৩০ নভেম্বর, ২০১২

Christianity: খৃষ্টধর্মের সংস্কার আন্দোলন, পরিণতি ও ফলাফল।

মধ্যযুগে ক্যাথলিক গির্জা বিভিন্ন ধরণের কর আদায় করত। টাইথ (Titheউৎপন্ন ফসলের এক দশমাংশ গির্জাকে দিতে বাধ্য থাকা।) ও এ্যানেট এ ধরণের দু’টি কর ছিল। অবশ্য তাওরাতেও এক দশমাংশ যাকাতের সুস্পষ্ট বিধান ছিল। আর ইঞ্জিল বা বাইবেলে এই বিধানের কোন পরিবর্তন খোদা আনেননি। সুতরাং ঈসা ও তার সকল উম্মতদের প্রতি পূর্বোক্ত বিধান কার্যকরী ছিল।

ক্যাথলিক গির্জা।
যাইহোক, কর, যাকাত ও দান ইত্যাদি খাতে গির্জা প্রচুর অর্থ আয় করত। আর মানুষও গির্জার সকল আদেশ নির্দেশকে পবিত্র পালনীয় কর্তব্য জ্ঞান করে এসব অর্থ-সম্পদ প্রদান করত।

আদায়কৃত এইসব অর্থ বিধান অনুযায়ী ব্যয় না করে যাজকশ্রেণী নিজেরা ভোগবাদীতায় মত্ত হয়ে বিলাসী জীবন-যাপন করতে শুরু করলেন। এই যাজকশ্রেণী অতঃপর ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অর্থ আদায়ের আরও নুতন নুতন ফন্দি ফিকিরে লিপ্ত হলেন।

অসৎ ও লোভী প্রকৃতির এই যাজক শ্রেণীর একদল অতঃপর সাধারণ ধর্মবিশ্বাসীদের কান্ডজ্ঞানের অভাবের সুযোগ নিয়ে এক প্রকার ছাড়পত্র (indulgence) বিক্রিতে লিপ্ত হলেন। Indulgence-কে তারা মুক্তিপত্র হিসেবে অভিহিত করে এর ক্রয়কারীকে পৃথিবীর যাবতীয় পাপকর্ম থেকে মুক্ত করে দেবার ঘোষণা দিলেন।

যাজক টেটজেল।
নির্দিষ্ট পরিমান অর্থের বিনিময়ে যে কেউ indulgence ক্রয় করে যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত হবে- যাজকগণের এই ঘোষণায় সমাজের বিত্তবান মানুষেরা তা ক্রয় করতে শুরু করল এবং অধিক হারে জঘণ্যসব পাপ এবং অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ল।

ধর্মের নামে মানবতা বিরোধী এই ঘোষণা সাধারণ ধর্মবিশ্বাসীদের জীবন বিপন্ন করে তুলল। বিত্তহীন, নিপীড়িত সাধারণ ধর্ম বিশ্বাসীদেরকে গির্জা সর্বদাই এই ধারণা দিয়ে এসেছে যে, তাদের যাবতীয় দু:খ-কষ্ট ইহজগতে খোদার অভিপ্রায়। মানুষ গির্জার যে কোন আদেশ নির্দেশকে খোদার অমোঘ বাণী বলে বিশ্বাস করত এবং কোন প্রশ্ন করাকেও পাপ জ্ঞান করত।

সুতরাং জ্ঞানহীন, নির্বোধ ঐ অত্যাচারীত জনগোষ্ঠী পরজগতে শান্তি পাবার আশায় ইহজগতের দু:খ-কষ্টকে তাদের ভাগ্যের লিখন বলে মেনে নিত। আর তারা খোদার কাছে অত্যাচারকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করত; আর জানত, ন্যায়বিচারক খোদা পরকালে ঐ অত্যাচারীকে কঠিন শাস্তি দেবেন। কিন্তু indulgence বিক্রির কারণে এখন তারা দেখল পরকালেও তাদের জন্যে কিছু নেই। সুতরাং তাদের ভিতর ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হতে শুরু করল।

Indulgence.
এতদিন পর্যন্ত ধর্মীয় পুস্তক একচেটিয়া যাজকদের হাতে ছিল। তারা তা পাঠ করত এবং মানুষের কাছে ধর্মীয় বিধানাবলী বর্ণনা করত। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের পক্ষে ঐ পুস্তক সংগ্রহ যেমন দুরহ ছিল, তেমনি বিজাতীয় ভাষার কারণে পঠনও সম্ভব ছিল না। কিন্তু ইতিমধ্যে স্কূল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপ্রতিষ্ঠায় শিক্ষা যথেষ্ট বিস্তার লাভ করেছিল। তারপর মুদ্রণ যন্ত্র আবিস্কার হওয়ায় (১৪৭৬ খ্রী:) বাইবেল অনুদিত হয়ে মুদ্রিত আকারে জনসাধারণের ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিল। ফলে মানুষের কাছে ধর্মীয় নির্দেশাবলীর সাথে ধর্ম যাজকদের কথাবার্তা মিলিয়ে দেখার সুযোগ ছিল।

সুতরাং এখন ধর্ম যাজকদের indulgence সম্পর্কিত ফতোয়া যে সম্পূর্ণ মিথ্যা তা বুঝতে শিক্ষিত জনগোষ্ঠির কারও এতটুকু অসুবিধা হল না। অন্যদিকে যুগের পরিবর্তনে, শিক্ষার বিস্তারে মানুষের চিন্তা চেতনার এই যে প্রসার ঘটেছে ঐ লোভী যাজকগোষ্ঠী কিন্তু তা আদৌ উপলব্ধি করতে পারেননি।

Indulgence বিক্রি।
Indulgence বিক্রির বিরুদ্ধে সমাজের বুদ্ধিজীবী, বুর্জোয়া এবং ধর্ম যাজকদের একাংশ থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠল। সমাজের বুদ্ধিজীবীগণ প্রচার করতে শুরু করলেন যে, পৃথিবীতে মানুষের সুখ শান্তি ও দু:খ-কষ্টের সাথে খোদার ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোন সংস্পর্শ নেই। এই প্রচারে অত্যাচারিত সাধারণ মানুষেরা একত্রিত হল। তারা তাদের মধ্যে এতদিন ধরে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ প্রকাশ করল। অত:পর তাদের এই ক্ষোভ বুদ্ধিজীবী, বুর্জোয়া ও ধর্মযাজকদের একাংশের প্রতিবাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্যাথলিক ধর্মাধিষ্ঠান বিরোধী আন্দোলন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল।

নগর কেন্দ্রিক সভ্যতা বিকাশের দরুণ পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে একটি অভিজাত (বুর্জোয়া) শ্রেণী গড়ে উঠে। এরা ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প কারখানার প্রসার ঘটিয়ে প্রচলিত সামন্তবাদী অর্থনীতির বিপরীতে নুতন কর্মমুখর, সৃজনশীল একটি অর্থনীতি গড়ে তুলতে সচেষ্ট ছিল। কিন্তু গির্জা ও সামন্ত প্রভূদের একচ্ছত্র অধিপত্যের কারণে তারা কোন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছিল না। সুতরাং তারা ক্যাথলিক গির্জার শক্তি হ্রাস কল্পে ধর্মের সংস্কার কামনা করছিল। আর এই কারণেই প্রতিবাদী জনগোষ্ঠীর প্রতি এই শ্রেণীর জোরালো সমর্থন ছিল।

Papal Bull.
Indulgence বিক্রির বিরুদ্ধে ৯৫ দফার এক দাবীনামা পেশ করার মধ্যে দিয়ে শুরু হল ধর্ম সংস্কারের আন্দোলন। এই দাবীনামা পেশ করেছিলেন উইটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক ড: মার্টিন লুথার (১৪৮৩-১৫৪৬)।

জার্মানীর সাক্সনি অঞ্চলের ইসব্লেন শহরে লুথারের জন্ম। ১৮ বৎসর বয়সে স্কুল পেরিয়ে তিনি ইরফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অত:পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি অগাস্টিন ধর্মাশ্রমে ভর্তি হন। এইসময় তিনি ব্রাদার অগাস্টাস হিসেবে পরিচিত হন।

১৫০৫ সালে লুথার উইটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ১৫১৭ সালের ৩১শে অক্টোবর, যাজক টেটজেলের indulgence বিক্রির বিরুদ্ধে উইটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার্চে লুথার তার ৯৫ দফার প্রতিবাদ লিপি পাঠান। রোমে তার বিরুদ্ধে কমিশন বসে; তাকে ক্যাথলিক ধর্ম থেকে বহি:স্কারের প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং ১৫২০ খ্রীষ্টাব্দের ২১ সেপ্টেম্বর পোপের ঘোষণাবলে (Papal Bull) লুথারকে ক্যাথলিক গির্জা থেকে বহি:স্কার করা হয়।

ড: মার্টিন লুথার।
১০ই ডিসেম্বর, ১৫২০ খ্রীষ্টাব্দে লুথার বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে ছাত্র, শিক্ষক এবং শহরের অভিজাত শ্রেণীর উপস্থিতিতে সেই সিদ্ধান্তের কাগজ পুড়িয়ে ফেললেন।তিনি ঘোষণা করলেন যে, খোদা ও মানুষের মধ্যে এমন চার্চের অবস্থানের কোন প্রয়োজন নেই যে চার্চের পাদ্রীরা মনে করেন, খোদা তাদের নিয়োগ করেছেন, তারা মানুষকে পাপ থেকে মুক্ত করতে পারেন। তাছাড়া এ ধরণের বক্তব্যের কোন বৈধতা থাকতে পারে না; ধর্মের সত্যতা পোপের কোন ডিক্রি কিম্বা অধ্যাদেশে থাকে না, থাকে ধর্মে-পবিত্র ঐশীগ্রন্থে।

রোম সম্রাট ৫ম চার্লস পোপ লিওর পরামর্শক্রমে Worms-এ ১৫২১ খ্রীষ্টাব্দে হুসিয়ারী উচ্চারণ করেন যে, তিনি (লুথার) তার মতামত ত্যাগ না করলে তাকে জাঁ হাঁস (Jan Hus) এর পরিণতি বরণ করতে হবে। উল্লেখ্য ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে কথা বলায় জাঁ হাঁসকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল ধর্মেদ্রোহী হিসেবে।

Jan Hus.
Jan Hus was a Czech priest, philosopher, reformer, and master at Charles University in Prague. After John Wycliffe, the theorist of ecclesiastical Reformation, Hus is considered the first Church reformer, as he lived before LutherCalvin, and Zwingli. He was burned at the stake for heresy against the doctrines of the Catholic Church, including those on ecclesiology, the Eucharist, and other theological topics.

যাহোক, লুথার সম্রাটের ঐ হুসিয়ারীতে কর্ণপাত করলেন না। ফলে সম্রাটের প্রত্যক্ষ মদদে তার রচিত পুস্তকাদি পুড়িয়ে ফেলার উৎসব চলতে লাগল। এতে তীব্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে অত:পর লুথারের নেতৃত্বে ধর্ম সংস্কারের আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচণা হল।

জ্যাঁ ক্যালভিন।
আন্দোলন তীব্র হতে শুরু করলে ১৫৩০ খ্রীষ্টাব্দে ক্যাথলিক পন্থী ও লুথার পন্থীদের মধ্যে এক ধর্ম সংক্রান্ত বিতর্ক প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হল। যুক্তি তর্কে সত্য মিথ্যা বেরিয়ে এল- লুথার পন্থীরা বিজয়ী হল। ফলে প্রোটেস্ট্যান্টদের ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের ভিত্তি স্বীকৃত হবার পাশাপাশি লুথারের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থাদিও প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হল।

প্রোটেস্ট্যান্টগণ বিজয়ী হলেও তারা ছিল সংখ্যালঘু। সুতরাং নিজেদের নিরাপত্তাহীনতা উপলব্ধি করে ১৫৩১ খ্রীষ্টাব্দে তারা একটি আত্মরক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে যা "স্মলক্যান্ডিক লীগ" (Schmalkaldic League) নামে পরিচিত ছিল।

জেসুইট সংঘ।
সংস্কারবাদীরা গির্জার পাদ্রী-পুরোহিতদের বিরুদ্ধে কথা বললেও তারা কিন্তু খোদাতে বিশ্বাস হারায়নি কিম্বা তাদের সমালোচনা খোদার বিরুদ্ধেও ছিল না। তাদের অভিযোগ ছিল কেবলমাত্র অসৎ লোভী, স্বার্থান্বেষী সর্বোপরি ধর্মকে বিকৃত করে প্রচারকারী প্রতারক সেইসব পাদ্রী-পুরোহিতদের বিরুদ্ধে যারা মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে সমাজকে এক অন্ধকার আবর্তে ঠেলে দিয়েছিল।

Ignatius of Loyola.
ধর্ম সংস্কারের অন্দোলন ইউরোপে বিস্তার লাভ করল। নরওয়ে, ডেনমার্ক, হল্যান্ড, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডে এ মতবাদের পক্ষে দ্রুত জনমত গড়ে উঠে। এসময়ই ফরাসী এক পাদ্রী জ্যাঁ ক্যালভিন (১৫০৯-১৫৬৪) সংস্কারকামী পন্ডিত জ্যাকস লেফিব্রির প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে The Institute নামে এক গ্রন্থে ধর্ম সম্বন্ধে তার মতামত তুলে ধরেন। ক্যালভিন মূলত: শ্রমের মধ্যে দিয়ে খোদার নৈকট্য লাভের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং কাজের ব্যর্থতাকে তিনি খোদার বিরাগভাজন হবার কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।

ইতিপূর্বে গির্জা সমাজে মানুষকে প্রকৃতির ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর নির্ভরশীল হিসেবে প্রচার করেছে। কিন্তু ক্যালভিন ধারণা দিলেন- মানুষ কেবলমাত্র কর্মের মধ্যে দিয়েই শক্তির ফলাফল পেয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে ক্যালভিন মানুষকে কাজে উদ্বুদ্ধ ও আত্মনিয়োগ করার ধারণা দেন। মধ্যযুগের শেষপর্বে এই ভাবাদর্শ সম্পদ উৎপাদনে এক নূতন প্রেরণা দেয়।

ইউরোপের ধর্ম পীড়িত ও নিগৃহীত মানুষের বৃহৎ অংশেরই ধর্ম সংস্কারের আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ সেখানে উদার ও গণতান্ত্রিক আবওহাওয়ার ক্ষেত্র তৈরীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল।

ধর্ম সংস্কারের আন্দোলন অত:পর নিষ্কণ্টক রইল না। কারণ সামন্তশক্তি তো তখনও নি:শেষিত হয়নি। তাছাড়া ক্যাথলিক গোষ্ঠি এই আন্দোলনকে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হিসেবে প্রথম থেকেই বিবেচনা করে এর বিরোধিতা করে আসছিল। এখন তারা এই আন্দোলন স্তব্ধ করে দিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করল।

সাধু বার্থোলমেউ দিবসের গণহত্যা, ফ্রান্স।
১৫৪০ খ্রীষ্টাব্দে স্পেনের লয়লার এক ধর্মান্ধ ব্যক্তি ইগ্নাটিয়াস অব লয়লা (Ignatius of Loyola) জেসুইট সংঘ (Society of Jesus) নামে এক সংঘ গড়ে তোলে। রোমে এর প্রধান কার্যালয় স্থাপিত হয়। পোপ এই সংগঠন সম্পর্কে বললেন যে, এটি গঠিত হয়েছে বিপথগামী জনসাধারণকে (Misguided Mass) চার্চে ফিরিয়ে আনার জন্যে।

গণহত্যা, ফ্রান্স।
জেসুইট সংঘের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সদস্যরা গির্জার যে কোন আদেশ বিনা প্রশ্নে শুনতে ও পালন করতে বাধ্য ছিল। আর সদস্যদের প্রাথমিক কাজ ছিল সংস্কারবাদীদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ এবং তা রোমের কেন্দ্রিয় কার্যালয়ে প্রেরণ করা। ধর্মান্ধ এই জেসুইটরা অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী ছিল। তাদের জমি, জাহাজ এমনকি দক্ষিণ আমেরিকাতে কলোনী পর্যন্ত ছিল। যাহোক, সংস্কারবাদের সমর্থক ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে জেসুইটরা চরম আঘাত হানতে সিদ্ধান্ত নিল।

পোপ কর্তৃক গণহত্যাকারীদেরকে প্রদত্ত মেডেল।
১৫৭২ খ্রীষ্টাব্দের অগাস্ট-সেইন্ট বার্থোলমেউ দিবস। জেসুইটরা এদিন প্রোটেস্ট্যান্টদের গৃহগুলো সাদা রং দিয়ে চিহ্নিত করে রাখল। রাত্রে প্যারির গির্জা থেকে ঘন্টা বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তারা বেরিয়ে পড়ল এবং চিহ্নিত বাড়ীগুলোতে এক যোগে হামলা চালাল।

এক নির্দয় গণহত্যা সংঘটিত হতে লাগল। নারী, শিশু, বৃদ্ধ কেউ-ই রেহাই পেল না। এই অভিযান দু-সপ্তাহ ব্যাপী চলেছিল এবং কয়েক লক্ষ লোক নিহত হয়েছিল। শুধুমাত্র ফ্রান্সের শহরগুলোতেই ৩০ (ত্রিশ) হাজারের বেশী মানুষ এই হামলায় নিহত হয়েছিল। ইতিহাসে এই গণহত্যা "সাধু বার্থোলমেউ দিবসের গণহত্যা" নামে অবিহিত। পোপ এই হত্যাকান্ড অনুমোদন করেছিলেন এবং পিশাচ ঐসব হত্যাকারীদেরকে পুরস্কৃত করার আদেশও দিয়েছিলেন।

এতকিছুর পরও কোন দেশেই ধর্ম সংস্কার আন্দোলনকে সম্পূর্ণরূপে স্তব্ধ করা যায়নি। কারণ এই আন্দোলন শিক্ষিত সমাজের চাহিদাকে ধারণ করেছিল যার পরিণতি অতঃপর ইউরোপে উদারবাদী শাসন ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল।

সমাপ্ত।

ছবি: Wikipedia, 

১৮ নভেম্বর, ২০১২

Jeremiah: নবী অরামিয়ার জীবনালেখ্য।


নবী অরামিয়া (Jeremiah) জেরুজালেমের নিকটস্থ বিন্যামিন এলাকার অনাথোৎ গ্রামে বাস করতেন। তিনি ছিলেন ঈমামদের একজন। তার পিতার নাম ছিল হিস্কিয়। তার নব্যুয়ত প্রাপ্তির সময় অ্যাসিরিয়, মিসর ও বাবিল সাম্রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চলছিল। ইহুদারাজ যোশিয় ইবনে অমোনের রাজত্বের তের বৎসরের সময় তিনি নব্যুয়ত প্রাপ্ত হন। খোদা তাকে জানান-

‘উদরের মধ্যে তোমাকে গঠন করার পূর্বে 
আমি তোমাকে জ্ঞাত ছিলাম, 
তুমি গর্ভ হতে বের হয়ে আসার পূর্বে তোমাকে পবিত্র করেছিলাম;
আমি তোমাকে জাতিগণের কাছে আমার রসূল করে নিযুক্ত করেছি।’---------(অরামিয়া ১:৫)

অরামিয়া দক্ষিণ রাজ্যের পতনাবধি কাজ চালিয়ে যান। তার জনপ্রিয়তা খুব বেশী না থাকলেও তিনি একজন শক্তিশালী ভাববাদী ছিলেন।পথভ্রষ্ট ইস্রায়েলীদের সরল পথে ফিরিয়ে আনতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ইস্রায়েলীরা সরল পথে থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিল। এ কারণেই খোদা তাদের উপর তলোয়ার, দুর্ভিক্ষ, মহামারী আর অপমান ও লাঞ্ছনা চাপিয়ে দেন। 

‘তোমরা জেরুজালেমের পথে পথে ছুঁটে বেড়াও,
দেখ, জ্ঞাত হও এবং তথাকার সকল চকে অন্বেষণ কর;
যদি এমন একজনকেও পাও, 
যে ন্যায় আচরণ করে, সত্যের অনুশীলন করে,
তবে আমি নগরকে ক্ষমা করব।
তারা যদিও বলে, ‘খোদার কসম’, তথাপি তারা মিথ্যে শপথ করে।’---------(অরামিয়া ৫:১-২)

অন্যান্য নবীদের মত অরামিয়াও খোদার পথে আনতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ইস্রায়েলীরা তার আহবানে সাড়া দেয়নি, তাকে মান্য করেনি। বরং তারা বলেছে অমঙ্গল তার প্রতিই ঘটবে কেননা সে ভন্ড, তার বাণী মিথ্যা। আর তারা নবীকে মান্য করবে কি তারা তো স্বয়ং খোদাকেই অস্বীকারকারী। 

ইস্রায়েল ও ইহুদাকূল আমার বিপরীতে অত্যন্ত বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
তারা খোদাকে অস্বীকার করে বলেছে, 
‘উনি তিনি নন; আর আমাদের প্রতি অমঙ্গল ঘটবে না, 
আমরা তলোয়ার কি দুর্ভিক্ষ দেখব না,
আর নবীগণ বায়ূবৎ হবে, তাদের মধ্যে বাণী নেই,
তাদের প্রতি এরূপ করা যাবে।’--------(অরামিয়া ৫: ১০-১২)

সুতরাং অত্যন্ত দু:খের সাথে পরিশেষে নবী অরামিয়া ঘোষণা করেছিলেন- ‘ইহুদা যেন মিসরের কোন সন্ধির উপর নির্ভর না করে, অবশ্যই ইহুদিদের নির্বাসন ঘটবে এবং বাবিলীয়রা তাদেরকে সত্তুর বৎসর বন্দী করে রাখবে।’- এই কারণে অরামিয়াকে ঠাট্টা বিদ্রুপ, উপহাস ও টিটকারী সহ্য করতে হয়েছিল। এমনকি তাকে শারিরিকভাবে লাঞ্ছিত ও  অত্যাচারিত হতে হয়েছিল। 

‘আমি সমস্ত দিন উপহাসের পাত্র হয়েছি, 
সকলেই আমাকে ঠাট্টা করে।’
আবার-
‘খোদার বাণী প্রযুক্ত সমস্তদিন আমাকে 
টিটকারী দেয়া ও বিদ্রুপ করা হয়।’

এতদসত্ত্বেও অরামিয়া বিশ্বস্তভাবে ঐশী বাণীসমূহ তার লোকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। তিনি খুব মনোকষ্ট নিয়ে তার বলা ধ্বংসের ও বন্দীত্বের ভবিষ্যৎবাণী পূর্ণ হতে দেখেছিলেন। আর তাই তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘লজ্জার জীবন কাটাবার জন্যে আমি কষ্ট ও খেদ দেখতে কেন মায়ের গর্ভ হতে নির্গত হলাম?’ 

জাতির বেশীরভাগ লোককে বাবিলে নিয়ে যাওয়া হলেও যাদেরকে দেশে থাকবার অনুমতি দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে অরামিয়াও ছিলেন একজন। দেশে থাকা লোকদের তিনি মিসরে পালিয়ে না যাবার উপদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা তার কথা শোনেনি এবং তাদের সঙ্গে বন্দী করে তাকেও সেখানে নিয়ে গিয়েছিল। আর তিনি সেখানেই মারা গিয়েছিলেন। 

নবী অরামিয়া যোশিয়ের সংস্কার আন্দোলনের সময় কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি জেরুজালেমে এসে ইস্রায়েলীদেরকে সতর্ক করতে তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘তোমরা খোদাকে ত্যাগ করেছ, অন্যদিকে দেবদেবতার উদ্দেশ্যে ধূপ জ্বালিয়েছ -নিজেদের হাতে তৈরী জিনিসের পূজা করেছ। তোমাদের এই দুষ্টতার জন্যে তোমাদের সকলের উপর উত্তর দিক থেকে বিপদ বন্যার মত নেমে আসবে।

বাণী দানরত অরামিয়া।
খোদা তোমাদের পূর্বপুরুষদের একটা উর্বর দেশে নিয়ে এসেছিলেন যেন তোমরা সেখানকার ফল ও ভাল ভাল জিনিষ খেতে পার; কিন্তু তোমরা এসে এই দেশটাকে অশুচি করেছ। তোমাদের পুর্ব পুরুষেরা খোদার কি দোষ খুঁজে পেয়েছিল যে তারা তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল? তারা অপদার্থ প্রতিমার পিছনে গিয়ে নিজেরাও অপদার্থ হয়ে গিয়েছিল। 
--যাদের হাতে আইন কানুন ছিল তারা খোদাকে চেনেনি, নেতারা তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে, আর ঈমামেরা অপদার্থ প্রতিমাগুলোর পিছনে গিয়ে বা’ল দেবের নামে কথা বলেছে। সেই জন্যে খোদা তোমাদের জন্যে বিপদের ব্যবস্থা করেছেন এবং তোমাদের বিরুদ্ধে একটা পরিকল্পণা করেছেন। কাজেই সময় থাকতে তোমরা প্রত্যেকেই তোমাদের মন্দ পথ থেকে ফের ও তোমাদের চলাফেরা ও কাজ ভাল কর। 
--এবাদতখানায় তোমরা তোমাদের জঘণ্য প্রতিমাগুলো স্থাপন করে তা অশুচি করেছ। তোমরা তোমাদের সন্তানদের আগুনে উৎসর্গের জন্যে বিন-হিন্নোম উপত্যকায় তোফৎ নামে পূজার বেদী তৈরী করেছ, যার কোন আদেশ খোদা দেননি। তোমাদের প্রতিটি পদক্ষেপের উপর তাঁর দৃষ্টি রয়েছে, তোমরা তাঁর কাছ থেকে কোন কিছুই লুকাতে পারবে না। তোমাদের কোন পাপ কার্যই তাঁর কাছ থেকে গুপ্ত নয়।
--হে ইহুদা, তোমার তো যতগুলি শহর, ততগুলো দেবদেবতাও আছে। এসব দেবদেবতারা তখন কোথায় থাকে, যখন তুমি বিপদে পড়? যদি তারা তোমাকে উদ্ধার করতে পারে তবে তারা কেন তা করে না? এখন তারা আসুক, পারলে খোদার পরিকল্পণাকে নস্যাৎ করুক। 

 --হে ইস্রায়েলীগণ, বস্তুত: তোমরা পার হয়ে কিত্তীয়দের উপকূলসমূহে যাও, দেখ; আর কেদরে লোক পাঠাও, সূক্ষ্ম বিবেচনা কর, দেখ, এমন কি হয়েছে? কোন জাতি কি নিজেদের দেবগণের পরিবর্তন করেছে? সেই দেবগণ তো উপাস্য নয়। কিন্তু তোমরা এমন বস্তুর সাথে নিজেদের গৌরবের পরিবর্তন করেছে, যাতে উপকার নেই। হে আকাশমন্ডল, এতে স্তম্ভিত হও, রোমাঞ্চিত হও, নিতান্ত অসাড় হয়ে পড়।

লোকেরা উত্তর দিল, ‘কোন লাভ নেই। আমরা দেবদেবতাদের ভালবাসি, তাদের পিছনেই আমরা যাব।’

অরামিয়া বললেন, ‘তবে খোদা এই শহর ও তার আশেপাশের গ্রামগুলোর উপর যেসব বিপদ ঘটাবার কথা বলেছেন, তিনি সেই সবই তোমাদের উপর ঘটাবেন, কারণ তোমরা গ্রীবা শক্ত করেছ এবং আমার কথা শোননি। যেসব ঘরবাড়ীর ছাদের উপর সূর্য্য ও তারাগুলোর উদ্দেশ্যে তোমরা ধূপ জ্বালাতে এবং দেবদেবতার উদ্দেশ্যে ঢালন উৎসর্গের জিনিষ ঢেলে দিত সেইসব ঘরবাড়ী তোফতের মত অশুচি হবে।’

লোকদেরকে কোনভাবেই সরল পথে ফিরিয়ে আনতে না পেরে নবী অরামিয়া খোদার কাছে প্রার্থণা করলেন, যেন তিনি তাদের অপরাধ ক্ষমা ও তাদের উপর আরোপিত শাস্তি মওকুফ করেন। কিন্তু খোদা তাকে সতর্ক করেন-

‘তুমি এই জাতির পক্ষে মঙ্গল প্রার্থণা কোরও না।
তারা রোজা করলেও আমি তাদের কাতরোক্তি শুনব না,
হোম ও নৈবদ্য উৎসর্গ করলেও তাদেরকে গ্রাহ্য করব না,
কিন্তু আমিই তলোয়ার, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দ্বারা 
তাদেরকে সংহার করব।--------(অরামিয়া ১৪:১১-১২) 

‘যদি মূসা ও শমূয়েল আমার সম্মুখে দাঁড়াত,
তথাপি আমার অন্তর এই জাতির অনুকূল হত না;
তুমি আমার সম্মুখ হতে তাদেরকে বিদায় কর, তারা চলে যাক।
আর যদি তারা তোমাকে বলে, ‘কোথায় চলে যাব?’
তবে তাদেরকে বল- 
‘মৃত্যুর পাত্র মৃত্যুর স্থানে, তলোয়ারের পাত্র তলোয়ারের স্থানে,
দুর্ভিক্ষের পাত্র দুর্ভিক্ষের স্থানে 
ও বন্দীর পাত্র বন্দীত্বের স্থানে গমন করুক।’---------(অরামিয়া ১৫:১-২)

যোশিয়ের রাজত্বকালে এক শতাব্দীরও অধিক কাল ধরে অশুরীয়দের নিষ্ঠুর শাসনের পর বাবিল, মাদিয়ানীয় কর্তৃক তাদের অশুর রাজ্যের রাজধানী নীনবী আক্রান্তের সম্মুখীণ হল। ৬১৬ খ্রীঃপূঃ মিসরের ফেরাউন নখো, অশুরকে সাহায্য করার জন্যে একদল সৈন্য প্রেরণ করেন। তা সত্ত্বেও, ৬১২ খ্রীঃপূঃ নীনবীর পতন ঘটেছিল।

নখো কর্কমীশে অশুরকে সাহায্য করার জন্যে পুনঃ সৈন্য প্রেরণ করলেন। এই সৈন্যদের প্যালেস্টাইনের মধ্যে দিয়ে গমনের প্রয়োজন হয়েছিল। কিন্তু, যোশিয় তাদের গমন করতে দিতে অস্বীকার করল। ফেরাউন নখো তখন দূত মারফত তাকে একথা জানাল- ‘হে ইহুদারাজ, তোমার সঙ্গে আমার বিষয় কি? আমি অদ্য তোমার বিরুদ্ধে আসিনি, কিন্তু যে কূলের সঙ্গে আমার যুদ্ধ বেঁধেছে, তার বিরুদ্ধে যাচ্ছি, আর আমার উপাস্য আমাকে ত্বরা করতে বলেছেন, অতএব তুমি আমার সহবর্ত্তী উপাস্যের বিরুদ্ধাচারণ করতে ক্ষান্ত হও, নতুবা তিনি তোমাকে বিনষ্ট করবেন।’

যোশিয় ফেরাউনের বাণীতে কর্ণপাত করল না এবং তাকে বাঁধা দেবার জন্যে সেনাবাহিনী নিয়ে মাগিদ্দোতে চলে এল। সেখানে দু‘দল মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হল। যোশিয় এই যুদ্ধে ছদ্মবেশ ধারণ করে অংশগ্রহণ করেছিল। 

যুদ্ধের একপর্যায়ে যোশিয়ের রথ আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্থ হল এবং সেও তীরবিদ্ধ হল। তখন তাকে অন্য একটি রথে তুলে সেটিকে জেরুজালেমের পথে রওনা করে দেয়া হল এবং পথিমধ্যে সে মারা গেল। জেরুজালেমে তার মৃতদেহ এসে পৌঁছিলে লোকেরা শোক করল এবং তাকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে সমাহিত করা হল। 
৬০৫ খ্রীঃপূঃ কর্কমীশের যুদ্ধে বাবিল জয়লাভ করল।

যোশিয়ের মৃত্যুর পর তার পুত্র যিহোয়াহস (শিল্লুম) শাসনভার গ্রহণ করল। সে তেইশ বৎসর বয়সে শাসনভার গ্রহণ করে এবং তিন মাসের মত শাসনকার্য্য পরিচালনা করেছিল। তার রাজত্বের শুরুতেই ফেরাউন নখো তাকে মিসরে তলব করেন। কিন্তু সে যেতে অস্বীকার করলে মিসররাজ তাকে পদচ্যূত  ও এক তালন্ত স্বর্ণ ও একশত তালন্ত রৌপ্য অর্থদন্ডে দন্ডিত করেন। পরে মিসররাজ কর্তৃক শিল্লুম বন্দী হয়ে মিসরে প্রেরিত হল, আর তারস্থলে তারই সবচেয়ে বড়ভাই ইলিয়াকীম শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্ব পেল এবং তার নাম পরিবর্তন করে রাখা হল যিহোয়াকীম।

এদিকে যখন ফেরাউন নখো বাবিলের বিজয়ী সম্রাটের কাছে ক্ষমতার যুদ্ধে পরাজিত হলেন, তখন ইহুদাকে উৎপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করতে যিহোয়াকীম নতুন বাবিলরাজ নেবু চাঁদ নেজ্জারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেল। কিন্তু এক পর্যায়ে রাজদরবারে মিসরের সমর্থন শক্তিশালী হলে, সে নিয়মিতভাবে বাবিলরাজকে তার প্রদেয় কর পরিশোধে ব্যর্থ হল। এসময়ে আম্মানীয় মোয়াবীয়, কলদীয় এবং অরামীয় প্রভৃতি জাতিসমূহ বারংবার আক্রমণ চালিয়ে তাকে অস্থির ও তার সম্পদের ক্ষতিসাধন করল। 

বারবার কলদীয় ও অরামিয় সৈন্যদের আক্রমণের কারণে নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে রেখবীয় কূলজাত সকলে তাদের পৈতৃক নিবাস ছেড়ে জেরুজালেমে এসে বসবাস করতে লাগল। রেখবীয়দের আসলে তাদের কোন বাড়ীঘর ছিল না, তারা বাস করত তাম্বুতে। কারণ তাদের পিতৃপুরুষ যিহোনাদব ইবনে রেখবের এই আদেশ ছিল- ‘তোমরা ও তোমাদের সন্তানগণ কখনও দ্রাক্ষারস পান করবে না; আর গৃহ নির্মাণ, বীজ বপন ও দ্রাক্ষাফলের চাষ করবে না এবং এ সকলের অধিকারী হবে না, কিন্তু যাবজ্জীবন তাম্বুতে বাস করবে; যেন তোমরা যে স্থানে প্রবাস করছ, সেইস্থানে দীর্ঘজীবি হও।’
আর যিহোনাদবের এই আদেশ তার বংশধরেরা তখন থেকেই পালন করে আসছে।

এসময় অরামিয়ার নিকট এই বাণী উপস্থিত হল-

‘তুমি ইহুদা ও জেরুজালেমের লোকদেরকে একথা বল, ‘খোদা বলেন, 
‘তোমরা আমার বাণী পালন করার জন্যে কি উপদেশ গ্রহণ করবে না? 
রেখবের পুত্র যিহোনাদব তার সন্তানদেরকে দ্রাক্ষারস পান করতে নিষেধ করলে 
তার সেই বাণী অটল হয়েছে; 
অদ্যাবধি তারা দ্রাক্ষারস পান করে না, 
কারণ তারা তাদের পিতৃপুরুষদের আদেশ পালন করে; 
কিন্তু আমি তোমাদের সাথে কথা বলেছি, প্রত্যুষে উঠে বলেছি, 
তথাপি তোমরা আমার কথায় অবধান করনি। 
আমি আমার সমস্ত রসূলগণকে তোমাদের কাছে প্রেরণ করেছি, 
প্রত্যুষে উঠে প্রেরণ করে তোমাদেরকে বলেছি, 
‘তোমরা নিজ নিজ কূ-পথ হতে ফের, আচার ব্যবহার শুদ্ধ কর 
এবং অন্য দেবগণের সেবা করণার্থে তাদের পশ্চাৎগামী হইও না; 
তাতে আমি তোমাদেরকে ও তোমাদের পিতৃপুরুষদেরকে যে দেশ দিয়েছি, 
তার মধ্যে তোমরা বাস করবে’, 
কিন্তু তোমরা কর্ণপাত করনি, এবং আমার কথায় অবধান করনি।
রেখবের পুত্র যিহোনাদব যা আজ্ঞা করেছিল, তার সন্তানেরা তাই অটলরূপে পালন করছে;
কিন্তু এই জাতি আমার কথায় অবধান করেনি।

এই জন্যে দেখ আমি ইহুদার ও জেরুজালেম নিবাসীদের বিপরীতে 
যে সকল অমঙ্গলের কথা বলেছি, সে সমস্ত তাদের প্রতি ঘটাব; 
কারণ, আমি তাদের কাছে কথা বলেছি, কিন্তু তারা শুনেনি 
এবং তাদেরকে আহবান করেছি, কিন্তু তারা উত্তর দেয়নি।’---------(অরামিয়া ৩৫:১৩-১৭)

এই বাণী অবতীর্ণের পর নবী অরামিয়া রেখবের কূলকে ডেকে বললেন, ‘খোদা বলেছেন-

‘তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষ যিহোনাদবের আজ্ঞায় অবধান করেছ, 
তার সমস্ত আদেশ পালন করেছ ও আদেশ অনুসারে কার্য্য করেছ, 
এই জন্যে রেখবের পুত্র যিহোনাদবের জন্যে 
আমার সম্মুখে দাঁড়াবার লোকের কখনও অভাব হবে না।----------(অরামিয়া ৩৫:১৯)

এসময় নবী উরিয় ইবনে শমরিয়কে ইহুদারাজ যিহোয়াকীমের আদেশে হত্যা করা হল। তাকে তরবারী দ্বারা শিরোচ্ছেদ করে মৃতদেহ নিতান্ত অবহেলায় এক সাধারণ মানুষের কবরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়।

নবী উরিয় ছিলেন কিরিয়ৎ যিরিমের বাসিন্দা। নবূয়্যত প্রাপ্তির পর তিনি জেরুজালেম ও ইহুদার বিরুদ্ধে ভাববাণী করলে ইহুদারাজ যিহোয়াকীম ও পদস্থ রাজকর্মচারীগণ তাকে দেশাদ্রোহী সাব্যস্থ করে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারী করে। ভীত হয়ে উরিয় মিসরে পালিয়ে যান। তখন ইহুদারাজ যিহোয়াকীম ইলনাথন ইবনে অকবোর ও অন্য কয়েকজনকে মিসরে প্রেরণ করে তাকে ফিরিয়ে আনতে। তারা মিসর থেকে উরিয়কে ফিরিয়ে নিয়ে এলে যিহোয়াকীম তাকে হত্যার আদেশ দেয়। 

নবী উরিয়কে হত্যার পর নবী অরামিয়া পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। যিহোয়াকীমের ৪র্থ বৎসরে এবং বাবিলরাজ নেবু চাঁদ নেজ্জারের প্রথম বৎসরে অরামিয়ার নিকট এই বাণী উপস্থিত হল- ‘তোমার নবুয়্যত প্রাপ্তি হতে অদ্য পর্যন্ত তুমি যে বাণী প্রাপ্ত হয়েছ তা সকলকে জ্ঞাত কর। হয়ত: আমি ইহুদাকূলের উপরে যে সকল অমঙ্গল ঘটাবার সঙ্কল্প করেছি, তারা সেই সমস্ত অমঙ্গলের কথা শুনে প্রত্যেকে নিজ নিজ কূ-পথ হতে ফিরবে; আর আমি তাদের অপরাধ ও পাপ মার্জনা করব।’

তখন অরামিয়া বারূক ইবনে নোরিয়কে ডাকলেন এবং বারূক তার মুখে বাণীসমূহ শুনে এক জড়ান পুস্তকে তা লিপিবদ্ধ করল। লিপিবদ্ধকরণ শেষ হলে অরামিয়া বারূককে বললেন, ‘আমি তো পলাতক আছি, খোদার গৃহে যেতে পারি না। অতএব তুমি যাও এবং যা যা এই পুস্তকে লিখেছ, খোদার সেই সকল বাণী রোজার দিনে, প্রার্থণা করতে আগত সমগ্র ইহুদার লোকদের সম্মুখে পাঠ কোরও। হয়ত: খোদার সম্মুখে তারা নত হবে এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কূ-পথ হতে ফিরবে। তাতে মহাক্ষমাশীল খোদা হয়ত: দয়া করবেন এবং এই জাতির বিরুদ্ধে যে ক্রোধের ও রোষের কথা বলেছেন তা থেকে নিবৃত্ত হবেন।’ 

যিহোয়াকীমের পঞ্চম বৎসরের নবম মাসে জেরুজালেমের সমস্ত লোক এবং ইহুদার নগরসমূহ হতে জেরুজালেমে আগত সমস্ত লোক, খোদার সাক্ষাতে রোজা ঘোষণা করল। তখন বারূক খোদার গৃহে, উপরিস্থ প্রাঙ্গনে, খোদার গৃহের নতুন দ্বারের প্রবেশস্থানে, লেখক গমরিয় ইবনে শাফনের কুঠরীতে উপস্থিত সকলের কর্ণগোচরে ঐ পুস্তক পাঠ করল। এদিকে মীখা ইবনে গমরিয় বারূকের পাঠকৃত খোদার সেইসব বাণী শ্রবণ করে রাজবাটিতে লেখকের কুঠরীতে গেল। সেখানে লেখক ইলীশামা, দলায় ইবনে শমরিয়, ইলনাথন ইবনে অকবোর, গমরিয় ইবনে শাফন, সিদ্দিকীয় ইবনে হনানিয় প্রভৃতি অধ্যক্ষগণ উপস্থিত ছিল। আর মীখা তাদেরকে ঐ জড়ান পুস্তক এবং তাতে লিপিবদ্ধ বাণীর কথা জ্ঞাত করল। তখন তারা ইহুদি ইবনে নথনিয়কে বারূকের কাছে পাঠালেন এই বলে যে, সে যেন ঐ পুস্তক নিয়ে তখনি চলে আসে।
সুতরাং বারূক পুস্তকখানি হাতে করে তখনি তাদের নিকট চলে এল। অত:পর অধ্যক্ষগণের আদেশে সে ঐ পুস্তক তাদের কর্ণগোচরে পাঠ করল। পুস্তক এইরূপ সতর্ক বাণীতে ভরপুর ছিল-

‘যোশিয় ইবনে অমোন এর এয়োদশ বৎসর অবধি অদ্য পর্যন্ত এই তেইশ বৎসর কাল খোদার বাণী আমার কাছে উপস্থিত হয়েছে এবং আমি তা তোমাদেরকে শুনিয়েছি, প্রত্যুষে উঠে বলেছি, কিন্তু তোমরা শোননি। আর খোদা তার অন্য সমস্ত রসূলগণকেও তোমাদের নিকট পাঠিয়েছেন, প্রত্যুষে উঠে পাঠিয়েছেন, কিন্তু তোমরা শোননি, শোনার জন্যে কর্ণপাতও করনি।’

সেইসব রসূলগণ বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ কূ-পথ হতে ও নিজ নিজ আচরণের দুষ্টতা হতে ফের, তাতে খোদা তোমাদেরকে ও তোমাদের পিতৃপুরুষদেরকে যে দেশ দিয়েছেন, তোমরা সেখানে যুগ যুগ ধরে চিরকাল বাস করতে পারবে। আর অন্য দেবগণের সেবা ও তাদের কাছে প্রাণিপাত করার জন্যে তাদের পশ্চাৎগামী হইও না, নিজেদের হস্তকৃত বস্তুর দ্বারা খোদাকে অসন্তুষ্ট কোরও না; তাতে তিনি তোমাদের অমঙ্গল করবেন না।’ 

কিন্তু খোদা বলছেন- 

‘তোমরা আমার কথা শোননি, এইরূপে নিজেদের হস্তকৃত বস্তুর দ্বারা 
আমাকে অসন্তুষ্ট করে নিজেদের অমঙ্গল ঘটাচ্ছ। 
তোমরা আমার বাণী শোননি, 
এই জন্যে দেখ, আমি আদেশ পাঠিয়ে উত্তর দিকস্থ সমস্ত গোষ্ঠীকে নিয়ে আসব, 
আমি আমার দাস বাবিলরাজ নেবু চাঁদ নেজ্জারকে আনব, 
ও তাদেরকে এই দেশের বিরুদ্ধে, 
এ তন্নিবাসীদের বিরুদ্ধে ও চতুর্দিকস্থ এই সমস্ত জাতির বিরুদ্ধে আনব 
এবং এদেরকে নি:শেষে বিনষ্ট করব 
এবং বিষ্ময় ও শিষ ধ্বনির বিষয় ও চিরস্থায়ী উৎসন্নস্থান করব। 
আর এদের মধ্য হতে আমোদের ও আনন্দের রব, 
যাঁতার শব্দ ও প্রদীপের আলো সংহার করব। 
তাতে এই সমগ্র দেশ উৎসন্ন স্থান ও বিষ্ময়ের বিষয় হবে 
এবং এই জাতিগণ সত্তুর বৎসর বাবিল রাজের দাসত্ব করবে।’---------(অরামিয়া ২৫:৭-১১)

সত্তুর বৎসর সম্পূর্ণ হলে
আমি বাবিলরাজকে ও সেই জাতিকে সমুচিত প্রতিফল দেব,
কলদীয় দেশকে চিরস্থায়ী ধবংস স্থান করব।
আর সেই দেশের বিরুদ্ধে আমি যা যা বলেছি,
ও অরামিয়া যে সমস্ত ভাববাণী বলেছে,
আমার সেই সমস্ত বাণী ঐ দেশের প্রতি সফল করব।
বস্তুত: অনেক জাতি ও মহান রাজারা তাদেরকে দাসত্ব করাবে,
এবং আমি তাদের ক্রিয়ানুরূপ ও হস্তের কার্য্যানুরূপ প্রতিফল তাদেরকে দেব।---------(অরামিয়া ২৫:১২-১৪)

পাঠ শেষ হলে অধ্যক্ষগণ এ বিষয়ে একমত হল যে, ঐ পুস্তকের সকল কথা দেশের প্রধান হিসেবে ইহুদারাজকে জ্ঞাত করা একান্ত জরুরী। সাথে সাথে তারা বারূক ও অরামিয়ার নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টিও উপলব্ধি করল। সুতরাং তারা বারূককে বলল, ‘তুমি ও অরামিয়া লুকিয়ে থাক, কেউ যেন তোমাদের সন্ধান না পায়।’

এ সময় বারূক সম্পর্কে এই বাণী অরামিয়ার নিকট উপস্থিত হল-

‘তুমি বলেছ, ‘হায় হায়, ধিক আমাকে!
কেননা খোদা আমাকে ব্যাথার উপরে দু:খ যোগ করেছেন;
আমি কোঁকাতে কোঁকাতে শ্রান্ত হয়েছি, কিছুমাত্র বিশ্রাম পাচ্ছি না।’----------(অরামিয়া ৪৫:৩) 

‘দেখ, আমি যা গেঁথেছি, তা আমি ভেঙ্গে ফেলব,
যা রোপন করেছি, তা আমি উৎপাটন করব; 
আর এই সমগ্র দেশে তা করব।
তুমি (বারূক) কি নিজের জন্যে মহৎ মহৎ বিষয় চেষ্ট করবে?
সে চেষ্ট কোরও না; কেননা, আমি সমস্ত মর্ত্ত্যরে উপর অমঙ্গল ঘটাব;
কিন্তু তুমি যে সকল স্থানে যাবে, 
সে সকল স্থানে লুট দ্রব্যের ন্যায় তোমার প্রাণ তোমাকে ফিরিয়ে দেব।’---------(অরামিয়া ৪৫:৪-৫)

অধ্যক্ষগণ ইলীশামা লেখকের কক্ষে পুস্তকখানি রেখে ইহুদারাজ যিহোয়াকীমের নিকট গিয়ে ঐ পুস্তকের কথা যা তারা শুনেছে, তা তাকে জানাল। তখন ইহুদারাজ পুস্তকখানি আনার জন্যে ইহুদিকে পাঠাল। আর ইহুদি ইলীশামা লেখকের কক্ষ থেকে তা এনে ইহুদারাজ ও তার সাক্ষাতে দন্ডায়মান অধ্যক্ষগণের উপস্থিতিতে তা পাঠ করতে লাগল। ঐ সময় ইহুদারাজ শীতকালীন অবকাশ যাপন গৃহের প্রাঙ্গনে বসেছিল। আর তার সম্মুখে শরীরকে উষ্ণ করতে জলন্ত অঙ্গারের আঙ্গটা ছিল। ইহুদি তিন চার পাতা পাঠ করলে পর যিহোয়াকীম লেখকের ছুরি দিয়ে পাতাগুলি কেটে ঐ আঙ্গটার আগুনে ফেলে দিতে লাগল। এসময় ইলনাথন, দলায় ও গমরিয় পুস্তকখানি যেন পোড়ান না হয় সেজন্যে রাজাকে বিনীত অনুরোধ করেছিল। কিন্তু রাজা তাদের কথায় কর্ণপাত করল না। কেননা পুস্তকের বাণী তাকে কোনরূপ আড়োড়িত করতে পারেনি। 
একসময় সমস্ত পুস্তকখানি আগুনে পুড়িয়ে ভষ্মিভূত করা হল।

পুস্তকখানি ভস্মিভূত করার পর যিহোয়াকীম সকলকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘এই অরামিয়া, সে তো শাস্তির যোগ্য, কেননা সে এই দেশের অমঙ্গলের কথা বলেছে, সে তার পুস্তকে লিখেছে- ‘বাবিলরাজ অবশ্য আসবেন ও এই দেশ নষ্ট করবেন, এবং নরশুন্য ও পশুশুন্য করবেন।’
সে তৎক্ষণাৎ রাজপুত্র যিরহমেল, সরায় ইবনে অস্রীয়েল, শেলিমিয় ইবনে অদ্রীয়েলকে ডেকে বললেন, ‘তোমরা বারূক ও অরামিয়াকে বন্দী কর। তারা অবশ্যই শাস্তির যোগ্য।’

রাজার আদেশে তারা অরামিয়া ও বারূককে ধৃত করার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছিল বটে। কিন্তু তাদেরকে খুঁজে পেল না।

এই সময় অরামিয়ার নিকট যিহোয়াকীমের বিষয়ে এই বাণী উপস্থিত হল- 

‘তুমি এই পুস্তক পুড়িয়েছ, বলেছ,
‘তুমি কেন এর মধ্যে লিখেছ যে, 
‘বাবিলরাজ অবশ্য আসবেন, ও এই দেশ নষ্ট করবেন এবং নরশুন্য ও পশুশুন্য করবেন?’
অতএব দাউদের সিংহাসনে উপবেশন করতে তার কেউ থাকবে না 
এবং তার শব দিবসে রৌদ্রে এবং বাত্রিকালে হিমে নিক্ষিপ্ত হয়ে পতিত থাকবে। 
আর আমি তাকে, তার বংশকে ও তার দাসগণকে 
তাদের অপরাধের প্রতিফল দেব, 
আর তাদের বিরুদ্ধে আর জেরুজালেম নিবাসীদের ও ইহুদার লোকদের বিরূদ্ধে 
যে সমস্ত অমঙ্গলের কথা বললেও তারা কর্ণপাত করেনি, 
আমি তাদের উপর সেই সমস্ত অমঙ্গল ঘটাব।’-----------(অরামিয়া ৩৬:২৯-৩১)

এদিকে যিহোয়াকীম কর পরিশোধ না করায় বাবিলরাজ এই বিদ্রোহীকে দমনের অভিপ্রায়ে এক বৃহৎ সেনাদল প্রেরণ করলেন। এই সেনাবাহিনীর হাতে যিহোয়াকীম ধৃত হলে, তাকে বাবিলে নিয়ে যাবার জন্যে পিত্তল শৃঙ্খলে বদ্ধ করা হয়। অভিযান শেষে ফিরে যাবার সময় বাবিলরাজ নেবু চাঁদ নেজ্জার সঙ্গে করে এবাদতখানার কিছু পাত্রও নিয়ে গেলেন এবং বাবিলে নিয়ে গিয়ে সেগুলো তার দেবতার মন্দিরে, তার ধন-ভান্ডারে রেখে দিলেন। এই অভিযানে একদল শাহজাদাও বন্দী হয়ে বাবিলে নীত হয়েছিলেন, যাদের মধ্যে দানিউব, হনানীয়, মিকাইল ও অশরিয় ছিলেন।

যিহোয়াকীম বন্দী হয়ে বাবিলে নীত হওয়ায় তার এগার বৎসরের রাজত্বের অবসান ঘটল। আর অরামিয়াও হুলিয়া মুক্ত হলেন। ইহুদার পরবর্তী শাসক হল যিহোয়াখীন (কনিয়)। এসময় তার বয়স ছিল আঠার বৎসর এবং সে মাত্র তিন মাস দশ দিন রাজত্ব করেছিল। সেও নেবু চাঁদ নেজ্জারের প্রতি বিদ্রোহী হলে সেনাবাহিনী এল। তারা এসে নৈরাশ্যজনক অবস্থার সৃষ্টি করেছিল। ধন-সম্পদের সাথে যিহোয়াখীন ও রাজপরিবারের সদস্যসহ দশ হাজার লোক বন্দী হয়ে বাবিলে নীত হল। এই নির্বাসিতের মধ্যে নবী ইজেকেলও ছিলেন। 

যিহোয়াখীন তিন যুগেরও অধিক বন্দী জীবন-যাপন করেছিল। অত:পর তার বন্দীত্বের সাইত্রিশ বৎসরের দ্বাদশ মাসের ২৭তম দিনে বাবিলরাজ ইবিল মরোদক তাকে কারামুক্ত করে উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেন।

বাবিলরাজ, যিহোয়াখীনের স্থলে ইহুদার পরবর্তী শাসক হিসেবে যিহোয়াখীনেরই পিতৃব্য মত্তনিয় ইবনে যোশিয়কে মনোনীত করলেন এবং তার নাম পরিবর্তন করে রাখলেন সিদ্দিকীয়। এসময় তার বয়স ছিল একুশ বৎসর। সে বাবিলীয়দের বিরুদ্ধে সোর, সীদোন, আম্মান, ইদোম এবং মোয়াবের আহবানে সাড়া দেয়। নেবু চাঁদ নেজ্জার তা জানতে পেরে তাকে বাবিলে ডেকে আনুগত্য সম্পর্কে নিশ্চিত হবার পর ফেরৎ পাঠান। এই আনুগত্য অল্পকাল মাত্র স্থায়ী হয়েছিল। 

সিদ্দিকীয়ের রাজত্বের শুরুতে অর্থাৎ যিহোয়াখীন ও অন্যান্য ইহুদিরা বন্দী হয়ে বাবিলে নীত হলে, অরামিয়া এক দর্শণ পেলেন। তিনি দেখলেন খোদার গৃহের সম্মুখে দু‘টি ডালিতে ডুমুর ফল রাখা হয়েছে। একটি ডালিতে আশুপক্ক ডুমুর, অতি উত্তম ফল। আর অন্য ডালিতে রয়েছে খাবার অনুপোযুক্ত ডুমুর। এসময় খোদা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘অরামিয়া কি দেখতে পাচ্ছ?’
অরামিয়া বললেন, ‘ডুমুর ফল; উত্তম ফল যা অতি উত্তম এবং মন্দ ফল যা অতি মন্দ।’
খোদা বললেন- ‘আমি ইহুদার যে বন্দীগণকে কলদীয়দের দেশে পাঠিয়েছি,
তারা এই উত্তম ডুমুর ফলের সদৃশ হবে।
কারণ আমি মঙ্গলার্থে তাদের প্রতি দৃষ্টি রাখব ও পুনর্বার তাদেরকে এই দেশে আনব;
তাদেরকে গাঁথব, উৎপাটন করব না; রোপন করব, উম্মুলন করব না।
আর আমিই যে খোদা, তা জানবার মন তাদেরকে দেব;
আর তারা আমার প্রজা হবে ও আমি তাদের উপাস্য হব;
কেননা তারা সর্বান্তকরণে আমার প্রতি ফিরে আসবে।

আর যে মন্দ ফল এমন মন্দ যে খাওয়া যায় না,
তা যেমন, তেমনি আমি ইহুদারাজ সিদ্দিকীয়কে ও তার অধ্যক্ষগণকে 
ও জেরুজালেমের অবশিষ্ট লোকদেরকে- যারা এই দেশে রয়েছে, 
তাদেরকে এবং যারা মিসরে বাস করছে, তাদেরকে- সমর্পণ করব;
আমি অমঙ্গলার্থে তাদেরকে পৃথিবীর সমুদয় রাজ্যে ভেসে বেড়াবার জন্যে সমর্পণ করব;
এবং যে সকল স্থানে তাড়না করব, 
সেই সকল স্থানে তাদেরকে টিটকারী, প্রবাদ, বিদ্রুপ ও অভিশাপের পাত্র করব। 
আর আমি তাদেরকে ও তাদের পিতৃপুরুষদেরকে যে দেশ দিয়েছি, 
তথা হতে তারা যে পর্যন্ত না উচ্ছিন্ন হয়,
 সে পর্যন্ত তাদের মধ্যে তলোয়ার, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী প্রেরণ করব।’----------(অরামিয়া ২৪:৫-১০)

ইহুদারাজ সিদ্দিকীয়, আলিছা ইবনে শাফন ও গমরিয় ইবনে হিল্কিয়কে বাবিলরাজ নেবু চাঁদ নেজ্জারের কাছে পাঠিয়েছিলেন। এসময় নবী অরামিয়া তাদের মারফত একখানি পত্র নির্বাসিত ইহুদিদের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেন। ঐ পত্রে তিনি খোদায়ী আজ্ঞা লোকদেরকে লিখে জানিয়েছিলেন- 

‘সমস্ত নির্বাসিত লোকের প্রতি-
আমি যে সকল লোককে জেরুজালেম থেকে বাবিলে বন্দী করে এনেছি, 
তাদের প্রতি- আদেশ এই;

‘তোমরা ঘরবাড়ী তৈরী করে বাস কর, বাগান করে তার ফল খাও, 
আর বিবাহ করে সন্তানের জন্ম দাও; 
এবং সন্তানদেরও বিবাহ দাও, তারা সন্তান-সন্তুতি উৎপন্ন করুক;
এই প্রকারে তোমরা হ্রাস না পেয়ে সেখানে বর্ধিত হও। 
আর আমি তোমাদেরকে যে নগরে বন্দী করে এনেছি, 
তথাকার শান্তি চেষ্টা কর ও সেখানকার নিমিত্ত খোদার কাছে প্রার্থনা কর; 
কেননা সেখানকার শান্তিতে তোমাদের শান্তি হবে।’ ------------(অরামিয়া ২৯:৪-৭)

‘তোমাদের মধ্যে উপস্থিত তোমাদের ভাববাদীগণ তোমাদেরকে না ভুলিয়ে রাখুক;
এবং তোমরা যে স্বপ্ন ঘটিয়ে থাক, সেই স্বপ্ন সকলে মনোযোগ কোরও না।
কেননা তারা তোমাদের কাছে মিথ্যে করে আমার নামে ভাববাণী করে;
আমি তাদেরকে প্রেরণ করিনি।’-----------(অরামিয়া ২৯:৮-৯)

‘বস্তুত: বাবিল সম্বন্ধে কথিত সেই সত্তুর বৎসর পূর্ণ হলে 
আমি তোমাদের দিকে মনোযোগ দেব।
তোমাদের তত্ত্বাবধান করব এবং তোমাদের পক্ষে আমার মঙ্গল বাক্য সিদ্ধ করব; 
তোমাদেরকে পুনর্বার এই স্থানে ফিরিয়ে আনব। 
কেননা, আমি তোমাদের পক্ষে যে সকল সঙ্কল্প করছি, 
তা আমিই জানি; 
সেসকল মঙ্গলের সঙ্কল্প, অমঙ্গলের নয়, 
তোমাদেরকে শেষ ফল ও আশাসিদ্ধি দেবার সঙ্কল্প! 
আর তোমরা আমাকে আহবান করবে এবং গিয়ে আমার কাছে প্রার্থণা করবে, 
আর আমি তোমাদের কথায় কর্ণপাত করব।’ -----------(অরামিয়া ২৯:১০-১২)

‘আর তোমরা আমাকে অন্বেষণ করে আমাকে পাবে; 
কারণ তোমরা সর্বান্তকরণে আমাকে অন্বেষণ করবে; 
আর আমি তোমাদেরকে আমার উদ্দেশ্য পেতে দেব; এবং আমি তোমাদের বন্দীদশা ফেরাব 
এবং যে সব জাতিদের মাঝে ও যে সকল স্থানে তোমাদেরকে ছড়িয়ে দিয়েছি,
সেই সকল স্থান হতে তোমাদেরকে সংগ্রহ করব; 
এবং যে জায়গা থেকে তোমাদেরকে বন্দী করে এনেছি, 
সেইস্থানে তোমাদেরকে পুনর্বার নিয়ে যাব।’ ----------(অরামিয়া ২৯:১৩-১৪)

নবী অরামিয়া খোদার নিকট থেকে এই আদেশ পেলেন, ‘তুমি কোন এক কুম্ভকারের বাটীতে যাও।’
তখন তিনি এক কুম্ভকারের বাটীতে গেলেন। অরামিয়া যখন সেই কুম্ভকারের বাটিতে পৌঁছিলেন, তখন সে তার কুলালচক্রে কাজ করছিল। তিনি একসময় লক্ষ্য করলেন, কুম্ভকারের হস্তে, সে যে পাত্র তৈরী করছিল তার একটা নষ্ট হয়ে গেল। তখন ঐ কুম্ভকার ঐ নষ্টপাত্রের মৃত্তিকা দিয়ে অন্য একপ্রকার পাত্র তৈরী করল, তার দৃাষ্টতে যা ভাল, তদানুসারেই করল। এসময় খোদার এই বাণী অরামিয়ার কাছে উপস্থিত হল।

‘হে ইস্রায়েলকূল, 
তোমাদের সাথে আমি কি এই কুম্ভকারের ন্যায় ব্যবহার করতে পারি না?
দেখ, যেমন কুম্ভকারের হস্তে মৃত্তিকা, তেমনি আমার হস্তে তোমরা।
যখন আমি কোন জাতির কিম্বা রাজ্যের বিষয়ে উম্মুলনের,
উৎপাটনের ও বিনাশের কথা বলি,
তখন আমি যে জাতির বিষয়ে কথা বলেছি, তারা যদি নিজেদের দুষ্টতা হতে ফেরে,
তবে তাদের যে অমঙ্গল করতে আমি মনস্থ করেছিলাম, তা হতে ক্ষান্ত হই।
আর যখন আমি কোন জাতির কিম্বা রাজ্যের বিষয়ে
গেঁথে তোলার কিম্বা রোপন করার কথা বলি,
তখন তারা যদি আমার বাক্যে অবধান না করে, আমার সাক্ষাতে কদাচারণে লিপ্ত হয়,
তবে তাদের যে মঙ্গল করতে আমি মনস্থ করেছিলাম, তা হতে ক্ষান্ত হই।’-----------(অরামিয়া ১৮:৬-১০)

এরপর খোদা তাকে বললেন, ‘এবার তুমি মাটির একটি পাত্র ক্রয় কর এবং কতিপয় বৃদ্ধনেতা ও ঈমামদের কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে খর্পর দ্বারের প্রবেশস্থানে হিন্নোম উপত্যকাতে যাও।’
সুতরাং অরামিয়া মাটির একটি পাত্র ক্রয় করলেন। তারপর বৃদ্ধনেতা ও ঈমামদের কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে পৌঁছিলে, এই বাণী তার নিকট প্রকাশিত হল।
‘আমি এই স্থানের প্রতি এমন অমঙ্গল ঘটাব, 
যে তা শুনবে, তার কর্ণ শিহরে উঠবে।
কারণ তারা আমাকে পরিত্যাগ করেছে, এই স্থান বিজাতীয় স্থান করেছে,
এবং তারা, তাদের পিতৃপুরুষেরা ও ইহুদার রাজগণ যাদেরকে জ্ঞাত ছিল না,
এমন অন্য দেবগণের উদ্দেশ্যে এইস্থানে ধূপ জ্বালিয়েছে,
আর নির্দোষের রক্তে এইস্থান পরিপূর্ণ করেছে।
তারা বালের উদ্দেশ্যে হোমবলিরূপে নিজ নিজ পুত্রগণকে 
আগুনে পোড়াবার জন্যে উচ্চস্থলী নির্মাণ করেছে;
তা আমি আজ্ঞা করিনি, উচ্চারণ করিনি এবং তা আমার মনেও উদয় হয়নি।

দেখ, এমন সময় আসছে 
যখন এই স্থান আর তোফৎ কিম্বা হিন্নোম উপত্যকা নামে আখ্যাত হবে না, 
কিন্তু হত্যার উপত্যকা বলে আখ্যাত হবে।
আর আমি এই স্থানে ইহুদার ও জেরুজালেমের মন্ত্রণা বিফল করব,
এবং শত্রুগণের সম্মুখে তলোয়ারে,
তাদের প্রাণনাশী লোকদের হস্ত দ্বারা তাদেরকে নিপাত করব;
আমি তাদের শব খাদ্যের নিমিত্ত আকাশের পক্ষীগণকে ও ভূমির পশুদেরকে দেব।

আর আমি এই নগর বিষ্ময়ের ও শিশ শব্দের বিষয় করব,
 যে কেউ এর নিকট দিয়ে গমন করবে, 
সে এর প্রতি উপস্থিত সকল আঘাত দেখে বিষ্মিত হবে ও শিশ দেবে।
আর যখন তাদের শত্রুগণ ও প্রাণনাশীগণ কর্তৃক তারা অবরুদ্ধ ও ক্লিষ্ট হবে,
তখন আমি তাদেরকে তাদের সন্তানদের মাংস ভোজন করাব।’------------(অরামিয়া ১৯:৩-৯)

এরপর নবী অরামিয়া সঙ্গী লোকদের সম্মুখে সেই ক্রয়কৃত মাটির পাত্রটি ভেঙ্গে ফেললেন। তারপর তিনি লোকদেরকে বললেন, ‘খোদা বলেছেন-

‘যেমন কুম্ভকারের কোন পাত্র ভেঙ্গে ফেললে তা আর জোড়া দিতে পারা যায় না,
তেমনি আমি এই জাতি ও এই নগর ভেঙ্গে ফেলব;
তাতে করব দেবার জন্যে স্থানাভাব প্রযুক্ত লোকেরা তোফতে করব দেবে।
আমি এই স্থানের ও এই তন্নিবাসীদের প্রতি এই কার্য্য করব,
আমি এই নগর তোফতের সদৃশ করব।
তাতে জেরুজালেমের গৃহসমূহ ও ইহুদার রাজগণের গৃহসমূহ এবং 
আর যে সমস্ত গৃহের ছাদে তারা আকাশমন্ডলের সমস্ত বাহিনীর উদ্দেশ্যে ধূপ জ্বালাত,
এবং অন্য দেবগণের উদ্দেশ্যে পানীয় নৈবদ্য ঢালত,
সেই সকল গৃহ তোফতের ন্যায় অশুচি স্থান হবে।’------------(অরামিয়া ১৯:১০-১৩)

তোফৎ থেকে ফিরে অরামিয়া খোদার গৃহের প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে এবাদতখানায় প্রাণিপাত করনার্থে আগত ইহদার সমস্ত নগরবাসীদের সম্মুখে ঘোষণা করলেন- ‘খোদা আমাকে আদেশ দিয়েছেন, যেন আমি তোমাদেরকে তাঁর বাণী জ্ঞাত করি। তিনি বলেছেন, ‘এতে হয়ত: তারা তা শুনবে ও প্রত্যেকে অপান আপন কূ-পথ হতে ফিরবে; তাতে তাদের আচরণের দুষ্টতা প্রযুক্ত আমি তাদের যে অমঙ্গল করতে মনস্থ করেছি, তা হতে ক্ষান্ত হব।’ 

তিনি আরও বলেছেন, ‘কিন্তু তোমরা যদি আমার কথা না শোন, তোমাদের সম্মুখে আমি যে ব্যবস্থা দিয়েছি, সেই পথে না চল; আমিই তোমাদের কাছে যাদেরকে প্রেরণ করে আসছি, কিন্তু প্রত্যুষে উঠে পাঠালেও যাদের কথা তোমরা শোননি, আমার বান্দা সেই রসূলগণের বাণী না শোন, তবে আমি এই গৃহ শীলোর সমান করব এবং এই নগর পৃথিবীস্থ সমস্ত জাতির কাছে অভিশাপের বিষয় হবে।’
অরামিয়া যখন একথা ঘোষণা করলেন তখন ঈমাম পশহুর ইবনে ইম্মের, এবাদতখানার প্রধান অধ্যক্ষ ও অন্যান্য লোকেরা তা শুনল। এসময় ঈমাম পশহুর এগিয়ে এসে তাকে বলল, ‘কেন তুমি খোদার নামে এসব কথা বলছ যে, এই গৃহ শীলোর সমান হবে এবং নগর উৎসন্ন ও নিবাসী বিহীন হবে? তুমি তো মৃত্যুদন্ডের যোগ্য।’

এসময় সকল লোক একত্র হল এবং অরামিয়াকে ঘিরে ফেলল। তখন অরামিয়া তাদেরকে বললেন, ‘খোদা বলেছেন, ‘দেখ আমি এই নগরের বিষয়ে যেসকল অমঙ্গলের কথা বলেছি, সেসব এদের উপর ঘটাব, কারণ এরা নিজ নিজ গ্রীবা শক্ত করেছে, যেন আমার কথা শুনতে না হয়।’
লোকেরা অরামিয়াকে আক্রমণ করে মারধোর করল। তারপর তারা তাকে উপাসনা গৃহের নিকটস্থ উঁচু জায়গায় বিন্যামিন ফটকের কাছে হাঁড়িকাঠে বেঁধে রাখল। 

রাজকর্মচারীরা এসব শুনে পরদিন সেখানে এল এবং উপাসনা গৃহের নতুন ফটকের কাছে আলোচনায় বসল। এসময় পশহুর অরামিয়াকে হাঁড়িকাঠ থেকে মুক্ত করে সেখানে নিয়ে এল। তখন ঈমামগণ ও ভন্ড ভাববাদীগণ আগত অধ্যক্ষবর্গ ও সমস্ত উপস্থিত লোকদেরকে বলল, ‘এই ব্যক্তি প্রাণদন্ডের যোগ্য, কেননা সে এই নগরের বিপরীতে ভাববাণী করেছে’- এরপর তারা উপস্থিত লোকদেরকে সাক্ষী করে বলল, ‘আর তোমরা তো তা স্ব-কর্ণে শুনেছ।’ 

এসময় কিছু লোক উত্তেজিত হয়ে অরামিয়াকে হত্যা করতে চাইল। তখন অরামিয়া সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘তোমরা যে সব কথা শুনেছ, এই গৃহের ও এই নগরের বিপরীতে সেই সমস্ত ভাববাণী বলতে খোদাই আমাকে প্রেরণ করেছেন। আর তিনি এটাও বলেছেন যে, এখন তোমরা যদি নিজ নিজ পথ ও ক্রিয়া শুদ্ধ করে; নিজেদের উপাস্য খোদার বাণীতে কর্ণপাত কর; তবে তিনি তোমাদের বিরুদ্ধে যে অমঙ্গলের কথা বলেছেন, তা থেকে ক্ষান্ত হবেন।
আর আমি তো তোমাদের হস্তগত; তোমাদের দৃষ্টিতে যা ভাল ও ন্যায্য, তাই আমার প্রতি কর। কেবল নিশ্চিত জেনও, যদি তোমরা আমাকে হত্যা কর, তবে তোমাদের উপরে, এই নগরের উপরে ও দেশবাসীর উপরে নির্দোষের রক্তপাতের অপরাধ বর্ত্তাবে। কেননা তোমাদের কাছে রসূল হিসেবে খোদার তরফ থেকে আমি প্রেরিত হয়েছি।’

অরামিয়ার এ বক্তব্যের পর লোকেরা দু‘ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ল। শাফনের পুত্র অহিকাম ও অন্যান্যরা বলল, ‘মেরেষ্টীয় নবী মীখা যখন সিয়োন ও জেরুজালেমের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন তখন রাজা হিস্কিয় কি তাকে হত্যা করেছিলেন? মীখা তো বলেছিলেন, ‘সিয়োন ক্ষেত্রের ন্যায় কর্ষিত হবে, জেরুজালেম কাঁকড়ার ঢিবি হবে, এবং সেই গৃহের পর্বত বনস্থ উচ্চস্থলীর সমান হবে।’  
অন্যেরা বলল, ‘কিরিয়ৎ জিরিমের শমরিয়ের পুত্র নবী উরিয় যখন অরামিয়ার মত দেশের বিরুদ্ধে এ ধরণের কথা বলেছিলেন তখন রাজা যিহোয়াকীম ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। উরিয় যিহোয়াকীমের মনোভাব জানতে পেরে মিসরে পালিয়ে গেলে ইলনাথন ইবনে অকবোর তাকে সেখান থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এলে ইহুদারাজ যিহোয়াকীম তাকে তলোয়ারের আঘাতে হত্যা করেছিলেন এবং তার মৃতদেহ সামান্য লোকের কবরে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।’

রাজকর্মচারীরা দেখল অহিকাম ও উপস্থিত লোকদের অধিকাংশ অরামিয়ার পক্ষ নিয়েছে। সুতরাং তারা তাকে মুক্তি দিতে আদেশ দিল। তখন পশহুর উঠে গিয়ে অরামিয়ার হাতের বাঁধন খুলে দিল। এসময় অরামিয়া তাকে বললেন- ‘খোদা বলেছেন-

‘দেখ, আমি তোমার পক্ষে ও তোমার সমস্ত বন্ধুর পক্ষে তোমাকে ভয়জনক করব।
তারা শত্রুদের তলোয়ারের আঘাতে পতিত হবে ও তুমি স্বচক্ষে তা দেখবে,
এবং আমি সমস্ত ইহুদাকে বাবিলরাজের হস্তে সমর্পণ করব;
তাতে সে তাদেরকে বন্দী করে বাবিলে নিয়ে যাবে,
ও তলোয়ারের আঘাতে হত্যা করবে।
আর আমি এই নগরের সমস্ত সম্পত্তি, শ্রমোপার্জ্জিত অর্থ, 
বহুমূল্য বস্তু ও ইহুদার রজগণের ধনকোষসমূহ শত্রুগণের হস্তে প্রদান করব;
আর তারা সে সমস্ত লুটপাট করে বাবিলে নিয়ে যাবে।

আর হে পশহুর,
তুমি ও তোমার গৃহনিবাসীগণ সকলে বন্দী-দশার স্থানে যাবে,
তুমি বাবিলে উপস্থিত হবে, সেই স্থানে মরবে ও সেইস্থানে করব প্রাপ্ত হবে;
তোমার এবং যাদের কাছে তুমি মিথ্যে ভাববাণী করেছ,
তোমার সেইসমস্ত বন্ধুরও সেই একই দশা হবে।’----------(অরামিয়া ২০:৪-৬)

বাবিলস্থ ইহুদিদের কলোনী থেকে নিহিলামীয় শমরিয়- এক ভন্ড নবী, ঈমাম সফনিয় ইবনে মাসেয় ও অন্যান্য ঈমামদের কাছে এক পত্র পাঠাল। সে পত্রে লিখেছিল- 

‘খোদা ইমাম যিহোয়াদার পরিবর্ত্তে তোমাকে ঈমাম পদে নিযুক্ত করেছেন,
যেন তোমরা খোদার গৃহের অধ্যক্ষ হও; 
যে কোন ব্যক্তি ক্ষিপ্ত হয়ে নিজেকে নবী হিসেবে প্রচার করে, 
তাকে হাঁড়িকাঠে ও বেঁড়ীতে বদ্ধ করা তোমার উচিৎ।
অতএব অনাথোতীয় যে অরামিয়া তোমাদের কাছে নিজেকে নবী হিসেবে প্রচার করে,
তাকে তুমি কেন তিরস্কার করনি?
না করাতেই সে বাবিলে আমাদের কাছে এ পত্র পাঠিয়েছে, বলেছে,
‘বিলম্ব হবে, তোমরা ঘরবাড়ী নির্মাণ করে বাস করতে থাক, গাছ লাগিয়ে ফলভোগ কর।’
ঈমাম সফনিয় নবী অরামিয়ার সম্মুখে ঐ পত্রখানা পাঠ করলেন। পরে অরামিয়ার কাছে নিহিলামীয় শমরিয়ের বিষয়ে এই বাণী প্রকাশিত হল- 

‘আমি তাকে প্রেরণ না করলেও 
সে তোমাদের কাছে ভাববাণী করে, 
মিথ্যে কথায় তোমাদের বিশ্বাস জন্মিয়েছে।
সেই জন্যে আমি তাকে ও তার বংশকে দন্ড দেব;
তার কোন সন্তান এই জাতির মধ্যে বাস করবে না;
আর আমি আমার প্রজাদের যে মঙ্গল করব, তা সে দেখতে পাবে না;
কারণ সে খোদার বিরুদ্ধে বিপথগমণের কথা বলেছে।-----------(অরামিয়া ২৯:৩১-৩২)

৫৮৮ খ্রীঃপূঃ ফেরাউন হোপরা এপ্রিস বাবিলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরিকল্পণা করলে সিদ্দিকীয় সভাষদদের চাপে তাকে সহযোগিতা করতে রাজী হল। কেননা মোয়াব, আম্মান, সোর ও সীদোনের রাজগণ ফেরাউনের পক্ষ সমর্থণ করেছিল এবং তাদের দূতগণ সিদ্দিকীয়কে প্ররোচিত করল। 

এসময় নবী অরামিয়া জেরুজালেমে আগত ঐসব দূতদের মারফত স্ব স্ব রাজার উদ্দেশ্যে খোদার এই বাণী জানিয়ে দিলেন-

‘আমিই নিজের মহাপরাক্রম ও বিস্তারিত বাহু দ্বারা পৃথিবী, 
পৃথিবী নিবাসী মনুষ্য ও পশু সৃষ্টি করেছি, 
এবং আমি যাকে ইচ্ছে তা দেয়া বিহিত বুঝি, তাকে তা দিয়ে থাকি। 
স¤প্রতি আমি এসকল দেশ (অরাম, সোর, সীদোন) 
আমার দাস বাবিলরাজ নেবু চাঁদ নেজ্জারের হস্তে সমর্পণ করেছি 
এবং তার দাসত্ব করণার্থে মাঠের পশুগণও তাকে দিয়েছি। 
আর সমস্ত জাতি তার, তার পুত্রের ও তার পৌত্রের দাস হবে; 
পরে তার দেশের সময়ও উপস্থিত হবে, 
তখন অনেক জাতি ও মহান রাজগণ তাকেও দাসত্ব করাবে।’----------(অরামিয়া ২৭:৫-৭)

নবী অরামিয়া ইহুদারাজকেও উপরোক্ত খোদার বাণী জানিয়ে তাকে বাবিলরাজের বিপক্ষে দাঁড়ানোর মত বিশ্বাসঘাতকতা মূলক কাজ থেকে বিরত থাকতে বললেন। কিন্তু সে তাতে কর্ণপাত না করে বাবিলরাজকে কর পরিশোধ করতে অস্বীকার করল। 
ইহুদারাজ সিদ্দিকিয়ের রাজত্বের ৪র্থ বৎসরের ৫ম মাসে নবী অরামিয়া কতকগুলো চামড়ার ফিতে ও কাঠ দিয়ে একটা জোঁয়ালি (হালচাষের সময় যা গরুর কাঁধের উপর থাকে) তৈরী করে খোদার গৃহের প্রাঙ্গণে গেলেন। তারপর সেই জোঁয়ালি তার গ্রীবার উপর রেখে উপস্থিত লোকদেরকে বললেন- ‘খোদা বলেছেন- 

‘আর যে জাতি ও রাজ্য সেই বাবিলরাজ নেবু চাঁদ নেজ্জারের দাস না হবে, 
ও রাবিলরাজের জোঁয়ালির নীচে গ্রীবা না রাখবে, 
আমি তলোয়ার, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দ্বারা সেই জাতিকে প্রতিফল দেব,
 যে পর্য্যন্ত ওর হস্ত দ্বারা তাদেরকে সংহার না করি।

তোমাদের যে ভাববাদী, 
মন্ত্রজ্ঞ, স্বপ্নদর্শক, গণক ও মায়াবী সকল তোমাদেরকে বলে, 
‘তোমরা বাবিল রাজের দাস হবে না’, 
তাদের কথায় কর্ণপাত কোরও না; 
কেননা তারা তোমাদের কাছে মিথ্যে ভাববাণী করে, 
যেন তোমরা স্বদেশ হতে দূরীকৃত এবং আমা দ্বারা তাড়িত হয়ে বিনষ্ট হও।
কিন্তু যে জাতি বাবিলরাজের জোঁয়ালির নীচে আপন গ্রীবা রাখবে 
ও তার দাস হবে, 
আমি সেই জাতিকে স্বদেশে স্থির থাকতে দেব; 
তারা তথায় কৃষিকার্য্য করবে ও তথায় বাস করবে।’------------(অরামিয়া ২৭:৮-১১)

এসময় কিছু লোক নবীর কাছে জানতে চাইল, ‘খোদা আমাদের বিরুদ্ধে এই সমস্ত মহাবিপদের কথা কেন বলেছেন? আমাদের অপরাধ কি?’
আবার অনেকে এই প্রশ্ন রাখল, ‘আমাদের পাপ কি, যা আমরা আমাদের খোদার বিরুদ্ধে করেছি?’
অরামিয়া বললেন, ‘খোদা বলেছেন-

‘তোমাদের পিতৃপুরুষেরা আমাকে ত্যাগ করেছে,
তারা অন্য দেবগণের পশ্চাদগামী হয়ে তাদের সেবা করেছে,
তাদের কাছে প্রাণিপাত করেছে, 
আমাকে ত্যাগ করেছে এবং আমার ব্যবস্থা পালন করেনি।’

‘আর তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষগণ অপেক্ষাও মন্দ আচরণ করেছ;
 তোমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দুষ্ট হৃদয়ের কঠিনতা অনুসারে চলছ,
তাই আমার বাক্যে কর্ণপাত করছ না।
এই জন্যে তোমাদের পিতৃপুরুষেরা ও তোমরা যে দেশ জাননি,
এমন এক দেশে আমি তোমাদেরকে নিক্ষেপ করব;
 সেখানে তোমরা দিবারাত্র অন্য দেবগণের সেবা করবে,
 কেননা আমি তোমাদেরকে দয়া করব না।’-------------(অরামিয়া ১৬:১১-১৩)

এসময় গিবিয়োনের হনানিয় ইবনে অশুর অরামিয়ার কাঁধ থেকে জোঁয়ালিটা নিয়ে ভেঙ্গে ফেলল এবং লোকদেরকে বলল, ‘এভাবে খোদা বাবিলরাজের জোঁয়ালি ভেঙ্গে ফেলতে যাচ্ছেন।  তিনি বলেছেন, ‘বাবিলরাজ নেবু চাঁদ নেজ্জার এই স্থান হতে খোদার গৃহের যে সকল পাত্র বাবিলে নিয়ে গিয়েছে, সেসকল আমি দু‘বৎসরের মধ্যে ফিরিয়ে আনব। আর ইহুদারাজ যিকনিয় ইবনে যিহোয়াকীমকে ও ইহুদার সমস্ত বন্দী, যারা বাবিলে নীত হয়েছে, তাদেরকেও এই স্থানে ফিরিয়ে আনব।’

এসময় অরামিয়া তাকে উদ্দেশ্যে বললেন, ‘আমার ও তোমার পূর্বে সেকালের যে নবীগণ ছিল, তারা অনেক দেশ ও মহৎ মহৎ রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, অমঙ্গল ও মহামারীর বিষয়ে ভবিষ্যৎ বাণী করেছিল। যে নবী খোদায়ী গজব সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করে, সেই নবীর বাণী সফল হলেই জানা যায় যে, সত্যই সে খোদা প্রেরিত। সুতরাং উপস্থিত এই লোকদের সাথে আমিও তোমার বাণী ফলার অপেক্ষায় রইলাম।
কিন্তু তুমি এখন খোদার বাণী শোন, তিনি বলেছেন-

‘তুমি (হনানিয়) কাঠের জোঁয়ালি ভেঙ্গে ফেলেছ বটে 
কিন্তু তার জায়গায় দেয়া হবে লোহার জোঁয়ালি।’ 

‘এই সকল জাতি যেন বাবিলরাজ নেবু চাঁদ নেজ্জারের দাস হয়, 
তজ্জন্যে আমি তাদের স্কন্ধে লৌহের জোঁয়ালি দিলাম; তারা তার দাস হবে; 
আর আমি তাকে মাঠের পশুগণও দিলাম।’----------(অরামিয়া ২৮:১৩-১৪)

তখন অরামিয়া সকল ঈমাম ও প্রজালোকদেরকে বললেন, ‘যে ভাববাদীগণ তোমাদের কাছে এই ভাববাণী করে যে, খোদার গৃহের পাত্রসকল বাবিল হতে শীঘ্র ফিরিয়ে আনা যাবে, তোমরা তাদের কথায় কর্ণপাত কোরও না, কেননা তারা তোমাদের কাছে মিথ্যে ভাববাণী করে। কেননা দুইস্তম্ভ, সমুদ্রপাত্র ও পীঠসকল এবং যে সমস্ত পাত্র এই নগরে অবশিষ্ট আছে- সেই সমস্তের বিষয়ে খোদা একথা বলেন-

‘সে সমস্ত বাবিলে নীত হবে 
এবং যে পর্যন্ত আমি তাদের তত্ত্বানুসন্ধান না করব,
সে পর্যন্ত সেই স্থানে থাকবে; 
পরে আমি সে সমস্ত এই স্থানে ফিরিয়ে আনব।’-----------(অরামিয়া ২৭:২২)

অরামিয়া লক্ষ্য করলেন অধিকাংশ লোকেরা তার কথায় নয়, বরং হনানিয়র কথায় বিশ্বাস স্থাপন করতে চাচ্ছে। সুতরাং তিনি হনানিয়কে বললেন, ‘হে হনানিয়, তুমি খোদা প্রেরিত রসূল নও। কিন্তু তুমি এই জাতিকে মিথ্যে কথায় বিশ্বাস করাচ্ছ। তাই খোদা তোমাকে পৃথিবীর উপর থেকে সরিয়ে দিতে যাচ্ছেন। তিনি তোমার সম্পর্কে বলেছেন-

দেখ, আমি তোমাকে ভূ-তল হতে দূর করে দেব;
তুমি এই বৎসরেই মারা যাবে,
কেননা তুমি খোদার বিরুদ্ধে বিপথগমণের কথা বলেছ।-----------(অরামিয়া ২৮:১৬)

সেই বৎসরের সপ্তম মাসে হনানি মারা গেল।

ইহুদারাজ সিদ্দিকীয় প্রদেয় কর পরিশোধ করতে অস্বীকার করায় বাবিলরাজ নেবু চাঁদ নেজ্জার ইহুদার বিরুদ্ধে চরম ব্যবস্থা নেবার সিদ্ধান্ত নিলেন। তার সেনাবাহিনী নগরটি অবরোধ করল। ভীত হয়ে নগরের অধিবাসীরা খোদার গৃহের প্রাঙ্গনে কান্নাকাটি করতে লাগল। আর সমস্ত অধ্যক্ষ ও নগরবাসী এই মর্মে ওয়াদা করল যে, তারা নিজ নিজ দাসদাসীদেরকে মুক্ত করে বিদায় করে দেবে। এতে খোদা খুশী হবেন এবং তাদের উপর থেকে এই বিপদ তুলে নেবেন। আর তারা বাবিলীয়দের অবরোধ কালেই ওয়াদা মত তাদের দাসদাসীদের মুক্ত করে দিল। অন্য কথায় বলা যায়, তাওরাতের যে বিধান এতদিন তারা অমান্য করে আসছিল এখন বিপদে পড়ে খোদাকে সাক্ষী রেখে তা মান্য করার পূর্ণ ওয়াদা দিল। এছাড়া লোকেরা শিল্লুম ইবনে যোশিয়ের জন্যে কান্নাকাটিও করতে লাগল। কারণ সে ধর্মপরায়ণ শাসক ছিল। অরামিয়া তখন শিল্লুম সম্বন্ধে ঘোষণা করলেন যে, ‘তিনি কখনও ফিরে আসবেন না, তিনি সেখানেই মারা যাবেন।’

এসময় ইহুদারাজ সিদ্দিকীয়, পশহুর ইবনে মল্কিয় ও ঈমাম সফনিয় ইবনে মাসেয়কে নবী অরামিয়ার কাছে পাঠাল এই বলে- ‘বাবিলরাজ নেবু চাঁদ নেজ্জার আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আপনি আমাদের জন্যে দয়াময় খোদার কাছে প্রার্থনা করুন, যাতে তিনি আমাদের কাছ থেকে ফিরে যান।’
অরামিয়া তখন তাদেরকে বলে দিলেন, সিদ্দিকীয়কে একথা বোলও, ‘খোদা বলেছেন-

‘দেখ, তোমরা নিজ নিজ হস্তস্থিত যে সকল যুদ্ধাস্ত্র দ্বারা
 বাবিল রাজের সাথে ও তোমারদের অবরোধকারী কলদীয়দের সাথে 
প্রাচীরের বাইরে যুদ্ধ করছ, 
আমি সেই সকলের মুখ ফিরিয়ে দেব 
এবং এই নগরের মধ্যে সে সকল সংগ্রহ করব। 
আর আমি নিজে প্রসারিত হস্ত ও বলবান বাহু দ্বারা ক্রোধে, 
রোষে ও মহাকোপে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করব। 
আমি এই নগরবাসী মনুষ্য ও পশুসকলকে সংহার করব; 
তারা মহামারীতে মারা পড়বে।’

তৎপরে আমি ইহুদারাজ সিদ্দিকীয়কে, 
তার দাসগণকে ও প্রজাদেরকে, এমনকি, 
এই নগরের যে সকল লোক মহামারী, তলোয়ার ও দুর্ভিক্ষ হতে অবশিষ্ট থাকবে, 
তাদেরকে বাবিলরাজ নেবু চাঁদ নেজ্জারের হস্তে, 
তাদের শত্র“গণের হস্তে ও তাদের প্রাণনাশার্থী লোকদের হস্তে সমর্পণ করব; 
সেই রাজা তলোয়ার দ্বারা তাদেরকে আঘাত করবে, 
তাদের প্রতি মমতা করবে না, ক্ষমা কি করুণা করবে না।-----------(অরামিয়া ২১:৪-৭)

আর তোমাদের সম্পর্কে খোদার বাণী এই- 

‘দেখ, তোমাদের সম্মুখে আমি জীবনের ও মৃত্যুর পথ রাখছি। 
যে ব্যক্তি এই নগরে থাকবে, 
সে তলোয়ারে, দুর্ভিক্ষে ও মহামারীতে মারা পড়বে;
 কিন্তু যে ব্যক্তি বাইরে গিয়ে তোমাদের অবরোধকারী কলদীয়দের পক্ষে দাঁড়াবে,
সে বাঁচবে এবং তার প্রাণ তার পক্ষে লুটদ্রব্যের ন্যায় হবে।
কেননা, আমি অমঙ্গলের নিমিত্ত এই নগরের বিপরীতে আপন মুখ রেখেছি, 
মঙ্গলের নিমিত্ত নয়; 
এ বাবিলরাজের হস্তগত হবে এবং সে এ আগুনে পুড়িয়ে দেবে।’------------(অরামিয়া ২১:৮-১০)

আর ইহুদারাজকূল সম্পর্কে খোদার বাণী এই-

‘হে দাউদকূল, তোমরা প্রাত:কালে বিচার নিষ্পত্তি কর 
এবং লুন্ঠিত ব্যক্তিকে উপদ্রবীর হস্ত হতে উদ্ধার কর, 
নতুবা তোমাদের আচরণের দুষ্টতা 
প্রযুক্ত আমার ক্রোধ অগ্নির ন্যায় বহির্গত হবে 
এবং এমন দাহ করবে যে, কেউ তা নির্বাণ করবে না।’-------------(অরামিয়া ২১:১২)

‘হে তলভূমি নিবাসিনী, সমস্থলীর শৈলবাসিনী, 
দেখ, আমি তোমার বিপক্ষ; 
তোমরা বলছ, ‘আমাদের বিপরীতে কে নেমে আসবে?’ 
আমি তোমাদের কর্মের ফলানুসারে সমুচিত দন্ড দেব; 
আমি তার বনে অগ্নি জ্বালব, 
তা তার চারিদিকে সকলই গ্রাস করবে।’-------------(অরামিয়া ২১:১৩-১৪)

এ সময়ই একদল মিসরীয় সৈন্যের আগমন ঘটলে বাবিলীয়রা অবরোধ তুলে নিল। আর এসময় লোকেরা অরামিয়াকে দেখলেই বিদ্রুপ করতে শুরু করল, টিটকারী দিতে লাগল। অনেকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে লোকদেরকে প্ররোচিত করত। বলত, ‘তোমরা অভিযোগ কর এবং আমরাও ওর নামে অভিযোগ করব।’ নিজ জাতির লোকদের এহেন ব্যাবহারে আহত হয়ে অরামিয়া মাঝে মাঝে ভাবতেন, তিনি আর খোদার সতর্কবাণী তাদের মাঝে প্রচার করবেন না। কিন্তু খোদায়ী বাণী তার অন্তরে অগ্নির ন্যায় দাহ করত, তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়তেন। সুতরাং আবারও তিনি লোকসমক্ষে আসতেন খোদায়ী সতর্কবাণী নিয়ে। বিনীতভাবে লোকদেরকে সৎ পথে আহবান করতেন। এ সম্পর্কে অরামিয়ার কিতাব থেকে আমরা পাই-

আমি সমস্ত দিন উপহাসের পাত্র হয়েছি, 
সকলেই আমাকে ঠাট্টা করে।
যতবার আমি কথা বলি, ততবার চিৎকার করে উঠি;
দৌরাত্ম্য ও লুটপাট বলে চিৎকার করি; 
খোদার বাণী প্রযুক্ত সমস্তদিন আমাকে টিটকারী দেয়া ও বিদ্রুপ করা হয়।
যদি বলি তাঁর বিষয়ে আর উল্লেখ করব না,
তাঁর নামে আর কিছু বলব না,
তবে আমার হৃদয়ে যেন দাহকারী অগ্নি অস্থি মধ্যে রূদ্ধ হয়;
তা সহ্য করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি, আর তিষ্ঠিতে পারিনে।
কারণ আমি অনেকের পরীবাদ শুনছি, 
চারিদিকে ভয় রয়েছে।
‘তোমরা অভিযোগ কর এবং আমরাও ওর নামে অভিযোগ করব,’
আমার সমস্ত মিত্র আমার ঙ্খলনের অপেক্ষা করে, এ কথা বলে,
‘কি জানি সে প্ররোচিত হবে,
আর আমরা প্রবল হয়ে তাকে পরাভব করে প্রতিরোধ দেব।’------------(অরামিয়া ২০:৭-১০)

এসময় অরামিয়া ইহদারাজ সিদ্দিকীয়কে এ কথা জানালেন- ‘খোদা বলেছেন-

‘দেখ, ফেরাউনের যে সকল সৈন্য তোমাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছে, 
তারা মিসরে নিজ দেশে ফিরে যাবে। 
আর কলদীয়রা পুনর্বার আসবে, 
এই নগরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং এ হস্তগত করে আগুণে পুড়িয়ে দেবে।’

‘তোমরা এ কথা ভেবে নিজের মনকে প্রবঞ্চণা কোরও না যে, 
কলদীয়রা অবশ্যই আমাদের নিকট থেকে চলে যাবে; 
কেননা তারা চলে যাবে না।
 বাস্তবিক যে কলদীয়রা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করছে, 
তোমরা তাদের সমস্ত সৈন্যকে আঘাত করলেও 
যদ্যপি তাদের মধ্যে কতকগুলি তলোয়ার বিদ্ধ লোকমাত্র অবশিষ্ট থাকে, 
তথাপি তারাই নিজ নিজ তাম্বুতে উঠে এই নগর আগুণে পুড়িয়ে দেবে।’------------(অরামিয়া ৩৭:৭-১০)

বাবিলীয়দের অবরোধকালে ইস্রায়েলীরা কিছুটা হলেও খোদার পথে মন ফিরিয়েছিল, কিন্তু যখন তারা অবরোধ তুলে নিল, তখনি তারা পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেল- খোদার সঙ্গে প্রতারণা করল। মুক্ত ক্রীতদাস-দাসীদের মালিকেরা তাদের উপর মালিকানা দাবী করল। আর তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ দাসদাসীদেরকে ফিরিয়ে এনে নিজেদের বশীভূত করে নিল। এতে অরামিয়া ব্যাথিত হলেন, তিনি ইস্রায়েলীদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘খোদা বলেছেন-

‘মিসর হতে, সেই দাসগৃহ হতে, 
তোমাদের পিতৃপুরুষদেরকে বের করে আনার পর 
আমিই তাদের সাথে এই নিয়ম স্থির করেছিলাম- 
‘তোমার কোন ইব্রিয় ভ্রাতা, যদি তোমার কাছে বিক্রিত হয়, 
তবে পর পর ছয় বৎসর সে তোমার দাসত্ব করবে 
এবং সপ্তম বৎসরে সে মুক্ত হবে 
এবং কোনরূপ বিনিময় ছাড়াই তুমি তাকে চলে যেতে দেবে।’ 
কিন্তু তোমাদের পিতৃপুরুষেরা আমার বাক্যে অবধান করল না, 
কর্ণপাত করল না।

অল্পকিছু দিন হল তোমরা মন ফিরিয়ে 
খোদার চোখে যা ন্যায্য তাই করেছিলে- 
তোমরা তোমাদের ইব্রীয় দাস ভাইদের মুক্তি দিয়েছিলে 
এবং যে গৃহের উপর আমার নাম কীর্ত্তিত হয়েছে, তার মধ্যে, 
আমার সম্মুখে, আমার দেয়া শরীয়ত মানবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলে।

কিন্তু এখন তোমরা ঘুরে গেছ 
এবং আমাকে অসম্মানিত ও আমার নাম অপবিত্র করেছ। 
যে সমস্ত দাস-দাসীদেরকে মুক্ত করে বিদায় দিয়েছিলে, 
তোমরা আবার তাদেরকে ফিরিয়ে এনে দাস-দাসী বানিয়েছ।

তোমরা নিজ নিজ ভ্রাতার ও প্রতিবেশীর মুক্তি ঘোষণা করতে 
আমার বাক্যে অবধান করনি;
অতএব, দেখ, আমি তোমাদের বিরুদ্ধে তলোয়ার, 
মহামারী ও দুর্ভিক্ষের মুক্তি ঘোষণা করছি, 
আমি তোমাদেরকে পৃথিবীর সমস্ত রাজ্যে ভেসে বেড়াবার জন্যে সমর্পণ করব। 
যে লোকেরা আমার নিয়ম লঙ্ঘন করেছে, 
যারা আমার সাক্ষাতে নিয়ম করে তা পালন করেনি, 
গো-বৎসকে দু‘খন্ড করে তন্মধ্যে দিয়ে গমণ করেছে,
আমি তাদেরকে সমর্পণ করব; 

ইহুদার অধ্যক্ষগণ, জেরুজালেমের অধ্যক্ষগণ, নপুংশকগণ, 
ঈমামগণ ও দেশের সমস্ত প্রজা, 
যারা গো-বৎসের দুই খন্ডের মধ্য দিয়ে গমন করেছে, 
তাদেরকে আমি তাদের শত্রুগণের হস্তে 
ও প্রাণনাশে সচেষ্ট লোকদের হস্তে, সমর্পণ করব; 
তাতে তাদের শব আকাশের পক্ষিগণের ও ভূমির পশুদের খাদ্য হবে।
আর ইহুদারাজ সিদ্দিকীয়কে ও তার অধ্যক্ষগণকে আমি তাদের শত্র“গণের হস্তে 
ও প্রাণনাশে সচেষ্ট লোকদের হস্তে, 
হ্যাঁ, বাবিলরাজের যে সৈন্যগণ তোমাদের কাছ থেকে চলে গিয়েছে, 
তাদের হস্তে সমর্পণ করব।

দেখ, আমি আজ্ঞা দিয়ে তাদেরকে এই নগরে ফিরিয়ে আনব;
আর তারা এই নগরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এ হস্তগত করবে, 
ও আগুনে পুড়িয়ে দেবে;
আর আমি ইহুদার সমস্ত নগরকে নিবাসীবিহীন ধ্বংসস্থান করব।’ ------------(অরামিয়া ৩৪:১৪-২২)

এসময় অরামিয়া জেরুজালেম হতে বিন্যামীন এলাকায়, অনাথোতে তার বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। কেননা তার নিকট এই বাণী প্রকাশিত হয়েছিল-‘তোমার পিতৃব্য পুত্র হনমেলের অনাথোতে যে ক্ষেত আছে, তা তুমি নিজের জন্যে ক্রয় কর।’
অরামিয়া যখন বিন্যামীন ফটকে পৌঁছিলেন, তখন প্রাসাদরক্ষীদের সেনাপতি হনানিয়ের পৌত্র, অরিয় ইবনে শেলিমিয় তাকে আটক করল এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলল, ‘তুমি বাবিলীয়দের পক্ষে যাচ্ছ।’
অরামিয়া এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বললেন, ‘এটা মিথ্যে কথা, আমি বাবিলীয়দের পক্ষে যাচ্ছিনে।’

কিন্তু অরিয় তার কথায় কর্ণপাত না করে তাকে রাজকর্মচারীদের কাছে নিয়ে গেল। সবশুনে রাজ কর্মচারীরা অরিয়ের কথায় বিশ্বাস স্থাপন করল এবং অরামিয়ার উপর রাগান্বিত হয়ে তাকে শারিরিকভাবে লাঞ্ছিত করল এবং লেখক যোনাথনের বাড়ীতে তাকে বন্দী করে রাখল। যোনাথনের এই বাড়ীটিকে ইতিপূর্বে জেলখানায় রূপান্তরিত করা হয়েছিল। এই জেলখানার মাটির নীচের একটা কক্ষে অরামিয়াকে রাখা হল। 

কিছুদিন পর হনমেল রক্ষীদের প্রাঙ্গণে এসে অরামিয়ার সঙ্গে দেখা করে বলল, ‘বিন্যামিন প্রদেশস্থ অনাথোতে আমার যে ক্ষেত আছে, তা তুমি ক্রয় কর; কেননা দায়াধিকার তোমার এবং মুক্ত করার অধিকারও তোমার; তুমি নিজের জন্যে তা ক্রয় কর।’
তখন অরামিয়া হনমেলের নিকট থেকে তা ক্রয় করলেন। তিনি ক্রয়পত্রে স্বাক্ষর করলেন, মুদ্রাঙ্ক করলেন ও সাক্ষী রাখলেন। আর মূল্য বাবদ সপ্তদশ শেকেল রৌপ্য তৌল করে দিলেন। অত:পর তিনি বিধি ও নিয়ম সম্বলিত ক্রয়পত্রের দুই কেতা-মুদ্রাঙ্কিত ও খোলা পত্র রক্ষীদের প্রাঙ্গণে উপস্থিত সকলের সাক্ষাতে বারূক ইবনে নোরিয়ের হস্তে সমর্পণ করে তাকে তা একটি মাটির পাত্রে রাখতে বলে দিলেন। কেননা খোদা তাকে এই আদেশ দিয়েছিলেন-

‘আর তুমি মুদ্রাঙ্কিত ও খোলা ক্রয়পত্র দু‘টি নিয়ে একটি মৃত্তিকা পাত্রে রাখ,
 যেন অনেক দিন থাকে।
 কেননা, বাটীর, ক্ষেতের ও দ্রাক্ষাক্ষেতের ক্রয়-বিক্রয় এদেশে আবার চলবে।’-----------(অরামিয়া ৩২:১৫)

বারূককে ক্রয়পত্র দেবার পর অরামিয়া খোদার কাছে এই প্রার্থনা করলেন, ‘-হে খোদা, তুমি চিহ্ন, অদ্ভুত লক্ষণ, বলবান হস্ত ও ভয়ঙ্কর মহাকর্ম দ্বারা তোমার প্রজা ইস্রায়েলকে মিসর হতে বের করে এনেছিলে। আর তুমি তাদের পিতৃপুরুষদের কাছে এই শপথ করেছিলে যে দুগ্ধমধু প্রবাহী এক দেশ তাদেরকে দেবে, আর এই দেশ তাদেরকে দিয়েছিলে এবং তারা তা অধিকার করেছিল; কিন্তু তারা তোমার রবে অবধান করেনি, তোমার ব্যবস্থা পথেও চলেনি; তুমি যা পালন করতে আদেশ দিয়েছিলে, তার কিছুই পালন করেনি, এইজন্যে তুমি তাদের উপর এইসব অমঙ্গল ঘটিয়েছ।
ঐ সকল জাঙ্গাল দেখ, ওরা জয় করণার্থে নগরের সন্নিকটে এসেছে এবং তলোয়ার, দুর্ভিক্ষ ও মহামারীতে আক্রান্ত এই নগর কলদীয়দের হস্তে ধ্বংসিত হবার অপেক্ষায়; তথাপি হে খোদা, তুমি আমাকে বলেছ-
‘রৌপ্য দিয়ে ক্ষেত ক্রয় কর 
ও সাক্ষী রাখ, কিন্তু এই নগর কলদীয়দের হস্তে দেয়া হল।’ -------------(অরামিয়া ৩২:২৪-২৫)

এদিকে যুদ্ধে মিসরীয়রা পরাজিত হল এবং তারা স্বদেশে ফিরে গেল। অন্যদিকে বাবিলীয়রা ফিরে এসে পুনঃরায় জেরুজালেম অবরোধ করল। বাস্তবিক এসময়ে ইহুদার নগরসমূহের মধ্যে অসেকা ও লাখীশ- প্রাচীর বেষ্টিত এই দু‘টি মাত্র নগরী অবশিষ্ট ছিল। সুতরাং নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছিল এবং ইহুদারাজ সিদ্দিকীয় তার বাইরে ছিল না। সুতরাং সে কর্মচারী পাঠিয়ে গোপনে অরামিয়াকে প্রাসাদে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করল, ‘খোদার কোন বাণী আছে কি?’
অরামিয়া বললেন, ‘হ্যাঁ, আছে। আপনাকে বাবিলরাজের হাতে তুলে দেয়া হবে।’ একটু বিরতি নিয়ে তিনি আরও বললেন, ‘খোদা বলেছেন-

‘দেখ, আমি বাবিলরাজের হস্তে এই নগর সমর্পণ করব, 
আর সে এ আগুনে পুড়িয়ে দেবে। 
তুমিও তার হাত থেকে রক্ষা পাবে না, 
তুমি নিশ্চয়ই ধরা পড়বে ও তার হাতে সমর্পিত হবে 
এবং তোমার চোখ বাবিলরাজকে দর্শণ করবে 
ও সে মুখোমুখি হয়ে তোমার সঙ্গে কথা বলবে, 
আর তুমি বাবিলে গমন করবে।

তথাপি হে ইহুদারাজ সিদ্দিকীয়! 
তলোয়ারের আঘাতে তোমার মৃত্যু হবে না; 
তুমি শান্তিতে মরবে এবং তোমার পিতৃকূলদের জন্যে, 
তোমার পূর্ববর্তী রাজাদের জন্যে যেমন শেষকৃত্য প্রথা ছিল, 
তেমনি লোকে তোমার জন্যেও করবে 
এবং ‘হায় প্রভু’ বলে তারা তোমার জন্যে বিলাপ ও শোক করবে।’------------ (অরামিয়া ৩৪:২-৫)

অরামিয়ার কথা শুনে সিদ্দিকীয় মনমরা হয়ে পড়ল। এ দেখে অরামিয়া তাকে বললেন, ‘হে মহারাজ! যারা আপনার কাছে এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, বাবিলরাজ আপনাকে বা এই দেশকে আক্রমণ করবে না, আপনার সেই নবীরা কোথায়?’

নবী অরামিয়াকে যোনাথনের বাড়ীর মাটির নীচে অন্ধকার জেলখানায় রাখা হয়েছে জানতে পেরে সিদ্দিকীয় তাকে প্রাসাদরক্ষীদের ব্যারাকের উঠোনে রাখার আদেশ দিল এবং শহরের সমস্ত রুটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন রুটিওয়ালাদের রাস্তা থেকে তাকে একখানা করে রুটি দেবার নির্দেশও দিল। 
অরামিয়া পাহারাদারদের উঠোনে আটক রইলেন।

অবরুদ্ধ অধিবাসীরা এক বৎসরেরও অধিক শত্রুদের ঠেকিয়ে রেখেছিল। এই অবরোধকালে আটক অরামিয়া বারবার ইস্রায়েলীদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন, ‘যে কেউ এই শহরে থাকবে সে হয় যুদ্ধে, না হয় দুর্ভিক্ষে কিংবা মহামারীতে মারা যাবে, কিন্তু যে কেউ বাবিলীয়দের কাছে যাবে, সে মারা যাবে না। সে তার প্রাণ কোনমতে বাঁচাতে পারবে। এই শহর নিশ্চয়ই বাবিলরাজের সৈন্যদলের হাতে দেয়া হবে- তারা এটা অধিকার করবে।’

‘খোদা এই রাজ্য বাবিলরাজের হস্তে সমর্পণ করবেন এবং সে এ হস্তগত করবে; আর ইহুদারাজ সিদ্দিকীয় কলদীয়দের হস্ত হতে পার পাবে না, কিন্তু বাবিলরাজের হস্তে নিশ্চয়ই সমর্পিত হবে এবং মুখোমুখি হয়ে তার সাথে কথা বলবে ও স্বচক্ষে তার চক্ষু দেখবে; আর সে সিদ্দিকীয়কে বাবিলে নিয়ে যাবে এবং খোদা যে পর্যন্ত না তার তত্ত্বাবধান করবেন, সেই পর্যন্ত সে সেই স্থানে থাকবে; তোমরা কলদীয়দের সাথে সংগ্রাম করেও কৃতকার্য্য হবে না।’

শফটিয় ইবনে মত্তন, যিহখল ইবনে শেলিমিয়, গদলিয় ইবনে পশহুর ও পশহুর ইবনে  মল্কিয় প্রভৃতি মান্য ব্যক্তিবর্গ শাসনকর্তা একত্রিত হয়ে সিদ্দিকীয়কে বলল, ‘এই অরামিয়া লোকটিকে হত্যা করা উচিৎ। যেসব সৈন্যেরা ও লোকেরা এই শহরে রয়ে গেছে সে তাদেরকে হতাশ করে দিচ্ছে। সে এই লোকদের মঙ্গল না চেয়ে অমঙ্গল চাইছে।’
সবশুনে সিদ্দিকীয় বলল, ‘সে তো আপনাদের হাতেই রয়েছে- আর আমি তো আপনাদের মতামতকে উপেক্ষা করতে পারি না।’

লোকেরা নবী অরামিয়াকে হত্যার এই যে ষড়যন্ত্র করল তা তিনি ফেরেস্তা জিব্রাইল মারফত জানতে পারলেন। তার কিতাবে এসম্পর্কে আছে-

‘তারা তোমার প্রাণের অন্বেষণ করে, বলে,
‘তুমি খোদার নামে ভাববাণী বোলও না, বললে আমাদের হাতে মারা পড়বে’;------------(অরামিয়া ১১:২১)

‘তখন তারা বলল, 
‘চল, আমরা অরামিয়ার বিরুদ্ধে পরামর্শ করি, 
কেননা ঈমামদের নিকট হতে ব্যবস্থা,
জ্ঞানবানের নিকট হতে মন্ত্রণা ও নবীদের নিকট হতে বাণী লুপ্ত হবে না;
চল, আমরা জিহবা দ্বারা ওকে প্রহার করি, তার কোন কথায় মনোযোগ না করি।’------------(অরামিয়া ১৮:১৮)

‘সেই সময়ে তুমি (খোদা) আমাকে তাদের ক্রিয়াকান্ড জানালে।
কিন্তু আমি বধার্থে নীত গৃহপালিত মেষপালকের ন্যায় ছিলাম; জানতাম না যে,
তারা আমার বিরুদ্ধে কূ-মন্ত্রণা করেছে, বলেছে, ‘এসো, আমরা ফলশুদ্ধ বৃক্ষটি নষ্ট করি,
জীবিত লোকদের দেশ হতে ওকে ছেদন করে ফেলি,
যেন ওর নাম আর স্মরণে না থাকে।’------------(অরামিয়া ১১:১৮-১৯)

নিজের বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরে নবী অরামিয়া যারপর নাই দু:খিত হলেন। এই জাতি, যাদেরকে সৎ ও সরল পথ প্রদর্শণের জন্যে তিনি নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তারা কি না তার বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে! এই অকৃতজ্ঞ নিষ্ঠুর জাতির প্রতি তিনি ভীষণ ক্ষুব্ধ হলেন। তিনি তাদের বিরুদ্ধে খোদার কাছে অভিযোগ দায়ের করলেন এবং তাদেরকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে দাবী জানালেন। তার কিতাব থেকে এ সম্পর্কে আমরা জানতে পারি-
‘হে খোদা, 
আমার প্রতি মনোযোগ কর, যারা আমার সাথে বিবাদ করে, তাদের কথা শোন।
উপকারের পরিশোধে কি অপকার করা হবে?
তারা তো আমার প্রাণনাশের জন্যে কবর খনন করেছে।
মনে করে দেখ, 
তাদের থেকে তোমার ক্রোধ ফেরাবার চেষ্টায় 
আমি তাদের পক্ষে হিতবাক্য বলার জন্যে 
তোমার সম্মুখে দাঁড়াতাম।

অতএব তুমি তাদের সন্তানগণকে দুর্ভিক্ষে সমর্পণ কর,
তাদেরকে তলোয়ারের হস্তগত কর, আর তাদের স্ত্রীগণ সন্তানহীনা ও বিধবা হোক,
তাদের পুরুষেরা মহামারীতে বিনষ্ট ও তাদের যুবকগণ যুদ্ধে তলোয়ারে নিহত হোক।
তুমি তাদের বিরুদ্ধে অকষ্মাৎ সৈন্যদল উপস্থিত কর,
তাদের গৃহ হতে ক্রন্দনের শব্দ শোনা যাক,
কেননা তারা আমাকে ধরার জন্যে গর্ত্ত খুঁড়েছে,
ও আমার পায়ের জন্যে গোপনে ফাঁদ পেতেছে।

আর হে খোদা, 
প্রাণনাশার্থে আমার বিরুদ্ধে তাদের কৃত সমস্ত মন্ত্রণা তুমি জ্ঞাত আছ;
তুমি তাদের অপরাধ ক্ষমা কোরও না,
তাদের পাপ তোমার সম্মুখ হতে মুছে ফেলও না;
তারা তোমার সম্মুখে নিপাতিত হোক;
তুমি আপন ক্রোধের সময়ে তাদের প্রতি কার্য্য কর।------------(অরামিয়া ১৮:১৯-২৩)

রাজকর্মচারীদের কেউই নিজ হাতে অরামিয়াকে হত্যা করে রক্তের দাগ হাতে লাগাতে চাইল না। কেননা নবী অরামিয়া সম্পর্কে তাদের মনে কিছুটা হলেও ভীতি ছিল। সুতরাং তারা তাকে রাজপুত্র মল্কিয়ের কূয়োতে ফেলে দেবার সিদ্ধান্ত নিল। তাদের ধারণা ছিল এতে এমনিতেই তিনি মারা যাবেন। 

মল্কিয়ের ঐ কূয়োটা ছিল প্রাসাদরক্ষীদের উঠোনের মধ্যে। তারা অরামিয়াকে দড়ি দিয়ে সেই কূয়োতে নামিয়ে দিয়েছিল। সেখানে কোন পানি ছিল না, ছিল কেবল পঁচা কাদা। আর নবী অরামিয়া সেই পচাঁ কাদাতে ডুবে যেতে লাগলেন। এসময় তিনি খোদার কাছে প্রার্থণা করলেন, যেন এই দুষ্টজাতি কোনভাবেই যেন তাঁর করুণালাভে সমর্থ না হয়।

প্রাসাদের এক কর্মচারী কূশীয় এবদ মেলক শুনতে পেল যে, নবী অরামিয়াকে কূয়োতে ফেলে দেয়া হয়েছে। সে তখনই দৌঁড়ে শাসনকর্তা সিদ্দিকীয় কাছে এল। সিদ্দিকীয় তখন বিন্যামীন ফটকে বসেছিল। এবদ মেলক তাকে বলল, ‘হে মহারাজ, এই লোকেরা নবী অরামিয়ার প্রতি যা করেছে তা অন্যায়। তারা তাকে কূয়োতে ফেলে দিয়েছে, তিনি সেখানে ক্ষিধেয় মারা যাবেন, কারণ শহরে আর রুটি নেই।’
সিদ্দিকীয়- ‘তুমি এখান থেকে ত্রিশজন লোক সঙ্গে নাও এবং তাকে তুলে আন, যেন তিনি মারা না যান।’

এবদ মেলক লোকদেরকে সঙ্গে নিয়ে রাজপ্রাসাদের ধন-ভান্ডারের নীচে একটা কক্ষে গেল এবং সেখান থেকে কিছু পুরাতন কাপড় নিয়ে সেগুলি দড়ি দিয়ে বেঁধে নবী অরামিয়ার কাছে কূয়োর মধ্যে নামিয়ে দিল এবং চীৎকার করে নবীকে বলল, ‘কাপড়গুলো আপনি আপনার বগলে দিন যাতে আপনি দড়িতে ব্যাথা না পান।’

 লোকেরা অরামিয়াকে দড়ি দিয়ে টেনে কূয়ো থেকে তুলে আনল। এসময় এবদ মেলকের সম্পর্কে এই বাণী অবতীর্ণ হল-

‘দেখ মঙ্গলের নিমিত্ত নয়, কিন্তু অমঙ্গলের নিমিত্ত 
আমি এই নগরের উপর আমার বাণীসকল সফল করব, 
সেইদিন তোমার (এবদ মেলক) সাক্ষাতে সেসমস্ত সফল হবে।
কিন্তু সেইদিন আমি তোমাকে উদ্ধার করব, 
এবং তুমি যে লোকদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়েছ, তাদের হস্তে তুমি সমর্পিত হবে না। 
আমি তোমাকে অবশ্য রক্ষা করব, তুমি তলোয়ারে পতিত হবে না,
কিন্তু লুটিত দ্রব্যের ন্যায় তোমার প্রাণ লাভ হবে;
কেননা তুমি আমাতে বিশ্বাস করেছ।’-------------(অরামিয়া৩৯:১৬-১৮)

অতঃপর অরামিয়াকে আবার সেই পাহারাদারদের উঠোনে রাখা হল।

ইহুদারাজ সিদ্দিকীয় নবী অরামিয়াকে খোদার গৃহের তৃতীয় প্রবেশস্থানে নিজের কাছে ডেকে নিল। তারপর তাকে বলল, ‘কোন কিছু গোপন না করে খোদা আমার সম্বন্ধে কি বলেছেন তা বল।’ 
অরামিয়া- ‘আমি যদি আপনাকে সত্য জানাই, তবে কি আপনি আমাকে হত্যা করবেন?’
সিদ্দিকীয়-‘খোদার কসম, আমি তোমাকে হত্যা করব না এবং তাদের হাতেও সমর্পণ করব না, যারা তোমার প্রাণনাশার্থে সচেষ্ট।’
অরামিয়া- ‘তবে শুনুন, খোদা আপনার সম্পর্কে বলেছেন-

‘তুমি যদি বের হয়ে বাবিলরাজের প্রধানবর্গের নিকটে যাও,
তবে তোমার প্রাণ বাঁচবে, বাঁচবে তোমার পরিবারও।’------------(অরামিয়া ৩৮:১৭)

সিদ্দিকীয়-‘যে সব ইহুদিরা কলদীয়দের পক্ষে গেছে, আমি তাদেরকে ভয় করি, কি জানি আমি তাদের হাতে সমর্পিত হব, আর তারা আমাকে অপমান করবে।’
অরামিয়া-‘আপনি সমর্পিত হবেন না। আপনি খোদার বাক্য মান্য করুন; তাতে আপনার মঙ্গল হবে- আপনার প্রাণ বাঁচবে। নুতবা ঘটবে এই- ‘খোদা বলেছেন- 

‘কিন্তু যদি তুমি না যাও, 
এই নগর কলদীয়দের হস্তে সমর্পিত হবে এবং তারা এ আগুণে পুড়িয়ে দেবে, 
আর তুমিও তাদের হস্ত হতে রেহাই পাবে না।’------------(অরামিয়া ৩৮:১৮)

ইহুদার রাজবাটীতে অবশিষ্ট সমস্ত স্ত্রীলোক বাবিলরাজের প্রধান বর্গের কাছে নীত হবে। 
আর সেই স্ত্রীলোকেরা বলবে, ‘তোমার মিত্রগণ তোমাকে ভুলিয়েছে, 
পরাভব করেছে, তোমার চরণ পঙ্ক মধ্যে ডুবে গেছে,
ওরা পিছিয়ে পড়েছে।’------------(অরামিয়া ৩৮:২২)

সিদ্দিকীয়- ‘আমি যে তোমার সাথে কথা বলেছি তা যেন কেউ জানতে না পারে।’

অরামিয়াকে আবার পাহারাদারদের উঠোনে ফিরিয়ে আনা হল এবং যতদিন না বাবিলীয়েরা জেরুজালেমে প্রবেশ করল, ততদিন তিনি সেখানেই রইলেন।

৫৮৮ খ্রী:পূ: বাবিলরাজ নেবু চাঁদ নেজ্জারের সপ্তদশ বৎসরে এবং ইহুদারাজ সিদ্দিকীয়ের রাজত্বের নবম বৎসরের দশম মাসের দশম দিনে বাবিলীয় সেনাবাহিনী জেরুজালেম অবরোধ করে এবং এক বৎসরেরও অধিক তা অবরুদ্ধ করে রাখে। অবশেষে সিদ্দিকীয়ের এগার বৎসরের ৪র্থ মাসের নবম দিনে নগর প্রাচীরের একাংশ ভেঙ্গে গেল। তাতে শত্রুরা সহজেই নগরের মধ্যে প্রবেশ করল। এসময় নগরবাসীরা প্রচন্ড ক্ষুধা-কষ্ট ভোগ করছিল। 

এদিকে প্রাচীরের একাংশ ভেঙ্গে গেলে সিদ্দিকীয় ও তার পরিবার সেনা পরিবেষ্টিত হয়ে রাতের বেলায় বাগানের মধ্যে দিয়ে অরাবার দিকে পালিয়ে গেল। কিন্তু পালিয়ে যেতে সমর্থ হলেও শেষ রক্ষা হল না। বাবিলীয় সেনাবাহিনীর একাংশ তাদের পশ্চাৎ ধাবন করল। আর এই ধাবমান বাবিলীয় বাহিনী যিরীহোর সমভূমিতে ধরা তাদের নাগালে পেল। অনাহারক্লিষ্ট ইস্রায়েলী বাহিনী সহজেই পরাজিত ও ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। ফলে সিদ্দিকীয় স্বপরিবারে ধৃত ও বন্দী হল। তাদেরকে এবং প্রধান ঈমাম সরায়, ঈমাম সফনিয় ও কিছু উচ্চ পদস্থ রাজকর্মচারী যাদেরকে জেরুজালেম নগরী থেকে বন্দী করা হয়েছিল, সকলকে একত্রিত করে হমাতের অরেন্টাস নদীর তীরবর্তী রিব্লাতে নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে বাবিলরাজ নেবু চাঁদ নেজ্জার তাদের দন্ডবিধান করলেন। 

বাবিলরাজের আদেশে সিদ্দিকীয়ের পুত্রগণসহ সত্তুরজনকে হত্যা করা হল। পিতা সিদ্দিকীয়ের চোখের সামনেই এই হত্যাকান্ড ঘটান হয়েছিল। সবশেষে সিদ্দিকীয়ের চোখ উৎপাটন করা হল, তারপর তাকে পিত্তলের শিকল দিয়ে বেঁধে বাবিলে নিয়ে চলল।
বাবিলে সিদ্দিকীয় আমৃত্যু কারাবন্দী ছিল।
বাবিলীয় সেনাবাহিনী নগরীতে প্রবেশের পর অধিবাসীদেরকে বন্দী করল। বাবিলরাজের সমস্ত প্রধানবর্গ নগরীর মধ্যম দ্বারে বসল। এরপর তারা সম্পত্তিহীন কিছু গরীব লোককে বন্দীদের থেকে পৃথক করল। এইসব লোকেরা বাবিলীয়দের পক্ষে ছিল এবং ইস্রায়েলীদের হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। এই লোকদের মধ্যে অত:পর আঙ্গুর ক্ষেত ও জমি বন্টন করা হল। এসময় তারা নবী অরামিয়ার বিষয়টা জানতে পারল। তখন তারা নেবু চাঁদ নেজ্জারকে এই সংবাদ প্রেরণ করল- ‘বন্দীদিগের মধ্যে এমন একজন ব্যক্তি রয়েছেন, যিনি আপনার এই বিজয় সম্পর্কে পূর্বেই ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন। তিনি নবী অরামিয়া। এ কারণে ইস্রায়েলীরা তাকে বন্দী করে রেখেছিল।’

অরামিয়ার বিষয়টি জানার পর তৎক্ষণাৎ বাবিলরাজ তার সেনাপতিকে এই আদেশ দিলেন, ‘তুমি তার দেখাশুনো করবে যেন তার কোন ক্ষতি না হয় এবং তিনি যা বলবেন তদ্রুপই করবে।’

সেনাপতি নবূষরদন যখন বাবিলরাজের আদেশ পেলেন, তৎক্ষণাৎ তিনি প্রধান নপুংশক নবূশসবন ও প্রধান গণক নের্গল শরেৎসর এবং বাবিল রাজের বেশকিছু প্রধানবর্গকে প্রেরণ করল নবী অরামিয়াকে আনার জন্যে। প্রেরিত এইসব লোকেরা সেনাপতির নির্দেশমত রক্ষীদের প্রাঙ্গন থেকে অরামিয়াকে মুক্ত করে নিল। তারপর দেশের অবশিষ্ট লোকদেরকে বন্দী করে বাবিলের পথে নিয়ে চলল, এইসব বন্দীদের মধ্যে নবী অরামিয়া একজন গণিত হলেন। 

বন্দী নারী পুরুষ সকলকে বাবিলের উদ্দেশ্যে উলঙ্গ অবস্থায় শিকলে বেঁধে পশুর পালের মত হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, নবী অরামিয়াকেও তাদের সাথে ঐ একইভাবে হাঁকিয়ে নিয়ে আসা হল রামাতে, সেনাপতি নবূষরদনের কাছে।

অরামিয়াকে শৃঙ্খলমুক্ত করে পরিধেয় কাপড়, আহার্য ও বিশ্রাম দেয় হল। তারপর তাকে  সেনাপতি নবূষরদনের সম্মুখে হাজির করা হল। সেনাপতি তাকে দেখে স্বসম্ভ্রমে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলল, ‘আপনার প্রভু, মহান খোদা, ইহুদার বিরুদ্ধে এই ধ্বংসের কথাই বলেছিলেন এবং তিনি যা করবেন বলেছিলেন তাই করেছেন।

এসব ঘটেছে কারণ আপনারা তাঁর বিরুদ্ধে পাপ করেছেন এবং তাঁর কথার অবাধ্য হয়েছেন। কিন্তু আমি আপনার হাতের বেড়ী ও শিকল থেকে আপনাকে মুক্ত করলাম। গোটা দেশটা আপনার চেখের সামনে পড়ে রয়েছে, আপনি যেখানে খুশী যেতে পারেন। যদি চান তবে আমার সঙ্গে আপনি বাবিলেও যেতে পারেন, ইস্রায়েলীরা আপনার মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু আমরা আপনাকে যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদা দেব।’

অরামিয়া- ‘আমার জাতির লোকজন অপমানিত ও লাঞ্ছিত অবস্থায় বাবিলে যাচ্ছে-এমতাবস্থায় আমি আমার মান-সম্মান দিয়ে কি করব?’
সেনাপতি-‘বাবিলরাজ নেবু চাঁদ নেজ্জার গদলিয় ইবনে অহিকামকে ইহুদার সব শহরগুলোর উপর শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছেন, আপনি তার কাছে আপনার লোকদের মধ্যেও ফিরে যেতে পারেন কিংবা আপনার খুশীমত অন্য কোথাও যেতে পারেন।’

অরামিয়া নিজ বাটীতে ফিরে যেত চাইলেন। তখন সেনাপতি নবূষরদন তাকে নবনিযুক্ত শাসনকর্তা গদলিয়ের কাছে সমর্পণ করল। আর তার জন্যে কিছু পাথেয় ও উপহারও দিল। অরামিয়া গদলিয়ের সঙ্গে মিস্পাতে তার লোকদের মাঝে ফিরে গেলেন। 

এরপর নেবু চাঁদ নেজ্জারের উনবিংশ বৎসরের ৫ম মাসের দশম দিনে সেনাপতি নবূষরদন জেরুজালেমে এল। তার নির্দেশে তার অনুগত বাহিনী খোদার গৃহ, রাজবাটি, নগরীর সকল গৃহ, বৃহৎ বৃহৎ অট্টালিকা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিল। এমন কি তারা নগর প্রাচীরও গুড়িয়ে দিল। এভাবে জেরুজালেমকে তারা একেবারে ধ্বংস করে দিল। যেন এই শহর কোনভাবেই আর বাসযোগ্য না হয়, কেননা নগর প্রাচীর এবং শহরটির অবস্থানের কারণে এটি জয় করতে তাদের অনেক সেনার প্রাণই শুধু নয়, এক বৎসরেরও অধিক সময়, শ্রম ও মেধা ব্যয় করতে হয়েছে।  
এভাবে এই পবিত্র শহর পরবর্তী এক শতাব্দীরও অধিক পরিত্যক্ত, জনবসতিহীন অবস্থায় পড়ে রইল।

এই ধ্বংস সংক্রান্ত কোরআনের আয়াতসমূহ- আমি বনি ইস্রায়েলকে কিতাবে পরিস্কার বলে দিয়েছি যে, তোমরা পৃথিবীর বুকে দু‘বার অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং অত্যন্ত বড় ধরণের অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে। অতঃপর যখন প্রতিশ্রুত সেই প্রথম সময়টি এল, তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করলাম আমার কঠোর যোদ্ধা বান্দাদেরকে। অতঃপর তারা প্রতিটি জনপদের আনাচে কানাচে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল। এই ওয়াদা পূর্ণ হওয়ারই ছিল।(১৭:৪-৫)

৫৮৭-৮৬ খ্রীঃপূঃ ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞ শেষে অবশিষ্টাংশের শ্রেষ্ঠ লোকদের বন্দী করে বাবিল নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এটাই ছিল ইহুদার নির্বাসিত তৃতীয় ও শেষ দল। এখন ইহুদার কেবলমাত্র একদল দরিদ্র নিরুৎসাহী লোক অবশিষ্ট রইল। তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্যে নেবু চাঁদ নেজ্জার গদলিয় নামের এক ব্যক্তিকে নিযুক্ত করেছিলেন। তার প্রধান কার্যালয় ছিল জেরুজালেম থেকে কয়েক মাইল উত্তরে ছোট শহর মিস্পায়। অরামিয়া এসময় ইহুদাতেই ছিলেন। এখানে থেকেই তিনি নির্বাসিতদের আশা এবং উদ্দীপনা যুগিয়ে ছিলেন। 

এসময় প্যালেস্টীয়, আম্মানীয়, মোয়াবীয় এবং ইদোমীয় প্রভৃতি প্রতিবেশী জাতিসমূহ অবশিষ্টদের দুর্বল অবস্থার সুযোগ নিয়ে যতটা সম্ভব তাদের অধিকৃত ভূমি দখল করে নিল। ইদোমীয়রা পশ্চিমে আরব এবং ইহুদিয়া অভিমুখে অগ্রসর হয়েছিল। কয়েক শতক পরে এরা ম্যাক্কাবীয় রাজ্যের সঙ্গে সম্মিলিত হয় এবং তাদের মধ্যে অনেকে ইহুদিদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। যে সমস্ত ইহুদিরা মিসরে গিয়েছিল তাদের জীবনে মোটামুটি স্বচ্ছলতা ছিল। তারা নতুন আবাসে তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানগুলি স্থানান্তর করেছিল। তারা মিসরের এলফন্টাইনে একটি জেরুজালেমের অনুরূপ উপাসনালয় স্থাপন করেছিল। তাদের মধ্যে যারা নীল নদের কাছে বসতি স্থাপন করেছিল তারা খোদাকে পরিত্যাগ করে প্রতিমাপূজক হয়েছিল। পরবর্তীতে ইহুদিরা যখন বাবিল থেকে ফিরে আসে, তখনও এরা মিসরেই বসবাস করছিল এবং তাদের দ্বারাই অনেক পরে তাদের শাস্ত্র অনুদিত হয়, যা সেপ্টুয়াজিন্ট নামে পরিচিত।

নেবু চাঁদ নেজ্জার কর্তৃক ইহুদিদের বাবিলে নির্বাসনে নেয়া হচ্ছে।
নেবু চাঁদ নেজ্জার কর্তৃক ইহুদিদের বাবিলে নির্বাসন, বিভিন্ন সময়ে তিনবার সংঘটিত হয় (৬০৫, ৫৯৭, ৫৮৭-৮৬ খ্রীঃপূঃ)। নির্বাসিতদের এই নতুন আবাসস্থল ছিল প্যালেস্টাইনের তুলনায় বিরাট ধনী এবং সমৃদ্ধশালী। তারা এখানে অতি উন্নত সংস্কৃতি, বিরাট ব্যবসা এবং জাগতিক জাঁকজমকের ছোঁয়া পায়। প্রধান নগরী মহা ধনশালী, অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ব্যাবিলন ছিল গোটা মেসোপটেমিয়া এবং দূরবর্তী পার্বত্য দেশসমূহ, সাথে সাথে সিরিয়া এবং প্যালেস্টাইন পর্যন্ত বিস্তৃত সুবিশাল একটি সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থল।

ইহুদি বন্দীদের কবার নদী বা খালের তীরে একটি উর্বর সমভূমিতে রাখা হয়েছিল যা, বাবিলকে নিপ্পুরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছিল। যদিও তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল, তবুও আপাতঃ দৃষ্টিতে তারা এই নতুন আবাস ভূমিতে বিরাট স্বাধীনতা ভোগ করছিল। তারা মিসরে তাদের পিতৃপুরুষদের মত এদেশে ক্রীতদাস হিসেবে নির্যাতিত হয়নি এবং সাধ্যের অতিরিক্ত কাজ করার জন্যে তাদের উপর শক্তি প্রয়োগ করাও হয়নি। তারা ছিল উপনিবেশিক হিসেবে বসবাসকারী। বাবিল সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন কাজকর্ম থেকে সুবিধাজনক কাজ বেঁছে নেয়ার স্বাধীনতা তাদের ছিল এবং এভাবে তারা বাবিল সরকারের অধীনস্থ ছিল। ধর্মীয় বিষয়গুলি সম্পর্কেও তাদের যতদূর সম্ভব স্বাধীনতা প্রদান করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ খোদার উপর নতুনভাবে বাধ্যতা প্রকাশের মধ্যে দিয়ে শক্তিপ্রাপ্ত হয়েছিল এবং এমনকি তারা এই বিদেশ ভূমিতে নিয়মিতভাবে তাদের শাস্ত্র পাঠ করত এবং খোদার কাছে প্রার্থনা উৎসর্গ করত। ইজেকেল নবীকে তাদের মধ্যে কাজ করার এবং জাতির নিয়তির আশাকে বাঁচিয়ে রাখার বিষয়ে অনুমোদন দান করা হয়েছিল। তাদের বন্দীদশার মর্যাদাহীনতা বা অপমান হল এই যে, তারা তাদের স্বাধীনতা হারিয়েছিল, তাদের সরকার ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, তারা দেশবিহীন এক জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছিল। তাই পরাধীন হিসেবে তারা কখনও পরিপূর্ণ সুখী ছিল না।

যে সব ইহুদিরা বাবিলের কাছে কবার খালের ধারে এক রকম বন্দী শিবিরে বাস করছিল তাদের মধ্যে নবী ইজেকেল ইবনে বুষি ঐশী বাণী প্রচার করেন। তিনি লোকদেরকে শেষ বিচারের বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন, বলেছিলেন, ‘প্রতিবেশী রাজ্য ও লোকদেরকে খোদা তাদের প্রতিমা পূজা ও নবীদের হত্যা ও তাদের প্রতি নিষ্ঠুর ব্যাবহারের জন্যে শাস্তি দেবেন। 
--বন্দী দশা থেকে ফিরিয়ে এনে ইস্রায়েল ও ইহুদাকে অর্থাৎ গোটা জাতিকে খোদা আবার একত্রিত করবেন। লোকেরা পাপের জন্যে অনুতাপ করার পর একদিন মসীহ তার লোকদের কাছে আসবেন এবং তাদের শেষ শত্রুকে ধ্বংস করবেন। এবাদতখানা আবার তৈরী করা হবে এবং খোদার মহিমা সেখানে ফিরে আসবে।’
এদিকে ইহুদার সৈন্যদলের যে সব সেনাপতি ও তার লোকেরা খোলা মাঠে ছিল যখন তারা শুনল বাবিলরাজ গদলিয়কে দেশের শাসনকর্তা নিয়োগ করেছেন অবশিষ্ট লোকদের উপর, তখন তারা মিস্পাতে তার কাছে এল। গদলিয় তাদেরকে বলল, ‘তোমরা ভয় পেও না। দেশে বাস কর ও বাবিলরাজের অধীন হও। এতে তোমাদের ভাল হবে। আমি নিজে মিস্পাতে থাকব এবং যে সব বাবিলীয় কর্মচারীরা আমার কাছে আসবে, তাদের কাছে আমি তোমাদের পক্ষ হয়ে কথা বলব। তাতে তোমরা যে সব গ্রামের ও শহরের দখল নেবে সেখানে বাস করতে পারবে।’ 

মোয়াব, আম্মান, ইদোম ও অন্যান্য দেশের সব ইহুদিরা যখন শুনল যে, বাবিলরাজ ইহুদাতে কিছু লোককে ফেলে রেখে গেছে এবং গদলিয়কে তাদের উপর শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছেন, তখন তারা যে সব দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল সেখান থেকে সবাই মিস্পাতে গদলিয়ের কাছে ফিরে এল।
একদিন কারেহের পুত্র যোহানন ও খোলা মাঠে থাকা সৈন্যদের সব সেনাপতিরা মিস্পাতে এসে গদলিয়কে বলল, ‘আপনি কি জানেন যে, আম্মানীয়দের রাজা বালীস আপনাকে হত্যা করার জন্যে নথনিয়ের পুত্র ইসমাইলকে পাঠিয়েছেন?’
সে নীচুস্বরে বলল, ‘আপনি অনুমতি দিলে আমি গিয়ে ইসমাইলকে হত্যা করব, কেউ জানতে পারবে না। সে কেন আপনাকে হত্যা করবে? তাতে তো যে সব ইহুদিরা আপনার চারপাশে সমবেত হয়েছে তারা ছড়িয়ে পড়বে এবং ইহুদার বাকী লোকেরা ধ্বংস হবে।’
গদলিয় - ‘ঐ রকম কাজ কোরও না। তুমি ইসমাইলের বিষয়ে যা বলেছ তা সর্বৈব মিথ্যে।’

ইসমাইল সপ্তম মাসে দশজন লোক সঙ্গে নিয়ে মিস্পাতে গদলিয়ের কাছে এল। ইসমাঈল রাজবংশীয় ছিল। তাই সে শাসনকর্তা গদলিয়ের সঙ্গে একত্রে আহারের জন্যে আহবায়িত হয়েছিল। অত:পর তারা যখন একসঙ্গে আহাররত ছিল, তখন সে গদলিয়কে তলোয়ারের আঘাতে হত্যা করল। এরপর সে ও তার সঙ্গীগণ একে একে গদলিয়ের ইহুদি কর্মচারীদের ও বাবিলীয় সব সৈন্যদের হত্যা করল।

এই হত্যাকান্ড সম্পর্কে কেউই কিছু জানতে পারল না। কিন্তু এসময় ঈসমাইল অবগত হল যে, শিখিম, শীলো ও শমরিয়া হতে ৮০জন পুরুষ খোদার গৃহে উৎসর্গ করতে নৈবদ্য ও ধূপ  সঙ্গে নিয়ে আসছে। তখন সে তাদের সঙ্গে মিলিত হতে মিস্পা হতে নির্গত হল। অত:পর তাদের সাথে সাক্ষাতের পর সে বলল, ‘গদলিয় ইবনে অহিকামের কাছে চল।’
যখন তারা নগরের মধ্যে এল, তখন গদলিয় ও তার সঙ্গীগণ তাদেরকে হত্যা করতে শুরু করল। কিন্তু দশজনকে তারা রেহাই দিল। কেননা তাদেরকে হত্যা করতে গেলে তারা বলল, ‘আমাদের হত্যা করবেন না, কেননা আমাদের কাছে গম, যব, তৈল ও মধুর গুপ্ত ভান্ডারের সন্ধান আছে।’

গদলিয় ও অন্যান্যদের মৃতদেহ যে কূপে ফেলে দেয়া হয়েছিল, সেই একই কূপে এখন এই সকল মৃতদেহও ফেলা হল। এই কূপটি ইহুদারাজ বাশা, ইস্রায়েলরাজ আসার ভয়ে খনন করেছিল, আর এখন তা ইসমাঈল শবে পরিপূর্ণ করল। 

সবশেষে গদলিয় রাজকুমারীগণ ও অন্যান্য অবশিষ্ট লোকদেরকে বন্দী করে আম্মানের উদ্দেশ্যে রওনা হল।

যোহানন ইবনে কারেহ ও তার সঙ্গের সেনাদলের সব সেনাপতিরা যখন ইসমাইলের এই হত্যাকান্ড সম্পর্কে শুনল, তখন তারা তাদের সব সেনাদের যুদ্ধের জন্যে একত্রিত করল। গিবিয়োনের বড় পুকুরের কাছে তারা তাদের নাগাল পেল। কিন্তু ইসমাইল তার সঙ্গের কয়েকজনকে নিয়ে আম্মানে পালিয়ে যেতে সমর্থ হল। সুতরাং যোহানন মিস্পার বাদবাকী লোকদের ফিরিয়ে নিয়ে এল। 
সকলকে নিয়ে যোহানন নবী অরামিয়ার কাছে এল। অতঃপর তাকে অনুরোধ করে বলল, ‘হে খোদার বান্দা! এই অবশিষ্ট লোকদের জন্যে আপনি খোদার কাছে প্রার্থনা করুন যাতে তিনি আমাদের বলে দেন- আমরা কোথায় যাব, আর কি করব? ভাল হোক বা মন্দ হোক, আমরা খোদার রবে অবধান করব।’

দশ দিন পর অরামিয়া যোহাননসহ সকল ইহুদিদেরকে এক জায়গায় সমবেত করে বললেন, ‘ইস্রায়েলের উপাস্য খোদা তোমাদেরকে বলেছেন- 

‘তোমরা যদি স্থির হয়ে এদেশে বাস কর, 
তবে আমি তোমাদেরকে গেঁথে তুলব, উপড়ে ফেলব না, 
রোপন করব, উম্মুলন করব না;
কেননা তোমাদের যে অমঙ্গল করেছি, সে বিষয়ে ক্ষান্ত হলাম। 
তোমরা যে বাবিলরাজের বিষয়ে ভীত হয়েছ, তা হতে ভীত হইও না; 
কেননা তোমাদের নিস্তার করতে ও তার হস্ত হতে তোমাদেরকে উদ্ধার করতে 
আমি তোমাদের সহবর্ত্তী। 
আর আমি তোমাদের প্রতি করুণা বর্ত্তাব, 
তাতে সে তোমাদের প্রতি করুণা করবে 
ও তোমাদের ভূমিতে তোমাদেরকে আবারও ফিরিয়ে আনবে।’ ----------(অরামিয়া ৪১:১০-১১)

কিন্তু লোকেরা বলল, ‘আমরা এ দেশে থাকব না, আমরা গিয়ে মিসরে বাস করব। সেখানে আমরা যুদ্ধও দেখব না, তূরীর আওয়াজও শুনব না, খাবারের অভাবে ক্ষিধেও বোধ করব না।’

লোকদের এই মনোভাব দেখে অরামিয়া বললেন- ‘খোদা আরও বলেছেন- 

‘তোমরা যদি মিসরে যাওয়াই ঠিক করে থাক 
এবং সেখানে গিয়ে বাস কর, 
তবে যে যুদ্ধকে তোমরা ভয় করছ তা সেখানেই তোমাদের ধরে ফেলবে 
এবং যে দুর্ভিক্ষের ভয় করছ তা তোমাদের পিছনে পিছনে মিসরে যাবে 
এবং সেখানেই তোমরা মারা পড়বে; 
যারা মিসরে যাবার জন্যে উন্মুখ হয়েছে, তাদের এই গতি হবে, 
তারা তলোয়ার, মহামারী ও দুর্ভিক্ষে মারা পড়বে।

যে বিপদ আমি তোমাদের উপর আনব তা থেকে একজনও
রেহাই পাবে না বা তা এড়িয়ে যেতে পারবে না। 
জেরুজালেম নিবাসীদের উপর যেমন আমার ক্রোধ ও কোপ ঢালা গেছে, 
তেমনি মিসরে তোমাদের উপরও আমার কোপ ঢালা যাবে, 
তোমরা অভিসম্পাৎ, বিষ্ময়, শাপ ও টিটকারীর পাত্র হবে; 
আর কখনও এই দেশ তোমরা দেখতে পাবে না।’------------(অরামিয়া ৪১:১৫-১৮)

এসময় অসরিয় ইবনে হোশরিয় ও যোহানন ইবনে কারেহ ও অন্যান্যরা অরামিয়াকে বলল, ‘তুমি মিথ্যে বলছ, ‘মিসরে প্রবাস করতে যেও না’, একথা বলতে খোদা নিশ্চয় তোমাকে পাঠাননি। বরং বারূক ইবনে নোরিয় আমাদের বিরুদ্ধে তোমাকে প্ররোচিত করেছে, আমাদেরকে কলদীয়দের হস্তে সমর্পণ করার জন্যেই তা করেছে, যেন তারা আমাদের হত্যা করে কিংবা বন্দী করে বাবিলে নিয়ে যায়।’ 

এসময় অরামিয়া বললেন, ‘বস্তুত: তোমরা নিজেদের জানের সঙ্গে প্রতারণা করেছ; কেননা তোমরা বলেছিলে, ‘খোদা যা যা বলবেন, তদানুসারে তুমি আমাদেরকে জানাবে, আমরা তা পালন করব।’ কিন্তু তোমরা খোদার রবে অবধান করলে না।’
লোকেরা ভয়ে ছিল ইসমাইল কর্তৃক বাবিলীয় সৈন্য ও বাবিলরাজ কর্তৃক নিযুক্ত শাসন কর্তাকে হত্যার জন্যে। তারা ভাবছিল শীঘ্রই বাবিলরাজ এর প্রতিশোধ নিতে ইহুদা আক্রমণ করবে আর তাতে তারা সকলেই নিহত হবে বা বন্দীরূপে বাবিলে নীত হবে। এ কারণে তারা নবীর কথা অমান্য করল এবং যোহাননের নেতৃত্বে মিসরের উদ্দেশ্যে রওনা হল। তাদের সঙ্গে নবী অরামিয়াকেও নিয়ে যাওয়া হল। এভাবে তারা মিসরে প্রবেশ করল এবং তফনহেষ পর্যন্ত গেল।

এই তফনহেষে অরামিয়া লোকদেরকে বললেন- ‘খোদা বলেন-

‘দেখ, আমি আদেশ প্রেরণ করে 
আমার দাস নেবু চাঁদ নেজ্জারকে নিয়ে আসব।
সে এসে মিসর আক্রমণ করবে এবং এই নগরের উপর তার সিংহাসন স্থাপিত হবে।
আর তার আঘাতে মৃত্যু যাদের জন্যে নির্ধারিত হয়ে আছে তাদের মৃত্যু হবে; 
আর যাদের ভাগ্যে বন্দীত্ব আছে তারা বন্দী হবে। 
মিসরের দেবদেবতার মন্দিরগুলোতে সে আগুন ধরিয়ে দেবে,
বস্তুত: সে দেবগণের কতকগুলিকে আগুনে পুড়িয়ে দেবে,
ও কতকগুলিকে সে বন্দী করে নিয়ে যাবে;
আর সে নিরাপদেই চলে যাবে।’------------(অরামিয়া ৪৩:১০-১২)

মিসরে এসে ইহুদি স্ত্রীলোকেরা সেখানকার দেবদেবতাদেরকে ধূপ জ্বালিয়ে পূজা করতে শুরু করে দিল। নবী অরামিয়া তাদেরকে নিবৃত্ত করতে চেষ্টা করলেন। তিনি তাদেরকে বললেন- ‘খোদা বলেন-

‘জেরুজালেমের উপরে ও ইহুদার সমুদয় নগরের উপরে 
আমি যে সমস্ত অমঙ্গল উপস্থিত করেছি, তা তোমরা দেখেছ; 
দেখ, আজ সেসকল উৎসন্ন স্থান হয়ে আছে, 
সেখানে কেউ বাস করে না; 
এর কারণ লোকদের দুষ্টতা, যা আমাকে অসন্তুষ্ট করণার্থে তারা করত; 
তাদের, তোমাদের ও তোমাদের পিতৃপুরুষদের অপরিচিত 
অন্য দেবগণের সেবা করণার্থে 
তারা তাদের উদ্দেশ্যে ধুপদাহ করতে গমন করত। 
তথাপি আমি আমার সমস্ত রসূলগণকে তোমাদের নিকট পাঠাতাম, 
প্রত্যুষে উঠে পাঠিয়ে বলতাম, 
‘আহ! তোমরা আমার ঘৃণিত এইসব জঘণ্য কার্য্য কোরও না।’ 
কিন্তু তারা অবধান করত না এবং নিজ নিজ দুষ্ক্রিয়া হতে ফেরার নিমিত্ত, 
অন্য দেবগণের উদ্দেশ্যে আর ধূপ জ্বালাবার নিমিত্ত, কর্ণপাত করত না। 
এই জন্যে আমার কোপ ও ক্রোধ বর্ষিত হল, 
ইহুদার নগরে নগরে ও জেরুজালেমের পথে পথে জ্বলে উঠল, 
তাতে সেসকল অদ্য যেমন রয়েছে, তেমনি উৎসন্ন ও ধ্বংসিত হয়েছে।------------(অরামিয়া ৪৪:২-৬)

অবএব তোমরা কেন নিজ নিজ জানের বিরুদ্ধে মহাপাপ করছ? 
এ কার্য্য তো তোমাদেরই- 
পুরুষ, স্ত্রী, বালক-বালিকা ও স্তন্যপায়ী শিশুদেরকে 
ইহুদার মধ্য হতে উচ্ছিন্ন করবে, 
কাউকেও অবশিষ্ট রাখবে না। 
তোমরা এই যে মিসর দেশে প্রবাস করতে এসেছ, 
এখানে অন্য দেবগণের উদ্দেশ্যে ধূপদাহ করে 
কেন নিজেদের হস্তকৃত কর্ম দ্বারা আমাকে অসন্তুষ্ট করছ? 
এতে তো তোমরা উচ্ছিন্ন হবে 
এবং পৃথিবীস্থ সমুদয় জাতির মধ্যে শাপের ও টিটকারীর পাত্র হবে। 
তোমাদের পিতৃপুরুষদের দুস্ক্রিয়া, ইহুদারাজগণের ও তাদের স্ত্রীগণের দুস্ক্রিয়া,
তোমাদের ও তোমাদের স্ত্রীগণের দুস্ক্রিয়া, 
যা ইহুদা ও জেরুজালেমের পথে পথে করা হত, 
সে সমস্ত কি ভুলে গেছ? 
এই লোকেরা অদ্য পর্যন্ত চূর্ণমনা হয়নি, ভয়ও করেনি 
এবং আমি আমার যে বিধিকলাপ 
তোমাদের ও তোমাদের পিতৃপুরুষরদের সম্মুখে রেখেছি 
এরা তদানুসারে আচরণ করেনি। --------------(অরামিয়া ৪৪:৭-১০)

এই জন্যে আমি তোমাদের অমঙ্গল করতে 
ও সমস্ত ইহুদাকে উচ্ছিন্ন করতে উন্মুখ হলাম। 
আর আমি ইহুদার অবশিষ্টাংশকে, 
যারা মিসর দেশে প্রবাস করতে যাবার জন্যে উন্মুখ হয়েছে, 
তাদেরকে ধরব; তারা সকলে বিনষ্ট হবে, মিসরেই পতিত হবে; 
তারা তলোয়ার ও দুর্ভিক্ষ দ্বারা বিনষ্ট হবে; 
ক্ষুদ্র ও মহান সকলে তলোয়ার ও দুর্ভিক্ষে মারা পড়বে, 
এবং অভিসম্পাৎ, বিষ্ময়, পাপ ও টিটকারীর পাত্র হবে। --------------(অরামিয়া ৪৪:১১-১২)

আমি যেমন তলোয়ার, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দ্বারা
জেরুজালেমকে দন্ড দিয়েছি,
তদ্রুপ মিসরবাসীদেরকেও দন্ড দেব; 
তাতে ইহুদার যে অবশিষ্ট লোক মিসরে প্রবাস করতে এসেছে, 
তাদের মধ্যে কেউ উর্ত্তীর্ণ কি রক্ষাপ্রাপ্ত হবে না; 
তারা ইহুদাতে ফিরে যেতে পারবে না, 
যদিও তারা সেখানে বাস করার জন্যে ফিরে যেতে বাঞ্ছা করছে; 
কিন্তু কতকগুলি পলাতক ভিন্ন আর কেউ ফিরে যাবে না।--------------(অরামিয়া ৪৪:১৩-১৪)

তখন যে সকল পুরুষ জ্ঞাত ছিল যে, তাদের স্ত্রীরা অন্য দেবগণের উদ্দেশ্যে ধূপ জ্বালিয়েছে, তারা এবং নিহটে দন্ডায়মান সমস্ত স্ত্রীলোক, মিসরের পথ্রোষ প্রদেশে বাসকারী সমস্ত লোক নবী অরামিয়াকে বলল, ‘আপনি খোদার নামে আমাদেরকে যে সব কথা বললেন তা আমরা শুনব না। কিন্তু আমরা যা বলেছি তা আমরা নিশ্চয় করব। আমরা ও আমাদের পূর্বপুরুষেরা, আমাদের রাজগণ ও আমাদের অধ্যক্ষগণ  ইহুদার নগরে নগরে ও জেরুজালেমের রাস্তায় রাস্তায় যেভাবে আকাশ রানীর উদ্দেশ্যে ধূপ জ্বালাতাম ও ঢালন উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতাম সেভাবে আমরা করবই করব। সেসময় আমাদের প্রচুর খাবার আর অবস্থাও ভাল ছিল আর আমরা কোনই কষ্ট ভোগ করিনি। কিন্তু যখন থেকে তা আমরা করা বন্ধ করলাম তখন থেকেই আমাদের অভাব হচ্ছে এবং আমরা যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংস হচ্ছি।
--হে অরামিয়া, আমরা যখন আকাশ রানীর উদ্দেশ্যে ধূপ জ্বালাতাম ও ঢালন উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতাম তখন কি আমাদের স্বামীরা সেকথা জানতেন না?’

অরামিয়া বললেন, ‘ইহুদার গ্রাম ও শহরগুলোতে আর জেরুজালেমের রাস্তায় রাস্তায় তোমরা ও তোমাদের পূর্বপুরুষরা, তোমাদের রাজাগণ ও রাজকর্মচারীরা এবং দেশের অন্যান্য লোকেরা যে ধূপ জ্বালাতে তা কি খোদার মনে পড়েনি এবং সেই বিষয়ে কি তিনি চিন্তা করেননি? তোমাদের মন্দ ও জঘন্য কাজগুলো তিনি যখন আর সহ্য করতে পারলেন না তখনই তোমাদের দেশ জনশুণ্য, ধ্বংসস্তুপ ও ঘৃণিত হয়ে গেল। তোমরা খোদার কথা অমান্য করেছ এবং তাঁর আইন কানুন, নিয়ম ও আদেশ পালন করনি। সেজন্যে এই বিপদ তোমাদের উপর এসেছে আর তোমরা তা দেখতে পাচ্ছ। এখন তোমরা খোদার বাণী শোন-

‘তোমরা ও তোমাদের স্ত্রীরা মুখে যা বলেছ, 
হস্ত দ্বারা তা সম্পন্ন করেছ,
তোমরা বলেছ, ‘আমরা আকাশ রানীর উদ্দেশ্যে
ধূপদাহ করার ও পেয় নৈবদ্য ঢালার যে মানত করেছি, 
তা অবশ্য সিদ্ধ করব’,
ভাল, তোমরা মানত অটল কর, তোমাদের মানত সিদ্ধ কর।
অবএব হে মিসর নিবাসী সকল ইহুদি, 
দেখ, আমি আপন মহানামে শপথ করেছি,
‘খোদার কসম’ একথা বলে মিসরের কোন ইহুদি 
আমার নাম আর মুখে আনবে না।
দেখ, আমি তাদের অমঙ্গলের নিমিত্ত জাগরুক, মঙ্গলে নিমিত্ত নয়;
তাতে মিসরের সমস্ত ইহুদি, 
তলোয়ার, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দ্বারা নি:শেষে বিনষ্ট হবে।
তলোয়ার হতে উত্তীর্ণ অতি অল্প লোক মিসর হতে ইহুদাতে ফিরে যাবে;
এতে ইহুদার অবশিষ্ট সমস্ত লোক, যারা মিসরে প্রবাস করতে এখানে এসেছে,
তারা জানতে পারবে যে, কার বাণী অটল থাকবে, আমার কি তাদের।’------------(অরামিয়া ৪৪:২৫-২৮)

‘তোমাদের কাছে এই চিহ্ন হবে যে, 
আমি এই স্থানে তোমাদেরকে প্রতিফল দেব,
যেন তোমরা জানতে পার যে, তোমাদের বিরুদ্ধে আমার বাক্য অবশ্য অটল থাকবে, অমঙ্গলের নিমিত্ত।
দেখ, আমি যেমন ইহুদারাজ সিদ্দিকীয়কে, তার প্রাণনাশে সচেষ্ট শত্রু
বাবিলরাজ নেবু চাঁদ নেজ্জারের হস্তে সমর্পণ করেছি,
তেমনি মিসররাজ ফেরাউন হোপরা এপ্রিসকেও 
তার শত্রুদের হস্তে, যারা তার প্রাণনাশে সচেষ্ট, 
তাদের হস্তে সমর্পণ করব।’------------(অরামিয়া ৪৪:২৯-৩০)

সমাপ্ত।
ছবি: Wikipedia, aaenemies.

Moses: কোরাণিক ক্যানভাসে নবী মূসা।

Abu Hena Mostafa Kamal  01 May, 2017 মি সরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ফেরাউন। হঠাৎ করে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। কিন্তু তিনি কোন উত্তরাধিকারী ন...