৮ নভেম্বর, ২০১২

Qiyamah: কেয়ামত ও তার আলামত।

খোদার যাবতীয় সৃষ্টির মধ্যে ফেরেস্তা, জ্বিণ ও ইনসান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। জ্বিণ ও ইনসানকে স্বাধীন করে সৃষ্টি করা হয়েছে অর্থাৎ তারা খোদার আদেশ নিষেধের বিপরীতে কাজ করতে পারে এবং এই কারণে তারা বিচারের অধীন। অন্যদিকে ফেরেস্তাগণ খোদার আদেশ নিষেধের বাইরে কাজ করতে পারে না, আর তাই তারা বিচারের অধীনও নয়। জ্বিণ ও ফেরেস্তাগণ আমাদের নিকট দৃশ্যমান নয়। কারণ আমরা সেই সকল বস্তুই দেখতে পাই যা ৩৯০-৭০০nm ফ্রিকোয়েন্সি সীমায় অবস্থিত। অন্যদিকে জ্বিণ ও ফেরেস্তা ঐ ফ্রিকোয়েন্সি সীমার বাইরের কোন ফ্রিকোয়েন্সিতে সৃষ্ট।

ফেরেস্তাগণের কিছু দৃশ্যলোকে এবং কিছু অদৃশ্যলোকে খোদার আদেশ বাস্তবায়ন করে। প্রতিটি মানুষের সাথে রয়েছে ৪জন ফেরেস্তা-দু’জন চালক বা হেফাজতকারী এবং অপর দু’জন কর্মের তথা আমল লেখক। তবে যে সকল ফেরেস্তা দৃশ্যলোকে কাজ করে তাদের অদৃশ্যলোকে যাবার ক্ষমতা নেই। তাদের যাতায়াতের শেষ সীমানা হল সিদরাতুল মুনতাহা। যাহোক, পৃথিবীতে খোদার নির্দেশ বাস্তবায়নে লক্ষ কোটি ফেরেস্তা নিয়োজিত হলেও প্রধান ফেরেস্তা মাত্র চারজন-


জিব্রাইল: বার্তা বাহকের কাজে।

মিকাইল: মেঘ, বৃষ্টি, চন্দ্র, সূর্য্য তথা মহাবিশ্বসমূহ পরিচালনায়।
আজ্রাইল: প্রাণ সংহরণের কাজে, এবং
ইস্রাফিল: শিঙ্গা মুখে মহাপ্রলয় সংঘটনের অপেক্ষায়।

সত্যি বলতে কি, যেভাবে এতক্ষণ বলা হল, বিষয়টি ঠিক তেমন নয়। মূলত: ফেরেস্তাগণ তাই বাস্তবায়ন করছে যা লেখা আছে বিজ্ঞানময় কিতাবে। এ ঐ কিতাব যা লওহে মাহফুজে সংরক্ষিত। প্রকৃতপক্ষে খোদা সর্বপ্রথম বিশেষ কিছু ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন যারা অতি পুত পবিত্র, অতি মহৎ। আর তাদেরই একদল তাঁর নির্দেশে ঐ কিতাব লিপিবদ্ধ করে এবং অপরদল তার রক্ষণাবেক্ষণে নিয়েজিত হয়। অত:পর যখন ঐ কিতাব অনুসারে বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করা হল, তখন খোদা অপরাপর ফেরেস্তকূল সৃষ্টি করেন, যাদের একদল দৃশ্যলোকে এবং অপরদল অদৃশ্যলোকের নানান কাজে নিয়োজিত হয়। তারপর যখন মহাবিশ্বসমূহ নিয়মিত এবং নিম্নতম মহাবিশ্বের সৌরজগৎগুলোর কিছুকিছু গ্রহ বসবাস উপযোগী হয়ে ওঠে, তখন জ্বিণজাতিকে সৃষ্টি করে খোদা সেসকল স্থানে তাদেরকে বসবাস করতে দেন। সবশেষে সৃষ্টি মানুষ এবং অনেক নাটকীয়তার পর খোদার প্রতিনিধি হিসেবে তাদেরকে দুনিয়াতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অবশ্য ইতিমধ্যে জ্বিণজাতি মানুষকে সরলপথ বিচ্যূত করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে তাদের প্রকাশ্য শত্রু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। 


দৃশ্যমান এ মহাবিশ্ব রূপ-রস-গন্ধে ভরা, খোদার শক্তি, মহত্ব ও করুণার এক অপূর্ব বহি:প্রকাশ। তবে এ জগতের কোন কিছুই অবিনশ্বর নয়। সবকিছুই খোদার নির্দেশে ধ্বংস হবে একসময়। কেননা কোরআনে বলা হয়েছে- আমি পৃথিবীস্থ সবকিছুকে পৃথিবীর জন্যে শোভা করেছি এবং তার উপর যা কিছু রয়েছে, অবশ্যই তা আমি উদ্ভিদ শূন্য মাটিতে পরিণত করে দেব।-(১৮:৭-৮) তবে সেই অনাগত দিনটি কখন আসবে তা মানুষ জানে না, জানে না খোদার কোন মনোনীত বান্দা এমনকি তাঁর কাছের ফেরেস্তাগণও। সত্যি বলতে কি, লওহে মাহফুজের কিতাবে (Book of Life) সবকিছু লিপিবদ্ধ থাকলেও কেয়ামত (Qiyamah) সংঘটনের সময়কাল তাতে নেই। ঐ দিন ও ক্ষণটি কেবল খোদা নিজেই জানেন এবং তিনিই সরাসরি তা সংঘটনের নির্দেশ দেবেন। বলাবাহুল্য, ফেরেস্তা ইস্রাফিল তো সদাপ্রস্তুত। শিঙ্গা মুখেই আছে, কেবল নির্দেশের অপেক্ষা। 


যেদিন ইস্রাফিল খোদার নির্দেশে ঐ শিঙ্গাতে ফুঁক দেবে, সেদিন আসমান জমিন এবং তার মধ্যেকার সবকিছু এমন কি ফেরেস্তাগণও ধ্বংস হয়ে যাবে, মহান আল্লাহ ছাড়া কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। এই নির্দেশ সে ঐ সময় পাবে, যখন কোন মানুষের মধ্যে সৃষ্টিকর্তার ব্যাপারে কোন মাথাব্যাথা থাকবে না। সারা দুনিয়া পরিপূর্ণ হবে বর্বরতা ও গোমরাহীতে। মানুষের মধ্যে না থাকবে পাপ-পূণ্যের বিভেদ, না হারাম-হালালের পার্থক্য। মানুষ নিত্য নতুন বিনোদন খুঁজে ফিরবে। তাদের চরিত্র হবে পশুর মত। তারা হয়ে পড়বে ব্যাভিচারী ও বিকৃত যৌণাচারী। তবে এসব ধারণা মাত্র, এ জন্যে যে, আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, “আমি ঐ জনপদ ততক্ষণ ধ্বংস করি না যতক্ষণ না সেখানকার অধিবাসীরা সীমালংঘণ করে।”-(২৮:৫৯) এভাবে বলা যায়, তিনি দুনিয়া ততক্ষণ ধ্বংস করবেন না যতক্ষণ না সারা দুনিয়ার মানুষ সীমালংঘন করে। 


তবে এতে প্রশ্ন আসে, সেই সীমালঙ্ঘণের সীমা কি? কোরানিক পরিভাষায় খোদায়ী গজব নেমে আসে কেবল, খোদাকে এবং খোদায়ী নিদর্শণাবলীকে অস্বীকার করলে (যা আ’দ ও সামুদ জাতির ধ্বংসের কারণ), খোদার বাণী বা তাঁর রসূলকে অস্বীকার করলে (যা নূহ, শোয়েব ও হুদের জাতির ধ্বংসের কারণ), বা, খোদার বিধানাবলীর বিপরীত কোন চরম ঘৃণ্য কাজ যেমন, সডোমী, হোমোসেক্সচুয়ালিটি বা লেসবিয়ানিজমে লিপ্ত হলে (লূতের কওমের ধ্বংসের কারণ)। তবে যেহেতু খোদায়ী বিধানাবলীর সমাপ্তি ঘটেছে কোরআনের মাধ্যমে, সুতরাং বলা যায়, কেয়ামত তখনি সংঘটিত হবে যখন সারা দুনিয়ার মানুষ খোদায়ী ঐ গ্রন্থকে তাদের পিছনে ফেলে রাখবে।


এক কথায়, কেয়ামত সংঘটিত হবে তখনি, যখন আল্লাহকে স্মরণ, স্বীকার বা তাঁর বিধানাবলী মান্য করার মত কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। আর এমনটা তখনি হবে, যখন প্রযুক্তি জ্ঞানের বিকাশের ফলে মানুষের অভাব-অনটন থাকবে না। অর্থাৎ যখন মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর সকল সামগ্রী সহজলভ্য ও সস্তা হবে। এতে মানুষ যেমন পরিতৃপ্ত থাকবে তেমনি থাকবে খোশহাল ও বিনোদনমুখী। সুতরাং অনুমান করা মোটেও কঠিন নয় কেন খোদাকে স্মরণ এবং স্বীকার করার মত লোক বিরল হবে। তবে এসবই সব নয়, কেয়ামতের পূর্বে কিছু আলামত বা পূর্ব লক্ষণও প্রকাশ পাবে।


প্রথমত: ধরণীতে ঈসা মসীহের পূনরাগমণ হবে। তিনি বলেন, “ As God lives, in whose presence my soul stands, I am a mortal man as other men are, for although God has placed me as prophet over the House of Israel for the health of the feeble and the correction of sinners, I am the servant of God, and of this you are witness, how I speak against those wicked men who after my departure from the world shall annul the truth of my gospel by the operation of Satan. But I shall return towards the end, and with me shall come Enoch and Elijah, and we will testify against the wicked, whose end shall be accursed." -(Barnabas, CH-52)

ঈসার এই আগমন হবে এমন একটা সময়ে যখন এক জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। অনেক জায়গায় দুর্ভিক্ষ ও ভূমিকম্প দেখা দেবে। অধর্মের বৃদ্ধি হওয়াতে মানুষের মধ্যে দয়া-মায়া থাকবে না। সামান্য কারণে তারা একে অন্যেকে হত্যা করবে। ঐ মহাদিন সম্পর্কে মসিহ ঈসা বলেছেন, ”নবী দানিয়েলের মধ্যে দিয়ে যে সর্বনাশা ঘৃণার জিনিষের কথা বলা হয়েছিল, তা তোমরা পবিত্র স্থানে রাখা হয়েছে দেখতে পাবে। তখন যে ইহুদাতে থাকে সে পাহাড়ে পলায়ন করুক, যে ছাদে থাকবে সে জিনিষপত্র নেবার জন্যে নীচে না নামুক; আর যে ক্ষেতে থাকবে সে নিজের বস্ত্র নেবার জন্যে পশ্চাতে ফিরে না আসুক। তখন যারা গর্ভবতী আর যারা সন্তানকে বুকের দুধ দেয় তাদের অবস্থা কি ভীষণই না হবে! প্রার্থনা কর যেন তোমাদের পলায়ন কাল শীতকালে বা বিশ্রামবারে না ঘটে। সেই সময়ে এমন মহা কষ্ট হবে যা দুনিয়ার আরম্ভ হতে এসময় পর্যন্ত কখনও হয়নি এবং ঐ মহাদিনের পূর্বপর্যন্ত হবেও না।”

ঈসা আরও বলেছিলেন, “তখন অনেক ভন্ড খ্রীষ্ট ও ভন্ড নবী আসবে এবং বড় বড় আশ্চর্য কাজ করে দেখাবে, আর তারা মুমিনদেরকেও প্রতারিত করবে। সেসময় many will turn away from the faith and will betray and hate each other, Because of the increase of wickedness, the love of most will grow cold, তাই তোমাদেরকে বলছি, সেদিন যদি কেউ বলে- ”দেখ তিনি প্রান্তরে,” -তোমরা বাইরে যাবে না; যদি বলে ”দেখ, তিনি অন্তরাগারে,” -তোমরা বিশ্বাস কোরও না। কারণ বজ্র যেমন পূর্ব দিক হতে নির্গত হয়ে পশ্চিম দিক পর্যন্ত প্রকাশ পায়, তেমনি আমার আগমন হবে। আকাশে শকুন দেখলে তোমরা বুঝতে পার কোথায় মড়া রয়েছে। তোমরা তা বোঝ কারণ, তোমরা জান- যেখানে মড়া থাকে, সেখানেই শকুন জুটে। সুতরাং,”ঈসা বলেন, “দৃঢ় থেক, কেননা, he who stands firm to the end will be saved.”


ঈসা তার আগমন সম্পর্কে আরও জানিয়েছেন- ‘ডুমুর গাছের দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা নাও; যখন তার শাখা কোমল হয়ে পত্র বের হয়ে আসে, তখন তোমরা জানতে পার গ্রীষ্মকাল সন্নিকটে; সেইরূপ তোমরা ঐ সকল ঘটনা দেখলেই জানবে, তিনি অাসন্ন, এমনকি দ্বারে উপস্থিত। প্রকৃতপক্ষে সেইদিন সেই সময়ের কথা কেউ জানে না, স্বর্গের ফেরেস্তারাও না, আমিও না, কেবল খোদা জানেন। 


নূহের সময় যে অবস্থা হয়েছিল, আমার আসার সময় ঠিক সেই অবস্থাই হবে। বন্যার আগের দিনগুলিতে নূহ নৌকায় না ঢোকা পর্যন্ত লোকেরা খাওয়া দাওয়া করেছে, বিবাহ করেছে এবং বিবাহ দিয়েছে; কিন্তু যে পর্যন্ত না বন্যা এসে তাদের সকলকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল- তারা কিছুই বুঝতে পারল না। আমার আসাও ঠিক সেরকমই হবে। গৃহকর্তা যদি জানতেন কোন সময়ে চোর আসবে, তবে তিনি জেগে থাকতেন, ঘরে তিনি চোর ঢুকতে দিতেন না। সেজন্যে তোমরা প্রস্তুত থেক, কারণ, যে সময়ের কথা তোমরা চিন্তাও করবে না, সেই সময়েই আমি আসব।’


'মহাপ্রলয় কখন হবে'- এ সম্পর্কে আরব দেশে একটা কাহিনী প্রচলিত আছে। কেয়ামত সংঘটনের সময়কাল সম্পর্কে ধারণা পেতে এখন আমরা ঐ কাহিনীটাতে নজর দেব। সৈয়দ আলী এমনই বয়ান করেছেন-


"আল্লাহ একদিন ফেরেস্তা জিব্রাইলকে ডেকে বলবেন, 'হে জিব্রাইল, মর্ত্ত্যে গিয়ে মনুষ্য জাতির কাউকে এই প্রশ্ন শুধোও- 'জিব্রাইল এই মুহূর্তে কোথায় আছেন?'


সুতরাং জিব্রাইল পৃথিবীর কোন এক জনপদে নেমে এল মানুষের বেশে। কিন্তু কাকে জিগায়, সবাই মহাব্যস্ত। যাইহোক, একজনকে সে একাকী পেল। তখন সে তাকে গিয়ে সে বিনয়ের সাথে জিগাইল- 'আচ্ছা ভাই, জিব্রাইল এই মুহূর্তে কোথায় আছেন?'

লোকটা কিঞ্চিত বিরক্ত হয়ে বলল, 'এরকম বেফায়দা প্রশ্ন করে তোমার লাভটা কি? আমার এসবে কোন কৌতুহল নেই, তবে নিতান্তই যখন শুধোলে..-দাঁড়াও বলছি।'
সে দু'এক লহমা চিন্তা করে বলল- 'হু, এই মুহূর্তে সে কোথায় আছে ঠিক বলতে পারছিনে -তবে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই, সে এখন পৃথিবীতে, স্বর্গে নয়।'
জিব্রাইল তখন ফিরে গিয়ে আল্লাহকে উত্তরটা জানাল। তিনি বললেন, 'ঠিক আছে।'

এরপর কেটে যাবে আরও বহু সহস্র বৎসর। তারপর আবারও আল্লাহ- ঐ একই প্রশ্ন, একই ভাবে শুধোবার জন্যে জিব্রাইলকে পৃথিবীতে পাঠাবেন। এবারে যে মর্ত্যবাসীকে জিব্রাইল শুধোল, সে বিরক্ত হল আরও বেশী, বলল, 'কি আশ্চর্য! এখনও মানুষ এরকম অসার আর ফালতু প্রশ্ন নিয়ে আছে! তবে হিসেব কষলে যে এরকম প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় না তা নয়, আচ্ছা....'-এক সেকেন্ড চিন্তা করে- 'স্বর্গে তো নয়, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে..,'-ফের দু'সেকেন্ড চিন্তা- 'পৃথিবীতেই!.. দাঁড়াও, হ্যাঁ, কাছে পিঠেই কোথাও আছে।'

লোকটি চলে গেল। এবারও জিব্রাইল ফিরে গিয়ে আল্লাহকে সব কিছু বয়ান করলেন। আল্লাহ বললেন, 'ঠিক আছে।'

তারপর কেটে যাবে আরও কয়েক হাজার কিম্বা লক্ষ বৎসর। অত:পর জিব্রাইল সেই একই প্রশ্ন নিয়ে মর্ত্ত্যে আসবেন। এবার যাকে শুধান হল, সে তো রীতিমত চটে গেল - 'এই যুগে এমন প্রশ্ন! ওই মিয়া! তুমি কি বেওকুফ?'


লোকটার কথা শুনে জিব্রাইল বেচারা বেশ লজ্জিত হয়ে পড়ল। তা দেখে লোকটা নরম হয়ে বলল, 'আচ্ছা দেখি! হিসেব করলে অবশ্য বলা যায়, হুঁ:, স্বর্গে নয়, পৃথিবীতে।..........কাছে-পিঠে কোথাও....' -দু' এক সেকেন্ড পর- 'কী আশ্চর্য !....আরে, তুমিই তো জিব্রাইল! আবার শুধোও কেন?' লোকটি বিরক্তি নিয়ে চলে গেল। আর জিব্রাইল গিয়ে এসব খবর দিলে আল্লাহ ফেরেস্তা ইস্রাফিলকে বলবেন- 'শিঙ্গায় ফুঁক দাও।' এতে ইস্রাফিল শিঙ্গাতে ফুঁক দেবে, আর তাতেই মহাপ্রলয় শুরু হয়ে যাবে।


এ কাহিনীর তাৎপর্য আসলে কি?

প্রথমতঃ মানুষ তখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করে করে এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছবে যে স্বর্গের খবর পর্যন্ত তার অজানা থাকবে না।

দ্বিতীয়তঃ মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান বিদ্যাচর্চার একমাত্র উদ্দেশ্য হবে সাংসারিক, বৈষয়িক, প্র্যাকটিক্যাল জিনিস নিয়ে। ইহলোক ভিন্ন পরলোক, পাপ-পুণ্যের বিচার, সে স্বর্গে যাবে, না নরকে-এ সম্বন্ধে তার কোন কৌতুহল কিম্বা মাথাব্যাথা থাকবে না, কারণ আমরা দেখলাম স্বয়ং জিব্রাইলকে হাতের কাছে পেয়েও লোকটি এসবের কোন অনুসন্ধান করেনি। এমন কি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রতিও সে চরম উদাসীন।


তৃতীয়তঃ যেহেতু মানুষ সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব, তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ উদাসীন, অতএব কল্পনা করা কঠিন নয় যে, তারা তখন বিশ্বভুবনকে তাদের খেয়ালখুশী, মর্জি-মাফিক নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টায় লেগে থাকবে।"


যাহোক, কেয়ামতের অবশ্য আরও কিছু পূর্ব আলামত প্রচলিত আছে। প্রথম আলামত হিসেবে দজ্জালের আগমন হবে। সে বয়সের দিক দিয়ে যুবক হবে। তার মাথার কেশরাজি কোঁকড়ান আর চেহারা হবে কুৎসিত। তার একটি চক্ষু এমন হবে যেন তা উপরে উঠান একটি মাংসের টুকরো এবং অপর চক্ষুটি হবে কানা। হাদিসের কিতাবগুলোতে এমনই রয়েছে- 


আবু হুরায়রা বর্ণিত-"The Hour will not be established until two big groups fight each other whereupon there will be a great number of casualties on both sides and they will be following one and the same religious doctrine, until about 30 dajjals appear, and each of them will claim that he is Allah's Apostle..." — Sahih al-Bukhari, Volume 9, Book 88: Hâdith 237.


সামরা ইবনে জুন্দাব বর্ণিত, নবীজী (while delivering a ceremonial speech at an occasion of a solar eclipse)  বলেন,-"Verily by Allah, the Last Hour will not come until 30 dajjals will appear and the final one will be the One-eyed False Messiah."-ইবনে হাম্বল, তাবারানী।


আনাস ইবনে মালিক বর্ণিত: "There is never a prophet who has not warned the Ummah of that one-eyed liar; behold he is one-eyed and your Lord is not one-eyed.[-Sahih Muslim, 41:7007] Dajjal is blind of one eye[-Sahih Muslim, 41:7009] On his forehead are the letters KFR (Kafir)[-Sahih Muslim, 41:7007] between the eyes of the Dajjal[-Sahih Muslim, 41:7008] which every Muslim would be able to read."[-Sahih Muslim, 41:7009][- "The Signs Before the Day of Judgment by Ibn Kathîr".]


যা হোক, সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যবর্তী স্থানে কোন এক রাস্তায় দজ্জাল আত্মপ্রকাশ করবে। তারপর রাস্তার উভয় পার্শ্বে সে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করবে। এভাবে চল্লিশ দিন পর্যন্ত বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে সে সামনের দিকে অগ্রসর হবে। তার ফেৎনা সৃষ্টির প্রথম দিনটি এক বৎসরের ন্যায়, দ্বিতীয় দিনটি এক মাসের ন্যায়, তৃতীয় দিনটি এক সপ্তাহের ন্যায় এবং অন্যান্য দিনগুলি সাধারণ দিনের মত হবে। দজ্জালের গতির দ্রুততা এমন হবে যেন তার পিছনে বায়ু ধাবমান বলে মনে হবে। সে সমগ্র ভূ-খন্ডে বিচরণ করবে কিন্তু চারটি উপাসনালয়ের ত্রিসীমানায় পৌঁছুতে পারবে না। এগুলি হল- মসজিদে নব্বী -মদিনা, কা’বা শরীফ -মক্কা, মসজিদে আকসা -জেরুজালেম ও মসজিদে তূর -মদিয়ান।


দজ্জাল কোন এক সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে তাদেরকে তার মতাদর্শের প্রতি আহবান জানাবে। তারা তার প্রতি ঈমান আনবে। সে তখন আসমানের প্রতি বৃষ্টি বর্ষণের নির্দেশ দেবে। আর তাতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। আর সাথে সাথে জমিন হতে গাছপালা উদ্গত হবে। ঐ সম্প্রদায়ের পালিত পশুরা নব উদগত গাছপালা ভক্ষণ করে মোটা তাজা হবে আর তাদের স্তনসমূহ দুধে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে।


এরপর সে অন্য এক সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে এবং তাদেরকে তাকে খোদা বলে স্বীকার করতে আহবান জানাবে। কিন্তু ঐ সম্প্রদায়ের লোকেরা তার প্রতি ঈমান আনবে না এবং তাকে খোদা বলে স্বীকার করবে না। দজ্জাল তাদের থেকে ফিরে যাবে। সম্প্রদায়ের লোকেরা পরদিন ঘুম থেকে উঠে তাদের ঘরে কোন রকম মাল-সম্পদ দেখতে পাবে না। আর তাদের এলাকাও সম্পূর্ণ উজাড় হয়ে যাবে। দজ্জাল তখন পুনঃরায় তাদের কাছে আগমণ করবে। সে উজাড় জমিনের দিকে চেয়ে বলবে, ‘হে জমিন! তোমার নীচে যে সম্পদ গচ্ছিত আছে তা বের করে দাও।’


তার নির্দেশের সাথে সাথে জমিনের নীচে গচ্ছিত সম্পদ বের হয়ে আসবে। চারিদিকে গাছপালা উদ্গত হয়ে সবুজ শ্যামল হয়ে যাবে। নানারকম ফলমূল গাছে গাছে শোভা পাবে। এইসব দেখে উক্ত সম্প্রদায়ের এক যুবক তাকে বলবে, ‘তুমি নিশ্চয়ই সেই দজ্জাল।’


একথা শুনে সে উপস্থিত লোকদেরকে বলবে, ‘লোক সকল! যদি আমি এই ব্যক্তিকে হত্যা করে পুনঃরায় জীবিত করে দেই তবে, আমি যে সৃষ্টিকর্তা খোদা এ ব্যাপারে তোমরা সন্দেহ পোষণ করবে কি?’

সকলে উত্তরে বলবে, ‘না।’

তখন সে যুবকটিকে তরবারীর এক আঘাতে দ্বিখন্ডিত করে ফেলবে এবং কোন স্থান হতে তীর নিক্ষেপ করলে সাধারণত তীর যতটুকু পথ অতিক্রম করে দজ্জাল উক্ত যুবকের খন্ডিত দেহের টুকরোও ততদূর নিক্ষেপ করবে। এরপর সে যুবককে ডাক দেবে। খন্ডিত টুকরোদ্বয় একত্রে মিলিত হবে, আর যুবক জীবন লাভ করে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসবে। তারপর, দজ্জালকে লক্ষ্য করে বলবে, ‘আমি এখন নিশ্চিত যে তুমিই দজ্জাল।’ এতে সে তাকে পুনঃরায় হত্যা করতে চাইবে কিন্তু তাকে বা আর কাউকে অতঃপর সে হত্যা করতে সমর্থ হবে না।


কথিত অাছে- আল্লাহ নাকি এসময়ই ঈসাকে প্রেরণ করবেন। আসমানে তার চিহ্ন দেখা দেবে। মানুষ তাকে শক্তি ও মহিমার সাথে মেঘে করে আসতে দেখবে। জোরে জোরে তুরী বেজে উঠবে, আর তিনি দামেস্কের মসজিদের পূর্ব প্রান্তের সাদা মিনারের কাছে অবতরণ করবেন। তার পরণে থাকবে জাফরান রঙের পোষাক, আর দু‘জন ফেরেস্তার ডানায় ভর দিয়ে তিনি নেমে আসবেন। তিনি যখন শির নীচু করবেন তখন ঘর্মাক্ত হয়ে পড়বেন। আবার যখন শির উপরের দিকে উত্তোলন করবেন, তখন মনিমুক্তার ন্যায় ঘর্ম তার মুখমন্ডল থেকে ঝরে পড়বে। তিনি আবির্ভূত হয়েই দজ্জালকে খুঁজতে থাকবেন। অবশেষে সিরিয়ার লুদ পাহাড়ের নিকটবর্তী এক স্থানে তাকে পাবেন এবং সেখানেই তাকে হত্যা করবেন। 


যবুরে আছে-

‘তোমার দক্ষিণে স্থিত প্রভু আপন ক্রোধের দিনে রাজগণকে চূর্ণ করবেন।
তিনি জাতিদের মধ্যে বিচার করবেন, তিনি শবে দেশ পূর্ণ করবেন;
তিনি বিস্তীর্ণ দেশে মস্তক চূর্ণ করবেন;
তিনি পথিমধ্যে স্রোতের জল পান করবেন;
এই জন্যে মস্তক তুলবেন।’ --(যবুর ১১০:৫-৭)

এসময় সম্প্রদায়ের লোকজন ঈসার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তাকে খুঁজে ফিরবেন। অবশেষে একদল তার সাক্ষাত পাবেন। এরপর ঈসার প্রতি ওহী নাযিল হবে, ‘হে ঈসা! আমার এমন কতকগুলি বান্দা বের হয়ে আসছে যাদের মোকাবেলায় তোমরা সমর্থ নও।’


তখন ফেরেস্তারা দুনিয়ার একদিক হতে অন্যদিক পর্যন্ত চারিদিক থেকে মুমিন ব্যক্তিদেরকে একত্রিত করবেন। তখন যারা দু‘জন ক্ষেতে থাকবে, একজনকে নিয়ে যাবে এবং অন্যজনকে ছেড়ে যাবে; দু‘জন স্ত্রীলোক যাতা পিষবে, একজনকে নেয়া হবে এবং একজনকে ছেড়ে যাবে। এই পরিত্যক্ত লোকগুলো কারা? যারা সতর্ক থাকবে না। যারা এইরকম চরিত্রের হবে- ‘মনিব আসতে দেরী আছে, এই অবসরে একটু আমোদ প্রমোদ করেনি।’


অবশেষে ঈসা ফেরেস্তাদের সংগৃহীত মুমিনদেরকে নিয়ে সিয়োন পর্বতে আশ্রয় নেবেন। নবী জোয়েল এই দিনগুলি সম্পর্কে বলেছেন-


‘আর আমি আকাশে ও পৃথিবীতে অদ্ভুত লক্ষণ দেখাব, 

-রক্ত, অগ্নি ও ধূম স্তম্ভ ।
খোদার ঐ মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিনের আগমনের পূর্বে,
সূর্য্য অন্ধকার ও চন্দ্র রক্তিম হয়ে যাবে,
আর যে কেহ খোদার নামে ডাকবে, সেই রক্ষা পাবে; কারণ,
খোদার বাণী অনুসারে সিয়োন পর্বতে ও জেরুজালেমে রক্ষাপ্রাপ্ত দল থাকবে, এবং 
পলাতক সকলের মধ্যে এমন লোক থাকবে,
যাদেরকে খোদা ডাকবেন।’--(জোয়েল ২:৩০-৩২)

আল্লাহ ইয়াজুজ মাজুজের সম্মুখ থেকে প্রতিবন্ধকতা দূর করে দেবেন। তারা প্রত্যেক উচ্চভূমি থেকে দলে দলে দৌঁড়িয়ে বের হয়ে আসবে। তাদের প্রথম দলটি এতবড় হবে যে তারা তাবরিয়া নামক একটি উপসাগরের পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করার সময় পিপাসা দূর করতে পানি পান করে সাগরের সমস্ত পানি নিঃশেষ করে ফেলবে। ফলে সাগরটি সম্পূর্ণ শুস্ক হয়ে যাবে। অপর দলটি সেখানে উপস্থিত হয়ে পরস্পর পরস্পরকে বলতে থাকবে, ‘হয়তোবা এখানে কোনদিন পানি ছিল।’


ইয়াজুজ মাজুজ সম্মুখ পানে ছুটে চলবে। অবশেষে জেরুজালেমের কাছে ‘জাবালুল খমর’ নামক এক পাহাড়ের কাছে এসে পৌঁছিবে। পথিমধ্যে তারা যাকে পাবে হত্যা করতে থাকবে। এই পাহাড়ের কাছে এসে তারা বলবে-‘ভূ-পৃষ্ঠের উপর বসবাসকারী সমস্ত মানুষকে আমরা হত্যা করে ফেলেছি। এখন রয়েছে আসমানবাসীরা।’ এরপর তারা আসমানবাসীদের হত্যার উদ্দেশ্যে উর্ধ্বপানে দিকে তীর নিক্ষেপ করবে। তাদের তীর রক্ত রঞ্জিত হয়ে ফেরৎ আসবে। তখন তারা ধারণা করবে আসমানবাসীদেরকেও তারা হত্যা করতে সমর্থ হয়েছে।


ইয়াজুজ-মাজুজ এর কাহিনী কোরআনে বর্ণিত আছে। এই ইয়াজুজ-মাজুজ পাহাড়ের গুহায় নিরাপদে বসবাস করত এবং লোকালয়ে বেরিয়ে এসে সর্বদা অশান্তি সৃষ্টি করত; সাবার বাদশা জুলকারনান দিক ভ্রমণে পৃথিবীর এক প্রান্তে পৌঁছিলে সেখানকার অধিবাসীগণ তার নিকট অনুরোধ করে যেন তিনি তাদের ও ওদের মধ্যে এক মজবুত প্রাচীর গড়ে দেন। তারা তাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য করবে এই শর্তে জুলকারনাইন ঐ প্রাচীর নির্মাণ করে দিতে সম্মত হন।


জুলকারনাইন গলিত লোহা ও তামার সাহায্যে এক মজবুত প্রাচীর গড়ে তুলেছিলেন। ফলে ইয়াজুজ ও মাজুজ তা পার হতে পারল না বা ভেদ করতেও পারল না। তারা ঐভাবেই আটক রয়ে গেল। প্রাচীর নির্মাণের পর জুলকারনাইন বলেছিলেন, ‘এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। যখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি পুর্ণ হবে তখন তিনি ওকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন, আর আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্যি।’


জবাবে আল্লাহ জানিয়েছিলেন, ‘সেদিন (কেয়ামতের দিন) আমি ওদেরকে দলে দলে তরঙ্গের আকারে ছেড়ে দেব, আর শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। তারপর আমি ওদের সকলকেই একত্রিত করব।’


কথিত আছে, ইয়াজুজ-মাজুজ প্রতিদিনই প্রাচীর ভেদ করার জন্যে খোঁড়া খুড়ি করে। খুঁড়তে খুঁড়তে তারা যখন তারা প্রাচীর ছিদ্র করার শেষ সীমায় পৌঁছে, তখন তারা এই বলে ফিরে যায় যে ‘বাকীটুকু আমরা আগামীকাল খুঁড়ব।’ কিন্তু তারা সর্বদা নিজেদের আত্মবিশ্বাসের উপর নির্ভর করে, তাই বলে না ইনশাল্লাহ বা আল্লাহ চাইলে। এ কারণে আল্লাহ প্রাচীরটি পুনঃরায় পূর্ববৎ মজবুত অবস্থায় ফিরিয়ে দেন। পরের দিন ইয়াজুজ-মাজুজ প্রাচীর খননে নুতন ভাবে আত্মনিয়োগ করে। এ ধারা ততদিন চলবে যতদিন আল্লাহর ইচ্ছে। অতঃপর সেইদিন আসবে যেদিন তারা কাজ শেষে বলবে, ‘ইনশাল্লাহ বাকীটুকু আমরা আগামীকাল শেষ করব।’


আর পরদিন তারা প্রাচীরগাত্র ঐ অবস্থায় পাবে যে অবস্থায় বিগতদিন তারা তা রেখে গিয়েছিল। তারা অল্প সময়ের মধ্যে একটা ছিদ্র তৈরী করে ফেলবে এবং ঐ ছিদ্রপথ দিয়ে তারা স্রোতের মত বেরিয়ে আসতে থাকবে। কোরআনে রয়েছে- 


‘সে (জুলকারনাইন) বলল, ‘এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। যখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি পুর্ণ হবে তখন তিনি ওকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন, আর আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্যি।’ 

সেদিন আমি ওদেরকে দলে দলে তরঙ্গের আকারে ছেড়ে দেব, আর শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। তারপর আমি ওদের সকলকেই একত্রিত করব।-(১৮:৯৭--৯৯) আর নিশ্চয়তা দিয়ে এভাবেও বলা হয়েছে, কেয়ামত ততক্ষণ হবে না- যে পর্যন্ত না ইয়াজুজ-মাজুজকে বন্ধন মুক্ত করে দেয়া হবে এবং তারা প্রত্যেক উচ্চভূমি থেকে দ্রুত ছুটে আসবে।-(২১:৯৬)

এদিকে ঈসা ও তার অনুসারীরা তূরপাহাড়ে আবদ্ধ হয়ে রয়েছেন। পাহাড়ের উপর তাদের দীর্ঘ অবস্থানের ফলে তাদের কাছে মজুদ খাদ্য-সম্ভার সব ফুরিয়ে যাবে একসময়। মানুষ ক্ষুধায় হাহাকার করতে থাকবে। উপায়ন্তর না দেখে ঈসা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবেন। আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করবেন এবং ইয়াজুজ মাজুজের প্রতি শাস্তি নেমে আসবে। তাদের গর্দানে এক প্রকার পোঁকা দেখা দেবে। পোঁকার কামড়ে তারা সব একরাত্রে মরে যাবে।


এরপর ঈসা ও তার অনুগামীরা পাহাড় থেকে নেমে আসবেন। তারা দেখবেন যে জমিনের সর্বত্র ইয়াজুজ-মাজুজের শবদেহে পরিপূর্ণ, কোথাও পা ফেলার স্থানটুকু নেই। তাদের শবদেহ পচে গলে যাওয়ায় চারিদিকে শুধু অসহ্য দুর্গন্ধ। আর এই দূর্গন্ধ থেকে রেহাই পেতে ঈসা ও অন্যান্য মুসলমান আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করবেন। তখন আল্লাহ উটের মত বড় বড় পাখী প্রেরণ করবেন। পাখীগুলি এসে ঠোঁট এবং পায়ের চংগলের মাধ্যমে শবদেহগুলি উঠিয়ে নিয়ে নাবহল নামক স্থানে নিক্ষেপ করবে। লাশ দূরীভূত হওয়ার পর লোকেরা শুধু ইয়াজুজ-মাজুজদের তীর ধনুক মাটিতে পড়ে থাকতে দেখতে পাবে।


এরপর আল্লাহ বৃষ্টি প্রেরণ করবেন। বৃষ্টির পানিতে সবকিছু ধৌত হয়ে পরিস্কার হয়ে যাবে। আর দুনিয়াও দূর্গন্ধ মুক্ত হবে। এসময় আল্লাহ জমিনকে সম্বোধন করে বলবেন, ‘হে জমিন! তুমি ফল উদ্গত কর, পুনঃরায় তোমার বরকত প্রদর্শণ কর।’


তখন শস্যকনা ও ফল ফুলে এত বরকত হবে যে, একদল লোক একটি ডালিম খেয়ে তৃপ্তি লাভ করবে। আর সেই ডালিমের নিক্ষিপ্ত বাকলের নীচের ছায়াতে একজন লোক বসে আরাম করতে পারবে। তখনকার গৃহপালিত পশুর দুধে এত বরকত হবে যে, মাত্র একটি গরুর দুধ এক সম্প্রদায়ের লোক পান করে তৃপ্তি লাভ করবে।


এভাবে ঈসার সাহায্যে সকল মুসলমান সমস্ত রকম ফেতনা ফ্যাসাদ থেকে নিরাপদ থাকবে। তিনি সাত বৎসর মুসলমানদের নেতৃত্ব দেবেন এবং মুসলিম সাম্রাজ্যের শাসন পরিচালনা করবেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি বিবাহ করবেন। তার রাজত্বকালে পৃথিবীতে শান্তির রাজ্য কায়েম হবে। 


চল্লিশ বৎসর বয়সে (পূ্র্বের ৩৩+ পরবর্তী ৭) ঈসা মৃতুবরণ করবেন এবং মুহম্মদের সমাধির পাশে তাকে সমাহিত করা হবে ঐ স্থানটি ঐ সময় পর্যন্ত তার দাফনের জন্যে খালি পড়ে থাকবে। 
ঈসার ২য় আগমনকালীন জীবনাচার সম্পর্কে যবুরে আছে-

"ছিন্নতৃণ মাঠে বৃষ্টির ন্যায়, ভূমি সিঞ্চনকারী জলধারার ন্যায় সে নেমে আসবে।

তার সময়ে ধার্মিক প্রফুল্ল হবে, চন্দ্রের স্থিতিকাল পর্য্যন্ত প্রচুর শান্তি হবে।
সে এক সমুদ্র অবধি অপর সমুদ্র পর্য্যন্ত, ঐ নদী অবধি পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত কর্ত্তৃত্ব করবে।
তার সম্মুখে মরুনিবাসীরা নত হবে, তার শত্রুগণ ধূলা চাটবে।
লোকে তার নিমিত্ত নিরন্তর প্রার্থনা করবে, সমস্ত দিন তার ধন্যবাদ করবে।......

.....দেশ মধ্যে, পর্বত-শিখরে প্রচুর শস্য হবে,

তার ফল লেবাননের এরস বৃক্ষের ন্যায় বাতাসে দোলায়মান হবে;
এবং নগরবাসীরা ভূমির তৃণের ন্যায় প্রফুল্ল হবে।------(যবুর ৭২:৬-১৬)

রোগ-ব্যাধি, অভাব-অনাটন না থাকায় মানুষ আস্তে আস্তে খোদাকে ভুলে যাবে। অত:পর আসবে কেয়ামত। এসময়ই আলামত হিসেবে ভূ-গর্ভ থেকে একটি কিম্ভূতকিমাকার জীব বের হয়ে আসবে। এই অদ্ভুত আকৃতি বিশিষ্ট জীবটি সাধারণ জন্তুদের প্রজনন প্রক্রিয়া মোতাবেক জন্মগ্রহন করবে না, বরং অকষ্মাৎ ভূ-গর্ভ থেকে রেরিয়ে আসবে। সম্ভবতঃ এটি মক্কার সাফা পর্বত থেকে বের হয়ে। তারপর মাথার ধুলি ঝাড়তে ঝাড়তে কা’বাগৃহের কৃষ্ণপ্রস্তর ও মকামে ইব্রাহিমের মাঝখানে পৌঁছে যাবে। মানুষ একে দেখে পালাতে থাকবে, কিন্তু কেউই তার নাগালের বাইরে থাকতে পারবে না। এক সময় সে ভূ-পৃষ্টে বিচরণ করতে শুরু করবে এবং সমগ্র বিশ্ব পরিভ্রমণ করবে। সে মুমিন ও অবিশ্বাসীদেরকে চিনবে এবং তাদের সকলের সাথে কথা বলবে এবং প্রত্যেক অবিশ্বাসীর কপালে একটি বিশেষ চিহ্ন একে দেবে। সে অনেক নিদর্শণ দেখাবে, এটা এ কারণে যে, মানুষ খোদায়ী নিদর্শণে বিশ্বাস করত না। 


কোরআনে বলা হয়েছে- যখন প্রতিশ্রুত কেয়ামত সমাগত হবে, তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি জীব নির্গত করব। সে মানুষের সাথে কথা বলবে। এ কারণে যে মানুষ আমার নিদর্শণ সমূহে বিশ্বাস করত না।-(২৭:৮২)


অবশেষে সেইদিন আসবে যেদিন ইস্রাফিল প্রভুর পক্ষ থেকে এই ভয়ানক আদেশ প্রাপ্ত হবে। কথিত আছে, সেই অনাগত ভয়ানক দিনটি হবে কোন এক মহরম মাসের দশ তারিখে, শুক্রবার খুব ভোরে সূর্যোদয়ের নিকটবর্তী সময়ে, যখন মানুষ নিজ নিজ বিছানা হতে গাত্রত্থান করে নিজ নিজ কাজে যাবার প্রস্তুতি নেবে বা কাজে লিপ্ত হবে। সূর্যের কিরণ চমকাতে থাকবে, ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ দোকান বা কারখানা খোলার প্রস্তুতি নেবে। চাষী, হাল চাষের কাজ শুরু করবে। গৃহিনীদের কেউ গৃহ পরিচ্ছন্নের বা কেউ খাবার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকবে। আর ঐ সময়ই হঠাৎ করে বাঁশীর মিহীন সূর তাদের কানে ভেসে আসবে। যার কানে এ সূর প্রবেশ করবে, সে তার কাজ বন্ধ করে কান লাগিয়ে তা শুনতে থাকবে। আর মনে মনে বলতে থাকবে, ‘কি অপুর্ব, মধুর সূর! আজ পর্যন্ত তো এরূপ সুমধুর সূর তো আমি কখনও শুনিনি।’ মানুষের অন্তরস্পর্শী ঐ সুমধুর সূর বিরতিহীন ভাবে বাজতেই থাকবে। 


নিম্নগ্রামে এ সূর শুরু হলেও আস্তে আস্তে তা উচ্চগ্রামের দিকে ধাবিত হবে। ফলে একসময় সকলের কানেই আকর্ষণীয় এ আওয়াজ প্রবেশ করবে। নারী-পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা নির্বিশেষে সকলেই ঐ আওয়াজের প্রতি আকর্ষিত হবে। সকলেই তখন নিজ নিজ কাজ-কারবার ফেলে কায়মনে ঐ আওয়াজের দিকে মনোযোগী হবে। শহর, গ্রাম, শহরতলী বা পাহাড়ী- মানুষ যে এলাকারই হোক না কেন, তারা এ ধারণা করতে থাকবে যে, এ আকর্ষণীয় সূর তার এলাকার অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসছে। সুতরাং আর তারা ঐ মন মাতান সূরের উৎস সন্ধানে বেরিয়ে পড়বে। 


মানুষ সূরের উৎস খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়বে, কিন্তু কেউই নির্দিষ্ট করে বলতে পারবে না যে, এ আওয়াজ কোথা থেকে বা কোনদিক থেকে আসছে। বরং চতুর্দিকেই এই আওয়াজ সমভাবে ধ্বনিত হবে। আস্তে আস্তে সূরের তীব্রতা বাড়তে থাকবে। এই আওয়াজ যতই বাড়তে থাকবে ততই তা মানুষকে এবং সকল পশু-পাখী, কীট-পতঙ্গ, এমনকি সামুদ্রিক প্রাণীকেও বিভোর করে ফেলবে। পশুরা ঐ সূরে ব্যাকূল হয়ে পাগলের মত ছুটাছুটি করতে থাকবে, জঙ্গল ছেড়ে মানুষের ভীড়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। 


প্রথমদিকে ঐ আওয়াজ বাঁশীর মিহিন সূরের ন্যায় মানুষের হৃদয়গ্রাহী হলেও একসময় তা পরিবর্তিত হবে। অবশ্য পরিবর্তনটা হবে খুবই ধীরে। আর যখন তা পরিবর্তিত হতে হতে কর্কশ ও ভীতিপূর্ণ হয়ে যাবে, ঐসময় শ্রোতারা মনে মনে ভাবতে থাকবে, ‘এমন মধুর সূর, এমন বিভৎস্ আওয়াজে পরিবর্তিত হল কেন? এ তো ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হল?’


একসময় আওয়াজের কাঠিণ্যতা মূহুর্তের পর মূহুর্তে বদলাতে থাকবে এবং তা বিভৎসতর হতে থাকবে। ঐ সময় আকাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যেতে থাকবে। একসময় এমন অবস্থার সৃষ্টি হবে যেমন বৃষ্টির সময় মেঘের গর্জন হতে থাকে। অনবরত আওযাজ বজ্রপাতের ন্যায় গর্জিতে থাকলে একসময় মানুষ ভীষণ ভীত হয়ে পড়বে। তাদের লক্ষ্য হবে কেবল নিজেকে রক্ষা করা, কোন মূল্যবান সম্পদই তাদেরকে আর আকর্ষণ করবে না। মানুষ কেবল ছুটোছুটি করে বিভিন্নদিকে পালাতে থাকবে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। কিন্তু পালাবে কোথায়?


অবশেষে ঐগর্জণরূপী আওয়াজ আরও বেড়ে যাবে এবং আকাশে বিজলী গর্জার সাথে সাথে হাজার হাজার বজ্রপাত জমিনের উপর এসে পড়তে থাকবে। তখন সকলের অবস্থা এমন হবে যে তারা সবাই নিজের শক্তি হারিয়ে ফেলবে। তারা তখন কেবল বার বার উর্দ্ধে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে থাকবে। তারা নিশ্চিত হয়ে যাবে এটা মহাপ্রলয়-পৃথিবী ধ্বংসের দিন। তারা কেবলই বলতে থাকবে, ‘হায় আমাদের দুর্ভাগ্য, এ তো কেয়ামত দিবস! আমরা এ বিষয়ে বেখবর ছিলাম; বরং আমরা গোনাহগারই ছিলাম।’


মহাপ্রলয়ের দিনগুলো সম্পর্কে আল্লাহ বলেন- ‘হে মানব গোষ্ঠী! তোমাদের শক্তি ও ক্ষমতা সম্পর্কে একটু চিন্তা কর। তোমাদের অস্তিত্ব, তোমাদের স্থায়িত্ব। তোমাদের ক্ষমতা, এ তো সামান্য কারণে ধ্বংস প্রাপ্ত। তোমরা তো সামান্য কারণে ভয় পেয়ে থাক, অথচ কেয়ামত দিবসের কম্পন খুবই ভয়াবহ ও কঠিন হবে। পাহাড়-পর্বত যা কিছু আছে, সবই কম্পনের ফলে ধূঁয়ার ন্যায় উড়ে যাবে। হে মানব সম্প্রদায়! ঐদিন তোমরা স্বচক্ষে দেখতে পাবে। সেদিন সকল জীবকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’


আমি পৃথিবীস্থ সবকিছুকে পৃথিবীর জন্যে শোভা করেছি এবং তার উপর যা কিছু রয়েছে, অবশ্যই তা আমি উদ্ভিদ শূন্য মাটিতে পরিণত করে দেব।-(১৮:৭-৮) সেদিন সূর্য্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে।–(৭৫:৯) পাহাড় সমূহকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দেয়া হবে। পৃথিবীকে করা হবে মসৃণ সমতল ভূমি। তাতে তোমরা কোন মোড় ও টিলা দেখতে পাবে না।-(২০:১০৫-১০৬)


যখন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে-একটি মাত্র ফুৎকার, সেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে।-(৬৯:১৩) শিঙ্গার ঐ ফুৎকার ভয়াবহ শব্দের আকারে মানুষকে আঘাত করবে তাদের পারস্পরিক বাক-বিতন্ডা কালে।–(৩৬:৪৯) সেদিন পর্বতমালা উত্তোলিত হবে ও চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়া হবে,-(৬৯:১৪) অত:পর তা হয়ে যাবে ধুনিত রঙ্গীন পশমের ন্যায়।-(১০১:৫) সেদিন মানুষ বলবে, ‘পালানোর জায়গা কোথায়?’-(৭৫:১০)


কেয়ামত আসবে অতর্কিত ভাবে, অতঃপর মানুষকে তা হতবুদ্ধি করে দেবে, তখন তারা তা রোধ করতেও পারবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হবে না।-(২১:৪০) সেদিন আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছে করবেন, তারা ব্যতিত নভঃমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যারা আছে, তারা সবাই ভীত-বিহব্বল হয়ে পড়বে।-(২৭:৮৭) আকাশ বিদীর্ণ হবে, আর তা রক্তবর্ণে রঞ্জিত চামড়ার মত হয়ে যাবে।-(৫৫:৩৭) প্রবল ভাবে প্রকম্পিত হবে পৃথিবী এবং পর্বতমালা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। তারপর তা হয়ে যাবে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণা।-(৫৬:৪-৬) 


শিঙ্গায় দেয়া ফুঁক তো হবে কেবল এক মহানাদ।-(৩৭:১৯) তা হবে কর্ণবিদারী, ফলে আসমান ও জমীনে যারা আছে, সবাই বেঁহুস হয়ে যাবে।-(৩৯:৬৮) নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন হবে একটি ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যেদিন মানুষ তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন প্রত্যেক স্তন্যদাত্রী তার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে বিষ্মৃত হবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত ঘটাবে এবং মানুষকে দেখাবে মাতালের মত; অথচ তারা মাতাল নয়।-(২২:১-২) মোটকথা, আসমান ও জমিনের জন্যে কেয়ামত হবে অতি কঠিন বিষয়।–(৭:১৮৭)


সেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত।-(১০১:৩-৪) তারা পলায়ন করবে তার ভ্রাতার কাছ থেকে, তার মাতা, তার পিতা, তার পত্নী ও তার সন্তানদের কাছ থেকে।-(৮০:৩৩-৩৬) বন্ধু, বন্ধুর খোঁজ নেবে না, যদিও একে অপরকে দেখতে পাবে। আর গোনাহগার পণ স্বরূপ দিতে চাইবে তার সন্তান-সন্তুতিকে, তার স্ত্রীকে, তার ভ্রাতাকে, তার গোষ্ঠীকে, যারা তাকে আশ্রয় দিত এবং পৃথিবীর সবকিছুকে, অতঃপর নিজেকে রক্ষা করতে চাইবে।-(৭০:৯-১৪) কেয়ামত হবে ঘোরতর বিপদ ও তিক্ততার।-(৫৪:৪৬)


সেদিন সূর্য্য আলোহীন হয়ে যাবে, নক্ষত্র মলিন হয়ে যাবে, পর্বতমালা অপসারিত হবে; দশ মাসের গর্ভবতী উষ্ট্রী সমূহ উপেক্ষিত হবে, বন্য পশুরা একত্রিত হয়ে যাবে, সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে।-(৮১:১-৬) আকাশ হবে গলিত তামার মত এবং পর্বত সমূহ হবে রঙ্গীন পশমের মত।-(৭০:৮) আকাশ ধূঁয়ায় ছেয়ে যাবে -(৪৪:১০) অগ্নি স্ফূলিঙ্গ ও ধুম্রকুঞ্জ মানুষকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে, আর তারা সেসব প্রতিহত করতে পারবে না।-(৫৫:৩৫) এটা হবে এমন দিন, যেদিন কেউ কোন কথা বলবে না এবং কাউকে তওবা করার অনুমতিও দেয়া হবে না।-(৭৭:৩৫-৩৬) মানুষ সেদিন না তার অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে, না জ্বিন।-(৫৫:৩৯) কেয়ামত হবে ভয় প্রদর্শণের দিন।-(৫০:২০)


আল্লাহর সত্ত্বা ব্যতিত সবকিছুই ধ্বংস হবে।-(২৮:৮৮) কারো কি জানা আছে শিঙ্গার এ আওয়াজ কতক্ষণ স্থায়ী হবে? এ আওয়াজ প্রথম যেদিন প্রাত:কালে আরম্ভ হবে, সেদিন থেকে সবকিছু একে একে ধ্বংস হবার পর পূর্ণ ছয় মাস পর্যন্ত স্থায়ী হবে।


তবে কেয়ামত দিবসের পূর্বের অবস্থা তথা শেষ পনের দিনের সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়েছেন হযরত ঈসা- "As that day draws near, for fifteen days, shall come every day a horrible sign over the inhabitants of the earth.


--The first day the sun shall run its course in heaven without light, but black as the dye of cloth; and it shall give groans, as a father who groans for a son near to death.

--The second day the moon shall be turned into blood, and blood shall come upon the earth like dew.
--The third day the stars shall be seen to fight among themselves like an army of enemies.
--The fourth day the stones and rocks shall dash against each other as cruel enemies.
--The fifth day every plant and herb shall weep blood.

--The sixth day the sea shall rise without leaving its place to the height of one hundred and fifty cubits, and shall stand all day like a wall.

--The seventh day it shall on the contrary sink so low as scarcely to be seen. 
--The eighth day the birds and the animals of the earth and of the water shall gather themselves close together, and shall give forth roars and cries.
--The ninth day there shall be a hailstorm so horrible that it shall kill [such] that scarcely the tenth part of the living shall escape.
--The tenth day shall come such horrible lightning and thunder [such] that the third part of the mountains shall be split and scorched.

--The eleventh day every river shall run backwards, and shall run blood and not water.

--The twelfth day every created thing shall groan and cry. 
--The thirteenth day the heaven shall be rolled up like a book, and it shall rain fire, so that every living thing shall die.
--The fourteenth day there shall be an earthquake so horrible that the tops of the mountains shall fly through the air like birds, and all the earth shall become a plain.
--The fifteenth day the holy angels shall die, and God alone shall remain alive; to whom be honour and glory."-(Gospel of Barnabas-Ch-53)

অতঃপর মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম ইস্রফিলকে সৃষ্টি করবেন। তারপর তিনি তাকে ২য়বার শিঙ্গায় ফুঁক দেবার জন্যে আদেশ করবেন। এই উভয়বার শিঙ্গা ফুঁকবার মাঝখানে চল্লিশ বৎসর ব্যবধান হবে। 


When these signs be passed, there shall be darkness over the world forty years, God alone being alive, to whom be honour and glory forever.-(Gospel of Barnabas-Ch-54)


এই চল্লিশ বৎসর অবিরাম বৃষ্টিপাত হতে থাকবে। এসময়ের মধ্যেই প্রতিটি মৃত মানুষ ও জীব-জন্তুর দেহের অংশ একত্রিত হয়ে পূর্ণ কাঠামো তৈরী হবে। ইস্রফিল ২য়বার শিঙ্গায় ফুঁক দিলে ঐসকল দেহে আত্মা এসে যাবে। সকল মখলুকাতই পুনরুজ্জীবন লাভ করবে। যেভাবে মৃত শুকনো ঠনঠনে মাটি থেকে বৃষ্টির পানি পেয়ে উদ্ভিদের উদ্গমন হয়, সেভাবেই পুনরুত্থিত হবে মানুষ। তারা কবর থেকে মাথার মাটি ঝাড়তে ঝাড়তে উঠে দাঁড়াবে। কোরআন জানিয়েছে- সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে নেব, যেমন গুটান হয় লিখিত কাগজপত্র। যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। আমার ওয়াদা নিশ্চিত।-(২১:১০৪)


সমাপ্ত।


বি:দ্র: আমার নিজের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে আর্টিকেলটি গুছিয়ে লিখতে পারিনি। পরবর্তীতে এটি আরো সংশোধিত ও পরিমার্জিত করে উপস্থাপনের আশা রাখি। ও হ্যাঁ! 'মহাপ্রলয় কখন হবে'- কাহিনীটি-শোহেইল মতাহির চৌধুরীর লেখা সামহোয়্যার ইন ব্লগের একটি বিখ্যাত আর্টিকেল -'জিব্রাইল ব্লগিং করছে না কেন?' থেকে নেয়া।


# একজন প্রশ্ন করেছিল, ফেরেস্তারা অপরাধ করতে পারে না যখন বলছেন তাহলে হারুত-মারুত অপরাধ করল কিভাবে?


অামরা জানি, কোয়ান্টাম ফিজিক্স অনুসারে দৃশ্যমান জগতের সকল বস্তু নির্দিষ্ট ফিকোয়েন্সি দিয়ে গঠিত এবং সকল বস্তুর দৃশ্যমান উপস্থিতি কেবলমাত্র ৩৯০-৭০০nm ফিকোয়েন্সি সীমায় অবস্থিত। আগুণের তৈরী জ্বিণ ও নুরের তৈরী ফেরেস্তাগণ এই ফিকোয়েন্সি সীমার বা্ইরের কোন ফিকোয়েন্সি দিয়ে সৃষ্ট ফলে তারা দৃশ্যমান নয়। তবে তারা উভয় ফিকোয়েন্সি সীমায় যাতায়াত করতে পারে।


ফেরেস্তাগণ দৃশ্যমান জগতে দু’ভাবে নিজেদেরকে উপস্থাপন করতে পারে- এক, রূপ ধারণ করে ও দুই, রূপান্তরিত হয়ে। অন্যদিকে জ্বিণ রূপ ধারণ করতে পারলেও রূপান্তরিত হতে পারে না, ফলে তারা ভর করে অন্য কোন শরীরে।


এবার আসি পতিত ফেরেস্তা হারুত-মারুতের প্রসঙ্গে। অপরাধ করার সময় তারা নিজেদেরকে মানবে রূপান্তরিত করেছিল, মানবের রূপ ধারণ করেনি, ফলে তারা অপরাধ করতে পেরেছিল। আর অপরাধের সময় যেহেতু তারা ফেরেস্তা ছিল না, তাই তারা শাস্তির অধীন হয়। অত:পর তাদেরকে দু’টো অপশন দেয়া হয়েছিল- হয় দুনিয়াতে কেয়ামত পর্যন্ত অবস্থান, অথবা বিচার দিবসে মানুষের সাথে বিচারের অধীন হওয়া। হারুত-মারুত প্রথমটি বেঁছে নেয়। কারণ, তাদের জানা ছিল দুনিয়ার সমাপ্তি আছে, অন্যদিকে পরকালে খোদার শান্তির ধরণ ও সময়কাল তাদের জানা নেই।


অবশ্য এটা ঠিক যে পতিত ফেরেস্তাদ্বয় অপরাধের পর ক্ষমা প্রার্থণা করলেও ক্ষমাশীল খোদা তাদেরকে ক্ষমা করেননি, এটা এ কারণে যে, ক্ষমার অধীন কেবল আদম সন্তানগণ যদি তারা ক্ষমা চায়, কিন্তু জ্বিণ বা ফেরেস্তা নয়।  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Moses: কোরাণিক ক্যানভাসে নবী মূসা।

Abu Hena Mostafa Kamal  01 May, 2017 মি সরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ফেরাউন। হঠাৎ করে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। কিন্তু তিনি কোন উত্তরাধিকারী ন...