৩০ মার্চ, ২০১২

Julius Caesar: জুলিয়াস সিজার ও ক্লিওপেট্টা।


রোমের আগ্রাসন মূলক যুদ্ধ ও রোমক সেনাবাহিনীর যোদ্ধারা ভাড়াটে সৈনিক ছিল বলে সেনাপতিদের ক্ষমতা অত্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল। অভিজ্ঞ সেনাপতিরা সিনেটের নির্দেশানুযায়ী নিজেরাই নিজেদের বাহিনী গঠন করত। যোদ্ধারা তাদের কাছ থেকে বেতন এবং লুন্ঠিত মালের অংশ পেত। সৈন্যরা শুধুমাত্র সেনাপতির আদেশ পালন করত এবং সর্বদাই তাদের আদেশ মত যুদ্ধ করতে প্রস্তুত থাকত।

 পো নদী।
দাস মালিকদের অনেকেই মনে করত যে, একজন শক্তিশালী সেনাবাহিনীর অধিনায়ক, কন্সুল ও সিনেটের চেয়ে যোগ্যতর রূপে দাস ও দরিদ্রের বিরুদ্ধতা প্রতিরোধ করতে সক্ষম। রোমে তাই সেনাপতিদের শাসন কায়েম হোক এটাই তারা চাইত। বিভিন্ন যুদ্ধে বিজয়ী এবং ৭১ খ্রীঃপূঃ দাস বিদ্রোহকে নির্মমভাবে যিনি দমন করেছিলেন সেই পম্পেইকে এ কাজের উপযুক্ত বলে তাদের মনে হয়েছিল।

এদিকে একই ভাবে রোমের শাসন ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিলেন জুলিয়াস সিজার (Julius Caesar)। তিনি এসেছিলেন এক সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে। ৫৮ খ্রীঃপূঃ তিনি কন্সুল পদে নির্বাচিত হয়ে গলিয়া প্রদেশের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। 

গলীয়দের আত্মসমর্পণ।
গল জাতি পো নদীর অববাহিকায় এবং আধুনিক কালের ফ্রান্সে বসতি স্থাপন করেছিল। গলদের অনেক উপজাতি পরস্পর পরস্পরের শত্রু ছিল। সিজার যখন গলিয়ার শাসনকর্তা হন তখন শুধুমাত্র পো নদীর অববাহিকা আর ভূ-মধ্য সাগরীয় উপত্যকার কিছু অংশ রোমকদের অধিকারে এসেছিল।

গলিয়াতে প্রায় ৮ বৎসর ধরে যুদ্ধ চলল। এই যুদ্ধে সিজার নিজেকে এক প্রতিভাবান সেনাপতিরূপে উপস্থাপন করতে সমর্থ হন। গলরা নিজেদের স্বাধীনতার জন্যে নির্ভিকভাবে যুদ্ধ করেছিল, কিন্তু তাদের বিশৃঙ্খল বাহিনী যুদ্ধে অভিজ্ঞ রোমক লোগিওর আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারেনি। রোমকরা গলদের সারাদেশ দখল করে নেয় এবং কয়েক লক্ষ যুদ্ধবন্দীকে দাসরূপে বিক্রি করে দেয়। 

‘ইয়াক্তা এস্ত আলেয়া।’ 
রোমক সেনাবাহিনী গলদের পবিত্রস্থান যেখানে দেবতাকে নিবেদন করার উদ্দেশ্যে আনীত স্বর্ণ সঞ্চয় করে রাখা হত, তা লুট করেছিল। সিজার ঐ লুটের মাল দিয়ে সেনাদের বেতন বাড়িয়ে দিলেন একই সঙ্গে তিনি তাদেরকে ভূ-সম্পত্তি বন্টন করার প্রতিশ্রুতিও দান করলেন। এভাবে সিজারের হাতে এল সম্পূর্ণ আজ্ঞানুবর্তী ও শক্তিশালী এক সেনাবাহিনী এবং প্রচুর ধন-সম্পদ।

৪৯ খ্রীঃপূঃ সিজার তার বাহিনী নিয়ে রোম আক্রমণের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন এবং গলিয়ার দক্ষিণ সীমানায় অবস্থিত রুবিকন নদীর তীরে এসে পৌঁছিলেন। সেনাবাহিনীসহ এই সীমানা অতিক্রম করে যাবার অর্থ-প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা। সিজারের সম্মুখে তখন দু‘টি পথ: হয় রোম শাসন করা, নয়ত: কলঙ্কিত মৃত্যুদন্ড লাভ।

সিজার অনেকক্ষণ ধরে ভাবলেন, তারপর সমস্ত চিন্তা ঝেড়ে ফেলে তিনি উচ্চারণ করলেন: ‘ইয়াক্তা এস্ত আলেয়া।’ অর্থাৎ দান চালা হয়ে গেছে। তার বাহিনী নিয়ে তিনি সম্মুখে অগ্রসর হলেন। এ থেকেই এ বাগ্বিধির উৎপত্তি: To Cross the Rubicon- অর্থ যা থেকে আর পিছানো যাবে না এমন বিপদজনক কোন কাজের সিদ্ধান্ত নেয়া।

৪৮ খ্রীঃপূঃ দু‘বাহিনী পরস্পর পরস্পরের মুখোমুখী হল।
সিনেটের সৈন্যবল সিজারের অপেক্ষা বেশী থাকলেও তা বিভিন্ন প্রদেশে ছড়ানো ছিল। সিনেট তখন পম্পেই এর উপর ভার দিলেন সিজারকে প্রতিরোধ করার। কিন্তু সিজার এত দ্রুত রোম আক্রমণ করেছিলেন যে, পম্পেই প্রতিরক্ষার কোন আয়োজনই করার সুযোগ পাননি। সুতরাং প্রায় কোন প্রতিরোধের সম্মুখীন না হয়ে সিজার রোম এবং সমগ্র ইটালী দখল করে নিলেন।
ইতিমধ্যে পম্পেই বলকান উপদ্বীপে বিরাট এক বাহিনী গঠন করে ফেলেছেন। 

পম্পেই ও জুলিয়াস সীজারের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই শুরু হল। সিজারের বাহিনী পম্পেইকে মোকাবেলায় এগিয়ে গেল। অবশেষে ৪৮ খ্রীঃপূঃ দু‘বাহিনী পরস্পর পরস্পরের মুখোমুখী হল। এশিয়া মাইনরে ফারসালাসের এই যুদ্ধে (Battle of Pharsalus) পম্পেই নিহত হলে জুলিয়াস সীজার রোমের একচ্ছত্র অধিপতি হলেন। এই বিজয়ের পর সিজার মাত্র তিনটি শব্দে তার বিজয় সংবাদ রোমে পাঠিয়েছিলেন: Veni, vidi, vici.- অর্থ -এলাম, দেখলাম, জয় করলাম।  এই বিজয়ের পরপরই সীজারের জীবনে ক্লিওপেট্টা (Cleopatra) জড়িয়ে পড়ে। 

জুলিয়াস সিজার ও ক্লিওপেট্টা।
৬৯ খ্রীঃপূঃ আলেকজান্ডারের সেনাপ্রধান টলেমির পরিবারে ক্লিওপেট্টার জন্ম। সে কেবল দেখতেই সুন্দরী ছিল না, তার বুদ্ধিমত্তাও ছিল অসাধারণ। নগ্ননৃত্য আর খোলামেলা যৌনতার কারণে অল্প বয়সেই সে আলোচিত হয়ে উঠেছিল।

৫১ খ্রীঃপূঃ ত্রয়োদশ টলেমির সাথে ক্লিওপেট্টার বিবাহ হয়। সে মারা গেলে চতুর্দশ টলেমি তাকে বিবাহ করে। তাদের কারও সাথেই ক্লিওপেট্টার দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল না। ধারণা করা হয় ১২ বৎসর বয়সেই সে কুমারীত্ব বিসর্জন দিয়েছিল। মিসরে সিংহাসন নিয়ে লড়াই শুরু হলে সে রোমে জুলিয়াস সিজারের কাছে পালিয়ে যায়। সেখানে সে নিজেকে নাটকীয়ভাবে তুলে ধরে।

একটি মোড়ান পারস্যিয়ান কার্পেট এনে সিজারের সম্মুখে অতি সাবধানে নামিয়ে রাখা হল। সিজার বুঝতে পারলেন এরমধ্যে বিশেষ কিছু রয়েছে। একজন ক্রীতদাসকে তিনি সেটা খুলতে বললেন।

এন্টনি ও ক্লিওপেট্টা।
কার্পেটের ভিতরের প্রান্ত যখন বেরিয়ে পড়ল, তখন সীজারের পদতলে গড়িয়ে এসে থামল এক অর্ধনগ্ন তরুণী। সীজার বিষ্মিত হলেন। আর তার বিষ্মিত দৃষ্টির সম্মুখে দাঁড়িয়ে পড়ল লজ্জাবনত ২১ বৎসরের অপরূপা সুন্দরী, ক্লিওপেট্টা। বলা বাহুল্য, ৫২ বৎসর বয়সী সিজার ক্লিওপেট্টার প্রেমে পড়ে গেলেন। প্রেমের দেবী ভেনাসের স্থলে ক্লিওপেট্টার মূর্ত্তি স্থাপন করা হল। 

সিজার ক্লিওপেট্টাকে বিবাহ করলেন। ফলে ক্লিওপেট্টা শুধু রানীই হল না, প্রতিশ্রুতি পেল তার সন্তান হবে রোমের সম্রাট। অতঃপর সিজারিয়ান নামে তার একটি সন্তানও হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সিজারের মৃত্যুর কিছুদিন পরেই পুত্রটি মারা যায়।

৪৫ খ্রীঃপূঃ গুপ্তঘাতকের হাতে সিজার নিহত হন। তার মৃত্যুর পর রোম সাম্রাজ্য, সাম্রাজ্য পরিষদের সদস্য অক্টোভিয়াস (সিজারের আত্মীয়), এন্টনি (সিজারের প্রাক্তন সহকারী) ও লেগিডাসের মধ্যে বিভক্ত হয়। সিরিয়া ও প্রাচ্যদেশ এন্টনির অধীনে ছিল। 

অক্টোভিয়াস সীজার অগাষ্টাস।
মিসরের নুতন সম্রাট হলেন মার্ক এন্টনি (Mark Antony)। এসময় ক্লিওপেট্টা আবারও রোমে পাড়ি জমাল এন্টনিকে ফাঁদে ফেলার জন্যে। এন্টনি অশ্লীলতা ও নিষ্ঠুর বিষয়ের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তাকে কাবু করার জন্যে ক্লিওপেট্টাকে বহুকৌশল খাটাতে হয়েছিল এবং শেষপর্যন্ত সে জয়ী হয়েছিল। এসময় এন্টনি ও অক্টোভিয়াসের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চলছিল। অবস্থা খারাপ দেখে এন্টনি ক্লিওপেট্টাকে সঙ্গে নিয়ে মিসরে পালিয়ে এলেন। এখানে তাদের জমজ সন্তানের জন্ম হল। 

এন্টনির প্রথমা স্ত্রী অক্টোভিয়া ছিল অক্টোভিয়াসের বোন। এন্টনি তাকে পরিত্যাগ করলে অক্টোভিয়াস এন্টনির রাজ্য আক্রমণ করলেন। এই যুদ্ধে এন্টনি পরাজিত ও ক্লিওপেট্টা গ্রেফতার হয়। এসময় এন্টনি ক্লিওপেট্টার আত্মহত্যার খবর শুনে নিজের বুকে ছুরি বসিয়ে আত্মহত্যা করেন। বাস্তব ছিল ঐ সময় ক্লিওপেট্টা আত্মহত্যা করেনি।

গ্রেফতারের পর ক্লিওপেট্টাকে বলা হয়েছিল রোমের রাস্তায় নগ্ন হয়ে হাঁটার জন্যে। ক্লিওপেট্টার সঙ্গে সবসময় ছোট একটা বিষাক্ত সাপ থাকত। সেটিকে সে তার অলঙ্কারের মধ্যে লুকিয়ে রাখত। পরে ঐ সাপের দংশনে সে আত্মহত্যা করেছিল।
সিনেটরগণ অক্টোভিয়াসকে ‘অগাষ্টাস’ (পবিত্র) উপাধিতে ভূষিত করে এবং অক্টোভিয়াস সীজার অগাষ্টাস নামে অক্টোভিয়াস রোমের একচ্ছত্র সম্রাট হলেন। 

সমাপ্ত।
ছবি: commons.wikimedia, mawdizzle, twcenter, 123rf, todayifoundout, redrampant.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Moses: কোরাণিক ক্যানভাসে নবী মূসা।

Abu Hena Mostafa Kamal  01 May, 2017 মি সরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ফেরাউন। হঠাৎ করে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। কিন্তু তিনি কোন উত্তরাধিকারী ন...