু ইউশায়া খোদার ঐ নির্দেশ যথাযত ভাবে পালন করলেও যিবুষীয়দের বিরুদ্ধে তিনি তা করেননি, করতে পারেননি বা করার চেষ্টাও করেননি, কেবল ইব্রাহিমের সঙ্গে মালকিজাদেকের কৃত ঐ চুক্তির কারণে। সিয়োন নগরীতে তাদের দু’জনের মুখোমুখি করে দু’টি পিতলের মূর্ত্তি স্থাপিত হয়েছিল এবং ঐ মূর্ত্তি দু’টির মুখাবয়বে ঐ চুক্তি খোঁদিত ছিল। আর ঐ চুক্তির বলেই যিবুষীয়রা উপরের ঐ দম্ভোক্তি করেছিল।
যা হোক, যিবুষীয়দের দম্ভোক্তিতে দাউদ কৌশলের আশ্রয় নেন এবং তার সহচরদেরকে জানান- ‘যে ব্যক্তি প্রথমে এই যিবুষীয়দের উপযুক্ত জবাব দিতে পারবে, সে-ই হবে আমার সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক।’
তখন দাউদের অভিপ্রায় বুঝতে পেরে জোয়াব নিজ আগ্রহে তার কয়েকজন সাথী নিয়ে রাতের অন্ধকারে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে নগর দেয়ালের বাইরে অবস্থিত “কুমারীর ঝর্ণা”র উত্তরাভিমুখী খাঁড়া সুড়ঙ্গ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে মূর্ত্তিসহ ঐ চুক্তি ধ্বংস করে ফেলে। এতে দাউদ তাকে তার সেনাবাহিনীর প্রধান করলে সে তার বাহিনী নিয়ে নগরটি ঘেরাও করে। এদিকে যিবুষীয়রা কৃতচুক্তি দেখতে না পেয়ে তাদের মনোবল হারিয়ে ফেলে এবং আত্মসমর্পণ করে। ফলে অতিসহজেই জোয়াব নগরটি দখলে আনে। এভাবে জোয়াবের কুটিল ও কুশলী নেতৃত্বের কারণে কোন যুদ্ধ ছাড়াই সিয়োন দাউদের অধিকারে আসে এবং সেখানকার অধিবাসীরাও প্রাণে বাঁচে। তবে জোয়াব নগরীটি দখলে আনার পর অধিবাসীদের উচ্ছেদ করেন।
কুমারীর ঝর্ণা জেরুজালেম নগরীতে পানি সরবরাহ করে থাকে। নগরের পূর্বপার্শ্বের নিম্নস্থানে এটি অবস্থিত। দাউদের অনেক পরে হিস্কিয় নামক একজন ধর্মপ্রাণ শাসক এই ঝর্ণা থেকে নগরীর দক্ষিণ পার্শ্বস্থ প্রাচীরের মধ্যবর্তী শীলোহের পুকুর পর্যন্ত একটি টানেল বা সুড়ঙ্গ খনন করেছিলেন।
এই সুড়ঙ্গ ছিল সতের‘শ আটান্ন ফুট দীর্ঘ, ছয় ফুট উচ্চ, নিরেট পাথর কেটে চমৎকার ভাবে এটি খনন করা হয়েছিল। সুড়ঙ্গের শেষপ্রান্তে শীলোহের পাথুরে দেয়ালে এ কাজের বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয়।
‘খনন কার্য্য শেষ হয়েছে। খনন কার্য়্যের কাহিনীটি উল্লেখ করা গেল- একজনের পিছে আরেকজন খুঁড়ে খুঁড়ে অগ্রসর হচ্ছিল। খনন কাজ শেষ হতে যখন তিন কিউবিট বাকী, তখন একে অন্যকে ডাকা-ডাকির শব্দ শোনা গেল, কারণ ডানপার্শ্বের দেয়ালে একটি ফাঁটল দেখা গিয়েছিল। যেদিন সুড়ঙ্গের পাথর কাটিয়েরা পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে পাথার কেটে যেতে থাকল, সেদিন পুকুরের পানির উৎস থেকে পানি প্রবাহিত হল। এই পথের দৈর্ঘ্য এক হাজার দু‘শ কিউবিট এবং পাথর কাটিয়েদের মাথার উপরস্থ প্রস্তর ছাদের উচ্চতা ছিল এক‘শ কিউবিট।’
দাউদ সিয়োনে বসবাস শুরু করেন এবং অত:পর তার সামরিক শক্তি যাঁচাই করতে উদ্যোগী হন। এতে জোয়াবের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল নয় মাস বিশ দিনে গণনা শেষে ফিরে এলে দাউদকে হিসেব দেয়া হল যে- ‘তলোয়ার চালাতে পারে এমন লোক ইস্রায়েলে আট লক্ষ আর ইহুদাতে পাঁচ লক্ষ।’
সামরিক শক্তির ভিত্তিতে দাউদ আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি কারণ, ফেরেস্তা আজরাইলকে নাঙ্গা তরবারী হাতে অরৌণার খামারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পান তিনি। তখন খাদার কাছে এর কারণ জানতে চাইলে তাকে যিবুষীয়দের প্রতি কৃত অন্যায় এবং তাঁর উপর নির্ভরতার বদলে সামরিক শক্তির উপর নির্ভরতায় কৃত গর্বের দরুন পাপের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাকে ঐ পাপের শাস্তি হিসেবে তিনটি বিকল্প প্রস্তাবের যে কোন একটিকে বেঁছে নিতে বলা হয়। শাস্তি তিনটি ছিল-
(ক) সাত বৎসরের দুর্ভিক্ষ।
(খ) শত্রুদের কাছে তিন মাস অবধি পরাজয়। অথবা,
(গ) তিন দিনের মহামারী।
এ সময় দাউদ নিজেকে ভীষণ বিপদগ্রস্থ দেখতে পেলেন। অবশেষে তিনি ভাবলেন- 'নি:সন্দেহে কোন মানুষের দাসত্বের অধীন হবার চেয়ে খোদার শাস্তি মাথা পেতে নেয়া মঙ্গলজনক, কারণ খোদার করুণাও অসীম।’
দাউদ তৃতীয়টি বেঁছে নেন।
এতে যখন ইস্রায়েলীরা মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মরতে শুরু করল, তখন দাউদ খোদার কাছে অভিযোগ করে বললেন, ‘পাপ এবং অন্যায় আমি করেছি। কাজেই আমাকে ও আমার পিতৃবংশকে তুমি শাস্তি দাও। ওরা তো ভেড়ার মত। ওদের অপরাধটা কি?’
নবী গাদ এসময় দাউদকে অরৌণার খামারে যেস্থানে আজরাইল দাঁড়িয়ে ছিল, সেখানে পশু কোরবাণীর পরামর্শ দিলেন।
দূর থেকে অরৌণা দাউদ ও তার কর্মচারীদেরকে তার খামারের দিকে আসতে দেখে এগিয়ে এসে বলল, ‘আমার প্রভুর জন্যে তার এ দাস কি খেদমতে লাগতে পারে?’
দাউদ বলেন- ‘খোদার উদ্দেশ্যে পশু কোরবানী দিতে একটা বেদী তৈরী করার জন্যে আমি তোমার খামারটা কিনে নিতে চাই; যাতে লোকদের উপর আসা এই মড়কটা থেমে যায়।’
সে বলল-‘পোড়ান উৎসর্গের জন্যে এখানে ষাঁড় রয়েছে, আর রয়েছে প্রয়োজনীয় কাঠের আঞ্জাম।’
দাউদ বলেন- ‘নিশ্চয়ই আমি মূল্যের বিনিময়ে এগুলো কিনতে চাই।’
সে বলল, ‘প্রভু, এ সবই আপনার। কোন বিনিময়ের আবশ্যকতা নেই।’
দাউদ বলেন- ‘বিনামূল্যে পাওয়া কোনকিছু আমি আমার খোদাকে উৎসর্গ হিসেবে দেব না।’ তিনি পঞ্চাশ শেখেল রূপা দিয়ে খামারটা ও ষাঁড়গুলো কিনে নেন। এরপর খোদার উদ্দেশ্যে সেদিনই সেখানে বেদী তৈরী করে পশু উৎসর্গ করেন। তারপর দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যে প্রার্থনা করা হলে মড়ক থেমে গেল। তিন দিনের ঐ মহামারীতে সত্তুর হাজার লোক মারা পড়ে ছিল।
যা হোক, দাউদ অত:পর সিয়োনে প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করেন বটে তবে ক্ষতিগ্রস্থদেরকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণও প্রদান করেন। আর তিনি অবশিষ্ট যিবুষীয়দেরকে তাদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেন। তখন থেকেই যিবুষীয়রা ইস্রায়েলীদের সাথে সিয়োনে একসাথে বসবাস করতে থাকে। আর দাউদ নগরীটিতে স্থায়ী বসবাস শুরু করলে সেটি “দাউদ নগর” হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
পরবর্তীতে দাউদ প্রাচীর বেষ্টন করে নগরীটিকে আরও সুরক্ষিত করেন। কিন্তু নগরটিকে প্রধান ধর্মীয় কেন্দ্রস্থল ও ইস্রায়েলের রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে সেখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব ছিল।আর তাই শলোমন রাজ্য পরিচালনার শুরুতেই সেটির প্রতি মনোযোগ দেন।
অরৌণার খামারে যেখানে দাউদ খোদার উদ্দেশ্যে বেদী নির্মাণ করেন সেখানেই শলোমন উপাসনালয় নির্মাণ করেছিলেন। আর এর নতুন কাঠামোর কারণে নির্মাণের স্থানটিও বৃদ্ধি করা হয়েছিল।
এই উপাসনালয়টি নির্মাণ করতে বিশাল পরিকল্পণা নেয়া হয়েছিল। সুদক্ষ স্থপতি, নির্মাণকারী এবং প্রয়োজনীয় কাঠ, টায়ার বা সোরের রাজা হীরমের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। শলোমন, হীরমকে জানিয়েছিলেন-
‘আমি আমার প্রভু, সর্বশক্তিমান খোদার উদ্দেশ্যে একটা উপাসনাগৃহ তৈরী করতে চাই। তিনি আমার পিতা দাউদকে বলেছিলেন, তোমার যে পুত্র তোমার সিংহাসনে বসবে, সে-ই আমার গৃহ নির্মাণ করবে।’
কাজেই আপনি হুকুম করুন যেন আমার জন্যে লেবাননের বন থেকে এরস গাছ কাটা হয়। অবশ্য আমার লোকেরা আপনার লোকদের সঙ্গে থাকবে এবং আপনি যে মুজুরী ঠিক করে দেবেন আমি সেই মুজুরীই আপনার লোকদেরকে দেব। আপনি তো জানেন, গাছ কাটার কাজে সীদোনীয়দের মত দক্ষ লোক আমাদের মধ্যে কেউ নেই।’
হীরম উত্তরে জানাল, ‘আমি আপনার কাছে হীরাম নামে একজন খুব দক্ষ ও বুদ্ধিমান লোককে পাঠালাম। তার মা দান গোষ্ঠির, আর পিতা সোরের লোক। সে সব ধরণের খোঁদাই করার কাজে দক্ষ এবং সে মসীনার সূতার কাজও জানে। সে আপনার কারিগরদের সঙ্গে কাজ করবে।
এরস ও বেরস কাঠের ব্যাপারে আপনার সব ইচ্ছেই আমি পূর্ণ করব। আমার লোকেরা সেগুলি লেবানন থেকে নামিয়ে সমুদ্রে আনবে। তারপর সেগুলি ভাসিয়ে আপনার নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাবে। আপনি শুধু আমার প্রাসাদের লোকদের জন্যে আহার্য সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতি একটু খেয়াল রাখবেন।’
এরস গাছগুলি লেবাননের বন থেকে কেটে সমুদ্রোপকূল পর্য্যন্ত ভাসিয়ে এনে, পরে পার্বত্য পথ দিয়ে জেরুজালেমে নিয়ে আসা হয়েছিল। আর নিকটবর্তী খাদসমূহ থেকে পাথর কেটে নির্মাণ উপযোগী করে নেয়া হয়েছিল। প্রচুর লোক এসব কাজ করেছিল। কাজ করেছিল বেশ কিছু জ্বীনও- যারা ছিল শ্রমিক, ডুবুরী ও স্থপতি। তারা শলোমনের ইচ্ছে অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের কাজ করত।
সিডার গাছ কাটার জন্যে ত্রিশ হাজার লোক নিয়োগ করা হয়েছিল এবং প্রত্যেক তৃতীয় মাসে দশ হাজার লোক পালাক্রমে কাজ করেছিল। পাথর কাটতে আশি হাজার এবং সাধারণ শ্রমের জন্যে সত্তুর হাজার লোক নিয়োগ পেয়েছিল। এদের উপর ছিল বিরাট সংখ্যক কর্মাধ্যক্ষ।
নির্মাণের সকল বস্তু পূর্বেই সতর্কভাবে প্রস্তুত করা হয়েছিল, তাই এই সুবিশাল ভবনটি নির্মাণকালে গৃহের মধ্যে হাতুড়ি, বাটাল বা আর কোন লৌহ যন্ত্রের শব্দ শুনা গেল না। স্বর্ণ, রৌপ্য, তাম্র এবং অন্যান্য ধাতুও নির্মাণ কাজে ব্যাবহার করা হয়েছিল। আকারের জন্যে নয় কিন্তু এর জাঁকজমক এবং এটি নির্মাণে ব্যবহৃত বস্তুসমূহের জন্যে এটি জগৎ বিখ্যাত হয়েছিল।
৫৮৬ বিসিইতে নেবু চাঁদ নেজ্জার কর্তৃক শলোমনের মন্দিরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে দিতীয় মন্দির তৈরী করেন হেরোদ। হেরোদীয় এই মন্দিরটি পূর্বের মত না হলেও বাহ্যিক সৌর্ন্দয়্যে কম ছিল না।
যা হোক, উপাসনালয় নির্মাণ ও উদ্বোধনের পর শলোমন প্যালেস কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছিলেন। পাঁচটি দালানের এই কমপ্লেক্স নির্মাণে এক যুগেরও বেশী সময় (তের বৎসর) লেগেছিল।
দক্ষিণ দিকের প্রথম ইমারতটি ছিল ৪৫টি এরস কাঠের স্তম্ভের উপর। এই গৃহটি ছিল দেড়’শ ফুট দৈর্ঘ্য, পঁচাত্তুর ফুট প্রস্থ এবং পঁয়তাল্লিশ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট। এটি একটি অস্ত্রাগার এবং সম্মেলন কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হত। এর পরেরটি ছিল পঁচাত্তুর ফুট দৈর্ঘ্য ও পঁয়তাল্লিশ ফুট প্রস্থের এক কক্ষ বিশিষ্ট ভবন। এটি রাজদরবার কক্ষের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হত এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে এখানে সম্ভর্ধনা দেয়া হত।
৩য় ভবনটি রাজদরবার কক্ষ। এটি ছিল অত্যন্ত বিশিষ্ট ভাবে অলংকৃত এবং অত্যন্ত সুন্দর ভাবে সজ্জিত। শলোমনের সিংহাসনটি এই কক্ষে ছিল। এই সিংহাসন ছিল অলংকৃত হাতীর দাঁতের তৈরী এবং স্বর্ণ মোড়ান। আসনের উভয় পার্শ্বে হাতা ছিল, আর তার পশ্চাৎ দিকটা ছিল গোলাকার; আর হাতার নিকটে ছিল দন্ডায়মান দু‘টি সিংহ মূর্ত্তি। সিংহাসনে উঠার সিঁড়ি ছিল ছয় ধাপ বিশিষ্ট এবং ধাপগুলির প্রত্যেক প্রান্তে ছিল দন্ডায়মান ছয়টি সিংহ।
পরেরটি বাদশা শলোমনের নিজস্ব প্রাসাদ। এটি অত্যন্ত বিশাল আকৃতির। তার বিরাট পরিবারের সদস্যরা এখানে বসবাস করত। স্ফটিকের তৈরী এই প্রাসাদ সৌন্দর্য্য এবং জাঁকজমকের দিক দিয়ে ছিল অপূর্ব।শেবার রানী বিলকিস এই ভবনে প্রবেশের সময় পানি ভেবে তার পরিধেয় হাঁটু পর্যন্ত তুলে ফেলেছিলেন।
৫ম ভবনটি শলোমনের নিজস্ব প্রাসাদ সংলগ্ন ছিল। এটিও একটি আবাসগৃহ। এখানে তার মিসরীয় স্ত্রী, ফারাও রাজকন্যা বাস করত। ফেরাউন তার এই কন্যাকে গেষর নগরী বিবাহে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। বিবাহের পর শলোমন তার এই স্ত্রীকে সিয়োন বা দাউদ নগরে এনে রেখেছিলেন। অত:পর এই প্রাসাদ নির্মিত হলে সে বসবাসের নিমিত্তে এখানে চলে আসে।
দাউদের সময়ে এ নগরকে 'দাউদ নগর', সিয়োন', শালেম বা শালিম বলা হলেও পরবর্তীকালে এর নাম হয় জেরুজালেম। আর শালেম বা শালিম নামের উৎপত্তি সালাম (এস-এল-এম) থেকে, যার অর্থ শান্তি যা হিব্রু বা আরবী থেকে এসেছে বলে কেউ কেউ বিশ্বাস করেন। সুতরাং জেরুজালেম [জেরুজালেম-ইয়ারুশালেইম (হিব্রু ইরেহ অর্থ খোদার সেবা কাজের নির্ধারিত স্থান)] অর্থ দাড়াচ্ছে- 'শান্তির আবাস' বা 'শান্তির আলয়'। সেই আদিকাল থেকে অদ্যাবধি এটি খোদার এক পবিত্র নগরী হিসেবে পরিগনিত হয়ে আসছে।
সমাপ্ত।
সংশোধিত নয়।
and tells of her glory in the midst of her people.
In the assembly of the Most High she opens her mouth,
and in the presence of his hosts she tells of her glory:
“I came forth from the mouth of the Most High,
and covered the earth like a mist.
I dwelt in the highest heavens,
and my throne was in a pillar of cloud.
Alone I compassed the vault of heaven
and traversed the depths of the abyss.
Over waves of the sea, over all the earth,
and over every people and nation I have held sway.
Among all these I sought a resting place;
in whose territory should I abide?
. “Then the Creator of all things gave me a command,
and my Creator chose the place for my tent.
Before the ages, in the beginning, he created me,
and for all the ages I shall not cease to be.
. In the holy tent I ministered before him,
and so I was established in Zion.
. Thus in the beloved city he gave me a resting place,
and in Jerusalem was my domain. -[Sirach 24:1-11]
জেরুজালেম পৃথিবীর প্রাচীন শহরগুলোর অন্যতম। ৩,০০০বিসিই-তেও এই নগরীটির অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়। ধারণা করা হয়, নর্থওয়েস্ট সেমিটিকদের দ্বারা এটি তৈরী হয়েছিল। পরবর্তীতে ফেরাউন রামেসিস ২য় এখানে বেশ কিছু অবকাঠামো তৈরী করেন। কারণ ঐ সময় এটি মিসরীয় সামন্ত নগর রাষ্ট্রের রাজধানী হওয়ায় সৈন্যদের একটি ব্যারাকও এখানে ছিল।
জেরুজালেম, ৬৬ বিসিতে। |
জেরুজালেম সাধারণভাবে আল-কুদস নামে পরিচিত। যার অর্থ “পবিত্র” বা “পবিত্র আশ্রয়স্থল” এটি খোদার পবিত্র নগরী হিসেবে পরিগণিত। বুক অব জুবিলীতে খোদা বলেন-”আর সিয়োন ও জেরুজালেম পবিত্র বলে গণ্য হবে।’-জুবিলী, ১:২৭
পাথর আচ্ছাদিত গম্বুজ |
জেরুজালেম শুধু মুসলিমদের নিকট নয় ইহুদি ও খৃষ্টানদের কাছেও এটির ধর্মীয় গুরুত্ব অনেক, কেননা, তারাও কিতাবধারী এবং ইসলামের নবী মূসা, দাউদ, শলোমন বা ঈসার সাথে আপাত:দৃষ্টিতে তাদের সম্পর্কের দাবীও আরও গভীর এবং জোরালো।
নবী দাউদের উপর দেশের ভার এসে পড়লে তিনি তার রাজ্যের জন্য একটি উপযুক্ত রাজধানীর খোঁজ করতে থাকেন। অবশেষে পশ্চিম পার্বত্যাঞ্চলের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত যিবুষীয় দূর্গস্থলকে তিনি মনোনীত করেন, যা তখন পর্যন্ত ঐ যিবুষীয়দের দখলেই ছিল। এটি সেসময় সিয়োন নামে পরিচিত ছিল।
এদিকে যিবুষীয়রা যখন দাউদের অভিপ্রায় জানতে পারল, তখন তারা ঔদ্ধত্য সহকারে বলেছিল, ‘হে দাউদ! তুমি এখানে কখনও প্রবেশ করতে পারবে না। আমাদের কানা, খোঁড়ারাই তোমাকে তাড়িয়ে দিতে পারবে।’
তাদের ঐ ঔদ্ধত্যপূর্ণ উক্তির জন্যে ঐ নগরীকে জয় করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিন্তু সিয়োনকে রাজধানী হিসেবে পছন্দ করলেও দাউদ তাদেরকে উচ্ছেদ করতে পারছিলেন না ঐ একই কারণে, যে কারণে ইউশায়া ইবনে নুনও তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযান করেননি।
দাউদের সময়কালে, ১,০০০বিসিই’র দিকে “সিয়োন” বা “জেরুজালেম” নগরীটির পূর্বনাম ছিল শালেম বা শালিম।অনেকের মতে নূহ পুত্র শ্যাম এ নগরীটির গোড়াপত্তন করেন এবং তার নামানুসারে এটি শালেম বা শালিম নামে পরিচিতি লাভ করে। আর তার ডাক নাম ছিল মালকিজাদেক [মালকিজাদেক, মালেক ও সাদেক শব্দদ্বয়ের সম্বন্বয়ে গঠিত যার অর্থ -“ন্যায়পরায়ণ শাসক”] যাকে কোরআন অনুসারে জুলকারনাইন বলে সনাক্ত করা যায়। নূহ তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন- “খোদা যেফৎকে আরও খ্যাতি দিন আর তিনি শ্যামের ঘরে বাস করুন। ”-[জেনেসিস ৯:২৭].
ভ্রাতুষ্পুত্র লুতকে উদ্ধার করে ফেরার পথে নবী ইব্রাহিম মালকিজাদেক তথা জুকারনাইনের সাথে দেখা করেন এবং তাদের মধ্যে একটা চুক্তি সম্পন্ন হয়। পূণ্যবান ব্যক্তিকে উপহার দানের প্রথা প্রচলিত ছিল। তাই ঐ চুক্তির পর ইব্রাহিম তাকে তার সম্পদের এক দশমাংশ তাকে দেবার প্রতিশ্রুতি দেন। এসময় মালকিজাদেকের বয়স ছিল ৪৭৫ বৎসর এবং ইব্রাহিমের ৭৫ বৎসর।
ইস্রায়েলীদের মিসর থেকে প্রতিজ্ঞাত দেশ কনানে প্রত্যবর্তণ কালে খোদার নির্দেশ ছিল- সেখানকার অধিবাসী সকল কনানীয়দেরকে সমূলে বিনষ্ট করতে, কারণ, তারা পবিত্র ঐ ভূমিকে নানান অনাচারে অপবিত্র করে ফেলেছিল। কিন্তু ইউশায়া খোদার ঐ নির্দেশ যথাযত ভাবে পালন করলেও যিবুষীয়দের বিরুদ্ধে তিনি তা করেননি, করতে পারেননি বা করার চেষ্টাও করেননি, কেবল ইব্রাহিমের সঙ্গে মালকিজাদেকের কৃত ঐ চুক্তির কারণে। সিয়োন নগরীতে তাদের দু’জনের মুখোমুখি করে দু’টি পিতলের মূর্ত্তি স্থাপিত হয়েছিল এবং ঐ মূর্ত্তি দু’টির মুখাবয়বে ঐ চুক্তি খোঁদিত ছিল। আর ঐ চুক্তির বলেই যিবুষীয়রা উপরের ঐ দম্ভোক্তি করেছিল।
যা হোক, যিবুষীয়দের দম্ভোক্তিতে দাউদ কৌশলের আশ্রয় নেন এবং তার সহচরদেরকে জানান- ‘যে ব্যক্তি প্রথমে এই যিবুষীয়দের উপযুক্ত জবাব দিতে পারবে, সে-ই হবে আমার সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক।’
তখন দাউদের অভিপ্রায় বুঝতে পেরে জোয়াব নিজ আগ্রহে তার কয়েকজন সাথী নিয়ে রাতের অন্ধকারে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে নগর দেয়ালের বাইরে অবস্থিত “কুমারীর ঝর্ণা”র উত্তরাভিমুখী খাঁড়া সুড়ঙ্গ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে মূর্ত্তিসহ ঐ চুক্তি ধ্বংস করে ফেলে। এতে দাউদ তাকে তার সেনাবাহিনীর প্রধান করলে সে তার বাহিনী নিয়ে নগরটি ঘেরাও করে। এদিকে যিবুষীয়রা কৃতচুক্তি দেখতে না পেয়ে তাদের মনোবল হারিয়ে ফেলে এবং আত্মসমর্পণ করে। ফলে অতিসহজেই জোয়াব নগরটি দখলে আনে। এভাবে জোয়াবের কুটিল ও কুশলী নেতৃত্বের কারণে কোন যুদ্ধ ছাড়াই সিয়োন দাউদের অধিকারে আসে এবং সেখানকার অধিবাসীরাও প্রাণে বাঁচে। তবে জোয়াব নগরীটি দখলে আনার পর অধিবাসীদের উচ্ছেদ করেন।
কুমারীর ঝর্ণা জেরুজালেম নগরীতে পানি সরবরাহ করে থাকে। নগরের পূর্বপার্শ্বের নিম্নস্থানে এটি অবস্থিত। দাউদের অনেক পরে হিস্কিয় নামক একজন ধর্মপ্রাণ শাসক এই ঝর্ণা থেকে নগরীর দক্ষিণ পার্শ্বস্থ প্রাচীরের মধ্যবর্তী শীলোহের পুকুর পর্যন্ত একটি টানেল বা সুড়ঙ্গ খনন করেছিলেন।
এই সুড়ঙ্গ ছিল সতের‘শ আটান্ন ফুট দীর্ঘ, ছয় ফুট উচ্চ, নিরেট পাথর কেটে চমৎকার ভাবে এটি খনন করা হয়েছিল। সুড়ঙ্গের শেষপ্রান্তে শীলোহের পাথুরে দেয়ালে এ কাজের বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয়।
সুড়ঙ্গের দেয়াল গাত্রে খোঁদিত খনন কার্য্যের কাহিনী। |
দাউদ সিয়োনে বসবাস শুরু করেন এবং অত:পর তার সামরিক শক্তি যাঁচাই করতে উদ্যোগী হন। এতে জোয়াবের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল নয় মাস বিশ দিনে গণনা শেষে ফিরে এলে দাউদকে হিসেব দেয়া হল যে- ‘তলোয়ার চালাতে পারে এমন লোক ইস্রায়েলে আট লক্ষ আর ইহুদাতে পাঁচ লক্ষ।’
সামরিক শক্তির ভিত্তিতে দাউদ আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি কারণ, ফেরেস্তা আজরাইলকে নাঙ্গা তরবারী হাতে অরৌণার খামারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পান তিনি। তখন খাদার কাছে এর কারণ জানতে চাইলে তাকে যিবুষীয়দের প্রতি কৃত অন্যায় এবং তাঁর উপর নির্ভরতার বদলে সামরিক শক্তির উপর নির্ভরতায় কৃত গর্বের দরুন পাপের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাকে ঐ পাপের শাস্তি হিসেবে তিনটি বিকল্প প্রস্তাবের যে কোন একটিকে বেঁছে নিতে বলা হয়। শাস্তি তিনটি ছিল-
(ক) সাত বৎসরের দুর্ভিক্ষ।
(খ) শত্রুদের কাছে তিন মাস অবধি পরাজয়। অথবা,
(গ) তিন দিনের মহামারী।
এ সময় দাউদ নিজেকে ভীষণ বিপদগ্রস্থ দেখতে পেলেন। অবশেষে তিনি ভাবলেন- 'নি:সন্দেহে কোন মানুষের দাসত্বের অধীন হবার চেয়ে খোদার শাস্তি মাথা পেতে নেয়া মঙ্গলজনক, কারণ খোদার করুণাও অসীম।’
দাউদ তৃতীয়টি বেঁছে নেন।
এতে যখন ইস্রায়েলীরা মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মরতে শুরু করল, তখন দাউদ খোদার কাছে অভিযোগ করে বললেন, ‘পাপ এবং অন্যায় আমি করেছি। কাজেই আমাকে ও আমার পিতৃবংশকে তুমি শাস্তি দাও। ওরা তো ভেড়ার মত। ওদের অপরাধটা কি?’
নবী গাদ এসময় দাউদকে অরৌণার খামারে যেস্থানে আজরাইল দাঁড়িয়ে ছিল, সেখানে পশু কোরবাণীর পরামর্শ দিলেন।
দূর থেকে অরৌণা দাউদ ও তার কর্মচারীদেরকে তার খামারের দিকে আসতে দেখে এগিয়ে এসে বলল, ‘আমার প্রভুর জন্যে তার এ দাস কি খেদমতে লাগতে পারে?’
দাউদ বলেন- ‘খোদার উদ্দেশ্যে পশু কোরবানী দিতে একটা বেদী তৈরী করার জন্যে আমি তোমার খামারটা কিনে নিতে চাই; যাতে লোকদের উপর আসা এই মড়কটা থেমে যায়।’
সে বলল-‘পোড়ান উৎসর্গের জন্যে এখানে ষাঁড় রয়েছে, আর রয়েছে প্রয়োজনীয় কাঠের আঞ্জাম।’
দাউদ বলেন- ‘নিশ্চয়ই আমি মূল্যের বিনিময়ে এগুলো কিনতে চাই।’
সে বলল, ‘প্রভু, এ সবই আপনার। কোন বিনিময়ের আবশ্যকতা নেই।’
দাউদ বলেন- ‘বিনামূল্যে পাওয়া কোনকিছু আমি আমার খোদাকে উৎসর্গ হিসেবে দেব না।’ তিনি পঞ্চাশ শেখেল রূপা দিয়ে খামারটা ও ষাঁড়গুলো কিনে নেন। এরপর খোদার উদ্দেশ্যে সেদিনই সেখানে বেদী তৈরী করে পশু উৎসর্গ করেন। তারপর দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যে প্রার্থনা করা হলে মড়ক থেমে গেল। তিন দিনের ঐ মহামারীতে সত্তুর হাজার লোক মারা পড়ে ছিল।
যা হোক, দাউদ অত:পর সিয়োনে প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করেন বটে তবে ক্ষতিগ্রস্থদেরকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণও প্রদান করেন। আর তিনি অবশিষ্ট যিবুষীয়দেরকে তাদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেন। তখন থেকেই যিবুষীয়রা ইস্রায়েলীদের সাথে সিয়োনে একসাথে বসবাস করতে থাকে। আর দাউদ নগরীটিতে স্থায়ী বসবাস শুরু করলে সেটি “দাউদ নগর” হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
পরবর্তীতে দাউদ প্রাচীর বেষ্টন করে নগরীটিকে আরও সুরক্ষিত করেন। কিন্তু নগরটিকে প্রধান ধর্মীয় কেন্দ্রস্থল ও ইস্রায়েলের রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে সেখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব ছিল।আর তাই শলোমন রাজ্য পরিচালনার শুরুতেই সেটির প্রতি মনোযোগ দেন।
অরৌণার খামারে যেখানে দাউদ খোদার উদ্দেশ্যে বেদী নির্মাণ করেন সেখানেই শলোমন উপাসনালয় নির্মাণ করেছিলেন। আর এর নতুন কাঠামোর কারণে নির্মাণের স্থানটিও বৃদ্ধি করা হয়েছিল।
এই উপাসনালয়টি নির্মাণ করতে বিশাল পরিকল্পণা নেয়া হয়েছিল। সুদক্ষ স্থপতি, নির্মাণকারী এবং প্রয়োজনীয় কাঠ, টায়ার বা সোরের রাজা হীরমের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। শলোমন, হীরমকে জানিয়েছিলেন-
‘আমি আমার প্রভু, সর্বশক্তিমান খোদার উদ্দেশ্যে একটা উপাসনাগৃহ তৈরী করতে চাই। তিনি আমার পিতা দাউদকে বলেছিলেন, তোমার যে পুত্র তোমার সিংহাসনে বসবে, সে-ই আমার গৃহ নির্মাণ করবে।’
শলোমনের মন্দির। |
হীরম উত্তরে জানাল, ‘আমি আপনার কাছে হীরাম নামে একজন খুব দক্ষ ও বুদ্ধিমান লোককে পাঠালাম। তার মা দান গোষ্ঠির, আর পিতা সোরের লোক। সে সব ধরণের খোঁদাই করার কাজে দক্ষ এবং সে মসীনার সূতার কাজও জানে। সে আপনার কারিগরদের সঙ্গে কাজ করবে।
এরস ও বেরস কাঠের ব্যাপারে আপনার সব ইচ্ছেই আমি পূর্ণ করব। আমার লোকেরা সেগুলি লেবানন থেকে নামিয়ে সমুদ্রে আনবে। তারপর সেগুলি ভাসিয়ে আপনার নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাবে। আপনি শুধু আমার প্রাসাদের লোকদের জন্যে আহার্য সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতি একটু খেয়াল রাখবেন।’
মন্দির উদ্বোধনে শলোমন। |
সিডার গাছ কাটার জন্যে ত্রিশ হাজার লোক নিয়োগ করা হয়েছিল এবং প্রত্যেক তৃতীয় মাসে দশ হাজার লোক পালাক্রমে কাজ করেছিল। পাথর কাটতে আশি হাজার এবং সাধারণ শ্রমের জন্যে সত্তুর হাজার লোক নিয়োগ পেয়েছিল। এদের উপর ছিল বিরাট সংখ্যক কর্মাধ্যক্ষ।
নির্মাণের সকল বস্তু পূর্বেই সতর্কভাবে প্রস্তুত করা হয়েছিল, তাই এই সুবিশাল ভবনটি নির্মাণকালে গৃহের মধ্যে হাতুড়ি, বাটাল বা আর কোন লৌহ যন্ত্রের শব্দ শুনা গেল না। স্বর্ণ, রৌপ্য, তাম্র এবং অন্যান্য ধাতুও নির্মাণ কাজে ব্যাবহার করা হয়েছিল। আকারের জন্যে নয় কিন্তু এর জাঁকজমক এবং এটি নির্মাণে ব্যবহৃত বস্তুসমূহের জন্যে এটি জগৎ বিখ্যাত হয়েছিল।
৫৮৬ বিসিইতে নেবু চাঁদ নেজ্জার কর্তৃক শলোমনের মন্দিরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে দিতীয় মন্দির তৈরী করেন হেরোদ। হেরোদীয় এই মন্দিরটি পূর্বের মত না হলেও বাহ্যিক সৌর্ন্দয়্যে কম ছিল না।
যা হোক, উপাসনালয় নির্মাণ ও উদ্বোধনের পর শলোমন প্যালেস কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছিলেন। পাঁচটি দালানের এই কমপ্লেক্স নির্মাণে এক যুগেরও বেশী সময় (তের বৎসর) লেগেছিল।
দক্ষিণ দিকের প্রথম ইমারতটি ছিল ৪৫টি এরস কাঠের স্তম্ভের উপর। এই গৃহটি ছিল দেড়’শ ফুট দৈর্ঘ্য, পঁচাত্তুর ফুট প্রস্থ এবং পঁয়তাল্লিশ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট। এটি একটি অস্ত্রাগার এবং সম্মেলন কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হত। এর পরেরটি ছিল পঁচাত্তুর ফুট দৈর্ঘ্য ও পঁয়তাল্লিশ ফুট প্রস্থের এক কক্ষ বিশিষ্ট ভবন। এটি রাজদরবার কক্ষের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হত এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে এখানে সম্ভর্ধনা দেয়া হত।
৩য় ভবনটি রাজদরবার কক্ষ। এটি ছিল অত্যন্ত বিশিষ্ট ভাবে অলংকৃত এবং অত্যন্ত সুন্দর ভাবে সজ্জিত। শলোমনের সিংহাসনটি এই কক্ষে ছিল। এই সিংহাসন ছিল অলংকৃত হাতীর দাঁতের তৈরী এবং স্বর্ণ মোড়ান। আসনের উভয় পার্শ্বে হাতা ছিল, আর তার পশ্চাৎ দিকটা ছিল গোলাকার; আর হাতার নিকটে ছিল দন্ডায়মান দু‘টি সিংহ মূর্ত্তি। সিংহাসনে উঠার সিঁড়ি ছিল ছয় ধাপ বিশিষ্ট এবং ধাপগুলির প্রত্যেক প্রান্তে ছিল দন্ডায়মান ছয়টি সিংহ।
পরেরটি বাদশা শলোমনের নিজস্ব প্রাসাদ। এটি অত্যন্ত বিশাল আকৃতির। তার বিরাট পরিবারের সদস্যরা এখানে বসবাস করত। স্ফটিকের তৈরী এই প্রাসাদ সৌন্দর্য্য এবং জাঁকজমকের দিক দিয়ে ছিল অপূর্ব।শেবার রানী বিলকিস এই ভবনে প্রবেশের সময় পানি ভেবে তার পরিধেয় হাঁটু পর্যন্ত তুলে ফেলেছিলেন।
৫ম ভবনটি শলোমনের নিজস্ব প্রাসাদ সংলগ্ন ছিল। এটিও একটি আবাসগৃহ। এখানে তার মিসরীয় স্ত্রী, ফারাও রাজকন্যা বাস করত। ফেরাউন তার এই কন্যাকে গেষর নগরী বিবাহে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। বিবাহের পর শলোমন তার এই স্ত্রীকে সিয়োন বা দাউদ নগরে এনে রেখেছিলেন। অত:পর এই প্রাসাদ নির্মিত হলে সে বসবাসের নিমিত্তে এখানে চলে আসে।
দাউদের সময়ে এ নগরকে 'দাউদ নগর', সিয়োন', শালেম বা শালিম বলা হলেও পরবর্তীকালে এর নাম হয় জেরুজালেম। আর শালেম বা শালিম নামের উৎপত্তি সালাম (এস-এল-এম) থেকে, যার অর্থ শান্তি যা হিব্রু বা আরবী থেকে এসেছে বলে কেউ কেউ বিশ্বাস করেন। সুতরাং জেরুজালেম [জেরুজালেম-ইয়ারুশালেইম (হিব্রু ইরেহ অর্থ খোদার সেবা কাজের নির্ধারিত স্থান)] অর্থ দাড়াচ্ছে- 'শান্তির আবাস' বা 'শান্তির আলয়'। সেই আদিকাল থেকে অদ্যাবধি এটি খোদার এক পবিত্র নগরী হিসেবে পরিগনিত হয়ে আসছে।
সমাপ্ত।
সংশোধিত নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন