২০ এপ্রিল, ২০১২

Yathrib: ইসলামের প্রচার ও প্রসারের সূত্রপাত।


নব্যুয়তের একাদশ বৎসর। একদিন মুহম্মদ বিষন্ন অথচ আশান্বিত হৃদয়ে মক্কায় আগত আধা ব্যবসায়ী আধা তীর্থযাত্রীদের মধ্যে প্রচার কাজ চালাচ্ছেন। এসময় দূর ইয়াসরিব থেকে আগত ছয়জন লোকের একটি দলের সঙ্গে তার দেখা হল। তিনি তাদেরকে কিছুক্ষণের বিশ্রামের মাঝে তার কথা শ্রবণের অনুরোধ করলেন। তারা বসলেন এবং মনোযোগ সহকারে তার কথা শুনলেন। তারা শেষ নবীর আবির্ভাবের কথা জেনেছিলেন আর তারা তা জেনেছিলেন তাওরাতের অনুসারী ইহুদিদের কাছ থেকে। তারা প্রায়ই তাদেরকে বলত, ‘শেষ নবীর আবির্ভাবের সময় অত্যাসন্ন, আমরা তার সহযোগিতায় আমাদের হারান মর্যাদা পুনরুদ্ধার করব।’
তারা তাদের কথা স্মরণ করে ও মুহম্মদের আন্তরিকতা ও বক্তব্যের সত্যতায় বিমুগ্ধ হয়ে একে অন্যকে বললেন, ‘দেখ, তারা যেন আমাদের আগে সত্যপথ গ্রহণ করে প্রথম মর্যাদায় অভিষিক্ত না হয়।’ 

তারা মুহম্মদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন এবং দেশে ফিরে তড়িৎগতিতে প্রচার করলেন যে, আরবদের মধ্যে একজন প্রেরিত পুরুষের আবির্ভাব ঘটেছে যিনি এক আল্লাহর পথে মানুষকে আহবান করছেন এবং তাদের মধ্যে শতাব্দীব্যপী আত্মঘাতী কলহ দূর করতে সচেষ্ট হয়েছেন। 

পরের বৎসর ৬২১ খ্রীঃ এ ইয়াসরিববাসীরা পুনঃরায় এলেন এবং সেই শহরের দু’টি প্রধান গোত্র আওস ও খাজরাজের প্রতিনিধি হিসেবে আরও ছয়জনকে সঙ্গে নিয়ে এলেন। যে স্থানে আগের বৎসর ছয়জন দীক্ষা নিয়েছিলেন সেখানেই নতুন এই ছয়জনও মুহম্মদের কাছে বায়াত হলেন। যে পর্বতের পাদদেশে এই শপথ হয়েছিল তার নামানুসারে এই শপথের নাম হল ‘আকাবার প্রথম শপথ।’ তারা যে শপথ গ্রহণ করেছিলেন তা ছিল- 

-আমরা আল্লাহর সঙ্গে কোন বস্তুর শরীক করব না; 
-চুরি করব না; 
-ব্যভিচার করব না; 
-আমাদের শিশু সন্তানদের হত্যা করব না; 
-সর্বপ্রকার অশোভন ও অশ্লীল কাজ থেকে দূরে থাকব। 
-সকল ভাল কাজে আমরা মুহম্মদের নির্দেশ মেনে চলব এবং 
-সুখে-দুঃখে তার প্রতি অনুগত থাকব।
স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের সময় এই লোকগুলো মুহম্মদকে বললেন, ‘কোরআন পাঠদানে সক্ষম এমন কাউকে আমাদের সঙ্গে দিলে ভাল হত।’ 
মুহম্মদ তখন মেসহাব বিন ওমরকে তাদের সঙ্গে দিলেন। এই মেসহাবের পিতার ছিল অগাধ ধন-সম্পত্তি। অতি মূল্যবান বস্ত্র পারিধান করে মেসহাব যখন মক্কার পথে বের হতেন তখন তার অগ্রে পশ্চাতে আর্দালী চলত। ইসলামে দীক্ষিত হবার পর তিনি এখন কপর্দকহীন কাঙ্গাল। যখন তিনি কোরআনের শিক্ষকরূপে মদিনায় যাচ্ছেন, তখন তার পরিধেয় কেবল এক টুকরো ছেঁড়া কম্বল। 
ওহোদ যুদ্ধে এই মেসহাব শহীদ হয়েছিলেন।

মেসহাব ভক্তগণের সঙ্গে মদিনায় গমন করলেন। সেখানে তিনি আসাদ বিন জোরারার বাড়ীতে অবস্থান গ্রহণ করলেন। ভক্তরা তাদের প্রতিজ্ঞা পূর্ণভাবেই প্রতিপালন করতে লাগলেন। অধিকন্তু কোরআনের পবিত্র শিক্ষার মাহাত্ম্যে তাদের মধ্যে একটা নতুন জীবনের সূত্রপাত হল।

আনসারদের মধ্যে মহাত্মা সা‘দ বিন মু‘আজের নাম সর্বজন বিদিত। এই সা‘দ ও ওছায়দ নামক আর একব্যক্তি তখন আশহাল গোত্রের প্রধান সমাজপতি। ক্রমান্বয়ে মদিনায় ইসলামের প্রভাব বৃদ্ধি দর্শণ করে তারা বিচলিত হয়ে পড়লেন। তারা ইসলামের মূলোচ্ছেদ করার পরামর্শে লিপ্ত হলেন। সা‘দ ওছায়দকে বললেন, ‘আরে সর্বনাশ! এই লোক এখানে এসে আমাদের নিরীহ লোকগুলিকে একেবারে গোমরাহীর মধ্যে টেনে নিয়ে গেল, আর এখন আমাদের মধ্যে জালপাতার ব্যবস্থা করছে। তুমি গিয়ে তাদেরকে ভীতি প্রদর্শণ করে এস, যাতে আমাদের এদিকে তারা আর কখনও না আসে। না হলে এর পরিণাম তাদের জন্যে কখনই প্রীতকর হবে না। আমি নিজেই এর উচিৎ ব্যবস্থা করে আসতাম, কিন্তু হতভাগা আসাদটা আমার খালাত ভাই, তাই তুমি যাও।’
প্রধান দলপতির কথায় ওয়াছদ সর্বপ্রকার অস্ত্র-শস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে তার সন্ধানে বেরিয়ে পড়লেন এবং আসাদ ও মেসহাবকে একটা কূপের কাছে খুঁজে পেলেন। ওয়াছদ উগ্রমূর্ত্তি ধারণ পূর্বক কঠোর ভাষায় তাদেরকে বললেন, ‘দুরাত্মা! আমাদের দেশে এসেছ কেন? আমাদের সহজ সরল লোকগুলিকে প্রবঞ্চিত করতে? শীঘ্র এখান থেকে চলে যাও, যদি প্রাণের মায়া থাকে!’
এসময় মেসহাব ধীর, নম্র অথচ অবিচলিত কন্ঠে বললেন, ‘জনাব! একটু স্থির হয়ে বসুন, আমাদের বক্তব্য শ্রবণ করুন। যদি তা আপনার জ্ঞান ও বিবেক অনুসারে সত্য ও যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন, তবে তা গ্রহণ করবেন। আর যদি তা মন্দ প্রতিপন্ন হয়, তাহলে না হয় আপনি আমাদের বিরুদ্ধাচারণ করবেন।’

উগ্র ব্যাবহারের এমন নম্র ও যুক্তিযুক্ত উত্তর পেয়ে ওয়াছদ মনে মনে একটু লজ্জিত হলেন।  তিনি প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করে সেখানে বসলেন। মেসহাব তখন স্পষ্ট, প্রাঞ্জল ও ধীর গম্ভীর ভাষায় ইসলামের স্বরূপ এবং তার সত্যতা ও শিক্ষা উত্তমরূপে বুঝিয়ে দিলেন এবং উপসংহারে কোরআনের কতকগুলি আয়াত পাঠ করলেন। কোরআন শ্রবণ করে ওয়াছদ বিমোহিত হলেন, এরপর সেখানেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। চলে আসার সময় তিনি মেসহাবকে বললেন, ‘আমাদের সমাজপতি সা‘দকে কৌশলে আপনাদের কাছে পাঠিয়ে দেব, আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি ইসলাম গ্রহণ করলে, আশহাল গোত্রের মধ্যে আর কেউই ইসলামের বিরুদ্ধাচারণ করতে অগ্রসর হবে না।’ 
ওয়াছদ সোজা সা‘দের কাছে ফিরে গেলেন। সা‘দ তখন তার সভাগৃহে লোকজনসহ অবস্থান করছিলেন। ওয়াছদকে দেখেই তিনি গম্ভীরস্বরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি করে এলে?’
ওয়াছদ বললেন, ‘আমি তাদের সাথে কথাবার্তা বললাম। বিচলিত হবার কিছু নেই। আমি তাদের নিষেধ করেছিলাম, তারা বলল-আপনি যা বলেন আমরা তাই করব। ফেরার পথে শুনলাম আপনাকে অপদস্ত করার জন্যে হারেছ বংশের লোকেরা আপনার খালাত ভাই আসাদকে হত্যা করতে বের হয়েছে।’
এ কথায় সা‘দ অসন্তুষ্ট গলায় বললেন, ‘তুমি দেখছি কিছুই করে আসতে পারনি।’
তিনি আসাদের বিপদের সংবাদে অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জ্বিত হয়ে মেসহাবের কাছে গমন করলেন।

সা‘দ উলঙ্গ তরবারী হাতে অকুস্থলে উপস্থিত হয়ে আসাদকে সম্বোধণ করে বললেন, ‘এসব কি হচ্ছে? কি বলব! তোমার সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক না থাকলে এতক্ষণ তোমার মাথা মাটিতে গড়াগড়ি দিত। ফাঁদ পেতে আমাদের বোকা লোকগুলিকে মজাতে বসেছ তোমরা!’

বিজ্ঞ মেসহাব আগের মত নম্র ও যুক্তিযুক্ত কথায় তার উত্তেজনা প্রশমিত করে ফেললেন। আলোচনা, উপদেশ ও কোরআন শ্রবণের পর সা‘দ আগ্রহ ও ভক্তি সহকারে ইসলাম গ্রহণ করলেন।

এদিকে সা‘দ কি করে আসেন তা জানার জন্যে লোকেরা আগ্রহ ও উত্তেজনা সহকারে অপেক্ষা করছিল। অতঃপর সা‘দ ফিরে এলেন। লোকেরা তাকে কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই তিনি বললেন, ‘হে আশহাল বংশীয়রা! সত্যি করে বল, তোমরা আমাকে কেমন লোক বলে মনে করে থাক?’
তারা বলল, ‘তুমি আমাদের প্রধান, আমাদের ভক্তিভাজন দলপতি। তোমার জ্ঞানের গভীরতা, তোমার সিদ্ধান্তের সমীচীনতা এবং তোমার ন্যায়নিষ্ঠা সর্বজন বিদিত।’ 
তিনি বললেন, ‘তবে শোন! তোমাদের এই পৌত্তলিকতার, এই অনাচার ও অবিচারের এবং এই অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের ধর্মের সাথে-সর্বোপরি তোমাদের সাথে আমার আর কোন সম্বন্ধ নেই। যতক্ষণ না তোমরা এক অনাদি, অনন্ত ও বিশ্বচরাচরের একমাত্র স্রষ্টা আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন না কর, ততক্ষণ তোমাদের সাথে আমার কোন কথাবার্তাও নেই।’

উভয়পক্ষ হতে ইসলাম সম্বন্ধে তুমুল আলোচনা শুরু হল। অবশেষে সকলে ইসলামের সত্যতা ও মহাত্ম্য স্বীকার করল এবং সেই একদিনে- আশহাল গোত্রের সকল নর-নারী গোত্র প্রধানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইসলাম গ্রহণ করল। পরবর্তীতে মেসহাব ও অন্যান্যদের অতি আগ্রহের সাথে প্রচারের ফলে কয়েক মাসের মধ্যে ইসলাম প্রায় প্রত্যেক গোত্রের মাঝে স্থান করে নিল।

মদিনায় প্রচুর ইহুদি বাস করত কিন্তু সেখানকার পৌত্তলিকরা মূসার শরীয়ত গ্রহণ করেনি। কিন্তু মুহম্মদের শরীয়ত আগমনের পর লোকেরা দলে দলে তা গ্রহণ করতে লাগল। এর কারণ কোরআনে বিধৃত হয়েছে। ‘মরিয়ম তনয় ঈসা যখন বললেন- ‘হে ইস্রাইল বংশীয়রা, নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ কর্তৃক তোমাদের কাছে প্রেরিত হয়েছি-আমার সম্মূখে তাওরাতের যা আছে- আমি তার সত্যতা ঘোষণা করছি এবং আমার পরে আহমদ নামে যে রসূল আসবেন, আমি তার আগমনের সুসংবাদ দান করছি।’

কিন্তু যখন (সেই আহমদ) স্পষ্ট যুক্তি প্রমাণসহ আগমন করল, তখন তারা বলল-এগুলি তো স্পষ্ট যাদু। দেখ সেই ব্যক্তি অপেক্ষা অত্যাচারী কে? যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যে দোষারোপ করে থাকে অথচ তাকে ইসলামের দিকে আহবান করা হচ্ছে! আর আল্লাহ অত্যাচারী জাতিকে হেদায়েত করেন না। তারা (সেই অত্যাচারীরা) সঙ্কল্প করে যে, আল্লাহর জ্যোতিকে মুখের ফুৎকারে নিবিয়ে দেবে, কিন্তু আল্লাহ নিজের জ্যোতিকে পূর্ণে পরিণত করবেনই- যদিও ঈশ্বরদ্রোহীগণের কাছে এ প্রীতিকর না হয়। তিনি সেই (আল্লাহ), যিনি আপন রসূল (আহমদ)কে হেদায়েত ও সত্যধর্ম দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যেহেতু তাকে অন্য সমস্ত ধর্মের উপর জয়যুক্ত করবেন, যদিও অংশীবাদীগণের কাছে এ অপ্রীতিকর হয়।’-(৩:৪৯-৫১)

পরের বৎসর (৬২২ খ্রীঃ-নব্যুয়তের ত্রয়োদশ বৎসরে) ইয়াসরিববাসীদের মধ্যে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তারা তাদের পৌত্তলিক নাগরিকসহ মোট পাঁচ শতাধিক লোক মক্কায় আগমন করলেন। এদের মধ্যে সত্তুরজন মুসলিম, মুহম্মদকে তাদের কাছে যাবার আমন্ত্রণ জানানোর জন্যে এসেছিলেন। কিন্তু আগত পৌত্তলিকরা তাদের সাথীদের অভিপ্রায় সম্পর্কে কিছুই জানত না। গভীর রাত্রে যখন সবাই ঘুমে অচেতন তখন এই নবদীক্ষিতরা যেখানে প্রথম শপথ গ্রহণ করেছিলেন সেখানে পাহাড়ের পাদদেশে সমবেত হলেন। পিতৃব্য আব্বাসকে সঙ্গে নিয়ে মুহম্মদ সেখানে উপস্থিত হলেন। আব্বাস তখনও ইসলাম গ্রহণ করেননি তবে ইসলামের অগ্রগতিতে খুবই আগ্রহ অনুভব করতেন। তিনি আলোচনার উদ্বোধন করে পরিস্কারভাবে ইয়াসরিববাসীদের বুঝিয়ে দিলেন যে, ইসলাম গ্রহণ করে ও রসূলকে তাদের দেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে তারা কি ধরনের বিরাট ঝুঁকি নিচ্ছেন। তারা সকলে একযোগে উত্তর দিলেন যে, বিপদের গুরুত্ব  সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন হয়েই তারা ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তারা বললেন, ‘হে আল্লাহর নবী, আপনি বলুন এবং আপনার ও আপনার প্রভুর জন্যে যে কোন শপথ করান।’

মুহম্মদ অভ্যস্ত পথে কোরআনের কতিপয় আয়াত আবৃত্তি করে আলোচনা শুরু করলেন, তারপর তিনি উপস্থিত সকলকে আল্লাহর উপাসনা করার জন্যে আহবান জানালেন এবং ইসলামের আশীর্বাদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। প্রথম শপথটি পুনঃরায় উচ্চারিত হল এবং সেই সঙ্গে এটি যুক্ত হল যে, তারা বিপদের ক্ষণে তাকে ও তার লোকজনদের রক্ষা করবেন।
তারা বললেন, ‘যদি আমরা আল্লাহর কাজে মৃত্যুবরণ করি তবে আমাদের পুরস্কার কি? ‘
তিনি জবাব দিলেন, ‘পরকালে শান্তি।’
তারা বললেন- ‘যখন আপনার সুদিন আসবে তখন কি আপনি আমাদেরকে পরিত্যাগ করে আপনার গোত্র মাঝে ফিরে আসবেন না?’
তিনি মৃদু হেসে বললেন, ‘না, কখনও না। তোমাদের রক্ত আমার রক্ত, আমি তোমাদের, তোমরা আমার।’
‘তাহলে এবার আপনার হাত দিন।’ -প্রত্যেকে তার হাতে হাত রেখে শপথ (বায়াত) নিলেন।

প্রকৃতপক্ষে এই ‘বায়াত’ বা ক্রয়-বিক্রয় মুহম্মদের সাথে হয়নি। এ সংক্রান্ত কোরআনের আয়াতসমূহ-‘যারা তোমার সাথে বায়াত করছে, তারা (তোমার সাথে নয় বরং) প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর সাথে বায়াত করছে (প্রকৃতপক্ষে) তাদের হাতের উপর আল্লাহরই হাত আছে। অতঃপর যে ব্যক্তি এ প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করবে, তার কূ-ফল সেই ভোগ করবে এবং আল্লাহর সাথে তার যে (আদান- প্রদানের) প্রতিজ্ঞা হল- যে ব্যক্তি তা রক্ষা করবে, আল্লাহ শীঘ্রই তার মহান পুরস্কার দান করবেন।’(২৬:৯)

এই বায়াতের উল্লেখিত ‘ক্রয়-বিক্রয়’- উভয়পক্ষ কিসের আদান প্রদান করলেন? কোরআন জানায়- ‘হে মুমিনেরা, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের কথা বলে দেব?- যা তোমাদেরকে ক্লেশজনক আযাব হতে মুক্তি প্রদান করবে? (বলছি, অনুধাবণ কর)- তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে এবং রসূলের প্রতিও এবং তাঁর সন্তোষ লাভের জন্যে নিজেদের ধনপ্রাণ লুটিয়ে দিয়ে জেহাদ করতে থাকবে, এ তোমাদের পক্ষে কল্যাণকর-যদি তোমরা জ্ঞানী হও, (তবে এই শিক্ষার তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারবে)।’ 

এই অংশটুকু হচ্ছে বিক্রেতা মুসলিম বান্দার বিক্রেয় পণ্য। তিনি নিজের ধন-প্রাণ সমস্তই আল্লাহর হাতে সমর্পন করবেন। বিনিময়ে তার প্রাপ্য কি হবে কোরআনই তার উত্তর দিচ্ছে- ‘আল্লাহ তোমাদের পাপপুঞ্জ ক্ষমা করবেন এবং তোমাদেরকে এমন কাননে প্রবিষ্ট করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে বহু নির্ঝরিণী বয়ে যাচ্ছে এবং আদন কাননে পবিত্র সৌধসমূহ (তোমরা পাবে) এ অতীব সফলতা।’
হ্যাঁ, আর একটা (জিনিষ আছে) যাকে তোমরা অত্যন্ত ভালবেসে থাক- আল্লাহর নিকট হতে সাহায্য প্রাপ্তি ও ত্বরিৎ বিজয়লাভ (এও তোমরা পাবে) সমস্ত বিশ্বাসীকে এ সুসংবাদ পৌঁছে দাও।-(২৮:১০)

এই বায়াত বা ক্রয়-বিক্রয়ের স্বরূপ সম্বন্ধে কোরআনে সূরা তওবায় বলা হয়েছেঃ ‘আল্লাহ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের প্রাণ ও ধন সমস্তই (এই প্রতিদানের বিনিময়ে) ক্রয় করে নিলেন যে- পরিবর্তে তারা বেহেস্ত পাবে। তারা এ (বায়াতের) জন্যে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে এবং (তার অবশ্যম্ভবী ফলস্বরূপ) তারা অন্যকে মারবে ও নিজেরা নিহত হবে, এ তাঁর (আল্লাহর) ন্যায়সঙ্গত ওয়াদা। এই ওয়াদা তাওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআন (সমস্ত গ্রন্থেই) বিদ্যমান রয়েছে। (আর ভেবে দেখ) আল্লাহ অপেক্ষা কে অধিক স্বীয় প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করতে পারে? অতএব (হে বায়াতকারী মুসলমানরা!) তোমরা আল্লাহর সাথে যে ক্রয় বিক্রয় করলে, তারজন্যে আনন্দিত হও এবং (জেনে রেখ যে) এই (তোমার মুসলিম জীবনের) চরম সফলতা।’-(৯:১১১)

শপথপর্ব প্রায় শেষ এসময় দূর থেকে এই ঘটনা প্রত্যক্ষণ করা এক আরবের কন্ঠ রাতের বাতাসে ভেসে এল-‘মক্কাবাসীরা! তোমরা নিদ্রা যাচ্ছ, আর এদিকে হতভাগাটা তার নাস্তিক দলটাকে নিয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ষড়যন্ত্র করছে।’

সমবেত লোকদের মধ্যে সহসা আতঙ্ক দেখা গেল। কিন্তু মুহম্মদের দৃঢ়চিত্ততা অবিলম্বে তাদের সাহস ফিরিয়ে আনল। এরপর মুহম্মদের নির্দেশমত ইয়াসরিব বাসীরা তাদের মধ্যে থেকে বারজন লোক নির্বাচন করলেন- সকলের অনুমোদনক্রমে নির্বাচিত, মুহম্মদের এই প্রতিনিধিরা হলেন-খাজরাজ বংশের আবু এমামা আসাদ বিন জোরারা, সা‘দ বিন রবি, আব্দুল্লাহ বিন রওয়াহা, রাফে বিন মালেক, বারা বিন মা‘রুর, আব্দুল্লাহ বিন আমর এবং আওস বংশের ওয়াছদ বিন হোজায়র, সা‘দ বিন খাইছামা, আব্দুল হাইছাম বিন তাইয়েহান।
আকাবার দ্বিতীয় শপথ সম্পন্ন হল।

মক্কার ঐ গুপ্তচর এই সম্মেলনের খবর সারা শহরে ছড়িয়ে দিয়েছিল। মুহম্মদ ও তার অনুসারীদের দুঃসাহস দেখে হতবাক হয়ে কুরাইশরা সদলবলে কাফেলার গমনপথ রূদ্ধ করে শপথ গ্রহণকারী ব্যক্তিদেরকে দাবী করল। কিন্তু ইয়াসরিব (Yathrib) বাসীদের কেউই তাদের প্রশ্নের না কোন উত্তর দিলেন বা তাদেরকে অন্য কোনভাবে সহযোগিতা করতে রাজী হলেন। ফলে কোন কোন ব্যক্তি শপথ নিয়েছেন তা জানতে ব্যর্থ হয়ে কুরাইশরা কাফেলাকে উৎপীড়ন না করেই যেতে দিতে বাধ্য হল। কিন্তু, তাদের এই ব্যাবহার মুহম্মদ ও তার অনুসারীদের উপর প্রচন্ড উৎপীড়নেরই পূর্বাভাস হিসেবে দেখা দিয়েছিল।

সমাপ্ত।

১৯ এপ্রিল, ২০১২

Battle of Badr: বদর যুদ্ধের পটভূমি।

মদিনার ইহুদিরা কিন্তু মুহম্মদের শরীয়ত অপেক্ষা আনুষঙ্গিক অনিষ্টসহ পৌত্তলিকতা পছন্দ করেছিল। তারা মুহম্মদকে গালাগালি করত; তাকে দেখে মুখ ভেঙ্গচাত, কোরআনের শব্দাবলীর বিকৃত উচ্চারণ করত, এভাবে সেই সবকে অর্থহীন, অবান্তর বা অপবিত্র বলে প্রতিপন্ন করত। তাদের অনেকে মুসলিম মহিলাদের সম্পর্কে ব্যক্তিগত বিদ্রুপাত্মক কবিতা রচনা করে আরবদের মর্যাদাবোধ ও স্বীকৃত বিধানকে পদদলিত করত। এসব করেও তারা ক্ষান্ত হল না। তারা রাষ্ট্রের শত্রুদের কাছে গোপনে দূত প্রেরণ করল, যে রাষ্ট্রের রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে তারা ওয়াদাবদ্ধ ছিল।

কুরাইশরা মুহম্মদকে হত্যা করার জন্যে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল। তারা মুসলমানদের প্রকৃত জনশক্তি সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের দল ও ইহুদিদের ধন্যবাদ দিল। তারা এ কথা জানত যে ইহুদিরা মুহম্মদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে সাময়িক উপকারের বাসনা থেকে এবং যে মুহুর্তে তারা মদিনার নিকটবর্তী হবে তারা তাদের দলে যোগদান করবে।

ইসলামের তীব্রতম পরীক্ষার সময় উপস্থিত হল। মুহম্মদ নগরের সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে, বিশ্বাসীদের সুগঠিত করতে না করতে ভীষণ আঘাত তার উপরে নেমে এল। 
প্রত্যেক মুহুর্তেই বিরাট কুরাইশ বাহিনী কর্তৃক মদিনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় মুসলমানরা বিচলিত ছিলেন। হিজরতের ন্যূনাধিক এক বৎসর পরে, কুর্জ ইবনে জাবের নামক মক্কার একজন প্রধান, বহু সৈন্য নিয়ে মদিনার প্রান্তরস্থ কৃষিক্ষেতগুলির উপর আক্রমণ করে মুসলমানদের পশুগুলি ধরে নিয়ে গেল। এই সংবাদে মুহম্মদ কতিপয় মুসলমানকে সঙ্গে নিয়ে তাদের পশ্চাৎধাবন করলেন। কিন্তু আততায়ীর দল ততক্ষণে বহুদূরে চলে গিয়েছিল, সুতরাং এ অভিযান ব্যর্থ হল। কুর্জের এই ঘটনার পর কুরাইশদের আক্রমণ আশঙ্কা শতগুনে বর্ধিত হল এবং মুসলমানরা তাদের গতিবিধির সংবাদ অবগত হবার জন্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করতে লাগল। 

এই ঘটনার পাঁচ মাস পরে, মুহম্মদ আব্দুল্লাহ ইবনে জহসের নেতৃত্বাধীনে একটি গুপ্তচরদল গঠন করে মক্কার পথে পাঠালেন। এই দলে চারটি উট ও আটজন মুসলমান ছিলেন। মুহম্মদ দলপতি আব্দুল্লাহকে একখানা পত্র দিয়ে বলে দিলেন, ‘দু‘দিনের পথ অতিক্রমের পর এই পত্র খুলে দেখবে এবং তার মর্মানুসারে কর্তব্য পালন করবে। তবে, সেই কর্তব্য সম্পাদনের জন্যে কাউকেও অনিচ্ছাসত্ত্বেও বাধ্য কোরও না।’

আব্দুল্লাহ পত্র নিয়ে চলে গেলেন এবং দু‘দিন পরে তা খুলে দেখলেন, তাতে লেখা আছে-‘...মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী নাখালায় যাবে এবং গোপনে কুরাইশদের গতিবিধির প্রতি লক্ষ্য রেখে আমাদেরকে তাদের সংবাদ জানাতে থাকবে।’

পত্র পাঠের পর আব্দুল্লাহ সকলের উদ্দেশ্যে বললেন,  ‘..যার ইচ্ছে হয় দেশে ফিরে যাও, আর শহীদের মৃত্যু যার অভিপ্রেত সে আমার সঙ্গে আসুক।’
তখন আব্দুল্লাহর সহচররাও তার সাথে আনন্দ উৎফুল্লতার সাথে নাখালার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। তারা বাহরাইন নামক স্থানে পৌঁছে বিশ্রামের জন্যে থামলেন। এসময় সা‘দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস ও ওৎবার উট এখানে এসে হারিয়ে গেল। এতে তারা উটের সন্ধান করতে প্রবৃত্ত হলে আব্দুল্লাহ অবশিষ্ট ৬ জনকে নিয়ে অগ্রসর হলেন। 
নাখালায় উপনীত হবার পর কুরাইশদের একটি ক্ষুদ্র বণিকদলের সাথে তাদের সাক্ষাৎ হল। আমর ইবনে হাজরামী, হাকাম ইবনে কাইছান, ওসমান ইবনে আব্দুল্লাহ এ কুরাইশদলের সাথে ছিলেন। এসময় ওয়াকেদ ইবনে আব্দুল্লাহ শর নিক্ষেপ করলে হাজরামী নিহত হলেন। মুসলমানরা অবশিষ্ট দু‘জনকে বন্দী করে কাফেলার সমস্ত বাণিজ্য সম্ভারসহ মদিনায় নিয়ে এলেন। 

মদিনায় উপস্থিতির পর, কাফেলার এই কার্যকলাপের বিষয় অবগত হয়ে মুহম্মদ যারপর নাই অসন্তুষ্ট হলেন। তিনি আব্দুল্লাহকে যথেষ্ট ভর্ৎসনা করে বললেন, ‘আমি তো তোমাদেরকে যুদ্ধ বা লুন্ঠন করতে প্রেরণ করিনি, তবে তোমরা এই অন্যায় আচরণ কেন করলে?’
মুহম্মদের ভর্ৎসনায় আব্দুল্লাহ ও তার সঙ্গীদের অনুতাপের অবধি রইল না। তাদের মনে হতে লাগল যে, এই পাপের জন্যে তারা নিশ্চয় ধ্বংস হয়ে যাবেন। 

এই ঘটনার পর মক্কাবাসীরা দূত পাঠিয়ে বন্দীদের মুক্তি প্রার্থনা করল। কিন্তু দলের যে দু‘জন উটের সন্ধানে ছিলেন তারা তখনও ফেরেননি, কাজেই আশঙ্কা হল কুরাইশরা সম্ভবতঃ তাদেরকে বন্দী বা হত্যা করে থাকবে। সুতরাং মুহম্মদ কুরাইশ দূতকে তার এ আশঙ্কার কথা জ্ঞাপন করে ঐ লোকদের ফিরে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে লাগলেন। অতঃপর তারা ফিরে এলে বন্দীরা মুক্তি পেলেন। কিন্তু ওসমান মুক্তিলাভ করে ফিরে গেলেও হাকাম ইসলাম গ্রহণ করে মদিনাতেই রয়ে গেলেন।কিছুদিন পর বিরমাউনায় এই হাকাম নিহত হয়েছিলেন।
কুরাইশদের প্রধান দলপতি আবু সুফিয়ান, আবু জেহেল ও তাদের সহচরবর্গ উত্তমরূপে বুঝতে পেরেছিলেন যে, মদিনায় গমনের পর মুসলমানরা অধিক শক্তিসম্পন্ন হয়ে উঠেছে। আর কিছুকাল অপেক্ষা করলে তারা অজেয় হয়ে দাঁড়াবে। এ কারণে মুসলমানদের সাথে সত্ত্বর যুদ্ধে লিপ্ত হবার জন্যে তারা উন্মূখ হয়েই ছিলেন। 

এসময় কাফেলাকে আক্রমণ ও বন্দীদের মদিনায় নীত হবার সংবাদে তারা মদিনা আক্রমণের জন্যে দৃঢ়সংকল্প হলেন। এই আক্রমণের একমাত্র উদ্দেশ্যে আবু সুফিয়ান এক সহস্র উটের বাণিজ্য সম্ভারের এক কাফেলা নিয়ে শ্যাম দেশে গমণ করলেন। অস্ত্র-শস্ত্র ও রসদাদি- রণসম্ভার খরিদ করার ও বেতনভোগী সৈন্যদল সংগ্রহের জন্যে মক্কাবাসীরা ৫০ হাজার দিনার বা স্বর্ণমুদ্রা (দিনার হল স্বর্ণমুদ্রা যার ওজন সাড়ে চার মাশা) আবু সুফিয়ানের সাথে প্রেরণ করেছিল। এমনকি কুরাইশ নরনারীদের মধ্যে এক রতি- মাশা সোনা-চাঁদিও যার কাছে ছিল, সেও তা এই কাফেলার সাথে প্রেরণ করেছিল নিজের অংশ হিসেবে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াত নাযিল হল-‘অবিশ্বাসীরা মুসলমানদেরকে আল্লাহর পথ হতে প্রতিনিবৃত করার জন্যে নিজেদের ধন-সম্পদসমূহ ব্যয় করতে যাচ্ছে, দেখ শীঘ্রই তারা তা (ইসলাম ধর্মে বিঘ্নদানের জন্যে) ব্যয় করে ফেলবে- তখন এ তাদের পক্ষে অনুতাপেরই কারণ হবে, তদন্তর তারা পরাজিত হয়ে যাবে।’(৮:৩৬)
এই আয়াত নাযিল হবার পর আবু সুফিয়ানের কাফেলা আক্রমণের জন্যে মুহম্মদ সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করলেন। মক্কায় মুসলমানদের উপর কুরাইশদের নির্যাতন যখন চরমসীমায় পৌঁছে গিয়েছিল, যখন এমন কোন দিন যেত না, যেদিন কোন না কোন মুসলমান তাদের নিষ্ঠুর হাতে প্রহৃত ও আহত হয়ে না আসতেন, তখন মুসলমানরা তাদের উপর জুলুম ও অত্যাচার দেখে মুহম্মদের কাছে তাদের মেকাবেলায় যুদ্ধ করার অনুমতি চাইতেন। কিন্তু যদিও মক্কায় অবস্থানের শেষ দিনগুলোতে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল, তবুও মুহম্মদ তাদেরকে নিবৃত্ত করতেন এই বলে- ‘সবর কর। কেননা আমাকে যুদ্ধ করার অনুমতি দেয়া হয়নি।’

আর এখন- যখন যুদ্ধের অনুমতি পাওয়া গেল, তখন রমজান মাস, যুদ্ধের কোন পূর্ব প্রস্তুতি নেই দেখে কেউ কেউ সাহস প্রদর্শণ করলেও অধিকাংশ দোদুল্যমানতা প্রকাশ করলেন। অথচ জেহাদ ও যুদ্ধের এই আদেশ নতুন নয়। পূর্ববর্তী উম্মত ও পয়গম্বরদেরকেও অবিশ্বাসীদের মোকাবেলায় যুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এরূপ করা না হলে কোন মাযহাব ও ধর্মের অস্তিত্ব থাকত না এবং উপাসনালয়সমূহ বিধস্ত হয়ে যেত।

এসময় মুসলমানদের উৎসাহিত করতে জেহাদের অনুমতি বাচক এই আয়াত নাযিল হল-‘যাদের সাথে যুদ্ধ করা হচ্ছে, তাদের অনুমতি প্রদান করা হল- কারণ তারা অত্যাচারিত। সেই সমস্ত লোক যারা স্বদেশ হতে অন্যায়রূপে বহিস্কৃত হয়েছে- তবে তারা এ মাত্র বলেছিল যে, আল্লাহই আমাদের প্রভু। আল্লাহ যদি মানব সমাজের কতিপয় লোকের দ্বারা অন্য লোকদেরকে অপসৃত না করতেন, তা হলে মন্দির, গির্জা, উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ- যাতে বহুলরূপে আল্লাহর নাম করা হয়ে থাকে-বিধ্বস্ত করে ফেলা হত।’(২২:৩৯-৪০)

আর তারা যদি চুক্তির পর তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ও তোমাদের ধর্ম সম্পর্কে বিদ্রুপ করে, তবে অবিশ্বাসী প্রধানদের সাথে যুদ্ধ করবে। এরা এমন লোক যাদের প্রতিশ্রশ্রুতি প্রতিশ্রুতিই নয়। তোমরা কি সে সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুদ্ধ করবে না, যারা নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে এবং রসূলকে তাড়িয়ে দেবার সংকল্প করেছে? ওরাই প্রথম তোমাদের বিরুদ্ধাচারণ করেছে। তোমরা কি তাদেরকে ভয় কর? বিশ্বাসী হলে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর- এ-ই আল্লাহর কাছে শোভনীয়। তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ কর। তোমাদের হাতে আল্লাহ ওদেরকে শাস্তি দেবেন, ওদেরকে অপদস্ত করবেন, ওদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে জয়ী করবেন ও বিশ্বাসীদের চিত্ত প্রশান্ত করবেন।(৯:১২-১৪)

উপরের আয়াতসমূহ নাযিল হবার পরেও মুহম্মদ জেহাদে অংশগ্রহণ করাকে অপরিহার্য বা বাধ্যতামূলক করলেন না। তিনি শুধু ঘোষণা করলেন, ‘যাদের কাছে এই মূহুর্তে সওয়ারীর ব্যবস্থা আছে শুধুমাত্র তারাই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে।’
ফলে যুদ্ধে যাবার জন্যে অল্পসংখ্যকই তৈরী হয়েছিলেন। অধিকাংশই বিরত রইলেন এ কারণে যে, মুহম্মদ তো যুদ্ধে যাত্রা অপরিহার্য করেননি। আর তাদের মনে হয়েছিল যে, বাণিজ্যিক কাফেলার জন্যে খুব বেশী যোদ্ধার প্রয়োজন পড়বে না। 

এই যুদ্ধ যাত্রায় কোন স্ত্রীলোক অংশ নেয়নি। যাত্রার সময় নওফেলের কন্যা উম্মে ওয়ার্কা মুহম্মদের কাছে উপস্থিত হয়ে শুশ্রুষাকারিনীরূপে সেনাদলের সাথে যাবার অনুমতি চেয়েছিল। তিনি তাকে ক্ষান্ত করে বললেন, ‘নিজ বাটিতে অবস্থান কর।’

মুহম্মদ এই স্বল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে যাত্রা করলেন। দলে উট ছিল ৭০টি অর্থাৎ প্রতি তিন জনের জন্যে একটি। ফলে তার বাহন উটেরও অপর দু‘জন অংশীদার ছিলেন। তারা হলেন আলী ও আবু লুবাবাহ। যখন মুহম্মদের হেঁটে চলার পালা এল, তখন তারা বললেন, ‘হে রসুলুল্লাহ! আপনি উপরেই থাকুন, আপনার পরিবর্তে আমরা হেঁটে চলব।’
তিনি বললেন, ‘না, আমরা পালাক্রমেই আরোহণ করব।’

বি‘রে সুকইয়া নামক স্থানে পৌঁছে মুহম্মদ কায়েস ইবনে সা‘দকে সৈন্য গণনার নির্দেশ দিলেন। কায়েস জানালেন, ‘মোট তিন‘শ তেরজন সৈন্য রয়েছে।’
তিনি খুশী হয়ে বললেন, ‘তালুতের সৈন্য সংখ্যাও ছিল এই। সুতরাং লক্ষণ শুভ।’
এদিকে সিরিয়ার আইনে যোরকা নামক স্থানে একব্যক্তি আবু সুফিয়ানকে সংবাদ দিল- ‘মুসলমানরা আপনার এই কাফেলাকে আক্রমণের জন্যে অপেক্ষা করছে।’

আবু সুফিয়ান এই সংবাদে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন। তিনি হিজাজের নিকটবর্তী হলে জনৈক দমদম ইবনে ওমেরকে কুড়ি মেশকাল সোনা দিয়ে এ ব্যাপারে রাজী করালেন যে, সে দ্রুত মক্কায় পৌঁছে কুরাইশদের সংবাদ দেবে যে, তার কাফেলা মুসলমানদের আক্রমণ আশঙ্কার সম্মুখীণ হয়েছে।

দমদম দ্রুতগামী একটি উটে রওনা হয়ে গেল। অতঃপর মক্কার নিকটবর্তী হয়ে ঘোর বিপদের চিহ্নস্বরূপ সে তার উটের নাক কান কেটে এবং নিজের পরিধেয় ছিঁড়ে হাওদাটি উটের পিঠে উল্টোভাবে বসিয়ে নগরীতে প্রবেশ করল। গোটা মক্কায় হৈঁ চৈঁ পড়ে গেল। এমনিতেই মুহম্মদ হিযরত করে মদিনায় চলে এলেও মুসলমানদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব প্রতিপত্তি লক্ষ্য করে তাদের মনে শত্রুতার এক দাবাদাহ জ্বলেই যাচ্ছিল। এখন তারা মুসলমানদের সমূলে ধ্বংস করার জন্যে উৎগ্রীব হয়ে উঠল। 

আবু জেহেল, ওৎবা, শায়বা প্রমুখ মক্কার বারজন সর্দার যুদ্ধের যাবতীয় ব্যয়ভার নিজেদের কাঁধে নিলেন। সাঁজ সাঁজ রবে সকলে প্রতিরোধের জন্যে তৈরী হয়ে গেল। যারা যুদ্ধে যেতে অপারগ হল তারা অন্য একজনকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করে দিল। আর নেতারা বিশেষভাবে তাদেরকে যুদ্ধে যাত্রা বাধ্যতামূলক করলেন, যারা মুসলমানদের সমর্থক বা তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। তাই এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের অন্তর্ভূক্ত হয়েছিলেন মুহম্মদের পিতৃব্য আব্বাস, আবু তালিবের পুত্র আকীল, আবু বকরের পুত্র আব্দুর রহমান, মুহম্মদের জামাতা আ’স ইত্যাদি অনেকে।

মদিনার ইহুদিরা বিশেষ করে বনি নাজির ও বনি কুরাইজা গোত্র যারা মুসলমানদের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল, কুরাইশদের গোপনে যুদ্ধের সাঁজ-সরঞ্জাম, অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে সাহায্য করল। তাদের সাহায্য পেয়ে কয়েকদিনের মধ্যে কুরাইশরা সকল প্রস্তুতি সেরে ফেলল। অতঃপর আবু জেহেলের নেতৃত্বে এক হাজার সৈন্য, যাদের মধ্যে দু‘শ ঘোড়সওয়ার, ও সাত‘শ উষ্ট্রারোহী বর্মধারী এবং সারা গায়িকার বাঁদ্যদল মদিনার দিকে যাত্রা করল। যাত্রার প্রাক্কালে বাহিনী প্রধান আবু জেহেল কা‘বার পর্দা ধরে এই প্রার্থণা করলেন- ‘হে আল্লাহ! উভয় বাহিনীর মধ্যে যেটি উত্তম ও উচ্চতর এবং অধিক হেদায়েতের উপর রয়েছে তাকে বিজয় দান কোরও।’

এই নির্বোধেরা ভেবেছিলেন তারাই উত্তম এবং অধিক হেদায়েতের উপর রয়েছেন। তাই তাদের প্রার্থণার জবাবে এই আয়াত নাযিল হয়েছিল-তোমরা যদি মিমাংসা কামনা কর, তাহলে তোমাদের কাছে মিমাংসা পৌঁছে গেছে। আর যদি তোমরা প্রত্যাবর্তণ কর, তবে তা তোমাদের জন্যে উত্তম এবং তোমরা যদি তাই কর, তবে আমিও তেমনি করব। বস্তুতঃ তোমাদের কোনই কাজে আসবে না তোমাদের দল-বল, তা যত বেশীই হোক। জেনে রেখ আল্লাহ রয়েছেন ঈমানদারদের সাথে।(৮:১৯)

কুরাইশ বাহিনী যখন মুসলমানদের মোকাবেলার জন্যে যখন গর্বিতভাবে রওনা হচ্ছিল, তখন তাদের মনে হঠাৎ এক আশঙ্কা চেপে বসল। তাদের প্রতিবেশী বনি বকর ছিল তাদের শত্রু। তারা যুদ্ধ করতে চলে গেলে, সেই সুযোগে এই শত্রুরা না আবার তাদের বাড়ী-ঘর এবং নারী-শিশুদের উপর হামলা করে বসে। তারা রওনা হল বটে, কিন্তু এ আশঙ্কা তাদের পায়ে বেড়ী হয়ে রইল।

কুরাইশ বাহিনীর সাথে পথে বনি বকর গোত্রের একজন অন্যতম প্রধান সর্দার সোরাকা ইবনে মালেকের সঙ্গে দেখা হল। সোরাকার হাতে ছিল গোত্রের পতাকা এবং সঙ্গে ছিল সৈনিকদের একটি খন্ড দল। সে এগিয়ে এসে কুরাইশ বাহিনীর উদ্দেশ্যে এক ভাষণ দিয়ে বসল। সে বলল, ‘তোমাদের শক্তি-সামর্থ ও সংখ্যাধিখ্য তো নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছি। সুতরাং আজকের দিনে এমন কেউ নেই যারা তোমাদের উপর জয়লাভ করতে পারবে। আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি, তোমরা নিঃশ্চিন্তে এগিয়ে চল।’
বীরদর্পে কুরাইশ বাহিনীর সঙ্গে সোরাকার বাহিনীও এগিয়ে চলল মদিনার পথে। 

এ সংক্রান্ত কোরআনের আয়াতসমূহ- যারা বেরিয়েছে নিজেদের অবস্থান থেকে গর্বিতভাবে এবং লোক দেখাবার উদ্দেশ্যে। আর আল্লাহর পথে তারা বাঁধা দান করত। বস্তুতঃ আল্লাহর আয়ত্ত্বে রয়েছে সেসমস্ত বিষয় যা তারা করে।(৮:৪৭)
আর যখন সুদৃশ করে দিল শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কার্যকলাপকে এবং বলল যে, আজকের দিনে কোন মানুষই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না, আর আমি হলাম তোমাদের সমর্থক।(৮:৪৮)

এদিকে মুহম্মদ বদরের কাছে পৌঁছে জানতে পারলেন একহাজার সুসজ্জিত সেনাদল আবু জেহেলের নেতৃত্বে মুসলমানদেরকে মোকাবেলার জন্যে মদিনার দিকে এগিয়ে এসেছে। মুসলমানরা মদিনা হতে বহির্গমনের পর এখন উভয় অর্থাৎ আবু সুফিয়ানের ও কুরাইশদের অভিযানের খবর যুগপৎভাবে অবগত হলেন। মুসলমানরা জানতেন এই দু‘দলের মধ্যে একটির উপর তারা জয়লাভ করবেন। তাই এ সময়ে একদল মুসলমান আবু জেহেলের বাহিনী মোকাবেলার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন, কিন্তু আর একদল এই দু‘দলের মধ্যে আবু সুফিয়ানের কাফেলাটি নিস্কন্টক ছিল বলে, সেটিকে আক্রমণ করার জন্যে উৎসুক হলেন। কেননা তারা বিশেষরূপে ভীত ও কুন্ঠিত হয়ে পড়েছিলেন। তারা দৃঢ়রূপে বিশ্বাস করছিলেন যে, আবু জেহেলের বাহিনী মোকাবেলা অত্যন্ত দূরূহ বরং অসাধ্য ব্যাপার। আর এইদল মদিনা থেকে নির্গমনের সময়ও যুদ্ধ করার বিষয়ে মুহম্মদের সাথে যথেষ্ট বাক-বিতন্ডা করেছিলেন। 

আবু সুফিয়ানের কাফেলা ও আবু জেহেলের এই অভিযান এবং মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কোরআন জানায়- হে মুহম্মদ! তোমার প্রভু তোমাকে ন্যায্যরূপে স্বগৃহ হতে বহির্গত করলেন, অথচ এ বহির্গমণের সময় একদল মুসলমান (যেতে) বিশেষ কুন্ঠিত হচ্ছিল। সত্য স্পষ্টভাবে পরিস্ফুটিত হবার পরেও তারা তোমার সাথে বিতন্ডা করছিল। যেন তাদেরকে মৃত্যুর পানে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, আর সেই মৃত্যুকে যেন তারা প্রত্যক্ষ করছিল এবং যখন দু‘দলের মধ্যে একটি সম্বন্ধে আল্লাহ তোমাদেরকে এ ওয়াদা দিচ্ছিলেন যে, তোমরা সেইটির উপর জয়যুক্ত হতে পারবে: কিন্তু তোমাদের বাসনা ছিল যে (দল দু‘টির মধ্যে) যেটি নিস্কন্টক, সেইটির উপর তোমরা অধিকার লাভ কর- অথচ আল্লাহ স্বীয় বাণী দ্বারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার এবং ধর্মদ্রোহীদের মূলোচ্ছেদ করার সঙ্কল্প করেছিলেন।’(৮:৫-৭)

বদর অভিযান, রুট ম্যাপ।
মুসলিম মুজাহিদরা মদিনা থেকে ষাট মাইল পূর্ব-দক্ষিণে বদর সন্নিকটে এসে জানতে পারলেন আবু সুফিয়ানের কাফেলা পূর্বেই চলে গিয়েছে এবং কুরাইশ বাহিনী বদরের প্রান্তরে এসে পৌঁছেছে। তখন মুহম্মদ সকলের সাথে পরামর্শে বসলেন। 

এ সময় আনসার দলপতি সা‘দ ইবনে ওবায়দা দাঁড়িয়ে বললেন, ‘হযরত! কুরাইশ বাহিনীর মোকাবেলা করা সম্পর্কে আপনি আমাদের (আনসারদের) মতামত জানতে চাচ্ছেন? যার হস্তে আমার প্রাণ-তাঁর শপথ, আপনি আদেশ করলে আমরা সমুদ্রের মধ্যে প্রবেশ করতে পারি, জগতের দুর্গমতম স্থানকে পদদলিত করতে পারি।’

আর মেকদাদ বললেন, "হে রসূলুল্লাহ! We now stand by you, whatever you ask us to do. We will not behave like the followers of Moses as who said, ‘Go you and your God and fight the enemy, we remain here behind.' If we must fight, we will and we will fight to the right of you, to the left of you, in front of you and behind you. True, the enemy wants to get at you. But we assure you that he will not do so, without stepping over our dead bodies. Prophets of God, you invite us to fight. We are prepared to do more. Not far from here is the sea. If you command us to jump into it, we will hesitate not."

কুরাইশ সৈন্যদল যুদ্ধের ময়দানে মোতায়েন হয়েছিল। ফলে যিনি জীবনে কোনদিন অস্ত্র ধরেননি, যার কাছে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা তীব্র বেদনা বয়ে আনত, যিনি আরবদের পৌরুষ বিষয়ক বিধিসমূহের বিরুদ্ধে তার সন্তান বা শিষ্যদের ক্ষতিতে নিদারুণ অশ্রুবির্জন করতেন, যার চরিত্র এতই কোমল ও দয়ালু ছিল যে তার শত্রুরা তাকে স্ত্রীজনোচিত বলে ভাবত। এই মানুষটি এখন প্রয়োজনের তাগিদে যুদ্ধের জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করলেন। 

অতঃপর মুহম্মদ যাত্রার আহবান করলেন এবং মুসলমানরা যাত্রা শুরু করলেন এবং তারা যে বদরের উপত্যকা দিয়ে আবু জেহেল অগ্রসর হচ্ছিল সেখানে পৌঁছে গেলেন রাতের বেলায়। সকলে একস্থানে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লেন। কেবলমাত্র মুহম্মদ একা জেগে তাহাজ্জুতের নামাজ আদায় করতে লাগলেন। 

যোদ্ধাদের এই ঘুম ছিল আল্লাহর রহমতস্বরূপ। এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াত- যখন তিনি আরোপ করেন তোমাদের উপর তন্দ্রাচ্ছন্নতা নিজের পক্ষ থেকে তোমাদের প্রশান্তির জন্যে।(৮:১১) 
বদর যুদ্ধ।
দ্বিতীয় হিজরী, ১৭ই রমজান, শুক্রবারের ভোরবেলা। বদর প্রান্তরে ফজরের আজান ধ্বনিত হল। একটু আগে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। মুসলমানরা অযু শেষে নামাজ আদায় করলেন। রাতে ঘুম হওয়াতে তারা এখন ক্লান্তি মুক্ত। আরবদের যুদ্ধ-বিগ্রহ নিশিকালে বা ভোররাত্রে পরিচালিত হত এবং তা আকস্মিক ও হত্যামূলক লুন্ঠন পর্যায়ে সীমিত ছিল, ছিল বিচ্ছিন্ন লড়াই বা সাধারন দাঙ্গার পর্যায়ভুক্ত। মুহম্মদ তার দেশবাসীর অভ্যস্ত কার্যপ্রণালী সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। এ কারণে ফজরের নামাজ শেষেই মুজাহিদরা যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। 

কুরাইশরা প্রথমে বদরের প্রান্তরে পৌঁছে সুবিধাজনক উঁচুস্থানে অবস্থান নিয়েছিল এবং তাদের নিকটবর্তী ছিল পানি। আর মুসলমানদের অবস্থান করতে হয়েছিল নিম্নাঞ্চলে যেখানে কোন পানি ছিল না, ছিল চলাচলে অসুবিধাজনক বালুকাময় প্রান্তর। 

এই যুদ্ধের নকশা এই আয়াত বিবৃত করেছে এভাবে-আর যখন তোমরা ছিলে সমরাঙ্গনের এ প্রান্তে আর তারা ছিল সে প্রান্তে অথচ কাফেলা তোমাদের থেকে নীচে নেমে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় যদি তোমরা পারস্পরিক অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে, তবে তোমরা একসঙ্গে সে ওয়াদা পালন করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ এমন এক কাজ করতে চেয়েছিলেন, যা নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল।-(৮:৪২)

বদর যুদ্ধ।
যুদ্ধের এদিনটি ছিল শীতের ঝড়ো দিন। এক প্রচন্ড ঝড়ের তান্ডব পূর্বেই সারা উপত্যকা দিয়ে বয়ে গিয়েছিল। বৃষ্টির দরুণ পানির সমস্যার সমাধান হল এবং বালুপূর্ণ ক্ষেত্র সমতল হয়ে পড়ায় কৌশলগত দিক দিয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল অবস্থান এখন মুসলমানদের অনুকূলে চলে এল। অন্যদিকে বৃষ্টির ফলে কুরাইশদের উঁচু ঢালু অবস্থান কর্দমাক্ত হয়ে পড়ায় চলাচলে তারা সমস্যায় পড়ে গেল। এসবের মধ্যেই প্রভাতে সহস্রাধিক কুরাইশ সৈন্য অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জ্বিত হয়ে সাঁরিবদ্ধভাবে আগুয়ান হল।

এদিকে তুলনামূলক একটি নিরাপদ অবস্থানে মুহম্মদের জন্যে একটি ছোট সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছিল। তিনি ও আবু বকর তার নীচে উপবিষ্ঠ হলেন। আর তাদের হেফাজতকল্পে খোলা তরবারি হাতে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন মু‘আজ। অতঃপর যখন মুহম্মদ ধর্মদ্রোহীদের উষ্ট্রারোহী ও অশ্ববাহিনীকে ঔদ্ধত্য সহকারে উপত্যকার মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হতে দেখলেন, তখন তিনি মূসার মত উর্ধ্বে হস্ত উত্তোলিত করে প্রার্থনা করলেন- ‘হে প্রভু, তোমার সাহায্যের প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যেও না। প্রভু, যদি এই ক্ষুদ্র দলটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তবে তোমার নির্ভেজাল প্রার্থনা করার মত কেউ থাকবে না।’

এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ- এবং তোমাদের উপর আকাশ থেকে পানি অবতীর্ণ করেন, যাতে তোমাদেরকে পবিত্র করে দেন এবং যাতে তোমাদের থেকে অপসারিত করে দেন শয়তানের অপবিত্রতা। আর যাতে সুরক্ষিত করে দিতে পারেন তোমাদের অন্তরসমূহকে এবং তাতে যেন সুদৃঢ় করে দিতে পারেন তোমাদের পা‘গুলো।-(৮:১১)

তোমরা যখন ফরিয়াদ করতে আরম্ভ করেছিলে স্বীয় পরওয়ারদেগারের কাছে, তখন তিনি তোমাদের ফরিয়াদের মঞ্জুরি দান করলেন যে, আমি তোমাদেরকে সাহায্য করব ধারাবাহিক ভাবে আগত হাজার ফেরেস্তার মাধ্যমে। আর আল্লাহ তো শুধু সুসংবাদ দান করলেন যাতে তোমাদের মন আশ্বস্ত হতে পারে।-(৮:৯-১০)

যখন নির্দেশ দান করেন ফেরেস্তাদেরকে তোমাদের পরওয়ারদেগার যে, আমি সাথে রয়েছি তোমাদের, সুতরাং তোমরা মুসলমানদের চিত্তসমূহকে ধীরস্থির করে রাখ। আমি অবিশ্বাসীদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব। কাজেই গর্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাট জোড়ায় জোড়ায়। যেহেতু তারা অবাধ্য হয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের, সেজন্যে এই নির্দেশ। বস্তুতঃ যে লোক আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অবাধ্য হয়, নিঃসন্দেহে আল্লাহর শাস্তি অত্যন্ত কঠোর। আপাততঃ বর্তমান এ শাস্তি তোমরা আস্বাদন করে নাও এবং জেনে রেখ যে, অবিশ্বাসীদের জন্যে রয়েছে দোযখের আযাব।-(৮:১২-১৪)

এরপর সমরনীতি সম্পর্কিত আয়াতসমূহ অবতীর্ণ হল- হে ঈমানদারেরা, তোমরা যখন অবিশ্বাসীদের সাথে মুখোমুখি হবে, তখন পশ্চাৎপসারণ কোরও না। আর যে লোক সেদিন তাদের থেকে পশ্চাৎপসারণ করবে, অবশ্য লড়াইয়ের কৌশল পরিবর্তনকল্পে কিম্বা যে নিজ সৈন্যদের কাছে আশ্রয় নিতে আসে সে ব্যতীত- অন্যরা আল্লাহর গজব সাথে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে। আর তাদের ঠিকানা হল জাহান্নাম।-(৮:১৫-১৬)

মুহম্মদ প্রার্থনায় নিমগ্ন এসময় কুরাইশদের পক্ষ হতে তীর বর্ষণ শুরু হল। একটি তীর মেহজা নামের একজন মুসলিম সৈন্যের বক্ষ ভেদ করে গেল। এই মেহজাই বদর যুদ্ধের প্রথম শহীদ। সকল মুসলমানই তার মৃত্যু দৃশ্য দেখলেন, কিন্তু তাদের মধ্যে কোন চাঞ্চল্য বা ক্রোধ প্রকাশিত হল না। কারণ মুহম্মদের হুকুম ছিল- ‘আমি আদেশ না দেয়া পর্যন্ত কেউ বিপক্ষকে আক্রমণ কোরও না।’--কাজেই তারা নিরব, নিস্পন্দভাবে দঁড়িয়ে রইলেন। এসময় আরেকটি তীর পানি পানরত অবস্থায় হারেছা নামীয় একজনের কন্ঠ ভেদ করে গেল। সৈন্যরা নীরবে তাও দর্শণ করলেন। এরপর মুহম্মদ সকলকে প্রস্তুত হতে আদেশ করলেন। সকলে সমঃস্বরে উত্তর করলেন, ‘প্রভু হে, আমরা সকলেই প্রস্তুত।’

মুহম্মদ যোদ্ধাদেরকে বললেন, ‘তোমাদের জন্যে কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের সাহায্যার্থে তোমাদের পালনকর্তা আসমান থেকে অবতীর্ণ তিন হাজার ফেরেস্তা পাঠাবেন। অবশ্য তোমরা যদি সবর কর এবং বিরত থাক আর তারা যদি তখনই তোমাদের উপর চড়াও হয়, তাহলে তোমাদের পালনকর্তা চিহ্নিত ঘোড়ার উপর পাঁচ হাজার ফেরেস্তা তোমাদের সাহায্যে পাঠাতে পারেন।’
তিনি একমুষ্ঠি মাটি তুলে নিয়ে শত্রুদের ডানে, বামে, সম্মুখে ও পশ্চাতে নিক্ষেপ করলেন। 

মুসলিম বাহিনীর সংখ্যা দেখে কুরাইশ বাহিনীর অনেকের মনে পরিণতি ভেবে আফসোস হতে লাগল। তারা ভাবছিল-এহেন শক্তিশালী বাহিনীর বিপক্ষে মুষ্টিমেয় এই মুসলিম বাহিনী! হায়, বেচারাদেরকে তাদের দ্বীনই প্রতারণায় ফেলে মৃত্যুর মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে।’

এ সংক্রান্ত কোরআনের আয়াত-যখন মুনাফেকরা বলতে লাগল এবং যাদের অন্তর ব্যাধিগ্রস্থ, এরা নিজেদের ধর্মের উপর গর্বিত।-(৮:৪৯)
কুরাইশদের তিনজন (ওৎবা, শায়বা ও অলিদ) উন্মুক্ত প্রান্তরে এগিয়ে এলেন এবং প্রথা অনুযায়ী মুসলমানদের মধ্যে থেকে তিনজনকে একক যুদ্ধে আহবান করলেন। তারা চিৎকার করে বললেন, ‘কে আছ আস, আমাদের তরবারীর খেলা দেখে যাও!’

এই আহবান শুনে কয়েকজন আনসার মুহম্মদের অনুমতি ব্যতিরেকেই তরবারী হাতে সেই দিকে ধাবিত হলেন। মুহম্মদের নিষেধ করার পূর্বেই ওৎবা চিৎকার করে বললেন, ‘মুহম্মদ! মদিনার এই চাষাগুলোর সঙ্গে যুদ্ধ করা আমাদের পক্ষে অসম্মানজনক। আমাদের যোগ্য যোদ্ধা পাঠাও।’

ওৎবাকে অগ্রসর হতে দেখে তার একপুত্র হোজায়ফা মুসলমানদের পক্ষ থেকে মোকাবেলার জন্যে ব্যাকুলতা প্রকাশ করছিলেন। কিন্তু মুহম্মদ তার নিকট আত্মীয়দের মধ্যে থেকে আমীর হামজা, আলী ও ওবায়দাকে মোকাবেলার জন্যে অগ্রসর হতে বললেন। তিনি এটা করলেন একারণে যাতে কেউ এ প্রশ্ন না তুলতে পারে যে, মুহম্মদ মোহাজিরদেরকে বাদ দিয়ে আনসারদেরকে প্রথমে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন। 

হামজার সাথে শায়বার, আলীর সাথে অলিদের ও ওবায়দার সাথে ওৎবার যুদ্ধ হল এবং মূহুর্তের মধ্যে শায়বা ও অলিদের মস্তক ভূলুন্ঠিত হল। আর বৃদ্ধ ওবায়দা ওৎবাকে নিহত করলেন বটে, কিন্তু নিজেও মারাত্মক আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন। ওৎবার স্ব-বংশে নিধন প্রাপ্তির পর যুদ্ধ সাধারণ রূপ পরিগ্রহ করল। 

কুরাইশদের সহায়তার জন্যে যে শয়তানী বাহিনী যুদ্ধে এসেছিল, তাদের কারণে একসময় যুদ্ধের ভাগ্যবিপর্যয় দেখা দিচ্ছিল। এসময় আল্লাহ জিব্রাইলের নেতৃত্বে এক ফেরেস্তার বাহিনী প্রেরণ করলেন। সোরাকা ইবনে মালেকরূপী ইবলিস এবং তার সাথীরা ফেরেস্তা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। সে তখনি তার বাহিনী নিয়ে পালিয়ে যেতে উদ্যত হল। কাছেই ছিল কুরাইশ যুবক হারেছ ইবনে হাশেম। সে সোরাকাকে পালিয়ে যেতে দেখে বলল, ‘যুদ্ধের ময়দানে এসে এ-কি করছেন! আপনি তো বলেছিলেন, আমি তোমাদের সমর্থনে রয়েছি।’
সোরাকা বলল, ‘আমি তোমাদের সাথে কৃত চুক্তি থেকে মুক্ত হয়ে যাচ্ছি। কারণ, আমি এমন জিনিষ দেখছি যা তোমাদের চোখ দেখতে পায় না।’

সোরাকা তার বাহিনী নিয়ে পালিয়ে গেল। আর সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধের গতি ফিরে এল। এ সংক্রান্ত কোরআনের আয়াত-অতঃপর যখন সামনা সামনি হল উভয় বাহিনী, তখন সে অতি দ্রুত পায়ে পিছন দিকে পালিয়ে গেল এবং বলল, ‘আমি তোমাদের সাথে নেই- আমি দেখছি যা তোমরা দেখছ না।-(৮:৪৮)
মুসলমানদের তরবারির আঘাতে যেসব কুরাইশরা মারাত্মকভাবে আহত হয়ে পড়ছিল, ফেরেস্তারা তাদের জান কবজ করতে লাগলেন। এসময় মৃত্যুপথযাত্রীদের মনে হতে লাগল কেউ যেন আগুনের চাবুক দিয়ে তাদের মুখে ও পিঠে আঘাত করে চলেছে। তীব্র যন্ত্রণা ভোগ করতে করতে তারা মৃত্যুর কলে ঢলে পড়তে লাগল। এ সংক্রান্ত কোরআনের আয়াত- আর যদি তুমি দেখ, যখন ফেরেস্তারা অবিশ্বাসীদের জান কবজ করে; প্রহার করে তাদের মুখে ও পশ্চাৎদেশে আর বলে, জলন্ত আযাবের স্বাদ গ্রহণ কর।-(৮:৫০) 

মক্কাবাসীরা অনেক ক্ষতি সহ্যকরে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে গেল। তাদের অনেক নেতা নিহত হলেন। আবু জেহেল তার দুর্নিবার অহংকারের শিকার হয়েছিলেন। মা‘আজ ও তার ভাই আবু জেহেলকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধাবিত হয়েছিলেন। আবু জেহেল পুত্র ইকরামা তাদেরকে বাঁধা দিয়েছিলেন। তিনি মা‘আজের বাম বাহুতে আঘাত করে তা ছিন্ন করে ফেলেছিলেন। কিন্তু অদম্য মা‘আজ তা উপেক্ষা করে আবু জেহেলকে হত্যা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। 

বদর যুদ্ধে (Battle of Badr) অংশগ্রহণকারী মুসলমানদের পক্ষে ৬ জন মোহাজির ও ৮ জন আনসার নিহত হয়। আর কুরাইশদের পক্ষে ওৎবা, শায়বা, আবু জেহেল ও তার ভ্রাতা আছী, আবু সুফিয়ানের পুত্র হানজালাসহ প্রায় শতাধিক নিহত হয়েছিলেন।
বদর যুদ্ধে নিহতদের সমাধি।
যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কুরাইশদের পলায়নের সংবাদ শুনে মুহম্মদ মুসলমানদের অস্ত্র ব্যাবহারে নিষেধাজ্ঞা জারী করলেন। তিনি যুদ্ধের পূর্বেও মুসলমানদের এই বলে সতর্ক করেছিলেন-‘কুরাইশদের মধ্যে কতকগুলি লোক অনিচ্ছাসত্ত্বেও যুদ্ধে যোগদান করতে বাধ্য হয়েছে। সাবধান, তাদেরকে কেউ আঘাত কোরও না।’

মুসলমানরা মুহম্মদের আদেশ মেনে নিয়ে অস্ত্র ব্যাবহার বন্ধ করে পলায়নপর শত্রুদেরকে বন্দী করতে আরম্ভ করলেন। বহু সংখ্যক কুরাইশ (৭০জন) মুসলমানদের হাতে বন্দী হল। অতঃপর এসব বন্দী ও আবু জেহেলের ছিন্ন শির মুহম্মদের কাছে আনীত হল।

যুদ্ধ শেষে মুসলমানদের অনেকে নিজেদের বীরত্বসূচক কিছু কথাবার্তা বলে ফেললেন। এ সময় এই আয়াত নাযিল হল-সুতরাং তোমরা তাদের হত্যা করনি, বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন। আর তুমি মাটির মুষ্ঠি নিক্ষেপ করনি, যখন তা নিক্ষেপ করেছিলে, বরং তা নিক্ষেপ করেছিলেন আল্লাহ স্বয়ং যেন ঈমানদারদের প্রতি এহসান করতে পারেন যথার্থভাবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ শ্রবণকারী, পরিজ্ঞাত।-(৮:১৭) 

সমাপ্ত।

NB: This is all about the battle of Badr. Now in the following link, you will find how the liars depicted this battle to impose falsehood on Islam just hiding that the caravan was not a simple caravan, it was full with arms and ammunition's to use them against Muslim (8:36)- http://www.thereligionofpeace.com/muhammad/myths-mu-badr.htm



ছবি: Wikipedia, go-makkah, bjsallahwalay, commons.wikimedia.

Ramadan: রোজার মাস রমজান।



হিজরতের পর মদিনায় এসে মুহম্মদ দেখতে পেলেন ইহুদিরা মহররম মাসের ১০ তারিখে রোজা রাখছে। তাদেরকে এই রোজার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, ‘এই দিনে আমাদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ করুণা রয়েছে। এই দিনেই তিনি মূসার মাধ্যমে আমাদেরকে ফেরাউনের কবল থেকে উদ্ধার করেন এবং তাকে তার সৈন্যবাহিনীসহ ধ্বংস করেন। তাই আল্লাহর করুণার শুকরিয়া আদায়ে আমরা এই দিনে রোজা রাখি।’

রমজানের নূতন চাঁদ।
মুহম্মদ বললেন, ‘মূসা আমাদেরও অতি ঘনিষ্ট। সুতরাং তোমাদের মত আমরাও এদিনে রোজা রাখব।’
তিনি সাহাবীদেরকে মহররমের ১০ তারিখে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। অবশ্য মক্কার কুরাইশগণ যে রোজার সাথে পরিচিত ছিল না তা নয়, তাদের অনেকেই ১০ই মহররম রোজা রাখত, কারণ এই দিনটিতে নূহ তার নৌকা থেকে ভূমিতে নামে।

কিন্তু পরবর্তী বৎসর মুসলমানদের জন্যে রমজান মাসকেই রোজার জন্যে ফরজ করা হল নিচের আয়াতসমূহ দ্বারা- হে ঈমানদারেরা! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জণ করতে পার-গণনার কয়েকটি দিনের জন্যে। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ্য থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্যে অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একটি মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্যে কল্যাণকর হয়। আর যদি রোজা রাখ, তবে তা তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার। 

মসজিদে ইফতারী।
রমজান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্যে হেদায়েত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্যে সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে, সে এ মাসে রোজা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ্য কিম্বা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্যদিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্যে সহজ করতে চান; তোমাদের জন্যে জটিলতা কামনা করেন না- যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুণ আল্লাহর মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।(২:১৮৩-১৮৫)

The word Ramadan comes from the Arabic root ramida or ar-ramad, which means scorching heat or dryness. Ramadan is a time of spiritual reflection, improvement and increased devotion and worship. Ramadan also teaches Muslims how to better practice self-discipline, self-control,sacrifice, and empathy for those who are less fortunate; thus encouraging actions of generosity and compulsory charity (zakat).

The fast (sawm) begins at dawn and ends at sunset. Each day before dawn, Muslims observe a pre-fast meal called suhoor. After stopping a short time before dawn, Muslims begin the first prayer of the day, the Fajr prayer. At sunset, families hasten for the fast-breaking meal known as iftar. End of Ramadan, Muslims celebrate "festivity of breaking the fast" ie. Eid ul-Fitr.
রমজানে আলোক সজ্জা।
রমজান (Ramadan) মাসের ফজিলত অনেক। এ মাসেই সকল আসমানী কিতাব নাযিল হয়েছিল। যেমন ১লা রমজানে-ইব্রাহিমের সহিফা, ৬ই রমজানে তাওরাত, ১১ই রমজানে যবুব, ১৮ই রমজানে ইঞ্জিল এবং ২৭শে রমজান কোরআন নাযিল হয়।

অন্যান্য আসমানী কিতাব, কিতাব আকারে একবারে সংশ্লিষ্ট রসূলকে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোরআনের ক্ষেত্রে তা হয়নি। ২৬শে রমজান দিবাগত রাত্রিতে (শবে কদরের রাত) সমগ্র কোরআন লওহে মাহফুজ থেকে তুলে এনে উর্দ্ধাকাশে ছড়িয়ে দেয়া হয়। কোরআনে রয়েছে- 

নিশ্চয় আমি এই কোরআন অবতীর্ণ করেছি লায়লাতুল কদরে। লায়লাতুল কদর সম্পর্কে তুমি কি জান? লায়লাতুল কদর হল হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এই রাতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেস্তারা স্বীয় পালনকর্তার নির্দেশে অবতীর্ণ হয়। শান্তিই শান্তি, যা ফজরোদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (৯৭:১-৫)

অতঃপর জিব্রাইল সাড়ে তেইশ বৎসর ধরে প্রয়োজন অনুসারে একটু একটু করে মুহম্মদের নিকট তা নিয়ে আসেন। আর ঐ সময়কালে ওহীর হেফাজত কল্পে জ্বিণদেরকে উর্দ্ধ আসমানে গমন, শ্রবণ ও সংগ্রহে বাঁধা দেয়া হয়। কোরআনে রয়েছে-

..(একদল জ্বিণ) বলল, আমরা বিষ্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি-(৭২:৩) অনেক মানুষ পুরুষ জ্বিণের আশ্রয় নিত, কিন্তু তাতে তারা তাদের ভ্রান্তি ও অবাধ্যতাই কেবল বাড়িয়ে দিত।-(৭২:৬) আমরা আকাশ পর্যবেক্ষণ করেছি, অতঃপর দেখতে পেয়েছি যে, কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিন্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ। আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে সংবাদ শ্রবণার্থে বসতাম। এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে সে জ্বলন্ত উল্কাপিন্ডকে ওঁৎ পেতে থাকতে দেখে। -(৭২:৮-৯)


নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী আকাশকে তারকারাজীর দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং তাকে সংরক্ষিত করেছি প্রত্যেক অবাধ্য শয়তান থেকে। ওরা উর্দ্ধ জগতের কোন কিছু শ্রবণ করতে পারে না এবং চারদিক থেকে তাদের প্রতি উল্কা নিক্ষেপ করা হয়, ওদেরকে বিতাড়নের উদ্দেশ্যে। ওদের জন্যে রয়েছে বিরামহীন শাস্তি। তবে কেউ ছোঁ মেরে কিছু শুনে ফেললে জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড তার পশ্চাৎধাবন করে।-(৩৬:৬-১০)

প্রথম যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছিল, তখন ইফতারের পর থেকে শয্যা গ্রহণের পূর্বপর্যন্ত খানা-পিনা ও স্ত্রী সহবাসের অনুমতি ছিল, কিন্তু একবার শয্যাগ্রহণ করে ঘুমিয়ে পড়ার সাথে সাথেই এসবকিছু হারাম হয়ে যেত। এতে কোন কোন সাহাবী অসুবিধায় পড়ল। কায়েস ইবনে সারমাহ আনসারী নামক জনৈক সাহাবী একবার সমস্ত দিন কঠোর পরিশ্রম করে ইফতারীর সময় গৃহে ফিরে দেখেন, ঘরে খাবার মত কোনকিছুই নেই। স্ত্রী বলল, ‘একটু অপেক্ষা করুন আমি কোনখান থেকে কিছু সংগ্রহ করে আনার চেষ্টা করি।’

রমজানে আলোক সজ্জা।
স্ত্রী যখন কিছু খাদ্য সংগ্রহ করে ফিরে এল, ততক্ষণে সারাদিনের পরিশ্রমের কারণে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। ফলে ইফতারের পর ঘুমিয়ে পড়ার দরুণ খানা-পিনা তার জন্যে হারাম হয়ে গেল। পরদিন তিনি ঐ অবস্থায় রোজা রাখলেন। কিন্তু দুপুরের দিকে অনাহার জনিত কারণে বেহুস হয়ে পড়ে গেলেন। এছাড়াও কোন কোন সাহাবী গভীর রাতে ঘুম ভাঙ্গার পর স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয়ে মানসিক কষ্টে পড়ে। 

এসব ঘটনার পর এই আয়াত নাযিল হয়- রোজার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্যে হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ অবগত রয়েছেন যে, তোমরা আত্ম প্রতারণা করছিলে, সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের অব্যহতি দিয়েছেন। অতঃপর তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং যাকিছু তোমাদের জন্যে আল্লাহ দান করেছেন, তা আহরণ কর। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিস্কার দেখা যায়। অতঃপর রোজা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। আর যতক্ষণ তোমরা এতেকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মিশ না। এ হল আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেয়া সীমানা। অতএব এর কাছেও যেও না। এমনিভাবে আল্লাহ বর্ণনা করেন নিজের আয়াতসমূহ মানুষের জন্যে, যাতে তারা বাঁচতে পারে।(২:১৮৭)

সমাপ্ত।
ছবি: Wikipedia.

১৭ এপ্রিল, ২০১২

Dead Sea Scrolls: মরু সাগর পুঁথি।

১৯৪৭ সালে নাটকীয় আকস্মিকতার মধ্যে মরু সাগরের কাছে (উত্তর-পশ্চিম সমুদ্রতীর থেকে মাইল খানেক ভিতরে) জর্দানের পাহাড়গুলোতে মরু সাগর পুঁথি (Dead Sea Scrolls) নামে পরিচিত কিছু অতি প্রাচীন দলিল- পত্র আবিষ্কৃত হয়। এ আবিষ্কার বিশ্বের বুদ্ধিজীবী ও যাজক মহলে ঝড় তোলে। এই মরু সাগর পুঁথি কীভাবে আবিষ্কৃত হল, সেই কাহিনি সংক্ষেপে এমন-

কুমরানের গুহা।
কুমরানের (Khirbet Qumran, West Bankকাছাকাছি এক প্রান্তরে এক আরব রাখাল বালক মুহম্মদ আদিব (Muhammed edh-Dhib) মেঘ চরাচ্ছিল। একসময় হঠাৎ এক গণনা শেষে সে দেখতে পেল, পালে একটি মেষ নেই। কাছেই ছিল এক পাহাড়। মেষটির খোঁজে দিগন্তে দৃষ্টি ফেলতে সে তখন পাহাড়ে উঠল। 

খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে পাহাড়ের গায়ে সে এক গুহামুখ আবিস্কার করল। কৌতুহলবশত: বালকটি তখন ঐ গুহার মধ্যে একটি পাথর নিক্ষেপ করল। কিন্তু নিক্ষেপের পর পাথরে পাথরে সংঘর্ষের শব্দের পরিবর্তে কিছুটা ভিন্ন জাতীয় শব্দ কানে এল তার। মুহূর্তেই তার মনে রঙিন স্বপ্ন ডানা মেলল। সে ভাবল, নিশ্চয় কোন গুপ্তধন  আছে এ গুহায়।

মাটির পাত্র যাতে পুঁথিগুলো ছিল।
পরদিন সকালে সে আবার গুহায় ফিরে আসে। সাথে নিয়ে এসেছিল তার চাচাত ভাইকে। দু’জনে গুহার ভিতরে প্রবেশ করে। কিন্তু হতাশ হয় তারা। গুহার কোথাও গুপ্তধন নেই। তার পরিবর্তে ভাঙাচোরা মাটির জিনিসপত্রের মধ্যে তারা কয়েকটি মাটির কলস (Jar) দেখতে পেল। কলসগুলির মুখ সীল করা ছিল। তখন ঐ কলসগুলির মধ্য থেকে একটি কলস নিয়ে নিজেদের তাঁবুতে এল তারা। সেটি ভেঙে ফেলার পর তাদের সব আশা বিলীন হয়ে গেল। কলসের মধ্য থেকে পাওয়া গেল চামড়ায় লেখা একটি পুঁথি। গোটানো পুঁথিটি খুলতে খুলতে শেষ পর্যন্ত তা তাঁবুর এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত পৌছল। এটা ছিল সেই পুঁথিগুলোর একটি যা পরে আড়াই লাখ ডলারে বিক্রি হয়।

আরব এই বেদুইন তাদের তাম্বুর এক খুঁটির সাথে পুঁথিটি ঝুলিয়ে রাখে। বাড়ীতে কোন অতিথি এলে সে তাদেরকে সেটা দেখাত। এই বেদুইন প্রথমে এই পুঁথি বেথেলহেমের ইব্রাহিম ঝা নামক এক এন্টিক ক্রয়-বিক্রয়কারীর কাছে নিয়ে যায়। কিন্তু ঝা তা ফিরিয়ে দেয় এই বলে যে তা এক মূল্যহীন আবর্জনা বৈ কিছু নয় এবং তাকে সতর্ক করে যে তা হয়ত: কোন সিনাগগ থেকে চুরি করা হয়েছে।

মরু সাগর পুঁথি।
পরবর্তীতে বেদুইন এই পুঁথি নিয়ে যায় খলিল ইস্কেন্দার শাহীন ওরফে কান্দো (Kando) নামক এক সিরীয় খৃষ্টান ব্যক্তির নিকট। প্রকৃতপক্ষে ঐ কান্দো ছিল একজন মুচি এবং খন্ডকালীন এন্টিক ক্রয়-বিক্রয়কারী। সে লক্ষ্য করে যে চামড়াটির উপরে কীসব লেখা রয়েছে। কিন্তু ভাষাটি তার অজানা থাকায় সে কিছুই বুঝতে পারল না। ভাল করে দেখে নিয়ে সে পুঁথিটি জেরুজালেমের সেন্ট মার্ক মঠের সিরীয় আর্চ বিশপকে দেখাবে বলে মনস্থ করল। কিন্তু সে মন্তব্য করল- 'এ দিয়ে ছেঁড়া জুতোর তালি দেবার কাজ হলেও হতে পারে।' সুতরাং সে যতকিঞ্চিত মূল্য ধার্য্য করল। আর আরব বালকটি £7 GBP এর বিনিময়ে পুঁথিটি তাকে দিয়ে দিল।

অত:পর কান্দো মঠের একজন মেম্বার জর্জ ইশাইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলে এই পুঁথির খবর মেট্রোপলিটন এথানসিয়াস মার শমূয়েলের নিকট পৌঁছে যায়। এভাবে অর্থোপার্জনের লক্ষ্যে পূঁথিটি এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে গেল।

১৯৫৪ সালের জুনের ১ তারিখে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল মরু সাগর পুঁথি বিক্রির জন্যে বিজ্ঞাপন ছাপে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে ঐ বিজ্ঞত্তিটি ছিল এমন-

MISCELLANEOUS FOR SALE
মরু সাগর পুঁথি বিক্রির জন্যে বিজ্ঞাপন।
'The Four Dead Sea Scrolls'Biblical Manuscripts dating back to at least 200 BC, are for sale. This would be an ideal gift to an educational or religious institution by an individual or group.
Box F 206, The Wall Street Journal.

১ জুলাই, ১৯৫৪, যথেষ্ট নিগোসিয়েশনের পর Prof. Mazar এবং Prof. Sukenik এর পুত্র Yigael Yadin নিউ ইয়র্কের হোটেল Waldorf-Astoria তে আড়াই লাখ ডলারের বিনিময়ে পুঁথিগুলো ক্রয় করে নেন এবং জেরুজালেমে নিয়ে আসেন। জর্দানের আমেরিকান ওরিয়েন্টাল ইনস্টিটিউটে এ পুঁথিগুলো ওল্ড টেষ্টামেন্টের ই'শাইয়ের গ্রন্থের (Book of Isaiah) জ্ঞাত কপিগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন বলে দেখা গেল। ১৯৬৫ তে ব্রিটিশ মিউজিয়াম এই পুঁথির এক প্রদর্শনীর আয়োজন করে। ১৯৬৭ তে ছয় দিনের যুদ্ধে ইস্রায়েল জর্ডানের কিছু অংশ দখল করলে পুঁথিগুলো তাদের হাতে চলে আসে। পরে তা ইসরাইল সরকার কর্তৃক জেরুজালেমের গ্রন্থ মন্দিরে (Shrine of the Book) রক্ষিত হয়।

এখন আমরা দেখি প্রাপ্ত এই স্ক্রলে কি আছে- The texts of Dead Sea Scrolls are of great historical, religious and linguistic significance because they include the earliest known surviving manuscripts of works later included in the Hebrew Bible canon, along with extra-biblical manuscripts which preserve evidence of the diversity of religious thought in late Second Temple Judaism.

The texts of Dead Sea Scrolls are written in Hebrew, Aramaic, Greek, and Nabataean, mostly on parchment but with some written on papyrus and bronze.The manuscripts have been dated to various ranges between 408 BCE and 318 CE.

The Dead Sea Scrolls are divided into three groups; copies of texts from the Hebrew Bible, which comprise roughly 40% of the identified scrolls, texts from the Second Temple Period like the Book of Enoch, Jubilees, the Book of Tobit, the Wisdom of Sirach, Psalms 152–155, etc., that ultimately were not canonized in the Hebrew Bible, which comprise approximately 30% of the identified scrolls, and sectarian manuscripts (previously unknown documents that shed light on the rules and beliefs of a particular group or groups within greater Judaism) like the Community Rule, the War Scroll, the Pesher on Habakkuk and the The Rule of the Blessing, which comprise roughly 30% of the identified scrolls.

সমাপ্ত।

উৎস: Jesus- A Prophet of Islam.- by Muhammad Ata-Ur-Rahim

ছবি: Wikipedia, faclan.

১ এপ্রিল, ২০১২

Daniel: নেবু চাঁদ নেজ্জারের স্বপ্ন ব্যাখ্যা।


Nebuchadnezzar II Hebrew Nəḇūḵaḏneṣṣar; was an Assyrian king of the Neo-Babylonian Empire, who reigned c. 605 BC – 562 BC. Both the construction of the Hanging Gardens of Babylon and the destruction of Jerusalem's temple are ascribed to him. He is featured in the Book of Daniel and is mentioned in several other books of the Bible. He is also known as Bakhat Nasar, which means "winner of the fate", or literally, "fate winner".

Nebuchadnezzar was summoned to defeat Jerusalem, he was finishing a peace agreement with the people of Damascus. Because of this, he sent an officer to ease the tension in Jerusalem and create a peace treaty.The officer successfully met with the king of Jerusalem and made a peace treaty. As was custom for the Babylonians, the officer took hostages with him as and began the return journey to Nebuchadnezzar. When the officer reached Tiberias, he heard that the Israelites had revolted against their king and killed him because the king had given the Babylonians hostages.The hostages were then beheaded and Nebuchadnezzar made his way to Jerusalem.

Nebuchadnezzar ravaged the town, killed and enslaved the people, and then one of his officer discovered the prophet Jeremiah in a prison. He had been jailed for about three years for prophesying Jerusalem's fate as told to him by God. When Nebuchadnezzar hard this story of Jeremiah, he replied, "Wretched people, they defied their lord's messenger". He released him.

Nebuchadnezzar then conquers Egypt and moves further north in Africa before returning home with treasures and hoards of slaves. 

ইস্রায়েল থেকে নেবু চাঁদ নেজ্জার কর্তৃক ধৃত বন্দীরা পারস্যের কবার নদীর ধারে বসতি স্থাপন করে। এইসব বন্দীদের মধ্যে ছিলেন নবী ওযাইর (Ezra) ও বেশকিছু রাজবন্দী। ওযাইর ছিলেন ঐসময় অল্পবয়েসী বালক। যৌবনে তিনি জেরুজালেমে আসেন। কেননা, খোদা তাকে জানিয়েছিলেন যে, ঐ নগরী আবারও গড়ে তোলা হবে, আর তার জীবনকালেই তা হবে। কিন্তু জেরুজালেমে গিয়ে সেখানকার ধ্বংসযজ্ঞ দেখে তিনি বিষ্মিত হলেন। কারণ নগরীটি ছিল সম্পূর্ণ ভষ্মিভূত এবং পরিত্যক্ত! ওযাইর তার জীবনকালে এ নগরী পুনরায় গড়ে তোলার ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়লেন। 

যাহোক, পুরো শহর ঘুরে ফিরে দেখা শেষে একসময় সেখান থেকে বেরিয়ে এলেন ওযাইর। দীর্ঘ ভ্রমণের কারণে তিনি বেশ ক্লান্ত। একটু বিশ্রাম তার বড় প্রয়োজন। সুতরাং কাছাকাছি এক গাছের শাখায় গাধাটি বেঁধে তার ছায়ায় তিনি আশ্রয় নিলেন। ধ্বংসের ভয়াবহতায় ঐসময় তার ভারাক্রান্ত মনে বারবার কেবল এ প্রশ্ন উদয় হচ্ছিল- “খোদা শহরটিকে এত নিষ্ঠুরভাবে ধ্বংস করলেন কেন? এখানে কি তাঁর এবাদতকারী কেউ ছিল না?”

সেইসময় ওযাইর যখন চিন্তামগ্ন ছিলেন, তখন একটি পিঁপড়ে তার পায়ে কাঁমড় দিল, এতে তার আত্মমগ্নতা ভঙ্গ হল। তিনি লক্ষ্য করলেন তার বসার পাশে পিঁপড়েদের একটি বাসা রয়েছে। রাগান্বিত হয়ে তিনি পদদলিত করে সবগুলোকে মেরে শেষ করে দিলেন। এসময় খোদা তাকে বললেন, ‘ওহে ওযাইর! তোমাকে তো একটা পিঁপড়ে কাঁমড়েছিল, আর তুমি এতগুলিকে পায়ে দলে মেরে ফেললে?’ 
ওযাইর লজ্জিত হয়ে তাড়াতাড়ি করে উত্তর দিলেন, ‘হে খোদা! ওরা তো একই বংশজাত, একই প্রবৃত্তি ওদের; তাই আমি সবগুলিকে মেরে ফেললাম যাতে পরে আর একটিও আমাকে কাঁমড়াতে না পারে।’ 

নেবু চাঁদ নেজ্জার।
এই উত্তর দেবার সঙ্গে সঙ্গেই খোদার এই কঠোর ধ্বংসযজ্ঞের কারণ বুঝতে পারলেন ওযাইর। এতে তিনি আরও লজ্জিত হয়ে পড়লেন। এ অবস্থায় ক্লান্তির কারণে কখন যে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন তা টেরই পেলেন না। তখন খোদা তাকে একশত বৎসর ঘুমন্ত অবস্থায় রাখলেন। যা হোক, এ কাহিনী এ আর্টিকেলের উপপাদ্য বিষয় নয়, সুতরাং আমরা মূল কাহিনীতে ফিরে আসছি-

স্রায়েলীরা জ্ঞান ও শিক্ষায় অন্যজাতির তুলনায় অগ্রগামী ছিল। নেবু চাঁদ নেজ্জার তা জানতেন। সুতরাং তিনি তার প্রধান কর্মচারী অস্পন্সকে আদেশ দিলেন যেন সে বন্দী ইস্রায়েলী রাজপরিবার ও সম্মানিত পরিবারগুলোর মধ্যে থেকে চটপটে, সুন্দর ও বুদ্ধিমান কিছু যুবককে বেঁছে নেয় যাদেরকে বাবিলীয়দের ভাষা ও সাহিত্য সম্বন্ধে শিক্ষা শেষে রাজদরবারের কাজে লাগান যাবে। অস্পন্স দানিউব, হনানীয়, মিকাইল ও অশরিয়কে মনোনীত করেছিল। প্রশিক্ষণের সময় তাদের নামগুলি পরিবর্তিত করে রাখা হয় বেল্টশৎসর, শদ্রক, মৈশক, এবং আবেদ-নগো। অত:পর তিন বৎসর শিক্ষা শেষে রাজদরবারে তাদেরকে হাজির করা হল। তখন তাদের সঙ্গে কথা বলে সম্রাট বুঝতে পারলেন যে, অস্পন্স তার দায়িত্ব যথাযত ভাবেই পালন করতে সমর্থ হয়েছে। যুবক চতুষ্টয়কে রাজকার্যে বহাল করা হল।

দানিয়েল নেবু চাঁদ নেজ্জারের স্বপ্ন ব্যাখ্যা করছেন।
নেবু চাঁদ নেজ্জার কোন এক রাতে এক স্বপ্ন দেখলেন। তার মন অস্থির হল এবং তিনি নির্ঘূম রাত কাটিয়ে দিলেন। পরদিন এই স্বপ্নের অর্থ করার জন্যে সম্রাটের সকল উপদেষ্টা, যাদুকর, রাজ জ্যোতিষীদের ডাকা হল। তারা এলে সম্রাট তাদেরকে বললেন, ‘আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি; তার অর্থ জানার জন্যে আমার মন অস্থির হয়ে পড়েছে।’ 

তারা বলল, ‘হে মহারাজ! আপনি আপনার স্বপ্নটা বলুন, যাতে আমরা তার অর্থ বলে দিতে পারি।’
তিনি বললেন, ‘তোমরাই আমার স্বপ্নটা বল; তাহলে আমি বুঝতে পারব যে, তোমরা তার অর্থও আমাকে বলতে পারবে। আর যে আমার স্বপ্ন ও তার অর্থ বলতে পারবে, নিশ্চয় তার জন্যে রয়েছে উপযুক্ত পুরস্কার ও মহাসম্মান।’

স্বপ্নে দেখা বিরাট মূর্ত্তি।
তারা বলল, ‘কোন মহান সম্রাট পূর্বে কখনও এমন বিষয় তার উপদেষ্টাদের কাছে জানতে চাননি। সম্রাট যা চাইছেন তা বড়ই কঠিন। সুতরাং আমাদের জন্যে প্রয়োজনীয় সময় মঞ্জুর করা হোক।’
তিনি বললেন, ‘আমি নিশ্চিত জানি, তোমরা সময় ক্ষেপণ করার চেষ্টা করছ। আর আশা করছ তাতে অবস্থার পরিবর্তণ হবে। কিন্তু এ বিষয়ে আমার মন স্থির আছে। তোমাদের অপারগতা তোমাদের জন্যে কেবল একটাই শাস্তি নিশ্চিত করবে- আর তা হবে তোমাদের মৃত্যুদন্ড।’

তারা বলল, ‘সম্রাট আমাদের কাছে যা জানতে চেয়েছেন তা জানাতে পারে এমন লোক পৃথিবীতে নেই। দেবতারা ছাড়া আর কেউই এটা প্রকাশ করতে পারবেন না, আর তারা তো মানুষের মাঝে বাস করেন না।’

নেবু চাঁদ নেজ্জার বুঝতে পারলেন তার পরামর্শদাতারা তার স্বপ্নের উত্তর দিতে পারবে না। তথাপি তিনি তাদের জন্য দু’দিন সময় মঞ্জুর করলেন। অত:পর যখন বেঁধে দেয়া সময় অতিক্রান্ত হল, তখন তিনি তাদের সকলকে হত্যার আদেশ দিলেন। আর যখন এই আদেশ পালনের জন্যে তাদেরকে খোঁজা হচ্ছিল, তখন সেনাপতি অরিয়োককে কাছে পেয়ে দানিউব তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সম্রাট এই কঠোর আদেশ কেন দিয়েছেন?’

সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন।
অরিয়োকের কাছ থেকে সকল কথা জানার পর দানিউব বুদ্ধি করে কিছুটা সময় চাইলেন। সেনাপতি তা মঞ্জুর করল। তখন তিনি তার কক্ষে ফিরে বন্ধু হনানীয়, মিকাইল ও অশরিয়সহ একযোগে খোদার নিকট ব্যগ্র প্রার্থনায় নিমগ্ন হলেন। রাতে এক দর্শনের মাধ্যমে সেই অজানা বিষয় দানিউবের কাছে প্রকাশিত হল। তখন তিনি খোদাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন-

খোদা চিরকাল ধন্য হোন; জ্ঞান ও শক্তি তাঁরই।
সময় ও ঋতু তাঁরই অধীন।
তিনিই যাকে খুশী সিংহাসনে বসান ও নামিয়ে দেন।
তিনিই জ্ঞানীদের জ্ঞান দান ও মানীদের মান রক্ষা করেন।
গভীর ও লুকান বিষয়ের জ্ঞান একমাত্র তাঁরই।

হে আমার প্রতিপালক,
আমি তোমাকে ধন্যবাদ দেই, তোমার প্রশংসা করি,
কারণ তুমি আমাকে জ্ঞান ও ক্ষমতা দিয়েছ;
আমরা তোমার কাছে সম্রাটের স্বপ্নের বিষয়ে যা জানতে চেয়েছি
তা তুমি আমাকে জানিয়েছ।

মূর্ত্তির মাথা স্বর্ণের, বুক ও হাত রৌপ্যের
 এবং পেট ও উরু ব্রোঞ্জের।
সকালবেলা দানিউব সেনাপতি অরিয়োককে ডেকে বললেন, ‘পরামর্শ দাতাদের কাউকে যেন হত্যা করা না হয়। আমাকে সম্রাটের কাছে নিয়ে চলুন, যেন আমি তার স্বপ্নের অর্থ বলে দিতে পারি।’

অরিয়োক তখনই দানিউবকে রাজদরবারে নিয়ে গেল এবং সম্রাটকে জানাল, ‘ইস্রায়েলীদের মধ্যে আমি এমন একজনকে খুঁজে পেয়েছি যিনি মহামান্য সম্রাটের স্বপ্ন এবং তার অর্থ বলে দিতে পারবেন।’
নেবু চাঁদ নেজ্জার বিষ্মিত হলেন।তিনি দানিউবকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি সত্যিই আমার স্বপ্ন ও তার অর্থ বলে দিতে পারবে?’

দানিউব বললেন, ‘হে মহারাজ! এ কথা সত্য যে, সেই অজানা বিষয়ের জ্ঞান কোন গণক, যাদুকর বা জ্যোতিষের কাছে নেই, অজানা বিষয়ের জ্ঞান কেবল স্বর্গের প্রভুর।

--অন্যান্য লোকদের চেয়ে আমার জ্ঞান বেশী বলে যে এ আমার কাছে প্রকাশিত হয়েছে তা নয়, বরং এ প্রকাশিত হয়েছে যাতে আপনি এর অর্থ জানতে পারেন এবং খোদার মহিমা প্রকাশিত হয়।

--হে মহারাজ! আপনি স্বপ্নে আপনার সামনে একটা বিরাট মূর্ত্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। যা ছিল উজ্জ্বল ও ভয়ঙ্কর চেহারার। সেই মূর্ত্তির মাথাটা ছিল স্বর্ণের, বুক ও হাত রৌপ্যের এবং পেট ও উরু ব্রোঞ্জের। তার পা লৌহের এবং পায়ের পাতার কিছুটা লৌহের ও কিছুটা মাটি দ্বারা নির্মিত ছিল।

 --আপনি দেখলেন একটা পাথর কেটে নেয়া হল আর সেটা লৌহ ও মাটি মিশ্রিত পায়ে আঘাত করে তা চুরমার করে ফেলল। তখন মূর্ত্তিটি টুকরো টুকরো হয়ে পড়ল এবং গরমকালে খামারের মেঝেতে পড়ে থাকা তুষের মত হয়ে গেল।পরে বাতাস তা এমন করে উড়িয়ে নিয়ে গেল যে তার আর কোন চিহ্নই রইল না। কিন্তু যে পাথরটা মূর্ত্তিটাকে আঘাত করেছিল সেটা একটা বিরাট পাহাড় হয়ে গিয়ে সমস্ত দেশটা দখল করে ফেলল।
এই আপনার স্বপ্নের বিবরণ।’

এই স্বপ্নের অর্থ হল- খোদা আপনাকে রাজ্য, ক্ষমতা, শক্তি ও সম্মান দান করেছেন। তাই আপনিই হলেন সেই মূর্ত্তির সোনার মাথা।

মূর্ত্তি টুকরো টুকরো হয়ে পড়ল।
--আপনার রাজ্যের পরে যে রাজ্য উঠবে সেটা আপনার রাজ্যের মত মহান হবে না। সেটা সেই রূপার বুক ও হাত। 
--তারপরে তৃতীয় আর একটা রাজ্য উঠবে, সেটা সেই ব্রোঞ্জের পেট ও উরু। 
--শেষে লোহার মত শক্ত চতুর্থ একটা রাজ্য উঠবে, আর লোহা যেমন সবকিছু ভেঙ্গে চুরমার করে তেমনি সেই রাজ্য অন্যসব রাজ্যকে ভেঙ্গে চুরমার করবে।

--স্বপ্নে যে পায়ের পাতা ও পায়ের আঙ্গুলগুলোর কিছু অংশ মাটি ও কিছু অংশ লোহা দিয়ে তৈরী ছিল, তাহল একটা ভাগ করা রাজ্য। সেই রাজ্যে লোহার মত কিছু শক্তি থাকবে আর কিছু অংশ থাকবে দুর্বল এবং রাজ্যের লোকেরা হবে মেশান। 

--ঐ সব রাজাদের সময়ে খোদা এমন একরাজ্য স্থাপন করবেন যেটা কখনও ধ্বংস হবে না কিংবা অন্য লোকদের হাতেও যাবে না। সেই রাজ্য ঐসব রাজ্য গুলোকে চুরমার করে দেবে কিন্তু রাজ্যটা নিজে চিরকাল থাকবে, আর এটাই হল সেই পাহাড় কেটে নেয়া পাথর যেটা মানুষের হাতে কাটা হয়নি।’

সবশুনে সম্রাট বললেন, ‘আমি বুঝতে পারলাম তোমাদের খোদা সত্যিই গুপ্ত বিষয় প্রকাশ করেন, কারণ তুমি গুপ্ত এই বিষয়টি প্রকাশ করতে পেরেছ।’ 

নেবু চাঁদ নেজ্জার তখনি দানিউবকে দামী উপঢৌকন দিলেন এবং বাবিল প্রদেশের প্রধান পরিচালক হিসেবেই শুধু তাকে নিযুক্ত করলেন তাই নয়, তার সমস্ত উপদেষ্টাদের প্রধান হিসেবেও তাকে মনোনীত করলেন। হনানি, মিকাইল ও অশরিয়কেও বাবিল প্রদেশের রাজকর্মচারীর উচ্চপদে নিয়োগ করা হল। -Book of Daniel, Chapter-2, Verse-1-49.

বা'ল দেব
সম্রাট নেবু চাঁদ নেজ্জার বা'ল দেবের নব্বুই ফুট উচ্চতার একটা স্বর্ণমূর্ত্তি নির্মাণ করে বাবিল প্রদেশের দূরা সমভূমিতে স্থাপন করলেন। অতঃপর সেই মূর্ত্তিটার প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্যে সকল উচ্চপদস্থ কর্মচারীদেরকে আমন্ত্রণ জানালেন। 

প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে সমবেত জনতার সম্মুখে সম্রাটের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হল, ‘হে নানা  দেশের ও জাতির, ভিন্ন ভাষা-ভাষী জনতা, আপনারা যখনি শিঙ্গা, বাঁশী, সূরবাহার ও বীণার বাজনা শুনবেন তখনি সম্রাটের স্থাপিত এই দেবমূর্ত্তিকে ভক্তি নিবেদন করবেন। আর সম্রাটের এ আদেশ অস্বীকার কারীদেরকে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত করা হবে।’ সুতরাং লোকেরা যখনি বাজনার শব্দ শুনল তখনি দেবমূর্ত্তিকে নমিত হয়ে ভক্তি ও প্রণাম জানাল। 

কয়েকদিন পর উপদেষ্টাদের কয়েকজন সম্রাটকে জানাল, ‘হে মহারাজ, কয়েকজন ইহুদি যাদেরকে আপনি বাবিল প্রদেশের রাজকার্যে নিযুক্ত করেছেন, তারা আপনার আদেশে কর্ণপাত করেনি। তারা আমাদের দেবতাদের সেবা করে না এবং আপনার স্থাপিত দেবমূর্ত্তিকে প্রণামও করে না।’

এতদ শ্রবণে সম্রাট শদ্রক, মৈশক, এবং আবেদ-নগোকে ডেকে পাঠালেন। তারা হাজির হলে তিনি বললেন, ‘এ কথা কি সত্যি যে, তোমরা আমি যে বা'ল দেবতার স্বর্ণমূর্ত্তি স্থাপন করেছি তাকে ভক্তি ও প্রণাম কর না?’

তারা বললেন, ‘হে মহারাজ, মহান খোদাই আমাদের একমাত্র উপাস্য দেবতা। আমরা কেবল তাঁকেই প্রণাম করি।’
তিনি বললেন, ‘রাজ আজ্ঞা রয়েছে- আদেশ অমান্যকারীদেরকে জলন্ত চুল্লিতে ফেলে দেয়া হবে। আর তা করলে কোন দেবতা আমার হাত থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করবে?
তারা বললেন, ‘খোদাই আমাদেরকে উদ্ধার করবেন। আর তিনি যদি তা না-ও করেন তবুও আমরা একটা মূর্ত্তিকে প্রণাম করতে পারি না।’
সম্রাট রাগান্বিত হলেন। তিনি আদেশ করলেন, ‘তাদেরকে জলন্ত চুল্লিতে নিক্ষেপ করা হোক।’

এ আদেশের পর দানিয়ূব ও তার বন্ধুদের পদোন্নতিতে উপদেষ্টাদের যারা অখুশি হয়েছিল তারা অতি আগ্রহের সাথে রাজ আজ্ঞা পালনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল। তাদের উপস্থিতিতে প্রহরীরা শদ্রক, মৈশক, এবং আবেদ-নগোর হাত-পা বেঁধে অনেক কষ্টে জলন্ত চুল্লীতে নিক্ষেপ করল বটে, কিন্তু নিক্ষেপকালে তাদের কয়েকজন আগুনে মারাত্মক দগ্ধ হয়ে গেল।

তাদেরকে জলন্ত চুল্লিতে নিক্ষেপ করা হল।
এদিকে সম্রাট সারারাত্ নির্ঘুম কাটালেন। প্রভাতে তিনি ঘটনাস্থলে চলে এলেন। জলন্ত চুল্লির দিকে তিনি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। হঠাৎ দেখলেন চারজন মানুষ আগুনের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের কেউই শৃঙ্খলিত নেই এবং তারা অগ্নিদগ্ধও হয়নি। আর ৪র্থ জনকে তার দেবদূতের মতই মনে হল। তিনি আশ্চর্য হলেন। অত:পর প্রহরীদের জিজ্ঞেস করলেন, আমরা কি তিন জনকে আগুনে নিক্ষেপ করিনি? তবে আমি চারজনকে দেখছি কেন?' তিনি চুল্লির অতি নিকটে গিয়ে চিৎকার করে বললেন, ‘হে মহান খোদার দাসেরা, তোমরা বের হয়ে এসো।’

এসময় শদ্রক, মৈশক, এবং আবেদ-নগো আগুনের মধ্যে থেকে বের হয়ে এলেন। লোকেরা অবাক হয়ে দেখল আগুন তাদের দেহের কোন ক্ষতি করেনি, তাদের পোশাকও নষ্ট হয়নি এমনকি তাদের মাথার একটা চুলও পোড়েনি। সম্রাট বললেন, ‘সেই খোদার গৌরব হোক, যিনি তার স্বর্গদূতকে পাঠিয়ে তার দাসদেরকে উদ্ধার করলেন। এরা তাঁর উপরেই বিশ্বাস করে রাজাজ্ঞা অগ্রাহ্য করেছিল এবং খোদা ব্যতিত অন্য কোন দেবতার সেবা ও পূজা করার পরিবর্তে জীবন দিতেও সম্মত ছিল। সেজন্যে আমি এ আদেশ দিচ্ছি যে, কোন জাতির, দেশের ও ভাষার লোক যদি এ সর্বশক্তিমান খোদার বিরুদ্ধে কিছু বলে তবে তাকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হবে, কারণ আর কোন দেবতা এভাবে কাউকে উদ্ধার করতে পারেন না।’ 
সম্রাট শদ্রক, মৈশক, এবং আবেদ-নগোকে বাবিল প্রদেশের আরও উঁচু পদে অধিষ্ঠিত করলেন।

স্বপ্নে দেখা বিরাট গাছ।
আবারও সম্রাট নেবু চাঁদ নেজ্জার একটা স্বপ্ন দেখলেন। এই স্বপ্নের অর্থ করতে দানিউবকে ডাকা হল। সম্রাট তাকে বললেন, ‘আমি স্বপ্নে দেখলাম একটা গাছ পৃথিবীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। গাছটা দ্রুত বেড়ে উঠে বিরাট ও শক্তিশালী হল এবং তার মাথাটা গিয়ে আকাশ ছুঁইল; পৃথিবীর প্রান্তসীমা থেকে গাছটা দেখা যাচ্ছিল। তার পাতাগুলো ছিল খুব সুন্দর, ফলও ছিল প্রচুর এবং তা থেকে সকলেই খাবার পেত। তার ছায়ায় পশুরা এবং শাখায় আকাশের পাখীরা আশ্রয় পেত। 

--আমি দেখলাম উর্দ্ধাকাশ থেকে এক ফেরেস্তা নেমে এল এবং চীৎকার করে বলল, ‘গাছটা কেটে ফেল ও তার ডালগুলো ছেঁটে ফেলে দাও; তার পাতাগুলো ঝেড়ে ফেল এবং ফলগুলো ছড়িয়ে দাও। তার তলা থেকে পশুরা ও ডালপালা থেকে পাখীরা পালিয়ে যাক, কিন্তু তার কান্ড ও শিকড়গুলো লোহা ও ব্রোঞ্জের শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় মাটিতে ঘাসের মধ্যে থাকুক। আকাশের শিশিরে সে ভিজুক এবং বনের বৃক্ষলতার মধ্যে পশুদের সঙ্গে সে বাস করুক যে পর্যন্ত না তার উপরে সাত কাল ঘুরে।’ 
-এ্ হচ্ছে সেই স্বপ্ন যা আমি দেখেছি। এখন তুমি বল এর অর্থ কি?’

স্বপ্নটা শোনার পর দানিউব হতভম্ব হয়ে গেলেন। এতে সম্রাট বললেন, ‘হে বেল্টশৎসর, স্বপ্ন কিংবা তার অর্থ তোমাকে চিন্তিত না করুক।’

নেবু চাঁদ নেজ্জারের জঙ্গলে পশুর ন্যায় বাস।
তখন দানিউব বললেন, ‘হে আমার প্রভু, আপনি যে বিরাট গাছটা দেখেছিলেন যেটা বিরাট ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল, যার মাথা আকাশ ছুঁইয়ে ছিল ও যেটা পৃথিবীর সবাই দেখতে পেয়েছিল, যাতে সুন্দর পাতা ও প্রচুর ফল ছিল, যা সকলকে খাবার জোগাত, যা মাঠের পশুদের আশ্রয় দিত এবং যার ডালে আকাশের পাখীরা থাকার জায়গা পেত- আপনি, হে আমার প্রভু, আপনিই সেই গাছ।

--আপনাকে লোকদের কাছ থেকে এবং দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে এবং আপনি কিছুদিন জঙ্গলে পশুদের সঙ্গে বাস করবেন। এভাবে সাত বৎসর অতিবাহিত হবে, যে পর্যন্ত না আপনি মনেপ্রাণে স্বীকার করবেন যে, ‘পৃথিবীর রাজ্যগুলোর উপর মহান খোদা কর্তৃত্ব করেন এবং তিনিই সেইসব রাজ্য যাকে ইচ্ছে তাকে দান করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছে তা ছিনিয়ে নেন।’
--শিকড়শুদ্ধ গাছটির গোড়া রেখে দেবার আদেশের উদ্দেশ্য এই যে, যখন আপনি খোদার কর্তৃত্ব মেনে নেবেন তখন আপনার রাজ্য আপনাকে ফিরিয়ে দেয়া হবে।’ 

সম্রাট চিৎকার করে বললেন, ‘আমার মহাশক্তির দ্বারা এবং আমার জাঁকজমকের গৌরব প্রকাশের জন্যে রাজধানী হিসেবে যেটা আমি তৈরী করেছি এ-কি সেই মহান বাবিল নয়? আমার পায়ের নীচ দিয়ে কি খরস্রোতা নদীগুলো বয়ে যাচ্ছে না?’ দানিউবকে জেলখানায় রাখা হল।
এক বৎসর পর বাণী পূর্ণ হল। লোকালয় থেকে সম্রাট বিতাড়িত হলেন। 

নেবু চাঁদ নেজ্জার সেনাবাহিনী নিয়ে এক যুদ্ধ যাত্রা করলেন। এই বাহিনী যখন কোন এক জঙ্গলের ধারে বিশ্রামে ছিল তখন সম্রাট একাকী শিকারে গেলেন। 

হঠাৎ সম্রাটের নজরে পড়ল একটা হরিণ। তিনি সেটাকে তাড়া করে গভীর জঙ্গলে চলে এলেন। তারপর একসময় হরিণটাকে হারিয়েও ফেললেন আর এটাও বুঝতে পারলেন যে, তিনি তার বাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তিনি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে যাবার চেষ্টা করলেন। অতঃপর একসময় আবিস্কার করলেন যে, তিনি পথ হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি আতঙ্কিত না হয়ে নিজেকে শান্ত রাখলেন এবং ফলমূল খেয়ে কয়েকদিন অতিবাহিত করলেন। এরপর একদিন তিনি তার ঘোড়াটাকেও হারিয়ে ফেললেন। এভাবে দিনের পর দিন অতিবাহিত হতে লাগল। আর এদিকে সম্রাট এগিয়ে গেছেন ভেবে তার বাহিনীও সম্মুখে এগিয়ে গেল।

এদিকে ঐ জঙ্গলের পাশেই ছিল এক রাজ্য। সেখানকার রাজপ্রাসাদে একদিন চুরি হল। চোর ঘোড়ায় চড়ে পালিয়ে গেল। কিন্তু প্রহরীরা টের পেয়ে তার পিছু নিয়েছিল। পিছনে প্রহরী বুঝতে পেরে চোর জঙ্গলে ঢুকে পড়ল। পিছনে প্রহরী। চোর বুঝতে পারল সে ধরা পড়তে যাচ্ছে। এসময় হঠাৎ সে দেখতে পেল এক গাছের তলে এক লোক ঘুমিয়ে। সে তাড়াতাড়ি করে ঘোড়াটিকে একটা গাছের সাথে বাঁধল। তারপর চুরি করা মালামাল লোকটির মাথার পাশে রেখে ঢেকে দিল, তারপর গাছে চড়ে সেটির মগড়ালে গিয়ে চুপ করে বসে রইল। প্রহরীরা চলে এল। তারা ঘোড়াটিকে দেখতে পেল, তারপর দেখল চোর গাছের নীচে ঘুমের ভানে। আর যখন তারা মালামাল পেয়ে গেল, তখন তারা তাকে বেঁধে রাজদরবারে হাযির করল। আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগই মিলল না। ভাগ্যের এই নির্মম পরিহাসে নেবু চাঁদ নেজ্জার ম্রিয়মান হয়ে পড়েছিলেন। এসময় রাজাজ্ঞা ঘোষিত হল- ‘ওকে জেলখানায় যাতা ঘুরানোর কাজে লাগানো হোক।’

অল্পদিনেই জেলখানার কর্মচারীরা জানতে পারল লোকটি শিক্ষিত এবং জ্ঞানী। কথা রাজার কানে হল। তিনি বললেন, ‘তাহলে ওকে আমার কন্যার গৃহশিক্ষক রূপে নিয়োজিত করি।’ রাজকন্যার গৃহ শিক্ষকরূপে নেবু চাঁদ নেজ্জারকে নিয়োগ পেলেন। 

একদিন তিনি রাজকন্যাকে কিতাব পাঠ করে শোনাচ্ছিলেন। অত:পর তিনি যখন পাঠ করলেন- "For riches are not for ever: and doth the crown endure to every generation?"

রাজকন্যা বলল, “একথা সত্য না। জোর যার মুল্লুক তার, শক্তিই সকল ক্ষমতার উৎস। আর আমার পিতার এই গুণের জন্যেই আজ পর্যন্ত কেউই এ রাজ্য আক্রমণে সাহস করেনি।”

তার কথা শুনে নেবু চাঁদ নেজ্জার হো হো করে হেসে উঠলেন। রাজকন্যা অপমানিত বোধ করল। সে তার শিক্ষকের এহেন আচরণ রাজাকে অবহিত করল। রাজা রাগান্বিত হলেন।

নেঁবু নেবু চাঁদ নেজ্জারকে রাজদরবারে ডাকা হল এবং তার হাসির কারণ ব্যাখ্যা করতে আদেশ দেয়া হল। তিনি বললেন, ‘একমাত্র খোদাই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। তিনি যাকে ইচ্ছে রাজ্য দান করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছে তা ছিনিয়ে নেন। তিনি যাকে ইচ্ছে সম্মান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছে অপমানিত করেন। নিশ্চয় তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাশীল।’
রাজা বললেন, ‘তোমার বক্তব্যের সমর্থনে যুক্তি-প্রমান দেখাও।’

নেবু চাঁদ নেজ্জার নিজের পরিচয় প্রদান করতে পারলেন না। কেননা সত্য বললেও রাজা তা বিশ্বাস করবেন না। সুতরাং তিনি বললেন, “এগুলো কিতাবের কথা।” তখন রাজার আদেশে কিতাব নিয়ে আসা হল। আর তা পাঠ করতে নেবু চাঁদ নেজ্জারের হাতে দেয়া হল। অত:পর যখন তিনি তা পাঠ করলেন- "For riches are not for ever: and doth the crown endure to every generation?"

"Cease!" cried the king. "Who wrote those words?"

"They are the words of the Holy Book," নেবু চাঁদ নেজ্জার বললেন।
"Give me the book," commanded the king.

নেবু চাঁদ নেজ্জার placed it before his majesty. King Hagag gazed earnestly at the words that had been read, and he frowned. Raising his hand, he tore the page from the book and threw it to the ground.

"I, Hagag, am king," he said, "and all such passages that offend me shall be torn out." He flung the volume angrily from him.
"I have heard enough for today," he said. "Too long have I delayed my hunting expedition. Let the horses be got ready." নেবু চাঁদ নেজ্জার আবারও জেলখানায় যাতা ঘুরানোর কাজে ফিরে গেলেন। 

He descended from the throne, stalked haughtily through the trembling figure of his court, and went forth to the hunt. Soon he was riding furiously across an open plain toward a forest where a wild stag had been seen. A trumpet sounded the signal that the deer had been driven from its hiding place, and the king urged his horse forward to be the first in the chase. His majesty's steed was the swiftest in the land. Quickly it carried him out of sight of his nobles and attendants. But the deer was surprisingly fleet and the king could not catch up with it. Coming to a river, the animal plunged in and swam across. Scrambling up the opposite bank its antlers caught in the branch of a tree, and the king, arriving at the river, gave a cry of joy.


"Now I have thee," he said. Springing from his horse and divesting himself of his clothing he swam across with naught but a sword.


As he reached the opposite bank, however, the deer freed itself from the tree and plunged into a thicket. The king, with his sword in his hand, followed quickly, but no deer could he see. Instead, he found, lying on the ground beyond the thicket, a beautiful youth clad in a deer-skin. He was panting as if after a long run. The king stood still in surprise and the youth sprang to his feet.


"I am the deer," he said. "I am a genii and I have lured thee to this spot, proud king, to teach thee a lesson for thy words this morning."


Before King Hagag could recover from his surprise the youth ran back to the river and swam across. Quickly he dressed himself in the king's clothes and mounted the horse just as the other hunters came up. They thought the genii was King Hagag and they halted before him.

"Let us return," said the genii. "The deer has crossed the river and has escaped."

King Hagag from the thicket on the opposite side watched them ride away and then flung himself on the ground and wept bitterly. There he lay until a wood-cutter found him.

"What do you here?" asked the man.
"I am King Hagag," returned the monarch.

"Thou art a fool," said the wood-cutter. "Thou art a lazy good-for-naught to talk so. Come, carry my bundle of sticks and I will give thee food and an old garment."

In vain the king protested. The wood-cutter only laughed the more, and at last, losing patience, he beat him and drove him away. Tired and hungry, and clad only in the rags which the wood-cutter had given him, King Hagag reached the palace late at night.

"I am King Hagag," he said to the guards, but roughly they bade him begone, and after spending a wretched night in the streets of the city, his majesty, next morning, was glad to accept some bread and milk offered to him by a poor old woman who took pity on him. He stood at a street corner not knowing what to do. Little children teased him; others took him for a beggar and offered him money. Later in the day he saw the genii ride through the streets on his horse. All the people bowed down before him and cried, "Long live the king!"


"Woe is me," cried Hagag, in his wretchedness. "I am punished for my sin in scoffing at the words of the Holy Book."


He saw that it would be useless for him to go to the palace again, and he went into the fields and tried to earn his bread as a laborer. He was not used to work, however, and but for the kindness of the very poorest he would have died of starvation. He wandered miserably from place to place until he fell in with some blind beggars who had been deserted by their guide. Joyfully he accepted their offer to take the guide's place.


Months rolled by, and one morning the royal heralds went forth and announced that "Good King Hagag" would give a feast a week from that day to all the beggars in the land.


From far and near came beggars in hundreds, to partake of the king's bounty, and Hagag stood among them, with his blind companions, in the courtyard of the palace waiting for his majesty to appear. He knew the place well, and he hung his head and wept.


"His majesty will speak to each one of you who are his guests today," cried a herald, and one by one they passed into the palace and stood before the throne. When it came to Hagag's turn, he trembled so much that he had to be supported by the guards.

The genii on the throne and Hagag looked long at each other.

"Art thou, too, a beggar?" said the genii.

"Nay, gracious majesty," answered Hagag with bent head. "I have sinned grievously and have been punished. I am but the servant of a troop of blind beggars to whom I act as guide."

The genii king signed to his courtiers that he desired to be left alone with Hagag. Then he said: "Hagag, I know thee. I see that thou hast repented. It is well. Now canst thou resume thy rightful place."


"Gracious majesty," said Hagag, "I have learned humility and wisdom. The throne is not for me. The blind beggars need me. Let me remain in their service."

"It cannot be," said the genii. "I see that thou art truly penitent. Thy lesson is learned and my task is done. I will see that the blind beggars lack not."
With his own hands he placed the royal robes on Hagag and himself donned those of the beggar. When the courtiers returned they saw no difference.

Hagag বললেন, “সব বন্দীদের মুক্ত করে এখানে নিয়ে আস।” আর তিনি সবাইকে ঘোড়া, রসদ ও নগত অর্থ দিয়ে বিদায় করে দিলেন নেবু চাঁদ নেজ্জার ব্যতিত।


অার হাগাগ নেবু চাঁদ নেজ্জারকে তার মন্ত্রীর পদ গ্রহণ করতে অনুরোধ করলেন। এ সময় তিনি তার পরিচয় দিলেন। হগাগের দূত ছুটে গেল পারস্যে।


অত:পর অশুরীয় বাহিনী এল। 
তৎক্ষণাৎ সেনাপতি নেবু চাঁদ নেজ্জারকে চিনতে পারল। তাকে স্ব-সম্মানে রাজ্যে ফিরিয়ে আনা হল। নেবু চাঁদ নেজ্জার পুনঃরায় সিংহাসনে বসলেন এবং দানিউবও মুক্ত হয়ে আরো বড় পদে অধিষ্ঠিত হলেন।


আর King Hagagও রাজত্ব করতে লাগলেন sat on his throne again as a monarch who ruled more wisely or showed more kindness and sympathy to all his subjects.


সমাপ্ত।



ছবি: Wikipedia, icfwageningen, teachinghearts, bibleguy.hubpages, worldslastchance, worldsundayschool.


উৎস:

  • Bible, Book of Daniel.
  • Jewish Fairy Tales and Legends, by Aunt Naomi (pseud. Gertrude Landa), [1919]

Moses: কোরাণিক ক্যানভাসে নবী মূসা।

Abu Hena Mostafa Kamal  01 May, 2017 মি সরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ফেরাউন। হঠাৎ করে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। কিন্তু তিনি কোন উত্তরাধিকারী ন...