১০ মার্চ, ২০১২

Solomon: বিলকিস ও শলোমনের কাহিনী।

খোদার উপাসনার জন্যে একটি উপাসনালয় নির্মাণ করার পরিকল্পণা দাউদের ছিল। এজন্যে তিনি সমস্ত উপকরণও প্রস্তুত করেছিলেন। কিন্তু তার কাছে এবিষয় প্রকাশিত হয়েছিল যে, এটি নির্মাণ করার মর্যাদা তার পক্ষে লাভ করা সম্ভব নয়, কেননা তার হাত রক্ত রঞ্জিত। তাই তিনি মৃত্যুর পূর্বে তার পুত্র শলোমনের উপর এই দায়িত্বভার দিলেন।

শলোমন ও তার সভাষদ।
উপাসনালয় নির্মাণ শুরুর পূর্বে শলোমন খোদার করুণা ও দয়া পাবার আশায় এক বিরাট জনতা সঙ্গে নিয়ে জেরুজালেম থেকে ছয় মাইল উত্তরে গিবিয়োনে যান কোরবানী করতে কারণ সেখানেই প্রধান উচ্চস্থলী ছিল। দাউদের সময় খোদার গৃহ তৈরী না হওয়ায় লোকেরা বিভিন্ন উচ্চস্থলীতে কোরবানী করত। যাহোক, শলোমনের এই যাত্রায় জ্বীন, মানুষ ও পশুপক্ষীর ভিন্ন ভিন্ন দল ছিল। শলোমন যখনই কোথাও যেতেন, এসব পাখি ও পশুর দল নির্দিষ্ট বিন্যাসে বিন্যস্ত হয়ে যেত।

গিবিয়োনে এক হাজার পশু কোরবানী দিলেন। অত:পর রাত্রে তিনি প্রার্থনায় নিমগ্ন হলেন। আল্লাহর কাছে বিনম্র বাদশা দীর্ঘ জীবন, ধন-সম্পদ ইত্যাদি না চেয়ে চাইলেন জ্ঞানলাভ, যাতে তিনি তার লোকদের সুবিচার করতে এবং ভাল-মন্দের পার্থক্য নির্ণয় করতে পারেন। আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করেন এবং বলেন, ‘হে শলোমন; তুমি যা চেয়েছ তাই আমি তোমাকে দেব। আমি তোমাকে এমন জ্ঞান ও বিচার বুদ্ধি দিলাম যার মত এর আগে আর কেউ ছিল না আর পরেও হবে না। এছাড়াও আমি তোমাকে এমন ধন-দৌলত ও সম্মান দিলাম যদ্রুপ তোমার পরে বাদশাগণের মধ্যে আর কেউ প্রাপ্ত হবে না।’

উপাসনালয়টি নির্মাণ করতে বিশাল পরিকল্পণা নেয়া হয়েছিল। সুদক্ষ স্থপতি, নির্মাণকারী এবং প্রয়োজনীয় কাঠ, টায়ার বা সোরের রাজা হীরমের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। শলোমন, হীরমকে জানিয়েছিলেন-‘আমি আমার প্রভু, সর্বশক্তিমান খোদার উদ্দেশ্যে একটা উপাসনাগৃহ তৈরী করতে চাই। তিনি আমার পিতা দাউদকে বলেছিলেন, তোমার যে পুত্র তোমার সিংহাসনে বসবে, সে-ই আমার গৃহ নির্মাণ করবে।’ -কাজেই আপনি হুকুম করুন যেন আমার জন্যে লেবাননের বন থেকে এরস গাছ কাটা হয়। অবশ্য আমার লোকেরা আপনার লোকদের সঙ্গে থাকবে এবং আপনি যে মুজুরী ঠিক করে দেবেন আমি সেই মুজুরীই আপনার লোকদেরকে দেব। আপনি তো জানেন, গাছ কাটার কাজে সীদোনীয়দের মত দক্ষ লোক আমাদের মধ্যে কেউ নেই।’


হীরম উত্তরে জানাল, ‘আমি আপনার কাছে হীরাম নামে একজন খুব দক্ষ ও বুদ্ধিমান লোককে পাঠালাম। তার মা দান গোষ্ঠির, আর পিতা সোরের লোক। সে সব ধরণের খোঁদাই করার কাজে দক্ষ এবং সে মসীনার সূতার কাজও জানে। সে আপনার কারিগরদের সঙ্গে কাজ করবে।


--এরস ও বেরস কাঠের ব্যাপারে আপনার সব ইচ্ছেই আমি পূর্ণ করব। আমার লোকেরা সেগুলি লেবানন থেকে নামিয়ে সমুদ্রে আনবে। তারপর সেগুলি ভাসিয়ে আপনার নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাবে। আপনি শুধু আমার প্রাসাদের লোকদের জন্যে আহার্য সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতি একটু খেয়াল রাখবেন।’


এরস গাছগুলি লেবাননের বন থেকে কেটে সমুদ্রোপকূল পর্য্যন্ত ভাসিয়ে এনে, পরে পার্বত্য পথ দিয়ে জেরুজালেমে নিয়ে আসা হয়েছিল। আর নিকটবর্তী খাদসমূহ থেকে পাথর কেটে নির্মাণ উপযোগী করে নেয়া হয়েছিল। প্রচুর লোক এসব কাজ করেছিল। কাজ করেছিল বেশ কিছু জ্বীনও- যারা ছিল শ্রমিক, ডুবুরী ও স্থপতি। তারা শলোমনের ইচ্ছে অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের কাজ করত।


নির্মাণ কাজ বাদশা শলোমন নিজেই দেখাশুনো করতেন। আর জ্বীনেরা তার সামনে বসে কাজ করত। তারা বাদশার ইচ্ছে অনুযায়ী প্রাসাদ, ভাস্কর্য, পানির হৌজের মত পাত্র ও চুল্লির জন্যে বড় ডেগ তৈরী করত। এই সকল কাজ করতে প্রচুর তামার দরকার হয়েছিল। শলোমন প্রয়োজনীয় তামা তার বেটহ ও বেরোথা নগর থেকে সংগ্রহ করতেন। সেখানে এত পরিমান তামা মজুদ ছিল, যেন তা এক গলিত তামার ঝর্ণা। এই তামা এসব বস্তু তৈরীর কাজে ব্যাবহৃত হত। আল্লাহ বলেছিলেন, ‘হে দাউদ পরিবার! তোমরা কৃতজ্ঞতার সাথে কাজ করতে থাক।’


এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ- ‘...আমি তার (শলোমনের) জন্যে গলান তামার এক ঝর্ণা বইয়ে ছিলাম। আল্লাহর অনুমতিক্রমে বেশকিছু জ্বীন তার সামনে কাজ করত।...(৩৪:১২) ওরা শলোমনের ইচ্ছে অনুযায়ী প্রাসাদ, ভাস্কর্য, পানির হৌজের মত পাত্র ও চুল্লির জন্যে বড় ডেগ তৈরী করত। (আমি বলেছিলাম), ‘হে দাউদ পরিবার! তোমরা কৃতজ্ঞতার সাথে কাজ করতে থাক।...’(৩৪:১৩)


সিডার গাছ কাটার জন্যে ত্রিশ হাজার লোক নিয়োগ করা হয়েছিল এবং প্রত্যেক তৃতীয় মাসে দশ হাজার লোক পালাক্রমে কাজ করেছিল। পাথর কাটতে আশি হাজার এবং সাধারণ শ্রমের জন্যে সত্তুর হাজার লোক নিয়োগ পেয়েছিল। এদের উপর ছিল বিরাট সংখ্যক কর্মাধ্যক্ষ। নির্মাণের সকল বস্তু পূর্বেই সতর্কভাবে প্রস্তুত করা হয়েছিল, তাই এই সুবিশাল ভবনটি নির্মাণকালে গৃহের মধ্যে হাতুড়ি, বাটাল বা আর কোন লৌহ যন্ত্রের শব্দ শুনা গেল না। এতো গেল এক কথায় বর্ণনা, কিন্তু প্রকৃত ঘটেছিল কি তা এখন আমরা দেখব।


গিবিযোনে পশু উৎসর্গ শেষে শলোমন যখন জেরুজালেমে ফিরলেন, তখন রীতিমত উপাসনালয়ের কাজে ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রীর তৈরীর কাজ পূর্ণউদ্যমে শুরু হয়ে গেছে। আর এ কারণে he heard such a noise, proceeding from the constant hammering of the genii, who were occupied with the building of the temple, that the inhabitants of Jerusalem were no longer able to converse with each other. He therefore commanded the Jinns to suspend their labors, and inquired whether none of them was acquainted with a means by which the various metals might be wrought without producing such a clamor. Then there stepped out one from among them, and said, "This is known only to the mighty Sachr; but he has hitherto succeeded in escaping from thy dominion."


"Is, then, this Sachr utterly inaccessible?" inquired Solomon.

"Sachr," replied the genius, "is stronger than all of us put together, and is as much our superior in swiftness as in power. Still, I know that he drinks from a fountain in the province of Hidjr once in every month. Perhaps thou mayest succeed, O wise king! to subdue him there to thy scepter."

Solomon commanded forthwith a division of his swift-flying genii to empty the fountain, and to fill it with intoxicating liquor. Some of them he then ordered to linger in its vicinity until they should see Sachr approaching, and then instantly to return and bring him word. A few weeks afterward, when Solomon was standing on the terrace of his palace, he beheld a genius flying from the direction of Hidjr swifter than the wind. The king inquired of him if he brought news respecting Sachr. 

"Sachr is lying overcome with wine at the brink of the fountain," replied the genius, "and we have bound him with chains as massive as the pillars of thy temple; but he will burst them asunder as the hair of a virgin when he has slept off his wine."

Solomon then mounted hastily the winged genius, and in less than an hour was borne to the fountain. It was high time, for Sachr had already opened his eyes again; but his hands and feet were still chained, so that Solomon set the signet on his neck without any hinderance. Sachr uttered such a cry of woe that the whole earth quaked; but Solomon said to him, "Fear not, mighty genius! I will restore thee to liberty as soon as thou shalt indicate the means whereby I may work the hardest metals without noise."

"I myself know of no such," replied Sachr; "but the raven will best be able to advise thee. Take only the eggs from a raven's nest, and cover them with a crystal bowl, and thou shalt see how the mother-bird shall cut it through."

Solomon followed Sachr's advice. A raven came and flew about the bowl; but, finding that she could not get access to the eggs, she flew away, and a few hours afterward reappeared with a stone in her beak, called Samur, which had no sooner touched the bowl than it fell in two halves.
"Whence hast thou this stone?" inquired Solomon of the raven.
"From a mountain in the distant west," replied the raven.

Solomon then commanded some of the genii to follow the raven to the mountain, and to procure more of these stones; but Sachr he set free again, according to his promise. When the chains were taken from him, he shouted with exultation; but his joy sounded in Solomon's ear like the laughter of scorn. As soon as the spirits returned with the Samur stones, he caused himself to be carried back to Jerusalem by one of them, and divided the stones among the genii, who could now continue their labors without making the slightest noise.-(Book of Chamis, by Husein ibn Muhammed.) 

যাহোক, এই উপাসনালয়ের নির্মাণ কাজে স্বর্ণ, রৌপ্য, তাম্র এবং অন্যান্য ধাতুও ব্যাবহার করা হয়েছিল। আকারের জন্যে নয় কিন্তু এর জাঁকজমক এবং এটি নির্মাণে ব্যবহৃত বস্তুসমূহের জন্যে এটি জগৎ বিখ্যাত হয়েছিল।

ইস্রায়েলীদের মিসর ত্যাগের ৪৮০ তম বৎসরে, শলোমনের রাজত্বের ৪র্থ বৎসরের ২য় মাস তথা সিব মাসে উপাসনালয়টির ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল আর তা শেষ হয়েছিল এগারতম বৎসরের ৮ম মাস তথা বুল মাসে; অর্থাৎ সম্পূর্ণ নির্মাণ শেষ হতে সময় লাগল সাড়ে সাত বৎসর। দৃষ্টি নন্দন, অপূর্ব সুন্দর এই উপাসনালয়টি আয়তাকারে পূর্বদিকে মুখ করে তিন স্তরে নির্মিত হয়েছিল। প্রথম প্রাঙ্গনটি সাধারণদের জন্যে, তার উপরে ইস্রায়েলীদের জন্যে এবং উঁচুতে ছিল ঈমামদের প্রাঙ্গণ; অর্থাৎ উপাসনালয়টি ছিল তিনটি সাধারণ ভাগে বিভক্ত, প্রথমটি বারান্দা, পরেরটি পবিত্রস্থান এবং সর্বশেষটি মহাপবিত্র স্থান। বারান্দাটি ছিল পনের ফুট চওড়া, ত্রিশ ফুট লম্বা এবং পঁয়তাল্লিশ ফুট উঁচু। এখানে দু’টি অত্যন্ত কারুকার্য খঁচিত স্তম্ভ ছিল, যার একটির নাম যাঁচল (স্থিতিশীলতা) এবং অপরটি বোঁয়াজ (শক্তি)।


পবিত্র স্থানটি ছিল ত্রিশ ফুট প্রস্থ, ত্রিশ ফুট দৈর্ঘ্য ও পঁয়তাল্লিশ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট। এটি কর্তিত পাথর এবং স্বর্ণ মোড়ান এরস গাছের তক্তা দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। এই কক্ষে ছিল স্বর্ণ নির্মিত ধূপবেদী, দর্শণ রুটির টেবিল এবং স্বর্ণ নির্মিত দশটি বাতিদান।


পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত মহাপবিত্র স্থানটি ছিল একেবারে চতুস্কোন বিশিষ্ট। এর উচ্চতা, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ সবই ছিল ত্রিশ ফুট করে। এটি সুন্দর এবং মহামূল্যবান একটি পর্দা দ্বারা বিচ্ছিন্ন ছিল। এখানে বিশাল করূব (ঈগলের আকৃতি বিশিষ্ট এই মূর্ত্তিটির চারটি মুখের অপর তিনটি ছিল-মানুষের, সিংহের ও ষাঁড়ের) ও সরাফ ছিল। এখানেই নিয়ম সিন্দুক এনে রাখা হয়েছিল। এই কক্ষটিকে খোদার উপস্থিতির স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হত। এখানে শুধুমাত্র মহাঈমাম মহা প্রায়শ্চিত্তের দিনে, বৎসরে একবার জাতির প্রায়শ্চিত্তের জন্যে প্রবেশ করতেন।


উপাসনালয়টি নির্মাণ শেষে প্রতিষ্ঠার উৎসব পালন করা হয়। উৎসব পালিত হয়েছিল সপ্তাহব্যাপী। এরপর দু’সপ্তাহ কাল ধরে কুটিরবাস পর্ব পালন করা হল। অতঃপর শলোমন প্যালেস কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজে হাত দিলেন। পাঁচটি দালানের এই কমপ্লেক্স নির্মাণে এক যুগেরও বেশী সময় (তের বৎসর) লেগেছিল।


শলোমনের প্রাসাদ।
দক্ষিণ দিকের প্রথম ইমারতটি ছিল ৪৫টি এরস কাঠের স্তম্ভের উপর। এই গৃহটি ছিল দেড়’শ ফুট দৈর্ঘ্য, পঁচাত্তুর ফুট প্রস্থ এবং পঁয়তাল্লিশ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট। এটি একটি অস্ত্রাগার এবং সম্মেলন কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হত। এর পরেরটি ছিল পঁচাত্তুর ফুট দৈর্ঘ্য ও পঁয়তাল্লিশ ফুট প্রস্থের এক কক্ষ বিশিষ্ট ভবন। এটি রাজদরবার কক্ষের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হত এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে এখানে সম্ভর্ধনা দেয়া হত।

৩য় ভবনটি রাজদরবার কক্ষ। এটি ছিল অত্যন্ত বিশিষ্ট ভাবে অলংকৃত এবং অত্যন্ত সুন্দর ভাবে সজ্জিত। শলোমনের সিংহাসনটি এই কক্ষে ছিল। এই সিংহাসন ছিল অলংকৃত হাতীর দাঁতের তৈরী এবং স্বর্ণ মোড়ান। আসনের উভয় পার্শ্বে হাতা ছিল, আর তার পশ্চাৎ দিকটা ছিল গোলাকার; আর হাতার নিকটে ছিল দন্ডায়মান দু‘টি সিংহ মূর্ত্তি। সিংহাসনে উঠার সিঁড়ি ছিল ছয় ধাপ বিশিষ্ট এবং ধাপগুলির প্রত্যেক প্রান্তে ছিল দন্ডায়মান ছয়টি সিংহ।

পরেরটি বাদশা শলোমনের নিজস্ব প্রাসাদ। এটি অত্যন্ত বিশাল আকৃতির। তার বিরাট পরিবারের সদস্যরা এখানে বসবাস করত। স্ফটিকের তৈরী এই প্রাসাদ সৌন্দর্য্য এবং জাঁকজমকের দিক দিয়ে ছিল অপূর্ব।


৫ম ভবনটি শলোমনের নিজস্ব প্রাসাদ সংলগ্ন ছিল। এটিও একটি আবাসগৃহ। এখানে তার মিসরীয় স্ত্রী, ফারাও রাজকন্যা বাস করত। ফেরাউন তার এই কন্যাকে গেষর নগরী বিবাহে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। বিবাহের পর শলোমন তার এই স্ত্রীকে সিয়োন বা দাউদ নগরে এনে রেখেছিলেন। অত:পর এই প্রাসাদ নির্মিত হলে সে বসবাসের নিমিত্তে এখানে চলে আসে।


Solomon in a dream is advised by Abraham (after the building of the Temple) to undertake a pilgrimage to Mecca. 


ঘটেছিল এমন- One night Abraham appeared to him in a dream, and said, "Allah has distinguished thee above all other men by thy wisdom and power. He has subjected to thy rule the genii, who are erecting a temple at thy command, the like of which the earth has never borne before; and thou ridest on the winds as I once rode on Borak, who shall dwell in Paradise until the birth of Mohammed. Show thyself grateful, therefore, unto the only God, and, taking advantage of the ease with which thou canst travel from place to place, visit the cities of Yathrib, where the greatest of prophets shall one day find shelter and protection, and of Mecca, the place of his birth, where now the holy temple stands which I and my son Ismael rebuilt after the flood."


The next morning, Solomon proclaimed that he would undertake a pilgrimage to Mecca, and that each and every Israelite would be permitted to accompany him. There immediately applied so many pilgrims, that Solomon was obliged to have a new carpet woven by the spirits, two leagues in length and two in breadth.


The empty space which remained he filled with camels, oxen, and smaller cattle, which he designed to sacrifice at Mecca, and to divide among the poor.


For himself he had a throne erected, which was so studded with brilliant jewels that no one could raise his eyes to him. The men of distinguished piety occupied golden seats near the throne: the learned were seated on silver, and part of the common people on wood. The genii and demons were commanded to fly before him, for he trusted them so little that he desired to have them constantly in his presence, and therefore always drank out of crystal cups so as never to lose sight of them, even when he was compelled to satisfy his thirst. But the birds he directed to fly above the carpet in close array, to protect the travelers from the sun.


When the arrangements were complete, and men, spirits, birds, and beasts were assembled, he commanded the eight winds to raise up the carpet, with all that it contained, and to carry it to Medina. 


এই যাত্রায় -A genius pursued the straightest course, and thus at a time they flew over the valley of ants, which is surrounded by such lofty cliffs, and deep, impassable ravines, that no man had been able to enter it before.


আর যখন তারা পিঁপড়েদের উপত্যকায় পৌঁছিলেন ঐ সময় শলোমন শুনতে পেলেন নীচের এক পিঁপড়া চিৎকার করে বলছে, ‘পিঁপড়েরা! তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর, না হলে শলোমন ও তার বাহিনী তোমাদেরকে ধ্বংস করে ফেলবে আর তারা সেটা টেরও পাবে না।’


শলোমন পিঁপড়ের এ কথা শুনতে পেয়ে বিষ্মিত হলেন। এই ক্ষুদ্রাদিক্ষুদ্র জীব- তারাও তার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল! কৃতজ্ঞতায় তার হৃদয় পূর্ণ হল। তিনি দু‘হাত বাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে সামর্থ্য দাও যেন আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি- যে অনুগ্রহ তুমি করেছ আমার ও আমার পিতামাতার উপর তার জন্যে। -আমি যেন সৎকাজ করতে পারি যা তুমি পছন্দ কর, আর তোমার অনুগ্রহে আমাকে তোমার সৎকর্মপরায়ণ দাসদের শামিল কর।’


অবশ্য পিঁপড়ার এই কাহিনী নিয়ে আরও গল্প প্রচলিত আছে, যেমন- "While sailing over a valley where there were many swarms of ants, Solomon heard one ant say to the others, 'Enter your houses; otherwise Solomon's legions will destroy you.'

শলোমন পিঁপড়ার সঙ্গে কথা বলছেন।
The king asked why she spoke thus, and she answered that she was afraid if the ants looked at Solomon's legions they might be turned from their duty of praising God, which would be disastrous to them. She added that, being the queen of the ants, she had in that capacity given them the order to retire.

Solomon desired to ask her a question; but she told him that it was not becoming for the interrogator to be above and the interrogated below. Solomon thereupon brought her up out of the valley; but she then said it was not fitting that he should sit on a throne while she remained on the ground.


Solomon now placed her upon his hand, and asked her whether there was any one in the world greater than he. The ant replied that she was much greater; otherwise God would not have sent him there to place her upon his hand. The king, greatly angered, threw her down, saying, 'Dost thou know who I am? I am Solomon, the son of David!'


She answered: 'I know that thou art created of a corrupted drop [comp. Ab. iii. 1]; therefore thou oughtest not to be proud.' Solomon was filled with shame, and fell on his face. -(Jellinek, l.c. v. 22 et seq.).


আবার- But, on the other hand, the queen of the ants, which had never seen a human being, was in no small trouble on perceiving the king, and cried to her subjects, "Retire quickly to your caverns!"


But Allah said to her, "Assemble all thy vassals, and do homage to Solomon, who is king of the whole creation."


Solomon, to whom the winds had wafted these words, then at a distance of six leagues, descended to the queen, and in a short time the whole valley was covered with ants as far as his eye could reach. Solomon then asked the queen, who was standing at their head, "Why fearest thou me, since thy hosts are so numerous that they could lay waste the whole earth?"


"I fear none but Allah," replied the queen; "for if my subjects which thou now beholdest were threatened with danger, seventy times their number would appear at a single nod from me."


"Why, then, didst thou command thy ants to retire while I was passing above thee?"
"Because I feared lest they might look after thee, and thus forget their Creator for a moment."
"Is there any favor that I may show thee ere I depart?" inquired Solomon.
"I know of none: but rather let me advise thee so to live that thou mayest not be ashamed of thy name, which signifies 'The Immaculate;' beware also of ever giving away thy ring without first saying, 'In the name of Allah the All-merciful.'"

Solomon once more exclaimed, "Lord, thy kingdom is greater than mine!" and took leave of the queen of ants. --(Book of Chamis, by Husein ibn Muhammed.)


এখন আমরা এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ দেখব- ‘শলোমনের সামনে তার বাহিনী জ্বীন, মানুষ, ও পাখীদেরকে সমবেত করা হল এবং তাদের বিভিন্ন বুহ্যে বিন্যস্ত করা হল। যখন ওরা পিঁপড়েদের উপত্যকায় পৌঁছিল তখন এক পিঁপড়ে বলল, ‘পিঁপড়েরা! তোমরা তোমাদের ঘরে ঢোক না হলে শলোমন ও তার বাহিনী তোমাদেরকে ধ্বংস করে ফেলবে আর তারা সেটা টেরও পাবে না।’ 


শলোমন ওর কথায় মুচকি হাসল ও বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে সামর্থ্য দাও যেন আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি আমার উপর ও আমার পিতা মাতার উপর তুমি যে অনুগ্রহ করেছ তার জন্যে, আর আমি যেন সৎকাজ করতে পারি যা তুমি পছন্দ কর, আর তোমার অনুগ্রহে আমাকে তোমার সৎকর্মপরায়ণ দাসদের শামিল কর।’-(২৭:১৭-১৯)


After a stay of three days, King Solomon resolved to return again to Jerusalem. But suddenly he notices the absence of the Hoopoe (Hudhud).


প্রকৃত পক্ষে হুদহুদ যে নেই তা শলোমন বুঝতে পারলেন এভাবে- When the birds had unfolded their wings, and the carpet was already in motion, he discovered a ray of light striking upon it, whence he concluded that one of his birds had left its post. 


He therefore summoned the eagle, and directed him to call over the names of all the birds, and to report which was absent. The eagle obeyed, and soon came back with the answer that the Hoopoe was wanting.


হুদহুদের এই অনুপস্থিতি শলোমনকে রাগান্বিত করল। তাই তিনি বললেন, ‘হুদহুদকে দেখছিনে কেন? সে কি উধাও হয়েছে? সে উপযুক্ত কারণ না দর্শালে আমি তো তাকে কঠিন শাস্তি দেব কিংবা হত্যা করব।’


হুদহুদ পাখি।
শলোমনের এই রাগের আরও কারণ হল তিনি হুদহুদকে তার সার্বক্ষণিক এটেন্টডেন্ট নিযুক্ত করেছিলেন (Solomon chose the Cock and the Hoopoe for his constant attendants. The one, on account of his monitory sentence, and the other, inasmuch as his eyes, piercing as they do through the earth as if it were crystal, enabled him during the travels of the king to point out the place where fountains of water were hid, so that water never failed Solomon, either to quench his thirst, or to perform the prescribed ablutions before prayer.-Book of Chamis, by Husein ibn Muhammed.), অথচ সে তার দায়িত্ব পালন না করে অনুপস্থিত রয়েছে।

যাহোক, সে হুদহুদ দেরী না করে এসে পড়ল ও বলল, ‘আমি এমনসব তথ্য লাভ করেছি যা আপনাদের জানা নেই, আর সাবা থেকে সঠিক খবর নিয়ে এসেছি।


আমি এক নারীকে দেখলাম সেই জাতির উপর রাজত্ব করছে। তাকে সবই দেয়া হয়েছে ও তার আছে এক বিরাট সিংহাসন। আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্য্যকে সিজদা করছে। শয়তান ওদের কাছে ওদের কাজকর্ম শোভন করেছে ও ওদেরকে সৎপথ থেকে দূরে রেখেছে, আর যেন ওরা সৎ পথ না পায় এবং যিনি আকাশ ও পৃথিবীর গোপন বিষয়কে প্রকাশ করেন, যিনি জানেন যা মানুষ গোপন করে ও যা তারা প্রকাশ করে, সেই আল্লাহকে যেন ওরা সিজদা না করে। আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তিনিই মহা আরশের অধিপতি।’


শলোমন বললেন, ‘আমি দেখব, তুমি সত্যি বলছ না মিথ্যে বলছ? তুমি আমার এই পত্র নিয়ে যাও। এ তাদের কাছে দিয়ে এসো। তারপর তাদের কাছ থেকে সরে পড় ও দেখ তারা কি উত্তর দেয়।’


এদিকে শলোমনকে দাঁড়িয়ে পাখীদের সঙ্গে বিড়বিড় করতে দেখে লোকেরা অবাক হল। শলোমন তা বুঝতে পেরে সমবেত জনতাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘হে মানুষ! আমাকে পাখীদের ভাষা বুঝবার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এবং আমাকে সবই দেয়া হয়েছে, এ তো আল্লাহর স্পষ্ট অনুগ্রহ আমার প্রতি।’ 

হুদহুদ চিঠি নিয়ে উড়ে চলল। আর শলোমন তার বাহিনী নিয়ে জেরুজালেমের দিকে ফিরে চললেন।

আর হুদহুদের কাহিনী রাব্বানিক সাহিত্যে (Rabbinical Literature) আছে এমন- "Solomon, when merry from wine, used to assemble before him all the kings, his vassals, and at the same time ordered all the other living creatures of the world to dance before them. One day, the king, observing that the mountain-Cock or Hoopoe was absent, ordered that the bird be summoned forthwith.

When it arrived it declared that it had for three months been flying hither and thither seeking to discover some country not yet subjected to Solomon, and had at length found a land in the East, exceedingly rich in gold, silver, and plants, whose capital was called "Kitor" and whose ruler was a woman, known as 'the Queen of Saba (Sheba).' 


The bird suggested that it should fly to the queen and bring her to Solomon. The king approved this proposal; and Solomon, accordingly, caused a letter to be tied to the Hoopoe's wing, which the bird delivered to the queen toward the evening as she was going out to make her devotions to the sun."-(Targum Sheni) 


যাহোক, এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ এমন- ‘শলোমন বলেছিল, ‘হে মানুষ! আমাকে পাখীদের ভাষা বুঝবার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এবং আমাকে সবই দেয়া হয়েছে, এ তো স্পষ্ট অনুগ্রহ।’(২৭:১৬)

শলোমন পাখির দলকে ভাল করে দেখল ও বলল, ‘হুদহুদকে দেখছিনে কেন? সে কি উধাও হয়েছে? সে উপযুক্ত কারণ না দর্শালে আমি তো তাকে কঠিন শাস্তি দেব কিংবা মেরে ফেলব।’ 


সে (হুদহুদ) দেরী না করে এসে পড়ল ও বলল, ‘আমি এমন সব তথ্য লাভ করেছি যা তোমাদের জানা নেই, আর সাবা থেকে সঠিক খবর নিয়ে এসেছি। আমি এক নারীকে দেখলাম সেই জাতির উপর রাজত্ব করছে। তাকে সবই দেয়া হয়েছে ও তার আছে এক বিরাট সিংহাসন। আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্য্যকে সিজদা করছে। শয়তান ওদের কাছে ওদের কাজকর্ম শোভন করেছে ও ওদের সৎপথ থেকে দূরে রেখেছে যেন ওরা সৎপথ না পায় এবং যিনি আকাশ ও পৃথিবীর গোপন বিষয়কে প্রকাশ করেন, যিনি জানেন যা তোমরা গোপন কর ও যা তোমরা প্রকাশ কর, সেই আল্লাহকে যেন ওরা সিজদা না করে। আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তিনিই মহাআরশের অধিপতি।’ 


শলোমন বলল, ‘আমি দেখব, তুমি সত্যি বলছ না মিথ্যে বলছ? তুমি আমার এ চিঠি নিয়ে যাও। এ তাদের কাছে দিয়ে এসো। তারপর তাদের কাছ থেকে সরে পড় ও দেখ তারা কি উত্তর দেয়।’-(২৭:২০-২৮)


হুদহুদ বাদশা শলোমনের মোহরকৃত পত্র নিয়ে সাবার রাজপ্রসাদে পৌঁছিল। অতঃপর গবাক্ষ পথে রানী বিলকিসের শয়নকক্ষে প্রবেশ করল। বিলকিস এ সময় নিদ্রামগ্ন ছিলেন। হুদহুদ পত্রখানা বিলকিসের বুকের উপর রেখে জানালার উপর অংশে বসে রইল এ জানার অপেক্ষায় যে, বাদশার আদেশ মত প্রাপককে তার পত্রখানা নিশ্চিত বুঝিয়ে দিতে পেরেছে।

একসময় ঘুম ভাঙ্গল বিলকিসের। তিনি একখানা মোহরকৃত পত্র তার বুকের উপর পড়ে থাকতে দেখতে পেলেন। বিষ্মিত হলেন তিনি। পত্র এল কোথা থেকে? তার অনুমতি ব্যতিত কারও তো কক্ষে প্রবেশ করার কথা নয়! তিনি উঠে বসে পত্রটি হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখলেন। অতঃপর কক্ষের চারিদিকে দৃষ্টিপাত করলেন। এ সময় জানালার উপর বসে থাকা হুদ হুদের প্রতি দৃষ্টি পড়ল তার। পাখীটি তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। এসময়ই গবাক্ষ পথে উড়ে চলে গেল সেটি।

রানী বিলকিস মোহর খুলে পত্র পাঠে মনোনিবেশ করলেন। অতঃপর পাঠ শেষে তৎক্ষণাৎ এক জরুরী পরামর্শে তার পরিষদবর্গকে ডাকলেন তিনি। পরামর্শ সভায় তিনি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘পরিষদবর্গ! আমাকে এক সম্মানিত পত্র দেয়া হয়েছে, শলোমনের কাছ থেকে। আর তা এই-
পরম করুণাময়, পরম দয়াময় আল্লাহর নামে- 
‘অহংকার করে আমাকে অমান্য কোরও না, আনুগত্য স্বীকার করে আমার কাছে উপস্থিত হও।’

পাঠ শেষে ক্ষণকাল নিরবতার পর বিলকিস বললেন, ‘পরিষদবর্গ! আমাদের এই কঠিন সমস্যায় তোমাদের পরামর্শ দাও; আমি যা করি তা তো তোমাদের উপস্থিতিতেই করি।’ 
তারা বলল, ‘আমরা তো শক্তিশালী ও কঠোর যোদ্ধা; তবে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা আপনার, কি নির্দেশ দেবেন তা আপনিই ভেবে দেখুন।’ 
বিলকিস বললেন, ‘রাজা বাদশারা যখন কোন জনপদে প্রবেশ করেন, তখন তাকে বিপর্যস্ত করে দেন ও সেখানকার মর্যাদাবান ব্যক্তিদেরকে অপদস্থ করেন; ইনিও তাই-ই করবেন। আমি তার কাছে উপঢৌকন পাঠাচ্ছি। দেখি দূতেরা কি উত্তর আনে।’ 
সভাষদরা তার এই প্রস্তাবকে উত্তম বিবেচনা করল। সুতরাং তারা বলল, ‘তথাস্ত।’

এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ-(শেবার রানী বিলকিস) বলল, ‘পরিষদবর্গ! আমাকে এক সম্মানিত পত্র দেয়া হয়েছে, শলোমনের কাছ থেকে। আর তা এই-
পরম করুণাময়, পরম দয়াময় আল্লাহর নামে- 
অহংকার করে আমাকে অমান্য কোরও না, আনুগত্য স্বীকার করে আমার কাছে উপস্থিত হও।’

(বিলকিস) বলল, ‘পরিষদবর্গ! আমার এ সমস্যায় তোমাদের পরামর্শ দাও; আমি যা করি তা তো তোমাদের উপস্থিতিতেই করি।’ 
ওরা বলল, ‘আমরা তো শক্তিশালী ও কঠোর যোদ্ধা; তবে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা আপনার, কি নির্দেশ দেবেন তা আপনিই দেখুন।’ 
বিলকিস বলল, ‘রাজা বাদশারা যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে তখন তাকে বিপর্যস্ত করে দেয় ও সেখানকার মর্যাদাবান ব্যক্তিদেরকে অপদস্থ করে; এরাও তাই-ই করবে। আমি তার কাছে উপঢৌকন পাঠাচ্ছি। দেখি দূতেরা কি উত্তর আনে।’(২৭:২৯-৩৫) 

প্রাচীন জেরুজালেম নগরী।
রানী বিলকিসের দূত নিজেদের মূল্যবান উপঢৌকনাদি সম্পর্কে গর্বিত ছিল। যখন তারা প্রাসাদ দ্বারে পৌঁছিল, তখন তারা দেখতে পেল প্রাসাদ থেকে নেমে আসা পথটি সম্পূর্ণ স্বর্ণ এবং রৌপ্যের স্কয়ার ব্লকসমূহ দ্বারা সুসজ্জ্বিত করে নির্মিত। এই পথের দু‘ধারে সাঁরিবদ্ধ ভাবে নিশ্চল দাঁড়িয়ে অলস সময় কাটাচ্ছে বিভিন্ন ধরণের পশু, যাদের কিছু মলমূত্র ত্যাগ করেছে ঐ সুসজ্জ্বিত পথের উপর। এসব দেখে তারা যেমন বিষ্মিত হল, তেমনি নিজেদের আনীত উপঢৌকনাদিকে নগণ্য মনে করে লজ্জিতও হয়ে পড়ল। 

দূতেরা দরবারে প্রবেশ করল। শলোমন তাদেরকে হাসিমুখে গ্রহণ করলেন। অতঃপর তারা তাদের উপঢৌকনাদি প্রদান করল। এই উপঢৌকনাদির মধ্যে ছিল কয়েক তাল স্বর্ণ, কিছু হীরা। আর ছিল একশত গোলাম ও একশত দাসী। এই সকল দাস-দাসীর নারীদেরকে পুরুষ বেশে এবং পুরুষদেরকে নারী বেশে সজ্জ্বিত করে আনয়ন করা হয়েছিল।

শলোমন উপঢৌকনাদি দেখে অসন্তুষ্ট হয়ে দূতদেরকে বললেন, ‘তোমরা কি আমাকে ধন-সম্পদ দিয়ে সাহায্য করতে চাও? আল্লাহ তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তার চেয়ে উত্তম জিনিস দিয়েছেন আমাকে, অথচ তোমরা তোমাদের উপঢৌকন দিয়ে উৎফুল্ল বোধ করছ। তোমরা ফিরে যাও, আমি অবশ্যই ওদের বিরুদ্ধে এমন এক সৈন্যবাহিনী নিয়ে উপস্থিত হব যা রুখবার শক্তি ওদের নেই। আমি ওদেরকে সেখান থেকে অপমান করে বের করে দেব ও তাদেরকে দলিত করব।’ 

শলোমনের উত্তর নিয়ে দূতেরা ফিরে গেল। 

এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ- দূত শলোমনের কাছে এলে শলোমন বলল, ‘তোমরা কি আমাকে ধন-সম্পদ দিয়ে সাহায্য করতে চাও? আল্লাহ তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তার চেয়ে উত্তম জিনিস দিয়েছেন আমাকে, অথচ তোমরা তোমাদের উপঢৌকন দিয়ে উৎফুল্লবোধ করছ। তোমরা ওদের কাছে ফিরে যাও, আমি অবশ্যই ওদের বিরুদ্ধে এমন এক সৈন্যবাহিনী নিয়ে উপস্থিত হব যা রুখবার শক্তি ওদের নেই। আমি ওদেরকে সেখান থেকে অপমান করে বের করে দেব ও ওদেরকে দলিত করব।’ (২৭:৩৬-৩৭)

সাবার রাজদরবার। বাদশা শলোমন উপঢৌকনাদি ফেরৎ পাঠিয়েছেন। এ কারণে রানী বিলকিসের এই জরুরী অধিবেশন আহবান। বিলকিস দূতদের সকল কথা মনোযোগ সহকারে শুনলেন। অতঃপর তিনি সভাষদদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘আমার পূর্ব হতেই ধারণা হয়েছিল তিনি কোন সাধারণ বাদশাহ নন।’

রানী বিলকিস শীঘ্রই শলোমনের সঙ্গে দেখা করার প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন এবং একসময় জেরুজালেমের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। তার সঙ্গে ছিল বাদশা শলোমনের জন্যে উপহার স্বরূপ এক‘শ পঞ্চাশ তালন্ত স্বর্ণ, কিছু  দু:ষ্প্রাপ্য মণি এবং প্রচুর পরিমানে সুগন্ধি।

রানী বিলকিসের উট বহর জেরুজালেমের উপকন্ঠে এসে পৌঁছিল। তার আগমনের কথা জানার পর তার বিশাল সিংহাসনের কথা মনে পড়ল শলোমনের। তিনি তখন তার পরিষদবর্গের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘হে আমার পরিষদবর্গ! তারা আমার কাছে আত্মসমর্পন করতে আসার পূর্বে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমাকে এনে দেবে?’

এক শক্তিশালী জ্বীন উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আপনি আপনার স্থান থেকে উঠবার আগেই আমি তা এনে দেব। এ ব্যাপারে আমি এমনই শক্তি রাখি। আর আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।’ 
অপর এক জ্বিন যার কিতাবের জ্ঞান ছিল উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আপনি চোখের পলক ফেলার আগেই আমি তা এনে দেব।’ 

সে মূহুর্তের মধ্যে রানী বিলকিসের সিংহাসন শলোমনের সামনে উপস্থিত করল। শলোমন যখন তা তার সামনে রাখা দেখলেন তখন তিনি বললেন, ‘এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ যেন তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন, আমি কৃতজ্ঞ না অকৃতজ্ঞ। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তা নিজের জন্যে করে, আর যে অকৃতজ্ঞ সে জেনে রাখুক যে, আমার প্রতিপালকের অভাব নেই, তিনি মহানুভব।’

একাগ্রচিত্তে শলোমন সিংহাসনটা দেখতে লাগলেন। অতঃপর উক্ত জ্বিনকে বললেন, ‘তার সিংহাসনের আকৃতি বদলে দাও; দেখি সে ঠিক ধরতে পারে- নাকি ভুল করে।’ 

এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ- শলোমন আরও বলল, ‘হে আমার পরিষদবর্গ! তারা আমার কাছে আত্মসমর্পন করতে আমার পূর্বে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমাকে এনে দেবে?’
এক শক্তিশালী জ্বীন বলল, ‘আপনি আপনার স্থান থেকে ওঠার আগেই আমি তা এনে দেব। এ ব্যাপারে আমি এমনই শক্তি রাখি। আর আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।’ 
কিতাবের জ্ঞান যার ছিল সে বলল, ‘আপনি চোখের পলক ফেলার আগেই আমি তা এনে দেব।’ 

যখন তা সামনে রাখা দেখল তখন (শলোমন) বলল, ‘এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ যেন তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন, আমি কৃতজ্ঞ না অকৃতজ্ঞ। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তা নিজের জন্যে করে, আর যে অকৃতজ্ঞ সে জেনে রাখুক যে, আমার প্রতিপালকের অভাব নেই, তিনি মহানুভব।’(২৭:৩৮-৪১)

বিলকিসকে অভ্যার্থনায় শলোমন।
রানী বিলকিস রাজদরবারে প্রবেশ করলেন। তাকে সাদর অভ্যর্থণা শেষে যখন বসতে বলা হল, তিনি দেখতে পেলেন আসনের জন্যে সম্মুখে তারই সিংহাসনটি রক্ষিত। তিনি ভীষণ অবাক হলেন। তার আগমনের পূর্বেই কিভাবে এটা এখানে উপস্থিত করা হল? তিনি নিশ্চিত আলৌকিক শক্তির মাধ্যমে এটা করা হয়েছে। কেননা এটা সাধারণ নিয়ম বহির্ভূত, বুদ্ধি এখানে পরাভূত। এই অসাধ্য সাধন কেবলমাত্র একজন প্রবল ক্ষমতাশালী, ঐশ্বরিক শক্তির অধিকারীর পক্ষেই সম্ভব। বিলকিস আত্মসমর্পন করলেন। আত্মসমর্পন করলেন সর্বক্ষমতার অধিকারী এক আল্লাহর কাছে। এতদিন তিনি ছিলেন মূর্ত্তি পূজক, অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের একজন। আল্লাহর পরিবর্ত্তে তিনি যার উপাসনা করতেন তা-ই এতদিন তাকে সত্য থেকে সরিয়ে রেখেছিল।

রানী বিলকিস আরও অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন যে, তার সিংহাসনে সামান্য পরিবর্তন করা হয়েছে। তাকে একাগ্রচিত্তে সিংহাসনের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বাদশা শলোমন জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার সিংহাসন কি এ রকম?’
প্রশ্ন শুনে বিলকিস বুঝতে পারলেন তার বিবেক ও বুদ্ধির পরীক্ষা করতে চাইছেন শলোমন। সুতরাং তিনি বুদ্ধিমত্তার সাথেই উত্তর দিলেন, বললেন, ‘এ তো এরকমই। আমরা আগেই সবকিছু জেনেছি ও আত্মসমর্পন করেছি।’ 

বিলকিস তার এই জবাব দ্বারা দাবী করলেন না যে এটা তার সিংহাসন। কেননা তার সিংহাসন ও এই সিংহাসনের মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। আবার এটাও বললেন না যে এটা তার সিংহাসন নয়। কেননা প্রকৃতপক্ষে এটা তো তারই সিংহাসন।

এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ- (বিলকিস) যখন পৌঁছিল তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হল, ‘তোমার সিংহাসন কি এ রকম?’
সে বলল, ‘এ তো এ রকমই। আমরা আগেই সবকিছু জেনেছি ও আত্মসমর্পন করেছি।’ 
আল্লাহর পরিবর্তে সে যার পূজা করত তা-ই তাকে সত্য থেকে সরিয়ে রেখেছিল, সে বিলকিস ছিল অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের একজন। (২৭: ৪২-৪৩)

রানী বিলকিস ও শলোমন।
বাদশার নিজস্ব প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানান হল রানী বিলকিসকে। বিশাল এই প্রাসাদটি স্ফটিকের ছিল। ভিতরে প্রবেশের সময় বিলকিস দেখলেন স্বচ্ছ জলাশয়ের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রাসাদটি। তিনি অবাক বিষ্ময়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। অতঃপর পানির মধ্যে দিয়ে কিভাবে সম্মুখে অগ্রসর হবেন তা ভাবতে লাগলেন। 

রানী বিলকিসের দাঁড়িয়ে পড়াতে সঙ্গী সভাষদরাও দাঁড়িয়ে পড়েছিল। এসময় দূর থেকে শলোমন বললেন, ‘এই প্রাসাদে আপনার প্রবেশ স্বাগতম।’ -তখন বিলকিস প্রাসাদে প্রবেশ করতে তার পরিধেয় ভেজার আশঙ্কায় তা হাঁটু পর্য্যন্ত উঁচু করে ধরলেন। তারপর ধীরে ধীরে পা বাড়িয়ে দিলেন পানির মধ্যে। কিন্তু এ-কি! পানি স্পর্শ করল না পা। তার কার্যকলাপ দেখে শলোমন মুচকি হেসে বললেন, ‘এ তো স্ফটিকের প্রাসাদ।’ 

রানী বিলকিস তার মনে যেসব প্রশ্নের উদয় হয়েছিল তার সবই শলোমনের নিকট ব্যক্ত করলেন। আর তিনি তার সব প্রশ্নের উত্তর অত্যন্ত বিজ্ঞতার সাথে দিলেন। আর বিলকিস তার জ্ঞান, তার নির্মিত গৃহ এবং তার সাজসজ্জা, তার পরিবেশিত খাদ্যদ্রব্য, তার সভাষদদের উপবেশন, দন্ডায়মান পরিচারকদের শ্রেণী ও তাদের পরিচ্ছদ, সর্বোপরি এবাদতখানার সৌন্দর্য্যে বিমোহিত ও হতবাক হয়ে পড়লেন। তিনি বললেন, ‘আমি আপনার যে খ্যাতি শুনেছিলাম তা থেকেও আপনার জ্ঞান ও মঙ্গল অধিক। ধন্য তারা, যারা আপনার সম্মুখে দাঁড়ায় ও আপনার জ্ঞানের উক্তি শোনে।’

সর্বক্ষমতার অধিকারী স্রষ্টার কাছে বিলকিস আত্মসমর্পণ করলেন। আর মনে মনে বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তো নিজের উপর জুলুম করেছিলাম।’

এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াত-তাকে বলা হল, ‘এই প্রসাদে প্রবেশ কর।’ 
যখন সে ওটার দিকে তাকাল তখন তার মনে হল এ এক স্বচ্ছ জলাশয় এবং সে তার কাপড় হাঁটু পর্য্যন্ত টেনে তুলল। 
শলোমন বলল, ‘এ তো স্ফটিকের প্রাসাদ।’
(বিলকিস) বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তো নিজের ওপর জুলুম করেছিলাম। আমি শলোমনের সাথে বিশ্বজগতের প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পন করছি।’(২৭:৪৪)

সমাপ্ত।
ছবি: Wikipedia, bible-archaeology, ezsoftech, wikimedia, boydsmillspress.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Moses: কোরাণিক ক্যানভাসে নবী মূসা।

Abu Hena Mostafa Kamal  01 May, 2017 মি সরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ফেরাউন। হঠাৎ করে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। কিন্তু তিনি কোন উত্তরাধিকারী ন...