১৩ জুন, ২০১২

Torah: তাওরাত কিতাবের সংক্ষিপ্তসার।

"আমি তোমাদের প্রত্যেককে একটি আইন ও পথ দিয়েছি। যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে তোমাদের সবাইকে এক উম্মত করে দিতেন, কিন্তু এরূপ করেননি- যাতে তোমাদের যে ধর্ম দিয়েছেন, তাতে তোমাদের পরীক্ষা নেন। অতএব দৌঁড়ে কল্যাণকর বিষয়াদি অর্জন কর। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তণ করতে হবে। অতঃপর তিনি অবহিত করবেন সে বিষয়, যাতে তোমরা মতবিরোধ করতে।"-(৫:৪৮)

"..‘ঐ গ্রন্থ কে নাযিল করেছেন, যা মূসা নিয়ে এসেছিল? যা জ্যোতি বিশেষ এবং মানবমন্ডলীর জন্যে হেদায়েতস্বরূপ, যা তোমরা বিক্ষিপ্ত পত্রে রেখে লোকদের জন্যে প্রকাশ করছ এবং বহুলাংশকে গোপন করছ। তোমাদেরকে এমন অনেক বিষয় শিক্ষা দেয়া হয়েছে যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা জানত না।’
বলে দাও, ‘আল্লাহ নাযিল করেছেন।..’" -(৬:৯১)

"আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছি। এতে হেদায়েত ও আলো রয়েছে। আল্লাহর আজ্ঞাবহ পয়গম্বর, দরবেশ ও আলেমরা এর মাধ্যমে ইহুদিদের ফয়সালা দিতেন। কেননা তাদেরকে এই খোদায়ী গ্রন্থের দেখা শোনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং তারা এর রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত ছিল।.. আমি এই গ্রন্থে তাদের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং যখমসমূহের বিনিময় সমান যখম। অতঃপর যে ক্ষমা করে, সে পাপ থেকে পবিত্র হয়ে যায়। যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদানুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই অত্যাচারী।" -(৫:৪৪-৪৫)

তাওরাত খোদায়ী গ্রন্থ। সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থ কোরআনে এ গ্রন্থ সম্পর্কে অনেক বর্ণনা আছে এবং আমরা উপরের আয়াতসমূহ থেকে জানছি যে এই গ্রন্থ এখন আর অবিকৃত নেই। তদুপরি ঐ গ্রন্থে কি নির্দেশ ছিল তা আমাদের কৌতুহল। যদিও কোরআন থেকে আমরা জানি মূল আইনসমূহের কোন পরিবর্তন নেই- কোন কিতাবেই । "..তুমি আল্লাহর বিধানে পরিবর্তণ পাবে না এবং আল্লাহর রীতিনীতিতে কোনরকম বিচ্যুতিও পাবে না।" -(৩৫:৪৩) যাইহোক, এখন আমরা দেখি তাওরাতে কি ছিল।

খোদা মূসাকে যে ব্যবস্থা (Torah) দিয়েছিলেন তা ছিল পূর্ণ এক কিতাব। Actually,Torah consists of five books (Pentateuch). In the first, the beginning of the creation and history from Adam to Joseph are recorded. Tn the second the enslaving  of the Israelite's by the Egyptians, the coming of Moses, the destruction of Pharaoh, the establish of the Arc of the covenant, the event in the wilderness, the Imamship of Aaron, the promulgation of the Decalogue, and the hearing by the people of the words of Allah the Most High., are related. The third book contains a summary of the  commandments. The fourth  the number of the people, the distribution of the land to them, the circumstances of the envoys sent by Moses to Syria, the history of the Mannah-Salwah, and of the cloud for guiding, shedding and lighting them..The fifth contains the numbers of the commandments of the Torah to elucidate the summary account, it also records the decease of Aaron and of Moses, and the succession of Joshua.

তবে যে তৌরাত বর্তমান রয়েছে তা মূল অাসমানী কিতাব নয়, নেবু চাঁদ নেজ্জার জেরুজালেম আক্রমণের পর ইহুদিদেরকে নাঙ্গা করে শিকলে বেঁধে নিয়ে গিয়ে তার রাজ্যের নানান স্থানে বসিয়ে দেন। ফলে ইহুদিরা কিতাবহীন হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে নবী ওজায়ের (Ezra) নির্বাসনের সময় তার পিতা কর্তৃক মাটিতে প্রোথিত করে রেখে যাওয়া পাঠের অনুপোযুক্ত হয়ে পড়া তৌরাত থেকে যতটুকু সম্ভব উদ্ধার ও বাকীটা তার মেমরী থেকে নিয়ে কিতাবটিকে আবারো লিখিত আকার দেন। তার সংকলিত ঐ গ্রন্থে ৬১৩টি শরিয়া আইন বা ব্যবস্থা ছিল। বিস্তারিত ঐ ব্যবস্থার সংক্ষিপ্তসার আমরা বোঝার সুবিধার্থে তিনভাগে বিভক্ত করেছি, যথা- নীতিগত ব্যবস্থা তথা দশ আজ্ঞা, সামাজিক বিচার ব্যবস্থা এবং ধর্মীয় আচার-বিধি ও উৎসবাদি-

ক). নীতিগত ব্যবস্থা তথা দশ আজ্ঞা:
-খোদা ব্যতিত অপর কাউকে উপাস্য স্থির কোরও না। (আমি ব্যতিত অন্য কোন উপাস্য নেই।)
-প্রতিমার পূজা কোরও না। (এক্ষেত্রে পিতার অপরাধের প্রতিফল সন্তানদের উপর বর্তিবে, যারা আমাকে দ্বেষ করে, তাদের উপর তৃতীয় ও চতুর্থ পুরুষ পর্যন্ত তা বর্ত্তিবে; কিন্তু যারা আমাকে প্রেম করে ও আমার আজ্ঞাসমূহ পালন করে, তাদের সহস্র পুরুষ পর্যন্ত আমার আশীর্বাদে ধন্য হবে।)

-অনর্থক (অসৎ উদ্দেশ্যে) খোদার নাম নিও না। 
-বিশ্রামবারকে পবিত্ররূপে মান্য কোরও। (তোমরা সপ্তাহের ছয়দিন কাজ করবে এবং সপ্তমদিন বিশ্রামবার হিসেবে পালন করবে। এতে তোমাদের হালের ও ভারবাহী পশু, তোমাদের গৃহে জন্ম নেয়া দাস-দাসী আর অন্যান্য জাতির লোকেরাও পরিশ্রম থেকে রেহাই পাবে।)
-পিতা-মাতাকে সমাদর কোরও।
-নরহত্যা কোরও না।
-ব্যভিচার কোরও না।
-চুরি কোরও না।
-প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে মিথ্যে সাক্ষ্য দিও না।
-প্রতিবেশীর কোন বস্তুতে (প্রতিবেশীর স্ত্রী, তার দাস-দাসী, তার পশু কিম্বা অন্য যে কোন বস্তু) লোভ কোরও না। 

খ) সামাজিক বিচার ব্যবস্থা: 
০১. খোদার একত্ব ও পবিত্রতা: খোদা এক এবং অদ্বিতীয়। তোমার সমস্ত অন্তর, সমস্ত প্রাণ, সমস্ত মন এবং সমস্ত শক্তি দিয়ে, তাকে মহব্বত করবে। উপাসনায় কাউকে তাঁর অংশীদার সাব্যস্ত করবে না। স্বর্ণ বা রৌপ্য দ্বারা নিজেদের জন্যে কোন দেবদেবতাও তৈরী করে নেবে না।
খোদাকে অপমান কোরও না। তাঁকে যা দেবার তা দিতে দেরী কোরও না। তাঁর পবিত্র নামের পবিত্রতা নষ্ট কোরও না। তাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করবে।
খোদার নামে মিথ্যে কসম খেও না। এতে খোদার পবিত্র নামকে অপবিত্র করা হয়।
০২. সামাজিক আইন-কানুন বা বিধি-বিধান: ক্রয়কৃত কোন দাস ছয় বৎসর তার মালিকের অধীনে কাজ করবে, কিন্তু সপ্তম বৎসরে তাকে কোন বিনিময় ছাড়াই মুক্তি দিতে হবে। যদি সে একা এসে থাকে তবে একাই চলে যাবে, কিন্তু যদি সে তার স্ত্রীকেও সঙ্গে এনে থাকে তবে তাকেও তার সঙ্গে যেতে দিতে হবে। কিন্তু ঐ দাসের বিবাহ যদি তার মনিবই দিয়ে থাকে আর তার সন্তানাদি হয়ে থাকে, তবে সেই স্ত্রী ও সন্তানেরা মনিবেরই থেকে যাবে। কিন্তু যদি ঐ দাস স্পষ্ট করে জানায় যে, সে তার মনিব, তার স্ত্রী ও সন্তানদেরকে ভালবাসে এবং তাদের ছেড়ে চলে যাবার ইচ্ছে তার নেই, তবে তার মনিব তাকে স্বাক্ষ্য তাম্বুর সম্মুখে উপস্থিত করবে। তারপর তাম্বুর দ্বারদেশে তুরপুন দিয়ে তার কান ফুঁটো করে দেবে। এতে সে সারাজীবন ঐ মালিকের দাস হয়ে থাকবে।

যদি কেউ তার কন্যাকে দাসী হিসেবে বিক্রি করে, তবে তার মনিব তাকে দাসের মত মুক্ত করে দিতে পারবে না। কিন্তু যে মনিব তাকে নিজের জন্যে পছন্দ করে নিয়েছে অতঃপর সে যদি তার উপর খুশী হতে না পারে, তবে তাকে মুক্ত করে দেবে। কিন্তু তার সাথে প্রবঞ্চনা করতে বা অন্য কারও কাছে তাকে বিক্রি করতে পারবে না। আর যদি মনিব তার পুত্রের জন্যে তাকে পছন্দ করে নিয়ে থাকে তবে নিজকন্যার মত সব অধিকার তাকে দিতে হবে। আর যদি মনিব সেই দাসীকে বিবাহ করার পরেও অন্য কাউকে বিবাহ করে তবুও সে তার খোরাক পোষাক দিতে বাধ্য থাকবে এবং তার দৈহিক চাহিদাও তাকে পূরণ করতে হবে। কারণ স্ত্রী হিসেবে এটা তার প্রাপ্য। সে যদি এই কর্তব্য না করে তবে কোন অর্থের বিনিময় ছাড়াই তাকে মুক্তি দিতে হবে।’
কারও আঘাতের ফলে যদি কারও মৃত্যু হয়, তবে আঘাতকারীর প্রাণদন্ড হবে। কিন্তু খুনের উদ্দেশ্য যদি তার না থেকে থাকে- যদি এটা হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা হয়, তবে তাকে হত্যা করা যাবে না। যদি কেউ সুপরিকল্পিতভাবে কাউকে হত্যা করে বেদীর কাছে গিয়েও আশ্রয় নেয়, তবে সেখান থেকেও তাকে ধরে এনে হত্যা করতে হবে। 
পিতা বা মাতার প্রহারকারীকে হত্যা করতে হবে। পিতামাতার শাপদাতাও মৃত্যূদন্ডে দন্ডিত হবে।

যদি কারও আঘাতের ফলে কারও অঙ্গহানী হয়, তবে সেই আঘাতকারীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং তাকে সুস্থ্য করার সব ব্যবস্থা এবং যাবতীয় ব্যয় ভারও বহন করতে হবে। আর দাস বা দাসীর ক্ষেত্রে সে মুক্ত হয়ে যাবে। আর যদি কারও আঘাতের দ্বারা তার দাস বা দাসীর মৃত্যু হয়, তবে আঘাতকারীকে হত্যা করতে হবে। কিন্তু যদি সে দু-একদিন বেঁচে থাকে অতঃপর তার মৃত্যু হয়, তবে আঘাতকারী কোন শাস্তি পাবে না, কারণ সে তার নিজেরই সম্পত্তি।
যদি কারও আঘাতের দ্বারা কোন গর্ভবতী স্ত্রীলোকের গর্ভ নষ্ট হয়ে যায়, তবে সেই স্ত্রীলোকের স্বামীর দাবী অথবা বিচারকের রায় অনুসারে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কিন্তু এছাড়া যদি অন্য কোন ক্ষতি হয় তবে আঘাতকারীকে শাস্তি পেতে হবে। যেমন- প্রাণের বদলে প্রাণ, দাঁতের বদলে দাঁত, হাতের বদলে হাত, পায়ের বদলে পা, জখমের বদলে সমান জখম ইত্যাদি। 

যদি কেউ তার জমির কোন গর্তের মুখ খুলে রাখে, কিম্বা কোন গর্ত খুঁড়ে ঠিকমত তার মুখ ঢাকা দিয়ে না রাখে আর সেই গর্তে পড়ে যদি কোন পশুর মৃত্যু হয়, তবে তাকেই তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তবে মৃত পশুটা তার হয়ে যাবে। 
যদি কোন গরুর শিং এর আঘাতে কারও মৃত্যু হয় তবে পাথর নিক্ষেপে সেই গরুকে অবশ্যই হত্যা করতে হবে। সেই গরুর মাংস কেউ খাবে না এবং গরুর মালিকও কোন শাস্তি পাবে না। তবে গরুটার যদি গুঁতানোর অভ্যাস থাকে আর তার মালিককে সাবধান করে দেবার পরেও সে যদি তাকে আঁটকে না রাখে আর সেই গরুটার দ্বারা কারও মৃত্যু হয়, তবে পাথর নিক্ষেপে গরু এবং তার মালিককেও হত্যা করতে হবে। কিন্তু নিহতের ওয়ারিশরা যদি মালিকের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবী করে, তবে তা পরিশোধ করে সে তার জীবন রক্ষা করতে পারবে। 

কোন গরু যদি কোন দাস বা দাসীকে হত্যা করে ফেলে তবে তার মনিবকে গরুর মালিক ক্ষতিপূরণ বাবদ তিন‘শ ষাট গ্রাম রূপা দেবে, আর সেই গরুটাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করবে। আবার যদি কারও গরু অন্য কারও গরুকে হত্যা করে, তবে ঐ গরুর বিক্রয় লব্ধ অর্থ এবং মৃত গরুটাকে তারা দু‘জনে ভাগ করে নেবে। কিন্তু যদি একথা জানা যায় যে, গরুটা হিংস্র স্বভাবের মালিক তা পূর্ব থেকেই জ্ঞাত কিন্তু সে তাকে বেঁধে রাখেনি তবে সেই মালিককে গরুর বদলে গরু দিতে হবে এবং মৃত গরুটা তার হয়ে যাবে।

যদি কারও পালিত পশু অন্যকারও ক্ষেতের ফসল নষ্ট করে, তবে তাকে নিজের ক্ষেতের সর্বোৎকৃষ্ট ফসল দিয়ে তার ক্ষতিপূরণ করতে হবে।
কারও কাছ থেকে ধার স্বরূপ আনা কোন পশু যদি মালিকের অনুপস্থিতিতে আহত হয় বা মৃত্যুবরণ করে, তবে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কিন্তু মালিকের সম্মুখেই যদি তা হয় তবে তাকে কোন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। কিন্তু পশুটা যদি অর্থের বিনিময়ে ভাড়া করে আনা হয়ে থাকে তবে সেই পরিমান অর্থই তার ক্ষতিপূরণ হবে।

যদি কারও জ্বালান আগুন দ্বারা অন্য কারও ফসল বা অন্য কোন সম্পদের ক্ষতি সাধিত হয়, তবে আগুনটা যে জ্বালিয়েছিল তাকেই তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
যদি কেউ গরু বা ভেড়া চুরি করে এনে জবেহ করে, কিম্বা বিক্রি করে দেয়, তবে একটা গরুর পরিবর্তে পাঁচটা এবং একটা ভেড়ার পরিবর্তে চারটা ভেড়া ফিরিয়ে দিতে হবে। 
চোরকে চুরি করা জিনিষের জন্যে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, কিন্তু যদি সে সম্বলহীন হয় তবে তাকেই বিক্রি করে সেই অর্থ আদায় করে দিতে হবে। চুরি করা পশু যদি চোরের কাছে পাওয়া যায় তবে চোরকে সেগুলোর দ্বিগুণ ফিরিয়ে দিতে হবে। আবার যদি কোন চোর রাতে চুরি করার সময় ধরা পড়ে আহত হয়ে মারা যায়, তবে আঘাতকারী হত্যার দায়ে দায়ী হবে না। কিন্তু যদি সূর্য্য উঠবার পরে তা হয় তবে সে সেই খুনের জন্যে দায়ী হবে। 

যদি কেউ কাউকে চুরি করে নিয়ে এসে বিক্রি করে দেয় কিংবা যদি তাকে তার সঙ্গে পাওয়া যায়, তবে তাকে হত্যা করতে হবে। 
যদি কেউ কারও কাছে অর্থ সম্পদ রাখতে দেয় আর তার গৃহ থেকে তা চুরি হয়ে যায় এবং চোর ধরা পড়ে, তবে চোর তার দ্বিগুণ ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু যদি চোর ধরা না পড়ে তবে গৃহকর্তা নিজেই সেইসব নিয়েছে কিনা তা স্থির করার জন্যে তাকে বেদীর সম্মুখে উপস্থিত হতে হবে। 

অন্যের দখলে আছে এমন কোন পশু বা পরিধেয় বস্ত্র কিম্বা অন্য কোন হারান জিনিষ দেখে যদি কেউ নিজের বলে দাবী করে, তবে তা মীমাংসার জন্যে দু‘পক্ষকেই বেদীর সম্মুখে উপস্থিত হতে হবে। সেখানে খোদা যাকে দোষী বলে স্থির করবেন সে অন্যজনকে তার দ্বিগুণ ফিরিয়ে দেবে। 

যদি কেউ তার কোন পশু কারও কাছে পালনার্থে রাখতে দেয়, আর তা মরে যায় বা আঘাত পায়, কিম্বা ছিনতাই হয় অথচ কেউ এসব হতে দেখেনি, তবে তাকে বেদীর সম্মুখে উপস্থিত হতে হবে ব্যাপারটার মীমাংসার জন্যে। আর ঐ ব্যক্তি খোদাকে সাক্ষী করে বলবে-‘আমি প্রতিবেশীর দ্রব্যে হস্তার্পণ করিনি।’ আর সেই পশুর মালিককে তা মেনে নিতে হবে এবং কোন ক্ষতিপূরণ সে দাবি করতে পারবে না। কিন্তু সেই ব্যক্তির কাছ থেকে যদি সেটা চুরি হয়ে যায় তবে তাকেই ক্ষতিপূরণ দিতেই হবে। আর যদি কোন হিংস্র জন্তু সেই পশুটাকে ছিঁড়ে ফেলে তবে তা প্রমান করার জন্যে তাকে পড়ে থাকা অংশগুলো নিয়ে এসে দেখাতে হবে। এ অবস্থায় তাকে আর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। 
কোন কুমারীকে যদি কেউ ভুলিয়ে এনে তার সঙ্গে ব্যভিচার করে, তবে সেই ব্যক্তিকে তার বিয়ের পণ দিতে হবে এবং মেয়েটা তার স্ত্রী হবে। কিন্তু যদি মেয়েটির পিতা কিছুতেই তার কাছে কন্যাদানে সম্মত না হয় তাহলেও ঐ ব্যক্তিকে ঐ মেয়েটির বিয়ের পণ দিতে হবে। 
কোন ব্যক্তি যদি ব্যভিচারে লিপ্ত অবস্থায় ধরা পড়ে, তবে তাদের উভয়কেই দেহের অর্ধাংশ মাটিতে প্রোথিত করে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করতে হবে।
ইস্রায়েলী হোক বা তাদের মধ্যে বসবাসকারী কোন বিদেশী হোক, তাদের কেউ যদি তার সন্তানকে বা বংশের কাউকে মোলক দেবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে, তবে তার প্রাণদন্ড হবে, লোকেরা তাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করবে। আর যদি তারা তা না করে সেইসময় চক্ষু মুদিত রাখে, তবে তাদের সকলে অপরাধী সাব্যস্ত হবে এবং আমি তাদের সকলকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন করব।

মায়াবিনী কিম্বা গণকের বিদ্যা ব্যবহার কোরও না। মায়াবিনী মৃত্যুদন্ডের সাজা পাবে। জ্যোতিষ বা গণকের কাছে ভাগ্য অন্বেষণে যাবে না। আর পুরুষ কিম্বা স্ত্রীলোকের মধ্যে যে কেউ ভূতাড়িয়া বা গুণী হয়, তার প্রাণদন্ড হবে। লোকে তাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করবে এবং তার রক্ত তারই উপর বর্তিবে।
কোন পশুর সঙ্গে যৌন সঙ্গমকারীকে এবং ঐ পশুটিকে অবশ্যই হত্যা করতে হবে। 
কোন ঈমাম কন্যা যদি বেশ্যা হয়, তবে তাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করবে।
সন্তানদের পাপের জন্যে পিতাকে কিম্বা পিতার পাপের জন্যে সন্তানকে হত্যা করা যাবে না। প্রত্যেকে তার নিজের পাপের ভার বহন করবে। 
০৩. সম্পত্তি আইন: ভূমি চিরকালের নিমিত্ত বিক্রীত হবে না, কেননা ভূমি আমারই; তোমরা তো আমার সাথে বিদেশী ও প্রবাসী। আর তোমরা নিজেদের অধিকৃত দেশের সর্বত্র ভুমি মুক্ত করতে দেবে।

কেউ যদি দরিদ্র হয়ে আপন অধিকারের কিঞ্চিত বিক্রয় করে, তবে তার মুক্তিকর্তা নিকটস্থ জ্ঞাতি এসে নিজ ভ্রাতার বিক্রীত ভূমি মুক্ত করে নেবে। যার মুক্তিকর্তা নেই, সে যদি ধনবান হয়ে নিজে তা মুক্ত করতে সমর্থ হয়, তবে সে তার বিক্রয়ের বৎসর গণনা করে তদনুসারে অতিরিক্ত মূল্য ক্রেতাকে ফিরিয়ে দেবে; এরূপে সে নিজ অধিকারে ফিরে যাবে। কিন্তু যদি সে তা ফিরিয়ে নিতে অসমর্থ হয়, তবে সেই বিক্রীত অধিকার যোবেল বৎসর পর্যন্ত ক্রেতার হস্তে থাকবে; অত:পর যোবেল বৎসরে তা মুক্ত হবে এবং সে আপন অধিকারে ফিরে যাবে।

প্রাচীর বেষ্টিত কোন শহরের কোন বাড়ী যদি কেউ বিক্রি করে, তবে বিক্রি করার পর এক বৎসর পর্যন্ত তা ছাড়িয়ে নেবার অধিকার তার থাকবে। বাড়ীটা যদি এক বৎসরের মধ্যে ছাড়িয়ে নেয়া না হয় তবে যে তা কিনেছে, স্থায়ীভাবে সেটা তার ও তার বংশধরদের হয়ে যাবে। ফিরে পাওয়ার বৎসর তথা যোবেল বৎসরেও সেটা ফিরিয়ে দিতে হবে না। কিন্তু প্রাচীর বেষ্টিত নয় এমন গ্রামের বাড়ীগুলো খোলা জমি জায়গার মতই ধরে নিতে হবে। সেগুলো ছাড়িয়ে নেয়া যাবে এবং যোবেল বৎসরে সেগুলো ফেরতও দিতে হবে। তবে সম্পত্তি হিসেবে পাওয়া লেবীয়দের সব গ্রাম ও শহর এবং সেগুলোর মধ্যেকার বাড়ীগুলো তাদের সবসময়ই ছাড়িয়ে নেবার অধিকার থাকবে। যদি লেবীয়দের বিক্রি করা সম্পত্তি, কোন লেবীয় ছাড়িয়ে নেয়, তবে  সেই বিক্রীত গৃহ এবং তার অধিকারস্থ নগর যোবেল বৎসরে মুক্ত হবে, কারণ ইস্রায়েলীদের মধ্যে লেবীয়দের গ্রাম ও শহরের বাড়ী-ঘর তাদেরই সম্পত্তি। কিন্তু তাদের গ্রাম ও শহরের পশু চরাবার মাঠ বিক্রিত হবে না; কেননা তা তাদের চিরকালের সম্পত্তি।

আর যদি তোমার ভ্রাতা দরিদ্র ও শুন্যহস্ত হয়, তবে তাকে সাহায্য করবে; সে বিদেশী ও প্রবাসীর ন্যায় তোমার সাথে জীবন ধারণ করবে। আর তোমার ভ্রাতা যদি দরিদ্র হয়ে তোমার নিকট নিজেকে বিক্রয় করে, তবে তুমি তার উপর কঠিন কর্তৃত্ব কোরও না। সে বেতনজীবি ভৃত্যের ন্যায় কিম্বা প্রবাসীর ন্যায় তোমার সঙ্গে থাকবে এবং দাস্যকর্ম করবে। অত:পর সে যোবেল বৎসরে মুক্ত হবে।

আর যদি কোন ইস্রায়েলী নিজেকে তোমাদের মধ্যে বসবাসকারী কোন ধনবান বিদেশী কিম্বা প্রবাসীর কাছে নিজেকে বিক্রয় করে, তবে বৎসর বৈতনিক ভৃত্যের ন্যয় সে তার সাথে থাকবে। আর তার থাকবার সময় বেতনজীবির দিনের ন্যায় হবে। তবে সে নিজে অথবা তার জ্ঞাতিদের কেউ তাকে ছাড়িয়ে নিতে পারবে এবং সেক্ষেত্রে ছাড়িয়ে নেবার দিন থেকে যোবেল বৎসর পর্যন্ত সময় গণনা করে ক্রয়কারীকে তার মোচনের মূল্য ফিরিয়ে দেবে। 

০৪. বৈধ-অবৈধ তথা হারাম হালাল: ভূমির উপর বাসকরা জীব-জন্তুর যেগুলি জাবর কাটে এবং যেগুলোর খুর পুরোপুরি দু‘ভাগে চেরা কেবল সেগুলোর মাংস তোমাদের জন্যে হালাল। কিন্তু উষ্ট্র, শাফন, খরগোষ প্রভৃতি তোমাদের খাওয়া চলবে না, কেননা তারা জবর কাটলেও তাদের খুর পুরোপুরি দ্বিখন্ডিত নয়। তেমনি শূকর হারাম, কেননা তার খুর দ্বি-খন্ড বিশিষ্ট হলেও সে জাবর কাটে না।

পানিতে যেসব প্রাণী বাস করে তাদের মধ্যে যাদের ডানা এবং গায়ে আঁশ আছে সেগুলো তোমাদের জন্যে হালাল।
ঈগল, শকুন, চিল, বাজপাখি, কাক, উটপাখি, পেঁচা, গাংচিল, হাঁড়গিলা, সিন্দুবাজ, হুপ্পু আর বাঁদুড় তোমরা খেতে পারবে না।
ভূচর প্রাণীদের মধ্যে বেজি, ইঁদুর, গিরগিটি, তক্ষক, গোসাপ, টিকটিকি, রক্তচোষা, কাঁকলাস তোমাদের পক্ষে অশুচি।
ভূচর প্রত্যেক কীট এবং চতুষ্পদ উড্ডীয়মান পতঙ্গ তোমাদের পক্ষে ঘৃণার্হ।

অধিক পানি আছে এমন জলাধার বা ঝর্ণার পানি মৃত প্রাণীর দরুণ অশুচি হবে না। 
এমন কোন পশুর মাংস তোমরা খাবে না যা কোন হিংস্র জানোয়ারে ছিঁড়ে ফেলে রেখেছে।
মৃত পশুর মাংস হারাম। 
রক্ত খাওয়া হারাম। কারণ, সমস্ত প্রাণীর প্রাণ রয়েছে তার জীবন্ত দেহের রক্তে। রক্তসুদ্ধ কোন মাংস খাওয়া যাবে না।
মেদ বা চর্বি তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ। কেননা যে কোন পশু হতে খোদার উদ্দেশ্যে অগ্নিকৃত উপহার উৎসর্গ করা যায়, সেই পশুর মেদ ভোজনকারী আপন লোকদের মধ্য হতে উচ্ছিন্ন হবে।
কোন পশুর মা এবং বাচ্চা একই দিনে জবেহ করবে না। আর কোন পশুর বাচ্চার মাংস তার মায়ের দুধে রান্না করবে না।
নিকট সম্বন্ধ আছে এমন কোন আত্মীয়ের সাথে বিবাহ অবৈধ। যেমন-সৎমা, আপন ভগ্নি বা সৎবোন, নিজের কন্যা, পুত্র বা কন্যা পক্ষের নাতনি, পুত্রবধূ, ফুফু, খালা, চাচী, মামী। একই সঙ্গে কোন স্ত্রীলোক ও তার কন্যাকে বিবাহ করা হারাম। স্ত্রী বর্তমানে তার ভগ্নিকে বিবাহ করা অবৈধ। এই ধরণের অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনকারীদের উভয়ে প্রাণদন্ডে দন্ডিত হবে। আর যদি কেউ স্ত্রীকে ও তার মাতাকে রাখে তবে তাদেরকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করতে হবে। 

০৫. সামাজিক আচার-আচরণ ও বিধি-বিধান: পুং মৈথুন চলবে না। এটা ঘৃণার্হ কর্ম। এই কর্ম সাধনকারী উভয়ই প্রাণদন্ডে দন্ডিত হবে।
মিথ্যে গুজব রটাবে না। 
অন্যায়ের পক্ষ নিয়ে দুষ্ট লোককে সাহায্য করবে না। দশজনে অন্যায় করছে বলে তুমিও তা করতে যেয়ো না। 
কোন মোকদ্দমায় সাক্ষ্য দিতে দিয়ে গিয়ে অধিকাংশের সাথে যোগ দিয়ে ন্যায়বিচারে বাঁধা দিয়ো না। কেউ গরীব বলেই বিচারের সময় তার পক্ষ নেবে না।
সাজান মামলা থেকে দূরে থাকবে।
কোন নির্দোষীকে মৃত্যুর শাস্তি দিয়ো না। এই অন্যায়কারী শেষ বিচারে আমার করুণা লাভে সমর্থ হবে না। 
ঘুষ খেয়ো না, কারণ ঘুষ মানুষকে অন্ধ করে দেয়-সৎলোকের কথায়ও প্যাঁচ লাগিয়ে দেয়।
কারও নিকট থেকে অন্যায় সুবিধা নেবে না, কিম্বা জুলুম করে তার জিনিস নেবে না। মুজুরের দিনের মুজুরী দিনে পরিশোধ করতে হবে- তা সকাল পর্যন্ত আটকে রাখবে না।

বধিরকে অভিশাপ দেবে না। অন্ধের পথে উঁচোট খাবার মত কিছু রাখবে না।
কারও নিন্দা করবে না। কোন মানুষের প্রাণের ক্ষতি হতে পারে এমনকিছু করবে না।
বিভিন্ন জাতের পশুর মধ্যে মিলন ঘটানো যাবে না। 
কাউকে ঠকাবে না। মাপে কিম্বা ওজনে কম করবে না।
নিজের কন্যাকে বেশ্যা বানানো যাবে না। এতে সে অপবিত্র হয়ে পড়বে এবং দেশ ব্যভিচারী হয়ে যাবে ও সকল কূ-কার্য্যে পূর্ণ হবে।

তোমার শত্রুর কোন পশুকে যদি অন্য কোথাও চলে যেতে দেখ তবে সেটা অবশ্যই তার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। তোমাকে ঘৃণা করে এমন কোন ব্যক্তির গাধাকে যদি বোঝার ভারে পড়ে যেতে দেখ তবে সেই ব্যক্তিকে সেই অবস্থায় রেখে চলে চলে যাবে না, তাকে অবশ্যই সাহায্য করতে হবে।
বলদ আর গাধা একসঙ্গে জুড়ে চাষ করবে না। 
শস্য মাড়াই করার সময়ে বলদের মুখে জালতি বেঁধ না। 
মৃতলোকের জন্যে শোক প্রকাশ করতে গিয়ে দেহের কোন স্থান ক্ষত করবে না। 
দেহে উল্কি আঁকবে না।

অন্যের প্রতি ঘৃণা পোষণ করবে না। অন্যের দোষ অবশ্যই দেখিয়ে দেবে যাতে শেষ বিচারে  নিজে দোষী সাব্যস্ত না হও। তোমাদের মধ্যে বাস করা অন্য জাতির লোকদের সঙ্গে দূর্ব্যাবহার করবে না। কারও বিরুদ্ধে মনের মধ্যে হিংসার ভাব পুষে রাখবে না। প্রত্যেক মানুষকে নিজেরমত করে ভালবাসবে।
কোন বিদেশীর সঙ্গে দূর্ব্যাবহার বা তার উপর কোন অত্যাচার কোরও না, কারণ মিসরে তোমরাও একদিন বিদেশী ছিলে। 
প্রাচীনকে উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান করবে এবং বয়স্ককে সমাদর করবে। 
প্রতিবেশীকে মহব্বত করবে এবং শত্রুকে ঘৃণা।

কোন বিধবা বা অনাথকে কষ্ট দিও না। যদি তা কর এবং সে আমার কাছে কাঁদে তবে নিশ্চয়ই আমি তার কান্নায় কান দেব। 
ঈমামেরা মাথা কামাবে না। তারা বেশ্যা, বিধবা বা স্বামী পরিত্যাক্তা কোন স্ত্রীলোককে বিবাহ করবে না।
মাথার দু‘পাশের চুল কাটা বা দাঁড়ির আগা ছাঁটবে না।
কোন স্ত্রীলোক যেন পুরুষের, কিম্বা কোন পুরুষ যেন স্ত্রীলোকের সাঁজ-পোশাক পরিধান না করে। 
সদ্য বিবাহিত কাউকে যুদ্ধে পাঠান যাবে না, কিম্বা তার উপর অন্য কোন কাজের বোঝা চাপিয়ে দেয়া যাবে না। স্ত্রীর সন্তুষ্টির জন্যে এক বৎসর পর্যন্ত এসব কাজ থেকে তাকে রেহাই দিতে হবে। 
এক পরিবার হয়ে বাস করার সময়ে যদি কোন এক ভাই পুত্রসন্তান না রেখে মারা যায়, তবে তার বিধবা স্ত্রী পরিবারের বাইরের কাউকে বিবাহ করতে পারবে না।

কাউকে কিছু ঋণ দিয়ে বন্ধক হিসেবে কোন জিনিষ নেবার জন্যে তার গৃহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করবে না। আর ঋণের বন্ধক হিসেবে কারও যাঁতা কিম্বা তার উপরের পাথরটা নেবে না।
কাউকে ধার দিয়ে মহাজনের মত করে তার কাছ থেকে সুদ নিও না। 
কারও গায়ের চাদর বন্ধক রাখলে সূর্য্য ডুবে যাবার আগেই তা ফিরিয়ে দিতে হবে, কারণ ওটাই তার গায়ে দেবার জন্যে একমাত্র কাপড়। আর যদি তা ফিরিয়ে দেয়া না হয়, যদি সে এজন্যে আমার কাছে কাঁদে, তবে আমি তার কান্নায় কান দেব।
ঈমামের কোন বংশধর দেহে খুঁত নিয়ে খাবার উৎসর্গ করতে বেদীর কাছে যেতে পারবে না বা খোদার উদ্দেশ্যে পোড়ান উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে পারবে না।
ঈমামের পরিবারের লোক ছাড়া আর কেউ উৎসর্গ করা পবিত্র জিনিস খেতে পারবে না। তবে ঈমামের ক্রয়কৃত বা গৃহে জন্ম গ্রহণ করেছে এমন দাস তা খেতে পারবে। তবে তার কন্যা যদি ঈমাম ছাড়া অন্য কাউকে বিবাহ করে, তবে সে তা খেতে পারবে না। তবে তার বিধবা বা স্বামী পরিত্যাক্তা কন্যারা তা খেতে পারবে। অন্য কেউ ভুল করে তা খেয়ে ফেললে ঈমামকে তার মূল্য দিয়ে দেবে। এই মূল্য হবে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে এক পঞ্চমাংশ বেশী।

প্রথম জন্মেছে এমন প্রতিটি পুরুষ সন্তান তা মানুষের হোক বা পশুর-প্রভুর বলে ধরা হবে। সাতদিন পর্যন্ত বাচ্চারা তার মায়ের কাছে থাকবে, তারপর আট দিনের দিন সেগুলো খোদাকে দিতে হবে। 
প্রথমজাত পশুকে কেউই খোদার উদ্দেশ্যে উৎসর্গের জন্যে দান করতে পারবে না, কেননা তা খোদারই। কিন্তু যদি এই পশু অশুচি হয়, তবে তার নিরুপিত মূল্যের এক পঞ্চমাংশ বেশী দিয়ে তাকে মুক্ত করা যাবে। আর মুক্ত না হলে, তা ঐ নিরুপিত মূল্যে বিক্রয় করা যাবে।
ত্বকচ্ছেদের নিয়ম পালন করতে হবে জন্মের অষ্টম দিবসে।

কেউ যদি বিশেষ মানত করে অর্থাৎ নিজেকে বা সন্তানকে খোদার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে, তবে সে নিরুপিত মূল্যের বিনিময়ে নিজেকে বা সন্তানকে মুক্ত করতে পারবে। এই নিরুপিত মূল্য হবে বিশ থেকে ষাট বৎসর বয়স পর্যন্ত পুরুষের ক্ষেত্রে ধর্মীয় শেকেলের পঞ্চাশ শেকেল, আর স্ত্রীর ক্ষেত্রে ত্রিশ শেকেল; আর পাঁচ বৎসর হতে বিশ বৎসর পর্যন্ত পুরুষের ক্ষেত্রে বিশ শেকেল ও স্ত্রীলোকের জন্যে দশ শেকেল; আর এক মাস থেকে পাঁচ বৎসর পর্যন্ত পুরুষের জন্যে পাঁচ শেকেল ও স্ত্রীর জন্যে তিন শেকেল রৌপ্য। কিন্তু কেউ যদি নিরুপিত মূল্য দিতে অক্ষম হয়, তবে সে ঈমামের নিকট আনীত হবে এবং ঈমাম তখন মানতকারী ব্যক্তির সংস্থান অনুসারে মূল্য নিরুপণ করবে।

কেউ যদি খোদার উদ্দেশ্যে নিজের গৃহ উৎসর্গ করে, তবে ঈমাম তার মূল্য নির্ধারণ করবে এবং ঐ ব্যক্তি যদি তার গৃহ মুক্ত করতে চায় তবে নিরুপিত মূল্যের চেয়ে এক পঞ্চমাংশ অধিক দিয়ে তা মুক্ত করতে পারবে। আর যদি কেউ তার অধিকৃত ক্ষেতের কোন অংশ খোদার উদ্দেশ্যে দান করে, তবে বপনীয় বীজানুসারে তার মূল্য নিরুপিত হবে; প্রতি এক ওমর যবের বীজের জন্যে পঞ্চাশ শেকেল করে রৌপ্য। আর যদি সে তা ছাড়িয়ে নিতে চায়, তবে নিরুপিত মূল্যের এক পঞ্চমাংশ বেশী দিয়েই তা মুক্ত করতে পারবে। কিন্তু যদি সে মুক্ত না করে ঐ ক্ষেত অন্য কারও কাছে বিক্রয় করে, তবে আর কখনও তা মুক্ত হবে না। যোবেল বৎসরে সেই ক্ষেত বর্জিত ভূমির ন্যায় খোদার উদ্দেশ্যে পবিত্র হবে, আর তাতে ঈমামেরই অধিকার হবে। 

মানত পূরণের জন্যে খোদার উদ্দেশ্যে উৎসর্গিত পশু হতে হবে নিখুঁত ও নির্দোষ। কেউ উৎসর্গের জন্যে দান করা বস্তুর পরিবর্তন বা অন্যথা করবে না, মন্দের পরিবর্তে ভাল কিম্বা ভালর পরিবর্তে মন্দ দেবে না; যদি কোন উৎসর্গের দান পরিবর্তন করতেই হয়, তবে তা এবং তার বিনিময় উভয়ই পবিত্র হতে হবে। আর যদি খোদার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা যায় না এমন পশু কেউ দান করে, তবে সে ঐ পশুকে ঈমামের সম্মুখে উপস্থিত করবে। ঐ পশু ভাল কিম্বা মন্দ হোক, ঈমাম তার মূল্য নির্ধারণ করবে। কিন্তু যদি মালিক কোন প্রকারে তা মুক্ত করতে চায়, তবে সে নিরুপিত মূল্যের এক পঞ্চমাংশ বেশী দেবে।

মানত পূরণ করতে দেরী কোরও না। বেশ্যার উপার্জিত অর্থ মানত পূরণের জন্যে খোদারগৃহে আনা চলবে না। কারণ এরকম পুরুষ ও স্ত্রীলোক উভয়ই ঘৃণ্য।
ফসল কাটবার সময় তোমরা ক্ষেতের কিনারার ফসল কাটবে না এবং ক্ষেতে যা পড়ে থাকবে তা-ও কুড়িয়ে নেবে না। গরীব ও ভিন্ন জাতির লোকদের জন্যে তা রেখে দেবে। 
কারও আঙ্গুর বা অন্য কোন ফলের বাগানে গিয়ে তোমরা খুশী মত খেতে পারবে, কিন্তু তা নিয়ে যাওয়ার জন্যে কোন কিছুতে তুলে রাখা চলবে না।
রোপিত কোন বৃক্ষে ফল ধরলে পরপর তিন বৎসর তা তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ। আর চতুর্থ বৎসরের ফল খোদার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করবে। এতে তোমাদের জন্যে প্রচুর ফল উৎপন্ন হবে।

উৎপন্ন শস্যের এক দশমাংশ খোদার- তা জমির ফসলই হোক কিম্বা গাছের ফলই হোক। তা খোদার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখতে হবে। কেউ যদি এই অংশ ছাড়িয়ে নিতে চায় তবে তার প্রকৃত মূল্যের সঙ্গে তাকে আরও এক পঞ্চমাংশ বেশী দিতে হবে। পশুপালেরও এক দশমাংশ, অর্থাৎ রাখালের লাঠির নীচ দিয়ে চলে যাওয়া প্রতিটি দশম পশু হবে খোদার। এই পশুগুলো ভাল কি মন্দ তা দেখা চলবে না। কিন্তু যদি কেউ তার পরিবর্তন করে তবে, তা ও তার বিনিময় উভয়ই পবিত্র হতে হবে; কিন্তু তা মুক্ত করা যাবে না।

প্রত্যেক তৃতীয় বৎসরে সব ফসলের এক দশমাংশ আদায় শেষ হলে সেগুলো তোমরা লেবীয়, মুসাফির, অনাথ এবং বিধবাদের দেবে। তারপর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে বলবে, ‘আমি আমার আয় থেকে তোমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা অংশটা তোমার আদেশ অনুসারে লোকদের দিয়েছি। তোমার আদেশ আমি অমান্য করিনি কিম্বা সেগুলোর একটাও আমি ভুলে যাইনি, তার কোনকিছু আমি খাইনি, কিম্বা অশূচি অবস্থায় তা গৃহ থেকে বের করিনি, কিম্বা তা থেকে কোন অংশ মৃতলোকদের উদ্দেশ্যে দান করিনি।’

পরপর ছয় বৎসর তোমরা ক্ষেতে চাষ করবে এবং ফসল কাটবে, সপ্তম বৎসরে জমি চাষও করবে না বুনবেও না; এই বৎসর ভূমির বিশ্রামার্থক বিশ্রামকাল। ঐ সময় জমিতে এমনি যা জন্মাবে তোমাদের মধ্যেকার গরীব লোকেরা এবং বুনোপশুরা তা থেকে খাবার পাবে। বিশ্রাম বৎসরে তোমাদের খাদ্যের চিন্তা করতে হবে না। কেননা ষষ্ঠ বৎসরে আমার আশীর্বাদে তিন গুন শস্য উৎপন্ন হবে। যা তোমরা সংগ্রহ করে রাখবে সপ্তম বৎসর তথা অষ্টম বৎসরের ফসল উৎপন্নের পূর্ব পর্যন্ত ভক্ষণের নিমিত্ত।

আর তোমরা সপ্তম বিশ্রাম বৎসরের পরবর্তী বৎসর তথা ৫০তম বৎসরকে পবিত্র করবে, কেননা তা তোমাদের জন্যে যোবেল (তূরীধ্বনির মহোৎসব) বৎসর। তোমরা সমস্ত দেশ তথা সকল নিবাসীর কাছে মুক্তি ঘোষণা করবে এবং তোমরা প্রত্যেকে আপন অধিকারে, আপন গোষ্ঠীর কাছে ফিরে যাবে। এই বৎসর তোমরা ক্ষেতে বীজ বুনবে না, স্বত: উৎপন্ন শস্য ছেদনও করবে না, কোন ফলও সংগ্রহ করবে না; কেননা তা যোবেল। তবে তোমরা ক্ষেতে উৎপন্ন শস্যাদি ভক্ষণ করতে পারবে।

বিবাহের পর যদি কেউ স্ত্রীর মধ্যে কোন ঙ্খলন লক্ষ্য করে তবে তার হাতে তালাকনামা  দিয়ে বিদায় করে দেবে। অত:পর স্ত্রীলোকটি যদি অপর কাউকে বিবাহ করে এবং তার দ্বিতীয় স্বামীও যদি পরে তাকে তালাক দেয়, কিম্বা সেই স্বামী যদি মারা যায়, তবে তার প্রথম স্বামী তাকে আর বিবাহ করতে পারবে না, কারণ সে অশুচি হয়ে গেছে।

যদি কোন স্ত্রীলোক গর্ভবতী হয় এবং সে সন্তান প্রসব করে, তবে সে মাসিকের সময়ের মতই সাত দিন অশুচি থাকবে। পরে অষ্টম দিবসে সে নিজেকে শুচি করবে। এতদুদ্দেশ্যে সে এক জোড়া ঘুঘু কিম্বা এক জোড়া কপোত শাবক নিয়ে সমাগম তাম্বুর দ্বারে ঈমামের নিকটে আসবে; ঈমাম তার একটা পাপার্থক বলি ও অন্যটা হোমবলিরূপে উৎসর্গ করবে। তারপর সে ঐ স্ত্রীলোকের অশৌচ প্রযুক্ত খোদার সম্মুখে তার জন্যে প্রায়শ্চিত্ত করবে। অশৌচ হতে শুচি করণে সকলের জন্যে এই ব্যবস্থা।

মাসিকের অশুচি অবস্থার সময় কোন স্ত্রীলোকের সাথে দৈহিক মিলন করবে না। যদি কোন পুরুষ এ রকম স্ত্রীলোকের সঙ্গে মিলিত হয় এবং মাসিকের রক্ত তার গায়ে লাগে তবে সে সাতদিন পর্যন্ত অশুচি থাকবে। আর যে তাকে স্পর্শ করবে সে সন্ধ্যে পর্যন্ত অশুচি থাকবে।
খাবার বাঁধা নেই এমন কোন মৃত পশুর দেহ কেউ স্পর্শ করলে সে সন্ধ্যে পর্যন্ত অশুচি থাকবে।

চর্মরোগ দেখা দিলে তোমাদের সতর্ক হতে হবে এবং ঈমামেরা যে নির্দেশ দেবে তা যত্নের সঙ্গে পালন করতে হবে। কারও চর্মরোগ দেখা দিলে সে ছিন্নবস্ত্র পরিধান করবে ও তার মস্তক মুক্তকেশ থাকবে। আর সে নিজ ওষ্ঠ বস্ত্র দ্বারা আবৃত করে নিজেকে অশুচি বলে প্রচার করবে যতদিন তার গায়ে ঘা থাকবে এবং শিবিরের বাইরে সে একাকী বাস করবে।
খোদা পবিত্র বলে তোমাদেরও পবিত্র হতে হবে। 

যদি কারও স্ত্রী কূপথে যায় এবং স্বামীর প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে অন্য পুরুষের সঙ্গে ব্যভিচার করে অসতী হয়, আর তা যদি স্বামীর অজানা থাকে এবং তা গোপন থেকে যায়- কারণ তার বিরুদ্ধে কোন স্বাক্ষী নেই এবং সেই কাজে সে ধরাও পড়েনি- কিন্তু তবুও যদি কোন কারণে স্ত্রীর উপর সন্দেহ সৃষ্টি হয় তবে সে তাকে ঈমামের কাছে নিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে তার স্ত্রীর হয়ে উৎসর্গ করার জন্যে তাকে এক ওমর যবের ময়দাও সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। সে এর উপর কোন তেল বা লোবান দেবে না। 
ঈমাম সেই স্ত্রীলোককে বেদীর সম্মুখে দাঁড় করাবে। তারপর সে একটি মাটির পাত্রে কিছু পবিত্র পানি নেবে এবং আবাস তাম্বুর মেঝে থেকে কিছু ধূলো নিয়ে সেই পানির মধ্যে দেবে। তারপর ঈমাম তার চুল খুলে দিয়ে সন্দেহের দরুণ আনা উৎসর্গের জিনিষ তার হাতে দেবে। ঈমাম তার নিজের কাছে রাখবে আভিশাপের তিতা পানি। তারপর সে স্ত্রীলোকটিকে বলবে-‘বিবাহের পর যদি তুমি ব্যভিচার করে না থাক, যদি তুমি কূ-পথে গিয়ে অসতী না হয়ে থাক তবে অভিশাপ আনা এই পানি যেন তোমার কোন ক্ষতি না করে। কিন্তু যদি তুমি কূ-পথে গিয়ে, ব্যভিচার করে অসতী হয়ে থাক’ -এ পর্যন্ত বলার পর ঈমাম স্ত্রীলোকটির উপর একটা অভিশাপ ডেকে আনবে। উত্তরে স্ত্রীলোকটি বলবে, ‘তাই হোক।’

মহাঈমাম হারুণের পোষাক
ঈমাম তখন ঐ অভিশাপ চামড়ার উপর লিখে, লেখাটা সেই তিতা পানিতে ফেলবে। তারপর সে স্ত্রীলোকটির হাত থেকে উৎসর্গের জিনিস নিয়ে তা বেদীর সামনে দুলিয়ে তা থেকে এক মুঠো বেদীর উপর পুড়িয়ে দেবে। তারপর সে সেই তিতা পানি তাকে খেতে দেবে। স্ত্রীলোকটি অসতী হলে এই পানি তার সন্তানধারণ ক্ষমতা নষ্ট করবে বা তার উপর ডেকে আনা অভিশাপ কার্যকরী করবে।
গ). ধর্মীয় আচার-বিধি ও উৎসবাদি: 
আমার নির্দেশনা মতই আবাস তাম্বু ও সব আসবাবপত্র তৈরী করাবে।
মাটি বা পাথর দিয়ে বেদী তৈরী করবে, আর তার উপর তোমাদের উৎসর্গের পশু কোরবাণী করবে। পাথর দিয়ে আমার উদ্দেশ্যে কোন বেদী তৈরী করতে গিয়ে সেই পাথরগুলো কাটবে না। কারণ, তার উপর যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে গিয়ে তোমরা তা অপবিত্র করে ফেলবে। বেদী এমনভাবে তৈরী করবে যাতে তার উপর সিঁড়ি দিয়ে উঠতে না হয়, কারণ সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গেলে তোমাদের উলঙ্গতা প্রকাশ পাবে।

হারুণ ও তার পুত্ররা ঈমাম হিসেবে আমার সেবা করবে। সম্মান ও সাঁজের উদ্দেশ্যে তাদের জন্যে পবিত্র পোশাক তৈরী করাবে। হারুণের পোশাকের মধ্যে থাকবে বুক ঢাকন, এফোদ, বাইরের জামা, ভিতরের জামা, পাগড়ী ও কোমর বাঁধনি। আর বুক ঢাকনের ভাঁজের মধ্যে রাখবে উরীম ও তুম্মীম।
মহাঈমাম হারুণের পোষাক
হারুণের পুত্রদের জন্যে জামা, কোমর বাঁধনি ও মাথার টুপি এবং কোমর থেকে উরু পর্যন্ত ঢাকার জন্যে মসীনার কাপড়ের জাঙ্গিয়া তৈরী করাবে। পরে তাদেরকে অভিষেক করে ঈমাম পদে বহাল করবে। আমার উদ্দেশ্যে তাদেরকে আলাদা করার জন্যে তুমি একটা ষাঁড় ও দু‘টো ভেড়া নেবে। পরে ষাঁড়টাকে তুমি মিলন তাম্বুর সম্মুখে আনবে, আর হারুণ ও তার পুত্ররা ওটার মাথায় তাদের হাত রাখবে এবং তুমি ষাঁড়টাকে জবেহ করবে। পরে কিছুটা রক্ত নিয়ে তুমি বেদীর শিংগুলোতে লাগিয়ে দেবে, আর বাকী রক্ত বেদীর পাদদেশে ঢেলে দেবে। তারপর নির্ধারিত অংশ বেদীর উপর, আর বাকী অংশ ছাউনি থেকে দূরে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলবে। এই হল পাপ উৎসর্গ।

একই ভাবে ভেড়া দু‘টোর একটা নিয়ে জবেহ করবে এবং তার রক্ত নিয়ে বেদীর চার পাশের গায়ে ছিঁটিয়ে দেবে। পরে ভেড়াটা কেটে টুকরো টুকরো করে তার পা এবং পেটের ভিতরকার অংশগুলো ধূয়ে নিয়ে মাথা ও অন্যান্য টুকরোগুলোর সঙ্গে বেদীর উপর রাখবে পোড়ান উৎসর্গ হিসেবে।

পরে অন্য ভেড়াটাও একইভাবে জবেহ করবে এবং তার রক্ত নিয়ে হারুণ ও তার পুত্রদের ডান কানের লতিতে, ডান হাত ও ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে লাগিয়ে দেবে। আর কিছু রক্ত নিয়ে বেদীর চারপাশে ছিঁটিয়ে দেবে। তারপর কিছু অভিষেক তেল ও বেদী থেকে কিছু রক্ত নিয়ে হারুণ ও তার পুত্রদের শরীরে এবং পোশাকে ছিটিয়ে দেবে এতে পোশাকসহ তাদেরকে আমার উদ্দেশ্যে পৃথক করে নেয়া হবে।

তারপর ঐ ভেড়ার চর্বি, লেজ, মেটের উর্দ্ধাংশ, বৃক্ক ও ডান দিকের উরু, দর্শণ রুটির টেবিলে রাখা খামিহীন রুটির টুকরী থেকে একটা রুটি, একটা তেলে ময়ান দেয়া পিঠা নিয়ে সেগুলি হারুণ ও তার পুত্রদের হাতে দেবে আর তারা তা দোলাবে। এটা হল দোলন উৎসর্গ। তারপর সেগুলি বেদীর উপরস্থিত পোড়ান উৎসর্গের সাথে পুড়িয়ে ফেলবে।

পাঁচ কেজি গন্ধরস, আড়াই কেজি সুগন্ধি দারুচিনি, আড়াই কেজি বচ, আর পাঁচ কেজি দারুচিনি ফুলের কুঁড়ি, সাড়ে তিন লিটার জলপাইয়ের তেল প্রভৃতি সুগন্ধি মসলা একসঙ্গে মিশিয়ে পবিত্র অভিষেক তেল তৈরী করবে। আর নির্ভেজাল গুগগুলু, মেথী, কুন্দুরু ও খাঁটি লোবান সমান পরিমানে মিশিয়ে সুগন্ধি ধূপ তৈরী করবে। এতে পরিমান মত লবনও দেবে।
দীপবৃক্ষের প্রদীপগুলো নিয়মিত সন্ধ্যা হতে সকাল পর্যন্ত জ্বালিয়ে রাখার জন্যে ছেঁচা জলপাইয়ের খাঁটি তেল ব্যাবহার করবে।’

দর্শণ রুটির টেবিল।
প্রতিটি দুই ওমর সুক্ষ্ম সূজি দ্বারা প্রস্তুত বারখানি রুটি দর্শণ রুটির টেবিলে দুই পংক্তিতে সাজিয়ে রাখবে। প্রত্যেক পংক্তির উপরে বিশুদ্ধ কুন্দুরু দেবে; তা সেই রুটির স্মরণার্থক অংশ বলে খোদার উদ্দেশ্যে অগ্নিকৃত উপহার হবে। ঈমাম নিয়ত: প্রতি বিশ্রামবারে খোদার সম্মুখে দর্শণ রুটির টেবিলে তা সাজিয়ে রাখবে। এই রুটি হারুণ ও তার সন্তানগণের হবে। আর তারা কোন পবিত্রস্থানে তা ভোজন করবে। 

রূপা দিয়ে দু‘টো তুরী তৈরী করবে। ইস্রায়েলীদেরকে সমবেত করার জন্যে এবং বিভিন্ন দলের যাত্রা শুরু করবার জন্যে তা বাজাবে। যখন দু‘টো তুরীই বাজান হবে তখন ইস্রায়েলীরা সকলে মিলন-তাম্বুর দ্বারদেশে এসে সমবেত হবে। যখন একটা তুরী বাজান হবে তখন ইস্রায়েলের বিভিন্ন বংশের নেতারা তোমার সামনে এসে একত্রিত হবে। এই তুরী বাজাবে হারুণের পুত্রেরা, অর্থাৎ ঈমামেরা। 

লোকগণনার সময় প্রত্যেককেই তার জীবন-মূল্য দিতে হবে। এই জীবন-মূল্য হবে দশ গ্রাম ওজনের ধর্মীয় শেখেলের আধা শেখেল রূপা যা ধনী, গরীব সকলের জন্যে সমান। কেউ এর বেশী বা কম দিতে পারবে না। এসব জীবন-মূল্যের রূপা মিলন-তাম্বুর কাজে ব্যাবহার করবে।

মিলন-তাম্বুকে বেষ্টন করে ইস্রায়েলীরা ছাউনি ফেলবে। 
লেবী-গোষ্ঠিকে গণনা করা যাবে না, কিম্বা লোকগণনার সময় অন্যান্য ইস্রায়েলীদের মধ্যে তাদের ধরাও চলবে না। লেবীরা কেবলমাত্র তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে। তাদের দায়িত্ব হবে আবাস তাম্বু এবং তার সমস্ত সাঁজ-সরঞ্জাম বয়ে নেয়া এবং তার রক্ষণাবেক্ষণ করা। 
মিলন-তাম্বুকে বেষ্টন করে কিছু দূরে ইস্রায়েলীরা তাদের ছাউনি ফেলবে। 
বৎসরে তিনবার তোমরা সমস্ত পুরুষ জাতি খোদার সাক্ষাতে উপস্থিত হবে।
আমার ধর্মধামের সমাদর করবে।
তোমরা বৎসরে আমার উদ্দেশ্যে এইসব উৎসব পালন করবে। 
ঈদুল ফেসাখ: নিস্তার পর্বের এই উৎসব হবে আমার আদেশ অনুযায়ী, নিরুপিত সময়ে, বৎসরের প্রথম মাস অর্থাৎ আবীর মাসের চতুর্দশ দিবসের সন্ধ্যাবেলায়। 
ঈদুল মাত‘ছ: ঈদুল ফেসাখের পরবর্তী সাতদিন হবে খামিহীন রুটির উৎসব। প্রথম দিবস এবং ৭ম দিবসে পবিত্র সভা অনুষ্ঠিত হবে এবং ঐ দিন তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কোন কাজ করবে না।   
নবান্ন বা শস্যচ্ছেদনের উৎসব: ক্ষেতে বোনা আশুপক্ক শস্যের অগ্রিমাংশ তোমরা খোদার গৃহে আনবে। আর ঈমাম তা বিশ্রামবারের পরদিন দোলন উৎসর্গ করবে, যেন তা তোমাদের জন্যে গ্রাহ্য হয়।

আর যেদিন তোমরা শস্যের আঁটি দোলন উৎসর্গ করবে, সেদিন খোদার উদ্দেশ্যে হোমার্থে এক বর্ষীয় এক নির্দোষ মেষশাবক উৎসর্গ করবে। তার ভক্ষ্য নৈবদ্য হবে দুই ওমর (এক ঐফার দুই দশমাংশ) লোবান বা তৈল মিশ্রিত সূক্ষ্ম সূজি, যা খোদার উদ্দেশ্যে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত উপহার হবে এবং তার পেয় নৈবদ্য হবে এক হিন দ্রাক্ষারসের এক চতুর্থাংশ। আর যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা খোদার উদ্দেশ্যে এই উপহার না আনবে, সেইদিন পর্যন্ত তোমরা তোমরা ঐ শস্যের কোনকিছু ভক্ষণ করবে না। 

ঈদুল খেমীশশীম: নবান্ন উৎসবের পর ৫০তম দিবসে তোমরা খোদার উদ্দেশ্যে নুতন ভক্ষ্যের উপহার নিবেদন করবে। এদিন তোমরা আপন আপন নিবাস হতে প্রতিটি এক ওমরের দু‘খানা রুটি আনবে। এই রুটি তৈরী হবে সুক্ষ্ম সূজি দিয়ে এবং খামী দ্বারা। তা খোদার উদ্দেশ্যে আশু পক্কাংশ হবে। আর তোমরা সেই রুটির সাথে হোমার্থে এক বর্ষীয় নির্দোষ সাত মেষ শাবক, এক যুব বৃষ ও দুই মেষ উৎসর্গ করবে এবং তৎসম্বন্ধীয় ভক্ষ্য ও পেয় নৈবদ্যের সাথে খোদার উদ্দেশ্যে সৌরাভার্থক অগ্নিকৃত উপহার হবে।

পরে তোমরা পাপার্থক উৎসর্গের জন্যে এক ছাগ বৎস ও মঙ্গলার্থক উৎসর্গের জন্যে এক বর্ষীয় দুই মেষশাবক উৎসর্গ করবে। আর ঈমাম ঐ আশু পক্কাংশের রুটি ও দুই মেষশাবকের সাথে খোদার সম্মুখে দোলনীয় নৈবদ্যরূপে তা দোলাবে; তা ঈমামের জন্যে খোদার উদ্দেশ্যে পবিত্র হবে। আর সেদিন তোমরা তোমাদের পবিত্র সভার ঘোষণা করবে এবং সেদিন তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কাজ করবে না।
সপ্তম মাসের প্রথম দিনে তোমাদের বিশ্রাম পর্ব এবং তূরীধ্বনিসহ স্মরনার্থক পবিত্র সভা হবে। ঐ দিন তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কাজ করবে না, কিন্তু খোদার উদ্দেশ্যে অগ্নিকৃত উপহার উৎসর্গ করবে।
ঈদুল ইয়োম কিপ্পুর: সপ্তম মাসের দশম দিন হবে তোমাদের প্রায়শ্চিত্ত দিন। ইস্রায়েল সন্তানগণ তাদের সমস্ত পাপ প্রযুক্ত বৎসরের এই দিন প্রায়শ্চিত্ত করে শুচি হবে। এদিন তোমরা রোজা রাখবে। আর যে রোজা রাখবে না সে আপন সামাজ হতে উচ্ছিন্ন হবে। এদিন তোমাদের পবিত্র সভা হবে এবং দিনটি হবে বিশ্রামবার অর্থাৎ তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কাজ করবে না। নবম দিবস সন্ধ্যা হতে পরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়টাই এই বিশ্রামবার বলে গণ্য হবে।

ঈদুল সুক্ক: সপ্তম মাসের পঞ্চদশ দিবসাবধি তোমরা কুটিরবাস পর্ব পালন করবে, যেন তামাদের অনাগত সন্তানেরা জানতে পারে যে আমি তোমাদেরকে মিসর থেকে বের করে এনে কুটিরে বাস করিয়েছিলাম। এই পর্বের প্রথম ও অষ্টম দিবসে পবিত্র সভা হবে এবং দিন দু‘টি বিশ্রামবার হবে। আর প্রতিদিনই তোমরা খোদার উদ্দেশ্যে অগ্নিকৃত উপহার উৎসর্গ করবে। 
আবার ঐ মাসের পঞ্চদশ দিবসে ভূমির ফল সংগ্রহ করলে তোমরা পরবর্তী সাতদিন ফল সঞ্চয়ের উৎসব পালন কোরও। এই পর্বেরও প্রথম ও অষ্টম দিবস বিশ্রামবার হিসেবে গণ্য হবে।

এই সকল তোমাদের জন্যে খোদার নির্দিষ্ট করা পর্ব। খোদার বিশ্রাম দিন হতে, খোদার উদ্দেশ্যে তোমাদের দান হতে, তোমাদের সমস্ত মানত হতে ও তোমাদের স্ব-ইচ্ছায় দত্ত সমস্ত নৈবদ্য হতে এই সকল ভিন্ন।

এভাবে আল্লাহ মূসাকে ব্যবস্থা দিলেন। যা ছিল মানুষের জন্যে জ্ঞানবর্তিকা, হেদায়েত ও রহমতস্বরূপ। 

সমাপ্ত।
ছবি: biblesearchers, mudpreacher, cogtoronto.

১০ জুন, ২০১২

Muhammad: মানুষের জন্যে সর্বোত্তম আদর্শ।


“আর যখন ইব্রাহিম ও ইসমাইল (কা’বা) গৃহের ভিত্তি স্থাপন করছিল, তখন তারা বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাদের এ কাজ গ্রহণ কর। তুমি তো সব শোন আর সব জান। 

--হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাদের দু‘জনকে তোমার একান্ত অনুগত কর ও আমাদের বংশধর হতে তোমার অনুগত এক উম্মত (সমাজ) তৈরী কর। আমাদেরকে উপাসনার নিয়ম পদ্ধতি দেখিয়ে দাও, আর আমাদের প্রতি ক্ষমাপরবশ হও! তুমি তো অত্যন্ত ক্ষমাপরবশ পরম দয়ালু। 

--হে আমার প্রতিপালক! তাদের মধ্যে থেকে তাদের কাছে ”একজন রসূল প্রেরণ কোরও যে তোমার আয়াত তাদের কাছে আবৃত্তি করবে, তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবে এবং তাদেরকে পবিত্র করবে। তুমি তো পরাক্রমশালী, তত্ত্বজ্ঞানী।-(২:১২৭-২৯) 


ইব্রাহিম ও ইসমাইলের বংশে প্রথম ও শেষবারের মত একজন নবীর আগমন হল। ঈসা হলেন ’মসিহ’ কেবল ইহুদি গোত্রের জন্য, আর মুহম্মদ ’মসিহ’ জগৎবাসীর জন্যে। আর তাই কোরআনে বলা হয়েছে তিনি জগৎবাসীর জন্যে মূর্ত্ত্য করুণা স্বরূপ

”এবং আমি তাকে নিখিল বিশ্বের জন্যে মূর্ত্তিমান করুণাস্বরূপ পঠিয়েছি।”-(২১:১০৭) ঠিক যেমনটা খোদা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ইব্রাহিমের কাছে- "Behold, in your seed I will bless all the tribes of the earth; and as you have broken in pieces the idols, O Abraham;, even so shall your seed do.""- [Barnabas ch-43]

নবী মুহম্মদের সৃষ্টি এবং জগৎবাসীর জন্যে যে 
মূর্ত্তিমান করুণাস্বরূপ, তা ব্যাখ্যা করতে ঈসা বলেন, ”Everyone that works, works for an end in which he finds satisfaction. Wherefore ..God, truly because he is perfect, has not need of satisfaction, seeing that he has satisfaction himself. And so, willing to work, he created before all things the soul of his Messenger (Muhammad), for whom he determined to create the whole, in order that the creatures should find joy and blessedness in God, whence his Messenger should take delight in all his creatures, which he has appointed to be his slaves. And wherefore is this, so save because thus he has willed?

Every prophet when he is come has borne to one nation only the mark of the mercy of God. And so their words were not extended save to that people to which they were sent. But the Messenger of God, when he shall come, God shall give to him as it were the seal of his hand, insomuch that he shall carry salvation and mercy to all the nations of the world that shall receive his doctrine. He shall come with power upon the ungodly, and shall destroy idolatry, insomuch that he shall make Satan confounded; ....... [Barnabas ch-43]

The Messenger of God is a splendour that shall give gladness to nearly all that God has made, for he is adorned with the spirit of understanding and of counsel, the spirit of wisdom and might, the spirit of fear and love, the spirit of prudence and temperance, he is adorned with the spirit of charity and mercy, the spirit of justice and Piety, the spirit of gentleness and patience, which he has received from God three times more than he has given to all his creatures.- [Barnabas ch-44]

All the prophet known Muhammad before they came to this world- Qur'an says- ‘এবং যখন আল্লাহ সমস্ত পয়গম্বরদের সমক্ষে এ চুক্তি করলেন যে, ‘নিশ্চয়ই আমি যে সমস্ত বাণী তোমাদেরকে দিয়েছি তা সত্য, অতঃপর একজন রসূল আসবেন এবং তিনি এসে তোমাদের কাছে যা আছে তার সত্যতা প্রমাণ করবেন; তোমরা তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তাকে সাহায্য করবে।’ 
তিনি বললেন, ‘তোমরা এ ব্যাপারে আমার কথা স্বাীকার করলে তো?’  
তারা বলল, ‘আমরা স্বীকার কললাম।’ 
তখন তিনি বললেন, ‘তাহলে স্বাক্ষী থাক। আমিও তোমাদের সাথে স্বাক্ষী থাকলাম।’-(৩:৮০)

আর তাই সব নবী ভবিষ্যৎবাণী করেছে নবী মুহম্মদ সম্পর্কে [see my article, "Muhammad: প্রতিশ্রুত পয়গম্বর মুহম্মদ প্রাচীন ধর্মগ্রন্থসমূহে।"]

আর নবী মুহম্মদের জন্ম নিভৃত-নিরব ছিল না মাজীবাদী জগতে, যদিও আরবরা এ বিষয়ে অজ্ঞই ছিল বলা যায়। যে রাতে নবী মুহম্মদ জন্মগ্রহণ করেন, ঐ রাতে একের পর এক ঘটনা ঘটে ছিল। The Palace of the Persian King was shaken by an earthquake, so that fourteen of its battlements fell to the ground; the Sacred Fire, which had burned continuously for a thousand years was extinguished and the Lake of the Sawa suddenly dried up; while the chief priest of the Zoroastrians saw in a dream the West of Persia overrun by Arabian camels and horses from across the Tigris.

At these portents Nushirwan was greatly troubled, nor was his trouble dispelled by the oracular answer brought back by his messenger 'Abdu'l-Masih, a Christian Arab of the tribe of Ghassan, from his uncle, the aged Satih, who dwelt on the borders of the Syrian desert. This answer, conveyed in the rhyming rajaz regarded by the Arabian soothsayers (kahana) as the appropriate vehicle of their oracles, was couched in the following strain :

"On a camel 'Abdu'l-Masih 
Hastens toward Satih, 
Who to the verge of the Tomb 
Is already come.
Thee hither doth bring 
The command of the Sasanian King 
Because the Palace hath quaked, 
And the Fire is slaked, 
And the Chief Priest in his dream hath seen 
Camels fierce and lean,
And horse-troops by them led 
Over the Tigris bed
Through the border marches spread.

" O Abdu'l-Masih! When reading shall abound, 
And the Man of the Staff' [I.e., the Caliph 'Omar, in whose reign (CE 634-644) the conquest of Persia was chiefly effected.] be found 
And the hosts shall seethe in the Vale of Samawa, [A place near Hira, in the neighbourhood of which was fought the fateful battle of Qadisiyya.]
And dried up shall be the Lake of Sawa, 
And the Holy Fire of Persia shall fail, 
No more for Satih shall Syria avail!
Yet to the number of the turrets [I.e., the fourteen turrets or battlements which, in Nushirwan's dream, fell from the palace. Nushirwan's fourteen successors are presumably to be reckoned as follows : (i) Hurmazd IV; (2) Khusraw Parwiz; (3) Shiru'e; (4) Ardashir III; (5) Shahrbaraz; (6) Puran-dukht; (7) Gushnaspdeh? (8) Azarmi-dukht ; (9) Khusraw, son of Mihr-Gushnasp ; (10) Khurrazadh-Khusraw; (n) Piruz, son of Gushnaspdeh; (12) Farrukhzadh-Khusraw; (13) Hurmazd V; (14) Yazdigird III."]
Your kings and queens shall reign, 
And their empire retain, 
Though that which is to come cometh amain!"-[EG Browne, A literary History of Persia]

কোন ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে হলে ঐ ব্যক্তির সংস্পর্শে দীর্ঘকাল ধরে থাকা লোকজনের মূল্যায়ণই প্রধান বিবেচ্য হওয়া উচিৎ। সুতরাং প্রথমে আমরা দেখব মুহম্মদ (Muhammad) সম্পর্কে তার নিকট আত্মীয়, প্রতিবেশী ও তার সঙ্গীগণ (শত্রু-মিত্র) কি ধারণা পোষণ করতেন। একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে মুহম্মদের ব্যক্তি চরিত্র হতে হবে সদা সত্যবাদী, প্রতিজ্ঞা রক্ষাকারী, নীতি ও নিয়মের প্রতি কঠোর, অতি দয়ালু  ইত্যাদি সকল উচ্চ মানবীয় গুনের অধিকারী। শুরুতে আমরা তার সম্পর্কে বিভিন্নজনের মন্তব্যগুলো দেখি।

বিবি খাদিজা: (নব্যুয়ত প্রাপ্তির পর ফেরেস্তা দর্শণে ভীত হয়ে গৃহে ফিরলে) ‘...হে আবুল কাশিম (মুহম্মদের শিশুপুত্র কাশিমের নামানুসারে অনেকে তাকে এই নামে ডাকত) নিশ্চয় তিনি (আল্লাহ) আপনাকে এরূপ অবস্থায় ফেলবেন না; কারণ আপনি সত্য বলেন, অনিষ্টের বদলে অনিষ্ট করেন না; প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেন; সৎ জীবন-যাপন করেন এবং আপনি আপনার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি সদয়। আর আপনি হাটে-বাজারে প্রগলভের মত আচরণ করেন না। .."


ওয়ারাকা বিন নওফেল: (নব্যুয়ত প্রাপ্তির পর পথে মুহম্মদের সাথে দেখা হলে) ‘আমি তাঁরই নামে শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার জীবন নির্ভরশীল, আল্লাহ তাঁর রসূল হিসেবে আপনাকে মনোনীত করেছেন। ‘নামুসুল আকবর‘ আপনার কাছে এসেছেন। এই জাতি আপনাকে মিথ্যেবাদী বলবে, আপনার উপর অত্যাচার করবে, আপনাকে দেশ থেকে নির্বাসিত করবে, আপনার সঙ্গে যুদ্ধ করবে। হায়! আমি যদি ততদিন বেঁচে থাকতাম, তবে আপনার পক্ষে যুদ্ধ করতাম।’


আবু তালিব: (মুহম্মদের পিতৃব্য, যিনি মুহম্মদের শত অনুরোধ, উপরোধ সত্ত্বেও ইসলাম গ্রহণ করেননি। তথাপি তিনি তার পুত্র আলীকে বলেছিলেন): ‘হে আমার পুত্র! সে (মুহাম্মদ) তোমাকে যা ভাল নয় এমন কিছুর দিকে আহবান করবে না, কাজেই তুমি স্বাধীনভাবেই তার প্রতি অনুগত হতে পার।’


আবু জেহেল: (কুরাইশ নেতা আখনাস ইবনে শরীক, ইসলামের চরমতম দুষমন আবু জেহেলকে এই প্রশ্ন করলে-‘মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ সম্পর্কে তোমার ধারণা কি আমাকে সত্য করে বল? তাকে সত্যবাদী মনে কর না মিথ্যেবাদী?’ সে উত্তর দিয়েছিল ):-'নিঃসন্দেহে মুহম্মদ সত্যবাদী। সে সারা জীবন একটিও মিথ্যে বলেনি।'

আবু জেহেল: (মুহম্মদ তাকে তার বিরোধীতা করার কারণ জানতে চাইলে, সে বলেছিল) ‘তুমি মিথ্যাবাদী এরূপ কোন ধারণা আমরা পোষণ করি না। তবে আমরা ঐ গ্রন্থকে অসত্য মনে করি যা তুমি প্রাপ্ত হয়েছ।’

কিছু কিছু কুরাইশ নেতা মুহম্মদ সম্পর্কে সম্যক জানা সত্ত্বেও শুধুমাত্র বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করছিলেন। এদেরই একজন ওলীদ ইবনে মুগীরা। অার এদের (অাবু জেহেল, ওলিদগংদের) এ্ই অযৌক্তিক ব্যবহার মুহম্মদকে দু:খিত করত। কোরআনে এর সত্যতা রয়েছে: আমার জানা আছে যে, তাদের উক্তি তোমাকে দুঃখিত করে। অতএব তারা তোমাকে মিথ্যে প্রতিপন্ন করে না, বরং জালেমরা আল্লাহর নিদর্শণাবলীকে অস্বীকার করে। তোমার পূর্ববর্তী অনেক পয়গম্বরকে মিথ্যা বলা হয়েছে। তারা এতে সবর করেছে। তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌঁছা পর্যন্ত তারা নির্যাতিত হয়েছে। আল্লাহর বাণী কেউ পরিবর্তণ করতে পারে না। তোমার কাছে পয়গম্বরদের কিছু কাহিনী পৌঁছেছে।-(৬:৩৩-৩৪)

হেরাক্লিয়াস।
ইসলাম ও মুহম্মদের চরমতম দুষমন আবু সুফিয়ানেকে রাজদরবারে হেরাহ্লিয়াসের জেরা:


হেরাক্লিয়াস- ‘কেমন পরিবার থেকে তার আগমন?’
আবু সুফিয়ান-‘একটা সম্ভ্রান্ত পারিবার থেকে।’
হেরাক্লিয়াস-‘কারা তাকে অনুসরণ করছে?’
আবু সুফিয়ান-‘সমাজের অবহেলিত এবং দরিদ্রগণ।’
হেরাক্লিয়াস-‘কেউ কি তার ধর্ম গ্রহণ করার পর তা পরিত্যাগ করেছে?’
আবু সুফিয়ান-‘না।’
হেরাক্লিয়াস-‘নব্যুয়তের দাবী করার পূর্বে তোমরা কি কখনও তাকে মিথ্যা বলতে শুনেছ?’
আবু সুফিয়ান-‘না।’
হেরাক্লিয়াস-‘সে কি কখনও তার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেছে?’
আবু সুফিয়ান-‘না।’
হেরাক্লিয়াস-‘কি মতবাদ মুহম্মদ উপস্থাপিত করছে?’
উত্তর ছিল, ‘তিনি গবীর-দুঃখীকে সাহায্য করতে, সত্য ও শূচিতার অনুশীলন করতে, ব্যভিচার, পাপ ও মানুষকে ঘৃণা করা থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।’

আর তার শিষ্য সংখ্যা বাড়ছে কিংবা কমছে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তর ছিল, ‘তার শিষ্য সংখ্যা বেড়েই চলেছে এবং তার একজন শিষ্যও তাকে পরিত্যাগ করেনি।’

আনাস: (মুহম্মদের ভৃত্য) 'আমি দশ বৎসর হযরতের খেদমতে ছিলাম, কথনও আমি তাকে উ: পর্যন্ত করতে শুনিনি।'


জাফর: (মুহম্মদ ও ইসলাম সম্পর্কে সম্রাট নাজ্জাসী জানতে চাইলে-আবু তালিবপুত্র, আলীর ভ্রাতা, নাজ্জাসীর রাজদরবারে দাঁড়িয়ে) "হে রাজন!আমরা মুর্খতা ও বর্বরতার মধ্যে নিমগ্ন ছিলাম, আমরা মূর্ত্তিপূজা করতাম, ব্যভিচারে লিপ্ত ছিলাম, আমরা মৃত প্রাণীর মাংস খেতাম, আমরা অশ্লীল বাক্য উচ্চারণ করতাম; আমরা মনুষ্যত্বের প্রত্যেকটি অনুভূতি, অতিথি ও প্রতিবেশীদের প্রতি দায়িত্ব একেবারে জলাঞ্জলি দিয়েছিলাম, আমরা ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতির বাইরে কোন আইন জানতাম না। এসময়ে আমাদের মধ্যে আল্লাহ এমন একজন মানুষ পাঠালেন যার জন্ম, সত্যবাদিতা, সততা ও বিশুদ্ধতা সম্পর্কে আমরা অবগত ছিলাম; যিনি আল্লাহর একত্বের দিকে আমাদের আহবান জানালেন এবং তাঁর সঙ্গে কোন বস্তুর শরিক স্থাপন না করতে শিক্ষা দিলেন; সত্যকথা বলতে, বিশ্বস্ততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে, দয়ালু হতে এবং প্রতিবেশীর অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে নির্দেশ দিলেন; নারী জাতির বিরুদ্ধে দুর্ণাম না রটাতে, এতিমের ধন আত্মসাৎ না করতে তিনি আদেশ দিলেন; তিনি পাপসমূহ ও অনিষ্ট থেকে দূরে থাকবার জন্যে নামাজ কায়েম করতে, জাকাত দিতে ও রোজা রাখতে আমাদের আদেশ দিয়েছেন। –আমরা তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করেছি, তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছি এবং এক আল্লাহর এবাদত ও কোন কিছুর সঙ্গে তাঁর শরিক স্থাপন না করার নির্দেশ মেনে নিয়েছি।"


কুরাইশ নেতা হারেস ইবনে ওসমান: (মুহম্মদ তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলে) ‘আপনার শিক্ষাকে সত্য মনেকরি, কিন্তু আমাদের আশঙ্কা এই যে, আপনার পথনির্দেশ মেনে আমরা আপনার সাথে একাত্ম হয়ে গেলে সমগ্র আরব আমাদের শত্রু হয়ে যাবে এবং আমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে উৎখাত করে দেয়া হবে।’


মনসূর আল হাল্লাজ।
ব্যক্তি মুহম্মদ সম্পর্কে এবং তার বিরোধিতার ব্যাপারে এমনই মনোভাব বা মতামত ছিল তার সংস্পর্শে থাকা শত্রু-মিত্র সকলের। যদি মুহম্মদের চরিত্রে কোনরূপ খ্লন কেউ দেখতে পেত, তবে তাকে ও কোরআনকে মিথ্যে প্রতিপন্ন করার সুযোগ কেউই হাতছাড়া করত না। 


মোটকথা, ইতিহাসের কোথাও এই ব্যক্তির চরিত্র সম্পর্কে সামান্যতম বিরূপ মন্তব্য নেই। এবার মানুষ হিসেবে তার বৈশিষ্টগুলি তুলে ধরার পূর্বে আমরা দেথব সেই ঐতিহাসিক সূফি চরিত্র 'আনাল হক' তথা মনসূর আল হাল্লাজ, যাকে খলিফা আল মুক্তাদির হেরাসির অভিযোগে শিরোচ্ছেদ করিয়ে ছিলেন, তিনি মুহম্মদ সম্পর্কে তার 'কিতাব আল তাওসিন'-এ কি বলেছেন-

"Muhammad- the best of the mankind."


A lamp appeared from the Light of the Unseen. It appeared and returned, and it surpassed the other lamps. It was a ruling moon, manifesting itself radiantly among the other moons. It was a star whose astrological house is in the Empyrean. Allah named him ‘unlettered’ in view of the concentration of his aspiration, and also ‘consecrated’ because of the majesty of his blessing, and ‘Makkan’ because of his residence in His vicinity.

He expanded his breast, and raised his power, and lifted from his the burden ‘that had weighed down thy back,’ and He imposed his authority. As Allah made his Badr appear so his full moon rose from the cloud of Yamãma and his sun arose on the side of Tihãma (Makka), and his lamp shone from the source of all divine munifence.

He did not report about anything except according to his inner vision, and he did not order the following of his example except according to the truth of his conduct. He was in the presence of Allah, then he brought others to His Presence. He saw, then he related what he was. He was sent forth as a guide, so he defined the limits of conduct.

No one is capable of discerning his true significance, except the Sincere, since he confirmed its validity, and then accompanied him so that there would not remain any disparity between them.

No gnostic ever knew him who was not ignorant of his true quality. His quality is made clear only to those to whom Allah undertakes to disclose it. ‘Those to whom We have given the Book, and they recognize their sons, even though a party of them conceal the truth, and that wittingly.’ (2.46)

The lights of prophecy issued from his light, and his light appeared from the light of Mystery. Among the lights there is none more luminous, more manifest or more uncreate-than-uncreatedness than the light of the Master of Generousity.

His aspiration preceded all other aspirations, his existence preceded non-existence, his name preceded the Pen because it existed before.

There was never on the horizons, beyond the horizons, nor below the horizons anyone more graceful, nobler, wiser, more just, kinder, more God-fearing or more sympathetic than the holder of this role. His title is Master of Creation, and his name is Ahmad, and his attribute is Muhammad. His command is more certain, and his essence is more excellent, and his attribute is more glorious, and his aspiration is unique.

Oh marvel! What is more manifest, more visible, greater, more famous, more luminous, more powerful or more discerning than him? He is and was, and was known before created things and existences and beings. He was and still is remembered before ‘before’ and after ‘after’, and before substances and qualities. His substance is completely light, his speech is prophetic, his knowledge is celestial, his mode of expression is Arabic, his tribe is ‘neither of the East nor the West’ (24.35), his genealogy is patriarchal, his mission is conciliation, and he has the title of the ‘unlettered’.

The eyes were opened by his signs, secrets and selves perceived by his being there. It was Allah who made him articulate by His Word, and being the Proof, confirmed him. It was Allah who sent him forth. He is the proof and the proven. It is he who quenches the thirst of the vehemently thirsty heart, it is he who brings the uncreated word that is not touched by what touches it, nor phrased by the tongue, nor made. It is united to Allah without separation, and it surpasses the conceivable. It is he who announces the end and the ends and the ends of the end.

He lifted the cloud, and pointed to the Sacred House. He is the limitation, and he is a heroic warrior. It is he who received the order to break the idols, and it is he who was sent to mankind for the extermination of them.

Above him a cloud flashed bolts of lightning, and below him a bolt of lightning flashed, shone, caused rain, and fructified. All knowledge is but a drop from his ocean, and all wisdom is but a handful from his stream, and all times are but an hour from his life.

Allah is with him, and with him is reality. He is the first in union and the last to be commissioned as a prophet, the inward by reality, and the outward by gnosis.
No scholar ever attained his knowledge nor did any philosopher become cognizant of his understanding.
Allah did not surrender (His Reality) to His creation, because he is he, and his being there is He, and He is He.

Nothing came out of the M of MHMD, and none entered into his H, and his H is the same as his second M, and his D is as his first M. His D is his perpetuity, his M is his rank, his H his spiritual state, as is his second M.

Allah made his speech manifest, and enlarged his mark, and made his proof known. He sent down the furqan to him, he made his tongue adequate, and He made his heart shine. He made his contemporaries incapable (of imitating Qur’an). He established his clarification and exalted his glory.

If you flee from his domains, what route will you take without a guide, oh ailing one? The maxims of the philosophers are like a slipping heap of sand before his wisdom. -Kitab Al Tawasin- by Mansur al-Hallaj.

সৈয়দ আমির আলী।
সবশেষে সৈয়দ আমির আলীর চিত্রিত মুহম্মদের সাধারণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য-


মুহম্মদের একটি মহৎ বৈশিষ্ট্য যা তার চরিত্রের অকপটতা, তার আল্লাহ বিশ্বাস ও আল্লাহর উপর নির্ভরতার শক্তিশালী সাক্ষ্য বহন করে তা হল এই যে, তার নিকটতম আত্মীয়-স্বজন, স্ত্রী, জ্ঞাতি ভাই ও অন্তরঙ্গ বন্ধু-বান্ধব তার প্রচারিত ইসলামের সত্যতা সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে উদ্ধুদ্ধ হয়েছিলেন। তারা তার সম্পর্কে সম্যকরূপে অবহিত ছিলেন এবং তার নব্যুয়ত প্রাপ্তি সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হয়েছিলেন। এ কারণে তারা ছিলেন নিষ্ঠাবান ও সর্বাপেক্ষা অনুরক্ত অনুসারী। যদি তারা তার মধ্যে পৃথিবীর প্রতি মোহ, প্রতারণা বা বিশ্বাসের অভাব লক্ষ্য করতেন, তবে অতি অল্পদিনেই মুহম্মদের সামাজিক সংস্কারের সকল আশা ধুলিসাৎ হয়ে যেত।


মুহম্মদের মধ্যে তার নিকটজনেরা আদর্শ থেকে বিন্দুমাত্র পদস্খলন লক্ষ্য করেননি। তাই তারা তার জন্যে দৈহিক ও মানসিক সব জুলুম, সব অত্যাচার বুক পেতে সহ্য করেছিলেন। যদি এসব লোক তার প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস স্থাপন না করতেন তবে তার কর্ম পরিকল্পণার মহত্ত্ব বা তার নিষ্ঠার গভীরতার প্রতি তাদের অবিশ্বাসের কারণ দেখা দিত। নিকটতম জ্ঞাতি বন্ধুদের মধ্যে ঈসার প্রভাব ছিল অতি নগন্য। তার ভ্রাতারাও তার প্রতি কখনও বিশ্বাস স্থাপন করেননি। এমনকি তার সাক্ষাৎ শিষ্যরাও তাদের বিশ্বাসে অবিচল ছিলেন না। কিন্তু মুহম্মদের সাক্ষাৎ অনুসারীদের সুতীব্র বিশ্বাস ও আস্থা ছিল।


মুহম্মদের ব্যক্তিত্বের বিনয়-নম্রতা, আত্মার মহত্ত্ব ও হৃদয়ের পবিত্রতা, চরিত্রের তপশ্চর্যা, অনুভূতির সূক্ষ্মতা ও কোমলতা এবং কঠোর কর্তব্যপরায়ণতা, যা তাকে আল-আমিন উপাধিতে বিভূষিত করেছিল, তা সমন্বিত হয়েছিল তার আত্মসমীক্ষার কঠোর বোধের সঙ্গে- যা ছিল তার চরিত্রের বিশিষ্টতা। একবার তিনি মক্কার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে ধর্ম বিষয়ে কথাবার্তা বলছিলেন, তখন একজন অন্ধ, বিনয়ী বিশ্বাসীকে তার সঙ্গদান থেকে বিমুখ করেছিলেন। তিনি সর্বদা অনুশোচনার সঙ্গে এ ঘটনার পুনরুল্লেখ করতেন এবং এ ব্যাপারে আল্লাহর অনুমোদনের কথা ঘোষণা করতেন। অতঃপর যখনই মুহম্মদ ঐ ব্যক্তিকে দেখতে পেতেন তখনি তাকে সম্মান দেখানোর জন্যে কাজ ফেলে এগিয়ে যেতেন এবং বলতেন, ‘সেই ব্যক্তিকে বারবার অভিনন্দন যার জন্যে প্রভু আমাকে তিরস্কার করেছেন।’ 

মুহম্মদ। এই বিস্ময়কর ব্যক্তি যিনি পিতার স্নেহ কি তা কোনদিন জানতে পারেননি, শৈশবে মাতৃহারা হয়ে মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এমনি করুণ শৈশব থেকে তিনি চিন্তাশীল যুবকে পরিণত হয়েছেন। তার যৌবন, তার শৈশবের মতই নির্ভেজাল ও সত্যনিষ্ট; তার পরিণত বয়স তার যৌবনের মতই কঠোর ও অকপট। তার শ্রবনেন্দ্রিয় দীন ও দুর্বলদের দুঃখ-দুর্দশার প্রতি চির উম্মুক্ত; তার হৃদয় আল্লাহর সমগ্র জীবের প্রতি দরদ ও সহানুভূতিতে পরিপূর্ণ। তিনি এত বিনয় ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে চলাফেরা করতেন যে, লোকে তাকে দেখলেই বলত- ঐ যে, আল আমিন-বিশ্বাসী, সত্যবাদী ও বিশ্বাসভাজন চলেছেন।

একজন বিশ্বস্ত বন্ধু একজন অনুরক্ত স্বামী, জীবন মৃত্যুর রহস্য, মানুষের কাজ-কর্মের দায়িত্বসমূহ, মানুষের অস্তিত্বের পরিণতি ও লক্ষ্য উন্মোচনের জন্যে নিবেদিত চিন্তাবিদ হিসেবে মুহম্মদ একটি জাতি তথা বিশ্বকে ঢেলে সাজানো ও পরিশ্রুত করার মহান ব্রতে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। এই কাজে একটি মাত্র হৃদয় (খাদিজা) তাকে শান্তি ও সান্তনা জুগিয়েছিলেন। ব্যর্থতা দ্বারা হতবুদ্ধি হলেও তিনি কখনও বিচলিত হননি, হতাশ হননি। যে কাজ সম্পাদনের জন্যে আল্লাহ তাকে মনোনীত করেছিলেন তার সফল বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে তিনি অবিরত সংগ্রাম করেছেন।

মুহম্মদের চরিত্রের পবিত্রতা ও মহত্ব, আল্লাহর করুণা সম্পর্কে তার সুতীব্র ও ঐকান্তিক বিশ্বাস শেষপর্যন্ত তার চারপাশে টেনে এনেছিল বিপুল সংখ্যক অনুরক্ত ভক্তকে। যখন তীব্রতম পরীক্ষার সময় উপস্থিত হয়েছিল, তিনি বিশ্বাসী নাবিকের মত তার শিষ্যরা নিরাপদ হবার পূর্ব পর্যন্ত নিজ অবস্থানে অবিচল ছিলেন। তারপর তিনি নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে পা বাড়িয়ে ছিলেন। 

মুহম্মদ ছিলেন মানুষের অধিপতি, মানুষের হৃদয়ের নিয়ন্ত্রক, নেতা, আইন প্রনেতা এবং প্রধান প্রশাসক। কিন্তু এসব সত্ত্বেও অহমিকা তার মধ্যে স্থান পায়নি-তিনি ছিলেন অত্যন্ত নম্রনত। এই ধর্ম প্রচারক নিজ হাতে তার পরিধেয় সেলাই করতেন এবং প্রায়ই অনাহারে অতিবাহিত করতেন, তিনি সত্যিই ছিলেন জগতের প্রবলতম শাসকের চেয়েও প্রবলতর ব্যক্তিত্ব।

মানুষ সর্বদা সেই ব্যক্তির প্রতি মহত্ত্বের ধারণা আরোপ করে যিনি অন্যায়ের প্রতিশোধ নেবার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ক্ষমার স্বর্গীয় নীতির শুধু প্রচার করেন না বরং তার অনুশীলন করে থাকেন। রাষ্ট্র প্রধান ও জনগণের জীবন ও সম্পদের অভিভাবক হিসেবে মুহম্মদ ছিলেন তার নিকৃষ্টতম শত্রুর প্রতিও কোমল হৃদয় ও দয়ালু। তার চরিত্রে মানুষের চিন্তায় অধিগত শ্রেষ্ঠ গুণ-ন্যায়বিচার ও করুণার সম্মিলন ঘটেছিল। নিচের ঘটনাটি এর একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ-

মুসলমানরা মরুভূমির অবাধ্য আরবদের বিরুদ্ধে অভিযানে হানিফা গোত্রের প্রধান সুমামা বিন উসালকে বন্দী করল। বন্দী অবস্থায় মদিনায় আনীত হলে তিনি মুহম্মদের দয়ার্ত আচরণে এতই অভিভূত হয়ে পড়লেন যে তিনি দুশমন থেকে তার সবচেয়ে অনুগত ভক্তে পরিণত হলেন। নিজের গোত্র মাঝে ফিরে গিয়ে তিনি মক্কায় খাদ্যদ্রব্য পাঠান বন্ধ করে দিলেন।


সুমামার এই বাণিজ্যিক বিরতি- মক্কাবাসীদের নাজুক পরিস্থিতিতে ঠেলে দিল। হানিফাদেরকে তাদের সিদ্ধান্ত থেকে বিন্দুমাত্র টলাতে না পেরে মক্কাবাসী মুহম্মদের স্মরণাপন্ন হয়ে তাকে মধ্যস্থতা করতে অনুরোধ জানাল। তারা বলল, ‘হে মুহম্মদ! কুফরী ও অবাধ্যতার দোষে মক্কার পুরুষরা দোষী হতে পারে কিন্তু নারী ও শিশুরা তো নিরাপরাধ।’


মুহম্মদের হৃদয় বিগলিত হল। তারা যা চায় তা প্রদান করতে তিনি সুমামাকে অনুরোধ করলেন। তাঁর অনুরোধে আবার মক্কা অভিমুখে বাণিজ্য জাহাজ প্রেরিত হল। সুমামার বাণিজ্যিক বিরতিতে মক্কাবাসীদেরকে যে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয় তার বর্ণনা পাওয়া যায় এই আয়াতসমূহে- আল্লাহ দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন একটি জনপদের, যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, তথায় প্রত্যেক জায়গা থেকে আসত প্রচুর জীবনোপকরণ। অতঃপর তারা আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞা প্রকাশ করল। তখন আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের দরুন স্বাদ আস্বাদন করালেন, ক্ষুধা ও ভীতির। তাদের কাছে তাদের মধ্যে থেকে একজন রসূল আগমন করেছিল। অনন্তর তার প্রতি তারা মিথ্যারোপ করল। তখন আযাব এসে ওদেরকে পাকড়াও করল এবং নিশ্চিত ওরা ছিল পাপাচারী।(১৬:১১২-১১৩)

মুহম্মদ সিনাই পর্বতের নিকটবর্তী সেন্ট ক্যাথারিন মঠের সন্ন্যাসীদের ও সকল খ্রীষ্টানদের একটি সনদ প্রদান করেছিলেন। এই সনদ তার মতবাদের বিস্ময়কর প্রশস্ততা ও ধারণার উদারতার নির্দেশক। এরদ্বারা তিনি খ্রীষ্টানদের যেসব সুযোগ-সুবিধা ও স্বাধীনতা দিয়েছিলেন তা তারা তাদের স্বধর্মী নৃপতিদের শাসনাধীনেও পায়নি। এছাড়াও মুহম্মদ ঘোষণা করেছিলেন যে, এই সনদের মধ্যে যেসব বিষয় নির্দেশিত হয়েছে তা, যে মুসলমান লংঘন ও নিন্দা করবে সে আল্লাহর নির্দেশনামার খেলাফকারী ও ইসলাম ধর্মের অবহেলাকারী হিসেবে বিবেচিত হবে।

খৃষ্টানদেরকে প্রদত্ত মুহম্মদের সনদ।
Ascribed to Ali ibn Abu Talib
মুহম্মদ খ্রীষ্টান ও তাদের গীর্জা, ধর্মযাজকদের নিরাপত্তা ও তাদের বাসগৃহ সংরক্ষণের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন এবং তার শিষ্যদের প্রতি কড়া নির্দেশ দান করেছিলেন। এদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়েছিল যে, খ্রীষ্টানদেরকে যেন অন্যায়ভাবে কর দিতে না হয়; কোন বিশপ যেন তার নিজ এলাকা থেকে বিতাড়িত না হয়; কোন খ্রীষ্টান যেন তার শরীয়ত পরিত্যাগ করতে বাধ্য না হয়; কোন সন্ন্যাসী যেন মঠ থেকে বহিস্কৃত না হয়; কোন তীর্থযাত্রী যেন তীর্থ দর্শনে বঞ্চিত না হয়। মুসলমানদের মসজিদ কিংবা তাদের বাসগৃহ নির্মাণের জন্যে যেন খ্রীষ্টানদের কোন গীর্জা ধ্বংস করা না হয়। মুসলমানদের সঙ্গে বিবাহিত খ্রীষ্টান মহিলাদের স্বীয় ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার যেন থাকে এবং সে বিষয়ে তাদের প্রতি কোনরূপ জুলুম বা উৎপাত করা যেন না হয়।

যদি খ্রীষ্টানরা তাদের গীর্জা বা মঠ সংস্কারের জন্যে কিংবা তাদের আচার-অনুষ্ঠান সংক্রান্ত কোন ব্যাপারে সাহায্যের আবশ্যকতা বোধ করে তবে মুসলমানরা যেন তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এই কাজ তাদের ধর্মে অংশ গ্রহণের সামিল বিবেচিত হবে না, এ শুধু তাদের প্রয়োজনে সাহায্য করা এবং মুহম্মদের অধ্যাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শণ করা, যা আল্লাহ ও তাঁর রসূল কর্তৃক তাদের অনুকূলে প্রদত্ত হয়েছে। যদি মুসলমানরা মদিনার বাইরের খ্রীষ্টানদের সঙ্গে শত্রুতায় অবতীর্ণ হয়, তবে দেশের খ্রীষ্টান অধিবাসীদের প্রতি তাদের ধর্মের জন্যে যেন অবমাননা করা না হয়। কোন মুসলমান খ্রীষ্টানদের প্রতি অন্যথা আচরণ করলে সে ইসলামের শত্রু বলে ঘোষিত হবে।  

মুহম্মদ মানুষকে দেখিয়েছিলেন তিনি কি ছিলেন। তার চরিত্রের মহত্ব, তার কঠিন বন্ধুত্ব, তার সহনশীলতা ও সাহসিকতা, সর্বোপরি তিনি যে সত্য প্রচার করার জন্যে এসেছিলেন তার প্রতি তার আন্তরিকতা ও অগ্নিগর্ভ উদ্দীপনা-এসব উৎকর্ষ তার ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলেছিল। এসব গুণ তাকে অমান্য করা ও তার প্রতি অসম্ভব ভালবাসা, অনুরক্ততা পোষণ না করার ব্যাপারটাকে অসম্ভব করে তুলেছিল। মুকুটধারী কোন সম্রাটই নিজ হাতে সেলাইকৃত ছিন্ন বস্ত্র পরিহিত এই মানুষটির মত আনুগত্য পাননি। মানুষকে প্রভাবিত করার বিস্ময়কর প্রতিভা ছিল তার। 

মুহম্মদের মত বিশুদ্ধ, কোমল অথচ বীরত্বব্যঞ্জক স্বভাব শুধু শ্রদ্ধারই উদ্রেক করে না, ভালবাসারও উদ্রেক করে। মহৎ ব্যক্তিদের প্রতি বিনয়, দীন-দরিদ্রের প্রতি অমায়িকতা এবং দাম্ভিকদের প্রতি মর্যাদাপূর্ণ আচরণ তার জন্যে বয়ে এনেছিল সার্বজনীন শ্রদ্ধা ও ভক্তি। শিক্ষিত ও অশিক্ষিত সকলকে সমানভাবে প্রভাবিত করার প্রতিভা তিনি লাভ করেছিলেন। এই সঙ্গে তার মুখমন্ডলে ছিল একটা গাম্ভীর্য, প্রতিভার দীপ্তি, যারা তার সংস্পর্শে আসত তারা শ্রদ্ধা ও ভালবাসার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হত।
তার মনের অসাধারণ উন্নয়ন, অনুভূতির একান্ত কোমলতা ও বিশুদ্ধ এবং তার শুদ্ধাচার ও সত্যনিষ্ঠা হাদিসের অপরিবর্তিত বিষয়বস্তুতে রূপলাভ করেছে। তিনি নিম্নস্তরের লোকদের প্রতি সর্বাপেক্ষা দয়ালু ছিলেন। তার ভৃত্য আনাস বলেছিলেন, ‘আমি দশ বৎসর ধরে হযরতের খেদমতে ছিলাম, তিনি কখনও উঃ পর্যন্ত বলেননি।’   
তিনি শিশুদের অত্যন্ত ভালবাসতেন। তিনি শিশুদের রাস্তায় দাঁড় করাতেন এবং তাদের চিবুকে হাত বুলিয়ে দিয়ে আদর করতেন। তিনি জীবনে কখনও কাউকে আঘাত করেননি। কথাবার্তায় তার ব্যবহৃত নিকৃষ্ট ভাষা হল, ‘তার কি হয়েছে? তার ললাট ধূলোয় ধুসরিত হোক!’ 
কাউকে তিরস্কার বা অভিশাপ দেবার জন্যে বলা হলে তিনি বলতেন, ‘অভিশাপ দেবার জন্যে আমাকে পাঠান হয়নি, আমি মানবের কাছে আশীর্বাদ হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।’

মুহম্মদ পীড়িত লোকদের দেখাশুনো করতেন, প্রতিটি জানাজার মিছিল যা তার নজরে পড়ত তাতে যোগদান করতেন, ভৃত্যের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতেন। তিনি নিজের পরিধেয় বস্ত্র পরিস্কার করতেন, নিজের ছাগ দোহন করতেন এবং নিজের পরিচর্যা নিজেই করতেন। তিনি কখনও আগে মৈত্রীর বন্ধন ছিন্ন করেননি, কেউ বিচ্ছিন্ন না হলে তিনি বিচ্ছিন্ন হতেন না, তিনি ছিলেন সবচেয়ে দিলদরাজ, সবচেয়ে সাহসী ও সবচেয়ে সত্যবাদী, তিনি যাদের রক্ষণাবেক্ষণ করতেন, তাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত রক্ষক ছিলেন। কথাবার্তায় তিনি ছিলেন সবচেয়ে মিষ্টভাষী, সবচেয়ে সদালাপী। যারা তাকে দেখত, তারাই তার প্রতি শ্রদ্ধাপ্লুত হয়ে পড়ত।

মুহম্মদ খুবই মৌনী স্বভাবের ছিলেন। কিন্তু তিনি যখন কথা বলতেন, তখন তা গুরুত্ব ও বিবেচনা সহকারে বলতেন এবং তা কেউ বিস্মৃত হতেন না। বিনম্রতা ও অনুকম্পা, ধৈর্য্য, আত্মত্যাগ ও উদারতা তার সমস্ত আচরণে প্রকাশ পেত। তিনি তার আহার্য অন্যের সঙ্গে ভাগ করে খেতেন এবং তার চারপাশের প্রত্যেকের আরাম আয়েশের দিকে অত্যন্ত যত্নবান থাকতেন। তিনি নিম্নস্তরের লোকদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শ্রবণ করার জন্যে পথের মধ্যে থামতেন। তিনি নীচু লোকদের গৃহে যেতেন, তাদের দুঃখ-দুর্দশায় সমবেদনা জানাতে, তাদের ব্যর্থতায় অনুপ্রেরণা দিতে।
মুহম্মদ কখনও প্রথমে আল্লাহর প্রশস্তি কীর্তন না করে আহার শুরু করতেন না এবং শুকরিয়া প্রকাশ না করে আহার থেকে উঠতেন না। তার প্রতিটি কাজের সময় সুনির্দিষ্ট ছিল। দিনের বেলা যখন তিনি নামাজে থাকতেন না, তখন দর্শনার্থীদের সাক্ষাৎ দান করতেন এবং জনসাধারণের জন্যে কাজ করতেন। রাত্রিতে তিনি সামান্য ঘুমাতেন, অধিকাংশ রাত্রি আল্লাহর ধ্যানে অতিবাহিত করতেন।

তিনি দীন-দরিদ্রদের ভালবাসতেন ও তাদের শ্রদ্ধা করতেন। চরম শত্রুর প্রতিও তার আচরণ ছিল মহানুভবতা ও ধৈর্য্যশীলতার নিদর্শণ। রাষ্ট্রের শত্রুদের প্রতি তার কঠোর মনোভাব এবং নিজের প্রতি ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, হুমকি, জুলুম ও নির্যাতন বিজয় মূহুর্তে-সব তিনি ভুলে যেতেন এবং চরম অপরাধীকেও ক্ষমা করতেন। 
মুহম্মদ অত্যন্ত সাদাসিধে প্রকৃতির ছিলেন। তার চাল-চলন, পোশাক-পরিচ্ছদ, জিনিসপত্র সবই ছিল আড়ম্বরহীন। অনেক সময়ই তাকে অনাহারে থাকতে হত। খেজুর ও পানি প্রায়ই তার একমাত্র আহার্য ছিল। অভাবের জন্যে প্রায়ই তার গৃহে হাড়ি চড়ত না। আল্লাহ তার সম্মুখে এ জগতের সম্পদের ভান্ডার উন্মুক্ত দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি।

এই বিশিষ্ট শিক্ষাগুরুর মন মানসিকতা ছিল মূলতঃ আধুনিক এবং তার সামাজিক ধারণা ছিল গঠনমূলক-বিচ্ছিন্নতাধর্মী নয়। তার সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক উন্নয়নের মূহুর্তেও তিনি পারিবারিক জীবনের কর্তব্য উপেক্ষা করেননি। মানুষের সেবাই তার কাছে ছিল সর্বোচ্চ ধর্ম কার্য। আর এ কারণেই কোরআন ঘোষণা করেছে- "নিশ্চয়ই আল্লাহর রসূলের মধ্যে তোমাদের জন্যে সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে।"(৩৩:২১)

মুহম্মদ তার পয়গাম প্রচারের পর দেড় হাজার বৎসর অতীত হয়েছে, কিন্তু এর মাধ্যমে তিনি যে নিষ্ঠা অনুপ্রাণিত করেছিলেন তার বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম ঘটেনি এবং সেদিনকার মত আজও বিশ্বাসীদের অন্তরে ও মুখে সেই স্মরণীয়বাণী উৎসরিত হয়।

--‘হে আল্লাহর রসূল, আমার জীবন তোমাতে উৎসর্গীত হোক।’


বি: দ্র: Anton F. Haddad অনূদিত পূর্ণাঙ্গ মুহম্মদের সনদ।  

In 626 AD, Muhammad issued The Achtiname of Muhammad, also known as the Covenant or (Holy) Testament (Testamentum) of the Prophet Muhammad.

”This is a letter which was issued by Mohammed, Ibn Abdullah, the Messenger, the Prophet, the Faithful, who is sent to all the people as a trust on the part of God to all His creatures, that they may have no plea against God hereafter. Verily God is the Mighty, the Wise. This letter is directed to the embracers of Islam, as a covenant given to the followers of Nazarene in the East and West, the far and near, the Arabs and foreigners, the known and the unknown.

This letter contains the oath given unto them, and he who disobeys that which is therein will be considered a disobeyer and a transgressor to that whereunto he is commanded. He will be regarded as one who has corrupted the oath of God, disbelieved His Testament, rejected His Authority, despised His Religion, and made himself deserving of His Curse, whether he is a Sultan or any other believer of Islam. Whenever monks, devotees and pilgrims gather together, whether in a mountain or valley, or den, or frequented place, or plain, or church, or in houses of worship, verily we are [at the] back of them and shall protect them, and their properties and their morals, by Myself, by My Friends and by My Assistants, for they are of My Subjects and under My Protection.

I shall exempt them from that which may disturb them; of the burdens which are paid by others as an oath of allegiance. They must not give anything of their income but that which pleases them—they must not be offended, or disturbed, or coerced or compelled. Their judges should not be changed or prevented from accomplishing their offices, nor the monks disturbed in exercising their religious order, or the people of seclusion be stopped from dwelling in their cells.

No one is allowed to plunder the pilgrims, or destroy or spoil any of their churches, or houses of worship, or take any of the things contained within these houses and bring it to the houses of Islam. And he who takes away anything therefrom, will be one who has corrupted the oath of God, and, in truth, disobeyed His Messenger.

Poll-taxes should not be put upon their judges, monks, and those whose occupation is the worship of God; nor is any other thing to be taken from them, whether it be a fine, a tax or any unjust right. Verily I shall keep their compact, wherever they may be, in the sea or on the land, in the East or West, in the North or South, for they are under My Protection and the testament of My Safety, against all things which they abhor.

No taxes or tithes should be received from those who devote themselves to the worship of God in the mountains, or from those who cultivate the Holy Lands. No one has the right to interfere with their affairs, or bring any action against them. Verily this is for aught else and not for them; rather, in the seasons of crops, they should be given a Kadah for each Ardab of wheat (about five bushels and a half) as provision for them, and no one has the right to say to them this is too much, or ask them to pay any tax.

As to those who possess properties, the wealthy and merchants, the poll-tax to be taken from them must not exceed twelve drachmas a head per year (i.e. about 200 USD).

They shall not be imposed upon by anyone to undertake a journey, or to be forced to go to wars or to carry arms; for the Islams have to fight for them. Do no dispute or argue with them, but deal according to the verse recorded in the Koran, to wit: ‘Do not dispute or argue with the People of the Book but in that which is best’ [29:46]. Thus they will live favored and protected from everything which may offend them by the Callers to religion (Islam), wherever they may be and in any place they may dwell.

Should any Christian woman be married to a Muslim, such marriage must not take place except after her consent, and she must not be prevented from going to her church for prayer. Their churches must be honored and they must not be withheld from building churches or repairing convents.

They must not be forced to carry arms or stones; but the Islams must protect them and defend them against others. It is positively incumbent upon every one of the Islam nation not to contradict or disobey this oath until the Day of Resurrection and the end of the world.” 

সমাপ্ত।

ছবি: Wikipedia, throneworld, american-buddha.
উৎস:   দি স্পিরিট অব ইসলাম -সৈয়দ আমীর আলী। Kitab Al Tawasin- by Mansur al-Hallaj.

Moses: কোরাণিক ক্যানভাসে নবী মূসা।

Abu Hena Mostafa Kamal  01 May, 2017 মি সরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ফেরাউন। হঠাৎ করে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। কিন্তু তিনি কোন উত্তরাধিকারী ন...