২২ এপ্রিল, ২০১৭

Witchcraft: জাদুর অশুভ আছর- প্রতিকার ও প্রতিরোধ।

ব কিছুরই প্রতিকার আছে, জাদু দিয়েই জাদুকে প্রতিহত করা যায়। যান্নি ও যাম্ব্রির জাদুকে মুসা প্রতিহত করেছিলেন এমনিভাবেই। প্রচীনকাল থেকেই মানুষ কাল জাদু ব্যবহার করে আসছে এবং তার প্রতিকার ও প্রতিহতের পথও তারা খুঁজে নিয়েছে তাদের মত, পথ ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে। প্রাচীন সুমেরিয়ানগণ বিশ্বাস করত বাণ, অভিশাপ, অশুভ আছর বা কাল জাদুর মূলে হচ্ছে লিলিথ। [সুমেরিয়ান ভাষায় লিল অর্থ হাওয়া (বায়ূ), শ্বাস উভয়ই। অন্যদিকে ভাবার্থে হাওয়া বা বায়ূর উপাদান এবং আত্মার উপাদান সমার্থক হওয়ায় হিব্রুতে লিলিথ [লামেদ (L), ইয়োদ (I), লামেদ (L), ভাব (O), টাউ (Th)] উচ্চারণ লিলোথ, যার অর্থ আত্মা (স্পিরিট) বা জ্বিণ।]

জাদুমন্ত্রের বাটি
অন্যদিকে ইহুদিগণ বিশ্বাস করত লিলিথ রাতের প্রেত, গর্ভধারিণী ও নবজাতকের শত্রু। এ কারণে তারা প্রসূতি কক্ষের চারিকোণে সূত্র লিখে রাখে তাকে বিতাড়নের উদ্দেশ্যে। আর এসব সূত্র সাধারণত: লেখা হত একটি পাত্রে, যাকে ইনক্যান্টেশান বোল বা জাদুমন্ত্রের বাটি বলা হত। যাহোক, শুধু গর্ভধারিণী ও নবজাতকে রক্ষায় নয় বরং জাদুমন্ত্রের বাটি বাণ, কূ-নজর, অভিশাপ, বাগদানা, অশুভ আছর বা কাল যাদু থেকে মুক্তির জন্যেও সুমেয়িানগণ এবং ব্যবিলনে নির্বাসিত ইহুদিরা ব্যবহার করত। ইস্টার ও নাহিদের পুত্র, বহরাম-গুশনপের সুরক্ষায় একটি জাদুমন্ত্রের বাটি লেখা হয়েছে এভাবে-

"You are bound and sealed,

     all you demons and devils and liliths,
by that hard and strong, mighty and powerful bond 
     with which are tied Sison and Sisin....

The evil Lilith, who causes 

     the hearts of men to go astray and appears
     in the dream of the night and in the vision of the day,
Who burns and casts down with nightmare,
     attacks and kills children, boys an girls.

She is conquered and sealed away 

     from the house and from the threshold of 
     [Bahram-Gushnasp, the son of Ishtar-Nahid]
by the talisman of Metatron, the great prince 
     who is called the Great Healer of Mercy....

   who vanquishes demons and devils,

     black arts and mighty spells and keeps them away
     from the house and threshold of 
     [Bahram-Gushnasp, the son of Ishtar-Nahid].
Amen, Amen, Selah.

Vanquished are the black arts and mighty spells.
Vanquished the bewitching women,
     they, their witchery and their spells, 
     their curses and their invocations,
     and kept away from the four walls of the house of 
     [Bahram-Gushnasp, the son of Ishtar-Nahid].

Vanquished and trampled down are the bewitching women --

     vanquished on earth and vanquished in heaven.
Vanquished are their constellations and stars.
     Bound are the works of their hands.
Amen, Amen, Selah."[১] 

ইহুদিগণ আরো বিশ্বাস করে যে, লিলিথ পুরুষের কাছে নারীরূপে এবং নারীর কাছে পুরুষরূপে আর্বিভূত হয়ে রাত্রিযাপন করে।[২] জোহারে বলা হয়েছে- সে নারী-পুরুষকে প্ররোচিত করে স্বপ্নের মধ্যে এবং তাদের শুক্রাণু বা ডিম্বানু থেকে উৎপন্ন করে তার অশরীরি প্রেত সন্তান। অমাবশ্যায় তার কামনা বাসনা চরমে পৌঁছে অর্থাৎ সে ঐসময় পূর্ণ ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়[৩]

লিলিথের অপতৎপরতার কারণে মাতা ও গর্ভের সন্তানকে নিরাপদ রাখতে জোহার স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের পূর্বে এক বিশেষ রীতি পালনের পরামর্শ দিয়েছে। ঐ রীতি অনুসারে স্বামীকে খোদার প্রতি মনোনিবেশ করে নীচের আয়াতটি পাঠ করতে বলা হয়েছে:

“Veiled in velvet, are you here?
Loosened, loosened (be your spell)!
Go not in and go not out!
Let there be none of you and
nothing of your part!”[৪] 

এমনিভাবে ইসলামেও স্ত্রীসহবাসের পূর্বে এই দোয়াটি পাঠ করতে বলা হয়েছে: " بِسْمِ اللَّهِ ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ ، وَجَنِّبْ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا"[৫] আবার নবীজীর বরাত দিয়ে একটি হাদিসে বলা হয়েছে- “যদি তোমাদের কেউ স্ত্রী সহবাসের সময় বলে بِاسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبْ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا এবং তাদের ভাগ্যে সন্তান নির্ধারণ করা হয়, তবে শয়তান কখনো তার ক্ষতি করবে না। অর্থাৎ সে তার উপর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হবে না। আবার কেউ কেউ لَمْ يَضُرَّهُ شَيْطَانٌ أَبَدًا -এর অর্থ করেছেন- শয়তান তাকে পরাস্ত করতে পারবে না, অথবা, শয়তান তাকে কুফরির মাধ্যমে গোমরাহ করতে পারবে না। আর ইবনে দাকিকুলের মতামত হল: ব্যাপক অর্থে সে দ্বীনি ক্ষতিগ্রস্থ হবে না অর্থাৎ শয়তানের প্ররোচনায় সে এমন কোন কাজ করবে না যাতে তার শরীর ও বিবেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এখন প্রশ্ন হল, যারা যৌণ উত্তেজনায় বশে সহবাসের আগে ঐসব দোয়া-ফোয়া আওড়াতে ভুলে গেল, তবে তাদের ঘর আলোকিত করে আসা ফুটফুটে সন্তানদের ভাগ্যে কি ঘটবে?

ভয় নেই, এরও পথ বাৎলে দেয়া হয়েছে বেনসিরার “দ্যা আলফাবেট” পুস্তকে। তাতে বলা হয়েছে- “লিলিথ দুগ্ধপোষ্য শিশুদের ব্যাধি সৃষ্টির কারণ এবং জন্ম নেয়া শিশুটি পুত্রসন্তান হলে তার উপর তার ক্ষমতা থাকে জন্মের আট দিন পর্যন্ত, (একারণেই কি জন্মের আট দিনের দিন শিশুর খৎনা করার জন্য তাওরাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে?) আর কন্যা হলে বিশ দিন।”[6] 

-সুতরাং সন্তান জন্মগ্রহণের পর লিলিথের সকল অনিষ্ট থেকে শিশুকে রক্ষার জন্য কোন কাগজে বা মৃৎপাত্রে জিব্রাইল, মিকাইল ও আজ্রাইলের নাম বা তাদের সনাক্তকরণ কোন চিহ্ন এঁকে দিলে ঐ সন্তান লিলিথের হাত থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে। আর বেনসিরা এসব এঁকেই তো নেবু চাঁদ নেজ্জারের পুত্রকে সুস্থ্য করেছিলেন।

অবশ্য শিশুসন্তানকে শয়তানের হাত থেকে নিরাপদ রাখার আরও পথ রয়েছে। খোদার কাছে সন্তানের নিরাপত্তা চাইলে তিনিও তা দেন। হান্নার কথা কি মনে নেই? সে সন্তান জন্মদানের পর বলেছিল- “হে খোদা, আমি তো কন্যাসন্তান প্রসব করেছি! আমি তার নাম রাখলাম মরিয়ম এবং আমি তাকে ও তার বংশধরকে বিতাড়িত শয়তানের হাত থেকে তোমার আশ্রয়ে সমর্পণ করলাম।”[7]

অশুভ শক্তি লিলিথের উপাসনা করা খুব সহজ। ভরসন্ধ্যায় তার মূর্তির দু’দিকে দু’টো মোমবাতি জ্বালিয়ে দিলেই তাকে পূঁজারী হিসেবে গ্রহণ করে সে। চরম অশুভ বলে যুগের পর যুগ ইহুদি ও খ্রিষ্টান ধর্মগুরুরা তার সবমূর্তি ধ্বংসের অধীন করেছিল। যতদূর জানা যায়, লিলিথ তার কোনো পূজারীকেই সে বেশীদিন বাঁচতে দিত না। ডেভিড বার্ণেটের মতে লিলিথের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পেতে তাকে এ ধরণের প্রার্থণা উপহার দেবার প্রথাও প্রচলিত ছিল-

“Great is the daughter of Heaven who tortures babies
Her hand is a net, her embrace is death
She is cruel, raging, angry, predatory
A runner, a thief is the daughter of Heaven
She touches the bellies of women in labor
She pulls out the pregnant women's baby
The daughter of Heaven is one of the Gods, her brothers
With no child of her own.
Her head is a lion's head
Her body is a donkey's body
She roars like a lion
She constantly howls like a demon-dog.”[৮]

আবার কুকুরও বিপদ ও অপশক্তি দূর করতে সক্ষম বলে জানা যায়। কথিত আছে, আদম-হাওয়াকে রক্ষা করতে কুকুর সৃষ্টি করেছিলেন খোদা। একটি রেওয়াতে আলী ইবনে আবি তালিবের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে- 

আদম ও হাওয়াকে যখন জান্নাত থেকে বহিস্কার করা হয়, তখন শয়তান পৃথিবীর জন্তু-জানোয়ারদেরকে উৎসাহিত করে হুংকার ও সহিংস আক্রমণ দ্বারা আদম দম্পতিকে গ্রাস করতে। ঐসময় তার মুখ থেকে লালা বেরিয়ে ছিঁটকে আসে এবং খোদা তা থেকে একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী কুকুর সৃষ্টি করেন। তারপর তিনি পুরুষটিকে আদমের এবং স্ত্রীটিকে হাওয়ার প্রহরীরূপে পাঠিয়ে দেন। এভাবে কুকুর এবং বন্যপ্রাণীর মধ্যে শত্রুতার সূচনা হয়েছিল।[৯] কুকুর শয়তানের বিরোধিতায় মোরগকে সহযোগীতা করে, আর তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তি দ্বারা অপশক্তি বিতাড়িত করতেও সক্ষম হয়[১০]

কুকুরের পাতলা দুধ জাদুগ্রস্থের মাথায় ঢাললে এবং সন্দেহভাজন কোন ভৌতিক বাড়ির অভ্যান্তরে একটি সাদা কুকুরের বিষ্ঠা জ্বালিয়ে ধোঁয়া ছড়িয়ে দিলে মোহিনীশক্তি বিনষ্ট হয়। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে, এটি বিজ্ঞানের এই যুগে, একবিংশ শতাব্দীতেও শক্তিশালী অপশক্তি দূরকারী হিসেবে স্বীকৃত[১১] 

যতদূর জানা যায়, নবী মুহম্মদকে জাদুটোনা করা হয়েছিল। আর তারফলে তিনি মাঝে মাঝে দিশেহারা হয়ে পড়তে গুরু করেছিলেন এবং যে কাজটি করেননি তাও করেছেন বলে তার কাছে মনে হচ্ছিল। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন কেটে গেল এবং ঐ সময় পর্যন্ত জিব্রাইল তার কাছে কোন ওহী নিয়ে আগমন করেনি।

প্রায় ৬ মাস পর নবীজী একরাতে এক স্বপ্ন দেখলেন। তিনি দেখলেন দু‘ব্যক্তি তার কাছে এল। তাদের একজন তার শিয়রে বসল ও অন্যজন পায়ের কাছে। শিয়রে উপবিষ্ট ব্যক্তি অন্যজনকে বলল, ‘তার অসুখটা কি?’

সে বলল, ‘ইনি জাদুগ্রস্থ।’
প্রথম ব্যক্তি বলল, ‘কে জাদু করল?’
সে বলল, ‘ইহুদিদের মিত্র লবীদ ইবনে আ‘সামের পরিবার।’
প্রথম ব্যক্তি বলল, ‘কি বস্তুতে জাদু করেছে?’
সে বলল, ‘একটি চিরুণীতে।’
প্রথম ব্যক্তি বলল, ‘চিরুণীটি কোথায়?’
সে বলল, ‘খেজুর ফলের আবরণীতে ‘বির যরওয়ান’ কূপে।’

পরদিন নবীজী লোক পাঠিয়ে কূপ থেকে সেটি উদ্ধার করে আনান। অতঃপর যখন তার গ্রন্থিগুলো খুলে দেয়া হয়, তিনি সুস্থ্য হন। এরপর জিব্রাইল সূরা ফালাক ও নাস নিয়ে আসে এবং নবীজীকে ঘটনার আদ্যোপান্ত জানায়। 

জনৈক ইহুদি বালক নবীজীর খুঁটিনাটি কাজকর্ম করত। ইহুদি লবীদ ইবনে আ‘সাম বালকটির মাধ্যমে নবীজীর ব্যবহৃত একটি চিরুণী হস্তগত করতে সক্ষম হয়। অতঃপর তার কন্যারা একটি তাঁতের সূতায় এগারটি গ্রন্থি লাগিয়ে, প্রত্যেক গ্রন্থিতে একটি করে সূঁচ সংযুক্ত করে তাতে [মন্ত্র পড়ে] ফুঁক দিয়ে দিল। তখন লবীদ সবকিছু একটা খেঁজুর ফলের আবরণীর মধ্যে রেখে সেটি একটি পরিত্যক্ত কূপে [বির যরওয়ান] নিক্ষেপ করে এসেছিল।

অবতীর্ণ ফালাক ও নাস সূরাদ্বয় যথাক্রমে- আমি আশ্রয় গ্রহণ করেছি প্রভাতের পালনকর্তার, তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে। অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে যখন তা সমাগত হয়, গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিণীদের অনিষ্ট থেকে এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে[১২]

আমি আশ্রয় গ্রহণ করেছি মানুষের পালনকর্তার, মানুষের অধিপতির, মানুষের মা‘বুদের কাছে তার অনিষ্ট থেকে, যে কূ-মন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে জ্বিনের মধ্যে থেকে অথবা মানুষের মধ্যে থেকে[১৩]

অবশ্য অনেকের মতে- ফেরেস্তা জিব্রাইল ফালাক ও না’স সূরাদ্বয় নিয়ে এসে কি ঘটেছে তা নবীজীকে অবহিত করে। তখন নবীজী তার কয়েকজন সাহাবীসহ ঐ কূপের নিকট যান এবং কূপ থেকে তা উদ্ধার করে চূলের গ্রন্থিগুলো খুলে দেন। প্রতিটি আয়াত আবৃত্তির পর অদ্ভূতভাবে একটি করে গিঁট খুলে গিয়েছিল। আর ১১তম গিঁটটি খুলে যাবার পর তিনি কাল জাদুর আছর থেকে মুক্তি পান।[১৪]

যাহোক, নাযিলকৃত সূরা ফালাক ও সূরা না’স সম্পর্কে কথা এই যে, এ দু'টির গুরুত্ব নি:সন্দেহ অনেক। সূরা আল-ফালাক নির্দেশনা দেয় কিভাবে পার্থিব বিপদাপদ থেকে খোদায়ী নিরাপত্তা চাইতে হয় অন্যদিকে সূরা আন-নাস বাৎলে দিচ্ছে পরকালের বিপদাপদ থেকে খোদায়ী নিরাপত্তা চাওয়ার পথ। হাফেজ ইবনে কাইয়ূম বলেন- “এই সূরাদ্বয়ের উপকারীতা ও আশীর্বাদসমূহ এবং সেগুলোর প্রতি মানুষের প্রয়োজনীয়তা এমন যে, কারো যেন তাদের বাইরে স্বতন্ত্র অস্তিত্বশীলতা নেই। মানষিক ও শারিরিক বিপদাপদ এবং জাদু, মায়া ও কূ-দৃষ্টির প্রভাব দূরীকরণে এ সূরাদ্বয়ের বড় ধরণের কার্যকারীতা রয়েছে।”

অবশ্য কোরআনের আরও একটি সূরা অপশক্তির বিরুদ্ধে কাজ করে বলে ঈমাম জাফর সাদিক অভিমত দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যে প্রতিনিয়ত সূরা জ্বিণ আবৃত্তি করে সে কখনও কূ-দৃষ্টি, জাদুর প্রভাবে ভুগবে না এবং জ্বিণ ও মায়াবিনীর আছরে না পড়ে বরং মুহম্মদের সাহচর্য লাভ করবে। ও প্রভু! আমি তার সাথে অন্য কাউকে বিশ্বাস করি না আর কেবল তার দিকেই ফিরেছি অন্য কারো দিকে নয়।”[১৫]

সমাপ্ত।
সংশোধিত নয়।

উৎস:
--[বুন্দাহিসন, [২৪.৩৮; ২৪.৪৮; অনু. বাহার, পৃ.১০৩[১০] 
--টার্ণার, ডিকশনারী অফ দি এনসিয়েন্ট ডেইটি, [পৃ. ২৮৬-৮৬][৮]   
--কোরআন, -[১১৩:১-৫][১২] -[১১৪:১-৬][১৩] -[৩:৩৬][৭]
--পার্স্যিয়ান ইনক্যান্টেশান বোল, অনু. আর পাতাই।[১] 
--ইবনে কাছির, সিরাত বসূলু আল্লাহ[১৪] 
--সহিহ বুখারী, -[নম্বর, ৬৩৮৮][৫]   
--ডোনাল্ডসন, [পৃ.১৬০-৬১][১১] 
--দামিরী, [খন্ড-২, পৃ.২৯৮][৯] 
--দি আল্ফাবেট, বেন সিরা।[৬] 
--ঈমাম জাফর সাদিক[১৫] 
--সচোলেম ১৯৬৫:১৫৭[৪] 
--মন্টগোমেরী-১১৭[২] 
--জোহার।[৩] 

১৬ এপ্রিল, ২০১৭

al-Baqarah: জনৈক ইস্রায়েলীর গুপ্তহত্যা ও এক গাভী কাহিনী।

শী কিতাব কোরআনের ২য় অধ্যায়ের শিরোনাম আল-বাকারা। এরূপ নামকরণের কারণ এই যে, এই অধ্যায়ে খোদা এমন এক কাহিনী বর্ণনা করেছেন যা ঘটেছিল নবী মূসার জমানায়। আর এ ঘটনার উল্লেখ করে নবী মুহম্মদ তার শিষ্যদের সতর্ক করেন এই বলে-

আবু হুরায়রা বলেন- আমি রসূলুল্লাহকে বলতে শুনেছি: “যা আমি তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ করেছি তা এড়িয়ে চলবে, যা আদেশ করেছি, যতবেশী পার তা করবে। অতিরিক্ত প্রশ্ন এবং নবীদের সাথে তাদের মতপার্থক্য বিগতদেরকে ধ্বংস করেছে।”-[বুখারী, মুসলিম, নওয়াবী]

মূলত: যে কাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করেছে এ হাদিস, তা এই- ইস্রায়েলী এক ধনী ব্যক্তির অনিন্দ্য সুন্দর এক কন্যা ছিল। কোন পুত্র সন্তান না থাকাতে, রীতি অনুযায়ী ঐ ব্যক্তির উত্তরাধিকারী ছিল তার ভাতিজা- যে ছিল চাল-চূলোহীন। ভাতিজা তার চাচাত বোনকে বিবাহ করার স্বপ্নে বিভোর ছিল। কিন্তু চাচা বিষয়টি জানতে পেরে সম্পর্কটির সম্ভাবনা পুরোপুরি নাকচ করে দিলেন। ভাতিজা দমে যাবার পাত্র ছিল না, সে যে কোনভাবে তার লক্ষ্য পূরণ করতে চাইল। কিন্তু কোনপথ খোলা নেই দেখে সে পিথিয়ার [দেবতার সেবাদাসী, মন্দিরের নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে মনের কথা ব্যক্ত করলে তার মাধ্যমে দ্বৈববাণী পাওয়া যেত]  স্মরণাপন্ন হল। পিথিয়া তাকে জানাল- “তোমার চাচার হায়াত রয়েছে, সহসা মরবে বলে মনে হচ্ছে না। সুতরাং যদি তুমি তোমার চাচাত বোনকে বিয়ে করতেই চাও, তবে তাকে হত্যা করা ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই।” কিভাবে হত্যা করতে হবে এবং হত্যাকারীর সন্দেহ তালিকা থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখা যাবে- এ বিষয়েও পিথিয়া তাকে বিস্তারিত পরামর্শ দিল।

আর ঐ পরামর্শ বাস্তবায়নের সুযোগও এসে গেল। ইস্রায়েলী এক গোত্রের লোকজন দ্রব্য-সামগ্রী দান করার জন্যে এল। তখন ভাতিজা তার চাচাকে বলল, “হে চাচা! ইস্রায়েলী এক গোত্রের লোকেরা দ্রব্য-সামগ্রী দান করার জন্যে এসেছে। আপনি যদি আমার সাথে সেখানে যান, তবে আপনার প্রভাবে আমিও কিছু দান পেতে পারি।”

ভাতিজার প্রস্তাবে চাচা সম্মত হল। তারা উভয়ে রাতের অন্ধকারে চলল। যে বস্তিতে তারা বসবাস করত লোকজন দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে সেই বস্তিতে নয়, অন্য বস্তিতে এসেছিল। যখন তারা নিজ বস্তি পার হয়ে উক্ত বস্তির কাছাকাছি পৌঁছিল, ভাতিজা চাচাকে আক্রমণ করল এবং হত্যা করে সেখানে ফেলে রেখে বাড়ীতে চলে এল।

পরদিন প্রত্যুষে বস্তির সদর দ্বার খোলা হলে লোকেরা ঐ লাশ দেখতে পেল। আর এতে সাত সকালেই সেখানে ভীড় লেগে গেল। তারা বুঝতে পারল, রাতের অন্ধকারে কেউ একজন লোকটিকে হত্যা করে সেখানে ফেলে রেখেছে। বেলা বাড়ার আগেই লোকটির পরিচয় পাওয়া গেল বটে, কিন্তু অনেক তত্ত্ব তালাশ করেও কে হত্যা করেছে বা কেন হত্যা করেছে, সে বিষয়ে কিছুই জানা গেল না।

এদিকে ভাতিজাও সকালে তার চাচার খোঁজে বের হল, আর তথায় গিয়ে তার মৃতদেহটা দেখল। তখন সে চাচার জন্যে উচ্চঃস্বরে ক্রন্দন ও বিলাপ করতে লাগল। আর তারপর সে ও তার অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনগণ হত্যাকারীর খোঁজে নামল, কিন্তু কোন সূত্র মিলল না। প্রচলিত আইন ছিল- “যদি কোন বস্তির কাছাকাছি কোন হত্যাকান্ড ঘটে, আর যদি ঐ হত্যাকারীর কোন খোঁজ না মেলে, তবে ঐ বস্তিবাসী ঐ নিহতের পরিবারকে তার খুনের খেশারত বা রক্তমূল্য দিতে বাধ্য থাকবে।” আর তাই ভাতিজা অবশেষে ঐ বস্তিবাসীর কাছে তার চাচার রক্তমূল্য দাবী করে বসল। বস্তির লোকজন তো তার দাবী শুনে হতবাক, তারা বলল, “আল্লাহর কসম, আমরা তাকে হত্যা করিনি বা তার হত্যার সম্পর্কে আমরা কিছুই জানিনে। সকালে প্রধান ফটক খুলে বের হয়ে এসে আমরা এই অবস্থা দেখেছি। আর রাত্রে ফটক বন্ধ করার পর সকাল না হওয়া পর্যন্ত আমরা তা খুলিনে।” তারা যে কোন মূল্যে নিজেদেরকে হত্যার কোন আলামত থেকে দূরে রাখতে সচেষ্ট হল।

ইস্রায়েলীদের মধ্যে কোন নরহত্যা এক ভয়াবহ ব্যাপার! সুতরাং এ ঘটনা উত্তপ্ত বাক-বিতন্ডা ও হাতাহাতির পর উভয়পক্ষ অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ময়দানে অবতীর্ণ হওয়ার প্রস্তুতি নিল। এসময় একজন বলল, “আমাদের মধ্যে আল্লাহর রসূল বিদ্যমান থাকা অবস্থায় আমরা পরস্পর বিবাদ করে নিজেদেরকে ধ্বংস করে ফেলব কেন? চল, আমরা তার কাছে যাই। নিশ্চয়ই তিনি কোন ফয়সালা দিতে পারবেন।”

উভয়পক্ষ মূসার কছে এল। নিহত ব্যক্তির ভাতিজা বলল, “আমি তাদের বস্তির কাছে আমার চাচাকে নিহত অবস্থায় পেয়েছি। তারা তাকে হত্যা করেছে।”
ঐ বস্তিবাসী বলল, “খোদার কসম, আমরা তাকে হত্যা করিনি। আর কে হত্যা করেছে সে সম্পর্কেও কিছু অবগত নই।”

মূসা দেখলেন কোন তথ্য প্রমাণ বা এমন কোন সূত্র নেই যা দিয়ে হত্যাকারীকে সনাক্ত করা যাবে। সুতরাং তিনি ফয়সালার জন্যে আল্লার কাছে প্রার্থনা করলেন। তারপর তিনি লোকদেরকে বললেন, “আল্লা তোমাদেরকে একটা গরু জবাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন।”

গরু জবাইয়ের কথা শুনে লোকেরা আশ্চর্য হল। আর তারা একে তামাশা মনে করে ক্রুদ্ধ হল, বলল, “হে মূসা! আমরা তোমাকে হত্যাকারী চিহ্নিত করতে বলেছি। আর তুমি আমাদেরকে বলছ, গরু জবাইয়ের কথা। তুমি কি আমাদের সাথে ঠাট্টা করছ?”
মূসা বললেন, “ঠাট্টা করে অজ্ঞ লোকেরা। আমি আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি, আমি যেন তাদের দলে না পড়ি। খোদার নির্দেশ যা আমি তাই তোমাদেরকে জানিয়েছি।”

তারা গরু জবাই করার জন্যে প্রস্তুত ছিল না। তাই এ বিষয়ে নানা রকম অবান্তর প্রশ্ন করতে লাগল। তারা বলল, “তোমার প্রতিপালকের কাছ থেকে পরিস্কার জেনে নাও, ঐ গরুটি কেমন হবে।”
মূসা বললেন, “আল্লাহ বলেছেন এ এমন একটা গরু যা বুড়োও না, অল্পবয়েসীও না-মাঝবয়সী, অতএব তোমরা যে আদেশ পেয়েছ তা পালন কর।”
আশেপাশে কি মাঝবয়সী গরুর অভাব আছে? একটা ধরে এনে জবাই কর! কিন্তু না! এ তো ইস্রায়েলী, জব্বর মাল! সুতরাং তারা বলল, “তোমার প্রতিপালককে আমাদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে বল ওর রঙ কি হবে।”
মূসা বললেন, “আল্লা বলেছেন সেটা হবে হলুদ রঙের বাছুর, তার উজ্জ্বল গাত্রবর্ণ যারাই দেখবে তারাই খুশী হবে।”
তারা বলল, “তোমার প্রতিপালককে ডেকে জিজ্ঞেস কর, গরুটা কি ধরণের। আমাদের কাছে গরু তো একইরকম। আর আল্লার ইচ্ছেয় নিশ্চয়ই আমরা পথ পাব।”
মূসা বললেন, “এ এমন একটি গরু যাকে জমি চাষে বা ক্ষেতে পানি সেচের কাজে লাগান হয়নি, সম্পূর্ণ নিখুঁত।”
তখন তারা বলল, “এখন তুমি তথ্য ঠিক এনেছ।”

কোরআনে এ ঘটনা এভাবে বর্ণিত হয়েছে- যখন তোমরা এক ব্যক্তিকে খুন করে একে অন্যের উপর দোষ চাপাচ্ছিলে, আল্লাহ তা প্রকাশ করতে চাইলেন যা তোমরা গোপন করছিলে।-(২:৭২)

আর যখন মূসা তার নিজের সম্প্রদায়কে বলেছিল, “আল্লা তোমাদেরকে একটি গরু জবেহের হুকুম দিয়েছেন।”
তারা বলেছিল, “তুমি কি আমাদের সাথে ঠাট্টা করছ?”
মূসা বলেছিল, “আমি আল্লার আশ্রয় চাচ্ছি, আমি যেন জাহেলদের দলে না পড়ি।”

তারা বলল, “তোমার প্রতিপালককের কাছ পরিস্কার থেকে জেনে নাও, ঐ গরুটি কেমন হবে।”
মূসা বলল, “আল্লা বলেছেন এ এমন একটা গরু যা বুড়োও না, অল্পবয়েসীও না- মাঝবয়সী, অতএব তোমরা যে আদেশ পেয়েছ তা পালন কর।”
তারা বলল, “তোমার প্রতিপালকের কাছে যাও ও তাঁকে জিজ্ঞেস কর,  ওর রঙ কি হবে।”
মূসা বলল, “আল্লা বলেছেন সেটা হবে হলুদ রঙের বাছুর, তার উজ্জ্বল গায়ের রঙ যারাই দেখবে তারাই খুশী হবে।”

তারা বলল, “তোমার প্রতিপালককে আমাদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে বল গরুটা কি ধরণের। আমাদের কাছে গরু তো একইরকম। আর আল্লার ইচ্ছেয় নিশ্চয়ই আমরা পথ পাব।”
মূসা বলল, “এ এমন একটি গরু যাকে জমি চাষে বা ক্ষেতে পানি সেচের কাজে লাগান হয়নি, সম্পূর্ণ নিখুঁত।”
তারা বলল, “এখন তুমি তথ্য ঠিক এনেছ।” -(২:৬৭-৭১)

ইস্রায়েলীরা গরু খুঁজতে বেরিয়ে পড়ল। কিন্তু তারা গরু বিষয়ক প্রশ্ন করতে করতে তার রূপ গুণ অনেক জটিল করে ফেলেছিল। ফলে এখন ঐ ধরনের গরু পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়ল। অনেক খোঁজাখুঁজির পর এক এতিম বালকের কাছে ঐরূপ একটি গরু পাওয়া গেল, যেটিকে সে মাঠে চরাচ্ছিল। কিন্তু সে তার গরু বিক্রি করতে রাজী হল না। তখন তারা বলল, “আল্লার কসম! আমরা যে কোন মূল্যের বিনিময়ে এটি খরিদ করে নেব।”

তারা ঐ বালককে আটক করে মূসার কাছে নিয়ে এল এবং বলল, “হে রসূলুল্লাহ! আমরা যে গরুর সন্ধান করছি তা এর কাছে রয়েছে। আমরা তার কাছ থেকে তা মূল্যের বিনিময়ে খরিদ করতে চেয়েছি, কিন্তু সে তা বিক্রি করতে অস্বীকার করছে।”
মূসা ঐ বালককে বললেন, “গাভীটি তাদের কাছে বিক্রি কর।”
সে বলল,  “ইয়া রসূলুল্লাহ! আমার মালের ব্যাপারে আমিই কি হকদার নই?”
মূসা বললেন, “নিশ্চয়ই।’
সে বলল, “সুতরাং আমি আমার গাভী বিক্রি করতে রাজী নই, তবে আমার মাতা অনুমতি দিলে ভিন্নকথা।”

বালক তার গাভী নিয়ে চলে গেলে মূসা ইস্রায়েলীদের বললেন, “তোমরা ওর পিছু পিছু যাও, আর তার মাতাকে রাজী করাও।”
সুতরাং তারা তার পিছুপিছু তার বাড়ীতে এল এবং তার মাতার কাছে গাভীটি ক্রয়ের প্রস্তাব রাখল। মাতা বিক্রয়ে সম্মত হলেন। তখন তারা তাকে গাভীর বিনিময়ে তিন সেকল অফার করল। কিন্তু তাতে মাতা অসম্মতি জ্ঞাপন করে বললেন, “ওর মূল্য আরও অনেক বেশী হবে।”
তখন তারা বিনিময় মূল্য বাড়িয়ে চলল, আর মাতাও তা অস্বীকার করতে থাকলেন। এক পর্যায়ে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে বালকটিকে বলল, “আল্লার দোহাই! তোমার মাকে বাদ দিয়ে তুমি বরং একটা ন্যায্য মূল্য হাঁক, যাতে আমরা গাভীটি খরিদ করতে পারি।”
এতে বালকটিও ক্ষিপ্ত হয়ে চেঁচিয়ে বলল, “কসম আল্লা! তোমরা ওর চামড়া ভর্ত্তি সোনা দিতে চাইলেও আমি ওকে কখনও বিক্রি করব না আমার মায়ের অনুমতি ছাড়া।”
এ কথা শুনে তার মাতা মুচকি হেসে বললেন, “তবে সেটাই গাভীর মূল্য ধার্য্য হল: ওর চামড়া ভর্ত্তি সোনা।”

অন্যকোন উপায় না থাকায় ইস্রায়েলীরা ঐ মূল্যে সম্মত হল এবং গাভীটিকে মূসার কাছে নিয়ে এল। তখন তিনি সেটিকে জবাইয়ের নির্দেশ দিলেন। যদিও তারা সেটিকে জবাই করতে প্রস্তুত ছিল না, তথাপিও তারা সেটিকে জবাই করল।

তখন মূসা গাভীর স্কন্ধদ্বয়ের মধ্যে থেকে এক টুকরো মাংস নিয়ে মৃত ব্যক্তির গায়ে স্পর্শ করানোর নির্দেশ দিলেন। আর ঐ নির্দেশ মত কাজ করতেই মৃতব্যক্তি জীবিত হয়ে উঠে বসল। তখন তাকে তার হত্যাকারীর নাম জিজ্ঞেস করা হলে সে তার ভাতিজার নাম বলে দিয়ে আবারো নিশ্চুপ হয়ে গেল।

যদিও তারা সেটিকে জবাই করতে প্রস্তুত ছিল না, তথাপিও তারা সেটিকে জবাই করল।-(২:৭৩) আর আমি বললাম, “এর (বাছুরটির) কোন অংশ দিয়ে ওকে (মৃতদেহকে) আঘাত কর।” -এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন আর তোমাদেরকে তার নিদর্শণ দেখিয়ে থাকেন যেন তোমরা বুঝতে পার।-(২:৭৩)

এদিকে প্রকৃত তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ভাতিজাও নিজের অপরাধ স্বীকার করল। আর বনি-ইস্রায়েলীরা তাকে হত্যা করে প্রতিশোধ গ্রহণ করল।

যখন কেউ খোদায়ী নিদর্শণগুলোর দিকে গভীর ভাবে লক্ষ্য করে, তখন তার অন্তর স্বশ্রদ্ধায় নত হয়ে পড়ে। আসলে, দুনিয়ার সব গোপনতত্ত্ব একমাত্র খোদা ছাড়া আর কারো পক্ষে পুরোপুরি প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কে হত্যাকারী তা খুঁজে বের করার কি অন্যকোন পথ ছিল না? ওটাই কি একমাত্র উপায় ছিল মৃতকে কথা বলানো? একটা জবাই করা গরু নিজে কি একটা মৃত মানুষকে জীবিত করতে পারে? না, আসমান ও জমিনের স্রষ্টাই হলেন প্রকৃত কারণ এসবের, আর এগুলো ঘটে একমাত্র তাঁর ইচ্ছে অনুসারে।

দেখ! খোদার ইচ্ছের বাধ্যতা একটুকরো মৃত পশুর মাংসকে কেমন অদ্ভূত ঘটনা ঘটাল। তাহলে মানুষ কেমন করে তাঁর ইচ্ছে জানার পরও তা অস্বীকার করে? আমরা গভীরভাবে এ কাহিনী পর্যালোচনা করলে দেখব, গরু এখানে সামান্য মাধ্যম ছাড়া আর কিছুই নয়। গরু কখনও কোন দেবতা হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে না। যে এক খোদার উপাসনা করে, তার উচিৎ সেই স্রষ্টাকে, যার ইচ্ছেতেই জীবন ও অস্তিত্ব লাভ, তাঁকে ভালভাবে জানা, যাতে সে কোন কার্য ও কারণের সাথে তাঁর সত্ত্বাকে গুলিয়ে না ফেলে। আর এই সাধারণ সত্যের সম্যক উপলব্ধি ব্যতিত কেউ উচ্চতর জ্ঞান ও বোধি লাভ করতে পারে না।

সমাপ্ত।
সংশোধিত নয়।

# এক বন্ধু জিজ্ঞেস করল, “এক মৃতব্যক্তির কথায় ইস্রায়েলীরা একজনকে হত্যা করল?”

@ আমি বললাম, “আমরা আমাদের আর্টিকেলে বলেছি যে, সত্য যখন প্রকাশ হল এবং হত্যাকারী চিহিৃত হল সূত্র ধরে, যা অস্বীকার করার কোন উপায় ছিল না, কেননা, তা ছিল সত্য সাক্ষ্য যা খোদা তাঁর রসূলের উপস্থিতিতে মৃত মানুষকে দিয়ে কথা বলিয়ে তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন-সুতরাং কে তাতে দ্বি-মত করবে? তাছাড়া, প্রকৃত তথ্য ফাঁস হওয়ায় ভাতিজাও তার অপরাধ স্বীকার করেছিল।এক কথায়- এখানে আল্লাহ তাঁর রসূলের মাধ্যমে নিহত ব্যক্তির সাক্ষ্যের ভিত্তিতে হত্যাকারী চিহিৃত করেছেন, ফলে তা গ্রহণীয় হয়েছে নতুবা, শরিয়ত সম্মত স্বাক্ষী ছাড়া কোন জবানবন্দীই হত্যাকান্ড প্রমানের জন্যে যথেষ্ট বিবেচিত হতে পারে না। 


আর তুমি কেনই বা অবাক হচ্ছ?
কোরআনের অনুবাদকারী আহমেদ আলী কি আস্ত একটা পুসি নয়? আমরা এখানে ঐ ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না কিভাবে তিনি শব্দের সহজ অর্থ এড়িয়ে, সমার্থক শব্দকে মুচড়িয়ে এক ভিন্নার্থে নিয়ে যান। আর কেনই বা যাব? তুমি কি দেখনি কিভাবে তিনি “গোটা এক নারী সমান আধা পুরুষ” বিষয়টি মূল্যায়ণ করতে চেষ্টা করেছেন এ কথা বলে, কারণ বাণিজ্যিক বিষয়ে মহিলারা গুলিয়ে ফেলেন!!

হ্যাঁ, তিনি তেমনটি আবারো করেছেন। নীচে তার কোরাণিক আয়াতের অনুবাদ সংস্করণ যা আমরা উপরে ব্যবহার করেছি-

যখন তোমরা এক ব্যক্তিকে খুন করে একে অন্যের উপর দোষ চাপাচ্ছিলে, আল্লাহ তা প্রকাশ করতে চাইলেন যা তোমরা গোপন করছিলে। [২:৭২] We had pronounced already: “Slay (the murderer) for (taking a life).” Thus God preserves life from death and shows you His signs that you may understand."- [২:৭৩]

সুতরাং ইহুদিদের দোষটা কোথায়?

# আরেক বন্ধু বলল, "ব্রাদার এ কাহিনীর তাৎপর্য কি?”

@  আমি বললাম, “এ কাহিনী আমাদেরকে এ শিক্ষা দিচ্ছে না যে, খোদা আলৌকিক কাজ করতে পারেন। এর অবতারণা এ কারণে, যেন আমরা ইহুদিদের স্বভাব সম্পর্কে জ্ঞাত হই এবং খোদার মহিমার বিষয়েও সম্যক উপলব্ধি লাভ করি।

“চিতা তার দাগ লুকাতে পারে না।”
তেমনি, “ইহুদিদের সাথে ব্যবসায় কোন লাভ আনে না।” আর তাদের সাথে কোন ধরণের নিগোসিয়েশন প্রকৃতই চরম বিরক্তিকর। তাদের ব্যবহারে মূসার অন্তরের কান্না ঠেলে বেরিয়ে আসে এভাবে- “আল্লা যেন তাদের হৃদয়কেও রক্তাক্ত করে দেন।”

”শান্ত হও, ভাই!”
আমি এখন কোন বদ মেজাজে নেই।যাহোক, উপরের কাহিনী হল- এক ইহুদি আরেক ইহুদিকে হত্যা করে এবং তারপর খোদায়ী আইনের সাথে চালাকি খাটায়, এতে তাদের দুই গোত্রের মধ্যে যুদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়। তখন তারা মূসার কাছে আসে যেন তিনি খোদার সাহায্যে আসল হত্যাকারীকে খুঁজে বের করে দেন। আর মূসা তাদেরকে বলেন, “আল্লা তোমাদেরকে একটা গরু জবাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন।”

এখন, এটা খোদার আদেশ, সুতরাং আমরা তাদের কাছ থেকে কি আশা করতে পারি যারা খোদার বেঁছে নেয়া লোক?
তারা তখুনি গরু জবাইয়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল- এই নয় কি? কিন্তু না, ইহুদি বলে কথা! সুতরাং তারা তাদের ঘাড়ত্যাড়ামির কারণে নিগোসিয়েশন করতে লাগল।
“তোমার প্রতিপালককে ডেকে জিজ্ঞেস কর”, তারা বলে চলল
 “ঐ গরুটি কেমন হবে।”
সুতরাং মূসা আবারো তার প্রভুর কাছে গেলেন এবং ফিরে এসে তাদেরকে জানালেন, “আল্লা বলেছেন এ এমন একটা গরু যা বুড়োও না, অল্পবয়েসীও না- মাঝবয়সী। সুতরাং”, তিনি বললেন, “তোমরা যে আদেশ পেয়েছ তা পালন কর।”

এই আদেশের বক্তব্য পানির মত পরিস্কার। যে গরু দরকার তা বুড়োও না, অল্পবয়েসীও না বরং এ দু’য়ের মাঝামাঝি। সুতরাং এই বর্ণনার সাথে মিলে যায় এমন একটা গরু ধরে এনে জবাই করা তাদের দিক থেকে বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু তারা ইহুদি, যারা অভ্যস্ত খোদায়ী আদেশ অমান্য করায় অর্থাৎ তারা অভ্যাসগত সীমালংঘনকারী।

“অভ্যাসগত সীমালংঘনকারী!”
দেখ, মূসা যখন খোদায়ী কিতাব আনতে তূরপর্বতে [এ পর্বতটি লোহিত সাগরের অপরপারে অ্যারাবিয়ান মরুতে অবস্থিত] গেলেন, তখন ইহুদিরা একটা স্বর্ণময় গো-বৎস তৈরী করল তাদের দেবতা ও পথপ্রদর্শক হিসেবে এবং তারা সেটাকে পূজা করল। তুমি কি কখনও একটা গরুকে কোন গো-বৎসকে পূজা করতে দেখেছ?
“না।”
কিন্তু  ইহুদিরা সেটাই করল।

আর যখন মূসা খোদায়ী কিতাব তাদের সামনে উপস্থাপন করলেন, তারা বলল, “ও মূসা! এটা যে খোদার কিতাব তা আমরা কিভাবে বুঝব? এও তো হতে পারে তুমি এটা নিজে লিখে নিয়ে এসেছ আর খোদায়ী কিতাব বলে চালিয়ে দিচ্ছ?”
এ কথায় মূসা বড়ই অস্বস্তিতে পড়লেন, বললেন, “ও আমার সম্প্রদায়! কেন তোমরা আমাকে কষ্ট দাও, যখন তোমরা নিশ্চিত জান যে, আমি তোমাদের কাছে খোদার একজন রসূল?”
তারা বলল, “ও মূসা! আমরা এটিকে খোদার কিতাব হিসেবে মেনে নিতে পারি না কোন তথ্য প্রমাণ ব্যতিরেকে। কসম আল্লা! আমরা কখনও তা করব না, যদি না খোদা নিজে থেকেই আমাদেরকে বলেন যে, এটা তাঁর কিতাব।”

সুতরাং এই অপবাদ থেকে রেহাই পেতে মূসা আল্লাহর সাহায্য চাইলেন। তখন ইস্রায়েলীদেরকে তূর পর্বতের পাদদেশে সমবেত করতে বলেন, যাতে তিনি তাদেরকে তাঁর বানী শুনিয়ে দিতে পারেন। এতে মূসা ভাবলেন- এত লোককে সেখানে নিয়ে গিয়ে বিশৃংখলা সৃষ্টির চেয়ে বরং তাদের নেতৃস্থানীয় কিছুলোককে সেখানে নিয়ে যাওয়াই ভাল। সৃতরাং তিনি বললেন, “তোমরা নেতা নির্বাচন কর যারা এ কিতাবের সত্যতার সাক্ষ্য বহন করবে।”

তখন তারা ৭০ জনকে [প্রতি গোত্র থেকে ৬জন] নির্বাচিত করল এবং মূসা ও হারূণ তাদেরকে পবিত্র করে নির্ধারিত স্থানে হাজির করলেন। এরপর খোদা তাদেরকে দশ আজ্ঞা শুনিয়ে দিলেন। এই আজ্ঞাগুলো চারিদিক থেকে সমভাবে ধ্বনিত হল, কিন্তু তারা আশেপাশে কাউকে দেখল না। সুতরাং তারা বলল, “ও মূসা! কে কথা বলল তা তো দেখতে পেলাম না, আমাদেরকে তাঁকে সরাসরি দেখাও।”
তাদের এই হটকারীতায় মূসা হতবাক হলেন।

এ দুনিয়ায় কেউই খোদাকে দেখতে পাবে না, কারণ স্রষ্টার সত্ত্বা অসীম আর মানুষের দৃষ্টি সসীম। তাছাড়া, স্রষ্টা তো তাঁর সৃষ্ট জগতে বাস করেন না। সুতরাং মূসা তাদেরকে নানাভাবে বোঝাতে চাইলেন, কিন্তু তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিল- “ও মূসা! আমরা তোমাকে কখনও বিশ্বাস করব না, যতক্ষণ না তুমি তাঁকে সরাসরি দেখাও।”
“বলেন কি!”
হ্যাঁ, আর এ কারণেই আমরা তাদেরকে সীমালংঘনকারী বলেছি।
“পরে কি হল?”
যা হবার তাই, এক বজ্রপাত হল, আর তা তাদেরকে আঘাত করল, তাতে সবাই আগুনে পুড়ে মরে ভূত হয়ে গেল।

দীর্ঘসময় পর মূসার জ্ঞান ফিরল। তারপর যখন তিনি তার চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা লাশগুলো দেখলেন, তখন কাঁদতে লাগলেন, আর কাঁদতে কাঁদতে তার প্রভুকে বললেন, “হে আমার প্রতিপালক! ইচ্ছে করলে এর আগেই তুমি এদেরকে ও আমাকে ধ্বংস করতে পারতে আমাদের মধ্যে যারা নির্বোধ তারা যা করেছে সেজন্যে কি তুমি আমাদেরকে ধ্বংস করবে? এ তো তোমার পরীক্ষা যা দিয়ে তুমি যাকে ইচ্ছে বিপথগামী কর আর যাকে ইচ্ছে সৎপথে পরিচালিত কর। তুমিই তো আমাদের অভিভাবক। সুতরাং তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি অনুগ্রহ কর। আর তুমিই তো সর্বশ্রেষ্ট ক্ষমাকারী। আর আমাদের জন্যে লিখে দাও (নিশ্চিত কর) ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ। আমরা তো তোমার কাছেই ফিরে আসব।”

তিনি বললেন, ‘আমার শাস্তি যাকে ইচ্ছে দিয়ে থাকি। আমার অনুগ্রহ সে তো প্রত্যেক জিনিসে ছড়িয়ে আছে। তাই আমি তাদের জন্যে তা লিখে দেই, যারা সংযম পালন তরে, যাকাত দেয় ও আমার নিদর্শণগুলোয় বিশ্বাস করে।’ -(৭ঃ১৫৫-১৫৬)
“তারপর!”
তারপর আর কি, আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, দয়াময়। সুতরাং তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে আবারো জীবিত করে দিলেন।
আর যখন তোমরা বলেছিলে- “হে মূসা! আমরা আল্লাকে প্রত্যক্ষ না দেখা পর্যন্ত তোমাকে কখনও বিশ্বাস করব না।” তখন তোমরা বজ্রাহত হয়েছিলে এবং তোমরা তা প্রত্যক্ষ করেছিলে। অতঃপর আমি মৃত্যুর পর তোমাদের পূনরুজ্জীবিত করলাম, যেন তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’-(২:৫৫-৫৬)

প্রতিনিধিদল সকৃতজ্ঞতায় তাদের গোত্রমাঝে ফিরে এল এবং বলল, “মূসা যা বলেছেন তা পুরোপুরি সত্য, এ কিতাব খোদার, আর আমরা তার স্বাক্ষী।”
এরপরও ইস্রায়েলীরা অনমনীয়, এড়িয়ে যাবার কোন সুযোগ নেই দেখে, এখন তারা এমন এক পন্থা অবলম্বণ করল, যার কোন নজির মানব ইতিহাসে ছিল না। তারা খোদায়ী আইনকে কাহিনীর বিষয়বস্তু করে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে নিয়ে চরম ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হল।

কোরাহ [কোরাণিক কারুন], এক লেভীয়, বিতর্কে লিপ্ত হল একথা বলে যে, মূসা যে আইন চালু করেছে, তা পালন করা অসম্ভব। সে বলল, “ও ইস্রায়েলী! তোমরা কি দেখছ না, যে আইন মূসা খোদার নামে তৈরী করেছে, তা কেবল পুরোহিত হারূণকে বিত্তশালী করবে? আর তাতে কয়েক বৎসরের মধ্যে সকল ইস্রায়েলীকে ভিক্ষের থালা হাতে তার দুয়ারে গিয়ে দাঁড়াতে হবে?” তারপর সে মূসার শরিয়তী আইনগুলো কিভাবে লোকদের জীবন-যাত্রায় বিপর্যয় সৃষ্টি করবে তা এক গল্পের [শরিয়তের কিছু আইন কাট-পেস্ট করে তৈরী] মাধ্যমে ব্যাখ্যা করল এভাবে:

“ইস্রায়েলী এক গরীব বিধবা তার দুই যুবতী কন্যা নিয়ে কোনরকমে দিনগুজরান করছিল। স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বলতে যা ঐ বিধবার ছিল, তা হল এক খন্ড জমি, একটা গরু ও একটা গাধা। আবাদ করার মানসে ঐ মহিলা যখন তার জমি চাষ করতে গেল, তাকে বলা হল শরিয়তী আইনে গাধা আর গরু একসাথে জুড়ে চাষ করা তার জন্যে বৈধ নয়। -(ডিউট্রোনোমি, ২২:১০); তারপর বীজ বোনার সময় তাকে বলা হল- একই জমিতে দু’জাতের বীজ বোনাও তার জন্যে বৈধ নয়। -(লেভিক্টাস, ১৯:১৯) যখন সে ফসল কাটতে গেল, বলা হল- ক্ষেতের কিনারার ফসল কাটাও তার জন্যে অবৈধ। -(লেভিক্টাস, ২৩:২২), সবকিছু নিয়মমত করে যখন সে ফসল মাড়াই করল, পুরোহিত হারূণ তার অংশ [উৎপন্ন ফসলের এক দশমাংশ] নিতে হাজির হল। -(লেভিক্টাস, ২৩:১০)

জমি আবাদে শরিয়তের এতসব বাঁধা-বিপত্তি এবং উৎপন্ন ফসলের ভাগ-বাটোয়ারায় বিরক্ত হয়ে ঐ বিধবা তার জমি বিক্রি করে দিল। তারপর সে ঐ জমি বিক্রির টাকায় কয়েকটা ভেড়ার বাচ্চা কিনে পুষতে লাগল। কিন্তু যখন সেগুলো বাচ্চা দিল, পুরোহিত হারূণ গিয়ে সবগুলো বাচ্চা তার প্রাপ্য বলে দাবী করল; এরপর বছর শেষে সে আবারো ঐ বিধবার নিকট যাকাতের অংশ [রাখালের লাঠির নীচ দিয়ে যাওয়া প্রতিটি দশম পশু] নিতে হাজির হল। -(ডিউট্রোনোমি, ১৮:৪), তখন ঐ মহিলা বলল, “এই পুরোহিতের এতসব দাবী অামার পক্ষে আর পূরণ করা সম্ভব না, ওগুলো জবাই করে খাওয়াই বরং আমার জন্যে উত্তম।”

তারপর যখন সে সেগুলো জবাই করল, তখন হারূণ গিয়ে তার কাঁধের মাংস, দুই চোঁয়াল এবং কলিজা নিতে হাজির হল।-(ঐ আয়াত- ৩), ঐ মহিলা এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চিৎকার করে বলল, “ও পুরোহিত! এতই যদি তোমার চাহিদা হয়, তবে আমি পুরোটাই খোদাকে উৎসর্গ করলাম।”
উত্তরে হারূণ বলল, “সেক্ষেত্রে পুরোটাই আমার।” -(গণণাপুস্তক, ১৮:১৪), আর সে ঐ বিধবা ও তার কন্যা দু;টোকে বঞ্চিত ও সম্পূর্ণ নি:স্ব করে, সবটা মাংস নিয়ে চলে গেল।” -(গণণাপুস্তক R. ১৮:২-৩; তানখ, কোরাহ, ৪-৬).

“এখন, ও আমার সম্প্রদায়!” কোরাহ বলল, “এই আইনগুলো, যা তোমাদেরকে কয়েক বছরের মধ্যে ঐ বিধবার মত পুরোপুরি নি:স্ব এক ভিক্ষুকে পরিণত করে ফেলবে, আর বিত্তশালী করে তুলবে কেবল ঐ পুরোহিত হারূণকে- তা খোদার কাছ থেকে এসেছে বলে কি তোমরা বিশ্বাস কর? না, কখনো না, বরং মূসা নিজে সেগুলো তোমাদের জন্যে লিখে এনেছে, ও আমার সম্প্রদায়! তারা তো কেবল তোমাদের মাল-সম্পদ চুরি করে নিজেদেরকে সম্পদের মালিক বানাতে চায়।”

সুতরাং ইস্রায়েলীরা মূসাকে বলল, “ও মূসা! আমরা এই কিতাব কখনও গ্রহণ করতে পরব না।”
মূসা বললেন, “তোমাদের ৭০জন প্রতিনিধি এ কিতাবের সত্যায়ন করেছে এবং তারা নিজেদেরকে তার সত্যতার সাক্ষ্যবহনকারী হিসেবেও ঘোষণা দিয়েছে, এরপরও কি তোমরা বলছ যে, তা খোদার নয়?”
তারা বলল, “আমরা এ কিতাব গ্রহণ করতে পারছিনে, কারণ, তার আইনগুলো পালন করা কঠিন।”
তারা কিতাব পরিবর্তন করার দাবী করল।

এখন এই অবাধ্য জাতির জন্য খোদার করণীয় কি?
ক্ষমাশীল ও দয়ালু খোদা তাঁর বেঁছে নেয়া জাতির জন্যে এসময় এক অভূতপূর্ব কাজ করলেন। তিনি তাদের সাথে সরাসরি কথা বললেন [যাতে করে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলদের সাথে ইস্রায়েলীদের আচার ও ব্যবহার, পরবর্তীতে অন্যান্য জাতি বিচার করতে পারে।], তিনি তাদেরকে নির্দেশ দিলেন, “আমি যা দিলাম তা দৃঢ়ভাবে ধারণ কর, আর তাতে মনোযোগী হও।”

ছয় লক্ষ [গননা পুস্তক, ১:৪৬ অনুসারে, ৬,০৩,৫৫০ জন, তবে আমরা এর সত্যতা যাঞ্চাই করতে যাচ্ছিনে, কারণ সংখ্যা আমাদের এ উপস্থাপনায় কোন ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে না।] ইস্রায়েলী স্বকর্ণে খোদার এই আদেশ শুনল। আর তার উত্তরে তারা সকলে [৭২জন ছাড়া] বলল, “আমরা শুনলাম, আর অমান্য করলাম।”

এখন বল, এই অবাধ্য জাতির সাথে খোদার কেমন ব্যবহার করা উচিৎ? এমন কিছু কি এখনও তাদের জন্যে করা বাকী আছে যা খোদা করতে পারতেন- এ কথা বলা ছাড়া, “ যা  দিয়েছি গ্রহন কর, ও মাদার ফাকারের দল, নতুবা, মরার জন্যে তৈরী ’হ।”
“ঠিক তাই।”
এবার ধর, খোদা তাদের সকলকে হত্যা করলেন, এতে তুমি কি মনে কর, ভবিষ্যতে অথবা বিচার দিবসে মানবজাতির কেউ, যারা বুদ্ধিমান [আমরা নির্বোধদেরকে গুনতির মধ্যে ধরছিনে], খোদাকে দোষারোপ করবে?”
“না।”
তুমি ঠিক বলনি। সম্ভবত: এ দুনিয়ায় বুদ্ধিমানদের মধ্যে তুমি এমন অভিযোগকারী কাউকে খুঁজে পাবে না, কারণ এখানে মানুষ তার মস্তিস্কের শতভাগ ব্যবহার করতে পারে না, কিন্তু সামনের দিনে সুপার কম্পিউটার এমন পরিস্থিতি বিশ্লেষণে খোদাকে অভিযুক্ত করতে পারে, তাছাড়া বিচার দিবসে মানুষ যখন তার মস্তিস্কের শতভাগ ব্যবহার করবে দুনিয়ার জীবনে তার কার্যাবলী স্মরণ ও বিশ্লেষণে, তখন তারা খোদাকে নিশ্চিত দোষারোপ করবে, নিদেন পক্ষে এই বলে যে-, “তুমি তো খোদা, তুমি কেন তোমার খোদায়ী ক্ষমতায় সেদিন এমনকিছু করনি যা আমাদেরকে সংশোধন করত?”

সুতরাং, একজন নৈতিক খোদা, যিনি মহাজ্ঞানী, মহাক্ষমাশীল, তিনি তাঁর কোন কাজ এমনভাবে শেষ করতে পারেন না যা তাঁকে [পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, এমনকি মানুষ তার মস্তিস্কের শতভাগ ব্যবহার করার ক্ষমতা লাভ করলেও] কোন প্রশ্নের সম্মুখীন করবে। আর তাই ঐ সময় তিনি এক কাজ করলেন যা মানুষের আয়ত্ত্বাধীন নয় বরং কেবলই ঐশ্বরিক। তিনি জিব্রাইলকে নির্দেশ দিলেন তূর পাহাড়টি তাদের মাথার উপর তুলে ধরতে। কোরআন জানাচ্ছে- যখন আমি তাদের উপর পর্বত স্থাপন করি, দেখে মনে হচ্ছিল এ এক ঝুলন্ত ছাদ এবং তারা অনুমান করছিল যে, তা তাদের উপর পড়বে। -(৭ঃ১৭১)

“আর ঐ পরিস্থিতিতে ইহুদিরা কি করল?”
ঐ সময় তাদের অবস্থা তো কেরোসিন। এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে তা তো তাদের কল্পণাতেও ছিল না। তারা স্পষ্ট বুঝতে পারল, তূর পর্বত তাদের জীবনের ইতি টেনে দিতে যাচ্ছে। তখন জীবন-মরণের ঐ প্রান্তে দাঁড়িয়ে তারা খোদার নিকট তাওরাত গ্রহণ করার পূর্ণ প্রতিশ্রুতি দিল। তারা  ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে, ক্রন্দন করতে করতে বলল, “হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা অঙ্গীকার করছি, তোমাকে ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করব না, পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতীম ও দীন-দরিদ্রের প্রতি সদ্ব্যবহার করব, সৎ কথাবার্তা বলব ও সকলকে সদুপোদেশ দেব, নামাজ প্রতিষ্ঠা করব এবং যাকাত আদায় করব।”
দয়াময় খোদা তাদের অবস্থা দেখলেন, তাঁর মায়া হল, তিনি বললেন- “ঠিক আছে, ঠিক আছে, কান্নাকাটি থামাও, আমি পাহাড় সরিয়ে নিচ্ছি, কিন্তু শোন, তোমরা আর পরস্পর খুনোখুনি করবে না এবং নিজদিগকে দেশ থেকে বহিঃস্কারও করবে না।”- এতে তারা তাতেও প্রতিশ্রুতি দিল।

তখন খোদা বললেন- “নিশ্চয় আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, যদি তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠিত কর ও যাকাত প্রদান কর এবং আমার রসূলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, তাদের সম্মান কর এবং উত্তম ঋণ প্রদান কর- তবে আমি তোমাদের দোষ অবশ্যই মোচন করব এবং তোমাদের বেহেস্তে দাখিল করব, যার নীচে নদীসমূহ প্রবাহিত, এরপরও কেউ অবিশ্বাস করলে সে সত্যপথ হারাবে।” -(৫:১২)

কাহিনী এমনটা হলেও পরবর্তী ইতিহাস কিন্তু ভিন্ন কথা বলে। আমরা দেখতে পাই, তারা খোদায়ী আইনের সাথে আবারো চালাকি খাটিয়েছে। শনিবার তথা বিশ্রামবারে মাছ পানির উপর মাথা ভাসিয়ে দিত। কিন্তু শরিয়ত অনুসারে ঐ দিন তাদের জন্যে জাগতিক কোন কাজ করা নিষিদ্ধ ছিল। তাই লোভের বশবর্তী একদল ইস্রায়েলী চালাকির সাথে খোদায়ী আইনকে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইল। বিশ্রামবারে জাল দিয়ে মাছ আটকে রাখত এবং পরদিন শিকার করত। ইবনে কাছিরের মতে, "They began using deceitful means to avoid honoring the Sabbath by placing nets, ropes and artificial pools of water for the purpose of fishing before the Sabbath. When the fish came in abundance on Saturday as usual, they were caught in the ropes and nets for the rest of Saturday. During the night, the Jews collected the fish after the Sabbath ended."

“তখন খোদা কি করলেন?”
যা তাঁর করা উচিত। মানুষকে তিনি বিবেক দিয়েছেন যাতে তারা বিবেচনা করে। কিন্তু যদি তারা তা না করে, তবে তাদের পরিচয় আর “মানুষ” থাকে না বরং তারা সেই শ্রেণীভূক্ত হয়ে পড়ে যাদের সেসব নেই। তাই তিনি তাদেরকে বললেন- “এতই যখন তোমাদের বাঁদরামি করার এত ইচ্ছে, তবে বাকী জীবনটা বানর হয়েই তা করতে থাক।”
“ইন্টারেস্টিং তো!”
হ্যাঁ, এমনটাই কোরআন জানিয়েছে,- আর যখন তারা নিষিদ্ধ কাজে বাড়াবাড়ি করতে লাগল, আমি তাদেরকে বললাম, “তোমরা ঘৃণিত বানর হয়ে যাও।” -[৭:১৬৬]
“তাই?”
ঠিক তাই- “আর তাদের কাছে সে জনপদের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর যা ছিল নদীর তীরে অবস্থিত। যখন শনিবার দিনের নির্দেশের ব্যাপারে সীমাতিক্রম করতে লাগল, যখন আসতে লাগল মাছগুলো তাদের কাছে শনিবার দিন পানির উপর, আর যেদিন শনিবার হত না, আসত না। এভাবে আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি। কারণ, তারা ছিল নাফরমান।” -[৭:১৬৩]

তুমি কি অবাক হচ্ছ? শোন, তুমি যদি ইহুদিদের জায়গায় সবথেকে ঘৃণিত প্রাণী শুকরকেও বসিয়ে দাও, তবে কি তারা এমনটা করত? আর এ কারণেই কিছু মানুষ বিশ্বাস করে, ইহুদিরা জন্মগতভাবে দুষ্ট চরিত্রের, তারা বেয়াড়া, অসৎ, প্রতারক এবং স্বভাবগত অবিশ্বস্ত। তাদের “গুণাবলী” ও “আচার-আচরণ” ঐশীগ্রন্থগুলো উপস্থাপন করেছে “অপরিবর্তিত স্বভাব” হিসেবে। যাহোক, আমরা যা শুনাচ্ছিলাম, কোরআনের গাভী উপাখ্যান___

গরুটা কি ধরণের হবে তা জানার পর তারা তাদের অন্যসব কুয়েরীর সমাধানের দিকে এগিয়ে গেল, “তোমার প্রভুর কাছ থেকে জেনে নাও গরুটার রং কি হবে।”

এ বড়ই অদ্ভূত, গরুর রঙ! নাহ, গরুর রঙের মোজেজা কোন মানুষের কাছে জানতে চাওয়া বোধ হয় ঠিক হবে না, বরং আমরা গরুর কাছেই ঐ বিষয়ে জানতে চাই- “ও গরু, তোমাদের রঙের বিশেষত্ব সম্পর্কে কি তোমরা ওয়াকিবহাল? তোমাদের রঙ জানাটা কি খুবই জরুরী? এ কি সামঞ্জস্যপূর্ণ?”

গরুর কাছ থেকে কোন সাড়া পাওয়া গেল না। আর পাওয়া যাবেই বা কি করে- ওরা তো অবোলা জীব। সুতরাং আমাদের উচিৎ আমাদের বিবেককেই জিজ্ঞেস করা- “আচ্ছা! আমাদের সবার দৃষ্টিতে গরু কি একই রকম না? আমরা কি কখনও গরুর রঙে বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছি? যদি না হয়, তাহলে এখন কি এমন জরুরী প্রয়োজন পড়ল যে, মূসাকে খোদার কাছে গিয়ে তার রং জেনে আসতে হবে?”

সর্বোপরি, দেখ, কিভাবে তারা মূসাকে সম্বোধন করছে- “তোমার প্রভুকে জিজ্ঞেস কর” যেন প্রভু কেবল মূসার, তাদের নয়। এর থেকে ঔদ্ধত্য ও অবাধ্যতার আর কি কিছু হতে পারে? তথাপি রেগে না গিয়ে, ধৈর্য্য সহকারে মূসা তার প্রভুর নিকট গেলেন তাদের অবান্তর এক প্রশ্নের উত্তর জেনে আসতে।
তারপর তিনি বললেন, “আল্লাহ বলেছেন সেটা হবে হলুদ রঙের বাছুর, তার উজ্জ্বল গাত্রবর্ণ যারাই দেখবে তারাই খুশী হবে।”

তুমি কি মনে কর, বিষয়টি কি এখানেই শেষ? মোটেও নয়, এখনও কিছু ডিসপুট রয়েছে আমরা দেখতে পাচ্ছি, তারা মূসাকে বলল, “তোমার প্রতিপালককে আমাদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে বল গরুটা কি ধরণের। আমাদের কাছে গরু তো একইরকম। আর তাতে খোদার ইচ্ছায় আমরা হয়ত: পথ পাব।”

ওয়াও! ইতিপূর্বকার এতসব বর্ণনার পরও তারা জানে না গরুটা কি ধরণের হবে! বিষ্ময় আর বিষ্ময়! আমার কিন্তু হাসিতে পেট ফুলে যাবার মত হচ্ছে, হা, হা, হা, সিওর তারা যদি গরু হত, তারা হয়ত: এ ধরণের ব্যবহার করত না।

এখন আমাকে বল, এদের সাথে খোদার কেমন ব্যবহার করা উচিৎ?
নিশ্চিত তা হবে প্রচলিত চিন্তাধারা, আচরণ ও যুক্তির সীমা বহির্ভূত। আর ঠিক এ কারণেই খোদা বলেছেন, “ওটার (বাছুরটির) কোন অংশ দিয়ে তাকে (মৃতকে) আঘাত কর।”

আর, তারা যখন তা করল, মৃতলোকটি জীবন ফিরে পেল। তখন তারা তাকে তার হত্যাকারীর বিষয়ে প্রশ্ন করল। আর এই বিষয়টিই খোদা আমাদেরকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন-এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন আর তোমাদেরকে তার নিদর্শণ দেখিয়ে থাকেন যেন তোমরা বুঝতে পার।

এখন, ও বন্ধুবর, তুমি প্রশ্ন করছ- এ কাহিনীর তাৎপর্য কি?
সেক্ষেত্রে আমি বলব, তুমি কাহিনীর কিছুই কি বুঝেছ?
“সত্যি বলতে কি, যা বুঝেছি তা তাৎপর্যপূর্ণ কিছু মনে হয়নি।”
আচ্ছা বাদ দাও, আমি ব্যাখ্যা করছি।

ইহুদিরা এমনিতে খোদাকে মান্য করত না, তার উপরে তারা তাঁর দেয়া আইনের সাথে চালাকি খাটাত নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে- এই কাহিনী এমনই এক ঘটনার কথা আমাদেরকে জানচ্ছে।

ইহুদি আইনে নরহত্যা নিষিদ্ধ। তথাপি এক ইহুদি অপর এক ইহুদিকে হত্যা করে রাজত্ব ও রাজকন্যা লাভের আশায়, তারপর সে খোদায়ী আইনের সাথে চালাকি করে ঐ নিহতের রক্তমূল্যের টাকাটাও পাবার লোভে।

দেখ কি দূরদৃষ্টি! এক ঢিলে তিন পাখি! নাহ, ইহুদিদেরকে আমি পছন্দ না করে পারছি না।
যা বলছিলাম, ঐ বুদ্ধিমান ইহুদি, লোকটিকে হত্যা করে নিকটবর্তী এক ইহুদি গোত্রের এলাকায় ফেলে রেখে আসে তার রক্তমূল্য পাবার লোভে। আর ঐ ঘটনা এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সুতরাং খোদা কি করবেন? তিনি তখন তাদেরকে এই শিক্ষা দিতে চাইলেন-

“ও ইস্রায়েলী! তোমরা জীবিত, তোমাদের মস্তিস্ক এখনও কাজ করে যাচ্ছে, অথচ তোমরা সক্ষম নও কোন মৃতব্যক্তির কাছ থেকে সত্য বের করে আনতে, তথাপি তোমরা উদগ্রীব হয়ে পড় অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে তোমাদের প্রভুর কাছে জানতে;
ও ইস্রায়েলী! একটা পশু যা তোমাদের যে কারো থেকে নিম্নশ্রেণীর এবং এমনকি যখন সে মৃত, তথাপিও সে সক্ষম একজন মৃতমানুষের কাছ থেকে সত্য বের করে আনতে- যদি খোদা ইচ্ছে করেন।”

এখন বল, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, কোন ইহুদি কি কখনও খোদাকে দোষারোপ করতে পারবে?
“না।”
তুমি এবারও ভুল উত্তর দিয়েছো, কারণ তুমি ভুলে গেছ মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে স্বাধীন করে। সুতরাং নিশ্চিত তারা খোদার উপর মিথ্যোরোপ করবে, এমনকি, তাঁর সম্মুখে দন্ডায়মান অবস্থায়।
ঐ পরিস্থিতির কথা কল্পনা কর-

ইহুদি ও খৃষ্টানগণ নবী মুহম্মদকে অস্বীকার করছে হাশরের ময়দানে তাদের প্রভুর সম্মুখে দাঁড়িয়ে। তুমি কি আন্দাজ করতে পারছ, তারা কি করছে! যে ব্যক্তি খোদার সকল সৃষ্টির কাছে সুপরিচিত হবার কথা, তাকে কিনা চেনে না সৃষ্টির সেরা মানবজাতির একাংশ। তারা তাদের প্রতিপালকের কাছে তাদের নবী ও রসূলদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে, যারা কিনা খোদার প্রতিনিধি তাদের কাছে, এই বলে যে, তারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি, তারা তা করেননি যা তাদের করা উচিৎ ছিল। আর তাদের ব্যর্থতায় “মানবজাতির মূর্ত্তকরুণার প্রতীক” নবী মুহম্মদ তাদের কাছে অপরিচিত রয়ে গেছেন।
“এতবড় মিথ্যা! নবীদের প্রতি মিথ্যারোপ!”
আর সম্ভবত: ঘটনা এমনটাই হবে। যাহোক, ঐ পরিস্থিতিতে খোদা কি করবেন?
তিনি মুচকি হাসছেন, তাঁর দৃষ্টি সরাসরি মূসার দিকে, তারপর ঈসা।

স্মরণ কর!
আর তারা স্মরণ করল সেই চুক্তির কথা, যা খোদা তাদের সকলের সাথে করছিলেন দুনিয়াতে পাঠানোর পূর্বে- “আর যখন আল্লাহ সমস্ত পয়গম্বরদের সমক্ষে এ চুক্তি করলেন যে, “নিশ্চয়ই আমি যে সমস্ত বাণী তোমাদেরকে দিয়েছি তা সত্য, অতঃপর একজন রসূল আসবেন এবং তিনি এসে তোমাদের কাছে যা আছে তার সত্যতা প্রমাণ করবেন; তোমরা তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তাকে সাহায্য করবে।” এ কথা বলে তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা  চুক্তির এ দায়িত্বভার গ্রহণে সম্মতি ও স্বীকারোক্তি দিচ্ছ তো?”
তারা বলল, “আমরা স্বীকার কললাম।”
তখন তিনি বললেন, “তাহলে স্বাক্ষী থাক। আমিও তোমাদের সাথে স্বাক্ষী থাকলাম।”-(৩:৮০)

তুমি ‍কি ঐ সময় ঐ রসূলদের মানষিক অবস্থার কথা একবার ভেবে দেখেছ?
মূসা কাঁপতে লাগলেন- এই প্রতিবন্ধী মানুষটা একটা কথাও তার মুখ দিয়ে বের করতে পারলেন না। কি লজ্জা!!!

সুতরাং আল্লাহ ঈসাকে বললেন, “ও ঈসা, আর তুমি তাদেরকে কি আহবান জানিয়েছিলে?”
আর এর উত্তরে তিনি হুবহু তাই বলবেন যা রয়েছে কোরআনে-, “আমি তাদেরকে জানিয়ে ছিলাম- “হে বনি ইস্রায়েল! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহ প্রেরিত রসূল, আমার পূর্ববর্তী তাওরাতের আমি সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রসূলের সূসংবাদ দাতা যিনি আমার পরে আসবেন। তার নাম আহমদ।”-(৬১:৬)

আল্লাহ বলবেন- “হে ঈসা ইবনে মরিয়ম, তোমার প্রতি ও তোমার মাতার প্রতি আমার অনুগ্রহ স্মরণ কর, যখন আমি তোমাকে পবিত্র আত্মার দ্বারা সাহায্য করেছি। তুমি মানুষের সাথে কথা বলতে কোলেও এবং পরিণত বয়সেও এবং যখন আমি তোমাকে গ্রন্থ, প্রগাঢ় জ্ঞান, তাওরাত ও ইঞ্জিল শিক্ষা দিয়েছি এবং যখন তুমি কাদা-মাটি দিয়ে পাখীর প্রতিকৃতির মত প্রতিকৃতি নির্মাণ করতে, আমার আদেশে অতঃপর তুমি তাতে ফুঁক দিতে; ফলে তা আমার অনুমতিক্রমে পাখী হয়ে যেত এবং তুমি আমার আদেশে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে নিরাময় করে দিতে এবং যখন তুমি আমার আদেশে মৃতদেরকে বের করে দাঁড় করিয়ে দিতে এবং যখন আমি বনি ইস্রায়েলকে তোমা থেকে নিবৃত্ত রেখেছিলাম, যখন তুমি তাদের কাছে প্রমানাদি নিয়ে এসেছিলে,-(৫:১১০) হে মরিয়ম পুত্র ঈসা! তুমি কি লোকদের বলেছিলে যে, “তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে আমাকে ও আমার জননীকে উপাস্যরূপে গ্রহণ কর?”

ঈসা বলবেন, “তুমি মহিমাময়! আমার যা বলার অধিকার নেই তা বলা আমার পক্ষে শোভন না। যদি আমি তা বলতাম তবে তুমি তো তা জানতে। আমার অন্তরের কথা তো তুমি জান, কিন্তু তোমার অন্তরের কথা তো আমি জানিনে। তুমিই অদৃশ্য সম্বন্ধে ভাল করে জান। তুমি আমাকে যে আদেশ করেছ তা ছাড়া তাদেরকে আমি কিছুই বলিনি। আর তা এই- “তোমরা আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর উপাসনা কর।”
আর যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি ছিলাম তাদের কর্মকান্ডের স্বাক্ষী, কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে, তখন তুমিই তো ছিলে তাদের কর্মকান্ডের স্বাক্ষী।” -(৫:১১৬-১১৯)

দৃশ্যটা কল্পনা কর, খৃষ্টানদের লর্ড গড, সমস্ত মানবজাতির সামনে কোরআনের আয়াত আবৃত্তি করছে!! ফাকিং ড্রামা!
লজ্জা!

কিন্তু, আমরা মুসলিম আমাদের নবী মূসা বা ঈসাকে কখনও ইহুদি ও খৃষ্টানদের দ্বারা লজ্জিত হতে দেব না, এমনকি যখন আমরা আমাদের প্রভুর সামনে দাঁড়াব। সুতরাং আমরা চিৎকার করে বলব- “মিথ্যেবাদী! তাদের সকলেই মিথ্যেবাদী।”

ন্যায় বিচারক, দয়াময় খোদা অামাদের কর্মকান্ড বিচারে তাঁর বিচারকি আসনে উপবিষ্ট। তিনি মুসলমানদেরকে তাদের দাবী প্রমাণ করতে বলবেন। তখন আমরা তাই আবৃত্তি করব যা আমরা মুখস্ত করেছিলাম আমাদের পার্থিব জীবনে। আর রসূলগণ আমাদের বাণীর সত্যতা স্বীকার করবেন।

এখন নিশ্চয় তুমি বুঝতে পারছ কেন কোরআনের ৭১ভাগ ভরে রয়েছে পুরাণ কাহিনী, প্রাচীন আ’দদের ইতিহাস, বা, সামুদদের উটনী কাহিনী দিয়ে, বা, সেইসব দিয়ে, যা “ভন্ডনবী মুহম্মদ” চুরি করেছে ইহুদি ও খৃষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ, তালমুদ ও এ্যাপোক্রাইফাসমূহ থেকে।

তবে মজার ব্যাপার হল, মুহম্মদ তাদের গ্রন্থসমূহ থেকে সেসব হুবহু কপি করতে ব্যর্থ হয়েছেন অশিক্ষিত হবার কারণে। তাছাড়া তুমি দেখবে, যারা মুসলমান, তাদের সকলে তাদের নবীর মতই স্টুপিড। তারা এখনও তাদের নবীকে এবং ঐ সব পুরাণ কাহিনীসহ কোরআনের উপর বিশ্বাস এবং ঐ আবর্জনার সবকিছু অন্ধভাবে মুখস্ত করে চলেছে এমন এক যুগে, যখন মানুষ মঙ্গলগ্রহে আবাস গড়ে তুলতে যাচ্ছে!
একি অতি মজাদার ও বিনোদনের নয়?”
“নিশ্চিত।”

তুমি কি খেলাটা দেখতে পাচ্ছ?
“কোন খেলা?”
যে খেলা শয়তানের প্রযোজনায় তৈরী, আর তাতে ইহুদি ও খৃষ্টানগণ প্রধান চরিত্র রূপদানকারী?
“কি বোঝাতে চাচ্ছ?”
এ এই যে, সে তাদের চারিদিকে একটা দেয়াল তুলে দিয়েছে যাতে তারা পরিবর্তিত না হতে পারে। আর এ কেবলই এক “মনস্তাত্বিক খেলা” যা বাঁধা সৃষ্টি করতে থাকবে যদি তারা সত্যিই পরিবর্তিত হতে চায়।
“বল কি!”
কেন তুমি কি দেখতে পাচ্ছ না ইহুদি ও খৃষ্টানদের যারা কোরআনে বিশ্বাস করতে চায়, তারা কি ধরণের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে বা ভবিষ্যতে হবে?
“হায় আল্লা!”
হ্যাঁ, তাদের নিজেদের তৈরী নিয়ন সাইনগুলো যা খৃষ্টান মুল্লুকে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে, সেগুলো তখন তাদেরকে ব্যঙ্গ করতে থাকবে।
“ওয়াও! আমার তো শয়তানকে অভিনন্দন জানাতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু..”
কিন্তু কি?
“মানে, ঐ নিয়ন সাইনগুলোতে আসলে কি রয়েছে?”
তাতে আছে- “মুহম্মদ, যাকে মুসলিম স্টুপিডগুলো মূর্ত্তকরুণার প্রতীক বলে প্রচার করে যাচ্ছে, সে মূলত: এক যৌণলিপ্সু, পেডোফেলিক। অথচ দেখ, নির্লজ্জগুলো তাতে লজ্জ্বিত না হয়ে, বরং তাদের বহুল কাংখিত বেশ্যাপল্লীতে ৭০টা হুরী ভোগের অলীক স্বপ্নে বিভোর থেকে, কুত্তার মত জিহ্বার জল ঝরিয়ে যাচ্ছে।”

#  ও ব্রাদার ঐ ৭০ জন যারা খোদাকে না দেখে বিশ্বাস করতে চাইল না, তারা কোন প্রমাণের ভিত্তিতে ফিরে এসে কিতাবের পক্ষে সাক্ষ্য দিল? 

@ সম্ভবত: তারা জীবন ফিরে পেয়েছিল একে একে। সুতরাং মূসা ও হারুণের পর ৭০তম ব্যক্তি বাকী ৬৯জনকে নিজে পরীক্ষা করার সুযোগ পেয়েছিল। এভাবে ৭০ ও ৬৯ তম ব্যক্তি সাক্ষী ছিল বাকী ৬৮ জনের মরে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া। এভাবে শেষ ব্যক্তির বিপক্ষেও স্বাক্ষী ছিল বাকী ৬৯জন যা তার পক্ষেও উপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না।
আর যেহেতু এমন করে মৃত্যুর পর জীবন ফিরিয়ে দেয়া কেবল খোদার পক্ষেই সম্ভব, এ কারণেই তারা ঐ কিতাবের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছিল।

Moses: কোরাণিক ক্যানভাসে নবী মূসা।

Abu Hena Mostafa Kamal  01 May, 2017 মি সরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ফেরাউন। হঠাৎ করে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। কিন্তু তিনি কোন উত্তরাধিকারী ন...