বাইবেলের তথ্য অনুসারে নমরুদ ছিলেন কুশের পুত্র, হামের পৌত্র এবং নূহের প্রপৌত্র। শিকারী হিসেবে তিনি ছিলেন প্রবাদ পুরুষ তুল্য। শিনার ভূ-খন্ডের বাবিল (Babel), উরুক (Erech), আক্কাড (Accad) ও চালনা (Calneh) এবং শিনারের বাইরে অশুর (Assyria), নিনেভ (Nineveh), রজেন (Resen), কা্লাহ (Calah) এবং রিহোবৎ (Rehoboth) নিয়ে তার সাম্রাজ্য গঠিত ছিল। -(Gen. 10: 8-10; I Chron. i. 10; Micah 5:5 [A. V. 6]).
তবে সত্যিকার অর্থে এই নমরুদ কে ছিলেন তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। প্রকৃতপক্ষে, তার ব্যাক্তি পরিচয় নিয়ে দু'টি সুপ্রতিষ্ঠিত মতামত রয়েছে। প্রথমটির অবতারণা করেছেন জি. স্মিথ ও জেরেমিয়া প্রমুখ। তাদের মতে নমরুদ ব্যাবিলনীয় বীর Izdubar বা Gishdubar (Gilgamesh) ব্যাতিত অপর কেউ নন। তাদের এই বক্তব্যের ভিত্তি হল এই যে, Izdubar-কে ব্যাবিলনীয় মহাকাব্যে উপস্থাপন করা হয়েছে একজন অতি সুদক্ষ শিকারী রূপে, যার সঙ্গে থাকত সবসময় চারটি কুকুর। আর তিনি এশিয়াতে প্রথম একটি বড় সাম্রাজ্যও প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তাছাড়া "Izdubar" এই নামটির এখন পর্যন্ত কোন সঠিক উচ্চারণ নির্ণিত হয়নি। জেরেমিয়ার মতে হিব্রুতে এটি "Namra Udu" (Shining Light) হওয়ারই সম্ভাবনা ব্যাপক, আর তাতে নমরুদের সনাক্ততাও সুসম্পন্ন হয়।
২য় মতটির প্রতিষ্ঠাতা হলেন Sayce, Pinches, ও অন্যান্যরা। তারা ব্যাবিলনীয় মারকারী Marduk-কে নমরুদ হিসেবে সনাক্ত করেন। তাদের মতে Izdubar অবশ্যই পঠিত হবে “Gilgamesh” যাতে নামের মাহাত্ম্য সাধারণভাবে নিহীত। আর যে বৈশিষ্ট্য Marduk নামটিকে প্রতিষ্ঠিত করছে তা হল, তিনিও একজন সুদক্ষ শিকারী। তাছাড়া, এই নামটির ফোনোটিক্যালি হিব্রু উচ্চারণ “Amar Ud”, যা হয়ত: “Namr Ud” হিসেবেও উচ্চারিত হয়ে থাকতে পারে। অন্যদিকে বাইবেলীয় নমরুদকে কুশের পুত্র অর্থে না ধরে, কুশ-বংশীয় ধরলে, Ea এর পুত্র Marduk ও বাইবেলীয় নমরুদ একাত্ম হয়ে যায়।
রাব্বানিক সাহিত্য অনুসারে নমরুদ খোদাদ্রোহীদের জনক। তার নাম এভাবেই উচ্চারিত হয়- “যিনি মানুষকে খোদাদ্রোহীতে পরিণত করেছিলেন।” -(Pes. 94b; comp. Targ. of pseudo-Jonathan and Targ. Yer. to Gen. 10:9). তিনি কেবল প্রথম শিকারীই নন, বরং তিনি প্রথম মাংস ভোজীও বটে। আর তিনিই প্রথম যুদ্ধের সূচনা করেছিলেন মানব জাতির মধ্যে।-(Midr. Agadah to Gen. 10:9).
শিকারে নমরুদের মহাসাফল্যের-(comp. Gen.10:9) কারণ ছিল চামড়ার তৈরী অাদমের সেই কোট। শয়তানের প্ররোচনায় গন্ধম ফল ভক্ষণের ফলে আদম-হাওয়া যখন উলঙ্গ হয়ে পড়েন, তখন খোদা তাদের জন্যে এই কোট তৈরী করে দিয়েছিলেন।-(Gen.3:21) এই কোট বংশ পরস্পরায় নূহ এবং নূহ থেকে হাম-কুশ হয়ে নমরুদের হাতে পৌঁছে। নানা রঙে রঙিন এই কোটে কিছু চিহ্ন খোঁদিত ছিল। যখনই কোন পশু খোঁদিত ঐ চিহ্ন দেখতে পেত, তখনই সে গুড়ি মেরে নত হয়ে যেত। ফলে ঐ সব পশু শিকারে নমরুদকে কোন বেগ পেতে হত না। লোকেরা তার এই ক্ষমতাকে আলৌকিক বলে ভাবত। এ কারণে তারা তাকে তাদের নরপতি বানিয়ে নেয়। -(Pirḳe R. El. xxiv.; “Sefer ha-Yashar,” l.c.; comp. Gen. R. lxv. 12).
অন্য কাহিনী মতে, নমরুদের বয়স যখন ১৮ বৎসর তখন তার গোত্র হেমিটিকদের সাথে জাফেটিকদের বিরোধ বাঁধে। অত:পর যুদ্ধের শুরু হলে প্রথমদিকে জাফেটিকদের বিজয়ের লক্ষণ দেখা দেয়, কিন্তু নমরুদ কুশাইটদের ক্ষুদ্র এক বাহিনী নিয়ে অতর্কিতভাবে আক্রমণ করে তাদের উভয়কে পরাজিত করেন। এই বিজয় তাকে খ্যাতির সমুচ্চ শিখরে উন্নীত করে এবং তিনি সকল মানুষের নৃপতি বনে যান।
প্রথমদিকে নমরুদ খোদার প্রতি একনিষ্ঠ ছিলেন। শিকারে পাওয়া পশুগলো তিনি খোদার তরে উৎসর্গ করতেন। কিন্তু খ্যাতির শিখরে পৌঁছে তার মনোভাবে পরিবর্তন আসে। তিনি ঘোর পৌত্তলিক বনে যান এবং দেবমূর্ত্তি নির্মাতা আজর (তেরাহ)-কে তার মন্ত্রী নিয়োগ করেন। অাজর এ সময় চ্যালডীয়র কুটা বা উরে বসবাস করতেন।-(B. B. 91a)
অন্যদিকে, আরবগণ নমরুদকে চরম স্বেচ্ছাচারী (Tyrant- “al-Jabbar”) হিসেবে বিবেচনা করে। আরবীয় ঐতিহাসিকগণ নমরুদের বাইবেলীয় বংশ বৃত্তান্তের সাথে একমত নন। একটি সূত্রমতে তিনি ছিলেন মাশের পুত্র এবং অরামের পৌত্র; অর্থাৎ একজন সেমেটিক। তিনি ফোরাত নদীর উপর সেতু এবং টাওয়ার অব বাবেল নির্মাণ করেছিলেন। আর তার গোত্র নাবাতিয়ানদের উপর তিনি রাজত্ব করেন পাঁচশত বৎসর। কিন্তু সাধারণ মত এই যে, তিনি ছিলেন কনান পুত্র এবং কুশের পৌত্র অথবা কুশের পুত্র এবং কনানের পৌত্র (দু’টি মতামতই তাবারী দিয়েছেন তার History of the Prophets and Kings পুস্তকে)। তার জন্ম Reu (great-great-grandfather of Abraham) এর রাজত্বকালে ও তিনিই প্রথম অগ্নি উপাসনা প্রচলন করেন এবং তিনিই প্রথম নরপতি যিনি রাজমুকুট পরিধান করেন।-(Kitab al-Magall).
নমরুদ |
২য় মতটির প্রতিষ্ঠাতা হলেন Sayce, Pinches, ও অন্যান্যরা। তারা ব্যাবিলনীয় মারকারী Marduk-কে নমরুদ হিসেবে সনাক্ত করেন। তাদের মতে Izdubar অবশ্যই পঠিত হবে “Gilgamesh” যাতে নামের মাহাত্ম্য সাধারণভাবে নিহীত। আর যে বৈশিষ্ট্য Marduk নামটিকে প্রতিষ্ঠিত করছে তা হল, তিনিও একজন সুদক্ষ শিকারী। তাছাড়া, এই নামটির ফোনোটিক্যালি হিব্রু উচ্চারণ “Amar Ud”, যা হয়ত: “Namr Ud” হিসেবেও উচ্চারিত হয়ে থাকতে পারে। অন্যদিকে বাইবেলীয় নমরুদকে কুশের পুত্র অর্থে না ধরে, কুশ-বংশীয় ধরলে, Ea এর পুত্র Marduk ও বাইবেলীয় নমরুদ একাত্ম হয়ে যায়।
শিকারী নমরুদ-১ |
শিকারে নমরুদের মহাসাফল্যের-(comp. Gen.10:9) কারণ ছিল চামড়ার তৈরী অাদমের সেই কোট। শয়তানের প্ররোচনায় গন্ধম ফল ভক্ষণের ফলে আদম-হাওয়া যখন উলঙ্গ হয়ে পড়েন, তখন খোদা তাদের জন্যে এই কোট তৈরী করে দিয়েছিলেন।-(Gen.3:21) এই কোট বংশ পরস্পরায় নূহ এবং নূহ থেকে হাম-কুশ হয়ে নমরুদের হাতে পৌঁছে। নানা রঙে রঙিন এই কোটে কিছু চিহ্ন খোঁদিত ছিল। যখনই কোন পশু খোঁদিত ঐ চিহ্ন দেখতে পেত, তখনই সে গুড়ি মেরে নত হয়ে যেত। ফলে ঐ সব পশু শিকারে নমরুদকে কোন বেগ পেতে হত না। লোকেরা তার এই ক্ষমতাকে আলৌকিক বলে ভাবত। এ কারণে তারা তাকে তাদের নরপতি বানিয়ে নেয়। -(Pirḳe R. El. xxiv.; “Sefer ha-Yashar,” l.c.; comp. Gen. R. lxv. 12).
শিকাররত নমরুদ-২ |
প্রথমদিকে নমরুদ খোদার প্রতি একনিষ্ঠ ছিলেন। শিকারে পাওয়া পশুগলো তিনি খোদার তরে উৎসর্গ করতেন। কিন্তু খ্যাতির শিখরে পৌঁছে তার মনোভাবে পরিবর্তন আসে। তিনি ঘোর পৌত্তলিক বনে যান এবং দেবমূর্ত্তি নির্মাতা আজর (তেরাহ)-কে তার মন্ত্রী নিয়োগ করেন। অাজর এ সময় চ্যালডীয়র কুটা বা উরে বসবাস করতেন।-(B. B. 91a)
নমরুদের সাম্রাজ্য |
অন্য উপাখ্যান মতে দু’জন নমরুদ ছিলেন- প্রথম জন কুশের পুত্র এবং ২য় জন সুপরিচিত স্বেচ্ছাচারী ও ইব্রাহিমের সমসাময়িক। যিনি ছিলেন কনান পুত্র এবং ১ম নমরুদের পৌপোত্র। মাসুদীর মতানুসারে (“Muruj al-Dhahab,” ii. 96) নমরুদ ছিলেন প্রথম ব্যাবিলনীয় নৃপতি এবং তার রাজত্বের ষাট বৎসরে তিনি ইরাকে বহু খাল খনন করেন।
ইব্রাহিমের সময় চ্যালডি |
শিকাররত নমরুদ-৩ |
নমরুদ বলেন, “এ শিশু কোথায় জন্মগ্রহণ করেছে?”
তারা বলেন “তেরাহর গৃহে।”
নমরুদ গর্জে উঠলেন, “My own trusted servant?”
উপদেষ্টাগণের পরামর্শ মত নমরুদ তেরাহকে ডেকে এনে বিপুল অঙ্কের সম্পদের বিনিময়ে শিশুটিকে তার হাতে সোপর্দের অনুরোধ জানান। সব শুনে তেরাহ এক গল্পের অবতারণা করেন। তিনি বলেন- এক ব্যক্তি এক গাধাকে প্রস্তাব দিয়েছিল, “আমি তোমাকে গোলাভর্ত্তি যব দেব, যদি তুমি আমাকে তোমার মাথাটি কেটে ফেলার অনুমতি দাও।”
শিকাররত নমরুদ-৪ |
গল্প শুনে নমরুদের মুখ রাগে লাল হয়ে যায়। এ দেখে তেরাহ তাড়াতাড়ি বলেন, “আমি এবং আমার সব সন্তানই তো আপনার অধীন। সুতরাং কোন বিনিময়ের আবশ্যকতা নেই। তবে আমাকে তিনদিন সময় প্রদান করা হোক, যাতে করে আমি আমার পরিবারকে এ বিষয়ে সম্মত করাতে পারি।”
নমরুদ তার দাবী মেনে নেন এবং বলেন, “যথাসময়ে যদি তুমি তোমার সন্তান হস্তান্তরে ব্যর্থ হও, তবে মনেরেখ তোমার গৃহে এমনকি একটি কুকুরও জীবিত থাকবে না।”
গৃহে ফিরে তেরাহ এক দাসীসহ ইব্রাহিম ও তার মাতাকে এক গুহায় লুকিয়ে ফেলেন এবং সদ্য জন্ম নেয়া অপর এক দাসীর সন্তানকে নমরুদের হাতে তুলে দেন। নমরুদ ঐ শিশুকে তৎক্ষণাৎ হত্যা করে ফেলেন।-(Sefer ha-Yashar-8:1-36)
ইব্রাহিম দশ বৎসর লোক চক্ষুর অন্তরালে গুহায় বসবাস করে। অত:পর নমরুদ যখন তার বিষয়ে সম্পূর্ণ বিম্মৃত হন তখন পিতা আজর তাকে বাড়ীতে নিয়ে আসেন।
আজর দেবমূর্ত্তি তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাই ইব্রাহিম দেবতাদের বিষয়ে প্রথম থেকেই ভীষণ কৌতুহলী ছিল। একদিন সে তার পিতাকে জিজ্ঞেস করল, “বাবা, মানুষ কি তৈরী করে?”
পিতা বললেন, “মানুষ। যেমন, আমি তোমাকে তৈরী করেছি আর আমার বাবা তৈরী করেছিলেন আমাকে।”
ইব্রাহিম বলল, “বাবা, এ এমন নয়; কেননা আমি এক বৃদ্ধকে কাঁদতে কাঁদতে বলতে শুনেছি- “হে খোদা, কেন তুমি আমাকে সন্তান দিচ্ছ না?”
উত্তরে পিতা বললেন, “তা সত্যি, আসলে দেবতা মানুষকে মানুষ তৈরী করতে সাহায্য করে, কিন্তু তিনি নিজে ঐ কাজে হাত লাগান না। মানুষ কেবল তার কাছে প্রার্থনা করবে তাকে সন্তান, মেষশাবক এবং ভেড়া দেবার জন্যে আর দেবতা তাকে সেগুলো দিতে সাহায্য করবেন।”
ইব্রাহিম, “বাবা, কতগুলো দেবতা আছেন?”
পিতা, “সংখ্যায় অগণ্য।”
ইব্রাহিম, “আচ্ছা বাবা, আমি যদি এক দেবতার সেবা করি, আর তাতে যদি অন্য দেবতা রেগে যায় যেহেতু আমি তার সেবা করছিনে, তখন আমি কি করব? যে কোন কারণে যদি দেবতাদের মধ্যে বিরোধ বাঁধে এবং তাদের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে বা ধর, যে দেবতা আমার প্রতি রূষ্ট সে যদি আমার নিজের দেবতাকে হত্যা করে, তাহলে আমি কি করব? এটা অবশ্য ঠিক যে ঐ দেবতা আমাকেও হত্যা করবে।”
একথা শুনে তার পিতা হেসে ফেললেন, বললেন, “বাবা, ভয়ের কোন কারণ নেই, কেননা কোন দেবতা অন্য দেবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে না; কখনও না, দেখ, বড় মন্দিরগুলোতে হাজার খানেক দেবতা রয়েছেন, আর তাদের সাথে রয়েছেন সবচেয়ে বড় দেবতা বা’ল; আর আমার বয়স এখন প্রায় সত্তুর এবং আমি আজ পর্যন্ত এক দেবতাকে অন্য দেবতার উপর আক্রমণে লিপ্ত হতে দেখিনি। আর সত্যি বলতে কি, সব মানুষ এক দেবতাকে সেবা করে না, কেউ করে একজনকে, কেউ অন্যজনকে।”
ইব্রাহিম বলল, “তাহলে বলা যায়, তাদের নিজেদের মধ্যে শান্তি রয়েছে।”
পিতা বললেন, “তা আছে।”
তখন ইব্রাহিম বলল, “আচ্ছা বাবা, দেবতারা দেখতে কেমন হয়?”
পিতা বললেন, “ওরে বোকা, প্রতিদিন আমি দেবতা তৈরী করছি, যা আমি অন্যের নিকট বিক্রি করে চাল-আটা কিনছি, আর তুমি জান না দেবতারা দেখতে কেমন!”
আর ঐ সময় তিনি একটা মূর্ত্তি তৈরী করছিলেন। “এটা” -তিনি বললেন “তাল কাঠের, ওটা জলপাইয়ের, ঐ ছোটটা আইভরির; দেখ কত সুন্দর এটা! দেখে কি মনে হচ্ছে না, এটা জীবন্ত? সত্যি বলতে কি, এর কেবল শ্বাসটাই নেই ।”
ইব্রাহিম বলল, “বল কি বাবা! দেবতাদের শ্বাস নেই? তাহলে তারা শ্বাস দেবে কিভাবে? আর তাদের যেহেতু জীবন নেই, তাই তারা কখনও জীবন দিতে পারে না। এটা অবশ্যই বাবা, এগুলো দেবতা নয়।”
বৃদ্ধ পিতা রেগে গেলেন, বললেন, “তুমি যদি বালেগ হতে, আমি এই কুঠার দিয়ে তোমার মাথা ভেঙ্গে দিতাম: কিন্তু মনে শান্তি রাখ, কারণ তোমার বোঝার বয়স হয়নি।”
ইব্রাহিম বলল, “বাবা, দেবতারা যদি মানুষ সৃষ্টিতে সাহায্য করতে পারে, তাহলে এটা কেমন যে মানুষ দেবতাদের তৈরী করবে? আর যদি দেবতারা কাঠের তৈরী হয়, তাহলে তো কাঠ পোড়ান মহাপাপ। এখন আমাকে বল বাবা, এটা কেমন হয় যে, যখন তুমি এতগুলো দেবতা তৈরী করেছো, তখন দেবতারা কেন তোমাকে অনেকগুলো ছেলেমেয়ে তৈরী করতে সাহায্য করছে না যাতে তুমি পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশী শক্তিশালী হও?”
তার পিতা তার কথা শুনে তার পাশে এসে বসলেন; ইব্রাহিম বলে চলল, “আচ্ছা বাবা, এমন কি কোন সময় ছিল, যখন পৃথিবীতে কোন মানুষ ছিল না?”
“হ্যাঁ,” বৃদ্ধ বললেন “কিন্তু কেন?”
“কারন,” ইব্রাহিম বলল- “আমি জানতে চাচ্ছি কে প্রথম দেবতাটা তৈরী করেছিলেন।”
“এবার আমার বাড়ী থেকে দূর হও!” বৃদ্ধ বললেন, “আর আমাকে এই দেবতাকে তৈরীর কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করতে দাও, এখন আমার সাথে একটা কথাও বলবে না; কেননা তুমি ক্ষুধার্থ হলে তোমার রুটি দরকার হবে, কথা দিয়ে পেট ভরবে না।”
ইব্রাহিম বলল, “একটা সুন্দর দেবতা সত্যি বলতে কি, তুমি তাকে ইচ্ছেমত কাটছ, কিন্তু সে নিজেকে রক্ষা করতে পারছে না!”
বৃদ্ধ রেগে গেলেন এবং বললেন, “সারা দুনিয়ার লোক বলছে এটা একটা দেবতা, আর তুমি পাগল বলছ, এটা তা নয়। দেবতা সাক্ষী, তোমার উপযুক্ত বয়স হলে আমি হয়ত: তোমাকে হত্যা করতাম।”- একথা বলে তিনি ইব্রাহিমকে একটা লাথি লাগালেন এবং তাড়িয়ে বাড়ীর বাইরে বের করে দিলেন। -(বার্ণাবাসের গসপেল, অধ্যায়-২৬)
ইহুদি রাব্বানিক সাহিত্যে রয়েছে- “তেরাহ ছিলেন একজন ভাস্কর-দেবমূর্ত্তি নির্মাতা। কোন একদিন দূরে কোথাও যাবার প্রাক্কালে তিনি ইব্রাহিমকে মূর্ত্তি বিক্রয়ের কাজে রেখে গেলেন। তারপর এক ক্রেতা এলে ইব্রাহিম তার বয়স জানতে চাইল। ঐ ক্রেতা বলল যে তার বয়স পঞ্চাশ-ষাট তো হবেই। এ কথা শুনে ইব্রাহিম তাকে বলল, “Woe to the man of sixty who would worship the work of a day!” এতে ঐ ক্রেতা লজ্জিত হয়ে ফিরে গেল।”-Vide Geiger, i., p. 124.
পিতার সাথে ইব্রাহিম অনেকবার দেব-মন্দিরে গিয়েছে। মন্দিরে হরেকরকম দেবতা ছিল। আকৃতি এবং প্রকতিতে একেকটি একেক রকম। লোকেরা মন্দিরে প্রবেশ করে দেবতার সামনে প্রাণিপাত করত। সে অবাক হয়ে ভাবত মানুষ নিজের হাতে মূর্ত্তি তৈরী করে সেই মূর্ত্তিকে দেবতা জ্ঞানে পূজা করে কিভাবে! দেবতাদের বিষয়ে তার মনে সবসময় ছিল সন্দেহ আর অবিশ্বাস। সে গভীরভাবে ভাবতে শুরু করল প্রকৃতি এবং তার স্রষ্টাকে নিয়ে।
কোরআনে রয়েছে- নিশ্চয়ই ইব্রাহিম ছিল এক সম্প্রদায়ের প্রতীক। সে ছিল আল্লাহর অনুগত, একনিষ্ঠ আর সে অংশীবাদীদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না।-(১৬:-১২৩) আমি তাকে পৃথিবীতে কল্যাণ দিয়েছিলাম ও পরকালেও সে তো সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম হবে।-(১৬:-১২২)
আমি তো এরপূর্বে ইব্রাহিমকে ভাল-মন্দ বিচারের জ্ঞান দিয়েছিলাম ও আমি তার সম্বন্ধে ভাল করেই জানতাম।-(২১:৫১-৭০) এভাবে ইব্রাহিমকে আকাশ ও পৃথিবীর পরিচালনা ব্যবস্থা দেখাই যেন সে দৃঢ়বিশ্বাসীদের একজন হয়। তারপর রাতের অন্ধকার যখন তাকে ছেয়ে ফেলল তখন নক্ষত্র দেখে বলল, “ও-ই আমাদের প্রতিপালক!” তারপর যখন তা অস্তমিত হল তখন সে বলল, “যা অস্তমিত হয় তা আমি ভালবাসিনে।”
তারপর যখন সে চাঁদকে উঠতে দেখল সে বলল, “এ আমার প্রতিপালক!” যখন তা অস্তমিত হল তখন সে বলল, “আমাকে আমার প্রতিপালক সৎপথ না দেখালে আমি তো পথভ্রষ্টদের শামিল হব।” তারপর যখন সে সূর্য্যকে উঠতে দেখল তখন বলল, “এ-ই আমার প্রতিপালক! এ সবচেয়ে বড়।” যখন তাও অস্তমিত হল তখন সে (মনে মনে তার বিভ্রান্ত) সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে বলল, “হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা যাকে আল্লাহর শরিক কর, তার সাথে আমার সম্পর্ক নেই। নিশ্চয়ই আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে মুখ ফেরাচ্ছি যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, আর আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভূক্ত নই।”-(৬:৭৫-৭৯)
ইব্রাহিম তার পিতা আজরকে বলেছিল, “তুমি কি মূর্ত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ কর? আমি তো তোমাকে ও তোমার সম্প্রদায়কে স্পষ্ট ভুল করতে দেখছি।”-(৬:৭৪)
সে তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বলল, “এ যে মূর্ত্তিগুলো যাদের পূজায় তোমরা রত রয়েছ, এগুলো কি?-(২১:৫৩) তোমরা কিসের উপাসনা কর?”-(২৬:৭০)
ওরা বলল, “আমরা প্রতিমার পূজা করি, সারাদিন এদেরকেই নিষ্ঠার সাথে আঁকড়ে থাকি।”- (২৬:৭১)
সে বলল, “তোমরা যখন আহবান কর, তখন তারা শোনে কি? অথবা তারা কি তোমাদের উপকার কিম্বা ক্ষতি করতে পারে?”
তারা বলল, “না, তবে আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে এদের পূজা করতে দেখেছি।”
সে বলল, “তোমরা কি যার পূজা করছ তার সম্বন্ধে ভেবে দেখেছ? তোমরা আর তোমাদের পূর্বের পিতৃপুরুষগণ যার পূজা করত?-(২৬:৭২-৭৬) তোমরা নিজেরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছ; তোমাদের পিতৃপুরুষগণও ছিল (বিভ্রান্তিতে)।”-(২১:৭০)
ওরা বলল, “তুমি কি আমাদের কাছে সত্য এনেছ, না তুমি ঠাট্টা করছ?”
সে বলল, “না, তোমাদের প্রতিপালক আকাশ ও পৃথিবীর প্রতিপালক, তিনি তো ওদের সৃষ্টি করেছেন আর এ বিষয়ে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি।”
লোকেরা তাকে ও তার সাক্ষ্যকে অগ্রহ্য করল। তখন সে মনে মনে বলল, “আল্লাহর শপথ! তোমরা চলে গেলে আমি তোমাদের মূর্ত্তিগুলোর ব্যাপারে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”-(২৬:৭৫) সে বাড়ি থেকে একটি কুঠার নিয়ে এল এবং সুযোগের অপেক্ষায় রইল।
এসময় এক মহিলা এক বাটি পায়েস নিয়ে সেখানে এল এবং ইব্রাহিমকে বলল, “Set it before them;” তখন সে মন্দিরের ভিতরে গিয়ে দেবতাদের মুখের সামনে খাবার রাখল। তারা যখন সেই আহার্য গ্রহণ করল না, তখন সে বলল, “তোমরা খাচ্ছ না কেন? তোমাদের কি হয়েছে যে তোমরা কথা বলছ না?”
ইব্রাহিম তার হাতে কুঠার তুলে নিল, আর তা দিয়ে ওদের প্রধান দেবতার মূর্ত্তি ছাড়া অন্যান্য সব মূর্ত্তিকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিল। তারপর কুঠারটি প্রধান দেবতার গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে এল। লোকেরা যখন এই অবস্থা দেখল তখন তারা মর্মাহত হল এবং একে অন্যেকে বলল, “আমাদের দেবতাদের সাথে এরূপ ব্যাবহার কে করল? নিশ্চয়ই সে সীমালংঘনকারী।”
কেউ কেউ বলল, “এক যুবককে ওদের সমালোচনা করতে শুনেছি; সবাই তাকে ইব্রাহিম বলে ডাকে।”
ওরা বলল, “তাকে লোকজনের সামনে উপস্থিত কর, যেন ওরা সাক্ষ্য দিতে পারে।”
ইব্রাহিমকে ডেকে আনা হল। তারপর ওরা তাকে জিজ্ঞেস করল, “হে ইব্রাহিম! তুমিই কি আমাদের দেবতাদের এমন অবস্থা করেছ?”
ইব্রাহিমের দৃষ্টি নিবদ্ধ হল প্রধান দেবতার গলায় ঝুলান কুঠারের প্রতি। তারপর উপস্থিত লোকদেরকে বলল, “আমার তো মনে হয় এদের এই প্রধানই একাজ করেছে। দেখছ না তার কাছেই রয়েছে কুঠার। আর সম্ভবত: তার এবাদতে এতগুলো অংশীদার দেখে রাগান্বিত হয়েই তা করেছে। এখন ওকেই জিজ্ঞেস করে দেখ না প্রকৃত ঘটনা কি!”
ওরা মনেমনে চিন্তা করে দেখল ও একে অপরকে বলতে লাগল, “(আমরাই তো সীমালংঘনকারী)!” তারপর ওদের মাথা হেঁট হয়ে গেল ও ওরা বলল, “তুমি তো ভাল করেই জান যে এরা কথা বলে না।”
ইব্রাহিম বলল, “তবে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর উপাসনা কর যা তোমাদের কোন উপকার করতে পারে না; ক্ষতিও করতে পারে না? ধিক, তোমাদেরকে আর আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের উপাসনা কর তাদেরকে! এরপরও কি তোমাদের জ্ঞান হবে না?”-(৩৭:৮৮-৯২)
আর এ সম্পর্কে ইহুদি রাব্বানিক সাহিত্যে আছে এমন- “যখন তার পিতা ফিরে এল, তিনি জানতে চাইলেন, “Who has done this?”
ইব্রাহিম বলল, “কেন মিথ্যে বলব? এক মহিলা এসেছিল একবাটি পায়েস নিয়ে আর সে আমাকে তা তাদের সামনে রাখতে বলে। When I did so, they began to quarrel, one god said: “I will eat first,” And another said, “No, I will eat first.. ”; then arose the tallest, and demolished them with the staff.”
তেরাহ বললেন, “আমার কাছে কিচ্ছা ফাঁদছো! তাদের কি কোন বোধশক্তি আছে?”
ইব্রাহিম উত্তরে বলল, “কি বলছ বাবা! তুমি মুখে যা বল, তোমার কান কি তা শুনতে পায় না? তবে তাদের ক্ষেত্রে তা হবে না কেন? আর যদি তারা সত্যিই বোধশক্তিহীন হয়, তবে তারা অবশ্যই দেবতা নয়।” -Vide Geiger, i., p. 124.
তারপর তেরাহ যখন কুঠারটি দেখে চিনতে পারলেন, তখন তিনি চিৎকার করে বললেন, “আমি আর কি বলব! এ যে আমার নিজের ছেলেই, কারণ কুঠারটা তো আমার।”
এসময় ইব্রাহিমের সম্প্রদায় তার সঙ্গে তর্ক করতে শুরু করল। সে বলল, “তোমরা কি আল্লাহ সম্বন্ধে আমার সঙ্গে তর্কে নামবে? তিনি তো আমাকে সৎপথে পরিচালিত করেছেন। আমার প্রতিপালক অন্য ইচ্ছে না করলে তোমরা যাকে তাঁর শরিক কর তাকে আমি ভয় করিনে। সবকিছুই আমার প্রতিপালকের জানা, তবুও কি তোমরা বুঝবে না? তোমরা যাকে আল্লাহর শরিক কর আমি তাকে কেমন করে ভয় করব? যার বিষয়ে তিনি কোন সনদ দেননি তাকে তোমরা আল্লাহর শরিক করতে ভয় কর না? সুতরাং যদি তোমরা জান তবে বল দু’দলের মধ্যে নিরাপত্তা কোন দলের প্রাপ্য-যারা বিশ্বাস করেছে ও তাদের বিশ্বাসকে সীমালংঘন করে কলুষিত করেনি, নিরাপত্তা তাদেরই জন্যে এবং তারাই সৎপথ প্রাপ্ত।”-(৬:৮০-৮২)
লোকেরা ইব্রাহিমের সঙ্গে যুক্তিতে টিকতে না পেরে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না তার বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ তারা নেবে। এসময় ওদের কেউ কেউ বলল, “ওকে পুড়িয়ে ফেল; সাহায্য কর তোমাদের দেবতাদেরকে, যদি একান্তই কিছু করতে চাও।”-(১৯:৪২-৪৮)
বিষয়টি নমরুদের কানে গেল। তিনি আদেশ করলেন, “তাকে অগ্নিতে নিক্ষেপ কর।” তার এই আদেশের কারণে তার আরেক নাম হয়ে গেল অম্রাফল (“Amraphel”- “he said, throw in”)-Targ. pseudo-Jonathan to Gen. xiv. 1; Gen. R. xlii. 5; Cant. R. viii. 8. কোরআনে রয়েছে- তারা বলল, “এরজন্যে এক অগ্নিকুন্ড তৈরী কর; আর একে জ্বলন্ত আগুনে ফেলে দাও।”- (৩৭:৯৬)
ইব্রাহিম বলল, “পার্থিব জীবনে তোমাদের পারস্পরিক বন্ধুত্বের জন্যে তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে প্রতিমা গুলোকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছ, কিন্তু শেষবিচারের দিন তোমরা একে অপরকে অস্বীকার করবে ও অভিশাপ দেবে। তোমরা বাস করবে জাহান্নামে আর তোমাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না।”-(২৯:২৫)
লোকেরা স্বেচ্ছাশ্রমে লাকড়ি যোগাড় করল এবং সেগুলি এক জায়গায় স্তুপীকৃত করে তৈল ও ঘি ঢেলে তাতে অগ্নিসংযোগ করা হল। সাত দিন আগুনে তা দিয়ে পূর্ণ অগ্নিকুন্ড তৈরী করার পর তারা সমস্যায় পড়ল ঐ অগ্নিকুন্ডে ইব্রাহিমকে নিক্ষেপ করা নিয়ে। কেননা তীব্র উত্তাপের জন্যে আগুনের ধারে কাছে পৌঁছান কারও পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। এসময় সেখানে উপস্থিত হয় স্বয়ং ইবলিস, নজদের এক পর্যটক বেশে। সে নিজেকে নমরূদের একজন উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দেয়। এ্রই মহতী উদ্যোগকে সফল করতে সে জনগণকে ব্যাপক উৎসাহ জুগিয়েছিল। তার পরামর্শে একটা চড়ক গাছ তৈরী করা হয়। আর তাতে ঝুলিয়ে ইব্রাহিমকে অগ্রিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। ইবলিসের এই উপস্থিতি জানা যায় ইয়াজিদি ধর্মগ্রন্থ “Kitêba Cilwe” থেকে- “I was present when Adam was living in Paradise, and also when Nimrod threw Abraham in fire.”
কথিত আছে, চড়ক তৈরী হলেও তার সাহায্যে ইব্রাহিমকে নিক্ষেপ করা সম্ভব হচ্ছিল না। কারণ, ফেরেস্তাগণ চড়ক ঘোরাতে বাঁধা সৃষ্টি করছিল। তখন ইবলিসের পরামর্শে ঐ চড়ক ঘিরে নগ্ন নারী নৃত্যের আয়োজন করা হয়। এতে ফেরেস্তাগণ সেখান থেকে সরে গেলে ইব্রাহিমকে নিক্ষেপ করা সম্ভব হয়।
আর যখন ইব্রাহিমকে নিক্ষেপ করা হচ্ছিল, তখন তিনি বলেছিলেন, "There is no God besides thee; thou art supreme, and unto thee alone belong praise and glory!"
The flame had already consumed his robe, when the angel Gabriel stepped before him and asked, "Hast thou need of me?"
But he replied, "The help of Allah alone is what I need!"
"Pray, then, to him, that He may save thee!" rejoined Gabriel.
"He knows my condition," answered Abraham.
ঐসময় আল্লাহ বলেন, “হে অগ্নি, তুমি ইব্রাহিমের জন্যে শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।”-(৩৭:৯৭)
"Not wondering, though in grief, to find
The martyr's foe still to keep her mind:
But fixed to hold Love's banner fast,
And by submission win at last."-Keble.
ইব্রাহিম চল্লিশ দিন ঐ অগ্নিকুন্ডে ছিলেন। এই দীর্ঘসময় ধরে লোকেরা পালাক্রমে ঐ অগ্নিকুন্ড পাহারা দিয়েছিল। অবশ্য ইতিমধ্যে লোকদের পাহারা যথেষ্ট শিথিল হয়েছিল। কেননা তারা ভেবেছিল সে আর বেঁচে নেই। অতঃপর যখন তারা দেখতে পেল সে সুস্থ্য অবস্থায় অগ্নিকুন্ড থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং তাদের মাঝে ঘোরাফেরা করছে, তখন তারা দ্রুত নমরুদকে বিষয়টি অবহিত করল। নমরুদ ইব্রাহিমকে দরবারে তলব করলেন।
রাব্বানিক সাহিত্যে (Chapter 38:13) রয়েছে-ইব্রাহিমকে যখন অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হয় তখন তার ভ্রাতা হারুণ সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। সে মনে মনে ভাবছিল, যদি ইব্রাহিম জয়ী হয়, তবে আমি তাকে অনুসরণ করব। আর যদি নমরুদ জয়ী হয়, তবে নিশ্চয়ই আমি তার অনুসারী। সুতরাং যখন ইব্রাহিম সুস্থ্য অবস্থায় আগুন থেকে বেরিয়ে আসে তখন লোকেরা হারুণকে বলল, "তুমি কার (অনুসারী)?" সে বলল, "ইব্রাহিমের!" তখন তারা তাকে ঐ অগ্নিতে নিক্ষেপ করে এবং তাতে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে ইব্রাহিম নমরুদের দরবারে উপস্থিত হন এবং কোন অভিবাদন না জানিয়ে নমরুদকে বলেন, “হে নমরুদ! আমি আল্লাহ প্রেরিত রসূল, যিনি এক-যার কোন শরীক নেই, যিনি আরশের অধিপতি।” ফেরাউনের (Nimrod was not the first king of kings. He became labeled as king of kings by gathering all kings of 42 cities in Egypt to be an assembly house called Pharaoh in the year after Noah's death, আর তাই নমরুদকে রাজার রাজা হিসেবে ফেরাউনও বলা হত, কিন্তু ফেরাউন তার উপাধি ছিল না অর্থাৎ তাকে ফেরাউন নমরূদ বলা হত না।) উপদেষ্টাগণ এসময় তাকে অভিবাদনের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বললেন- “আমি সিজদা করি একমাত্র আল্লাহকে, যিনি আমার প্রতিপালক এবং প্রতিপালক সকলের।”
নমরুদ স্বীকার করলেন ইব্রাহিমের খোদা একজন শক্তিশালী দেবতা কিন্তু তিনি তাঁর কর্তৃত্ব স্বীকারের পক্ষপাতি নন। সুতরাং তিনি এ বিষয়ে ইব্রাহিমের সাথে বাদানুবাদে লিপ্ত হলেন। তিনি বললেন, “হে ইব্রাহিম, কে তোমার প্রতিপালক?”
ইব্রাহিম বললেন, “আমার প্রতিপালক তিনি, যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান।”
তিনি বললেন, “আমিও তো জীবন দান করি এবং মৃত্যু ঘটিয়ে থাকি।”-(২:২৫৮)
নমরুদ তৎক্ষণাৎ দু’জন বন্দীকে দরবারে হাজির করতে নির্দেশ দিলেন। এই বন্দীদ্বয় মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত ছিল। যখন তাদেরকে দরবারে হাজির করা হল, তখন তিনি তাদের একজনকে মুক্তি দিলেন এবং অপরজনকে হত্যা করতে আদেশ দিলেন। তার এই আদেশ পালনের মধ্য দিয়ে তিনি ইব্রাহিমকে বুঝিয়ে দিতে চাইলেন য়ে, তিনিও জীবন দান ও মৃত্যু ঘটাতে সক্ষম।
এতে ইব্রাহিম বললেন, “নিশ্চয় তিনি সূর্য্যকে উদিত করেন পূর্বদিক থেকে, এবার আপনি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত করে দেখান।” তখন নমরুদ হতভম্ব হয়ে গেল।-(২:২৫৮)
এসময়ে নমরুদ ইব্রাহিমের সাথে অার বিতর্কে না গিয়ে সরাসরি ফয়সালার পথ বেঁছে নিলেন। তিনি বললেন, “হে ইব্রাহিম! দুনিয়ার রাজত্ব তো আমার। শীঘ্রই আকাশের রাজত্বও আমি তোমার খোদার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেব।”
অতঃপর নমরুদ তার মন্ত্রণা পরিষদকে তার অভিলাষ জানালেন। তিনি বলেছিলেন যে, তিনি স্বর্গে আরোহণ করে ইব্রাহিমের খোদাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিতে চান। তারা বলল, “it would be difficult to accomplish such a journey, the heavens being very high.” তখন পরিষদবর্গের একজন পরামর্শ দিল সূউচ্চ এক টাওয়ার নির্মাণের, যাতে করে তার চূঁড়া থেকে স্বর্গে লুকিয়ে থাকা ইব্রাহিমের খোদাকে সহজেই ধরাশায়ী করা যায়। নমরুদ প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন এবং এভাবে নূহের বন্যার ২০১ বৎসর পর টাওয়ারের নির্মাণ কাজ শুরু হল।
নির্মাণ কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নমরুদ জনতার উদ্দেশ্যে তার জ্বালাময়ী ভাষণে খোদার অবিচারের কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “এখানে বন্যা আমাদেরকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে থাকবে, আর তিনি স্বর্গভোজ সাবাড়ে ব্যস্তরত অবস্থায় তাকিয়ে তাকিয়ে তা দেখবেন, এমনটা হতে পারে না। God has no right to choose the upper world for Himself, and to leave the lower world to us; therefore we will build us a tower.” (Gen. R. xxxviii. 7; Tan., ed. Buber, Noah, xxvii. et seq.), টাওয়ার নির্মাণ শেষে তার চূঁড়ায় নমরুদের এক মূত্তি স্থাপন করেছিল কর্মচারীরা, যার হাতে ছিল নাঙ্গা তলোয়ার, দেখলে যেন মনে হবে সে খোদার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করছে।
এই টাওয়ারের নির্মাণের কাজে কোনরূপ অবহেলা সহ্য করা হয়নি। যারা পরামর্শক ছিলেন, তারা প্রয়োজনীয় ইট তৈরীর কাজে যথেষ্ট সংখ্যক নারী ও পুরুষ শ্রমিক নিয়োগ করেন। আর কর্মাধ্যক্ষগণ কঠোরতার সাথে তাদেরকে পরিচালিত করে। কথিত আছে- ইট তৈরীর কাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের সন্তান প্রসবের জন্যেও এমনকি কোন সময় মঞ্জুর করা হয়নি। একজন স্ত্রীলোক কর্মরত অবস্থায় সন্তান প্রসব করে এবং নবজাতককে কাপড়ে জড়িয়ে নিয়েই তাকে কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। -(3 Baruch).
বুক অব জুবিলি জানায়- And they began to build and in the fourth week they made brick with fire, and the bricks served them for stone, and the clay with which they cemented them together was asphalt which comes out of the sea, and out of the fountains of water in the land of Shinar. And they built it: forty and three years were they building it; its breadth was 203 bricks, and the height [of a brick] was the third of one; its height amounted to 5433 cubits and 2 palms (8,150 ft), and [the extent of one wall was] thirteen stades [and of the other thirty stades]. (Jubilees 10:20-21)
টাওয়ার অব বাবেল |
দীর্ঘ্ দিনে (৪৩ বৎসরে) হাজার হাজার শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রমে টাওয়ার অব বাবেল (Tower of Babel) নির্মিত হয়। এই টাওয়ার সম্পর্কে বাইবেলে আছে- “....and a tower, whose top may reach unto heaven....”. -(Genesis 11:4) খোদা বললেন, “I made Nimrod great; but he built a tower in order that he might rebel against Me”- (Ḥul. 89b).
যাহোক, নমরূদ অত:পর টাওয়ারের চূঁড়ায় আরোহণ করার প্রস্তুতি নিলেন। আর যখন তিনি চূড়ায় উঠলেন, তখন তার সঙ্গে ছিল একদল লোক, যাদের কেউ কেউ সাথে করে তুরপুন জাতীয় যন্ত্রপাতি এনেছিল স্বর্গ প্রাচীর ভেদ করার মানসে। কেননা, তাদের তো আর জানা ছিল না স্বর্গ কিসের তৈরী- পাথরের, লৌহের না তামার। -(3 Baruch, 3:7)
এদিকে নমরূদ টাওয়ারের চূঁড়ায় পৌঁছে খুবই বিষ্মিত হলেন। তার বিষ্ময় ছিল এটা দেখে যে, স্বর্গ তখনও as remote from him as when he was on the ground. He was still more mortified on the following day, when the tower collapsed with such a noise that the people fainted with terror, those that recovered losing their speech or power of hearing which was illustrated in the Bible as an allusion to the confusion of tongues.
এদিকে নমরূদ টাওয়ারের চূঁড়ায় পৌঁছে খুবই বিষ্মিত হলেন। তার বিষ্ময় ছিল এটা দেখে যে, স্বর্গ তখনও as remote from him as when he was on the ground. He was still more mortified on the following day, when the tower collapsed with such a noise that the people fainted with terror, those that recovered losing their speech or power of hearing which was illustrated in the Bible as an allusion to the confusion of tongues.
এই টাওয়ার ধ্বসে নমরূদের নিজ সন্তানসহ বহু মানুষের হতাহতের ঘটনা ঘটে তথাপি নমরূদের স্বর্গ জয়ের আকাংখা থেমে থাকেনি। তিনি বিকল্প পথ খুঁজতে থাকেন। এ সময় তার পরিষদবর্গের একজন অদ্ভূত এক পরামর্শ দিল। তার পরামর্শে চারটি বৃহৎ শকুনকে লালন-পালন করা হল। অতঃপর একটি সিন্দুক তৈরী করে শকুন চারটিকে কয়েক দিন অভুক্ত রেখে ঐ সিন্দুকের চার কোনায় বেঁধে দেয়া হল। তারপর সিন্দুকের উপর দিকে শকুনের নাগালের বাইরে কিন্তু দৃষ্টির সীমানায় ঝুলিয়ে দেয়া হল মাংসের টুকরো।
নমরুদ ও তার সেনাপতি প্রস্তুত হয়ে সিন্দুকে আরোহণ করলেন। যাহোক, শকুনেরা মাংসের টুকরো খেতে চাইল, আর তাদেরকে নিয়ে সিন্দুকসহ উর্দ্ধপানে উড়ে চলল। সিন্ধুকের উপর এবং নীচের দিকে দু’টি গবাক্ষ ছিল। আর সেনাপতি মাঝে মাঝে ঐ গবাক্ষ দু’টি পালাক্রমে উন্মুক্ত করে উভয়দিকে দৃষ্টিপাত করে দেখে নিতে লাগল যে, তারা স্বর্গের দিকে অগ্রসর হচ্ছে কি-না।
উর্দ্ধ আকাশে পৌঁছে অর্থাৎ যেখান থেকে অাকাশ বা পৃথিবীর, কিছুই আর দৃষ্টি গোচর হল না, নমরূদ প্রস্তুতি নিলেন তীর নিক্ষেপের। তারপর তারা একের পর এক তীর উপরের দিকে নিক্ষেপ করলেন। ঐ সময় আল্লাহ জিব্রাইলকে বলেন, "আমার এই বান্দা যেন নিরাশ না হয়।" জিব্রাইল তখন তীরের অগ্রভাগ রক্তরঞ্জিত করে ফেরৎ পাঠাল, যাতে নমরুদের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, তিনি ইব্রাহিমের খোদাকে ধরাশায়ী করতে সমর্থ্য হয়েছেন।
কথিত আছে, যখন খোদা জিব্রাইলকে বলেন যে, “আমার এই বান্দা যেন নিরাশ না হয়।” তখন জিব্রাইল তীরের অগ্রভাগ রক্ত রঞ্জিত করতে পশু, পাখী ও জলজ জীবের কাছে রক্ত চেয়েছিল। কিন্তু কেউই নিজের রক্ত দিতে সম্মত হয়নি "বেলে মাছ” ছাড়া। এ কারণেই বেলে মাছের শরীরে কোন রক্ত নেই। অার তাই Book of Chamis জানিয়েছে- “Respecting the blood which was seen on Nimrod's arrow, the learned are not agreed as to whence it came: many contend it was the blood of a fish which the clouds had carried with them from the sea, and adduce this circumstance as the reason why fish need not be slaughtered.”-(Book of Chamis).
এদিকে সকল তীর নিক্ষেপ শেষে নমরুদ পৃথিবী পৃষ্ঠে ফিরে আসতে চাইল। সেজন্যে শকুন গুলিকে নিম্নগতি করার লক্ষ্যে সিন্দুকের উপরের দিকে ঝুলিয়ে দেয়া মাংস একই ভাবে নিচের দিকে ঝুলিয়ে দেয়া হল। অবতরণের সময় সিন্দুক প্রচন্ড শব্দে মাটিতে আছড়ে পড়ে গুড়িয়ে যায়। নমরুদ নিজে অবশ্য এই পতনে কোনরূপ আঘাত প্রাপ্ত হননি।
মাটিতে অবতরণের পর নমরুদের রক্ষীরা নিক্ষিপ্ত তীরগুলি কুড়িয়ে নিয়ে এল। আর যেগুলো পাওয়া গিয়েছিল তার সবগুলোই ছিল রক্তরঞ্জিত। নমরুদ রক্তমাখা তীরগুলি দেখে সফলতার আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে উঠলেন, “নিশ্চয়ই আমরা ইব্রাহিমের খোদাকে হত্যা করে ফেলেছি, তীরে লেগে থাকা রক্তই তার সাক্ষ্য বহন করে।”
এ সম্পর্কে ইহুদি রাব্বানিক সাহিত্য জানায়- “Nimrod goes on to try storming Heaven, throwing arrows in person, in a chariot driven by birds." আর বুক অব জাসের (Book of Jasher,-Hebrew, “Sefer ha-Yashar/Book of Jasher”= “Book of the Righteous One") জানায়- “..they cast the arrows toward the heavens, and all the arrows fell upon them filled with blood, and when they saw them they said to each other, Surely we have slain all those that are in heaven. -(Book of Jasher, 9:29) "..They thought that they killed God.” -(Book of Jasher, 9:30)
এসময় এক রাতে নমরুদ স্বপ্ন দেখলেন যে, “অগ্নিকুন্ড থেকে খোলা তরবারী হাতে এক লোক বেরিয়ে এল। তারপর সে তাকে দেখতে পাওয়া মাত্র তার দিকে দ্রুত দৌঁড়ে আসতে লাগল। এ দেখে তিনি দৌঁড় লাগালেন। তখন ঐ ব্যক্তি একটা ডিম ছুঁড়ে মারল তার দিকে। ঐ ডিম মাটিতে পড়ে ভাঙ্গা মাত্র তা রূপান্তরিত হয়ে গেল বিশাল এক নদীতে। আর সেই নদীতে তার সকল সৈন্য-সামন্ত ডুবে গেল, কেবল বেঁচে গেলেন তিনি ও তার তিনজন সঙ্গী। তারপর ঐ নদী পুন:রায় ডিমে পরিণত হল এবং পরে তা থেকে বেরিয়ে এল ছোট এক পেঁচা যা তার দিকে উড়ে এসে ঠুঁকরে তার দু’চোখ তুলে ফেলল।”
গণকেরা এই স্বপ্নের ব্যাখ্যায় ভবিষ্যৎবাণী করেছিল যে, ইব্রাহিমের হাতে নমরুদের পরাজয় ঘটবে। এতে নমরুদ গোপনে ইব্রাহিমকে হত্যার জন্যে লোক পাঠান। কিন্তু ইতিমধ্যে ইব্রাহিম সঙ্গী-সাথীসহ উর ত্যাগ করেছিলেন।ইব্রাহিমের ঐ যাত্রায় ভ্রাতৃষ্পুত্র লুত্ তার সঙ্গী ছিল। অগ্নিকুন্ড থেকে সুস্থ্য শরীরে ফিরে আসার খোদায়ী কুদরত দেখামাত্র সে তার উপর ঈমান এনেছিল।
আগেই বলেছি, the punishment visited on the builders of the tower did not cause Nimrod to change his conduct; অত:পর যখন বুঝতে পারলেন খোদাসহ স্বর্গবাসীদেরকে তিনি নিহত করতে পেরেছেন, তখন তার শক্তি, ক্ষমতা ও দম্ভের প্রকাশ আকাশ ছুঁয়ে গেল। এ সময় আল্লাহ ইব্রাহিমকে বলেন, “নমরুদকে সতর্ক কর তার উপর শাস্তি আসার আগেই।”
সুতরাং ইব্রাহিম নমরুদের রাজদরবারে হাজির হলেন। তাকে দেখে নমরুদ উৎফুল্ল হয়ে বললেন, “হে ইব্রাহিম! দুনিয়া এবং স্বর্গের রাজত্ব এখন আমারই। আমরা তোমার উপাস্য, তোমার খোদাকে ইতিমধ্যে হত্যা করতে সমর্থ হয়েছি।”
ইব্রাহিম বলেন, “আমার উপাস্য চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী। মৃত্যু তাঁকে আলিঙ্গন করতে পারে না বরং তিনিই জীবন দেন এবং মৃত্যু ঘটান।"
ইতিপূর্বেকার ঘটনা নমরুদ স্মরণে আছে, সুতরাং তিনি এবার আর বিতর্কে না গিয়ে বললেন, “ঠিক আছে,তিনি যদি মারা গিয়ে নাই থাকেন, তবে তাঁর সৈন্যদলকে একত্রিত করতে বল। আমিও আমার সৈন্যদল ময়দানে সমবেত করছি।”
ইব্রাহিম বলেন, “আল্লাহকে ভয় করেন, তিনিই তো আপনাকে রাজ্য ও রাজত্ব দান করেছেন। আর তিনিই পরজগতের প্রতিফল দাতা।” কিন্তু নমরুদ কিভাবে নিজের একচ্ছত্র অাধিপত্য ত্যাগ করেন, যখন তিনি আসমানবাসীদেরও ঘায়েল করতে সক্ষম? সুতরাং বললেন, “তোমার খোদাকে অবশ্যই আমার শক্তির মোকাবেলা করতে হবে।” অবশ্য যুদ্ধ প্রস্তুতিতে তিনি উভয়ের জন্য তিনদিন সময় মঞ্জুর করেছিলেন, during which he gathered a considerable army.
নির্দিষ্ট দিনে নমরুদ ষাট লক্ষ সেনা [?] ময়দানে সমবেত করলেন। এদিকে প্রতিপক্ষের কোন দেখা নেই। ইব্রাহিমকে একাকী ময়দানে দেখে তিনি অবাক হয়ে তাকে কাছে ডেকে নিয়ে বললেন, “তোমার প্রতিপালকের সেনাদল কোথায়? তিনি নিশ্চয় আমার শক্তিবল দেখে ভীত হয়ে পশ্চাৎপসারণ করেছেন।”
ইব্রাহিম বললেন, “আমার রব ক্ষমতায় মহান, কোনরূপ ভীতি তাকে আচ্ছন্ন করতে পারে না, বরং তিনিই তা প্রদর্শণ করে থাকেন। একথা নিশ্চিত যে তাঁর সেনারা ময়দানে এসে পৌঁছিবেই-আর তা অতি অল্প সময়ের মধ্যেই।”
এ কথা শুনে নমরুদ সেনাপতিদের বললেন, “যুদ্ধ পতাকা উড়িয়ে দাও, সতর্ক হও, নাকাড়া বাজাও।”
ষাট লক্ষ সেনার শোরগোলে ভূমি প্রকম্পিত হল। কিন্তু সময় গড়িয়ে যায়, তথাপি প্রতিপক্ষের দেখা মেলে না। ফেরাউন পুনঃরায় ইব্রাহিমকে বললেন, “কোথায় তোমার রবের সৈন্যদল?”
ইব্রাহিম দূরে আকাশের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলেন। দূরে কাল রঙের একটা মেঘ দেখা যাচ্ছে। নমরূদ ঝড়ের অাশঙ্কা করলেন। কিন্তু যখন সেটা কাছে মাথার উপর চলে এল, লক্ষ লক্ষ মশার গুণ গুণ কলতানে চারিদিক মুখরিত হল। হঠাৎ এত মশার আগমনে নমরূদ যখন হতভম্ভ সেইসময় ইব্রাহিম তাকে বললেন, “এরাই আমার রবের সেনাবাহিনী।”
মশা! ক্ষুদ্র এ প্রাণীটি সন্ত্রাসী, বেপরোয়া। রক্তের নেশায় জীবনের ঝুকি নিয়ে তারা আক্রমণ করে মানুষ, পশুকে। আর এ মশা তো আল্লাহ প্রেরিত, যুদ্ধের নিমিত্ত। কিন্তু নমরুদ এদের ব্যক্তিত্বকে খাটো করে দেখলেন। অবজ্ঞার সূরে বললেন, “এ তো মশা! তুচ্ছ এক প্রাণী, তার উপর নিরস্ত্র। তোমার রবের কি অস্ত্র-ভান্ডার বা মালখানা নেই?”
এখানে বলে রাখা ভাল- অনেকের মতে ওগুলো মশা ছিল না, বরং ছিল মশার আকৃতির, আকারে আরও ক্ষুদ্র, মাংসাশী (carnivorous) প্রাণী, Gnat.
ইব্রাহিম বললেন, “আমার রবের বাহিনী সম্পর্কে আপনার কোন ধারণাই নেই। আপনার এই সেনাবাহিনীর জন্যে তিনি এই তুচ্ছ, নিরস্ত্র মশাকেই যথেষ্ট মনে করেছেন। তবে নিরস্ত্র হলেও এরা তাদের যুদ্ধ কৌশল জানে। এখন আপনি শুধু এই বাহিনীর মোকাবেলা করে আপনার শক্তি, সামর্থ্য ও মেধার পরিচয় দিন।”
এদিকে এই মশা বাহিনীর সঙ্গে কিরূপে যুদ্ধ করতে হবে তা ভেবে পাচ্ছিল না নমরুদের সেনারা। এত ক্ষুদ্র প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাদের পূর্ব কোন যুদ্ধের অভিজ্ঞতা বা ট্রেনিং- কোনটাই নেই। সুতরাং তারা হতভম্ভ হয়ে আদেশের অপেক্ষায় সাঁরিবদ্ধ ভাবে নিশ্চল দাঁড়িয়ে রইল।
এই অবসরে প্রতিটি সৈন্যের মাথার উপর একটি করে মশা অবস্থান নিল। অতঃপর কেউ কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই তারা তাদের নাসিকা পথে মস্তিস্কে প্রবেশ করল। তারপর দংশন। সেনাবাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হল। হিতাহিত জ্ঞানশুণ্য হয়ে তীরন্দাজগণ উর্ধ্বে তীর নিক্ষেপ করতে লাগল। আর পদাতিক সেনারা নিজেদের চতুষ্পার্শ্বে অন্ধের মত তরবারী চালনা শুরু করল। এভাবে একে অপরকে নিজেদের অজান্তেই তারা আহত বা নিহত করে ফেলল।
অবস্থা বেগতিক দেখে নমরুদ পালিয়ে প্রাসাদে ফিরে আসছিলেন। এসময় একটি দূর্বল মশা তাকে তাড়া করল। ঐ মশার একটি পায়ের অর্ধেকটা ছিল না। সুতরাং সে কয়েকবার নমরুদের শিরোস্ত্রাণের চতুষ্পার্শ্বে প্রদক্ষিণ করে নিজেকে ব্যালান্স করল, তারপর সুড়ুৎ করে তার নাসিকা পথে মস্তিস্কে ঢুকে পড়ল। পরে ধীরে সুস্থ্যে দংশন শুরু করল। যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে পড়লেন নমরুদ। উন্মাদের ন্যায় প্রাসাদে প্রবেশ করলেন। একসময় দিশেহারা হয়ে পাদুকা খুলে নিজের মাথায় আঘাত করতে শুরু করলেন তিনি। এতে মশা দংশনে বিরত রইল। তিনি একটু আরাম বোধ করলেন। কিন্তু আঘাত বন্ধ করতেই মশা পুন:রায় দংশন শুরু করল। অবশেষে নমরুদ তার মাথায় মৃদু আঘাত করার জন্যে একজন সার্বক্ষণিক কর্মচারী নিযুক্ত করলেন। অনেকের মতে সূদীর্ঘ ৪০ বৎসর তিনি ঐ দু:সহ যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন।
এটা অদ্ভূত ছিল যে, পাদুকা ব্যতিত অন্য কিছুর আঘাতে মশা দংশনে বিরত থাকত না। এসময়ই ইব্রাহিম তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলেন। আর যখন তিনি নমরুদের অবস্থা স্বচক্ষে দেখলেন, তিনি বললেন, “হে নমরুদ! স্বীয় মস্তকে, স্বীয় পাদুকা দ্বারা আঘাতের জন্যে, স্বীয় অর্থেই গোলাম নিযুক্ত করে রাখা জঘণ্য। সুতরাং এখনও সময় আছে আল্লাহকে সর্বশক্তিমান ও অদ্বিতীয় বলে স্বীকার করে নিন। তাতে তিনি আপনার পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং আপনি এই কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি পাবেন।”
নমরুদ মনে করতেন খোদাকে স্বীকার করে নিলে তার ক্ষমতা ও প্রভাব বিলুপ্ত হবে। তাই তিনি উত্তর দিলেন, “হে ইব্রাহিম! আমিই দুনিয়ার অধিশ্বর। যাকে দেখিনি তাকে আমি স্বীকার করি না।”
ইব্রাহিম বুঝতে পারলেন যাকে আল্লাহ পথ প্রদর্শণ করেননি, সে কখনও পথ খুঁজে পায় না। তিনি হতাশা নিয়ে ফিরে এলেন।
এ কারণেই নমরুদের সম্পর্কে বলা হয়েছে- Whether or not conceived as having ultimately repented, Nimrod remained in Jewish and Islamic tradition an emblematic evil person, an archetype of an idolater and a tyrannical king. In rabbinical writings up to the present, he is almost invariably referred to as “Nimrod the Evil”.- (Hebrew: נמרוד הרשע)
এদিকে নমরুদের সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মচারী অতিষ্ট হয়ে পড়েছিল। এক মুহুর্ত অবসর নেই তার। সামান্য বিরতিতেই তিরস্কার। একসময় তার মনে এমন বিরক্তি ও ক্রোধের সৃষ্টি হল যে, সে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে হস্তস্থিত পাদুকার এক আঘাত হানে। ঐ আঘাতেই নমরুদের মৃত্যু হয়।
নমরুদের এই যুদ্ধ ও পরিণতি সম্পর্কে ইহুদি রাব্বানিক সাহিত্য জানায়- “নমরুদ তখন ইব্রাহিমের খোদাকে যুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করলেন। তারপর যখন তিনি বিশাল এক সেনাবাহিনী নিয়ে ময়দানে উপস্থিত হলেন, তখন খোদা তার বিরুদ্ধে মশার এক বাহিনী পাঠিয়ে দিলেন, যেগুলো নমরুদের বাহিনীকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলে। কথিত আছে- এই প্রাণীর একটি নমরুদের নাসিকা পথে তার মস্তিস্কে ঢুকে পড়ে এবং মগজ চুষে খেতে শুরু করে। ব্যাথা প্রশমনে নমরুদ নেহাই (যে লৌহ খন্ডের উপর রেখে কামার কিছু পেটায়) এর উপর হাতুড়ির আঘাত করতে একজন কর্মচারী নিয়োগ করেন, যাতে করে ঐ শব্দ মশাকে কামড় থেকে বিরত রাখে।”
অন্যদিকে এ সম্পর্কে Book of Chamis জানায়- “বার বর্গমাইল জায়গায় [?] নমরুদের সেনাবাহিনী ছাউনি ফেলল। তখন আল্লাহ জিব্রাইলকে ইব্রাহিমের কাছে একথা জিজ্ঞেস করতে পাঠালেন যে, তাকে উদ্ধারে কোন প্রাণী পাঠাবেন তিনি? ইব্রাহিম বেঁছে নিলেন মশা। তখন অাল্লাহ ফেরেস্তাদেরকে বলেন, “Verily, if he had not chosen the fly, an insect would have come to his aid, seventy of which are lighter than the wing of a fly.”
মহান আল্লাহ তখন মাছিদের রাজাকে সমন পাঠান এবং তাকে আদেশ করেন নমরুদের বিরুদ্ধে তার বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হতে। সে তখন দুনিয়ার তাবৎ মশা-মাছি নিয়ে নমরুদের বাহিনীকে এমন হিংস্রভাবে আক্রমণ করে যে, অল্প সময়ের মধ্যে পুরো ময়দানে মানুষের মাথার খুলি, হাঁড়-গোঁড়, তরবারী, বল্লম ও তীরে-ধনুক ব্যতিত অপর কিছু আর পরিদৃষ্ট হয়নি। কেননা, সেগুলো তাদের শরীরের চামড়া, মাংস এমনকি মাথার মগজ পর্যন্ত চুষে খেয়ে ফেলেছিল।
নমরুদ পালিয়ে গিয়ে নিজেকে প্রাসাদের একটা পুরু দেয়াল ঘেরা কক্ষে আঁটকে ফেলেন। কিন্তু তার সাথে সেখানেও একটা দুর্বল মশা পৌঁছে গিয়েছিল। সম্ভবত: নমরূদের বাহিনী হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বিক্ষিপ্ত তরবারী চালানোর সময় সে আহত হয়েছিল। যা হোক, সাত দিন ঐ মশা নমরূদের মুখের চারপাশে ঘোরাফেরা করে, তবে নমরুদ কোনভাবেই তাকে ধরতে বা মারতে পারেননি। তারপর সেটি তার নাসিকা পথে প্রবেশ করে। নমরুদ যতই তাকে বাইরে বের করতে চেষ্টা করেন, সেটি ততই গভীরে প্রবেশ করে এবং একসময় মস্তিস্কে পৌঁছে যায়। তারপর ধীরে সুস্থ্যে সে তার মস্তিস্ক চুষে খেতে শুরু করে।
এসময় ব্যাথা প্রশমনে দেয়ালে মাথা ঠুকা ছাড়া নমরুদের আর কোন উপায় রইল না। পরে তিনি একজন কর্মচারীকে নিয়োগ করেন কাঠের এক হাতুড়ি দিয়ে তার মাথায় মৃদু আঘাত করার জন্যে। এদিকে মশা অবিরাম খেতে খেতে আকারে বৃদ্ধি পেতে লাগল। আর ৪র্থ দিনে সেটি তার মস্তিস্ক ফুঁড়ে বেরিয়ে এল। ঐ মশা এসময় বৃদ্ধি পেতে পেতে একটা কবুতরের মত [?} হয়ে গিয়েছিল। তারপর সেটি উড়ে যেতে যেতে মরোন্মুখ নমরুদকে, যার তখন্ এমনকি তওবা করারও সামর্থ্য ছিল না, ঘৃণাভরে বলল, “Thus does Allah, whenever He pleases, permit the feeblest of His creatures to destroy the man who will not believe in Him and in His messenger.” -(Book of Chamis)
সমাপ্ত।
উৎস:
• Qur'an;
• Bible;
• Book of Chamis by Husein ibn Muhammed;
• Book of Jasher (Sefer ha-Yashar);
• Book of Jubilee;
• Gospel of Barnabas;
• Pirḳe de Rabbi Eliezer, Tr. Gerald Friedlander,1916;'
• History of the Prophets and Kings by Tabari;
• Cheyne and Black, Encyc. Bibl.;
• Kitêba Cilwe (Book of Revelation)
• Sayce, ib. ii. 243 et seq.;
• Jeremias, Izdubar Nimrod, Introduction, Leipsic, 1891;
• Pinches, The Old Testament;
• Third Apocalypse of Baruch.
• Rubin, Birusi ha-Kasdi, Vienna, 1882.
• D'Herbelot, Bibliothèque Orientale;
• Hughes, Dictionary of Islam;
• Mas'udi, Muruj al-Dhahab, ed. Barbier de Meynard;
• Mirkhond, Raudat al-Safa, Eng. transl. by Rehatsek;
• Ṭabari, Chroniques, transl. by Zotenberg, i. 120, 136 et seq., Paris, 1867.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন