৬০ হিজরীর রজব মাসে মুয়াবিয়া মারা যান। তিনি ২০ বৎসর শাসন কাজ পরিচালনা করেছিলেন। এই মুয়াবিয়া ছিলেন কুরাইশ গোত্রপতি আবু সুফিয়ান পুত্র, রসুলুল্লাহর স্ত্রী উম্মে হাবিবার ভ্রাতা এবং তোলাকা। এই তোলাকা তারাই যারা যুদ্ধে পরাজিত হবার পর মুসলমান হয়েছিল। যাইহোক, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি বেশকিছু গর্হিত কার্য্য করেছিলেন। তিনি রসুলুল্লাহর পরিবারের সদস্যসহ বেশ কিছু সাহাবীদের হত্যা করেন। এসব নিহতদের মধ্যে ছিলেন হজর বিন আদি কিন্দ, আমর বিন আল হমক আল খাজা, রশীদ আল হাজরী, ঈমাম হাসান, মালিক আল আস্টার, সা’দ বিন আবু ওয়াক্কাস প্রমুখ। এদের মধ্যে আলী পুত্র ঈমাম হাসানকে হত্যা করেছিলেন সফল ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে- বিষ প্রয়োগে।
এসব ছাড়াও তিনি ইসলামিক নিয়মনীতি ভেঙ্গে তার পুত্র ইয়াজিদকে পরবর্তী খলিফা নিযুক্ত করেন। এতে মুসলিমদের অসন্তুষ্টি আরও বৃদ্ধি পায়। কেননা তারা ইয়াজিদ সম্পর্কে নানা কূ-কীর্তির কথা শুনেছিল। ইয়াজিদ মদ্যপান ছাড়াও আরও কিছু কূ-অভ্যাসের সাথে জাড়িত ছিল। সুতরাং মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর ইয়াজিদকে খলিফা হিসেবে কূফার অধিবাসীরা মেনে নিতে পারল না। তারা ঈমাম হোসেন এর নিকট তাদের মতামত ও দাবীর বিষয়ে এক পত্র দিল।
ঈমাম হোসেন ইয়াজিদকে সমর্থন দেননি, কেননা তার নিকট প্রেরিত ইয়াজিদের পত্রটি অসৌজন্যমূলক ছিল। সুতরাং তিনি এখন কূফাবাসীর পত্রের জবাবে তার চাচাত ভাই মুসলিম বিন আকিলকে বিষয়টি তদারকিতে পাঠালেন। মুসলিম কূফাতে এসে আল মুখতারের সান্নিধ্যে রইলেন।
আল মুখতারের পূর্ণ নাম আল মুখতার ইবনে আবি উবায়েদ আল্লা আল তাকাফি (al-Mukhtār ibn Abī ‘Ubayd Allah al-Thaqafī)। জন্ম ৬২২ সনে আরবের তায়েফে- বনু শফিক গোত্রে। অর্থাৎ তার জন্ম হিজরী সনে, যে সনে মুহম্মদ রসূল আল্লাহ মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন। হযরত ওমরের খেলাফতের সময় তিনি তার পিতা আবি উবায়েদ এর সাথে মদিনায় চলে আসেন। পরবর্তীতে আবি উবায়েদ তার পরিবার নিয়ে ইরাকের কূফায় নবগঠিত আরব গ্যারিসনে চলে যান। এরপর পারস্য বিজয়ে তিনি একদল মুসলিম সেনা বাহিনীর নেতৃত্ব পেলে তখন থেকে তার বাড়ীটি কুফার মুসলিমদের যোগাযোগের প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। পার্স্যিয়ানদের সাথে যুদ্ধে আবি উবায়েদ হাতীর পদতলে পিষ্ঠ হয়ে নিহত হয়েছিলেন। এসময় তার পুত্র জুবায়ের তার স্থলাভিষিক্ত হলে তিনিও যুদ্ধে নিহত হন।
কূফাবাসীরা ঈমাম হোসেনের প্রতিনিধি মুসলিমের আগমনের সংবাদ শ্রবণে আল মুখতারের বাড়ীতে সমবেত হল। তারা সমবেতভাবে ঈমাম হোসেনের প্রতি আস্থা ও সমর্থন জ্ঞাপন করল। এসময় মুসলিম ঈমাম হোসেনের পত্রটি তাদেরকে পাঠ করে শোনালেন।
এদিকে মুসলিমের আগমণ সংবাদ ইয়াজিদকে জানান হল। তখন তিনি এ বিষয়ে তার উপদেষ্টা সার্গনের পরামর্শ চাইলেন। এই সার্গন ছিলেন একজন ক্রিশ্চিয়ান। তিনি ইয়াজিদকে বসরার শাসনকর্তা ওবায়দুল্লা বিন জায়েদকে কূফারও শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগের পরামর্শ দিলেন।
শাসনভার পেয়ে ওবায়দুল্লা বিন জায়েদ কূফায় আগমণ করলেন এবং তিনি তার রক্ষীদের নির্দেশ দিলেন মুসলিমকে গ্রেফতার করতে। তারা গিয়ে তাকে না পেয়ে আল মুখতারকে গ্রেফতার করে নিয়ে এল। ওবায়দুল্লা আল মুখতারকে কূফার আল তামুরাতে পাঠিয়ে দিলেন। এই আল তামুরা ছিল ভূ-গর্ভস্থ এক জেলখানা।
ওবায়দুল্লা তার রক্ষীদের কূফার সর্বত্র মুসলিমকে খুঁজতে নির্দেশ দিলেন। এতে তার রক্ষীরা নিরীহ মানুষ ধরে ধরে কারাগারে নিক্ষেপ করতে লাগল। ফলে মুসলিম বিদ্রোহ ঘোষণা করতে বাধ্য হলেন। এতে কূফাবাসী তাকে সমর্থন দিল। মুসলিম প্রিন্সের প্রাসাদ দখল করে নিয়ে সেখানে অবস্থান নিলেন।
এতে ওবায়দুল্লা নিজেকে বিপদগ্রস্থ দেখলেন। কিন্তু তিনি ধূর্ত ছিলেন। তিনি এসময় প্রচার করলেন যে শ্যামার এক বিরাট বাহিনী কূফা নগরী ধ্বংস ও তার অধিবাসীদের হত্যা করতে এগিয়ে আসছে। কূফাবাসীরা তার এ কথা বিশ্বাস করল। ফলে তারা মুসলিমকে একাকী ফেলে নিজেদের পরিবার ও সম্পদ রক্ষার দিকে মনোনিবেশ করল। এসময় মুসলিম নিজেকে অরক্ষিত দেখে সঙ্গী হানিসহ প্রিন্সের প্রাসাদ পরিত্যাগ করে গা ঢাকা দিলেন।
ওবায়দুল্লার চরেরা সংবাদ নিয়ে এল মুসলিম তার সঙ্গীসহ তাওয়া (Taua) নামক এক বৃদ্ধার গৃহে আশ্রয় নিয়েছেন। ওবায়দুল্লা তখন তাদেরকে গ্রেফতার করতে একদল রক্ষী প্রেরণ করলেন।
রক্ষীরা মুসলিমকে আত্মসমর্পন করতে নির্দেশ দিল। কিন্তু তিনি তা করতে অস্বীকার করলে তারা জোরপূর্বক গৃহে প্রবেশ করল এবং আহত অবস্থায় মুসলিম ও হানিকে গ্রেফতার করে প্রিন্সের প্রাসাদে নিয়ে এল। তখন ওবায়দুল্লা তাদেরকে হত্যা করতে নির্দেশ দিলেন। তার এ নির্দেশে মুসলিম বিন আকিল ও তার সঙ্গী হানি বিন ওয়ারওয়াকে হত্যা করা হল এবং তাদের দেহকে প্রাসাদের বাইরে ছুঁড়ে ফেলা হল।
ইতিপূর্বে মুসলিম বিন আকিল কূফাবাসীর মনোভাব জানিয়ে ঈমাম হোসেনকে এক পত্র দিয়েছিলেন।এতে তিনি কূফাতে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। মদিনা থেকে প্রথমে তিনি মক্কাতে এলেন হজ্জ্বব্রত সম্পন্ন করতে। ইয়াজিদ ঈমাম হোসেনের মক্কাতে গমনের কথা জানতে পেরেছিলেন এবং তিনি কয়েকজন গুপ্তঘাতকও পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তারা কাবার পবিত্রতা রক্তপাতের দ্বারা নষ্ট করতে পারেনি। কেননা ঈমাম হোসেন ইতিমধ্যে হজ্জব্রত সম্পন্ন করে পরিবার ও ৭০ জন অনুসারীসহ কূফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন।
কারবালা প্রান্তরে পৌঁছিলে এক অগ্রগামী দূত সংবাদ নিয়ে এল যে, ওবায়দুল্লা বিন জায়েদের রক্ষীরা মুসলিম বিন আকিলকে হত্যা করে ফেলেছে এবং তার একদল সেনাবাহিনী কারবালার দিকে অগ্রসরমান। এ সংবাদে ঈমাম হোসেন আর অগ্রসর না হয়ে সেখানেই তাঁবু ফেললেন।
কারবালার যুদ্ধ। |
ওবায়দুল্লার এক হাজার অশ্বারোহী ও চার হাজার পদাতিক বাহিনী ঈমাম হোসেনের কাফেলাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলল। এই বাহিনীর নেতৃত্বে ছিল আমর বিন সা’দ। আমর ঈমাম হোসেনকে প্রস্তাব দিল আত্মসমর্পন ও ইয়াজিদকে সমর্থন করার। এতে ঈমাম হোসেন ঐ প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করলেন এবং বললেন-"Abasement is far away from us!"
ফলে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখা হল এবং এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হল যেন হোসেন পরিবার ও তার সঙ্গীগণ যেন কোন প্রকার খাবার বা পানি সংগ্রহ করতে না পারে।
১০ই মুহররম ভোরবেলায় ইয়াজিদের সেনাবাহিনী কাফেলাকে আক্রমণ করল। ঈমাম হোসেনের ৭০ জন অনুসারী একে একে নিহত হল। এ ছিল এক অসম যুদ্ধ। তদুপরি এই ৭০ জন অসীম সাহসিকতার সঙ্গে লড়ে এই যুদ্ধ সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রলম্বিত করেছিল। সেনা সদস্যরা ঈমাম হোসেনের অনুসারী নিহতদের মস্তক দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে বর্শার ফলকে গেঁথে নিল। তারপর তাঁবু গুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে নারী ও শিশুদেরকে বন্দী করে কূফার পথে যাত্রা করল।
ঈমাম হোসেনের ছিন্ন শির ওবায়দুল্লা বিন জায়েদের হস্তে অর্পণ করল আল সীমার। ফোরাতের তীরে ঈমাম হোসেন অনেকগুলো তীরের আঘাতে আহত হয়ে মুমুর্ষ অবস্থায় পড়েছিলেন। তার শিরের উপর উচ্চমূল্য ধার্য্যিত ছিল। তথাপি তার দেহ থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন করতে কেউ অগ্রসর হচ্ছিল না। এ সময় এই সীমার এগিয়ে গিয়ে ঐ অবস্থায় তার শির দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে তা বর্শার ফলকে গেঁথে নেয়।
আব্দুল্লাহ বিন ওমর বিন আল খাত্তাব আল মুখতারের ভগ্নি সুফিয়াকে বিবাহ করেছিলেন। আব্দুল্লাহর সাথে ইয়াজিদের সুসম্পর্ক ছিল। স্ত্রী সুফিয়ার অনুরোধে তিনি এখন আল মুখতারকে মুক্তি দিতে ইয়াজিদকে অনুরোধ করলেন। ইয়াজিদ আব্দুল্লাহর এ অনুরোধ রক্ষা করেন এবং তাকে মুক্তি দিতে ওবায়দুল্লাকে নির্দেশ দেন।
আলীর দু'পুত্র ঈমাম হোসেন ও আব্বাসের সমাধি, কারবালা বর্তমানে। |
এদিকে ঈমাম হোসেনের মৃত্যু সংবাদ মক্কা ও মদিনাতে এসে পৌঁছিল। তখন আব্দুল্লাহ বিন আল জুবায়ের (আসমা বিনতে আবু বকর পুত্র) নিজেকে খলিফা হিসেবে ঘোষণা দিলেন। আব্দুল্লাহ উচ্চাভিলাসী ছিলেন। তদুপরি এ সময় লোকেরা তাকে পূর্ণ সমর্থন দিল। তার প্রতি এ অনুগত্য লোকেরা প্রদর্শণ করল মূলত: দুটি কারণে- তাকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দের কারণে অথবা উমাইয়া খেলাফতের প্রতি ঘৃণা বশত:।
এই বিদ্রোহ দমনে ইয়াজিদ মুসলিম বিন আকাবার অধীনে একদল সেনাবাহিনী প্রেরণ করলেন। মুসলিম লোকদের নিকট পরিচিত ছিল মুজরিম নামে। যাইহোক সে মদিনা আক্রমণ করল এবং হত্যাযজ্ঞ চালাল। এই আক্রমনে ১৫ হাজারের মত লোক নিহত হল। আর যে সব নারী-পুরুষ বন্দী হল, তাদেরকে দাস হিসেবে বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজারজাত করার নির্দেশ দেয়া হল।
মদিনাকে নিজ নিয়ন্ত্রণে নেবার পর মুজরিম মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করল। কিন্তু পথিমধ্যে সর্পদংশনে সে নিহত হলে তার স্থলাভিষিক্ত হল আল হুসেন বিন নুমার। এই আল হুসেন কারবালার যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছিল।
এই স্থানে ঈমাম হোসেনের কর্তিত শির প্রদর্শনীর জন্যে রেখেছিল ইয়াজিদ। |
আল হুসেন এ সংবাদে বিষ্মিত হল। তার সেনাবাহিনীর মধ্যে এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে তারা আর পবিত্রনগরীকে ধ্বংস করতে আগ্রহী হল না। তখন হুসেন তার সেনাবাহিনী তুলে নিয়ে দামেস্কের পথে যাত্রা করল।
ইযাজিদের মৃত্যুর পর তার পুত্র মুয়াবিয়া তার উত্তরাধিকার লাভ করলেন। কিন্তু তিনি পদ গ্রহণে অস্বীকৃত হলে মারওয়ান বিন আল হাকাম সুযোগটি গ্রহণ করেন। তবে তিনি মাত্র ছয় মাস শাসন কাজ চালিয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র আবিদ আল মালিক ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
এদিকে কূফার শাসনকর্তা ওবায়দুল্লাও ইয়াজিদের মৃত্যু সংবাদে দামেস্কের পথে রওনা দিয়েছিল। কূফাবাসীরা এ সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করল। তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করল এবং আব্দুল্লাহ বিন জুবায়েরকে সমর্থন করে বসল। আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের তখন আব্দুল্লাহ বিন মূতাকে কূফার শাসনকর্তা নিযুক্ত করলে কূফাবাসী তাকে সমর্থন দিল। এসময় দীর্ঘ চার বৎসর মক্কাতে বসবাসের পর আল মুখতার কূফাতে ফিরে এলেন।
আল মুখতারের কূফাতে ফিরে আসা কারবালার সহিংসতায় অংশগ্রহণকারীদেরকে আতঙ্কিত করল। সুতরাং তারা এক বিপদজনক পদক্ষেপ নিল। তারা শাসনকর্তা আব্দুল্লাহ বিন মূতাকে বোঝাতে সক্ষম হল যে, আল মুখতার উচ্চাভিলাসী বিপদজনক এক ব্যক্তি। সে কারবালার সহিংসতার প্রতিশোধের নামে বিপ্লব ঘটিয়ে তার বিরুদ্ধাচারীদেরকে হত্যার মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে চায়। সুতরাং তাকে এখনই বন্দী করা জরুরী। আব্দুল্লাহ বিন মূতা বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিলেন এবং আল মুখতারকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়ে দিলেন।
আল মুখতার। |
এই বাহিনীর মোকাবেলায় ওবায়দুল্লা বিন জায়েদ আট হাজার সেনার এক বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হল। দু’দল ইরাক ও সিরীয়ার সীমান্তবর্তী আইন আল ওয়ার্দাতে পরস্পর মুখোমুখী হয়। এই যুদ্ধে সুলাইমান নিহত হলে তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিল রাফা’আ বিন সাদ্দাদ। সে তার সেনাবাহিনী যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তুলে নিয়ে কূফা ফিরে এল।
আবারও আব্দুল্লাহ বিন ওমর, আল মুখতারের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করলে তিনি মুক্ত হলেন। মুক্ত হবার পর আল মুখতার লোকদেরকে কারবালার সহিংসতায় অংশগ্রহণকারীদেরকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে তার আন্দোলনে শরীক হবার আহবান জানালেন। তিনি আরও জানালেন তার এই আন্দোলনে মুহম্মদ বিন আল হানাফিয়ার সমর্থন রয়েছে।
আল মুখতারের প্রতিশোধ গ্রহণ। |
যাইহোক আল মুখতারের প্রতি মুহম্মদের সমর্থন আছে জানতে পেরে কূফাবাসীগণ তাকে সমর্থণ দিল। তাদের এই সমর্থণের উপর ভর করে ১৪ই রবিউল আওয়াল মুখতার বিদ্রোহ করে বসলেন। রাস্তায় রাস্তায় সংঘর্ষ হল। আব্দুল্লাহ বিন মূতা অবস্থা বেগতিক দেখে হিজাজের দিকে পালিয়ে গেলেন।
আইন আল ওয়ার্দার যুদ্ধের পর উমাইয়া সেনাবাহিনী সম্মুখে অগ্রসর হয়েছিল এবং মসূল শহর দখল করে নিয়ে সেখানে অবস্থান করছিল। এখন তারা কূফার দিকে অগ্রসর হল। এ সংবাদে আল মুখতার ইয়াজিদ বিন আনাসের নেতৃত্বে তিন হাজার সৈন্যের এক বাহিনী প্রেরণ করলেন। এই বাহিনী উমাইয়া বাহনীকে প্রতিহত করল বটে কিন্তু সেনাপ্রধান ইয়াজিদ নিহত হওয়াতে তারা কূফাতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিল।
কূফা মসজিদ-এখানে মুসলিম, হানি ও মুখতারের সমাধি রয়েছে। |
এই শুদ্ধি অভিযানে নিহত হল- আমর বিন সাদ-কারবালা যুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী উমাইয়া সেনাপতি, ঈমাম হোসেনের শিশুপুত্রের হত্যাকারী হার্মালা বিন কাহিল, ঈমাম হোসেনকে তীরবিদ্ধকারী সুনান বিন আনাস। আর সীমার পালিয়ে গিয়েছিল এবং মুখতারের সেনাবাহিনী তাকে ধাওয়া করে। এই দল তাকে খুঁজে পায় ওয়াজিত (Wasit)-এর এক গ্রামে এবং তাকে সেখানেই শিরোচ্ছেদ করে। এই সীমার ঈমাম হোসেনের শির দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে বর্শাতে গেঁথে প্রথমে কূফাতে শাসনকর্তা ওবায়দুল্লার নিকট এবং পরে দামেস্কে ইয়াজিদের নিকট নিয়ে যায়। অত:পর খলিফা ইয়াজিদ এই শির সর্বসাধারণের জন্যে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছিলেন।
কুফা মসজিদের অন্ত: প্রাঙ্গন। |
বসরা ও কূফার অস্থিতিশীলতা লক্ষ্য করে আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের সেখানে একজন কঠোর শাসক প্রেরণের কথা ভাবলেন। সুতরাং তিনি তার ভ্রাতা মূসাব বিন আল জুবায়েরকে বসরার শাসনকর্তা নিয়োগ করে সেখানে প্রেরণ করলেন। মূসাব বসরাতে এসে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে তার প্রথম ভাষণে বললেন- "Some people have told me that you surname your rulers. Before you
surname me, I have surnamed myself al-Jazzar (Butcher)."
নিজেকে বসরাতে সুপ্রতিষ্ঠিত করে মূসাব বিন আল জুবায়ের কূফার দিকে মনোনিবেশ করলেন এবং আল মুখতার কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে কূফার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেলেন। মূসাব বেশ কৌশলী ছিলেন। তিনি আল মুখতারকে ইসলাম বিরোধি ও খলিফা আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী হিসেবে তার সেনাবাহিনীর নিকট উপস্থাপন করে তাদেরকে উজ্জীবিত করলেন। আল মুখতারের সেনাবাহিনীর এক বিরাট অংশ এসময় ইব্রাহিম আল আস্টারের নেতৃত্বে মসূলে অবস্থান করছিল। সুতরাং তার ক্ষুদ্র একদলকে মূসাবের বাহিনী মোকাবেলা করতে হল। মূসাব ঐ বাহিনীকে সহজেই হটিয়ে দিয়ে কূফা নগরী ঘেরাও করে ফেললেন। এই অবরোধ চার মাস ছিল। অবশেষে ৬৮৭ সনের এপ্রিলে নগরের পতন হল এবং আল মুখতার নিহত হলেন। তাকে মসজিদ আল কূফায় সমাহিত করা হয় যেখানে মুসলিম বিন আকিল ও হানি বিন ওয়ারওয়ার সমাধিও রয়েছে।
সমাপ্ত।
বি:দ্র: সুন্নী মুসলিমগণ অবশ্য আল মুখতারকে সর্বদা "ভন্ড নবী" হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছেন।
ছবি: Wikipedia, panoramio, akhbar.mumineen.
বি:দ্র: সুন্নী মুসলিমগণ অবশ্য আল মুখতারকে সর্বদা "ভন্ড নবী" হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছেন।
ছবি: Wikipedia, panoramio, akhbar.mumineen.