১৩ অক্টোবর, ২০১৫

Mawlid: মিলাদ-উন-নবী উৎযাপন- বৈধ না অবৈধ?

ওলিদ হচ্ছে নবীজীর জন্ম উৎসব উৎযাপন। সুন্নী মুসলিমগণ ১২ই রবিউল আওয়াল এবং শিয়া মুসলিমগণ ১৭ রবিউল আওয়ালে এটি উৎযাপন করে খাকে। আমাদের এ উপস্থাপনার উপপাদ্য বিষয় এই মওলিদ উৎযাপনের বৈধতা ইসলামে আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে পক্ষ-বিপক্ষ মতামতগুলি পর্যালোচনা করা। 

প্রথাগতভাবে সুন্নী এবং শিয়া পন্ডিতগণের এক বড় অংশ মওলিদ তথা “মিলাদ-উন-নবী” পালনের অনুমতি দিয়েছেন। তবে সুন্নী ও শিয়াদের অপর এক অংশ, সালাফি এবং আাহমেদিয়াগণ এটি পালনের বিপক্ষে। বিষয়টির জটিলতা ফুটে উঠেছে আহলে হাদিস স্কলার ইবনে তা্ঈমিয়ার বক্তব্যে। তার মতানুসারে উদ্ভাবণের অনুশীলন মাকরূহ, কিন্তু হারাম নয়। তা্ঈমিয়া তার ‘ইকতিদা আল-সিরাত আল-মুস্তাক্বীম' কিতাবে বলেন-

"কিছু মানুষ যা উদ্ভাবন করেছে, হয় খ্রিস্টানদেরকে অনুকরণ করতে যারা ঈসা (আ:) এর জন্ম উৎযাপন করে বা নবীজীর প্রতি ভালবাসায় এবং তাকে মহিমান্বিত করতে: আল্লাহ তাদেরকে পুরস্কৃত করুন এমন ভালবাসা ও প্রচেষ্টার জন্য কিন্তু উদ্ভাবণগুলোর জন্যে নয় [...] 

সুতরাং কেউ একজন নবীর জন্মতারিখকে বড় করে দেখতে এবং এটাকে উৎসব হিসেবে পালন করতে পারে, আর আল্লাহর রসূলকে সম্মানিত করার মহৎ ইচ্ছের দরুণ সে হয়ত: মহাপুরস্কার লাভ করবে।” -(আল-ফিক্কি, কায়রো ১৯৫০ সং., পৃ.২৯৪, ২৯৭) 

মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ ইসলামিক স্কলার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মওলিদের পক্ষে। তাদের বিবেচনায় মওলিদ উৎযাপন করা অনুমোদনযোগ্য, এটা ইসলাম বিরুদ্ধ নয়। কেননা তারা একে একটা প্রশংসামূলক কাজ হিসেবে দেখেন এবং ইতিবাচক উন্নয়ণ বলে রায় দেন। তারা এমনকি সোমবার দিন রোজা রাখারও পরামর্শ দেন, কেননা মওলিদ উৎযাপনের সেটাও একটা তরিকা বলে তারা মনে করেন।

নবীজীকে স্মরণ করা পূণ্য হিসেবে বিবেচিত এবং ইসলামে এ কাজকে উৎসাহিত করা হয়েছে। আর যেহেতু নবীজীর জন্ম এবং মৃত্যু তার জীবনের সাথে সম্পর্কিত সুতরাং দিনটিতে তার স্মরণ অনুমোদিত বলা যায় যদি না স্মরণ বা উৎযাপনের তরিকা আল্লাহর একত্বের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়। তবে অনেকেই তার জন্মদিন উপলক্ষে সমাবেশ, শোভাযাত্রা বা আলোকসজ্জা করাকে বিদা’ (উদ্ভাবনী চর্চা) হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।  

স্কলারগণ এবং ঐ মুসলিম সম্প্রদায় বা গোষ্ঠী যারা মওলিদকে বি’দা বা উদ্ভাবণ অনুশীলন বিবেচনা করে এর উৎযাপন নিষিদ্ধ করেছে তারা হল ‘সালাফি’, ‘দেওবন্দি’ এবং ‘কোরআন ওনলি’ মতবাদীরা। এসব গোষ্ঠী ও মতবাদীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ হলেন- আব্দ আল-আজিজ ইবনে আব্দ আল্লা ইবনে বা’জ, গ্রান্ড মুফতি, সৌদি আরাবিয়া; আব্দুল রহমান আল-সৌদিস, ঈমাম, মসজিদ-উল-হারাম, মক্কা; জাকির নায়েক এবং ইব্রাহিম দেশাই।

সালাফিগণ মওলিদকে ইসলামে একটা ভ্রান্ত উদ্ভবণ বিবেচনা করে এটি পালন নিষিদ্ধ করছে। তবে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যরা সার্বজনীনভাবে তা পালন শুরু করলে মক্কাতে নবীজীর জন্মগৃহ দর্শনার্থীর সংখ্যা যখন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়, তখন মক্কান সালাফি কর্তৃপক্ষ নবীর ঐ জন্মগৃহটি ঐদিন, ১২ই রবিউল আওয়াল, সোমবার, আগত দর্শনার্থীদের জন্যে সারাদিন উন্মুক্ত রাখতে শুরু করেন।

আহমদীয়ারাও মওলিদ উৎযাপনকে উদ্ভাবিত তরিকা হিসেবে বিবেচনা করে। তবে তারা নিয়মিত সমাবেশ যা “সীরাত-উন-নবী জলসা” নামে পরিচিত- তার আয়োজন করে থাকে। এই জলসায় তারা নবীজীর জীবন-চরিতের বিভিন্ন দিক আলোচনা করে এবং তার দর্শণ সর্বস্তরের শ্রোতামন্ডলীর (মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে) সামনে তুলে ধরে। তবে এই জলসা যেমন বাধ্যতামূলক বিবেচিত নয়, তেমনি তা নির্দিষ্ট দিনে করারও কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

ঐতিহাসিক, ইসলামি পন্ডিত এবং স্কলারদের সকলেই এ বিষয়ে একমত যে, নবীজী নিজে কখনও সাহাবীদেরকে তার জন্মদিন পালনের আদেশ দেননি। এমনকি এর কথা ইসলামের প্রথম কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত কারও জানাও ছিল না। তা্ই মওলিদের বিরোধিতাকারীদের বক্তব্য হল- “যেহেতু নবীজী এবং তার সাহাবীগণ কখনও মিলাদ-উন-নবী পালন করেননি, সুতরাং পালনকারীদের একবার ভাবা উচিৎ, তবে কি তারা তদাপেক্ষাও ভাল গাইডেন্সের উপর রয়েছেন, যার উপর নবীজী ছিলেন? আর যদি তারা মনে করেন মিলাদ-উন-নবী পালন করার মধ্যে কল্যাণ রয়েছে, তবে তারা কেন একবার ভাবেন না যে, তাহলে নবীজী এ সম্পর্কে আমাদেরকে বলতেন এবং আমাদেরকে তা করতে আদেশ করতেন?   

নবীজী বলেছেন: “নিশ্চয়, সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহর; আর সর্বোত্তম পথনির্দেশণা আমার (মুহম্মদের), আর নিকৃষ্টতম বিষয় যা উদ্ভাবিত হয় (মানুষের দ্বারা), কেননা প্রত্যেকটি উদ্ভাবিত বিষয়ই একটা বিদা’ এবং প্রত্যেকটি বিদা’ই (কুল বিদা) বিপথগামীতা যা দোযখের আগুণের শাস্তি নিশ্চিত করে।”
তিনি আরও বলেছেন: “যে কেউ আমাদের ধর্মীয় বিষয়াবলীতে কোনকিছু উদ্ভাবণ করে, যা ধর্মের অংশ নয়- নিশ্চয়ই তা পরিত্যাজ্য।” -বুখারী ও মুসলিম।

উপরের হাদিস ব্যাখ্যায় বিরুদ্ধবাদীগণের বক্তব্য এ্ই যে, এখানে ‘প্রত্যেক’ (কুল) শব্দটি একটি জেনারেলাইজড টার্ম, যা কোন ব্যতিক্রম ছাড়াই (নবীজীর পরবর্তীতে) সকল ধরণের উদ্ভাবণ অনুশীলনকে বোঝায়, আর তাই “মিলাদ-উন-নবী” উৎযাপন হচ্ছে বিপথগামীতা।

অন্যদিকে পালনকারীদের বক্তব্য হল- যারা মওলিদ পালনের বিরোধিতা করেন, তারা কি তবে বলতে চান ইবনে তাঈমিয়া, ঈমাম নওয়াবী, ইবনে কাছির, ইবনে হজর আল-আসকালানী, ঈমাম সূয়ূতি, প্রমুখ যারা একই সময়ের এবং কালের নন, তারা মওলিদের অনুমোদন বা তাতে নীরব সমর্থন দিয়ে ভুল করেছেন এবং ১৪০০ শতকে এসে হঠাৎ কোন এক দল বা গোষ্ঠীর উপর ভার পড়েছে তাদেরকে সংশোধন করার?

জ্ঞানী ব্যক্তিদের ব্যাপারে আমাদের নমনীয় মনোভাব থাকা উচিৎ। কেউ একই সাথে বাদী, বিচারক ও আইন প্রয়োগকারী হতে পারে না। আর আইনের শাসনের মূলনীতি হচ্ছে- অভিযুক্ত ততক্ষণ নিষ্পাপ, যতক্ষণ না তার অপরাধ প্রমাণিত হয়।

যদি আমরা কাউকে সুন্নাহ বিরোধী কাজের জন্যে দোষী সাব্যস্ত করি, তবে আমাদের কাছে অবশ্যই এমন তথ্যপ্রমাণ থাকতে হবে যা সুনির্দিষ্ট করবে কাজটি হারাম বা মাকরূহ। আর জন্মদিন পালন করা সুনির্দিষ্টভাবে হারাম করা হয়েছে এমন কোন হাদিস আছে বলে আমাদের জানা নেই। অন্যদিকে, যদি জন্মদিন পালন হারাম হত, তবে নবীজী নিশ্চয়ই আমাদেরকে তা জানাতেন এবং স্কলারগণ মওলিদ পালনে যেমন সমর্থন দিতেন না, তেমনি কখনও এ বিষয়ে মৌণতাও অবলম্বণ করতেন না বরং বিষয়টিকে হারাম হিসেবেই তারা ঘোষণা দিতেন।

ইজমার মূলনীতিটি কি? কোন কাজ বা বিষয়ের শেষ পরিণতি বা লক্ষ্যের কথা বিবেচনা করেই কি মুবাহ‘র (অনুমোদনযোগ্য অর্থাৎ হারাম নয় এমন) রুলিং দেয়া হয় না? আর যদি কোন কাজ মুবাহ হয় এবং কেউ যদি ঐ কাজের শেষফল মুস্তাহাব বা মুনদাব হাসিল স্থির করে তা পালন করে, তবে কি কাজটি মুস্তাহাব বা মুনদাব হিসেবে বিবেচিত হবে না?

সুতরাং বলা যায় মওলিদ উৎযাপন নবীজীর প্রতি ভালবাসার বহি:প্রকাশ এবং ঐ ভালবাসা অন্তরে ধরে রাখার প্রচেষ্টা মাত্র, তাই তা অনুমোদনযোগ্য। আর এটাই শেখ ইবনে তাঈমিয়া বলেছেন যা ইতিমধ্যে উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া তিনি একজন স্বীকৃত আলেম। সুতরাং কিভাবে আমরা ভাবতে পারি যে, ইজমার মূলনীতির বিষয়টি তিনি অবগত ছিলেন না?

অপরদিকে, যদি মওলিদ পালন অবৈধ হয় তবে নীচের ঘটনাগুলোর ব্যাপারে কি বলা যাবে?

ক). কোরআন সংকলন: যায়েদ ইবনে সাবেত বর্ণিত: নবীজী যখন মারা যান তখন পূর্ণ কোরআন কোথাও সংকলিত ছিল না। তারপর যখন ইয়ামামার যুদ্ধে সাহাবীদের এক বৃহৎ অংশ নিহত হলেন, তখন হযরত ওমর, খলিফা আবু বকরকে কোরআন সংকলিত করার পরামর্শ দেন। আবু বকর বিষ্মিত হয়ে বলেছিলেন, “নবীজী যা করেননি তেমন কিছু আমরা কিভাবে করি?”
ওমর বলেছিলেন, “আল্লা স্বাক্ষী, এটা করা ভাল।” আর তিনি খলিফা আবু বকরকে খুঁচিয়েই চলেন যতক্ষণ না আল্লাহ তার মনোবল বৃদ্ধি করে দিলেন। তখন তিনি যায়েদ ইবনে সাবেতকে ডেকে পাঠান এবং তাকে কোরআন সংকলণের দায়িত্ব দেন।

যায়েদ অত:পর বললেন, “আল্লা স্বাক্ষী, যদি তারা আমাকে একটা পাহাড় সরাতে বলতেন তবে তা কোরআন সংকলণের চেয়ে বেশী কঠিন কোন কাজ মনে হত না।” এ কারণে তিনি ঐ সময় বলেছিলেন, “নবীজী যা করেননি এমনকিছু আপনি কিভাবে করবেন?”
আবু বকর বলেছিলেন, “এটা ভাল কাজ।” আর হযরত ওমর আমার কাছে যাতায়াত অব্যাহত রাখেন যতক্ষণ না আল্লাহ ঐ কাজে আমার মনোবল বৃদ্ধি করে দেন।”- সহীহ বুখারী।

খ). তাশাহুদের সাথে বাড়তি কিছু যোগ করা: আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর তাশাহুদের শুরুতে বিসমিল্লাহ যুক্ত করেন। তিনি তালবিয়াতেও যুক্ত করেন- “লব্বাইকা ওয়া সা’দাইকা ওয়াল খায়রু বি ইয়াদাইকা ওয়াল রাঘরব’য়ূ ইলাইকা ওয়াল আমালু” -বুখারী, মুসলিম।

গ). জুম্মার নামাজে প্রথম আযান যোগ করা: আল-সা’ইব বিন ইয়াজিদ বর্ণিত: নবীজীর সময়ে এবং হযরত আবু বকর ও ওমরের খেলাফতকালে জুম্মার নামাজের আযান দেয়া হত যখন ঈমাম পুলপিটে বসতেন। তারপর যখন হযরত ওসমানের সময় এল, তিনি ৩য় আযানটি যোগ করেন (৩য়টাকে বিবেচিত হয় ১ম আযান ও ইকামার সাথে সম্পর্কিত, কিন্তু একে প্রথম ডাকা হয়, কারণ, এ জুম্মার নামাজ শুরু করে।)।- সহীহ বুখারী।

এসব ছাড়াও নবীজীর সাহাবী এবং স্কলারদের অনেকের নিজস্ব শিক্ষালয় ছিল, যেখানে ছাত্ররা তাদের তত্ত্ববধানে শিক্ষালাভ করত, নবীজীর সময়ে যার কোন অস্তিত্বই ছিল না। আর সেসব তো যথেষ্ট সুখ্যাতি অর্জন করেছিল, তবে কি বলা যাবে তারা মিসগাইডেড এবং খারাপ কিছু উদ্ভাবণের অভিযোগে অভিযুক্ত?  

এ থেকে বোঝা যায়, ‘প্রত্যেক’ (কুল) শব্দটির অর্থ জেনারেল সেন্সে ধরে নেয়া যাবে না। সুতরাং যদিও নবীজী তার শুভ জন্মদিন উৎযাপনের কথা বলেননি, তথাপি তা উৎযাপন করা কোন উদ্ভাবণী নয়। কারণ, এমন অনেক কাজ ও রীতি রয়েছে যা নবীজীর পরে তার নিকটতম সাহাবীদের দ্বারা প্রচলিত হয়েছে এবং সেগুলো কখনও কোন উদ্ভাবণ হিসেবে বিবেচিত হয়নি। 

এ পর্যায়ে উদ্ভাবণ কি ও কত প্রকার তা জানা আমাদের একান্ত জরুরী। সহীহ মুসলিমে (৬-২১), ঈমাম নওয়াবী বলেন: "The Prophet's saying every innovation is a general-particular and it is a reference to most innovations.”
The linguists say, "Innovation is any act done without a previous pattern, and it is of five different kinds.'"

ঈমাম নওয়াবী তার তাহজিব আল-আসমা ওয়াল সিফা’ত-এ আরও বলেছেন, "ধর্মীয় আইন উদ্ভাবণ হচ্ছে এমন কোনকিছুর সূত্রপাত করা যার কোন অস্তিত্ব নবীজীর সময়ে ছিল না এবং এটা ভাল এবং মন্দে বিভক্ত।" তার মতে, "al-muhdathat (muhdatha 'র বহুবচন) হচ্ছে কোনকিছু উদ্ভূত হওয়া যার কোন মূল ধর্মীয় আইনে নেই। প্রচলিত ধর্মীয় আইনে একে উদ্ভাবণ বলা হয়। অার যদি ধর্মীয় আইনের মধ্যে এর উৎপত্তি থাকে তখন তা আর উদ্ভাবণ নয়। ধর্মীয় আইনে উদ্ভাবণ অগ্রহণযোগ্য। আর উদ্ভাবণ সেটা্ই যা পূর্ববর্তী প্যাটার্ন ছাড়া উদ্ভাবিত হয়েছে তা সেটা ভাল বা মন্দ যাই হোক না কেন।."

আল বুখারীর ধারাভাষ্যকার শায়খ ইবনে হজর আল-আসকালানি বলেন: “এমনকিছু যার অস্তিস্ব নবীজীর সময়ে ছিল না তাকেই বলা হবে উদ্ভাবণ, কিন্তু সেসবের কিছু ভাল হলেও অন্যগুলো নয়।”

আবু নঈম বলেন (ইব্রাহিম আল-জুনায়েদ হতে বর্ণিত), “আমি আস-শাফিয়ীকে বলতে শুনেছি, “উদ্ভাবণ দু’ধরণের - প্রশংসিত উদ্ভাবণ ও নিন্দনীয় উদ্ভাবণ এবং কোনকিছু যা সুন্নহর সাথে দ্বিমত পোষণ করে তা নিন্দনীয়।”

ঈমাম আল-বায়হাকি তার মনাকিব আশ-শাফিয়িতে আশ-শাফিয়ির উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেন যে, “উদ্ভাবণ দু’প্রকারের: যা কোরআন সুন্নাহকে বিতর্কিত করে বা একদল মুসলমানের দ্বারা আবিস্কৃত তাই প্রবঞ্চনার উদ্ভাবন। অন্যদিকে কোন ভাল উদ্ভাবণ এগুলোকে বিতর্কিত করে না।."

আল ’ইজ বিন আব্দুস সালাম তার কিতাব আল-কাওয়া’ইদের পরিশিষ্টে বলেন, "উদ্ভাবণ বিভক্ত হয়েছে বাধ্যতামূলক, নিষিদ্ধ, সুপারিশকৃত, বিরোধমূলক ও অনুমোদনযোগ্য রূপে এবং ধর্মীয় আইনের বিপক্ষে কোনটি এর কোনটির সাথে মিলে তা জানার জন্যে।”

এসব স্কলারদের মতামত থেকে স্পষ্টত্:ই আমরা দেখছি যে উপাসনায় উদ্ভাবণগুলো ব্যতিক্রম ছাড়াই সম্পূর্ণ নেতিবাচক। আর এসব জ্ঞানীদের মধ্যে ঈমাম নওয়াবী ও আস-শাফিয়ীর ঘোষণা রয়েছে যে, উদ্ভাবণসমূহ ভাল ও মন্দে বিভক্ত হতে পারে ধর্মীয় আইনের সাথে সেগুলোর সঙ্গতি বা বিচ্যূতির উপর ভিত্তি করে।

তাছাড়া, নবীজীর একথা তো কেবল কোন একজন মনীষী নয় বরং অধিকাংশ মুসলিমই জানেন- “ইসলামে যে ভাল কোন চর্চার (সুন্নাতুন হাসানা) প্রবর্তণ করে সে তার এবং তার পরে যারা সেটা করে তাদের সকলের পুরস্কারও লাভ করে ঐসকল ব্যক্তিদের নিজেদের অর্জিত পুরস্কারের একটুও না কমিয়ে।”

অত্এব, একজন মুসলমানের জন্য কোন ভাল কাজের চর্চার প্রবর্তণ করা অনুমোদিত, এমনকি নবীজী তা না করে থাকলেও যদি কিনা চর্চাটি প্রবর্তিত হয় কোন মহৎ উদ্দেশ্যে এবং পুরস্কার প্রাপ্তির আশায়। কোন ভাল কাজের চর্চার প্রবর্তনের (সুন্নাতুন হাসানা) অর্থ হচ্ছে ধর্মীয় আ্ইন-কানুন বা সেগুলোর সাধারণ টেক্সট হতে ইজতিহাদ ও ইস্তিনবাতের মধ্যদিয়ে একটা চর্চার প্রতিষ্ঠা। আর এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে নবীজীর সাহাবী এবং তাদের অনুসারী প্রজন্মের কার্য়াবলী যা  আমাদের এই উপস্থাপনায় রয়েছে।

The ones prejudiced against celebrating the Prophet's birthday have paved the way for their falsehood by deceiving the less-learned among the Muslims. The prejudiced ones claim that Ibn Kathir writes in his al Bidaya wal Nihaya (11-172) that the Fatimide-Obaidite state, which descends from the Jew, Obaidillah bin Maimoon al Kaddah, ruler of Egypt from 357-567 A.H., innovated the celebration of a number of days, among them, the celebration of the Prophet's birthday. 

এ্ই চরমমিথ্যা ইবনে কাছিরের মেধা ও ইসলামের উপর তার পান্ডিত্যকে চরমভাবে হেয় করেছে। সত্য হল- ইবনে কাছির নবীজীর জন্মদিন সম্পর্কে “আল-বিদায়া ওয়াল নিহায়া” তে (১৩-১৩৬) লিখেছেন, "The victorious king Abu Sa'id Kawkaburi, was one of the generous, distinguished masters, and the glorious kings; he left good impressions and used to observe the honorable Mawlid by having a great celebration. Moreover, he was chivalrous, brave, wise, a scholar, and just." তিনি আরও বলেন, "And he used to spend three hundred thousand Dinars on the Mawlid." In support, Imam al Dhahabi writes of Abu Sa'id Kawkaburi, in Siyar A'laam al nubala' [২২-৩৩৬] "He was humble, righteous, and loved religious learned men and scholars of Prophetic saying."

যারা মিলাদ-উন-নবী উৎযাপনে বিদাত খুঁজে ফেরেন, তাদের উচিৎ বরং হারাম ও কবীরা গুণাহগুলো থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার কাজে আরো বেশী মনোযোগী হওয়া। নীচে কিছু কাজের উদাহরণ দেয়া গেল যেগুলো মুসলিম উম্মাহ প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছে- হয় জেনেও না জানার ভানে অথবা তা বৈধ করে নিয়েছে কোন ফতোয়া খুঁজে নিয়ে। যেমন-

মর্টগেজ রেখে বসত-বাটি ক্রয়। -(সুদ)
ক্রেডিট কার্ডের ক্রেডিটধারী হওয়া।
হালাল নয় এমন মাংস ও খাবার খাওয়া। -(ম্যাকডোনাল্ড, কেএফসি, প্রভৃতি)
পিতামাতার অবাধ্য হওয়া এবং স্বামী বা স্ত্রীর সাথে দূর্ব্যবহার করা।
ছেলেমেয়েদের ইসলামী স্কূলে পাঠালেও তাদেরকে ইসলামের অনুশীলন না করানো।
জাতীয়তার ভিত্তিতে কোন মুসলিম ভ্রাতাকে মিসকিন বলা।
বিলাসিতায় অর্থের অপচয়।-(বিলাসবহুল বাড়ী, গাড়ী, ইত্যাদি)
দূর্নীতি ও প্রতারণা করা।
নিজের জন্মদিন পালন করেও মওলিদের বিরোধিতা করা, ইত্যাদি।

Islam cannot be customized to suit individual needs and lifestyles. This is a great hypocrisy. One can ask Themselves how pious and strict follower of the Quran and Sunnah, am I in reality? Stay away from haram, shirk and Kufr and try to follow other Hadiths as well in order to fulfil the claim of being strict followers of Quran and Sunnah. এখন আমরা দেখি মওলিদ সম্পর্কে আলেম ও ঈমামগণের নিজ নিজ মন্তব্য কি-

ঈমাম আল-সূয়ূতি, আলহাওয়ি লিল ফতোয়ি থেকে “মওলিদ উৎসব উৎযাপন করার মহৎ উদ্দেশ্য” শিরোণামে একটা বিশেষ অধ্যায় লেখেন, যার শুরুতে তিনি বলেন, "There is a question being asked about commemorating the Mawlid of the Prophet in the month of Rabi' al-Awal: what is the religious legal ruling in this regard, is it good or bad? Does the one who celebrates get rewarded or not?" 

এ বিষয়ে আমার জবাব হল: মওলিদ উৎযাপন, which is basically gathering people together, reciting parts of the Qu'ran, narrating stories about the Prophet's birth and the signs that accompanied it, then serving food, and afterwards, departing, is one of the good innovations; and the one who practices it gets rewarded, because it involves venerating the status of the Prophet and expressing joy for his honorable birth.”

ইবনে তাঈমিয়া তার কিতাব “ইকতিদা আল-সিরাত আল-মুস্তাকিম”, পৃ.২৬৬ -এ বলেন: "Likewise, what some people have innovated, in competition with the Christians in celebrating the birth of Jesus, or out of love and veneration of the Prophet; and he continues "at the predecessors didn't do, even though there is a reason for it, and there is nothing against it." 

এই উক্তি এমন কারো যে ধর্মান্ধতাকে হটিয়ে কেবল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল খুশি করার চেষ্টা করেছিল। আমাদের মাওলিদ উৎযাপনের কারণ একটাই যা ইবনে তাঈমিয়া বলেছেন- "Out of love and veneration of the Prophet." নিশ্চয় আল্লা আমাদের এই ভালবাসা ও প্রচেষ্টার দরুন পুরস্কৃত করবেন এবং আল্লা নিশ্চয় তাকেও তাঁর করূণায় সিক্ত রাখবেন যিনি বলেছেন, "Let alone what the Christians claim about their Prophet, and you may praise Muhammad in any way you want and attribute to his essence all honors and to his status all greatness, for his merit has no limits that any expression by any speaker might reach.”

পূ্র্বে উল্লেখিত এক্ই উৎসে আল-সূয়ূতি আরও বলেছেন- “কেউ একজন ইবনে হজরকে মাওলিদ উৎযাপন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি উত্তর দেন, “প্রকৃতপক্ষে, মাওলিদ উৎযাপন একটা উদ্ভাবণ যা প্রথম তিন শতাব্দীর নীতিনিষ্ঠ মুসলমানদের দ্বারা সঞ্চালিত হয়নি। However, it involves good things and their opposites, therefore, whoever looks for the good and avoids the opposites then it is a good innovation.” -আমার মন চাইল এই প্রতিষ্ঠিত তথ্যের মূল উৎস জানতে, আর এ দু’টো প্রামান্য পুস্তক দ্বারা সত্যায়িত।

নবীজী যখন মদিনাতে আগমন করেন তিনি দেখতে পান যে ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা রাখছে। তখন তিনি এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলল, “এদিনে খোদা ফেরাউনকে ডুবিয়ে মারেন এবং রক্ষা করেন মূসাকে, আর তাই আমরা এদিনটিতে রোজা রাখি খোদার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যে।” - এ থেকে আমরা উপসংহারে আসতে পারি যে, একটা সুনির্দিষ্ট দিনে খোদাকে ধন্যবাদ জানানো যায়- for sending bounty or preventing indignity or harm." অত:পর আল-সূয়ূতি মন্তব্য- "What bounty is greater than the bounty of the coming of this Prophet, the Prophet of Mercy, on that day?"

"This is regarding the basis of Mawlid. As for the activities, there should be only the things that express thankfulness to Allah, such as what has been previously mentioned: reciting Qu'ran, eating food, giving charity, reciting poetry praising the Prophet or on piety which moves hearts and drives them to do good and work for the Hereafter."

এগুলোই তাদের উক্তি যারা মওলিদের বিরোধিতা করে।

ঈমাম মুহম্মদ ‍বিন আবু বকর আব্দুল্লাহ আল-কায়েসি আল-দামেস্কি. “জামি আল-আথার ফি মওলিদ, আল নবী-ই-আল-মুখতার, আল-লাফজ আল-রাইক ফি মওলিদ খায়ের আল-খালেক, ও মওলিদ আল-সাদী ফি মওলিদ আল-হাদী।”
ঈমাম আল ইরাকি: “আল-মওলিদ আল-হেনী ফি আল-মওলিদ আল-সানী।”
মোল্লা আলী আল-ক্বারী: “আল-মওলিদ অাল-রওয়ি ফিল মওলিদ আল-নবাওয়ি।”
ঈমাম ইবনে দাহিয়া: “আল-তানোয়ের ফি মওলিদ আল-বাসির আল-নাধির।”

ঈমাম শামসুদ্দিন নাছির আল-দামেস্কি. “মওলিদ আল-সাদী ফি মওলিদ আল-হাদী।” উল্লেখ্য, এই ঈমাম শামসুদ্দিন নাছির নবীজীর চাচা আবু লাহাব সম্পর্কে বলেছেন, “এ্ই অবিশ্বাসী যাকে নিন্দা করা হয়েছে, "ধ্বংস কর তার হস্তদ্বয়" -(১১১:১), চিরকাল দোযখে অবস্থান করবে। তথাপি, প্রতি সোমবার তার শাস্তি কমিয়ে দেয়া হবে, কারণ, নবীজীর জন্মগ্রহণে তিনি আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন।” তাহলে সেই ব্যক্তি যে সারা জীবন নবীজীর স্মরণে আনন্দিত থেকেছে এবং এক আল্লাহে বিশ্বাস স্থাপন করেছে, খোদার দয়া ও ক্ষমা কি অধিক আশা করতে পারে না?

ঈমাম শামসুদ্দিন আল-জাজরি: “আল-নাসর ফিল কিরা’আত আল-আসর উর্ফ আল তা’রিফ বিল মওলিদ আল-শারীফ।”
ঈমাম ইবনে আল-জাওযি: "It is security throughout the year, and glad tidings that all wishes and desires will be fulfilled."

ঈমাম আবু শামা: “আমাদের সময়ের সবচেয়ে ভাল উদ্ভাবণগুলোর একটি হল যা প্রতি বৎসর নবীজীর জন্মদিনে করা হয়, such as giving charity, doing good deeds, displaying ornaments, and expressing joy, for that expresses the feelings of love and veneration for him in the hearts of those who are celebrating, and also, shows thankfulness to Allah for His bounty by sending His Messenger, the one who has been sent as a Mercy to the worlds."-  আল-বা’ইথ আলা ইনকার আল-বিদা ওয়াল হাওয়াদিথ, পৃ. ২৩.

ঈমাম আল-শিহাব আল-কাস্টালানী (আল-বুখারীর ধারাভাষ্যকার): "May Allah have mercy on the one who turns the nights of the month of the Prophet's birth into festivities in order to decrease the suffering of those whose hearts are filled with disease and sickness." -আল মাওয়াহিব আল-লুধিয়ানা-(১-১৪৮).

এসকল তথ্য-উপাত্ত থেকে এটা পরিস্কার যে, মওলিদ উৎযাপন অত্যান্ত প্রশংসনীয় ও অনুমোদিত। আর নিশ্চয় আমরা সেইসব সুপ্রসিদ্ধ আলেম ও উলেমাগণকে উপেক্ষা করতে পারিনা যারা মওলিদের অনুমোদন দিয়েছেন এবং তার উপর অসংখ্য কিতাব রচনা করেছেন।

অার এসব স্কলার যাদের কাছে পুরো বিশ্ব ঋণী হাদিস, আইনশাস্ত্র, কমেন্ট্রি ও অন্য অনেক প্রকার জ্ঞানের উপর তাদের লেখা উপকারী কিতাবসমুহের জন্য, তারা কি তবে মওলিদের অনুমোদন ও সমর্থন দিয়ে কূ-কর্ম ও পাপ করেছেন? তারা কি খৃষ্টানদের যিশুর জন্মদিন উৎযাপনের অনুকরণ করেছেন? তারা কি এমন দাবী করছেন যে, উম্মাহ কি করবে সে বিষয়ে নবীজী পুরাপুরি দিকনির্দেশনা দিয়ে যাননি? এসব প্রশ্নের জবাব দেবার ভার পাঠকদের উপর রইল। 

তাছাড়া, নবীজী এবং তার সাহাবীগণ কোন একটা কাজ করেননি, এর অর্থ এ্ই নয় যে, কাজটি তারা নিষিদ্ধ করেছেন। হাদিসেই রয়েছে- “যে কেউ ইসলামে একটা ভাল কাজের চর্চার প্রবর্তণ করে....”-পূর্বে উল্লেখকৃত। আর এই হচ্ছে বড় প্রমাণ যা উৎসাহিত করে নতুন কোন ভাল চর্চার উদ্ভাবণে, ধর্মীয় আইনে যত চর্চাই প্রতিষ্ঠিত থাক না কেন, এমনকি নবীজী বা তার সাহাবীগণ সেগুলো না করে থাকলেও। 

আস-শাফিয়ী বলেন, "Anything that has a foundation in religious law is not an innovation even if the Companions did not do it, because their refraining from doing it might have been for a certain excuse they had at the time, or they left it for something better, or perhaps not all of them knew about it." সুতরাং যারা কোন কিছু নিষিদ্ধ করে “নবীজী তা করেনি” একথার উপর ভিত্তি করে, তবে তাদের দাবীর স্বপক্ষে এমন কোন প্রমাণ নেই যে কাজটি নিষিদ্ধ। সুতরাং তাদের দাবী কখনও সর্বজনগ্রহনীয় হবে না।

সুতরাং মওলিদ বিরোধিতাকারীদেরকে বলা যায়: আপনারা যে নীতির প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন, তার ভিত্তিতে বলা যায়- নবীজী বা তার সাহাবীগণ যা করেননি এমনকিছু কেউ করলে সে উদ্ভাবণের দোষে দোষী হবে নতুবা এর অর্থ দাঁড়াবে নবীজী তার উম্মতের জন্যে ধর্মকে পূর্ণ করে যাননি এবং তাদের কি করা উচিৎ তারও কোন দিকনির্দেশনা দেননি।

মওলিদ বিরোধিতাকারীদের আমরা বলব, "আপনাদের বক্তব্যের ভিত্তিতেই আমরা আপনাদেরকে দোষী করছি" কেননা, অাপনারা উপাসনার মূল বিষয়ে এমন অনেক কিছু উদ্ভাবণ করেছেন যা নবীজী কখনও করেননি, এমন কি তার সাহাবীরাও বা তাদের পরবর্তী বংশধরও। উদাহরণ স্বরূপ:

Congregating people behind one Imam to pray Salat al Tahajjud after Salat Al Tarawih, in the two Holy Mosques and other mosques.
Reciting the Prayer of Completion of the Qu'ran in Salat al Tarawih and also in Salat al Tahajjud.
Designating the 27th night of Ramadan to complete reading the entire Qu'ran in the two Holy Mosques.
A caller saying, after Salat al Tarawih, in the Qiyam prayer, "May Allah reward you."

Founding organizations which did not exist in the time of the Prophet, such as Islamic universities, societies for committing the Qu'ran to memory, and offices for missionary work, and committees for enjoining good and forbidding evil. We are not objecting to these things, since they are forms of good innovation. 

We merely list these innovations to point out that those who oppose Mawlid clearly contradict their own rule stating that anything that neither the Prophet nor his Companions did is innovation. And since they claim that all innovation is bad, they themselves are guilty.

তারা আরও একটা দাবী করে একথা বলে যে, যারা মওলিদ পালন করে তাদের সততা ও নীতির অভাব রয়েছে। তাহলে ঐ সব স্বনামখ্যাত স্কলার যাদের কথা আমরা ইতিমধ্যে উল্লেখ করেছি, তাদেরও কি নীতি ও নৈতিকতার অভাব রয়েছে? আমরা আশ্চর্য্য হব না, যদি এটাই তাই হয় যা তারা বিশ্বাস করে। এ একটা অপবাদ। কেননা আমরা এমন বিশ্বাস করে থাকি যে, "আল্লা যখন মহৎ কিছু করতে চান যা লুকায়িত আছে, তখন তিনি কোন হিংসুটে ব্যক্তির জিহবাকে তা জানিয়ে দেন।"

যারা মওলিদের বিরোধিতা করেন, তারা কিছু কিছু অভিব্যক্তিতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেন এবং দাবী করেন যে, ধর্মীয় কিছু স্কলার আল্লাহর সাথে শরীক করেছে। উদাহরণস্বরূপ- নবীজীর নিকট ঈমাম আল-বুসেরীর আবেদন- "Oh, most generous of creation, I have no one to resort to, save You, when the prevailing event takes place." তাদের ঈমাম আল-বুসেরীর বক্তব্য অবশ্যই সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করা উচিৎ: inda hulul il amim, when the prevailing event takes place. What is al Amim? It means that which prevails over the whole universe, and all of creation, in referring to the Day of Judgment. Imam al Busiery is asking intercession from the Prophet on the Day of Judgment because on that Day we will have no one to resort to, or appeal to. Imam al Busiery seeks his intercession to Allah through the Prophet, for when all other Messengers and Prophets will be saying, "Myself, myself," the Prophet will be saying, "I am the one for it, I am for it [the Intercession]" এখন এটা পরিস্কার যে, মওলিদের বিরোধিতাকারীদের সন্দেহ অমূলক এবং ভিত্তিহীন। মূলত: তারা অন্ধ, বাহ্যিক ও অন্তর দৃষ্টিতে

এধরণের আরো উদাহরণ দেখতে পাওয়া যায় ঈমাম আল-কামাল বিন আল-হাম্মাম আল-হানাফীর ফতো লিল কাদির ফি মানাসিক আল-ফারিসি ও শার্ল আল-মুখতার মিন আল-সাদা আল-আহনাফ কিতাবগুলোতে। যখন ঈমাম আবু হানিফা মদিনায় গমন করেন, নবীজীর কবরের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, "O, most honorable of the Two Weighty Ones (মানব ও জ্বীন)! O, treasure of mankind, shower your generosity upon me and please me with your pleasure. I am aspiring for your generosity, and there is no one for Abu Hanifa in the world but you." আর, আমাদের উচিৎ তার এই প্রার্থনার কোন ভুল ব্যাখ্যা না করে, বরং এর মর্মার্থ অনুধাবণের চেষ্টা করা।

মওলিদ প্রত্যাখ্যানকারীরা আরও বলে- "The day of the Prophet's birth is the same day of the week as his death. Therefore, joy on this day is no more appropriate than sorrow, and if religion is according to one's opinion, then this day should be a day of mourning and sorrow." এ ধরণের খোঁড়া যুক্তির উত্তরে ঈমাম জালাল আল-দীন আল-সূয়ূতি তার “আল হাওয়ি লিল ফতোয়ী”, পৃ.১৯৩, কিতাবে বলেছেন- "The Prophet's birth is the greatest bounty, and his death is the greatest calamity. Religious law urges us to express thankfulness for bounties, and be patient and remain calm during calamities.”

ধর্মীয় আইন আমাদেরকে শিশুর জন্ম উপলক্ষে পশু কোরবানী করার নির্দেশ দিয়েছে এবং গরীবদের মাঝে তার মাংস বিতরণ করতে, যা কিনা নবজাতকের দরুন খোদার নিকট কৃতজ্ঞতা ও খুশীর এক বহি:প্রকাশ। অন্যদিকে মৃত্যুর দরুন কোরবানীর কোন আদেশ আমাদেরকে দেয়া হয়নি, বরং বিলাপ ও শোক করা নিষিদ্ধ। সুতরাং, খোদায়ী আইন অনুসারে বলা যায়- নবীজীর জন্মদিনে আনন্দ প্রকাশ করা অনুমোদিত বটে, কিন্তু তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা নয়।”

তাছাড়া, ইবনে রজব তার “আল-লাতায়িফ” কিতাবে মওলিদ প্রত্যাখ্যানকারীদেরকে উপরের আর্গুমেন্টের ভিত্তিতে নিন্দা করেছেন, বলেছেন,- "কেউ কেউ আশুরার দিনটিকে ঈমাম হেসেনের হত্যার কারণে শোকদিবস হিসেবে মনোনীত করে নিয়েছে। But neither Allah nor His Prophet commanded that the days of the prophets' great trials or deaths should be declared days of mourning, let alone those with lesser rank."

আমরা এই প্রবন্ধের উপসংহার টানছি নবীজীর একটি উক্তি দিয়ে, যা হুজায়ফা থেকে আবু ইয়া’লা কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে এবং যে সম্পর্কে ইবনে কাছির বলেছেন, "এর চেইন অফ ট্রান্সমিশন ভাল।" 

আবু ইয়ালা বলেন, “নবীজী বলেছিলেন, “আমার জাতি সম্পর্কে যে জিনিসটি আমাকে ভাবিয়ে তোলে তা হল- একজন লোক যে কোরআন পাঠ করল এবং যখন তার মহিমা তার উপর ফুটে উঠতে শুরু করল ও সে একজন মুসলমানের চেহারা পেল, তখন সে তা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করল এবং তার পিছনে তা ছুড়ে ফেলল, আর তরবারী হাতে তার প্রতিবেশীর পিছনে ছুটে গেল এবং তাকে শিরক করার অভিযোগে অভিযুক্ত করল।” তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, ও, রসূলুল্লাহ, শিরক করার জন্যে কে বেশী দোষী- অভিযুক্ত না অভিযোগকারী?” নবীজী বললেন, “সে, যে অভিযোগকারী।”

যা হোক, উপরের এতসব আলোচনার ফলাফল কি? আমরা কি নবীজীর জন্ম উৎসব, মওলিদ উৎযাপন করব? 

বিজ্ঞ পাঠক, উত্তরটি এখন আপনারাই চিন্তাভাবনা করে দেন। আর ততক্ষণে আমরা ড. ঈসা আল-মানি আল-হুমাইরীর কাছ থেকে তার জবাবটিও শুনে রাখি-

“Yes we should celebrate it every year
And every month and every week
And every hour and every moment." 

# একজন বলল, তার মানে আপনি বলছেন নবীজীর জন্মদিন পালন করব?
ভাই, আমি কিন্তু এমনটা বলিনি। নবীজীর জন্মদিন কোনটি তা তো আমি জানিনে, তাহলে তা পালন করতে বলি কিভাবে? তাছাড়া বিষয় দু’টি ”জন্মদিন” ও ”জন্মোৎসব-একটি জন্ম উপলক্ষ্যে দিনের  উৎযাপন, অন্যটি জন্ম উপলক্ষ্যে উৎসব (খুশী) উৎযাপন।  ব্যক্তিগতভাবে অামি পার্টিকুলার কোন দিনকে জন্মদিন বানিয়ে তা পালন করার মধ্যে সওয়াবের কিছু দেখিনে, কারণ আল্লার দিন সবই ভাল। তবে কেউ যদি নবীজীর ধরায় আগমন উপলক্ষ্যে তার আনন্দ ও খুশী অন্যদের মাঝে শেয়ার করতে জন্মোৎসব পালন করে তাতে তো দোষের কিছু দেখিনে বরং সকল ভালকাজে সওয়াব সুনিশ্চিত।

সমাপ্ত।
সংশোধিত নয়।

উৎস:
"Mawlid, or Mawlud".Encyclopedia of Islam,
"Mawlid", Encyclopædia Britannica
Majmoo’ Fataawa Ibn Taymiyah (25/298)
Ahmed,Shahab (2010). Ibn Taymiyya and his times. p. 320.
Shaykh Qardawi Approves of Celebrating Mawlid . Yusuf Al-Qardawi.
"Religion & Ethics – Milad un Nabi" . BBC. 7 September 2009. 
Knappert, J. "The Mawlid".
Schielke, Samuli (2012). "Habitus of the authentic, order of the rational: contesting saints' festivals in contemporary Egypt."
Herman Beck, Islamic purity at odds with Javanese identity, 
Speight, R Marston (1980). "The nature of Christian and Muslim festivals".
Boyd, A. W. (1981). To Praise the Prophet;
Vaiz Zade Khorasani, Muhammad (1996). "Muhammad brithday, Unity Week and 9th International Islamic Unity Conferance" . Mishkat (51): 4–43.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Moses: কোরাণিক ক্যানভাসে নবী মূসা।

Abu Hena Mostafa Kamal  01 May, 2017 মি সরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ফেরাউন। হঠাৎ করে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। কিন্তু তিনি কোন উত্তরাধিকারী ন...