কেয়ামত লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
কেয়ামত লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

৮ নভেম্বর, ২০১২

Qiyamah: কেয়ামত ও তার আলামত।

খোদার যাবতীয় সৃষ্টির মধ্যে ফেরেস্তা, জ্বিণ ও ইনসান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। জ্বিণ ও ইনসানকে স্বাধীন করে সৃষ্টি করা হয়েছে অর্থাৎ তারা খোদার আদেশ নিষেধের বিপরীতে কাজ করতে পারে এবং এই কারণে তারা বিচারের অধীন। অন্যদিকে ফেরেস্তাগণ খোদার আদেশ নিষেধের বাইরে কাজ করতে পারে না, আর তাই তারা বিচারের অধীনও নয়। জ্বিণ ও ফেরেস্তাগণ আমাদের নিকট দৃশ্যমান নয়। কারণ আমরা সেই সকল বস্তুই দেখতে পাই যা ৩৯০-৭০০nm ফ্রিকোয়েন্সি সীমায় অবস্থিত। অন্যদিকে জ্বিণ ও ফেরেস্তা ঐ ফ্রিকোয়েন্সি সীমার বাইরের কোন ফ্রিকোয়েন্সিতে সৃষ্ট।

ফেরেস্তাগণের কিছু দৃশ্যলোকে এবং কিছু অদৃশ্যলোকে খোদার আদেশ বাস্তবায়ন করে। প্রতিটি মানুষের সাথে রয়েছে ৪জন ফেরেস্তা-দু’জন চালক বা হেফাজতকারী এবং অপর দু’জন কর্মের তথা আমল লেখক। তবে যে সকল ফেরেস্তা দৃশ্যলোকে কাজ করে তাদের অদৃশ্যলোকে যাবার ক্ষমতা নেই। তাদের যাতায়াতের শেষ সীমানা হল সিদরাতুল মুনতাহা। যাহোক, পৃথিবীতে খোদার নির্দেশ বাস্তবায়নে লক্ষ কোটি ফেরেস্তা নিয়োজিত হলেও প্রধান ফেরেস্তা মাত্র চারজন-


জিব্রাইল: বার্তা বাহকের কাজে।

মিকাইল: মেঘ, বৃষ্টি, চন্দ্র, সূর্য্য তথা মহাবিশ্বসমূহ পরিচালনায়।
আজ্রাইল: প্রাণ সংহরণের কাজে, এবং
ইস্রাফিল: শিঙ্গা মুখে মহাপ্রলয় সংঘটনের অপেক্ষায়।

সত্যি বলতে কি, যেভাবে এতক্ষণ বলা হল, বিষয়টি ঠিক তেমন নয়। মূলত: ফেরেস্তাগণ তাই বাস্তবায়ন করছে যা লেখা আছে বিজ্ঞানময় কিতাবে। এ ঐ কিতাব যা লওহে মাহফুজে সংরক্ষিত। প্রকৃতপক্ষে খোদা সর্বপ্রথম বিশেষ কিছু ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন যারা অতি পুত পবিত্র, অতি মহৎ। আর তাদেরই একদল তাঁর নির্দেশে ঐ কিতাব লিপিবদ্ধ করে এবং অপরদল তার রক্ষণাবেক্ষণে নিয়েজিত হয়। অত:পর যখন ঐ কিতাব অনুসারে বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করা হল, তখন খোদা অপরাপর ফেরেস্তকূল সৃষ্টি করেন, যাদের একদল দৃশ্যলোকে এবং অপরদল অদৃশ্যলোকের নানান কাজে নিয়োজিত হয়। তারপর যখন মহাবিশ্বসমূহ নিয়মিত এবং নিম্নতম মহাবিশ্বের সৌরজগৎগুলোর কিছুকিছু গ্রহ বসবাস উপযোগী হয়ে ওঠে, তখন জ্বিণজাতিকে সৃষ্টি করে খোদা সেসকল স্থানে তাদেরকে বসবাস করতে দেন। সবশেষে সৃষ্টি মানুষ এবং অনেক নাটকীয়তার পর খোদার প্রতিনিধি হিসেবে তাদেরকে দুনিয়াতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অবশ্য ইতিমধ্যে জ্বিণজাতি মানুষকে সরলপথ বিচ্যূত করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে তাদের প্রকাশ্য শত্রু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। 


দৃশ্যমান এ মহাবিশ্ব রূপ-রস-গন্ধে ভরা, খোদার শক্তি, মহত্ব ও করুণার এক অপূর্ব বহি:প্রকাশ। তবে এ জগতের কোন কিছুই অবিনশ্বর নয়। সবকিছুই খোদার নির্দেশে ধ্বংস হবে একসময়। কেননা কোরআনে বলা হয়েছে- আমি পৃথিবীস্থ সবকিছুকে পৃথিবীর জন্যে শোভা করেছি এবং তার উপর যা কিছু রয়েছে, অবশ্যই তা আমি উদ্ভিদ শূন্য মাটিতে পরিণত করে দেব।-(১৮:৭-৮) তবে সেই অনাগত দিনটি কখন আসবে তা মানুষ জানে না, জানে না খোদার কোন মনোনীত বান্দা এমনকি তাঁর কাছের ফেরেস্তাগণও। সত্যি বলতে কি, লওহে মাহফুজের কিতাবে (Book of Life) সবকিছু লিপিবদ্ধ থাকলেও কেয়ামত (Qiyamah) সংঘটনের সময়কাল তাতে নেই। ঐ দিন ও ক্ষণটি কেবল খোদা নিজেই জানেন এবং তিনিই সরাসরি তা সংঘটনের নির্দেশ দেবেন। বলাবাহুল্য, ফেরেস্তা ইস্রাফিল তো সদাপ্রস্তুত। শিঙ্গা মুখেই আছে, কেবল নির্দেশের অপেক্ষা। 


যেদিন ইস্রাফিল খোদার নির্দেশে ঐ শিঙ্গাতে ফুঁক দেবে, সেদিন আসমান জমিন এবং তার মধ্যেকার সবকিছু এমন কি ফেরেস্তাগণও ধ্বংস হয়ে যাবে, মহান আল্লাহ ছাড়া কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। এই নির্দেশ সে ঐ সময় পাবে, যখন কোন মানুষের মধ্যে সৃষ্টিকর্তার ব্যাপারে কোন মাথাব্যাথা থাকবে না। সারা দুনিয়া পরিপূর্ণ হবে বর্বরতা ও গোমরাহীতে। মানুষের মধ্যে না থাকবে পাপ-পূণ্যের বিভেদ, না হারাম-হালালের পার্থক্য। মানুষ নিত্য নতুন বিনোদন খুঁজে ফিরবে। তাদের চরিত্র হবে পশুর মত। তারা হয়ে পড়বে ব্যাভিচারী ও বিকৃত যৌণাচারী। তবে এসব ধারণা মাত্র, এ জন্যে যে, আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, “আমি ঐ জনপদ ততক্ষণ ধ্বংস করি না যতক্ষণ না সেখানকার অধিবাসীরা সীমালংঘণ করে।”-(২৮:৫৯) এভাবে বলা যায়, তিনি দুনিয়া ততক্ষণ ধ্বংস করবেন না যতক্ষণ না সারা দুনিয়ার মানুষ সীমালংঘন করে। 


তবে এতে প্রশ্ন আসে, সেই সীমালঙ্ঘণের সীমা কি? কোরানিক পরিভাষায় খোদায়ী গজব নেমে আসে কেবল, খোদাকে এবং খোদায়ী নিদর্শণাবলীকে অস্বীকার করলে (যা আ’দ ও সামুদ জাতির ধ্বংসের কারণ), খোদার বাণী বা তাঁর রসূলকে অস্বীকার করলে (যা নূহ, শোয়েব ও হুদের জাতির ধ্বংসের কারণ), বা, খোদার বিধানাবলীর বিপরীত কোন চরম ঘৃণ্য কাজ যেমন, সডোমী, হোমোসেক্সচুয়ালিটি বা লেসবিয়ানিজমে লিপ্ত হলে (লূতের কওমের ধ্বংসের কারণ)। তবে যেহেতু খোদায়ী বিধানাবলীর সমাপ্তি ঘটেছে কোরআনের মাধ্যমে, সুতরাং বলা যায়, কেয়ামত তখনি সংঘটিত হবে যখন সারা দুনিয়ার মানুষ খোদায়ী ঐ গ্রন্থকে তাদের পিছনে ফেলে রাখবে।


এক কথায়, কেয়ামত সংঘটিত হবে তখনি, যখন আল্লাহকে স্মরণ, স্বীকার বা তাঁর বিধানাবলী মান্য করার মত কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। আর এমনটা তখনি হবে, যখন প্রযুক্তি জ্ঞানের বিকাশের ফলে মানুষের অভাব-অনটন থাকবে না। অর্থাৎ যখন মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর সকল সামগ্রী সহজলভ্য ও সস্তা হবে। এতে মানুষ যেমন পরিতৃপ্ত থাকবে তেমনি থাকবে খোশহাল ও বিনোদনমুখী। সুতরাং অনুমান করা মোটেও কঠিন নয় কেন খোদাকে স্মরণ এবং স্বীকার করার মত লোক বিরল হবে। তবে এসবই সব নয়, কেয়ামতের পূর্বে কিছু আলামত বা পূর্ব লক্ষণও প্রকাশ পাবে।


প্রথমত: ধরণীতে ঈসা মসীহের পূনরাগমণ হবে। তিনি বলেন, “ As God lives, in whose presence my soul stands, I am a mortal man as other men are, for although God has placed me as prophet over the House of Israel for the health of the feeble and the correction of sinners, I am the servant of God, and of this you are witness, how I speak against those wicked men who after my departure from the world shall annul the truth of my gospel by the operation of Satan. But I shall return towards the end, and with me shall come Enoch and Elijah, and we will testify against the wicked, whose end shall be accursed." -(Barnabas, CH-52)

ঈসার এই আগমন হবে এমন একটা সময়ে যখন এক জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। অনেক জায়গায় দুর্ভিক্ষ ও ভূমিকম্প দেখা দেবে। অধর্মের বৃদ্ধি হওয়াতে মানুষের মধ্যে দয়া-মায়া থাকবে না। সামান্য কারণে তারা একে অন্যেকে হত্যা করবে। ঐ মহাদিন সম্পর্কে মসিহ ঈসা বলেছেন, ”নবী দানিয়েলের মধ্যে দিয়ে যে সর্বনাশা ঘৃণার জিনিষের কথা বলা হয়েছিল, তা তোমরা পবিত্র স্থানে রাখা হয়েছে দেখতে পাবে। তখন যে ইহুদাতে থাকে সে পাহাড়ে পলায়ন করুক, যে ছাদে থাকবে সে জিনিষপত্র নেবার জন্যে নীচে না নামুক; আর যে ক্ষেতে থাকবে সে নিজের বস্ত্র নেবার জন্যে পশ্চাতে ফিরে না আসুক। তখন যারা গর্ভবতী আর যারা সন্তানকে বুকের দুধ দেয় তাদের অবস্থা কি ভীষণই না হবে! প্রার্থনা কর যেন তোমাদের পলায়ন কাল শীতকালে বা বিশ্রামবারে না ঘটে। সেই সময়ে এমন মহা কষ্ট হবে যা দুনিয়ার আরম্ভ হতে এসময় পর্যন্ত কখনও হয়নি এবং ঐ মহাদিনের পূর্বপর্যন্ত হবেও না।”

ঈসা আরও বলেছিলেন, “তখন অনেক ভন্ড খ্রীষ্ট ও ভন্ড নবী আসবে এবং বড় বড় আশ্চর্য কাজ করে দেখাবে, আর তারা মুমিনদেরকেও প্রতারিত করবে। সেসময় many will turn away from the faith and will betray and hate each other, Because of the increase of wickedness, the love of most will grow cold, তাই তোমাদেরকে বলছি, সেদিন যদি কেউ বলে- ”দেখ তিনি প্রান্তরে,” -তোমরা বাইরে যাবে না; যদি বলে ”দেখ, তিনি অন্তরাগারে,” -তোমরা বিশ্বাস কোরও না। কারণ বজ্র যেমন পূর্ব দিক হতে নির্গত হয়ে পশ্চিম দিক পর্যন্ত প্রকাশ পায়, তেমনি আমার আগমন হবে। আকাশে শকুন দেখলে তোমরা বুঝতে পার কোথায় মড়া রয়েছে। তোমরা তা বোঝ কারণ, তোমরা জান- যেখানে মড়া থাকে, সেখানেই শকুন জুটে। সুতরাং,”ঈসা বলেন, “দৃঢ় থেক, কেননা, he who stands firm to the end will be saved.”


ঈসা তার আগমন সম্পর্কে আরও জানিয়েছেন- ‘ডুমুর গাছের দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা নাও; যখন তার শাখা কোমল হয়ে পত্র বের হয়ে আসে, তখন তোমরা জানতে পার গ্রীষ্মকাল সন্নিকটে; সেইরূপ তোমরা ঐ সকল ঘটনা দেখলেই জানবে, তিনি অাসন্ন, এমনকি দ্বারে উপস্থিত। প্রকৃতপক্ষে সেইদিন সেই সময়ের কথা কেউ জানে না, স্বর্গের ফেরেস্তারাও না, আমিও না, কেবল খোদা জানেন। 


নূহের সময় যে অবস্থা হয়েছিল, আমার আসার সময় ঠিক সেই অবস্থাই হবে। বন্যার আগের দিনগুলিতে নূহ নৌকায় না ঢোকা পর্যন্ত লোকেরা খাওয়া দাওয়া করেছে, বিবাহ করেছে এবং বিবাহ দিয়েছে; কিন্তু যে পর্যন্ত না বন্যা এসে তাদের সকলকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল- তারা কিছুই বুঝতে পারল না। আমার আসাও ঠিক সেরকমই হবে। গৃহকর্তা যদি জানতেন কোন সময়ে চোর আসবে, তবে তিনি জেগে থাকতেন, ঘরে তিনি চোর ঢুকতে দিতেন না। সেজন্যে তোমরা প্রস্তুত থেক, কারণ, যে সময়ের কথা তোমরা চিন্তাও করবে না, সেই সময়েই আমি আসব।’


'মহাপ্রলয় কখন হবে'- এ সম্পর্কে আরব দেশে একটা কাহিনী প্রচলিত আছে। কেয়ামত সংঘটনের সময়কাল সম্পর্কে ধারণা পেতে এখন আমরা ঐ কাহিনীটাতে নজর দেব। সৈয়দ আলী এমনই বয়ান করেছেন-


"আল্লাহ একদিন ফেরেস্তা জিব্রাইলকে ডেকে বলবেন, 'হে জিব্রাইল, মর্ত্ত্যে গিয়ে মনুষ্য জাতির কাউকে এই প্রশ্ন শুধোও- 'জিব্রাইল এই মুহূর্তে কোথায় আছেন?'


সুতরাং জিব্রাইল পৃথিবীর কোন এক জনপদে নেমে এল মানুষের বেশে। কিন্তু কাকে জিগায়, সবাই মহাব্যস্ত। যাইহোক, একজনকে সে একাকী পেল। তখন সে তাকে গিয়ে সে বিনয়ের সাথে জিগাইল- 'আচ্ছা ভাই, জিব্রাইল এই মুহূর্তে কোথায় আছেন?'

লোকটা কিঞ্চিত বিরক্ত হয়ে বলল, 'এরকম বেফায়দা প্রশ্ন করে তোমার লাভটা কি? আমার এসবে কোন কৌতুহল নেই, তবে নিতান্তই যখন শুধোলে..-দাঁড়াও বলছি।'
সে দু'এক লহমা চিন্তা করে বলল- 'হু, এই মুহূর্তে সে কোথায় আছে ঠিক বলতে পারছিনে -তবে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই, সে এখন পৃথিবীতে, স্বর্গে নয়।'
জিব্রাইল তখন ফিরে গিয়ে আল্লাহকে উত্তরটা জানাল। তিনি বললেন, 'ঠিক আছে।'

এরপর কেটে যাবে আরও বহু সহস্র বৎসর। তারপর আবারও আল্লাহ- ঐ একই প্রশ্ন, একই ভাবে শুধোবার জন্যে জিব্রাইলকে পৃথিবীতে পাঠাবেন। এবারে যে মর্ত্যবাসীকে জিব্রাইল শুধোল, সে বিরক্ত হল আরও বেশী, বলল, 'কি আশ্চর্য! এখনও মানুষ এরকম অসার আর ফালতু প্রশ্ন নিয়ে আছে! তবে হিসেব কষলে যে এরকম প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় না তা নয়, আচ্ছা....'-এক সেকেন্ড চিন্তা করে- 'স্বর্গে তো নয়, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে..,'-ফের দু'সেকেন্ড চিন্তা- 'পৃথিবীতেই!.. দাঁড়াও, হ্যাঁ, কাছে পিঠেই কোথাও আছে।'

লোকটি চলে গেল। এবারও জিব্রাইল ফিরে গিয়ে আল্লাহকে সব কিছু বয়ান করলেন। আল্লাহ বললেন, 'ঠিক আছে।'

তারপর কেটে যাবে আরও কয়েক হাজার কিম্বা লক্ষ বৎসর। অত:পর জিব্রাইল সেই একই প্রশ্ন নিয়ে মর্ত্ত্যে আসবেন। এবার যাকে শুধান হল, সে তো রীতিমত চটে গেল - 'এই যুগে এমন প্রশ্ন! ওই মিয়া! তুমি কি বেওকুফ?'


লোকটার কথা শুনে জিব্রাইল বেচারা বেশ লজ্জিত হয়ে পড়ল। তা দেখে লোকটা নরম হয়ে বলল, 'আচ্ছা দেখি! হিসেব করলে অবশ্য বলা যায়, হুঁ:, স্বর্গে নয়, পৃথিবীতে।..........কাছে-পিঠে কোথাও....' -দু' এক সেকেন্ড পর- 'কী আশ্চর্য !....আরে, তুমিই তো জিব্রাইল! আবার শুধোও কেন?' লোকটি বিরক্তি নিয়ে চলে গেল। আর জিব্রাইল গিয়ে এসব খবর দিলে আল্লাহ ফেরেস্তা ইস্রাফিলকে বলবেন- 'শিঙ্গায় ফুঁক দাও।' এতে ইস্রাফিল শিঙ্গাতে ফুঁক দেবে, আর তাতেই মহাপ্রলয় শুরু হয়ে যাবে।


এ কাহিনীর তাৎপর্য আসলে কি?

প্রথমতঃ মানুষ তখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করে করে এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছবে যে স্বর্গের খবর পর্যন্ত তার অজানা থাকবে না।

দ্বিতীয়তঃ মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান বিদ্যাচর্চার একমাত্র উদ্দেশ্য হবে সাংসারিক, বৈষয়িক, প্র্যাকটিক্যাল জিনিস নিয়ে। ইহলোক ভিন্ন পরলোক, পাপ-পুণ্যের বিচার, সে স্বর্গে যাবে, না নরকে-এ সম্বন্ধে তার কোন কৌতুহল কিম্বা মাথাব্যাথা থাকবে না, কারণ আমরা দেখলাম স্বয়ং জিব্রাইলকে হাতের কাছে পেয়েও লোকটি এসবের কোন অনুসন্ধান করেনি। এমন কি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রতিও সে চরম উদাসীন।


তৃতীয়তঃ যেহেতু মানুষ সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব, তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ উদাসীন, অতএব কল্পনা করা কঠিন নয় যে, তারা তখন বিশ্বভুবনকে তাদের খেয়ালখুশী, মর্জি-মাফিক নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টায় লেগে থাকবে।"


যাহোক, কেয়ামতের অবশ্য আরও কিছু পূর্ব আলামত প্রচলিত আছে। প্রথম আলামত হিসেবে দজ্জালের আগমন হবে। সে বয়সের দিক দিয়ে যুবক হবে। তার মাথার কেশরাজি কোঁকড়ান আর চেহারা হবে কুৎসিত। তার একটি চক্ষু এমন হবে যেন তা উপরে উঠান একটি মাংসের টুকরো এবং অপর চক্ষুটি হবে কানা। হাদিসের কিতাবগুলোতে এমনই রয়েছে- 


আবু হুরায়রা বর্ণিত-"The Hour will not be established until two big groups fight each other whereupon there will be a great number of casualties on both sides and they will be following one and the same religious doctrine, until about 30 dajjals appear, and each of them will claim that he is Allah's Apostle..." — Sahih al-Bukhari, Volume 9, Book 88: Hâdith 237.


সামরা ইবনে জুন্দাব বর্ণিত, নবীজী (while delivering a ceremonial speech at an occasion of a solar eclipse)  বলেন,-"Verily by Allah, the Last Hour will not come until 30 dajjals will appear and the final one will be the One-eyed False Messiah."-ইবনে হাম্বল, তাবারানী।


আনাস ইবনে মালিক বর্ণিত: "There is never a prophet who has not warned the Ummah of that one-eyed liar; behold he is one-eyed and your Lord is not one-eyed.[-Sahih Muslim, 41:7007] Dajjal is blind of one eye[-Sahih Muslim, 41:7009] On his forehead are the letters KFR (Kafir)[-Sahih Muslim, 41:7007] between the eyes of the Dajjal[-Sahih Muslim, 41:7008] which every Muslim would be able to read."[-Sahih Muslim, 41:7009][- "The Signs Before the Day of Judgment by Ibn Kathîr".]


যা হোক, সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যবর্তী স্থানে কোন এক রাস্তায় দজ্জাল আত্মপ্রকাশ করবে। তারপর রাস্তার উভয় পার্শ্বে সে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করবে। এভাবে চল্লিশ দিন পর্যন্ত বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে সে সামনের দিকে অগ্রসর হবে। তার ফেৎনা সৃষ্টির প্রথম দিনটি এক বৎসরের ন্যায়, দ্বিতীয় দিনটি এক মাসের ন্যায়, তৃতীয় দিনটি এক সপ্তাহের ন্যায় এবং অন্যান্য দিনগুলি সাধারণ দিনের মত হবে। দজ্জালের গতির দ্রুততা এমন হবে যেন তার পিছনে বায়ু ধাবমান বলে মনে হবে। সে সমগ্র ভূ-খন্ডে বিচরণ করবে কিন্তু চারটি উপাসনালয়ের ত্রিসীমানায় পৌঁছুতে পারবে না। এগুলি হল- মসজিদে নব্বী -মদিনা, কা’বা শরীফ -মক্কা, মসজিদে আকসা -জেরুজালেম ও মসজিদে তূর -মদিয়ান।


দজ্জাল কোন এক সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে তাদেরকে তার মতাদর্শের প্রতি আহবান জানাবে। তারা তার প্রতি ঈমান আনবে। সে তখন আসমানের প্রতি বৃষ্টি বর্ষণের নির্দেশ দেবে। আর তাতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। আর সাথে সাথে জমিন হতে গাছপালা উদ্গত হবে। ঐ সম্প্রদায়ের পালিত পশুরা নব উদগত গাছপালা ভক্ষণ করে মোটা তাজা হবে আর তাদের স্তনসমূহ দুধে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে।


এরপর সে অন্য এক সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে এবং তাদেরকে তাকে খোদা বলে স্বীকার করতে আহবান জানাবে। কিন্তু ঐ সম্প্রদায়ের লোকেরা তার প্রতি ঈমান আনবে না এবং তাকে খোদা বলে স্বীকার করবে না। দজ্জাল তাদের থেকে ফিরে যাবে। সম্প্রদায়ের লোকেরা পরদিন ঘুম থেকে উঠে তাদের ঘরে কোন রকম মাল-সম্পদ দেখতে পাবে না। আর তাদের এলাকাও সম্পূর্ণ উজাড় হয়ে যাবে। দজ্জাল তখন পুনঃরায় তাদের কাছে আগমণ করবে। সে উজাড় জমিনের দিকে চেয়ে বলবে, ‘হে জমিন! তোমার নীচে যে সম্পদ গচ্ছিত আছে তা বের করে দাও।’


তার নির্দেশের সাথে সাথে জমিনের নীচে গচ্ছিত সম্পদ বের হয়ে আসবে। চারিদিকে গাছপালা উদ্গত হয়ে সবুজ শ্যামল হয়ে যাবে। নানারকম ফলমূল গাছে গাছে শোভা পাবে। এইসব দেখে উক্ত সম্প্রদায়ের এক যুবক তাকে বলবে, ‘তুমি নিশ্চয়ই সেই দজ্জাল।’


একথা শুনে সে উপস্থিত লোকদেরকে বলবে, ‘লোক সকল! যদি আমি এই ব্যক্তিকে হত্যা করে পুনঃরায় জীবিত করে দেই তবে, আমি যে সৃষ্টিকর্তা খোদা এ ব্যাপারে তোমরা সন্দেহ পোষণ করবে কি?’

সকলে উত্তরে বলবে, ‘না।’

তখন সে যুবকটিকে তরবারীর এক আঘাতে দ্বিখন্ডিত করে ফেলবে এবং কোন স্থান হতে তীর নিক্ষেপ করলে সাধারণত তীর যতটুকু পথ অতিক্রম করে দজ্জাল উক্ত যুবকের খন্ডিত দেহের টুকরোও ততদূর নিক্ষেপ করবে। এরপর সে যুবককে ডাক দেবে। খন্ডিত টুকরোদ্বয় একত্রে মিলিত হবে, আর যুবক জীবন লাভ করে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসবে। তারপর, দজ্জালকে লক্ষ্য করে বলবে, ‘আমি এখন নিশ্চিত যে তুমিই দজ্জাল।’ এতে সে তাকে পুনঃরায় হত্যা করতে চাইবে কিন্তু তাকে বা আর কাউকে অতঃপর সে হত্যা করতে সমর্থ হবে না।


কথিত অাছে- আল্লাহ নাকি এসময়ই ঈসাকে প্রেরণ করবেন। আসমানে তার চিহ্ন দেখা দেবে। মানুষ তাকে শক্তি ও মহিমার সাথে মেঘে করে আসতে দেখবে। জোরে জোরে তুরী বেজে উঠবে, আর তিনি দামেস্কের মসজিদের পূর্ব প্রান্তের সাদা মিনারের কাছে অবতরণ করবেন। তার পরণে থাকবে জাফরান রঙের পোষাক, আর দু‘জন ফেরেস্তার ডানায় ভর দিয়ে তিনি নেমে আসবেন। তিনি যখন শির নীচু করবেন তখন ঘর্মাক্ত হয়ে পড়বেন। আবার যখন শির উপরের দিকে উত্তোলন করবেন, তখন মনিমুক্তার ন্যায় ঘর্ম তার মুখমন্ডল থেকে ঝরে পড়বে। তিনি আবির্ভূত হয়েই দজ্জালকে খুঁজতে থাকবেন। অবশেষে সিরিয়ার লুদ পাহাড়ের নিকটবর্তী এক স্থানে তাকে পাবেন এবং সেখানেই তাকে হত্যা করবেন। 


যবুরে আছে-

‘তোমার দক্ষিণে স্থিত প্রভু আপন ক্রোধের দিনে রাজগণকে চূর্ণ করবেন।
তিনি জাতিদের মধ্যে বিচার করবেন, তিনি শবে দেশ পূর্ণ করবেন;
তিনি বিস্তীর্ণ দেশে মস্তক চূর্ণ করবেন;
তিনি পথিমধ্যে স্রোতের জল পান করবেন;
এই জন্যে মস্তক তুলবেন।’ --(যবুর ১১০:৫-৭)

এসময় সম্প্রদায়ের লোকজন ঈসার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তাকে খুঁজে ফিরবেন। অবশেষে একদল তার সাক্ষাত পাবেন। এরপর ঈসার প্রতি ওহী নাযিল হবে, ‘হে ঈসা! আমার এমন কতকগুলি বান্দা বের হয়ে আসছে যাদের মোকাবেলায় তোমরা সমর্থ নও।’


তখন ফেরেস্তারা দুনিয়ার একদিক হতে অন্যদিক পর্যন্ত চারিদিক থেকে মুমিন ব্যক্তিদেরকে একত্রিত করবেন। তখন যারা দু‘জন ক্ষেতে থাকবে, একজনকে নিয়ে যাবে এবং অন্যজনকে ছেড়ে যাবে; দু‘জন স্ত্রীলোক যাতা পিষবে, একজনকে নেয়া হবে এবং একজনকে ছেড়ে যাবে। এই পরিত্যক্ত লোকগুলো কারা? যারা সতর্ক থাকবে না। যারা এইরকম চরিত্রের হবে- ‘মনিব আসতে দেরী আছে, এই অবসরে একটু আমোদ প্রমোদ করেনি।’


অবশেষে ঈসা ফেরেস্তাদের সংগৃহীত মুমিনদেরকে নিয়ে সিয়োন পর্বতে আশ্রয় নেবেন। নবী জোয়েল এই দিনগুলি সম্পর্কে বলেছেন-


‘আর আমি আকাশে ও পৃথিবীতে অদ্ভুত লক্ষণ দেখাব, 

-রক্ত, অগ্নি ও ধূম স্তম্ভ ।
খোদার ঐ মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিনের আগমনের পূর্বে,
সূর্য্য অন্ধকার ও চন্দ্র রক্তিম হয়ে যাবে,
আর যে কেহ খোদার নামে ডাকবে, সেই রক্ষা পাবে; কারণ,
খোদার বাণী অনুসারে সিয়োন পর্বতে ও জেরুজালেমে রক্ষাপ্রাপ্ত দল থাকবে, এবং 
পলাতক সকলের মধ্যে এমন লোক থাকবে,
যাদেরকে খোদা ডাকবেন।’--(জোয়েল ২:৩০-৩২)

আল্লাহ ইয়াজুজ মাজুজের সম্মুখ থেকে প্রতিবন্ধকতা দূর করে দেবেন। তারা প্রত্যেক উচ্চভূমি থেকে দলে দলে দৌঁড়িয়ে বের হয়ে আসবে। তাদের প্রথম দলটি এতবড় হবে যে তারা তাবরিয়া নামক একটি উপসাগরের পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করার সময় পিপাসা দূর করতে পানি পান করে সাগরের সমস্ত পানি নিঃশেষ করে ফেলবে। ফলে সাগরটি সম্পূর্ণ শুস্ক হয়ে যাবে। অপর দলটি সেখানে উপস্থিত হয়ে পরস্পর পরস্পরকে বলতে থাকবে, ‘হয়তোবা এখানে কোনদিন পানি ছিল।’


ইয়াজুজ মাজুজ সম্মুখ পানে ছুটে চলবে। অবশেষে জেরুজালেমের কাছে ‘জাবালুল খমর’ নামক এক পাহাড়ের কাছে এসে পৌঁছিবে। পথিমধ্যে তারা যাকে পাবে হত্যা করতে থাকবে। এই পাহাড়ের কাছে এসে তারা বলবে-‘ভূ-পৃষ্ঠের উপর বসবাসকারী সমস্ত মানুষকে আমরা হত্যা করে ফেলেছি। এখন রয়েছে আসমানবাসীরা।’ এরপর তারা আসমানবাসীদের হত্যার উদ্দেশ্যে উর্ধ্বপানে দিকে তীর নিক্ষেপ করবে। তাদের তীর রক্ত রঞ্জিত হয়ে ফেরৎ আসবে। তখন তারা ধারণা করবে আসমানবাসীদেরকেও তারা হত্যা করতে সমর্থ হয়েছে।


ইয়াজুজ-মাজুজ এর কাহিনী কোরআনে বর্ণিত আছে। এই ইয়াজুজ-মাজুজ পাহাড়ের গুহায় নিরাপদে বসবাস করত এবং লোকালয়ে বেরিয়ে এসে সর্বদা অশান্তি সৃষ্টি করত; সাবার বাদশা জুলকারনান দিক ভ্রমণে পৃথিবীর এক প্রান্তে পৌঁছিলে সেখানকার অধিবাসীগণ তার নিকট অনুরোধ করে যেন তিনি তাদের ও ওদের মধ্যে এক মজবুত প্রাচীর গড়ে দেন। তারা তাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য করবে এই শর্তে জুলকারনাইন ঐ প্রাচীর নির্মাণ করে দিতে সম্মত হন।


জুলকারনাইন গলিত লোহা ও তামার সাহায্যে এক মজবুত প্রাচীর গড়ে তুলেছিলেন। ফলে ইয়াজুজ ও মাজুজ তা পার হতে পারল না বা ভেদ করতেও পারল না। তারা ঐভাবেই আটক রয়ে গেল। প্রাচীর নির্মাণের পর জুলকারনাইন বলেছিলেন, ‘এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। যখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি পুর্ণ হবে তখন তিনি ওকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন, আর আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্যি।’


জবাবে আল্লাহ জানিয়েছিলেন, ‘সেদিন (কেয়ামতের দিন) আমি ওদেরকে দলে দলে তরঙ্গের আকারে ছেড়ে দেব, আর শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। তারপর আমি ওদের সকলকেই একত্রিত করব।’


কথিত আছে, ইয়াজুজ-মাজুজ প্রতিদিনই প্রাচীর ভেদ করার জন্যে খোঁড়া খুড়ি করে। খুঁড়তে খুঁড়তে তারা যখন তারা প্রাচীর ছিদ্র করার শেষ সীমায় পৌঁছে, তখন তারা এই বলে ফিরে যায় যে ‘বাকীটুকু আমরা আগামীকাল খুঁড়ব।’ কিন্তু তারা সর্বদা নিজেদের আত্মবিশ্বাসের উপর নির্ভর করে, তাই বলে না ইনশাল্লাহ বা আল্লাহ চাইলে। এ কারণে আল্লাহ প্রাচীরটি পুনঃরায় পূর্ববৎ মজবুত অবস্থায় ফিরিয়ে দেন। পরের দিন ইয়াজুজ-মাজুজ প্রাচীর খননে নুতন ভাবে আত্মনিয়োগ করে। এ ধারা ততদিন চলবে যতদিন আল্লাহর ইচ্ছে। অতঃপর সেইদিন আসবে যেদিন তারা কাজ শেষে বলবে, ‘ইনশাল্লাহ বাকীটুকু আমরা আগামীকাল শেষ করব।’


আর পরদিন তারা প্রাচীরগাত্র ঐ অবস্থায় পাবে যে অবস্থায় বিগতদিন তারা তা রেখে গিয়েছিল। তারা অল্প সময়ের মধ্যে একটা ছিদ্র তৈরী করে ফেলবে এবং ঐ ছিদ্রপথ দিয়ে তারা স্রোতের মত বেরিয়ে আসতে থাকবে। কোরআনে রয়েছে- 


‘সে (জুলকারনাইন) বলল, ‘এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। যখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি পুর্ণ হবে তখন তিনি ওকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন, আর আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্যি।’ 

সেদিন আমি ওদেরকে দলে দলে তরঙ্গের আকারে ছেড়ে দেব, আর শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। তারপর আমি ওদের সকলকেই একত্রিত করব।-(১৮:৯৭--৯৯) আর নিশ্চয়তা দিয়ে এভাবেও বলা হয়েছে, কেয়ামত ততক্ষণ হবে না- যে পর্যন্ত না ইয়াজুজ-মাজুজকে বন্ধন মুক্ত করে দেয়া হবে এবং তারা প্রত্যেক উচ্চভূমি থেকে দ্রুত ছুটে আসবে।-(২১:৯৬)

এদিকে ঈসা ও তার অনুসারীরা তূরপাহাড়ে আবদ্ধ হয়ে রয়েছেন। পাহাড়ের উপর তাদের দীর্ঘ অবস্থানের ফলে তাদের কাছে মজুদ খাদ্য-সম্ভার সব ফুরিয়ে যাবে একসময়। মানুষ ক্ষুধায় হাহাকার করতে থাকবে। উপায়ন্তর না দেখে ঈসা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবেন। আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করবেন এবং ইয়াজুজ মাজুজের প্রতি শাস্তি নেমে আসবে। তাদের গর্দানে এক প্রকার পোঁকা দেখা দেবে। পোঁকার কামড়ে তারা সব একরাত্রে মরে যাবে।


এরপর ঈসা ও তার অনুগামীরা পাহাড় থেকে নেমে আসবেন। তারা দেখবেন যে জমিনের সর্বত্র ইয়াজুজ-মাজুজের শবদেহে পরিপূর্ণ, কোথাও পা ফেলার স্থানটুকু নেই। তাদের শবদেহ পচে গলে যাওয়ায় চারিদিকে শুধু অসহ্য দুর্গন্ধ। আর এই দূর্গন্ধ থেকে রেহাই পেতে ঈসা ও অন্যান্য মুসলমান আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করবেন। তখন আল্লাহ উটের মত বড় বড় পাখী প্রেরণ করবেন। পাখীগুলি এসে ঠোঁট এবং পায়ের চংগলের মাধ্যমে শবদেহগুলি উঠিয়ে নিয়ে নাবহল নামক স্থানে নিক্ষেপ করবে। লাশ দূরীভূত হওয়ার পর লোকেরা শুধু ইয়াজুজ-মাজুজদের তীর ধনুক মাটিতে পড়ে থাকতে দেখতে পাবে।


এরপর আল্লাহ বৃষ্টি প্রেরণ করবেন। বৃষ্টির পানিতে সবকিছু ধৌত হয়ে পরিস্কার হয়ে যাবে। আর দুনিয়াও দূর্গন্ধ মুক্ত হবে। এসময় আল্লাহ জমিনকে সম্বোধন করে বলবেন, ‘হে জমিন! তুমি ফল উদ্গত কর, পুনঃরায় তোমার বরকত প্রদর্শণ কর।’


তখন শস্যকনা ও ফল ফুলে এত বরকত হবে যে, একদল লোক একটি ডালিম খেয়ে তৃপ্তি লাভ করবে। আর সেই ডালিমের নিক্ষিপ্ত বাকলের নীচের ছায়াতে একজন লোক বসে আরাম করতে পারবে। তখনকার গৃহপালিত পশুর দুধে এত বরকত হবে যে, মাত্র একটি গরুর দুধ এক সম্প্রদায়ের লোক পান করে তৃপ্তি লাভ করবে।


এভাবে ঈসার সাহায্যে সকল মুসলমান সমস্ত রকম ফেতনা ফ্যাসাদ থেকে নিরাপদ থাকবে। তিনি সাত বৎসর মুসলমানদের নেতৃত্ব দেবেন এবং মুসলিম সাম্রাজ্যের শাসন পরিচালনা করবেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি বিবাহ করবেন। তার রাজত্বকালে পৃথিবীতে শান্তির রাজ্য কায়েম হবে। 


চল্লিশ বৎসর বয়সে (পূ্র্বের ৩৩+ পরবর্তী ৭) ঈসা মৃতুবরণ করবেন এবং মুহম্মদের সমাধির পাশে তাকে সমাহিত করা হবে ঐ স্থানটি ঐ সময় পর্যন্ত তার দাফনের জন্যে খালি পড়ে থাকবে। 
ঈসার ২য় আগমনকালীন জীবনাচার সম্পর্কে যবুরে আছে-

"ছিন্নতৃণ মাঠে বৃষ্টির ন্যায়, ভূমি সিঞ্চনকারী জলধারার ন্যায় সে নেমে আসবে।

তার সময়ে ধার্মিক প্রফুল্ল হবে, চন্দ্রের স্থিতিকাল পর্য্যন্ত প্রচুর শান্তি হবে।
সে এক সমুদ্র অবধি অপর সমুদ্র পর্য্যন্ত, ঐ নদী অবধি পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত কর্ত্তৃত্ব করবে।
তার সম্মুখে মরুনিবাসীরা নত হবে, তার শত্রুগণ ধূলা চাটবে।
লোকে তার নিমিত্ত নিরন্তর প্রার্থনা করবে, সমস্ত দিন তার ধন্যবাদ করবে।......

.....দেশ মধ্যে, পর্বত-শিখরে প্রচুর শস্য হবে,

তার ফল লেবাননের এরস বৃক্ষের ন্যায় বাতাসে দোলায়মান হবে;
এবং নগরবাসীরা ভূমির তৃণের ন্যায় প্রফুল্ল হবে।------(যবুর ৭২:৬-১৬)

রোগ-ব্যাধি, অভাব-অনাটন না থাকায় মানুষ আস্তে আস্তে খোদাকে ভুলে যাবে। অত:পর আসবে কেয়ামত। এসময়ই আলামত হিসেবে ভূ-গর্ভ থেকে একটি কিম্ভূতকিমাকার জীব বের হয়ে আসবে। এই অদ্ভুত আকৃতি বিশিষ্ট জীবটি সাধারণ জন্তুদের প্রজনন প্রক্রিয়া মোতাবেক জন্মগ্রহন করবে না, বরং অকষ্মাৎ ভূ-গর্ভ থেকে রেরিয়ে আসবে। সম্ভবতঃ এটি মক্কার সাফা পর্বত থেকে বের হয়ে। তারপর মাথার ধুলি ঝাড়তে ঝাড়তে কা’বাগৃহের কৃষ্ণপ্রস্তর ও মকামে ইব্রাহিমের মাঝখানে পৌঁছে যাবে। মানুষ একে দেখে পালাতে থাকবে, কিন্তু কেউই তার নাগালের বাইরে থাকতে পারবে না। এক সময় সে ভূ-পৃষ্টে বিচরণ করতে শুরু করবে এবং সমগ্র বিশ্ব পরিভ্রমণ করবে। সে মুমিন ও অবিশ্বাসীদেরকে চিনবে এবং তাদের সকলের সাথে কথা বলবে এবং প্রত্যেক অবিশ্বাসীর কপালে একটি বিশেষ চিহ্ন একে দেবে। সে অনেক নিদর্শণ দেখাবে, এটা এ কারণে যে, মানুষ খোদায়ী নিদর্শণে বিশ্বাস করত না। 


কোরআনে বলা হয়েছে- যখন প্রতিশ্রুত কেয়ামত সমাগত হবে, তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি জীব নির্গত করব। সে মানুষের সাথে কথা বলবে। এ কারণে যে মানুষ আমার নিদর্শণ সমূহে বিশ্বাস করত না।-(২৭:৮২)


অবশেষে সেইদিন আসবে যেদিন ইস্রাফিল প্রভুর পক্ষ থেকে এই ভয়ানক আদেশ প্রাপ্ত হবে। কথিত আছে, সেই অনাগত ভয়ানক দিনটি হবে কোন এক মহরম মাসের দশ তারিখে, শুক্রবার খুব ভোরে সূর্যোদয়ের নিকটবর্তী সময়ে, যখন মানুষ নিজ নিজ বিছানা হতে গাত্রত্থান করে নিজ নিজ কাজে যাবার প্রস্তুতি নেবে বা কাজে লিপ্ত হবে। সূর্যের কিরণ চমকাতে থাকবে, ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ দোকান বা কারখানা খোলার প্রস্তুতি নেবে। চাষী, হাল চাষের কাজ শুরু করবে। গৃহিনীদের কেউ গৃহ পরিচ্ছন্নের বা কেউ খাবার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকবে। আর ঐ সময়ই হঠাৎ করে বাঁশীর মিহীন সূর তাদের কানে ভেসে আসবে। যার কানে এ সূর প্রবেশ করবে, সে তার কাজ বন্ধ করে কান লাগিয়ে তা শুনতে থাকবে। আর মনে মনে বলতে থাকবে, ‘কি অপুর্ব, মধুর সূর! আজ পর্যন্ত তো এরূপ সুমধুর সূর তো আমি কখনও শুনিনি।’ মানুষের অন্তরস্পর্শী ঐ সুমধুর সূর বিরতিহীন ভাবে বাজতেই থাকবে। 


নিম্নগ্রামে এ সূর শুরু হলেও আস্তে আস্তে তা উচ্চগ্রামের দিকে ধাবিত হবে। ফলে একসময় সকলের কানেই আকর্ষণীয় এ আওয়াজ প্রবেশ করবে। নারী-পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা নির্বিশেষে সকলেই ঐ আওয়াজের প্রতি আকর্ষিত হবে। সকলেই তখন নিজ নিজ কাজ-কারবার ফেলে কায়মনে ঐ আওয়াজের দিকে মনোযোগী হবে। শহর, গ্রাম, শহরতলী বা পাহাড়ী- মানুষ যে এলাকারই হোক না কেন, তারা এ ধারণা করতে থাকবে যে, এ আকর্ষণীয় সূর তার এলাকার অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসছে। সুতরাং আর তারা ঐ মন মাতান সূরের উৎস সন্ধানে বেরিয়ে পড়বে। 


মানুষ সূরের উৎস খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়বে, কিন্তু কেউই নির্দিষ্ট করে বলতে পারবে না যে, এ আওয়াজ কোথা থেকে বা কোনদিক থেকে আসছে। বরং চতুর্দিকেই এই আওয়াজ সমভাবে ধ্বনিত হবে। আস্তে আস্তে সূরের তীব্রতা বাড়তে থাকবে। এই আওয়াজ যতই বাড়তে থাকবে ততই তা মানুষকে এবং সকল পশু-পাখী, কীট-পতঙ্গ, এমনকি সামুদ্রিক প্রাণীকেও বিভোর করে ফেলবে। পশুরা ঐ সূরে ব্যাকূল হয়ে পাগলের মত ছুটাছুটি করতে থাকবে, জঙ্গল ছেড়ে মানুষের ভীড়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। 


প্রথমদিকে ঐ আওয়াজ বাঁশীর মিহিন সূরের ন্যায় মানুষের হৃদয়গ্রাহী হলেও একসময় তা পরিবর্তিত হবে। অবশ্য পরিবর্তনটা হবে খুবই ধীরে। আর যখন তা পরিবর্তিত হতে হতে কর্কশ ও ভীতিপূর্ণ হয়ে যাবে, ঐসময় শ্রোতারা মনে মনে ভাবতে থাকবে, ‘এমন মধুর সূর, এমন বিভৎস্ আওয়াজে পরিবর্তিত হল কেন? এ তো ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হল?’


একসময় আওয়াজের কাঠিণ্যতা মূহুর্তের পর মূহুর্তে বদলাতে থাকবে এবং তা বিভৎসতর হতে থাকবে। ঐ সময় আকাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যেতে থাকবে। একসময় এমন অবস্থার সৃষ্টি হবে যেমন বৃষ্টির সময় মেঘের গর্জন হতে থাকে। অনবরত আওযাজ বজ্রপাতের ন্যায় গর্জিতে থাকলে একসময় মানুষ ভীষণ ভীত হয়ে পড়বে। তাদের লক্ষ্য হবে কেবল নিজেকে রক্ষা করা, কোন মূল্যবান সম্পদই তাদেরকে আর আকর্ষণ করবে না। মানুষ কেবল ছুটোছুটি করে বিভিন্নদিকে পালাতে থাকবে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। কিন্তু পালাবে কোথায়?


অবশেষে ঐগর্জণরূপী আওয়াজ আরও বেড়ে যাবে এবং আকাশে বিজলী গর্জার সাথে সাথে হাজার হাজার বজ্রপাত জমিনের উপর এসে পড়তে থাকবে। তখন সকলের অবস্থা এমন হবে যে তারা সবাই নিজের শক্তি হারিয়ে ফেলবে। তারা তখন কেবল বার বার উর্দ্ধে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে থাকবে। তারা নিশ্চিত হয়ে যাবে এটা মহাপ্রলয়-পৃথিবী ধ্বংসের দিন। তারা কেবলই বলতে থাকবে, ‘হায় আমাদের দুর্ভাগ্য, এ তো কেয়ামত দিবস! আমরা এ বিষয়ে বেখবর ছিলাম; বরং আমরা গোনাহগারই ছিলাম।’


মহাপ্রলয়ের দিনগুলো সম্পর্কে আল্লাহ বলেন- ‘হে মানব গোষ্ঠী! তোমাদের শক্তি ও ক্ষমতা সম্পর্কে একটু চিন্তা কর। তোমাদের অস্তিত্ব, তোমাদের স্থায়িত্ব। তোমাদের ক্ষমতা, এ তো সামান্য কারণে ধ্বংস প্রাপ্ত। তোমরা তো সামান্য কারণে ভয় পেয়ে থাক, অথচ কেয়ামত দিবসের কম্পন খুবই ভয়াবহ ও কঠিন হবে। পাহাড়-পর্বত যা কিছু আছে, সবই কম্পনের ফলে ধূঁয়ার ন্যায় উড়ে যাবে। হে মানব সম্প্রদায়! ঐদিন তোমরা স্বচক্ষে দেখতে পাবে। সেদিন সকল জীবকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’


আমি পৃথিবীস্থ সবকিছুকে পৃথিবীর জন্যে শোভা করেছি এবং তার উপর যা কিছু রয়েছে, অবশ্যই তা আমি উদ্ভিদ শূন্য মাটিতে পরিণত করে দেব।-(১৮:৭-৮) সেদিন সূর্য্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে।–(৭৫:৯) পাহাড় সমূহকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দেয়া হবে। পৃথিবীকে করা হবে মসৃণ সমতল ভূমি। তাতে তোমরা কোন মোড় ও টিলা দেখতে পাবে না।-(২০:১০৫-১০৬)


যখন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে-একটি মাত্র ফুৎকার, সেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে।-(৬৯:১৩) শিঙ্গার ঐ ফুৎকার ভয়াবহ শব্দের আকারে মানুষকে আঘাত করবে তাদের পারস্পরিক বাক-বিতন্ডা কালে।–(৩৬:৪৯) সেদিন পর্বতমালা উত্তোলিত হবে ও চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়া হবে,-(৬৯:১৪) অত:পর তা হয়ে যাবে ধুনিত রঙ্গীন পশমের ন্যায়।-(১০১:৫) সেদিন মানুষ বলবে, ‘পালানোর জায়গা কোথায়?’-(৭৫:১০)


কেয়ামত আসবে অতর্কিত ভাবে, অতঃপর মানুষকে তা হতবুদ্ধি করে দেবে, তখন তারা তা রোধ করতেও পারবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হবে না।-(২১:৪০) সেদিন আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছে করবেন, তারা ব্যতিত নভঃমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যারা আছে, তারা সবাই ভীত-বিহব্বল হয়ে পড়বে।-(২৭:৮৭) আকাশ বিদীর্ণ হবে, আর তা রক্তবর্ণে রঞ্জিত চামড়ার মত হয়ে যাবে।-(৫৫:৩৭) প্রবল ভাবে প্রকম্পিত হবে পৃথিবী এবং পর্বতমালা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। তারপর তা হয়ে যাবে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণা।-(৫৬:৪-৬) 


শিঙ্গায় দেয়া ফুঁক তো হবে কেবল এক মহানাদ।-(৩৭:১৯) তা হবে কর্ণবিদারী, ফলে আসমান ও জমীনে যারা আছে, সবাই বেঁহুস হয়ে যাবে।-(৩৯:৬৮) নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন হবে একটি ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যেদিন মানুষ তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন প্রত্যেক স্তন্যদাত্রী তার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে বিষ্মৃত হবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত ঘটাবে এবং মানুষকে দেখাবে মাতালের মত; অথচ তারা মাতাল নয়।-(২২:১-২) মোটকথা, আসমান ও জমিনের জন্যে কেয়ামত হবে অতি কঠিন বিষয়।–(৭:১৮৭)


সেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত।-(১০১:৩-৪) তারা পলায়ন করবে তার ভ্রাতার কাছ থেকে, তার মাতা, তার পিতা, তার পত্নী ও তার সন্তানদের কাছ থেকে।-(৮০:৩৩-৩৬) বন্ধু, বন্ধুর খোঁজ নেবে না, যদিও একে অপরকে দেখতে পাবে। আর গোনাহগার পণ স্বরূপ দিতে চাইবে তার সন্তান-সন্তুতিকে, তার স্ত্রীকে, তার ভ্রাতাকে, তার গোষ্ঠীকে, যারা তাকে আশ্রয় দিত এবং পৃথিবীর সবকিছুকে, অতঃপর নিজেকে রক্ষা করতে চাইবে।-(৭০:৯-১৪) কেয়ামত হবে ঘোরতর বিপদ ও তিক্ততার।-(৫৪:৪৬)


সেদিন সূর্য্য আলোহীন হয়ে যাবে, নক্ষত্র মলিন হয়ে যাবে, পর্বতমালা অপসারিত হবে; দশ মাসের গর্ভবতী উষ্ট্রী সমূহ উপেক্ষিত হবে, বন্য পশুরা একত্রিত হয়ে যাবে, সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে।-(৮১:১-৬) আকাশ হবে গলিত তামার মত এবং পর্বত সমূহ হবে রঙ্গীন পশমের মত।-(৭০:৮) আকাশ ধূঁয়ায় ছেয়ে যাবে -(৪৪:১০) অগ্নি স্ফূলিঙ্গ ও ধুম্রকুঞ্জ মানুষকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে, আর তারা সেসব প্রতিহত করতে পারবে না।-(৫৫:৩৫) এটা হবে এমন দিন, যেদিন কেউ কোন কথা বলবে না এবং কাউকে তওবা করার অনুমতিও দেয়া হবে না।-(৭৭:৩৫-৩৬) মানুষ সেদিন না তার অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে, না জ্বিন।-(৫৫:৩৯) কেয়ামত হবে ভয় প্রদর্শণের দিন।-(৫০:২০)


আল্লাহর সত্ত্বা ব্যতিত সবকিছুই ধ্বংস হবে।-(২৮:৮৮) কারো কি জানা আছে শিঙ্গার এ আওয়াজ কতক্ষণ স্থায়ী হবে? এ আওয়াজ প্রথম যেদিন প্রাত:কালে আরম্ভ হবে, সেদিন থেকে সবকিছু একে একে ধ্বংস হবার পর পূর্ণ ছয় মাস পর্যন্ত স্থায়ী হবে।


তবে কেয়ামত দিবসের পূর্বের অবস্থা তথা শেষ পনের দিনের সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়েছেন হযরত ঈসা- "As that day draws near, for fifteen days, shall come every day a horrible sign over the inhabitants of the earth.


--The first day the sun shall run its course in heaven without light, but black as the dye of cloth; and it shall give groans, as a father who groans for a son near to death.

--The second day the moon shall be turned into blood, and blood shall come upon the earth like dew.
--The third day the stars shall be seen to fight among themselves like an army of enemies.
--The fourth day the stones and rocks shall dash against each other as cruel enemies.
--The fifth day every plant and herb shall weep blood.

--The sixth day the sea shall rise without leaving its place to the height of one hundred and fifty cubits, and shall stand all day like a wall.

--The seventh day it shall on the contrary sink so low as scarcely to be seen. 
--The eighth day the birds and the animals of the earth and of the water shall gather themselves close together, and shall give forth roars and cries.
--The ninth day there shall be a hailstorm so horrible that it shall kill [such] that scarcely the tenth part of the living shall escape.
--The tenth day shall come such horrible lightning and thunder [such] that the third part of the mountains shall be split and scorched.

--The eleventh day every river shall run backwards, and shall run blood and not water.

--The twelfth day every created thing shall groan and cry. 
--The thirteenth day the heaven shall be rolled up like a book, and it shall rain fire, so that every living thing shall die.
--The fourteenth day there shall be an earthquake so horrible that the tops of the mountains shall fly through the air like birds, and all the earth shall become a plain.
--The fifteenth day the holy angels shall die, and God alone shall remain alive; to whom be honour and glory."-(Gospel of Barnabas-Ch-53)

অতঃপর মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম ইস্রফিলকে সৃষ্টি করবেন। তারপর তিনি তাকে ২য়বার শিঙ্গায় ফুঁক দেবার জন্যে আদেশ করবেন। এই উভয়বার শিঙ্গা ফুঁকবার মাঝখানে চল্লিশ বৎসর ব্যবধান হবে। 


When these signs be passed, there shall be darkness over the world forty years, God alone being alive, to whom be honour and glory forever.-(Gospel of Barnabas-Ch-54)


এই চল্লিশ বৎসর অবিরাম বৃষ্টিপাত হতে থাকবে। এসময়ের মধ্যেই প্রতিটি মৃত মানুষ ও জীব-জন্তুর দেহের অংশ একত্রিত হয়ে পূর্ণ কাঠামো তৈরী হবে। ইস্রফিল ২য়বার শিঙ্গায় ফুঁক দিলে ঐসকল দেহে আত্মা এসে যাবে। সকল মখলুকাতই পুনরুজ্জীবন লাভ করবে। যেভাবে মৃত শুকনো ঠনঠনে মাটি থেকে বৃষ্টির পানি পেয়ে উদ্ভিদের উদ্গমন হয়, সেভাবেই পুনরুত্থিত হবে মানুষ। তারা কবর থেকে মাথার মাটি ঝাড়তে ঝাড়তে উঠে দাঁড়াবে। কোরআন জানিয়েছে- সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে নেব, যেমন গুটান হয় লিখিত কাগজপত্র। যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। আমার ওয়াদা নিশ্চিত।-(২১:১০৪)


সমাপ্ত।


বি:দ্র: আমার নিজের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে আর্টিকেলটি গুছিয়ে লিখতে পারিনি। পরবর্তীতে এটি আরো সংশোধিত ও পরিমার্জিত করে উপস্থাপনের আশা রাখি। ও হ্যাঁ! 'মহাপ্রলয় কখন হবে'- কাহিনীটি-শোহেইল মতাহির চৌধুরীর লেখা সামহোয়্যার ইন ব্লগের একটি বিখ্যাত আর্টিকেল -'জিব্রাইল ব্লগিং করছে না কেন?' থেকে নেয়া।


# একজন প্রশ্ন করেছিল, ফেরেস্তারা অপরাধ করতে পারে না যখন বলছেন তাহলে হারুত-মারুত অপরাধ করল কিভাবে?


অামরা জানি, কোয়ান্টাম ফিজিক্স অনুসারে দৃশ্যমান জগতের সকল বস্তু নির্দিষ্ট ফিকোয়েন্সি দিয়ে গঠিত এবং সকল বস্তুর দৃশ্যমান উপস্থিতি কেবলমাত্র ৩৯০-৭০০nm ফিকোয়েন্সি সীমায় অবস্থিত। আগুণের তৈরী জ্বিণ ও নুরের তৈরী ফেরেস্তাগণ এই ফিকোয়েন্সি সীমার বা্ইরের কোন ফিকোয়েন্সি দিয়ে সৃষ্ট ফলে তারা দৃশ্যমান নয়। তবে তারা উভয় ফিকোয়েন্সি সীমায় যাতায়াত করতে পারে।


ফেরেস্তাগণ দৃশ্যমান জগতে দু’ভাবে নিজেদেরকে উপস্থাপন করতে পারে- এক, রূপ ধারণ করে ও দুই, রূপান্তরিত হয়ে। অন্যদিকে জ্বিণ রূপ ধারণ করতে পারলেও রূপান্তরিত হতে পারে না, ফলে তারা ভর করে অন্য কোন শরীরে।


এবার আসি পতিত ফেরেস্তা হারুত-মারুতের প্রসঙ্গে। অপরাধ করার সময় তারা নিজেদেরকে মানবে রূপান্তরিত করেছিল, মানবের রূপ ধারণ করেনি, ফলে তারা অপরাধ করতে পেরেছিল। আর অপরাধের সময় যেহেতু তারা ফেরেস্তা ছিল না, তাই তারা শাস্তির অধীন হয়। অত:পর তাদেরকে দু’টো অপশন দেয়া হয়েছিল- হয় দুনিয়াতে কেয়ামত পর্যন্ত অবস্থান, অথবা বিচার দিবসে মানুষের সাথে বিচারের অধীন হওয়া। হারুত-মারুত প্রথমটি বেঁছে নেয়। কারণ, তাদের জানা ছিল দুনিয়ার সমাপ্তি আছে, অন্যদিকে পরকালে খোদার শান্তির ধরণ ও সময়কাল তাদের জানা নেই।


অবশ্য এটা ঠিক যে পতিত ফেরেস্তাদ্বয় অপরাধের পর ক্ষমা প্রার্থণা করলেও ক্ষমাশীল খোদা তাদেরকে ক্ষমা করেননি, এটা এ কারণে যে, ক্ষমার অধীন কেবল আদম সন্তানগণ যদি তারা ক্ষমা চায়, কিন্তু জ্বিণ বা ফেরেস্তা নয়।  

১৮ মার্চ, ২০১২

Harut-Marut: নবী ইদ্রিস ও পতিত ফেরেস্তা উপাখ্যান।

আদম পুত্র শীষের বংশধরদের মধ্যে ইদ্রিস জন্মগ্রহন করেছিলেন। ইদ্রিস অর্থ পাঠ শিক্ষাদাতা। তিনি লোকদেরকে সৎপথ প্রদর্শণ করতেন, তাদেরকে খোদায়ী বাণীসমূহ শোনাতেন। তার উপর বেশ কয়েকটি সহিফা অবতীর্ণ হয়েছিল।

ইদ্রিস দিবা ও রাত্রের অধিকাংশ সময় আল্লাহর এবাদতে মশগুল থাকতেন এবং গোটা বৎসরই তিনি রোজা রাখতেন। বাল্যকাল থেকেই তিনি তার এই অভ্যাস গড়ে তুলেছিলেন। কথিত আছে তার প্রতিদিনের ইফতারী জান্নাত থেকে একজন ফেরেস্তা বয়ে নিয়ে আসত। কোন একদিন সন্ধ্যায় তিনি ইফতারী করার অপেক্ষায় রয়েছেন। কিছুক্ষণ আগে ইফতারীর ফলমূল এসে পৌঁছিছে। এসময় এক ব্যক্তি তার সাক্ষাতে এল। লোকেরা ইদ্রিসের নিকট খোদায়ী কালাম, এবাদতের নিয়ম পদ্ধতি জানতে ও শিখতে আসত। তিনি ভাবলেন আগন্তুকের আগমনও নিশ্চয় সেই রকমই কোন উদ্দেশ্যে। কিন্তু আজ তো সেদিন নয়- (কেননা- the prophet divided his time into two. For three days of the week, he would preach to his people and four days he would devote solely to the worship of God. -Lives of the Prophets, Leila Azzam)! তথাপি তিনি আগত অতিথিকে সমাদরের সাথে বসতে দিলেন।

ইফতারির সময় হল। ইদ্রিস অতিথিকে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করলেন এবং নিজেও ইফতারী সেরে নিলেন। অতঃপর অভ্যাসমত সেখানেই এবাদতে মশগুল হয়ে পড়লেন। তার আর আগত অতিথির কথা স্মরণে রইল না। প্রত্যুষে তার যখন অতিথির কথা মনে পড়ল, তিনি বড়ই লজ্জিত হলেন এবং তৎক্ষণাৎ তার প্রতি নজর দিলেন। তিনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন অতিথি কোন খাদ্য গ্রহণ করেনি, যেমন সে বসে ছিল, তেমনিই বসে। কিন্তু তার চোখে মুখে অনিদ্রা জনিত কোন ক্লান্তি নেই। এদেখে তার মনে সন্দেহ হল। তিনি তৎক্ষণাৎ তাকে তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। সে বলল- ‘আমি জিব্রাইল। আল্লাহ তোমার প্রশংসায় একদিন বলেছিলেন-সমস্ত আদম সন্তান তাদের নেক আমল দ্বারা দিনে যে পরিমাণ পূণ্য অর্জণ করে, একা ইদ্রিসই তার এবাদতের মাধ্যমে তার চেয়েও বেশী অর্জণ করে।’এতে তোমার এবাদতের ধারা আমার দেখার ইচ্ছে হল। অতঃপর আল্লাহর অনুমতিক্রমে তোমার সাক্ষাতে চলে এলাম।’ 

কথোপকথনের এক পর্যায়ে ইদ্রিস আসমান ভ্রমনের ইচ্ছে ব্যক্ত করেন জিব্রাইলের নিকট। তখন সে বলল, ‘আল্লাহর অনুমতিক্রমে আমি তোমাকে ৪র্থ আসমান পর্যন্ত নিতে পারি।’

ইদ্রিস খুশী হলেন এবং জিব্রাইল তাকে নিয়ে রওনা দিল। ৪ঠা আসমানে আজরাইলের সঙ্গে ইদ্রিস পরিচিত হলেন। রূহ কবচের কাজটা এবং অনুভূতি কেমন তা জানতে ইদ্রিস আজরাইলকে তার রুহ কবচের অনুরোধ করেন। আজরাইল বলেছিল- ‘প্রতিটি মানুষের জীবনকাল নির্ধারিত এবং তোমার সেই সময় এখনও আসেনি।’

তখন ইদ্রিসের অনুরোধে আজরাইল আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে তার রূহ কবচ করল এবং পুনঃরায় তাকে জীবিত করে দিল। এসময় ইদ্রিস বললেন, ‘হে আজরাইল! এতো বড়ই যন্ত্রণাদায়ক কষ্ট!’
আজরাইল বিনীতভাবে বলেছিল, ‘আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি আপনার কষ্ট লাঘবের জন্যে, নইলে এত সহজে কারও রূহ আমি কবচ করিনে।’

 জিব্রাইল ইদ্রিসকে বেহেস্ত-দোযখ দেখিয়ে দিল।
অত:পর ইদ্রিস জিব্রাইলের নিকট বেহেস্ত ও দোযখ ঘুরে দেখাবার অনুরোধ করলেন।তার বিনীত অনুরোধে জিব্রাইল সম্মত হল। ৪ঠা আসমানের শেষ সীমানাই 'সিদরাতুল মুনতাহা'। সিদরা অর্থ বরই মুনতাহা অর্থ শেষ সীমানা। অর্থাৎ দৃশ্যলোকের এই শেষ সীমানায় রয়েছে সেই বরই কূলগাছ যার পাতাতে ফেরেস্তারা ফড়িং-এর মত জড়িয়ে থাকেন। দুনিয়ার কাজে নিয়োজিত ফেরেস্তারা এই সীমানার বাইরে যেতে পারেন না। এই সীমানার পর থেকেই শুরু হয়েছে অদৃশ্যলোক, যার শুরু জান্নাতুল মাওয়া বেহেস্ত দিয়ে। সুতরাং জিব্রাইল এই সীমানার মধ্যে থেকেই তাকে এই বেহেস্তের কিছুটা দেখিয়ে দিল।তারপর একইভাবে তাকে দোযখেরও কিছুটা দেখিয়ে দিল। অত:পর তারা যখন ঐ আসমানেরই কোন একখানে ছিলেন, জিব্রাইল তাকে ফিরে যাবার তাগাদা দিল। তখন ইদ্রিস বললেন, ‘হে জিব্রাইল! আল্লাহ আমার প্রতি কৃপাদৃষ্টি প্রদর্শণ করেছেন। জন্মলাভ করলে যে মৃত্যুবরণ করতে হয়, সেই মৃত্যুর পেয়ালাও আমাকে পান করিয়েছেন। আমি দোযখের আযাব দেখেছি, আবার বেহেস্তের অপার সুখ-শান্তিও দেখেছি। এখন আমি এ স্থান ছেড়ে কিছুতেই কোথাও যাব না।’
তার এ কথায় জিব্রাইল আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। সে সিজদায় পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল। আল্লাহ বললেন, ‘কিতাবে যা লেখা আছে তা তুমি পরিবর্তন করতে পারবে না। তার ভাগ্যে এ-ই লেখা ছিল। সুতরাং তাকে সেখানেই থাকতে দাও।

অবশ্য ইদ্রিস সম্পর্কে Book of Chamis এর কাহিনী কিছুটা ভিন্ন। সেখানে এ কাহিনী এভাবেই উপস্থাপিত হয়েছে- Idris, or Enoch, was the son of Jarid, the son of Mahlalel, but was called Idris, from darasa (to study), for he was constantly occupied with the study of the holy books, both those which Allah had revealed to Adam, and those which Gabriel brought to him from heaven. He was so virtuous and pious, that Allah anointed him to be his prophet, and sent him as a preacher to the descendants of Cain, who only employed in deeds of sin the gigantic frames and surpassing strength with which Allah had endowed them. 

Enoch exhorted them unceasingly to purity of conduct, and was often compelled to draw his sword in defense of his life. He was the first who fought for Allah, the first who invented the balance to prevent deception in traffic, and the first also to sew garments, and to write with the Kalam. Idris longed ardently for Paradise; still he was not desirous of death, for he was anxious to do good on the earth; and but for his preaching and his sword, the sons of Cain would have flooded the earth with iniquity. Allah sent him the Angel of Death in the form of a beautiful virgin, in order to see whether he would approve himself worthy of the peculiar favor which no man before him had ever received.

"Come with me," said the disguised angel to Idris, "and thou shalt do an acceptable work to Allah. My younger sister has been carried off by an ungodly descendant of Cain, who has confined her in the farthest regions of the West! Gird on thy sword, and help me to deliver her!"

Enoch girded on his sword, and took up his bow and the club, with which he had laid low at a single stroke whole ranks of the enemy, and followed the virgin from morn till eve, through desolate and arid deserts, but he said not a word and looked not upon her. At nightfall she erected a tent, but Idris laid himself down at its entrance to sleep on the stony ground. On her inviting him to share her tent with her, he answered, "If thou hast any thing to eat, give it to me." She pointed to a sheep which was roving through the desert without a keeper, but he said, "I prefer hunger to theft; the sheep belongs to another."

Next day they continued their journey as before, Idris still following the virgin and uttering no complaint, though he was nearly overcome with hunger and thirst. Toward evening they found a bottle of water on the ground. The virgin took it up, and opening it, would have forced Enoch to drink, but he refused, and said, "Some luckless traveler has lost it, and will return to seek for it."

During the night, Idris having once more baffled all the wiles of the virgin, who had again endeavored to draw him into her tent, Allah caused a spring of clear fresh water to gush forth at his feet, and a date-tree to rise up laden with the choicest fruit. Idris invited the virgin to eat and to drink, and concealed himself behind the tree, waiting her return to the tent; but when, after a long interval, she came not, he stepped to the door and said, "Who art thou, singular maiden? These two days thou hast been without nourishment, and art even now unwilling to break thy fast, though Allah himself has miraculously supplied us with meat and drink; and yet thou art fresh and blooming like the dewy rose in spring, and thy form is full and rounded like the moon in her fifteenth night."

"I am the Angel of Death," she replied, "sent by Allah to prove thee. Thou hast conquered; ask now, and he will assuredly fulfill all thy wishes."
"If thou art the Angel of Death, take my soul."
"Death is bitter: wherefore desirest thou to die?"
"I will pray to Allah to animate me once more, that after the terrors of the grave, I may serve him with greater zeal."

"Wilt thou, then, die twice? Thy time has not yet come: but pray thou to Allah, and I shall execute his will."
Enoch prayed:  "Lord, permit the Angel of Death to let me taste death, but recall me soon to life! Art thou not almighty and merciful?"

The Angels of Death was commanded to take the soul of Idris, but at the same moment to restore it to him. On his return to life, Idris requested the angel to show him Hell, that he might be in a position to describe it to sinners with all its terrors. The angel led him to Malik, its keeper, who seized him, and was in the act of flinging him into the abyss, when a voice from heaven exclaimed,

"Malik, beware! Harm not my prophet Idris, but show him the terrors of thy kingdom."
He then placed him on the wall which separates hell from the place appointed as the abode of those who have merited neither hell nor heaven. Thence he saw every variety of scorpions and other venomous reptiles, and vast flames of fire, monstrous caldrons of boiling water, trees with prickly fruits, rivers of blood and putrefaction, red-hot chains, garments of pitch, and so many other objects prepared for the torture of sinners, that he besought Malik to spare him their farther inspection, and to consign him once more to the Angel of Death.

Idris now prayed the latter to show him Paradise also. The angel conducted him to the gate before which Ridwhan kept his watch. But the guardian would not suffer him to enter: then Allah commanded the tree Tuba, which is planted in the midst of the garden, and is known to be, after Sirdrat Almuntaha, the most beautiful and tallest tree of Paradise, to bend its branches over the wall. Idris seized hold of them, and was drawn in unobserved by Ridwhan. The Angel of Death attempted to prevent it, but Allah said, "Wilt thou slay him twice?" Thus it came to pass that Idris was taken alive into Paradise, and was permitted by the most gracious One to remain there in spite of the Angel of Death and of Ridwhan. -(Book of Chamis, by Husein ibn Muhammed.) 

আর ইদ্রিস সংক্রান্ত কোরআনের আয়াতসমূহ- সে (ইদ্রিস) ছিল সত্যবাদী, নবী। আমি তাকে উচ্চে উন্নীত করেছিলাম।এরাই তারা, নবীদের মধ্যে থেকে যাদেরকে আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন।-(১৯:৫৬-৫৮)

ইদ্রিসের স্বর্গারোহণ (এখানে স্বর্গ বলতে আসমান বা  উর্দ্ধাকাশ বোঝানো হয়েছে, ঐ স্বর্গ নয় যেখানে মানুষ বিচার শেষে প্রবেশ করবে। আর বিচারের আগে কেউ সেখানে যেতে পারে না।) সম্পর্কে অনেকে ভিন্নমত পোষণ করেন। কিন্তু আমরা তা করছিনা কারণ- Qur'an says that he was "exalted to a high station", which has generally been understood in Islamic tradition to mean that he ascended into Heaven without dying. Because of this and other parallels, traditionally Idris has been identified with the Biblical Enoch, and therefore Islamic tradition usually places Idris in the early Generations of Adam, and considers him one of the oldest prophets mentioned in the Qur'an, placing him sometime between Adam and Noah.
"on Muhammad's Night Journey, he encountered Idris in the fourth heaven." -(Muslim, 1:309, 1:314)

যাইহোক, মানুষ জ্ঞানের দিক থেকে ফেরেস্তাদের থেকে শ্রেষ্টতর এটা আদম প্রমান করেছিলেন। কিন্তু মানুষ ফেরেস্তাদের মত পুত-পবিত্র নয়, তদুপরি তারা বিচারের অধীন। এই কারনে ৪র্থ আসমানে ইদ্রিস বসবাস করতে শুরু করলে সেখানকার কিছু ফেরেস্তা আল্লাহর নিকট অভিযোগ পেশ করল। তারা বলল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! যে ব্যক্তির গোনাহের কোন হিসেব তুমি নাওনি এবং যে আমাদের চেয়ে পুত-পবিত্রও নয়, তার সাথে কি করে আমরা বসবাস করতে পারি?’

Lester L Grabbe.
ফেরেস্তাদের এহেন উক্তিতে আল্লাহ বললেন, ‘সাবধান! দুনিয়ার ধান্দাবাজি, ফেরেপ্পাবাজির কিছুই তোমরা জান না। সেখানে তোমরা মানব সন্তান রূপে বসবাস করলে তাদের কারো চেয়ে কম গোনাহের মধ্যে ফেঁসে যেতে না।’

তারা বলল, ‘হে আল্লাহ! আমরা আদমের বংশধরদের মত কেন হব? তাদের চেয়ে তো আমাদের ভাল-মন্দের জ্ঞান অনেক বেশী। আমরা তোমার শাস্তির ভয় অনেক বেশী রাখি। তাই আমাদের জানা মতে আমরা কখনও কোন পাপের পথে পা বাড়াব না।’
তিনি বললেন, ‘বেশ! তোমাদের মধ্যে যারা চাও দুনিয়াতে কিছুদিন বসবাস করে এস।’

ফেরেস্তা হারুত-মারুত (Harut-Marut) দুনিয়াতে এসে মানুষ হয়ে মানুষের সাথে মিশে বসবাস করতে শুরু করল।

পতিত ফেরেস্তাদ্বয় ও জোহরা, Br. Museum, NY.
বাবিল শহরে জোহরা নাম্মী এক পরমা সুন্দরী কন্যা ছিল। আর ফেরেস্তা হারুত ও মারুত তার রূপলাবণ্যে মোহিত হয়ে পড়ল। তারা তাদের সত্ত্বার কথা ভুলে গিয়ে জোহরার প্রেমে মত্ত হয়ে রইল এবং একসময় তার সাথে তারা ব্যভিচারও করে বসল। লেস্টার এল, গ্রাবে (Lester L Grabbe) অবশ্য মানবীর সাথে ফেরেস্তাদ্বয়ের এই যৌন সম্পর্কের কাহিনীকে- "An old myth in Judaism" বলে উল্লেখ করেছেন- (Grabbe ২০০৪, পৃ: ১০১)। 

অবশ্য ইহুদি পুরাণে এমনও বলা হয়েছে-  "When the angels came to earth, and beheld the daughters of men in all their grace and beauty, they could not restrain their passion. One of the angels saw a women and he lost his heart to her. She promised to surrender herself to him, if first he taught her the Ineffable Name, by means of which he raised himself to heaven. He assented to her condition. But once she knew it, she pronounced the Name, and herself ascended to heaven, without fulfilling her promise to the angel. God said, "Because she kept herself aloof from sin, we will place her among the seven stars, that men may never forget her," and she was put in the constellation of the Pleiades." 


আবার ডেড সী স্ক্রলস (Dead Sea Scrolls) -এর মধ্যে পাওয়া বুক অফ জায়ান্ট (Book of Giants)-এ বর্ণিত কাহিনী একটু ভিন্ন। সেখানে বলা হয়েছে পৃথিবীর পরিবেশ তখন ছিল ভিন্ন। মানুষ ছিল দীর্ঘ আয়ূর (যেমন- নূহের আয়ূ বলা হয়েছে- ৯৬৯ বৎসর; কোরআন অবশ্য নূহের বয়স ৯৫০ বৎসর বলে উল্লেখ করেছে- ("সে (নূহ) তাদের মধ্যে পঞ্চাশ কম এক হাজার বৎসর অবস্থান করেছিল।" -২৯:১৪)। আর ফেরেস্তাদের সাথে মানবীর মিলনে দৈত্যরা জন্মলাভ করে। যাদের একেকজন ছিল ৪৫০ ফুট লম্বা, ইত্যাদি। 


অবশ্য অনেকে (কিছু কিছু তফসির) মতে- জোহরা তাকে পেতে তার তার ধর্ম গ্রহণের শর্ত আরোপ করেছিল। ফেরেস্তাদ্বয় উভয়ে তা অস্বীকার করলে সে শর্ত শিথিল করে তার দেবতাকে সিজদা করতে বলে। তারা তাও অস্বীকার করে। অত:পর তারা কোন এক সময়ে মদ পান করে এবং জোহরার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। এসময় কোন এক ব্যক্তি তাদের কার্য্য দেখে ফেললে অপরাধ ফাঁস হয়ে যাবার ভয়ে তারা তাকে হত্যা করে। উল্লেখ্য মদ কখনও হারাম ছিল না। অবশ্য হারূন ও তার সন্তানগণ যারা সাক্ষ্যতাম্বুর দেখাশোনা করবে তাদের জন্যে নিষিদ্ধ ছিল। নবী শলোমনও মদ্যপানের কূ-ফল কর্ণনা করেছেন, আর নবী হবকুকক বলেছেন- "Woe unto him that giveth his neighbour drink, that puttest thy bottle to him, and makest him drunken also..." -Habakkuk 2:15. অন্যদিকে মুহম্মদের শরীয়তে মদের খারাপ দিক গুলোর কথা বিবেচনা করে তা না পান করার জন্যে উপদেশ দেয়া হয়েছে।


উপরের ঘটনাগুলোর যেটাই সত্য হোক না কেন, এটা ঠিক যে ফেরেস্তাদ্বয় মারাত্মক অপরাধই করেছিল-আর তারা সেটি করেছিল সেইসময়, যেসময় তারা মানব ছিল, ফেরেস্তা নয়। যাইহোক, ঐ অপরাধটি করার পর তাদের নেশা কেটে গিয়েছিল এবং তারা তাদের ভুলও বুঝতে পেরেছিল এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল। কিন্তু তাদেরকে ক্ষমা করা হয়নি। পুরো বিষয়টি আরও ভালভাবে ব্যাখ্যা করতে আমরা কোয়ান্টাম ফিজিক্সে ফিরি-


কোয়ান্টাম ফিজিক্স অনুসারে দৃশ্যমান জগতের সকল বস্তু নির্দিষ্ট ফিকোয়েন্সি দিয়ে গঠিত এবং সকল বস্তুর দৃশ্যমান উপস্থিতি কেবলমাত্র ৩৯০-৭০০nm ফিকোয়েন্সি সীমায় অবস্থিত। আগুণের তৈরী জ্বিণ ও নুরের তৈরী ফেরেস্তাগণ এ ফিকোয়েন্সি সীমার বা্রের কোন ফিকোয়েন্সি দিয়ে সৃষ্ট ফলে তারা দৃশ্যমান নয়। তবে তারা উভয় ফিকোয়েন্সি সীমায় যাতায়াত করতে পারে।


ফেরেস্তাগণ দৃশ্যমান জগতে দু’ভাবে নিজেদেরকে উপস্থাপন করতে পারে- এক, রূপ ধারণ করে ও দুই, রূপান্তরিত হয়ে। অন্যদিকে জ্বিণ রূপ ধারণ করতে পারলেও রূপান্তরিত হতে পারে না, ফলে তারা ভর করে অন্য কোন শরীরে। তবে জ্বিণদের 
দৃশ্যমান জগতের প্রতিটি বস্তুর ফ্রিকোয়েন্সি জানা থাকায়, তারা কিন্তু ইচ্ছে করলে ম্যাটার ট্রান্সমিশনের মত করে যে কোন বস্তু স্থানান্তর করতে পারে। সেবার রানী বিলকিসের সেই বিশাল সিংহাসনটা নবী শলোমনের উপদেষ্টা জ্বিণ এভারেই এনে হাজির করেছিল তার সম্মুখে। যেমন-


শলোমন আরও বলল, ‘হে আমার পরিষদবর্গ! তারা আমার কাছে আত্মসমর্পন করতে আসার পূর্বে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমাকে এনে দেবে?’

এক শক্তিশালী জ্বীন বলল, ‘আপনি আপনার স্থান থেকে ওঠার আগেই আমি তা এনে দেব। এ ব্যাপারে আমি এমনই শক্তি রাখি। আর আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।’
কিতাবের জ্ঞান যার ছিল সে বলল, ‘আপনি চোখের পলক ফেলার আগেই আমি তা এনে দেব।’ -সূরা নমল, ২৭:৩৮-৪০

আবার যেহেতু জ্বিণজাতি দৃশ্যমান জগতের সকল বস্তুর ফিকোয়েন্সি জানে, তাই তারা বস্তু বা প্রাণীর ফিকোয়েন্সিতে অতি নগণ্য পরিমাণে পরিবর্তণ এনে বা তাকে বেষ্টন করে এক ফিকোয়েন্সি জাল সৃষ্টির মাধ্যমে, তাকে সাময়িক পরিবর্তিত রূপদান, পরিবর্তিত আকারে উপস্থাপন বা তাকে সাময়িক অদৃশ্যমান করে দিতে পারে। জ্বিণ এভাবেই বিলকিসের সিংহাসনে সামান্য পরিবর্তণও এনেছিল। যেমন-


যখন তা সামনে রাখা দেখল, তখন (শলোমন) বলল, ........‘তার সিংহাসনের আকৃতিতে সামান্য পরিবর্তণ আনো; দেখি সে চিনতে পারে- নাকি ভুল করে।’ -(২৭:৩৮-৪১) আর এ সামান্য পরিবর্তনের কারনে বুদ্ধিমতী বিলকিস দাবী করেননি ঐটি তার সিংহাসন, কিন্তু তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সেটি তারই। আর তাই শলোমনের প্রশ্নের প্রদত্ত উত্তরে তার ঐ মনোভাবের প্রতিফলন ঘটেছিল-তার উত্তর হ্যাঁ- না দু’টোই মিন করেছিল। যেমন- (বিলকিস) যখন পৌঁছিল তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হল, ‘তোমার সিংহাসন কি এ রকম?’

সে বলল, ‘এ তো এ রকমই। ...।’-(২৭: ৪২)

যা হোক, মূল কথায় আসি, যেহেতু পতিত ফেরেস্তা হারুত-মারুত অপরাধ করার সময় নিজেদেরকে মানবে রূপান্তরিত করেছিল, মানবের রূপ ধারণ করেনি, ফলে তারা অপরাধ করতে পেরেছিল। আর অপরাধের সময় যেহেতু তারা ফেরেস্তা ছিল না, পূর্ণ মানবই ছিল, তা তারা শাস্তির অধীন হয়। অত:পর তাদেরকে দু’টো অপশন দেয়া হয়েছিল- 

-হয় দুনিয়াতে কেয়ামত পর্যন্ত অবস্থান, অথবা, 
-বিচার দিবসে আদম সন্তানদের সাথে বিচারের সম্মুখীণ হওয়া। 

হারুত-মারুত বিচারের সস্মুখীন হওয়ার ভয়ে দুনিয়াতে কেয়ামত পর্যন্ত বসবাসকেই শ্রেয় বিবেচনা করেছিল। কারণ তারা জানত দুনিয়া স্বল্প সময়ের জন্যে, অন্যদিকে পরকালে খোদার শান্তির ধরণ, সীমা ও সময়কাল তাদের জানা নেই।

আর ফেরেস্তাদ্বয় অপরাধের পর ক্ষমা প্রার্থণা করলেও ক্ষমাশীল খোদা তাদেরকে ক্ষমা করেননি, এটা এ কারণে যে, ক্ষমার অধীন কেবল আদম সন্তানগণ যদি তারা ক্ষমা চায়, কিন্তু জ্বিণ বা ফেরেস্তা নয়। 
আর এ সম্পর্কে বাইবেলে এমনটা বলা হয়েছে- "For if God spared not the angels that sinned, but cast them down to hell, and delivered them into chains of darkness, to be reserved unto judgment;"2 Peter 2:4 
"And the angles which kept not their first estate, but left their own habitation, he hath reserved in everlasting chains under darkness unto the judgment of the great day." -Jud 1:6 

এই কাহিনী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কব্যিক ছন্দে কিভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তা আমরা দেখি-


কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
"---------------------------শোনো,
একদা অপাপ ফেরেস্তা সব স্বর্গ-সভায় কোনো
এই আলোচনা করিতে আছিল বিধির নিয়মে দুষি,’
দিন রাত নাই এত পূজা করি, এত ক’রে তাঁরে তুষি,
তবু তিনি যেন খুশি নন্‌-তাঁর যত স্নেহ দয়া ঝরে
পাপ-আসক্ত কাদা ও মাটির মানুষ জাতির’পরে!

শুনিলেন সব অন্তর্যামী, হাসিয়া সবারে ক’ন,-
মলিন ধুলার সন্তান ওরা বড় দুর্বল মন,
ফুলে ফুলে সেথা ভুলের বেদনা-নয়নে, অধরে শাপ,
চন্দনে সেথা কামনার জ্বালা, চাঁদে চুম্বন-তাপ!
সেথা কামিনীর নয়নে কাজল, শ্রোণীতে চন্দ্রহার,
চরণে লাক্ষা, ঠোটে তাম্বুল, দেখে ম’রে আছে মার!
প্রহরী সেখানে চোখা চোখ নিয়ে সুন্দর শয়তান,
বুকে বুকে সেথা বাঁকা ফুল-ধনু, চোখে চোখে ফুল-বাণ।

দেবদুত সব বলে, ‘প্রভু, মোরা দেখিব কেমন ধরা,
কেমনে সেখানে ফুল ফোটে যার শিয়রে মৃত্যু-জরা!’
কহিলেন বিভু-‘তোমাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ যে দুইজন
যাক্‌ পৃথিবীতে, দেখুক কি ঘোর ধরণীর প্রলোভন!’

‘হারুত’ ‘মারুত’ ফেরেস্তাগণের গৌরব রবি-শশী
ধরার ধুলার অংশী হইল মানবের গৃহে পশি’।
কায়ায় কায়ায় মায়া বুলে হেথা ছায়ায় ছায়ায় ফাঁদ,
কমল-দীঘিতে সাতশ’ হয়েছে এই আকাশের চাঁদ!
শব্দ গন্ধ বর্ণ হেথায় পেতেছে অরূপ-ফাঁসী,
ঘাটে ঘাটে হেথা ঘট-ভরা হাসি, মাঠে মাঠে কাঁদে বাঁশী!
দুদিনে আতশী ফেরেস্তা প্রাণ- ভিজিল মাটির রসে,
শফরী-চোখের চটুল চাতুরী বুকে দাগ কেটে বসে।

ঘাঘরী ঝলকি’ গাগরী ছলকি’ নাগরী ‘জোহরা’ যায়-
স্বর্গের দূত মজিল সে-রূপে, বিকাইল রাঙা পা’য়!
অধর-আনার-রসে ডুবে গেল দোজখের নার-ভীতি,
মাটির সোরাহী মস্তানা হ’ল আঙ্গুরী খুনে তিতি’!
কোথা ভেসে গেল-সংযম-বাঁধ, বারণের বেড়া টুটে,
প্রাণ ভ’রে পিয়ে মাটির মদিরা ওষ্ঠ-পুষ্প-পুটে।

বেহেস্তে সব ফেরেস্তাদের বিধাতা কহেন হাসি’-
‘হারুত মারুতে কি ক’রেছে দেখ ধরণী সর্বনাশী!’
নয়না এখানে যাদু জানে সখা এক আঁখি-ইশারায়
লক্ষ যুগের মহা-তপস্যা কোথায় উবিয়া যায়।"

নজরুলের এই বর্ণনায় ইদ্রিসের সাথে হারুত-মারুতের ঘটনার কোন সম্পর্ক নেই এমনটাই মনে হচ্ছে। আর ইহুদি মিদরাসের শিক্ষা অবশ্য এমনই- "Two angels who asked Allah's permission to come down to earth but succumbed to temptation, and were hung up by their feet at Babylon for punishment."

যা হোক, মূসার সময়ে শয়তান জ্বিণদের কল্যাণে জাদুবিদ্যা মানুষের মধ্যে প্রভূত বিস্তার লাভ করে। কিন্তু তার কাছে জাদুকরদের নেতাদ্বয় যান্নি ও জাম্রি পরাজিত ও মুসলমান হবার পর এই বিদ্যার প্রচলন কমে যায়। কিন্তু নবী শলোমনের সময় বাবিলে তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। এদিকে মূর্খ লোকেরা জাদুকে আলৌকিক বা মু‘জেযা মনে করে জাদুকরদেরকে সম্মানিত ও মাননীয় এবং অনুসরণযোগ্য মনে করতে থাকে। এমনকি অনেক বিশ্বাসীও পয়গম্বরদের মু‘জেযা ও জাদুর পার্থক্য বুঝতে না পেরে বিভ্রান্তিতে পতিত হয়। 


যারা জাদু অবলম্বণ করে তাদের জন্যে পরকালে কোন অংশ নেই। তাই জাদুর স্বরূপ এবং জাদুকরদের মুখোস উন্মোচনের জন্যে আল্লাহ ইতিপূ্ের্বে ফেরেস্তা হারুত-মারুতকে কিছু যাদুবিদ্যার জ্ঞান দিয়েছিলেন। কেননা, এই ফেরেস্তাদ্বয় তো শাস্তিস্বরূপ মানুষরূপে মানুষের মাঝে বসবাস করছিল। আর তাদের তো কোন নির্দিষ্ট কাজও ছিল না। যা হোক, মূল কথা হল, হারুত-মারুত দুনিয়াতে মানুষকে জাদুবিদ্যা শিক্ষা দিত শুধুমাত্র মানুষকে সতর্ক করতে যাতে তাদের বিভ্রান্তি দূর হয় এবং যেন তারা জাদুর প্রাকটিস ও জাদুকরদের অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকতে পারে।


ইচ্ছে করলে আল্লাহ এই কাজে পয়গম্বরদেরকে নিয়োজিত করতে পারতেন। কিন্তু তাতে শয়তানের প্ররোচনায় মানুষ আরও বিভ্রান্তিতে পড়ত। তাই আল্লাহ পয়গম্বরদের ও জাদুকরদের মধ্যে পার্থক্য ফুটিয়ে তুলতে তৃতীয় এবং নিরপেক্ষ পক্ষ ফেরেস্তাদেরকেই এই কাজে নিয়োগ করাকে সমীচীন মনে করেছেন যাতে মানুষের মাঝে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, মানুষ হারুত-মারুতের কাছ থেকে শিখে নেয়া জাদু অকল্যাণের কাজে লাগাতে লাগল। অবশ্য হারুত-মারুত -'আমরা তো তোমাদের উপর পরীক্ষা স্বরূপ। তোমরা আমাদেরকে অবিশ্বাস কোরও না’-এ কথা না বলে তারা কোন মানুষকে শিক্ষা দিত না। 


এদু’জনের কাছ থেকে লোকেরা এমন বিষয় শিক্ষা করত যা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারত, তথাপি আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কারও কোন ক্ষতি করতে পারত না। তাই তারা যা শিক্ষা করত তা তাদের ক্ষতিসাধনই করত, কোন উপকারে আসত না। যা হোক, এই পতিত ফেরেস্তাদ্বয়ের কারণে সাবা নগরীতে এই বিদ্যার প্রচলন ও ব্যবহার বহূলরূপে বৃদ্ধি পায়।


এদিকে নবী শলোমন সাময়িকভাবে সিংহাসন চ্যূত হন জ্বিণ চখরের কারসাঁজিতে। সে তার শরীরকে বেষ্টন করে এক মায়াজাল (ফিকোয়েন্সি জাল) সৃষ্টি করেছিল, ফলে এমনকি তার স্ত্রী আমিনাও তাকে চিনতে না পেরে অস্খীকার করে। আর ঐ জাদুর প্রভাবে নবী শলোমনকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যান, তিনি কিছুকালের (৪০ দিন) জন্যে রাজ্য হারিয়ে ফেলেন। শয়তান চখর তার রূপ ধারণ করে তার সিংহাসনে আরোহণ করে। যেমন- And certainly We tried Sulaiman, and We placed on his throne a body; then he turned-38:34 


When Sulaiman lost his kingdom & the devil Shakhr 
on his Throne, great numbers from among mankind and the jinn renegaded and followed their lusts. He & his gang write down sorcery such as- whosoever wants to do such and such, he should stand facing the sun and say such and such. And, whosoever wants to do such and such, he should stand giving his back to the sun and say such and such." They gave the title of the book they wrote as "This is what has been written by Asif Ibn Barkhiya by the order of King Sulaiman Ibn Dawud: from the treasures of knowledge." Then, they buried it under Sulaiman's throne.Verily, Sulaiman was not knowledgeable about the Unseen. 


অত:পর যখন 
শলোমন রাজ্য ফিরে পান, তখন তিনি রাগান্বিত হয়ে সকল জাদুর উৎস ফেরেস্তা হারুত-মারুতকে সনাক্ত করে তাদেরকে বাবিল শহরের একটা কূপে বন্দী করে ফেলেন যেন তাদের কারও দ্বারা জাদুর বংশবিস্তার আর না হতে পারে। কথিত আছে- তারা সেখানেই বন্দী অবস্থায় কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে।


অবশ্য শলোমনের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি অন্যরকম হয়। Satan established himself as an orator and said: "O people! Sulaiman was not a prophet; he was only a sorcerer! Go and seek his sorcery in his dwellings and luggage." And he led them to the buried "treasure". 


অত:পর যখন শলোমনের সিংহাসনে নীচ থেকে জাদুর কিতাবটি বের হল, শয়তান বলল, ‘এটি শলোমনের উপর অবতীর্ণ কিতাব যা তিনি আমাদের নিকট থেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। আর ঐ জাদুর কিতাবের সাহায্যেই তিনি রাজ্য পরিচালনা ও পশু-পক্ষী বশীভূত করেছিলেন।’ 

আর যারা সেখানে উপস্থিত ছিল, তাদের অবিশ্বাসীরা বলল, "By Allah! Sulaiman was a sorcerer who subjected us through his magic." আর বিশ্বাসীরা তাদেরকে উপেক্ষা করে বলল, "Nay, he was a faithful Prophet." 

আর এমন বিশ্বাসই প্রচলিত ছিল ইহুদিদের মাঝে। আর-রবি ইবনে আনাস বলেন, “the Jews used to ask Prophet Muhammad about matters from the Torah, and every time they ask him, Allah reveals to him that with which he defeats and overcomes them. Thereupon, they said: Muhammad knows what has been revealed to us better than we do! Then, they asked him about sorcery and said Solomon, the son of David was a sorcerer & ruled with sorcery.”- with that. Allah revealed His Statement.


জাদু করা কূফর। আর তাই কোরআন শলোমনের জাদু দ্বারা রাজ্য শাসনের কথা অস্বীকার করে এবং হারুত-মারুত ও তাদের জাদুর স্বরূপের সঠিক তথ্য মানুষের সামনে তুলে ধরে- ‘আর শলোমনের রাজত্বে শয়তানেরা যা আওড়াত তারা (সাবাবাসীরা) তা মেনে চলত। শলোমন কূফর করেনি, বরং শয়তানই কূফর করেছিল। তারা মানুষকে শিক্ষা দিত (সেই) জাদু যা বাবিল শহরের দুই ফেরেস্তা হারুত ও মারুতের উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। তাই ‘আমরা তো তোমাদের উপর পরীক্ষা স্বরূপ। তোমরা অবিশ্বাস কোরও না’-এ না বলে তারা কোন মানুষকে শিক্ষা দিত না।  


এ দু’জনের কাছ থেকে তারা এমন বিষয় শিক্ষা করত যা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারত শুধু, আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কারও কোন ক্ষতি করতে পারত না। তাই তারা যা শিক্ষা করত তা তাদের ক্ষতিসাধনই করত, কোন উপকারে আসত না। আর তারা ভাল করেই জানত যে, যে-কেউ তা কিনবে পরকালে তার কোন অংশ নেই। আর যদি তারা জানত তারা যার বিনিময়ে নিজেদের বিক্রি করছিল তা কত নিকৃষ্ট! -(২:১০১-১০২)
  


আর এভাবে নবী মুহম্মদ শলোমনকে নবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলে, মদিনার ইহুদিরা তা বিশ্বাস করল না, তারা বলল, Amazingly Muhammad claims that Sulaiman Ibn Dawud was a Prophet, by Allah, he was nothing but a sorcerer. 

               
সমাপ্ত।
ছবি: Wikipedia, news.priyo, 2.hull.ac.uk.

Moses: কোরাণিক ক্যানভাসে নবী মূসা।

Abu Hena Mostafa Kamal  01 May, 2017 মি সরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ফেরাউন। হঠাৎ করে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। কিন্তু তিনি কোন উত্তরাধিকারী ন...