It is a precept of God to learn. For thus says God: Ask of your elders, and they shall teach you. And of the Law says God: See that my precept be before your eyes, and when you sit down, and when you walk, and at all times meditate thereon. Whether, then, it is good not to learn, you may now know. Oh, unhappy he who despises wisdom, for he is sure to lose eternal life.
But some may argue that Job learned not from a master, nor Abraham; nevertheless they became holy ones and prophets. They say so because they forgot that he who is of the bridegroom's house does not need to be invited to the marriage, because he dwells in the house where the marriage is held; but they that are far from the house. Now know you not that the prophets of God are in the house of God's grace and mercy, and so have the Law of God manifest in them: as David says on this matter: "The Law of his God is in his heart; therefore his path shall not be digged up"
Now It is a Question that how shall the prophets teach us if they are dead; and how shall he be taught who has not knowledge of the prophets?"
The doctrine of the Prophet is written down, for you to study. He who despises the prophecy, despises not only the prophet, but also God who has sent the prophet. But concerning such as know not the prophet, as are the nations, Say, if there shall live in those regions any man who lives as his heart shall show him, not doing to others that which he would not receive from others, and giving to his neighbour that which he would receive from others, such a man shall not be forsaken of the mercy of God.'-[Barnabas, CH-78-79]
ইসলামে জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষার উপর অধিক জোর দেয়া হয়েছে। কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে ’পড়’ শব্দের মাধ্যমে। ‘পড়, তোমার সেই প্রভুর নামে-যিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন- যিনি এক বিন্দু রক্ত হতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, পড়-তোমার সেই মহিমাময় প্রভু -যিনি (সাধারণতঃ) কলমের দ্বারা জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন -যিনি মানুষকে অনুগ্রহ করে অজ্ঞাতপূর্ব জ্ঞান দান করেছেন।’-(৯৬:১-৫)
কোরআনের বহু আয়াতে জ্ঞান অর্জনের কথা বলা হয়েছে। যেমন- বল, হে আমার প্রতিপালক, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দাও। -(২০:১১৪) যারা জানে এবং যারা জানেনা, তারা কি উভয়ে সমান? -(৩৯:৯) আল্লাহ তাদের অন্তর কলুষিত করে দেন যারা বিচার বুদ্ধি ব্যবহার করে না। -(১০:১০০) এসব আয়াত থেকে জ্ঞান অর্জণের গুরুত্ব সুস্পষ্ট।
আমাদের নবী মুহম্মদও শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। জ্ঞানের গুরুত্ব অনুধাবণের জন্যে আমরা প্রায়শ: নীচের এই উক্তি গুলির উদাহরণ দেই মুহম্মদের বাণী তথা হাদিস হিসেবে-
এদিকে খোদার আদেশ মত সকল ফেরেস্তা সমীহের সাথে সিজদা করে আদমকে। কিন্তু জ্বিণ ইবলিসের গঠনগত শ্রেষ্ঠ্যত্বের কৌলিণ্য তাকে খোদার আদেশ অমান্য করতে প্ররোচিত করে। তার এই অহংকারের কারণে সে স্বর্গে নিষিদ্ধ হলে, প্রতিশোধ নিতে সেও আদম হাওয়াকে খোদায়ী আদেশ অমান্য করতে প্ররোচিত করে এবং স্বর্গচ্যূত করে দেয়। ফলে আমাদের দুনিয়াতে আগমন।
কিন্তু যে জ্ঞান ও শিক্ষা আদম পান খোদার তত্বাবধানে, তা কি তিনি সঙ্গে করে দুনিয়াতে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন? এর উত্তর আমাদের জানা নেই বটে, তবে আমরা কেউ যে অদৃশ্যলোকের কোন স্মৃতি বা ঘটনা যে সঙ্গে করে আনিনি এটা নিশ্চিত বলা যায়। কেননা, কোরআন জানিয়েছে এই স্বীকারোক্তির কথা- যখন তোমার প্রতিপালক আদম বংশের জন্যে তাদের পৃষ্ঠ হতে তাদের সন্তানদের বের করলেন এবং তাদেরকে তাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করলেন, ‘আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?’
- ’প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।’;
- ’জ্ঞান অর্জনের জন্যে সূদূর চীনে যাও।’;
- ’এক ঘন্টার জ্ঞান অর্জন সহস্র বৎসরের এবাদতের থেকে শ্রেয়।’;
- 'জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে পবিত্র।';
- 'জ্ঞানহীন মানুষ পশুর চেয়েও অধম।';
- 'প্রজ্ঞা যেখানে পাও কুড়িয়ে লও।'
- 'অজ্ঞানের সারারাত ইবাদতের চেয়ে জ্ঞানীর নিদ্রাই উত্তম।' -ইত্যাদি।
তোমাদের মধ্যে .....যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে সম্মানিত করবেন।-(৫৮:১১) এর সত্যতা কতটাই না সুনিশ্চিত! সৃষ্টিগত ভাবে আদম ফেরেস্তা ও জ্বিণের তুলনায় নিকৃষ্ট। ফেরেস্তাগণ নূরের, জ্বিণ আগুণের ও মানুষ কাদামাটির সৃষ্ট। আর এই নিকৃষ্ট আদম ফেরেস্তা ও জ্বিণের উপর নিজের শ্রেষ্ঠ্যত্ব প্রতিষ্ঠিত করল কেবল জ্ঞানের জোরে। আর তাই আদমকে নয় বরং জ্ঞানী আদমকে সম্মানিত করতে খোদা ফেরেস্তাদেরকে আদেশ দেন তাকে সিজদা করার। সুতরাং বলা যায় ইসলামে জ্ঞান অর্জন করা একটি ধর্মীয় দায়িত্বও বটে।
এদিকে খোদার আদেশ মত সকল ফেরেস্তা সমীহের সাথে সিজদা করে আদমকে। কিন্তু জ্বিণ ইবলিসের গঠনগত শ্রেষ্ঠ্যত্বের কৌলিণ্য তাকে খোদার আদেশ অমান্য করতে প্ররোচিত করে। তার এই অহংকারের কারণে সে স্বর্গে নিষিদ্ধ হলে, প্রতিশোধ নিতে সেও আদম হাওয়াকে খোদায়ী আদেশ অমান্য করতে প্ররোচিত করে এবং স্বর্গচ্যূত করে দেয়। ফলে আমাদের দুনিয়াতে আগমন।
কিন্তু যে জ্ঞান ও শিক্ষা আদম পান খোদার তত্বাবধানে, তা কি তিনি সঙ্গে করে দুনিয়াতে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন? এর উত্তর আমাদের জানা নেই বটে, তবে আমরা কেউ যে অদৃশ্যলোকের কোন স্মৃতি বা ঘটনা যে সঙ্গে করে আনিনি এটা নিশ্চিত বলা যায়। কেননা, কোরআন জানিয়েছে এই স্বীকারোক্তির কথা- যখন তোমার প্রতিপালক আদম বংশের জন্যে তাদের পৃষ্ঠ হতে তাদের সন্তানদের বের করলেন এবং তাদেরকে তাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করলেন, ‘আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?’
তারা বলেছিল, ‘হ্যাঁ, আমরাই স্বাক্ষী রইলাম।’-(৭:১৭২)
-বুঝতেই পারছেন এই স্বীকৃতির কথা কেন উল্লেখ করলাম। এই স্বীকৃতি শেষবিচারে আপনার জন্যে স্বাক্ষী হবে। কিন্তু আমরা কি কেউ ঐ গুরুত্বপূর্ণ স্বীকারোক্তির কথা স্মরণ করতে পারি? না, আর তাই আমাদের সেদিনের উত্তর হবে- ‘আমরা এ বিষয়ে অজ্ঞাত ছিলাম।’ কিংবা ‘আমাদের পূর্বপুরুষরাই তো পূর্ব হতে অংশীবাদিতা করেছিল এবং আমরা তাদের পরবর্তী বংশধর ছিলাম, অতএব তুমি কি পথভ্রষ্টদের কৃতকর্মের জন্যে আমাদেরকে ধ্বংস করবে?’-(৭:১৭৩) পালাবার পথ নেই, তখন স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে কোরঅানে বর্ণিত এই আয়াতটি।
আমাদের অস্তিত্ব আমাদের জন্মের পূর্বে থাকলেও তা কেন আমরা স্মরণ করতে পারি না? প্লেটোর রিপাবলিকে, এর (Er) অদৃশ্যলোক ভ্রমণ শেষে ফিরে এসে অবশ্য এ বিষয়ের একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার বর্ণনা ছিল এমন- অপরাহ্নে সকলে এসে শিবির স্থাপন করল ‘বিস্মৃতির নদী’র তটে। বিস্মৃতির এই নদীর পানিকে কোন পাত্রেই ধারণ করা চলে না। নিয়তির নির্দেশে সকল আত্মাকেই পান করতে হল এই পানি। যারা বিজ্ঞতার সাথে নিজেকে রক্ষা করতে পারল না, তারা এই পানি প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পান করে ফেলল। এবার সকল আত্মা নিদ্রামগ্ন হল এবং পরলোকের সকল অভিজ্ঞতা বিস্মৃত হয়ে গেল। তারপর যখন মধ্যরাত্রি আগত, তখন ভূমির কম্পন শুরু হল এবং বজ্র্ নিঘোষিত হল। আর বিচ্ছুরিত তারকার মত এক বিপুল উৎক্ষেপনে সকল আত্মা পরলোক থেকে উৎক্ষিপ্ত হল ইহলোকে। মর্ত্যলোকে তাদের ঘটল নূতন অস্তিত্বের জন্ম।
বিস্মৃতির নদীর পানি পান করা এরের জন্যে নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু সেও বলতে পারেনি, কেমন করে, কোন উপায়ে সে প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হল তার মৃত দেহের মধ্যে। তার এইমাত্র স্মরণ আছে হঠাৎ সে জীবন ফিরে পেল। তার চক্ষু উন্মীলিত হল, আর দেখতে পেল প্রত্যুষ হয়ে আসছে এবং সে শায়িত রয়েছে তার সমাধি শয্যায়। -অর্থাৎ আমরা জানলাম দুনিয়াতে আগমনে আত্মাগণ অদৃশ্যলোকের সকল কথা বিস্মৃত হয়ে যায়।
যাইহোক, মূলকথা হল অদৃশ্যলোকের সব জ্ঞান আদম (নবী বলে কথা) সঙ্গে করে নিয়ে এলেও আমরা এনেছি এমনটা দাবী করতে পারি না। তবে একথাও ঠিক যে, আদমের স্মরণ শক্তিও প্রখর ছিল না। কেননা সে খোদার আদেশ ভুলে গিয়ে গন্ধম খেয়ে ফেলেছিল, যাতে করে খোদা তার সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন- আমি ইতিপূর্বে আদমকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। অতঃপর সে ভুলে গিয়েছিল এবং আমি তার মধ্যে দৃঢ়তা পাইনি।-(২০:১১৫) তবে আদম জ্ঞান সঙ্গে করে আনুক বা না আনুক, দুনিয়াতে তাকে জ্ঞান দানের পরোক্ষ ওয়াদা খোদার ছিল- ”তিনি বললেন, ‘তোমরা সকলে একে অন্যের শত্রু হিসেবে স্বর্গ থেকে নেমে যাও। পরে আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সৎপথের নির্দেশ এলে যে আমার পথ অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না ও দুঃখ-কষ্ট পাবে না।..,”.-(২০:১২২-১২৪)
প্রাথমিক শিক্ষা। |
প্রথম দিকে জ্ঞান আদম থেকে মৌখিক উপস্থাপনায় তার সন্তানদের কাছে পৌছায়। এভাবে ধর্মীয়, সামাজিক এবং প্রকৃতিকে বশ করে টিকে থাকার জ্ঞান বংশ পরস্পরায় এগিয়ে যায়। আর যখনই তারা ইবলিসের প্ররোচনায় সত্য পথ বিচ্যূত হয়েছে তখনই খোদার তরফ থেকে প্রতিনিধি তাদের কাছে এসেছে। তবে এধারা কেবল উম্মূল বিলাদেই ছিল, সর্বত্র ছিল এটা ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয় না।
এরিস্টোটলের স্কূল। |
প্যাপিরাস। |
ইতিমধ্যে আমরা বলেছি প্রথমদিকে পুরুষ পরম্পরায় মানুষ জ্ঞানের বিস্তার ঘটিয়েছিল মৌখিকভাবে। এভাবে এক পুরুষ থেকে পরবর্তী পুরুষে সংস্কৃতির ধারা বহমান প্রক্রিয়াকে বলে এনকালচারেশন। আর এভাবে সামাজিক মূল্যবোধ ও ব্যবহার শিক্ষাই হচ্ছে সামাজিকায়ন বা socialization. The history of the curricula of such education
reflects history itself, the history of knowledge, beliefs, skills and cultures
of humanity.
তবে এই পর্যায়ে লেখনির উদ্ভব না ঘটায় জ্ঞান ও দক্ষতার বিকাশ ঘটে কেবল নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞানী ও দক্ষ লোকের মাধ্যমে (skills
were passed down from a person skilled at the job)। আর ঐ সব দক্ষ লোকেরা তা শিখেছিল তাদের বয়োজোষ্ঠ্যদের কাছ থেকে, শিখেছিল নিজেদের প্রয়োজনে, প্রকৃতিকে বশ করে টিকে থাকতে। আর এভাবে শিক্ষার যে সব সেক্টর দ্রুত গড়ে ওঠে তা হল মূলত: ধর্মশিক্ষা, পশুপালন, কৃষিখামার, মৎস শিকার, খাদ্য প্রস্তুত প্রনালী, নির্মাণ ও রণ কৌশল।
প্যাপিরাসে লেখা। |
Some forms of traditional knowledge were expressed through stories, legends, folklore, rituals, and songs, without the need for a writing system. Tools to aid this process include poetic devices such as rhyme and alliteration. These methods are illustrative of orality. The stories thus preserved are also referred to as part of an oral tradition. By means of memorization, they were passed down through many generations.
মিসরীয় হায়ারোগ্লিফিক। |
The Phoenician writing system was adapted from the Proto-Canaanite script in around the 11th century BC, which in turn borrowed ideas from Egyptian hieroglyphics. This script was adapted by the Greeks. The Phoenician system was also adapted into the Aramaic script, from which the Hebrew script and also that of Arabic are descended. -Wikipedia.
গিলগামিশ। |
প্রথমদিকে লেখনীর ব্যবহার ছিল মূলত: ধর্মীয় কিতাব সংরক্ষণ ও শিক্ষায় এবং নগর ও রাজ্য পরিচালনায় আইন-কানুনের প্রয়োজনে। অবশ্য গিলগামিশের কাব্য (Epic of Gilgamesh- এ কাব্যের কাহিনী মহাপ্লাবন তথা নূহের বন্যার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ) লেখা হয়েছে খ্রী:পূ: ২৫০০ অব্দে।
গিলগামিশের কাব্য। |
হাম্বুরাবি তার ঐ অনুশাসনের শুরুতে বলেছিলেন: “আমি, হাম্বুরাবি, দেবগণ কর্তৃক নির্ধারিত নেতা, সম্রাটদের মধ্যে সর্বপ্রথম সমগ্র ইউফ্রেটিস অঞ্চলের বিজয়ী, আমি আমার দেশের কানে সত্য ও ন্যায়নীতির মন্ত্র দান করলাম এবং জনগণকে দান করলাম সমৃদ্ধি।’ অার সত্য ও ন্যায়নীতির মন্ত্র দান শেষে তিনি জানান- “আমি, হাম্বুরাবি, ন্যায়নিষ্ঠ সম্রাট, সূর্যদেবের নিকট হতে এই আইনাবলী পেয়েছি। আমার বচন অপূর্ব সুন্দর, আমার কর্ম তুলনারহিত...”
মহাগ্রন্থ বেদ রচিত হয়েছে খ্রী:পূ: ১৫০০ অব্দের দিকে। এটি বৈদিক ধর্মগ্রন্থ। জ্ঞান ও শিক্ষার বিকাশে এ ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনার শুরুতে আমরা এ ধর্মের উৎপত্তির ইতিহাসের দিকে নজর বুলিয়ে নেই।
মহাগ্রন্থ বেদ রচিত হয়েছে খ্রী:পূ: ১৫০০ অব্দের দিকে। এটি বৈদিক ধর্মগ্রন্থ। জ্ঞান ও শিক্ষার বিকাশে এ ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনার শুরুতে আমরা এ ধর্মের উৎপত্তির ইতিহাসের দিকে নজর বুলিয়ে নেই।
নূহের বংশধরগণ নৌকো থেকে নেমে উম্মুল বিলাদে কাছাকাছি বসবাস করে যাচ্ছিল অনেকদির ধরে। আর তারা দিনগুজরান করছিল বেশ আরাম আয়েশে। পশু চরাচ্ছে, ফরমালিনবিহীন ফলফলারী ও খাঁটি দুধ-মধু খাচ্ছে-দাচ্ছে-ঘুমুচ্ছে আর সন্তান উৎপাদন করে যাচ্ছে; কিন্তু খোদার কোন নাম-গান নেই। কেউ একজন ভাবছে না, সে কে, কেন তার দুনিয়াতে আগমন, কেন এ জীবন স্বল্পকালের, আর গন্তব্যই বা কোথায়? সুতরাং খোদা চিন্তান্বিত হলেন, -তবে কি তাদেরকে ”আশ্রাফুল মকলুকাত” উপাধিটা দেয়া কি ভুল হল? তাদের মধ্যে চিন্তাভাবনার এত অভাব কেন? কেন তাদের কর্মকান্ডগুলো নাদান পশুর সাথে কোন পার্থক্য সূচিত করছে না ?
হাম্বুরাবির অনুশাসন। |
সুতরাং জরথুষ্টের আবির্ভাব ঘটল। আর দীর্ঘ নির্জনবাস ও সাধনার পর সে তার প্রাপ্ত জ্ঞান "Golden Rule" বিতরণ শুরু করে দিল। এতে বাঁধল ধর্মীয় বিরোধ। যারা এতকাল একজায়গায় এতকাল ধরে বসবাস করে আসছিল, ধর্ম এখন তাদেরকে পৃথক করে দিল- একদল আরেক দলকে বহিস্কার করল মাতৃভূমি থেকে। প্রথম যারা বেরিয়ে গেল, তারা হেমিটিক, নূহের পুত্র হামের বংশ ও জাফেটিকদের একটি শাখা, নুহের পুত্র যেফতের বংশ। প্রকৃতির অনুকূল ও বিরূপ পরিবেশ তাদেরকে বাধ্য করল ছড়িয়ে পড়তে পৃথিবীর নানা কোনে। একসময় তারা বর্বর থেকে বর্বরস্তরে পৌঁছে গেল অথবা সংস্পর্শে চলে গেল ঐ সব আদম সন্তানদের যারা কেইন বা কাবিলের সাথে ইতিপূর্বে ছড়িয়ে পড়েছিল সেই সূদূর অতীতে। আর প্রস্তর যুগ, ব্রোঞ্জযুগ পার করে তারা এগিয়ে এসেছে সভ্যতার দ্বারপ্রান্তে। মিসরে শুরু হয়েছে বিজ্ঞানের চর্চা। ফেরাউন কাফু ২৭০০ অব্দে পিরামিড নির্মাণের কাজ শুরু করেন। অবশ্য এর ও পূর্বে বাবিলে নমরূদ টাওয়ার অফ বাবিল নির্মাণ করে বসেছিলেন।
যা হোক, উম্মুল বিলাদ থেকে পরবর্তীতে বেরিয়ে পড়ল সেমিটিক ও জাফেটিকগণ, হয় প্রাকৃতিক দূর্য়োগ, নতুবা চারণ ভূমির অপর্যাপ্ততার কারণে, এবং সবশেষে বের হয়ে এল আর্যগণ। আর তারা মিডিয়া ও শূশানিয়াতে পৌঁছে দেখতে পেল সেখানে তুরানীয়রা সুপ্রতিষ্ঠিত। সংখ্যায় ও শক্তিতে বলিয়ান আর্যরা তাদেরকে কয়েক’ শ বৎসরের জন্য দাসত্বের শৃংখলে আবদ্ধ করল অথবা নিজেরাই আবদ্ধ হয়ে গেল। আর তাদের বাকীরা যারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে অগ্লগামী ছিল, তারা তাদের যাত্রাপথে বসতির চিহ্ন রেখে যেতে যেতে একসময় আফগানিস্তান পার হয়ে ভারতবর্ষে চলে গেল এবং তারা সেখানে দেখা পেল একদল কৃষ্ণবর্ণের আদি মানবের যারা বর্বর থেকে বর্বরস্তর পার হয়ে একসময় সেখানে থিত হয়েছিল এবং সভ্যতার সূচনা ঘাটিয়েছিল। আর্যগণ সেখানে গিয়েছিল কেবল বসতির উদ্দেশ্যে। কিন্তু অত:পর তারা তাদের শক্তি দিয়ে বিতাড়িত করল অধিবাসীদের আর তাদের বসতবাটিগুলো নিজেদের করে নিল।তারা স্থায়ী আবাস গড়ে তুলল সপ্তসিন্ধুতে। এদিকে আদিম অধিবাসীদের যারা আর্যদের এই আক্রমণ প্রতিহত করে প্রাণে বেঁচেছিল তারা তাদের বাসস্থান পরিত্যাগ করে দক্ষিণ ভারতে আশ্রয় নিল। আর যারা বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছিল তারা আর্য সমাজে নিম্নস্তরের জীবন-যাপনের সুযোগ পেল।
আর্যগণ যখন উপমহাদেশে আগমন করে তখন তাদের মধ্যে কোন জাতিভেদ ছিল না। পরবর্তীতে তারা গুণ ও কর্মভেদে তাদের মধ্যে চারটি বর্ণের উদ্ভব ঘটায়।
ক) ব্রাহ্মণ: পূজা-পার্বন, যাগ-যজ্ঞ, ধর্মশাস্ত্র পাঠ ও রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার যারা সংরক্ষিত করেছিল।
এই উপমহাদেশে আগমন কালে আর্যগণ কোনরূপ পূজার সাথে জড়িত ছিল না। তারা স্তুতি ও উৎসর্গের দ্বারা দেবতাদের অর্চণা করত মাত্র। তাদের ধর্ম একেশ্বরবাদী না হলেও তাদের মধ্যে একেশ্বরবাদের ধারণা প্রচলিত ছিল। কালক্রমে তাদের এইসব রীতিনীতি এবং চিন্তাধারা যা তারা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল, অনার্য রীতি-নীতি তাদের সমাজে প্রবেশ করাতে তার ক্রমাগত গ্রহণ ও বর্জন চলতে লাগল এবং একসময় তারা কর্মফল ও জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী হয়ে পড়ল যা বৈদিক (হিন্দু) ধর্মের জন্ম দেয়।
তবে উপমহাদেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে আর্যদের অবদান অপরিসীম। তাদের রচিত প্রথম গ্রন্থের নাম বেদ। বেদ অর্থ জ্ঞান।এই বেদ চারটি ভাগে বিভক্ত ছিল-যথা- ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ এবং অথর্ববেদ। ইতিহাস রচনায় আর্যদের অবদান না থাকলেও তাদের ধর্মগ্রন্থ, সাহিত্য ও ইতিহাস রচনায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।পরবর্তীতে বেদ আবারও চারিভাগে বিভক্ত হয়েছে। যেমন- সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ। উপনিষদ বেদের একেবারে শেষভাগে রচিত বলে একে বেদান্ত বলা হয়ে থাকে। তবে বেদ তত্বজ্ঞানের আধার হলেও এই জ্ঞানের প্রসার ও তার সুফল খুব একটা মানুষ ভোগ করতে পারেনি, কেবল এক শ্রেণীর কাছে সেগুলোর পাঠ-পঠন সীমাবদ্ধ থাকায়।
১৩০০ বিসিইর শেষ দিকে তোয়া উপত্যাকা থেকে মূসা তাওরাত কিতাব লিখিত আকারে নিয়ে এসেছিলেন ৪০ দিন সেখানে অবস্থান করে। সেটিও জ্ঞানের আধার। সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনের নানান দিক তাতে বর্ণিত হয়েছে। সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সেটি ছিল মাইল ফলক। এছাড়াও পথভ্রষ্ট মানুষের জন্যে কিতাবটি ছিল আলোক বর্তিকা বা মশাল স্বরূপ।
জন্মান্ধ গ্রীক কবি হোমার ইলিয়াদ রচনা করে ফেলেন খৃষ্টপূর্ব ৮ম শতকে অর্থাৎ রোম নগরী পত্তনের সমসাময়িক কালে। তবে শিক্ষা প্রাতিষ্ঠানিক রূপলাভ করে মূলত: নবী ওযাইয়েরের সময়কালে।তিনি সিনাগগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। (অবশ্য্ মূসার সময়ে ইস্রায়েলীরা মিসরে অবস্থানকালে নিজেদের জন্য উপাসনালয় তৈরী করে নিয়েছিল। কিন্তু মূসার কাছে ফেরাউনের যাদুকরেরা পরাজিত ও মুসলমান হয়ে গেলে ফেরাউন ইস্রোয়েলীদের উপর কঠোর বোঝা চাপিয়ে দেয় আর তারা যেন একত্রিত হতে না পারে সেজন্যে তাদের উপাসনালয়গুলো গুড়িযে দেয়া হয়। এতে খোদা তাদের নিজেদের আবাসবাটিতে উপাসনার নির্দেশ দেন।) আর ঐ সব সিনাগগের অধীনে ছিল মিদরাস, যা ছিল মূলত: ধর্মশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে সিনাগগ ও মিদরাস সাধারণতঃ উপাসনা ও ধর্মীয় শিক্ষার জন্যে সৃষ্ট হলেও সেটি ইস্রোয়েলীদের সামাজিক ও নাগরিক জীবনে দিক নির্দেশনা দেবার জন্যেও ব্যবহার করা হত।
যা হোক, উম্মুল বিলাদ থেকে পরবর্তীতে বেরিয়ে পড়ল সেমিটিক ও জাফেটিকগণ, হয় প্রাকৃতিক দূর্য়োগ, নতুবা চারণ ভূমির অপর্যাপ্ততার কারণে, এবং সবশেষে বের হয়ে এল আর্যগণ। আর তারা মিডিয়া ও শূশানিয়াতে পৌঁছে দেখতে পেল সেখানে তুরানীয়রা সুপ্রতিষ্ঠিত। সংখ্যায় ও শক্তিতে বলিয়ান আর্যরা তাদেরকে কয়েক’ শ বৎসরের জন্য দাসত্বের শৃংখলে আবদ্ধ করল অথবা নিজেরাই আবদ্ধ হয়ে গেল। আর তাদের বাকীরা যারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে অগ্লগামী ছিল, তারা তাদের যাত্রাপথে বসতির চিহ্ন রেখে যেতে যেতে একসময় আফগানিস্তান পার হয়ে ভারতবর্ষে চলে গেল এবং তারা সেখানে দেখা পেল একদল কৃষ্ণবর্ণের আদি মানবের যারা বর্বর থেকে বর্বরস্তর পার হয়ে একসময় সেখানে থিত হয়েছিল এবং সভ্যতার সূচনা ঘাটিয়েছিল। আর্যগণ সেখানে গিয়েছিল কেবল বসতির উদ্দেশ্যে। কিন্তু অত:পর তারা তাদের শক্তি দিয়ে বিতাড়িত করল অধিবাসীদের আর তাদের বসতবাটিগুলো নিজেদের করে নিল।তারা স্থায়ী আবাস গড়ে তুলল সপ্তসিন্ধুতে। এদিকে আদিম অধিবাসীদের যারা আর্যদের এই আক্রমণ প্রতিহত করে প্রাণে বেঁচেছিল তারা তাদের বাসস্থান পরিত্যাগ করে দক্ষিণ ভারতে আশ্রয় নিল। আর যারা বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছিল তারা আর্য সমাজে নিম্নস্তরের জীবন-যাপনের সুযোগ পেল।
আর্যগণ যখন উপমহাদেশে আগমন করে তখন তাদের মধ্যে কোন জাতিভেদ ছিল না। পরবর্তীতে তারা গুণ ও কর্মভেদে তাদের মধ্যে চারটি বর্ণের উদ্ভব ঘটায়।
ক) ব্রাহ্মণ: পূজা-পার্বন, যাগ-যজ্ঞ, ধর্মশাস্ত্র পাঠ ও রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার যারা সংরক্ষিত করেছিল।
খ) ক্ষত্রিয়: অস্ত্র-শস্ত্রের ব্যাবহার, দেশরক্ষা ও দেশ শাসনে যারা নিয়োজিত হত।
গ) বৈশ্য: ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকাজ ও পশুপালনের দ্বারা যারা জীবিকা নির্বাহ করত।
ঘ) শূদ্র: উপরোক্ত তিন শ্রেণীর সেবাকাজে যারা ব্যপ্ত হয়েছিল।
তা কেন শূদ্ররা অপর তিন শ্রেণীর চাকর-বাকর হবে? বা কেন কেবলমাত্র ব্রাহ্মণগণ পূজা-পার্বন, যাগ-যজ্ঞ, ধর্মশাস্ত্র পাঠ ও রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার পাবেন? এর উত্তরে ব্রাহ্মণরা জানিয়ে দিল যে, পৃথিরীর সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা তার শরীরের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তার মুখ থেকে সৃজিত হয়েছে ব্রাহ্মণ এবং এই কারণে তারা দেবতার পক্ষ থেকে কথা বলতে পারে, হাত থেকে ক্ষত্রিয়, উরু থেকে বৈশ্য, আর পদযুগলের ময়লা থেকে শূদ্র অর্থাৎ ভৃত্য শ্রেণী। কিন্তু ব্রক্ষ্মা তার শরীরকে খন্ড খন্ড করে কিভাবে এতসব সৃষ্টি করল? বা যে ব্রক্ষ্মা তার ডিম (অান্ডা) থেকে ব্রক্ষ্মান্ড সৃষ্টি করল, সে কেন আরেকটা ডিম পাড়ল না এসব সৃষ্টিতে? -এসব প্রশ্ন কেউ করল না।
যা হোক, শূদ্রদের জীবন ছিল অতি কষ্টের, কিন্তু তার চেয়েও কষ্টের ও লাঞ্ছনার জীবন ছিল তাদের যারা ছিল অচ্ছুৎ। অচ্ছুৎ গণ্য করা হত তাদের যারা এই চতুর্বর্ণের কোনটার মধ্যেই পড়ে না। অচ্ছুৎরা সবচেয়ে নোংরা কাজ করতে বাধ্য থাকত। এরা হল মুচি, ম্যাথর, কাওরা বা শুকর পালক ইত্যাদি। মনে করা হত এদের গাত্র স্পর্শ করা মাত্রই কোন যে কেউ অপবিত্র হয়ে যায়। ভূমিষ্ঠ হওয়ার মূহূর্ত থেকেই অচ্ছুতের সন্তানকে অশুচি ভাবত লোকে।
যা হোক, শূদ্রদের জীবন ছিল অতি কষ্টের, কিন্তু তার চেয়েও কষ্টের ও লাঞ্ছনার জীবন ছিল তাদের যারা ছিল অচ্ছুৎ। অচ্ছুৎ গণ্য করা হত তাদের যারা এই চতুর্বর্ণের কোনটার মধ্যেই পড়ে না। অচ্ছুৎরা সবচেয়ে নোংরা কাজ করতে বাধ্য থাকত। এরা হল মুচি, ম্যাথর, কাওরা বা শুকর পালক ইত্যাদি। মনে করা হত এদের গাত্র স্পর্শ করা মাত্রই কোন যে কেউ অপবিত্র হয়ে যায়। ভূমিষ্ঠ হওয়ার মূহূর্ত থেকেই অচ্ছুতের সন্তানকে অশুচি ভাবত লোকে।
ব্রাহ্মণরা তাদের মেধা ও জ্ঞান কাজে লাগাল মানবাধিকার বিরুদ্ধ আইন প্রনয়নে যেমনটা করেছিলেন হাম্বুরাবি।তারা বিভিন্ন বর্ণভূক্ত লোকদের জন্যে নির্দিষ্ট ধরণের কাজ ও আচার ব্যবহারের কঠোর নিয়ম বেঁধে দিয়েছিল যেমন-
- শরীরের সর্বোত্তম প্রত্যঙ্গ থেকে উৎপত্তি লাভের ফলেই একজন হয় ব্রাহ্মণ-সারা পৃথিবীর প্রভু। ব্রাহ্মণদের যদি কিছু ভাল লাগে, বিনা খেদে তাকে তা প্রদান করা উচিৎ।
- ঈশ্বর শুধুমাত্র একটি কর্তব্য সমাধার জন্যেই শূদ্রদের নির্দেশ দিয়েছেন: বিনয়াবনত চিত্তে তোমা অপেক্ষা উচ্চবর্ণের লোকদের সেবা কর।
- উচ্চ বর্ণদের সম্পর্কে যদি কোন শূদ্র অপমানজনক কোন কথা বলে, তবে তার মুখ উত্তপ্ত লৌহপিন্ড দ্বারা বন্ধ করে দাও। ব্রাহ্মণদের সঙ্গে তর্করত শূদ্রদের মুখ ও কানে ফুটন্ত তেল ঢেলে দিতে রাজাই আদেশ দেবেন।
- শূদ্র ব্রাহ্মণকে হাত বা ষষ্ঠি দ্বারা প্রহার করার চেষ্টা করলে শূদ্রের হাত কেটে ফেলার জন্যে যোগ্য হয়, আর রাগান্বিত হয়ে পা দ্বারা আঘাত করলে তার পা কেটে ফেলা উচিৎ।
- ব্রাহ্মণের ক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ডের স্থলে মস্তক মুন্ডনই চরম শাস্তি।
- ব্রাহ্মণকে বাদ দিয়ে ক্ষত্রিয় কখনও সাফল্য লাভ করে না এবং ক্ষত্রিয় ব্যাতিরেকে ব্রাহ্মণেরও কোন সাফল্য নেই।
- ঈশ্বরই রাজা ও ক্ষত্রিয়দের সৃষ্টি করেছেন, যাদের কাজ হল এইসব নিয়ম ঠিকমত পালিত হচ্ছে কিনা তা দেখা।
এই উপমহাদেশে আগমন কালে আর্যগণ কোনরূপ পূজার সাথে জড়িত ছিল না। তারা স্তুতি ও উৎসর্গের দ্বারা দেবতাদের অর্চণা করত মাত্র। তাদের ধর্ম একেশ্বরবাদী না হলেও তাদের মধ্যে একেশ্বরবাদের ধারণা প্রচলিত ছিল। কালক্রমে তাদের এইসব রীতিনীতি এবং চিন্তাধারা যা তারা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল, অনার্য রীতি-নীতি তাদের সমাজে প্রবেশ করাতে তার ক্রমাগত গ্রহণ ও বর্জন চলতে লাগল এবং একসময় তারা কর্মফল ও জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী হয়ে পড়ল যা বৈদিক (হিন্দু) ধর্মের জন্ম দেয়।
তবে উপমহাদেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে আর্যদের অবদান অপরিসীম। তাদের রচিত প্রথম গ্রন্থের নাম বেদ। বেদ অর্থ জ্ঞান।এই বেদ চারটি ভাগে বিভক্ত ছিল-যথা- ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ এবং অথর্ববেদ। ইতিহাস রচনায় আর্যদের অবদান না থাকলেও তাদের ধর্মগ্রন্থ, সাহিত্য ও ইতিহাস রচনায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।পরবর্তীতে বেদ আবারও চারিভাগে বিভক্ত হয়েছে। যেমন- সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ। উপনিষদ বেদের একেবারে শেষভাগে রচিত বলে একে বেদান্ত বলা হয়ে থাকে। তবে বেদ তত্বজ্ঞানের আধার হলেও এই জ্ঞানের প্রসার ও তার সুফল খুব একটা মানুষ ভোগ করতে পারেনি, কেবল এক শ্রেণীর কাছে সেগুলোর পাঠ-পঠন সীমাবদ্ধ থাকায়।
১৩০০ বিসিইর শেষ দিকে তোয়া উপত্যাকা থেকে মূসা তাওরাত কিতাব লিখিত আকারে নিয়ে এসেছিলেন ৪০ দিন সেখানে অবস্থান করে। সেটিও জ্ঞানের আধার। সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনের নানান দিক তাতে বর্ণিত হয়েছে। সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সেটি ছিল মাইল ফলক। এছাড়াও পথভ্রষ্ট মানুষের জন্যে কিতাবটি ছিল আলোক বর্তিকা বা মশাল স্বরূপ।
জন্মান্ধ গ্রীক কবি হোমার ইলিয়াদ রচনা করে ফেলেন খৃষ্টপূর্ব ৮ম শতকে অর্থাৎ রোম নগরী পত্তনের সমসাময়িক কালে। তবে শিক্ষা প্রাতিষ্ঠানিক রূপলাভ করে মূলত: নবী ওযাইয়েরের সময়কালে।তিনি সিনাগগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। (অবশ্য্ মূসার সময়ে ইস্রায়েলীরা মিসরে অবস্থানকালে নিজেদের জন্য উপাসনালয় তৈরী করে নিয়েছিল। কিন্তু মূসার কাছে ফেরাউনের যাদুকরেরা পরাজিত ও মুসলমান হয়ে গেলে ফেরাউন ইস্রোয়েলীদের উপর কঠোর বোঝা চাপিয়ে দেয় আর তারা যেন একত্রিত হতে না পারে সেজন্যে তাদের উপাসনালয়গুলো গুড়িযে দেয়া হয়। এতে খোদা তাদের নিজেদের আবাসবাটিতে উপাসনার নির্দেশ দেন।) আর ঐ সব সিনাগগের অধীনে ছিল মিদরাস, যা ছিল মূলত: ধর্মশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে সিনাগগ ও মিদরাস সাধারণতঃ উপাসনা ও ধর্মীয় শিক্ষার জন্যে সৃষ্ট হলেও সেটি ইস্রোয়েলীদের সামাজিক ও নাগরিক জীবনে দিক নির্দেশনা দেবার জন্যেও ব্যবহার করা হত।
কিন্তু ওযাইয়ের কেন হঠাৎ করে সিনাগগ ও মিদরাস প্রতিষ্ঠা করলেন? এক কথায় এর উত্তর হবে- ধর্মীয়জ্ঞান ও মূল্যবোধকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে, যাতে তা বংশ পরস্পরায় এগিয়ে যায়।
ইহুদিরা ছিল খোদার বেঁছে নেয়া জাতি, যারা খোদার একত্ববাদীরতার সাক্ষ্য বহন করবে অন্য জাতিদের মাঝে। বিনিময়ে তারা প্রতিজ্ঞাত দেশে বসবাস করবে এবং সেখানকার দুধ-মধু খেতে থাকবে। কিন্তু তারা নিজেদের স্বকীয়তা আর ধরে রাখতে পারেনি। তারা কনানীয়দের প্রলুব্ধকারী ধর্মীয় রীতিনীতির ফাঁদে পড়ে। তারা তাদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শংকর জাতির সৃষ্টি করে। কিতাবকে পেছনে ফেলে রাখে এবং খোদার স্মরণ থেকে দূরে সরে আসে। ফলে খোদা তাঁর সাথে কৃতচুক্তি ভঙ্গ করার জন্য তাদের উপর প্রতিশোধ নেন। নেঁবু চাঁদ নেজ্জ্বার এসে তাদেরকে কচুকাটা করে শহরটাকে গুড়িয়ে দিয়ে পুড়িয়ে দেন। আর বাকীদেরকে নাঙ্গা করে শিকলে বেঁধে নিয়ে গিয়ে তার রাজ্যের নানান প্রান্তে নির্বাসিত করেন। ফলে তারা তাদের কিতাব চিরতরে হারিয়ে ফেলে। আর ৭০ বৎসর নির্বাসন দন্ড ভোগ করার পর সাইরাস তাদেরকে নিজভূমিতে ফিরে যাবার অনুমতি দেন। কিন্তু তারা তাদের মাতৃভূমিতে, ফিরে এল বটে কিন্তু খোদার গৃহ প্রাঙ্গনে দাঁড়াবার সাহস তাদের ছিল না, কেননা, তাদের কাছে না অাছে কোন কিতাব না অাছে ধর্মের কোন জ্ঞান। সুতরাং নবী ওযাইযের নিজের স্মরণ থেকে মূসার কিতাবটি পুন:রায় লেখেন এবং সিনাগগ ও মিদরাস (মাদ্রাসা) প্রতিষ্ঠা করেন তাদেরকে উপাসনা পদ্ধতি ও ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা দেবার জন্যে, যাতে তারা আর কখনও তা বিস্মৃত না হয় এবং বংশ পরস্পরায় তাদের ঐ জ্ঞান বহমান থাকে।
৬০০ বিসিই ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্মীয় চিন্তার জগতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হল। ব্রাহ্মণ্য আধিপত্যের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে গড়ে উঠা উষ্মা ও ক্ষোভ এই নূতন ধর্মীয় মতবাদের উদ্ভবের কারণ। এই ধর্মীয় বিপ্লব সাধিত হল ক্ষত্রিয়দের দ্বারা। বৈদিক ধর্মের জটিলতা, বাহ্যিক আড়ম্বর সর্বস্ব ধর্মীয় বিধি, যাগ-যজ্ঞাদি, নরবলি, সর্বোপরি পুরোহিত শ্রেণীর প্রাধান্য তাদেরকে ধর্মীয় মুক্তির পথ সন্ধানে উদ্বুদ্ধ করেছিল। প্রথম তীর্থাঙ্কর বা মুক্তির পথপ্রদর্শক ছিলেন ঋষভদেব। পরবর্তীতে একে একে আরও ২৩ জন তীর্থাঙ্করের আগমন ঘটে ধরণীতে। সর্বশেষ তীর্থাঙ্কর মহাবীরের পূর্ববর্তী তীর্থাঙ্কর ছিলেন পার্শ্বনাথ। তার জন্ম ক্ষত্রিয় রাজবংশে। তিরিশ বৎসর বয়সে তিনি রাজপরিবারের বিলাসী জীবন-যাপন পরিত্যাগ করে সত্য সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে একসময় তিনি বর্তমান কাশীর নিকটবর্তী পরেশনাথ পর্বতে কঠোর সাধনায় লিপ্ত হন এবং সিদ্ধি লাভ করেন। অহিংসা, সত্য, অন্তেয় (অচৌর্য) ও অপরিগ্রহ (সন্ন্যাস) এই চারটি তার প্রচারিত ধর্মের মূল মন্ত্র যা চতুর্যাম নামে পরিচিত।
সর্বশেষ তীর্থাঙ্কর ছিলেন মহাবীর। পার্শ্বনাথের মৃত্যুর আড়াই‘শ বৎসর পর তার আবির্ভাব ঘটে। তার বাল্যনাম ছিল বর্ধমান। তিনি বর্তমান উত্তর বিহারের বৈশালীর নিকটবর্তী কুন্দপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সিদ্ধার্থ ছিলেন একজন ক্ষত্রিয় দলপতি। আর তার মাতা ত্রিশলা ছিলেন বৈশালী রাজের ভগ্নি।
মহাবীর যশোদা নাম্নী এক রাজকন্যার পাণি গ্রহণ করেছিলেন। কয়েক বৎসর সংসার যাপনের পর তাদের এক কন্যা সন্তান জন্মগ্রহন করে। এই সন্তান জন্মের পরপরই ৩০ বৎসর বয়সে তিনি সংসারত্যাগী হন।
দীর্ঘ বার বৎসর কঠোর সাধনার পরও তিনি দিব্যজ্ঞান লাভ করতে না পেরে গোসাল নামের এক সন্যাসীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে ছয়মাস তার সাথে অতিবাহিত করেন। ইতিমধ্যে তার সন্যাস জীবনের তের বৎসর পূর্ণ হল। এসময় তিনি পূর্ব ভারতের ঋজুপালিকা নদীর তীরে বর্তমান পরেশনাথ পাহাড়ের নিকটবর্তীতে পুন:রায় কঠোর সাধনায় নিমগ্ন হলে, এবার তিনি দিব্যজ্ঞান লাভে সমর্থ হন। মহাবীর সকল রিপু জয় করেছিলেন বলে লোকেরা তাকে জিন বা জয়ী বলত।
মহাবীরের প্রচারিত ধর্মমত ’নিগ্রন্থ’ বা সম্পর্কমুক্ত নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু কালক্রমে তার জিন উপাধির অনুসরণে এই ধর্ম জৈনধর্ম নামে পরিচিতি লাভ করে। মহাবীরের নামের সাথে জৈনধর্ম পরিচিতি লাভ করলেও প্রকৃতপক্ষে পার্শ্বনাথ এই ধর্মের মূল ভিত্তি স্থাপন করে গিয়েছিলেন। তার প্রবর্তিত চতুর্যামের সাথে মহাবীর কেবল ব্রহ্মচর্য সংযুক্তি করেন।
মহাবীর পার্থিব ভোগ-বিলাসের সাথে সাথে পরিধানের বস্ত্র পর্যন্ত ত্যাগ করেছিলেন। এ কারণে তার অনুসারীরা দ্বিগম্বর নামে পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে জৈনদের মধ্যে শ্বেতাম্বর নামে অপর এক শাখার উদ্ভব হয়।
বৈদিক ধর্মাবলম্বীদের সাথে জৈনদের মূল পার্থক্য হল-এরা বেদের কর্তৃত্ব স্বীকার করে না এবং দেবতার সন্তুষ্টি কামনায় পূজা ও পশু বলি করে না। তাদের চরম উদ্দেশ্য সিদ্ধি বা নির্বাণ লাভ করা। আর এই সিদ্ধি লাভের উপায় হল তিনটি-সৎকর্ম, কৃচ্ছসাধন ও কঠোর সংযম। সংসারে বসবাস করে সিদ্ধিলাভ সম্ভব নয়। তাই সংসারত্যাগী জৈনরা মঠ, আশ্রম বা সঙ্ঘে বাস করে।
জৈনরা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না। তাদের মতে বিশুদ্ধ বা পূর্ণ বিকশিত মানবাত্মাই দেবতা। তারা বৈদিক ধর্মাবলম্বীদের মত পুনর্জন্ম ও কর্মবাদে বিশ্বাসী। মূল, সূত্র, রঙ্গ ও উপাঙ্গ -এই চারটি জৈনদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ।
বুদ্ধ বোধি বা দিব্যজ্ঞান লাভ করেন ৪৮৩ খ্রী:পূ: ৩৫ বৎসর বয়সে। অত:পর তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেন ধ্যানলব্ধ জ্ঞান তথা মহাসত্য প্রচারে। তার বাণী ছিল-
ক) হিংসা কোরও না।
খ) চুরি কোরও না।
গ) মিথ্যে বলিও না।
ঘ) পরনিন্দা কোরও না।
ঙ) জীব হত্যা মহাপাপ।
চ) ধনসম্পদ পরিত্যাগ কর। এবং
ছ) ব্রহ্মচর্য পালন কর।
সূদীর্ঘ ৪৫ বৎসর ধর্ম প্রচারের পর কূশী নগরে ৪৪৮ খ্রীঃপূঃ ৮০ বৎসর বয়সে গৌতম বুদ্ধ ইহধাম পরিত্যাগ করেন। তার এই তিরোধান বৌদ্ধদের নিকট 'মহাপরিনির্বাণ' নামে অভিহিত।
ক) অন্যায় কার্য থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
খ) মনকে পবিত্র রাখা। এবং
গ) যা কিছু ভাল তা অন্তরে সঞ্চয় করা।
বুদ্ধ ছিলেন বাস্তবধর্মী সংস্কারক। মানুষের সংসার জীবনের দুঃখ কষ্ট থেকে মুক্তির লক্ষ্যে তিনি চারটি মহা সত্যের প্রচার ও ব্যাখ্যা করেন। এগুলি হল-
ক) সংসারে দুঃখ নিত্য বর্তমান।
খ) দুঃখের নিশ্চয়ই কারণ আছে;
গ) দুঃখের নিবৃত্তিই মানুষের একান্ত কাম্য। এবং
ঘ) দুঃখ নিবৃত্তির যথার্থ উপায় কি তা জানা আবশ্যক।
বুদ্ধের মতে মানুষের দুঃখ কষ্টের মূল কারণ হল তার অজ্ঞতা এবং কোন কিছুর প্রতি আসক্তি। তনহা বা আকাঙ্খার ফলে দুঃখের সূচনা। সুতরাং আকাঙ্খার নিবৃত্তিতে দুঃখেরও নিবৃত্তি। আর এই আকাঙ্খার কবল হতে মুক্তিলাভ করা যায় ৮টি উপায় অবলম্বনের দ্বারা-যা 'অষ্টাঙ্গিক মার্গ' নামে পরিচিত। এগুলি হল-
খ) সৎ চিন্তা।
গ) সৎ বাক্য।
ঘ) সদ্ব্যবহার।
ঙ) সৎ জীবন-যাপন।
চ) সৎ প্রচেষ্টা।
ছ) সৎ দর্শণ।
জ) সম্যক সমাধি।
গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর পর তার শিষ্যগণ রাজগৃহ নামক স্থানে এক মহাসভার আয়োজন করে। এই সভা 'বৌদ্ধ সংগীতি' নামে পরিচিত। এই সভায় সকলে বুদ্ধের মূল্যবান উপদেশবাণী গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। সুতরাং এক মহাগ্রন্থ রচিত হল- যা 'ত্রিপিটক' নামে পরিচিত।
যা হোক, বুদ্ধের মৃত্যুর পর বিভিন্ন সময়ে তার বাণী নিয়ে মতভেদ দেখা দিলে একাধিকবার বৌদ্ধ সংগীতি আহুত হয়। বৈশালীতে ২য় সংগীতি, সম্রাট অশোকের সময় পাটালীপুত্র নগরীতে ৩য় সংগীতি এবং কাশ্মীরে কৃষাণরাজ কনিস্কের সময় ৪র্থ সংগীতি আহুত হয়েছিল। ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে এসব সংগীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কনিস্কের রাজত্বকালে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীগণ দু‘ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল যথা-
ক) হীনযানঃ এতকাল বুদ্ধের মূর্ত্তি বা প্রতিকৃতি নির্মাণ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। বুদ্ধের নিরাকার উপাসনাকে হীনযান বা সুক্ষ্ম ধর্মপথ নামে অভিহিত হত। এ পথে আত্মার পরমশুদ্ধির মাধ্যমে নির্বাণ লাভের চেষ্টা করা হত।
খ) মহাযানঃ মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর বিদেশীদের সংমিশ্রণে বৌদ্ধধর্মের উপাসনা পদ্ধতির উপর যে বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তাই মহাযান। এ পদ্ধতিতে বুদ্ধের প্রতিকৃতি নির্মাণের মাধ্যমে উপাসনা করা হত।
যে সময়ে বুদ্ধ তার বোধি প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন, সেই সময়কালে হঠাৎ করে একের পর এক সূর্য্য উদিত হতে থাকে গ্রীসে। আর ঐ সব সূর্য্য থেকে ছড়িয়ে পড়া জ্ঞানের আলো ছাপিয়ে গেল মিসর ও পারস্য সভ্যতার সকল জ্ঞান বিজ্ঞানকে।হোমারের পর থেকে একে একে নানান মনীষীর আগমন ঘটতে থাকল সেখানে। এসব গূণীজন যেমন জ্ঞান পূজারী ছিলেন, তেমনি জ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাও বুঝতেন। সক্রেটিস, এরিস্টোটলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের জন্যে নিজস্ব স্কুল ছিল।
তবে অজ্ঞানতার মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়া সহজ ছিল না। কেননা, তাদের শিক্ষা পৌত্তলিক অসার ধর্মমত বিরূদ্ধ হওয়ায় নগর ও রাষ্ট্রের রোষানলে পড়ে মৃত্যুকে বরণ করতে হয় তাদের অনেককে। সক্রেটিসকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় ইম্পিটির অভিযোগ এনে, যুবসমাজকে বিপথগামী করার দায়ে।
তা এই ইম্পিটি আবার কি? Impiety is a perceived lack of proper respect for something considered sacred. It is often closely associated with sacrilege, though it is not necessarily a physical action. It was believed that impious actions such as disrespect towards sacred objects or priests could bring down the wrath of the gods. Impiety was often used to prosecute atheists, who were widely discriminated against.
সামন্তপ্রথা। |
পঞ্চম শতাব্দীতে সামন্তবাদের (Feodalism- লাতিন শব্দ ফিউডাম অর্থ ভূ-সম্পত্তি।) উত্থান ঘটে। এই সামন্তবাদ একটা আর্থ সামাজিক ব্যবস্থা বা প্রথা। এই প্রথার সূচণা ঘটে সর্বপ্রথম ইউরোপে।
সামন্তপ্রথা অনুযায়ী রাষ্ট্র বা রাজাই সকল সম্পত্তির মালিক। রাজা কতিপয় শর্তের বিনিময়ে তার অধীনস্ত একটি গোষ্ঠির মাধ্যমে জমি চাষাবাদের জন্যে বিতরণ করতেন। রাজার অনুগত ঐ গোষ্ঠিই সামন্ত প্রভূ।
সামন্ত ব্যবস্থায় রাজা ছিলেন লর্ড তার অধীনস্ত ছিল টেনান্ট ইন চিফ, তার ভ্যাসাল ছিল কাউন্ট, ডিউক, আর্ল বা মারগ্রেভ। আর তাদের ভ্যাসাল ছিল ব্যারণ বা নাইটসগণ যাদের অধীনে ছিল জমির মালিকানাবিহীন কৃষক।
আর্যভট্ট। |
রাজতন্ত্র উত্থানের পর থেকেই রাজ্য পরিচালনা তথা নূতন আইন প্রনয়ন ও বিচার প্রভৃতি কার্য সম্পাদন করতে দক্ষ ও বুদ্ধিমান লোকের প্রয়োজন হয়। অত:পর সামন্ততন্ত্রের যুগে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটায়, হিসাব-নিকাশ ও ব্যবসা পরিচালনার জন্যে এই ধরণের লোকের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে দক্ষ জনগোষ্ঠি তৈরী করতে অধিক হারে স্কুল গড়ে উঠতে লাগল। এইসব স্কুলে শিক্ষার্থীরা মূলত: লিখতে শেখা, সাধারণ হিসেব নিকেশ জন্যে যোগ-বিয়োগ, গুন, ভাগ করতে শেখা (ভারতীয় গণিতজ্ঞ আর্যভট্টের ৫০০ সিইর দিকে শুন্য আবিস্কারের ফলে গণিতের এইসব হিসেব-নিকেশ সহজ হয়েছিল।) এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের কিছু প্রাথমিক ধারণা লাভ করত মাত্র।
মধ্যযুগে শহরের উৎপত্তি ও বিকাশের ফলে উচ্চতর শিক্ষিত মানুষের চাহিদা বেড়ে যায়। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে প্রাপ্ত আয়-ব্যয় হিসাব নিকাশ করার জন্যে এবং নগর পরিষদের কাজকর্ম পরিচালনার জন্যে যে মানের শিক্ষা-দীক্ষা ও দক্ষতা অর্জণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় তা স্কুলগুলো পূরণ করতে সক্ষম ছিল না। সুতরাং যুগের চাহিদা পূরণে উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে শুরু করে।
পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় |
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৌদ্ধদর্শন, বৈদিক দর্শন, আইন, তর্কশাস্ত্র, অর্থশাস্ত্র (অর্থনীতি ও রাজনীতি), গণিত, চিত্র ও শিল্পকলা, সাহিত্য, ব্যাকরণ, জ্যোতির্বিদ্যা এবং ভেষজবিদ্যা সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া হত। পরপরই আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- তক্ষশীলা, উজ্জ্বয়িন ও বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়।
ইউরোপে দশম শতাব্দীর পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ গড়ে উঠতে থাকে। ১২০০ সিই প্যারি বিশ্ববিদ্যালয়টি রাজার নিকট থেকে বৈধতার সনদলাভ করে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টি অনুষদ বা ফ্যাকাল্টি ছিল। ল্যাটিন শব্দ facultas অর্থ দক্ষতা। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি হচ্ছে সেটি, যেখানে নির্দিষ্ট কোন বিষয় নিয়ে পাঠ দানের দক্ষতা রয়েছে।
প্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি অনুষদ ছিল -একটি জুনিয়র অনুষদ ও অপর তিনটি সিনিয়র অনুষদ। জুনিয়র অনুষদে শিক্ষার্থীরা ৭টি মুক্ত কলার বিষয়ে এবং সিনিয়র অনুষদ তিনটিতে ধর্মতত্ব, মানবিক আইনের বিজ্ঞান, দর্শন ও চিকিৎসা বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিষয়ে পড়তে পারত। তবে জুনিয়র অনুষদের কোর্স সমাপ্ত না করে কেউ সিনিয়র অনুষদে ভর্তি হতে পারত না।
এরিস্টটল। |
ক্যাথলিক গির্জা শুরু থেকেই নিরন্তর ভাবে চেষ্টা করছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করতে যেমনটা তারা করতে সক্ষম হয়েছিল স্কূলগুলোর উপর। ইউরোপের সকল স্কুলই ছিল গির্জার অধীনে। যাইহোক, গির্জার এই চেষ্টা শেষপর্যন্ত চরম আদর্শগত দ্বন্দ্বে রূপ নেয়। এই প্রবনতার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছিল প্যারি বিশ্ববিদ্যালয়। এরিস্টটল (Aristotle)-কে নিয়েই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ত্রয়োদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে দু’টি পৃথক স্কুল অব থটস তৈরী হয়। যার একটির নেতৃত্ব দেয় গোঁড়াপন্থী ক্যাথলিক গ্রেট আলবের্ত (১১৯৩-১২৮০) এবং তার ছাত্র থমাস একুইনিস (১২১৫-১২৭৪)। তারা দু’জনই এরিস্টটলের রচনাবলীকে গির্জার শিক্ষার আদর্শের ধারক ও বাহক বলে প্রমান করতে চেষ্টা করেন। অথচ এরিস্টটলের জীবনাকালে (৩৮৪-৩২২বিসিই) ক্যাথলিক ধর্মের উৎপত্তিই ঘটেনি কিম্বা গ্রীক দর্শন চিন্তায় ধর্মের কোন প্রভাব পরিলক্ষিত হয়নি।
ইবনে রূশদ। |
বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে গির্জার অন্ধতত্ত্ববাদ (Dogmatism) দ্বারা বিজ্ঞান চিন্তাকে রূদ্ধ করার চেষ্টা চললে স্কলাস্টিক পদ্ধতিতে পড়ানোর প্রচলন শুরু হয়। এই পদ্ধতিতে পাঠ শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে তর্কশাস্ত্রীয় চিন্তা চেতনার প্রসার ঘটাতে থাকে।
স্কলাস্টিকবাদের ইতিবাচক দিক হচ্ছে যে, তা একদিকে যেমন শিক্ষাথীদেরকে প্রাচীন দর্শণের সাথে পরিচিত হতে সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়, অন্যদিকে জীবনের কিছু সত্য সম্পর্কে নুতন ভাবে ভাবনা-চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করে।
মূল:কথা, গির্জা ও ধর্ম যাজকদের বাড়াবাড়ির ফলে জ্ঞান জগতের বিকাশ বার বার রূদ্ধ হয়ে পড়েছিল। বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে বিরোধের কারণে অনেক বিজ্ঞানীকে নাজেহাল ও মৃত্যুবরণ করতে হয়। কেননা তারা ধর্মের অপব্যাখ্যা করে প্রনয়ণ করে নিয়েছিল পৈচাশিক শারিরিক অত্যাচারের মাধ্যমে মানুষ খুণের লাইসেন্স তথা ’জুডিকাম ডেই’ (Judicium Dei,-The trial of guilt by direct appeal to God, under the notion that He would defend the right even by miracle. There were numerous methods of appeal, as by single combat, ordeal by water or fire, eating a crust of bread, standing with arms extended, consulting the Bible, etc., etc.) ফলত: প্রাচীন গ্রীক, রোমান সাহিত্য, দর্শন ও শিল্পকলায় উজ্জীবিত মনীষীগণ তাদের লেখনী ও শিল্পকর্মে মনুষ্যত্বের অবমাননার বিরুদ্ধে, মানুষের স্বাধীন জ্ঞান বিকাশের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। আর তাই আজ আমরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখার নানা সুফল উপভোগ করতে পারছি।
সমাপ্ত।
ছবি: Wikipedia, introduceofenglishculture.blogspot,
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন