মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান বেশকিছু বিরলগুণের অধিকারী ছিলেন। তিনি ইস্টার্ণ রোমান সাম্রাজ্যের সাথে রাজনৈতিক সংলাপে অর্থাৎ কূটনীতিতে বেশ পারদর্শী ছিলেন। আর একারণেই মক্কা বিজয়ের পর নবীজীর একজন সেক্রেটারী হিসেবে (অবশ্য আবু সুফিয়ানের সুপারিশও ছিল।) তিনি নিয়োগ পান। অতপর: খলিফা আবু বকরের খেলাফতের শেষ বৎসরে অর্থাৎ ১৩ হিজরীতে তিনি এক বৃহৎ সেনাদলের অধ্যক্ষ হিসেবে সিরিয়ায় প্রেরিত হন। মুসলিম বাহিনী ঐ সময় তার ভ্রাতা ইয়াজিদ ইবনে আবু সুফিয়ানের অধীনে সিরিয়ায় অভিযান পরিচালনা করছিল, আর তাদের সাহাযার্থে পশ্চাৎবর্তী দল হিসেবে মুয়াবিয়ার অধীনে এটি প্রেরিত হয়েছিল।
ইয়াজিদ ও আমর ইবনুল আ'স এর অভিযান রুট |
“When you leave a place do not cause them difficulty in marching. Do not punish your men harshly. Consult them on every matter. Do not abandon justice and stay far from injustice and tyranny because no tyrant nation has ever obtained success. Do not slay any small child, old people, women or pre-adolescent. Do not approach the harvests of the trees. Crops should not be burnt nor fruit trees cut. Do not slaughter any animal which is impermissible.
Do not break any agreement which you make with the enemy, and after peace, do not tear up your treaties. Remember that you will also meet such people who have undertaken monasticism in their monasteries, thinking this to be for the sake of Allah. Do not interfere with them and do not destroy
their monasteries and do not kill them”-Fatuhusham by al-Imam al-Waqidi.
খলিফা ওমর (Omar ibn al-Khattab) তার খেলাফতকালে ইয়াজিদকে সিরিয়ার গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেন। কিন্তু ৬৩৯ সনে প্লেগে তার মৃত্যু হলে তিনি ইয়াজিদের কনিষ্ঠ ভ্রাতা মুয়াবিয়াকে ঐ শূণ্যস্থানে নিয়োগ দেন। ওসমানের খেলাফতকালে, ২৪ হিজরীতে সুচতুর মুয়াবিয়া, খলিফার চাচাত ভাই হিসেবে এবং সার্বভৌম ক্ষমতার বলে অনেক সুবিধা আদায় করে নেন। এক বৎসর প্রচেষ্টার পর তিনি সাইপ্রাস, আরাদুস, আংকারার দ্বীপসমূহ সহ বেশকিছু শহর দখলে আনেন সেখানকার অধিবাসীদের উচ্ছেদ করে। সব মিলিয়ে তার অধীনস্ত এলাকাকার পরিমাণ নেহায়েত কম ছিল না।
খলিফা ওমর (Omar ibn al-Khattab) তার খেলাফতকালে ইয়াজিদকে সিরিয়ার গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেন। কিন্তু ৬৩৯ সনে প্লেগে তার মৃত্যু হলে তিনি ইয়াজিদের কনিষ্ঠ ভ্রাতা মুয়াবিয়াকে ঐ শূণ্যস্থানে নিয়োগ দেন। ওসমানের খেলাফতকালে, ২৪ হিজরীতে সুচতুর মুয়াবিয়া, খলিফার চাচাত ভাই হিসেবে এবং সার্বভৌম ক্ষমতার বলে অনেক সুবিধা আদায় করে নেন। এক বৎসর প্রচেষ্টার পর তিনি সাইপ্রাস, আরাদুস, আংকারার দ্বীপসমূহ সহ বেশকিছু শহর দখলে আনেন সেখানকার অধিবাসীদের উচ্ছেদ করে। সব মিলিয়ে তার অধীনস্ত এলাকাকার পরিমাণ নেহায়েত কম ছিল না।
লাল অংশ মুয়াবিয়ার অধীনস্ত ছিল। |
হিজরী ৪০ সনে আলী নিহত হলে তার পুত্র ঈমাম হাসান খেলাফত লাভ করলেন। হাসান ছিলেন পরহেযগার ও নরম মনের মানুষ। তদুপরি তিনি সাম্রাজ্যে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হন এবং একদল সেনাবাহিনী নিয়ে সিরিয়ার দিকে এগিয়ে যান। কিন্তু প্রথম মোকাবেলাতেই তার সেনাদলের এক উল্লেখযোগ্য অংশ বিদ্রোহ করে বসে এবং তার নিজের জীবনও বিপন্ন হয়ে পড়ে।
এ ঘটনা তাকে এতটাই নিরুৎসাহিত করে যে, তিনি তার ভ্রাতা ঈমাম হোসেনের তীব্র আপত্তি ও বিরোধিতা সত্ত্বেও মুয়াবিয়ার নিকট এক পত্রের মাধ্যমে কিছু শর্ত সাপেক্ষে নিজের খেলাফতের দাবীদারত্ব পরিত্যাগ করেন। এভাবে মুয়াবিয়া আলীর মৃত্যুর ছয় মাসের মাথায় পুরোপুরি খেলাফতের দায়িত্ব পেয়ে যান। আবু জাফর আল তাবারীর মতে হাসানের ইস্তফা দেবার পর মুয়াবিয়া শাসন পরিচালনা করেছিলেন ১৯ বৎসর ৩মাস ৫দিন।
উমাইয়া ও আব্দুল মুত্তালিব বংশধারা। |
যাইহোক, মুয়াবিয়া সিরিয়া শাসন করেছিলেন প্রথমে গভর্ণর ও পরবর্তীতে খলিফা হিসেবে মোটামুটি ৪০ বৎসরাধিক কাল। তার মৃত্যুর পর তাকে সমাহিত করা হয় দামেস্কে। মুয়াবিয়া দামেস্ক নগরীকে খলিফাগণের বাসস্থান হিসেবে তৈরী করেছিলেন। আর যতদিন উমাইয়াগণ মুসলিম সাম্রাজ্যের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন, ততদিন এই নগরী এ কারণে এক বিশেষ মর্যাদা ও ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করেছিল। এবার মূল কাহিনীতে ফিরি। এ কাহিনী মুয়াবিয়ার খেলাফতকালীন।
প্রচন্ড গরমের একদিন। খলিফা মুয়াবিয়া তার দরবার কক্ষে বসে আছেন। গুমোট আবহাওয়া। কোন বাতাস বইছে না। তাই সামান্য বাতাস প্রবাহের আশায় দরবার কক্ষটির চতুষ্পার্শ্বের গবাক্ষগুলি উন্মুক্ত করে রাখা হয়েছে। এরই মাঝে ঠিক দ্বি-প্রহরে হঠাৎ করে মরুঝড় শুরু হল। বিষন্ন নয়নে মুয়াবিয়া গবাক্ষ পথে বাইরের দিকে চেয়ে রয়েছেন। হঠাৎ তার নজরে এল একজন লোক উত্তপ্ত বালুর উপর দিয়ে নগ্নপদে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে দরবারের দিকে আসছে। মুয়াবিয়া ভালকরে তাকে লক্ষ্য করে পরিষদবর্গকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “সেই ব্যক্তির চেয়ে হতভাগা কে যে কিনা এই তীব্র দাবাদহের মধ্যে পথে বেরিয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছে?”
মুয়াবিয়া বললেন, “আল্লা স্বাক্ষী, যদি সে আমার কাছে কিছু চায়, তবে অবশ্যই আমি তাকে তা দেব। আর তার বিষয়টি নিজে তদারকি করব। আর যদি সে নির্যাতিত হয়ে থাকে, আমি নিশ্চয়ই তাকে সাহায্য করব। ওহে দাস, দরজায় গিয়ে দাঁড়াও, যদি এই আরব আমাকে খোঁজে, তবে তাকে আমার কাছে আসতে বাঁধা দিও না।”
মুয়াবিয়ার এই আদেশ শুনে ঐ যুবক দাস বাইরে লোকটির কাছে গিয়ে বলল, "আপনি কাকে খুঁজছেন?”
সে বলল, “আমিরুল মুমেনিনকে।” -তখন যুবক দাস তাকে পথ দেখিয়ে মুয়াবিয়ার কাছে নিয়ে এল।
সে বলল, “আমিরুল মুমেনিনকে।” -তখন যুবক দাস তাকে পথ দেখিয়ে মুয়াবিয়ার কাছে নিয়ে এল।
মুয়াবিয়া পুরোপুরি বিধস্ত ঐ আরব লোকটিকে ভাল করে দেখে নিয়ে বললেন, “তুমি কোন গোত্রের লোক।”
"বনু তামিম" -সে বলল।
-বনু তামিম এই গোত্রটি আরবের উল্লেখযোগ্য গোত্রগুলির একটি। এরা মূলত: ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করছিল নজদের দক্ষিণপূর্ব কোনে, সিরিয়ার মরুভূমি থেকে আল আহনার সীমানা পর্যন্ত।
সে বলল, “আপনার গভর্ণর, মারওয়ান বিন আল হাকাম।”
মারওয়ান বিন আল হাকাম ৩য় খলিফা ওসমান কর্তৃক মাত্রাতিরিক্ত সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অন্যতম। খলিফা ওসমান তাকে তার রাজ্যসচিব করেছিলেন। শুধু তাই নয়, খলিফা তার নিকট-আত্মীয়ের আরও কয়েকজন অনুপযুক্ত ব্যক্তিকে (যেমন চাচাত ভাই আল ওয়ালিদ ইবনে ওকবাকে কূফার গভর্ণর করা ইত্যাদি। এই ওয়ালিদ গভর্ণর এর দায়িত্ব পালনকালে মাতাল অবস্থায় কোন এক নামাজে ঈমামতি করতে গিয়ে দু'রাকাতের নামাজ ৪ রাকাত পড়িয়েছিলেন। ফলে শাস্তিস্বরূপ খলিফা ওসমানের নির্দেশে আলী তাকে ৮০টি বেত্রাঘাত করেন।) উচ্চপদে অধিষ্ঠিত করেন। তার এই স্বজনপ্রীতিতে সাধারণ মানুষ তো বটেই এমনকি নবীজীর স্ত্রী বিবি আয়েশা ও তার ভ্রাতা আব্দুর রহমান, তালহা ও জুরায়েরকে বিক্ষুব্ধ করেছিল। ফলশ্রুতিতে ওসমানের হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে, যার মধ্য দিয়ে ঐ ক্ষোভের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল। যাইহোক, মোদ্দাকথা এই যে, খলিফা মুয়াবিয়া এই মারওয়ান বিন আল হাকামকে ৫৪ হিজরীতে মদিনার গর্ভণর নিযুক্ত করেছিলেন।
মুয়াবিয়া বললেন, “কি সেই বিষয় যা তোমাকে এমন দিনে ঘর থেকে বের করে নিয়ে এসেছে?”
সে বলল, “আমি হৃতসর্বস্ব, আপনার নিকট আশ্রয় ও প্রতিকারের আশায় এসেছি।”
মুয়াবিয়া বললেন, “কে তোমাকে সর্বশান্ত করেছে?”সে বলল, “আপনার গভর্ণর, মারওয়ান বিন আল হাকাম।”
মারওয়ান বিন আল হাকাম ৩য় খলিফা ওসমান কর্তৃক মাত্রাতিরিক্ত সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অন্যতম। খলিফা ওসমান তাকে তার রাজ্যসচিব করেছিলেন। শুধু তাই নয়, খলিফা তার নিকট-আত্মীয়ের আরও কয়েকজন অনুপযুক্ত ব্যক্তিকে (যেমন চাচাত ভাই আল ওয়ালিদ ইবনে ওকবাকে কূফার গভর্ণর করা ইত্যাদি। এই ওয়ালিদ গভর্ণর এর দায়িত্ব পালনকালে মাতাল অবস্থায় কোন এক নামাজে ঈমামতি করতে গিয়ে দু'রাকাতের নামাজ ৪ রাকাত পড়িয়েছিলেন। ফলে শাস্তিস্বরূপ খলিফা ওসমানের নির্দেশে আলী তাকে ৮০টি বেত্রাঘাত করেন।) উচ্চপদে অধিষ্ঠিত করেন। তার এই স্বজনপ্রীতিতে সাধারণ মানুষ তো বটেই এমনকি নবীজীর স্ত্রী বিবি আয়েশা ও তার ভ্রাতা আব্দুর রহমান, তালহা ও জুরায়েরকে বিক্ষুব্ধ করেছিল। ফলশ্রুতিতে ওসমানের হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে, যার মধ্য দিয়ে ঐ ক্ষোভের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল। যাইহোক, মোদ্দাকথা এই যে, খলিফা মুয়াবিয়া এই মারওয়ান বিন আল হাকামকে ৫৪ হিজরীতে মদিনার গর্ভণর নিযুক্ত করেছিলেন।
আরব বলে চলল, “হে মহানুভব, হে সুবিবেচক, আমি আপনার নিকট এসেছি এমন একটা সময়ে, যখন এমন বড় প্রশস্ত পৃথিবীতেও আমার চলাচলের পথ সংকীর্ণ হয়ে গেছে, সুতরাং আমার আর্জি প্রত্যাখ্যান করবেন না। বরং নির্যাতিতের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করুন। আমি তো ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছি। এর চেয়ে হয়ত: মৃত্যুই ছিল আমার জন্যে উত্তম।” সে বিলাপ করতে লাগল- “হায়! আমার মামলা আমাকে শেষ করে দিয়েছে, আমাকে সাঈদা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। ঐ স্বৈরাচারী ন্যায়বিচার করেননি বরং আমাকে জোরপূর্বক আমার স্ত্রী থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। তিনি হয়ত: আমাকে হত্যা করার কথাও ভেবেছিলেন, কিন্তু আমার সময় এখনও আসেনি, এমনকি আমার দৈনিন্দন কার্য্যাবলীর মেয়াদও নিশ্চয় শেষ হয়ে যায়নি।”
লোকটির অসংলগ্ন কথাবার্তা শুনে মুয়াবিয়া বললেন, “ওহে আরব ভ্রাতা, শান্ত হও। আর তোমার ঘটনাটি পুরো খুলে বল যাতে আমি তোমার বিষয়টির সঠিক ফয়সালা করতে পারি।”
তখন লোকটি বলতে শুরু করল, “হে আমিরুল মুমেনিন! সাঈদা নামে আমার এক স্ত্রী ছিল। আমি বিমোহিত হয়ে তার প্রেমে ডুবে ছিলাম। তাকে দেখে আমার নয়ন জুড়াত এবং হৃদয় খুশীতে ভরে উঠত। আর আমার ছিল একটা মাদি উট। এই উটটি আমার ও আমার স্ত্রীর সংসার জীবনকে প্রাচুর্যময় করে তুলতে সহায়ক ভুমিকা পালন করছিল। তারপর আমাদের উপর নেমে এল এক দুর্ভাগ্যময় বৎসর। আমি নি:স্ব হয়ে গেলাম। এক জোড়া চটি কেনার সমর্থও আর আমার রইল না। সম্পদ ও সম্বল বলতে যা আমার রইল, তা কেবল আমার স্ত্রী। আমার এই চরম দূ:সময়ে যারা আমাকে চিনত, তারা আমাকে দেখে আফসোস করতে লাগল। প্রতিবেশীরা আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করল। আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবগণ আমার বাড়ীতে আসা বন্ধ করে দিল। আর আমার শ্বশুর যখন আমার এই ভয়াবহ দূরাবস্থার কথা জানতে পারলেন, তখন তিনি এসে আমার স্ত্রীকে তার সঙ্গে করে নিয়ে চলে গেলেন।
অত:পর যখন আমি আমার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে গেলাম, আমার শ্বশুর আমাকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করলেন। তিনি আমার সাথে কেবল চরম দূর্ব্যবহারই করলেন না বরং আমাকে হুমকি দিলেন এবং কুকুরের ন্যায় তাড়িয়ে দিলেন। আমি এসময় মদিনায় নিযুক্ত আপনার গভর্ণর মারওয়ান বিন আল হাকামের কাছে গেলাম এই আশায় যে, তিনি হয়ত: আমাকে সাহায্য করতে পারবেন। কিন্তু যখন আমার শ্বশুর তার সামনে এলেন এবং মারওয়ান তাকে আমার অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করলেন, তিনি সাফ জবাব দিলেন, “আমি তাকে চিনি না।” তখন আমি আর্তনাদ করে ফরিয়াদ করলাম, “খোদা আমিরের সহায় হোন! অনুগ্রহ করে আমার স্ত্রীকে যেন তলব করা হয়, যাতে সে তার পিতার উক্তির বিষয়ে স্বাক্ষ্য দিতে পারে।”
আমির মারওয়ান আমার আবেদনে সাড়া দিয়ে আমার স্ত্রীকে তলব করলেন। তারপর যখন আমার স্ত্রী তার সম্মুখে এল, তিনি তার সৌন্দর্য্যে অভিভূত হয়ে পড়লেন এবং তৎক্ষণাৎ আমার শত্রু হয়ে গেলেন। তিনি আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করলেন এবং ঘৃণার বাণ নিক্ষেপ করে আমাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিলেন। এ এমন হল যেন, আমি স্বর্গচ্যূত হলাম আর প্রবল বায়ূ আমাকে বহু দূরের কোন স্থানে উড়িয়ে নিয়ে চলল। আমি শুনতে পেলাম, মারওয়ান আমার শ্বশুরকে বলছেন, “এক হাজার স্বর্ণ ও দশ হাজার রৌপ্য মূদ্রার বিনিময়ে যদি আপনি আপনার কন্যাকে আমার সাথে বিবাহ দিতে রাজী হন, তবে আমি তাকে এই আরবের কাছ থেকে মুক্ত করে দেব।”
আমার শ্বশুর অর্থের লোভে পড়লেন, আর তৎক্ষণাৎ তার প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেলেন।
আমার শ্বশুর অর্থের লোভে পড়লেন, আর তৎক্ষণাৎ তার প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেলেন।
তারপর যখন আমার শ্বশুর ঐ অর্থ হস্তগত করলেন, তখন মারওয়ানের উপস্থিতিতে তার সম্মুখে আমাকে হাজির করা হল। আর তিনি আমার সাথে খ্যাপা সিংহের ন্যায় আচরণ শুরু করলেন। অত:পর যখন আমার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে আমাকে আদেশ করা হল, তখন আমি তা করতে অস্বীকার করলাম। ফলে মারওয়ান আমাকে তার নির্দয় একদল দাসের হাতে সমর্পণ করলেন। তারা আমাকে বেঁধে ফেলল এবং নানা উপায়ে আমাকে অত্যাচার করল যেন আমি একটা নরকের কীট।
শেষে এমন হল, স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়া ছাড়া আমার জীবন রক্ষার আর কোন উপায় রইল না। সুতরাং আমি তাই করলাম এবং তাতে আমির মারওয়ান আমাকে পুন:রায় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলেন। আমি সেখানে ততদিন রইলাম যতদিন না তার ইদ্দতকাল (এটা তালাকপ্রাপ্তা বা ডিভোর্সীর জন্যে তিন মাস এবং বিধবার জন্যে চারমাস দশদিন) শেষ হল। তারপর মারওয়ান তাকে বিবাহ করে নিলেন এবং আমাকে মুক্তি দিলেন। আর মুক্ত হয়ে আমি সরাসরি আপনার দরবারে এসেছি। এখন আমি আপনার নিকট নিরাপত্তা, আশ্রয় ও সুবিচার প্রার্থনা করছি।”
শেষে এমন হল, স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়া ছাড়া আমার জীবন রক্ষার আর কোন উপায় রইল না। সুতরাং আমি তাই করলাম এবং তাতে আমির মারওয়ান আমাকে পুন:রায় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলেন। আমি সেখানে ততদিন রইলাম যতদিন না তার ইদ্দতকাল (এটা তালাকপ্রাপ্তা বা ডিভোর্সীর জন্যে তিন মাস এবং বিধবার জন্যে চারমাস দশদিন) শেষ হল। তারপর মারওয়ান তাকে বিবাহ করে নিলেন এবং আমাকে মুক্তি দিলেন। আর মুক্ত হয়ে আমি সরাসরি আপনার দরবারে এসেছি। এখন আমি আপনার নিকট নিরাপত্তা, আশ্রয় ও সুবিচার প্রার্থনা করছি।”
সবশুনে মুয়াবিয়া বললেন, “হাকাম পুত্র সহ্যের সকল সীমা অতিক্রম করেছে। সে অবিবেচক হয়েছে এবং ন্যায়বিচার পরিহার করেছে। সে এমনকিছু করার দু:সাহস দেখিয়েছে যা মুসলিম সমাজে অনৈতিক কার্য্য হিসেবে বিবেচিত।” আর তিনি ঐ আরবকে সম্বোধন করে বললেন, “সত্যি বলতে কি, ওহে আরব! তুমি এমন এক ঘটনা আমার সামনে উপস্থাপন করেছ যা আমি পূর্বে কখনও শুনিনি।”
তারপর তিনি মারওয়ানকে এক পত্র দিলেন, যাতে লেখা ছিল- “Verily what I have heard concerning thee is, that thou hast overstepped the limits of prudence in dealing with thy subjects. And it is imperative that he who holds rule should, concerning his passions, be as one who is blind, and should turn his back upon his desires.”
এই পত্রে তিনি আরও যা লিখেছিলেন তার সারমর্ম এমন- “Thou didst reign over a mighty province, but thou wert not capable; Therefore ask pardon from God for thine adulterous deed. And verily the miserable youth came weeping to us, and laid before us his trouble and his sorrows. I swear an inviolable oath to Heaven, yea, and else may I be excluded from my religion and my faith, that dost thou disobey me in what I have written I will surely make of thee meat for eagles.”
“Divorce Saida, and send her equipped instantly, with el-Kamit and Nasr son of Dzabyan.”
তিনি পত্রটি ভাঁজ করে সীল-গালা করলেন এবং আল কামিত ও নসরকে ডেকে তাদের হাতে গুরুত্বপূর্ণ ঐ পত্রটি দিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন।
মুয়াবিয়ার প্রতিনিধিদ্বয় মদিনায় আগমনপূর্বক মারওয়ানকে পত্রটি হস্তান্তর করল। যদিও মারওয়ান খলিফা মুয়াবিয়ার চাচাত ভাই তদুপরি এই আদেশ অমান্য করার শক্তি বা সাহস তার ছিল না। সুতরাং তিনি নির্দেশ মত তৎক্ষণাৎ পত্রবাহকদ্বয়ের উপস্থিতিতে সাঈদাকে তালাক দিলেন এবং তাকে তাদের হস্তে সমর্পণ করলেন। তারপর খলিফার পত্রের এক সযত্ন উত্তর দিলেন। তিনি লিখলেন-
“Be not hasty, Amir ul Muminin. For verily thy vow shall be
redeemed in private and in public. Though overcome by admiration, I acted not unlawfully, for how could I bear the titles oppressor, adulterer?
Hold me excused, for surely, hadst thou seen her, my passion had been thine, by nature's inevitable law. This Sun will soon approach thee; there is not her peer within the realms of men or of genii."
মারওয়ান তার চিঠিটি সীলগালা শেষে আগত দূতদের হাতে তা সমর্পণ করে সাঈদাসহ তাদেরকে বিদায় দিলেন।
সাঈদাকে সঙ্গে নিয়ে দূতদ্বয় দামেস্কে ফিরে এল এবং খলিফা মুয়াবিয়ার হস্তে মারওয়ানের পত্রটি সমর্পণ করল। পত্রপাঠ শেষে মুয়াবিয়া বললেন, “সে আমার আদেশ যথাযত ভাবেই পালন করেছে।”
তারপর খলিফা মুয়াবিয়া ঐ আরবের স্ত্রীকে হাজির করতে নির্দেশ দিলেন। আর যখন সে এল, তিনি তার অনাবৃত মুখাবয়ব দর্শণে মোহিত হয়ে গেলেন। আল্লাহর হাজার শোকর, কি অপার পরিমিত সৌন্দর্য্য তিনি তার সৃষ্টিকে দিয়েছেন! বিষ্ময় কাটিয়ে নিজেকে সামলে নিলেন খলিফা। নড়েচড়ে বসলেন। তারপর আরবকে হাজির করতে নির্দেশ দিলেন। রক্ষীগণ তখনি তাকে দরবারে উপস্থিত করল।
খলিফা বললেন, “ওহে আরব! তুমি কি এই নারীর বিনিময় গ্রহণ করবে? তার বিনিময়ে তোমাকে আমরা তিনজন চাঁদ-বদন সুন্দরী, যারা হবে অষ্টাদশী পূর্ণ যুবতী এবং কুমারী। আর তাদের প্রত্যেকের সাথে থাকবে এক সহস্র স্বর্ণমূদ্রা (দিনার)। উপরন্তু, তোমার জীবিতকাল অবধি প্রতি বৎসর রাজকোষ থেকে সমপরিমান অর্থ ভাতা হিসেবেও পাবে।”
আরব যুবক মুয়াবিয়ার উক্তি শুনে বিবর্ণ হয়ে গেল। সে কি মূর্চ্ছা গেল! মুয়াবিয়া ত্বরিৎ বললেন, “ওহে ভ্রাতা, তোমার উপর কোন শয়তানের আছর হল যে, তোমাকে এমন বিবর্ণ দেখাচ্ছে? প্রস্তাবটা তো ভাল, আর তুমিও নিশ্চয় নির্বোধ নও।”
আরব মুখ তুলল, বলল, “হে মহাত্মন, আমি স্বৈরাচার হাকাম পুত্রের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে আপনার নিকট নিরাপত্তা ও আশ্রয় চেয়েছিলাম। কিন্তু, আপনার নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে আমি কার কাছে আশ্রয় নেব?” তারপর দৃষ্টি আনত করে সে দৃঢ় কন্ঠে বলল, “খোদার কসম! ও আমিরুল মুমেনিন, আপনি যদি খেলাফতটাও আমাকে দান করেন, তবে আমার স্ত্রী সাঈদার বিনিময়ে আমি তা নিশ্চয়ই গ্রহণ করব না।”
দিনারস |
আরব বলল, “তবে তাই হোক।”
সুতরাং মুয়াবিয়া সাঈদাকে বললেন, “বল সাঈদা, তুমি কাকে বেঁছে নেবে, the Commander of the Faithful with his power, and his rank, and his palaces, and his empire, and his wealth, and all that thou hast seen around him; or Marwan son of al-Hakam, with his tyranny and his injustice; or this Arab, with his hunger and his poverty?”
দিরহামস |
সে বলে চলল- “খোদার কসম! ও আমিরুল মুমেনিন! I am not going to forsake him because times have changed, nor because the days are darkened. Neither let it be forgotten that I have been his companion from the first, and our love is not worn out. And it is right that I should be the one to bear patiently with him in adversity, who have with him been happy in brighter days.”
আরব যুবকের প্রতি স্ত্রীলোকটির ভালবাসা ও বিশ্বস্ততা দেখে মুয়াবিয়া অভিভূত হলেন। তিনি তৎক্ষাণাৎ তাদের উভয়কে দশ হাজার করে রৌপ্য মুদ্রা (দিরহাম) উপঢৌকন দিলেন। আর ঐ আরব, স্বৈরাচারী মাওয়ান বিন আল হাকামকে কঠোর শাস্তির অধীনে দেখার আত্মতৃপ্তি থেকে বঞ্চিত হলেও প্রিয়তমা স্ত্রীকে ফেরৎ ও সঙ্গে নগত অর্থ পেয়ে বলাযায় খুশীমনেই দরবার পরিত্যাগ করল।
সমাপ্ত।
উৎস:
Historical Tales and Anecdotes of the Time of the Early Khalifahs by Muhammad Diyab al-Atlidi.
Historical Tales and Anecdotes of the Time of the Early Khalifahs by Muhammad Diyab al-Atlidi.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন